ছালাতে রাসূল (ছাঃ)-এর রাফ‘উল ইয়াদায়েন
আশরাফুল ইসলাম
অপরাধীর
অপরাধ পরিকল্পনা এবং তাদের দুরভিসন্ধি ফাঁস করে দেওয়া মহাগ্রন্থ আল-কুরআন
নির্ধারিত একটি পদ্ধতি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর এমনিভাবে আমি নিদর্শনসমূহ
বর্ণনা করি, যাতে অপরাধীদের পথ সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে’ (আন‘আম ৫৫)।
আমরা অত্র নিবন্ধে পাঠককে এমন একটি ভয়াবহ বিষয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই, যা নবডঙ্কা নিয়ে বেজে উঠেছে, যার ধূম্রজালে ছেয়ে যাচ্ছে মুসলিম সমাজ এবং যার আগুনে জ্বলে উঠেছে ঈমানী গৃহসমূহ। আর তা হল, ইসলামী বিশেব শী‘আ মতবাদের ভয়াবহ বিস্তৃতি।
শী‘আ মতবাদের বিস্তৃতির ঘটনা বাস্তব, কোন কল্পনাপ্রসূত বিষয় নয়। জাপান থেকে শুরু করে ল্যাটিন আমেরিকা পর্যন্ত পৃথিবীর এমন কোন দেশ বা এলাকা নেই, যেখানে শী‘আ মতবাদের অপচ্ছায়া প্রবেশ করেনি।
এই কুফরী মতবাদ প্রসারের জন্য বিভিন্ন শী‘আ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিশেষ এজেন্ডা নিয়ে মুসলিম অঞ্চলসমূহে প্রবেশ করে ইসলামের রজ্জু, আক্বীদা, ইতিহাস ও প্রতীককে লাঞ্ছিত করছে। এমনকি তাদের ক্রমবর্ধমান গোপন তৎপরতা এমন সময় বৃদ্ধি পাচ্ছে যখন ইসলামী সংস্থা ও সংগঠনসমূহ পাপিষ্ঠ খৃষ্টান চক্রের নানা বিপদ ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
তাই তাদের এই বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধ বিষয়ক আলোচনা সামরিক দখলদারিত্বের আলোচনার চেয়ে কোন অংশেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বিশেষ করে এই সংঘাতের যে বাস্তব ফলাফল আমরা লক্ষ্য করছি, তা মুসলিম উম্মাহর জন্য কোন কল্যাণকর ভবিষ্যতের ইঙ্গিত বহন করে না। যাই হোক প্রশ্ন আসে যে, শী‘আ মতবাদের বিস্তৃতি সম্পর্কে কেন এই হুঁশিয়ারী দেওয়া হচ্ছে?
এর জবাব হল, আমাদের ও তাদের মধ্যকার দলীল-প্রমাণাদি এতই পরস্পরবিরোধী এবং উভয়ের মধ্যকার মৌলিক বিষয়াদির দূরত্ব এতই বেশী যে, তা পূর্ব ও পশ্চিমের দূরত্বের ন্যায়। এমতবস্থায় কিভাবে আমরা সেই সম্প্রদায়ের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে পারি, যারা আহলে বায়েতের (রাসূল (ছাঃ)-এর পরিবার) ইমামগণকে মা‘ছূম বা নিষ্পাপ দাবী করে এবং বিশবাস রাখে যে, তাঁরা গায়েব বা অদৃশ্যের খবর রাখেন! (দ্রঃ কুলায়নী, উছূলুল কাফী ১/১৬৫)। যারা একথাও বলে যে, কুরআনুল কারীমে পরিবর্তন-পরিবর্ধন সাধিত হয়েছে এবং আমাদের কাছে সংরক্ষিত কুরআন মূলতঃ নবী (ছাঃ)-এর উপর অবতীর্ণ কুরআন নয়; বরং তাতে পরিবর্তন-পরিবর্ধন ও কমবেশী করা হয়েছে! (দ্রঃ উছূলুল কাফী ১/২৮৫)। কিভাবে আমরা এমন এক সম্প্রদায়ের নিকটবর্তী হতে পারি, যারা ছাহাবীগণকে ফাসিক্ব বলে? শুধু তাই নয়, যারা উগ্রভাবে নিয়মিত তাঁদেরকে অভিশাপ দিয়ে এবং কাফির বলে নিজেদের জিহবাকে ধারালো করে ফেলেছে? (মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার ৬৯/১৩৭, ১৩৮ পৃঃ)।
কোন ব্যক্তি ১২ ইমামের ইমামত অস্বীকার করলে সে শী‘আ ইমামিয়াদের নিকট কাফির, পথভ্রষ্ট এবং জাহান্নামের চিরস্থায়ী অধিবাসী (আব্দুল্লাহ শুবুর, হাক্কুল ইয়াক্বীন ২/১৮৯)।
এখানেই শেষ নয়, মুসলিম উম্মাহর সাথে এই সম্প্রদায়ের রয়েছে এক কালো ইতিহাস। সুতরাং আমাদের প্রতি তাদের শত্রুতা যেমন সুপ্রতিষ্ঠিত, তেমনি আমাদের প্রতি তাদের ক্রোধ ও হিংসাও সুগভীর; বরং মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে এমন কোন সময় অতিবাহিত হয়নি, যখন তাদের আঘাত, গাদ্দারী, বিদ্রোহ আর খেয়ানত মুসলমানদারকে জর্জরিত করেনি। এটিই শী‘আদের বাস্তব চিত্র। কবি বলেন, ‘তোমরা ইতিহাস পড়, কেননা তা তোমাদের জন্য শিক্ষার ভান্ডার। যে জাতি ইতিহাস জানেনা, সে জাতি পথভ্রষ্টই হয়।’
বলা বাহুল্য, স্বীয় মতবাদ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তারা যেসকল পদ্ধতি অবলম্বন করে তা প্রকাশ করে দেওয়ার অর্থ এই নয় যে, তাদের প্রতি যুলম বা অবিচার করা। কেননা আমরা এমন উম্মত যারা ইনছাফ, ন্যায়, দয়া ও মধ্যমপন্থার ঝান্ডাকে সবসময় সমুন্নত রাখি।
আল্লাহর শপথ! বর্তমান দুর্যোগের সময়ে দলীয় সংঘাতের দিকে আহবান করা মুসলিম উম্মাহর জন্য মোটেই কল্যাণকর নয়। কেননা এটি এমন একটি বীজ, যার ফল ভোগ করে ইসলামবিরোধী শক্তি। কিন্তু তারপরও এই মিথ্যার ভয়াবহ বিস্তৃতি ও সম্প্রসারণ দেখে নিশ্চুপ থাকা এবং দেখেও না দেখার ভান করা আহলে সুনণাত ওয়াল জামা‘আতের নীতি বিরুদ্ধ। উপরন্তু যখন শী‘আদের এই ধর্মপ্রচার প্রধানতঃ সুন্নী অধ্যুষিত এলাকাসমূহকে টার্গেট করেই পরিচালিত হচ্ছে, তখন এটি কোন হেলাফেলার বিষয় নয়।
অতএব শী‘আ মতবাদ কিভাবে বিস্তৃতি লাভ করছে বা কতটা বিপজ্জনক আকার ধারণ করেছে তা অনুধাবন করা এবং একইসাথে শান্তিপূর্ণ উপায়ে তা প্রতিরোধের আহবান জানানোই এ লেখার একমাত্র উদ্দেশ্য। কোন দলীয় সংঘাত সৃষ্টির কোন অভিপ্রায় এখানে নেই।
ইরানী বিপ্লব ও শী‘আ মতবাদ প্রসারের পটভূমিকা :
আধুনিক বিশ্বে শী‘আ মতবাদ বিস্তৃতির চিন্তাধারা ইরানী প্রেসিডেন্ট আয়াতুল্লাহ খুমায়নীর শাসনামল থেকে শুরু হয়। যিনি তাঁর অভ্যুত্থানের সঙ্গে সঙ্গে তথাকথিত ‘ইসলামী’ বিপ্লবের ঘোষণা দেন।
শী‘আ মতবাদ বিস্তৃতির এই এজেন্ডা ‘ফক্বীহী শাসন ব্যবস্থা’র নতুন যুগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর শুরু হয়েছে। শী‘আদের নিকট ‘ফক্বীহী শাসন ব্যবস্থা’র অর্থ হল, ইমামী মাযহাব (শী‘আদের একটি গ্রুপ)-এর অনুসারীদের উপর একজন ফক্বীহকে অনুসরণ করা ওয়াজিব, যিনি হবেন অনুপস্থিত প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদীর স্থলাভিষিক্ত। খুমায়নী তাঁর গ্রন্থ ‘আল-হুকূমাহ আল-ইসলামিইয়াহ’-এর ৩৬ পৃষ্ঠায় ‘ফক্বীহ-এর বেলায়াত’ বিষয়ক আক্বীদা উল্লেখ করে বলেন, ‘ফক্বীহদের উপর এই আক্বীদা পোষণ করা ওয়াজিব যে, তারা আখেরী যামানার প্রতীক্ষিত ইমামের খলীফা বা প্রতিনিধি হবেন এবং তারাই হবেন শাসন ক্ষমতার অধিকারী। এ থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তাকে অনুসরণ করা আবশ্যক কেবল একজন ইমাম হিসাবেই নয়; বরং একজন নবী বা রাসূল হিসাবে’। এই ভ্রান্ত আক্বীদার আলোকে ইসলামী বিপ্লবের ঘোষক আয়াতুল্লাহ খুমায়নী তাঁর অনুসারী সম্প্রদায়কে সর্বত্র ধরে রেখেছে, যাতে তারা পরবর্তীতে তাঁর অনুসারী এবং তাঁর নির্দেশ পালনকারী হতে পারে।
বিপ্লব ঘোষণার উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়েই খুমায়নীর সরকার দীর্ঘ আট বছর ধরে ইরাকের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল, যে ইরাককে ইরানীরা ইসলামী বিশেব তাদের প্রবেশদ্বার মনে করে। এছাড়া তাদের আক্বীদায় ইরাকের একটা ধর্মীয় গুরুত্ব তো রয়েছেই। অসংখ্য প্রাণের বিনিময়ে ও ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধনের মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে।
ইরানের মোড়ল সরকার শুরু থেকেই শী‘আ সংখ্যালঘু এলাকাসমূহকে স্বাধীনতা এবং স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার দাবী করার প্ররোচনা দিয়ে আসছিল। যে কারণে সেসময় শী‘আদের বেশ কিছু সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল জন্ম নেয়, বর্তমান বিশেব যেগুলির নাম ছড়িয়ে পড়েছে। যেমন: ইরাকে ‘হিযবুদ-দা‘ওয়াহ আল-ইসলামিইয়াহ’ লেবাননে ‘হারাকাতু আমাল’ ও ‘হিযবুল্লাহ’ বাহরাইনে ‘জাবহাতুত-তাহরীর আল-ইসলামী’, ইয়েমেনে ‘আল-হারাকাহ আল-হূছিইয়াহ’ ইত্যাদি। এই দলগুলি ইরানী আয়াতুল্লাহ্দের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং পরবর্তীতে ছাফাভী পারসিকদের কণ্ঠস্বর ও মুখপাত্রে পরিণত হয়েছে। শক্তি প্রয়োগ করে বিপ্লব ঘটানোর পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ায় অবশেষে পারসিকরা শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে বিপ্লব প্রতিষ্ঠার বিচক্ষণ নীতি বেছে নিয়েছে। সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক অভীপ্সা, সুগভীর পরিকল্পনা এবং সম্ভাব্য কর্মনীতি সামনে রেখে তারা আগ্রাসীভাবে ইসলামী দেশসমূহে শী‘আ মতবাদ বিস্তারের কাজ শুরু করেছে। যা দেশীয় সীমানা বা অন্য কোন প্রতিবন্ধকতাকে কোনই পরওয়া করে না।
এই এজেন্ডাকে সফল করার জন্য শী‘আ ধর্মীয় রাষ্ট্রটি সার্বিক সাহায্য-সহযোগিতা করছে এবং নেতৃত্বের আসন দখলের প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এই লক্ষ্যে তারা যাবতীয় শক্তি-সম্ভাবনা, সহযোগী প্রতিষ্ঠান ও অর্থনৈতিক বরাদ্দ সবকিছুই নিয়োজিত রেখেছে। শী‘আ মতবাদ প্রচারে তারা যে ব্যয় করে তা রীতিমত অবিশ্বাস্য অংকের। শ্রুতি রয়েছে যে, ইরানী খনিজ তেল খেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশের এক পঞ্চমাংশই এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য ব্যয় করা হয়।
খুমায়নী স্বীয় বক্তব্যে তার ভক্তদেরকে শী‘আ মতবাদ প্রচারের জন্য উৎসাহ দিয়ে বলেন, ‘ধর্মপ্রচার কেবল ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একার দায়িত্ব নয়; বরং তা আলেম, খত্বীব, লেখক ও শিল্পী সবার দায়িত্ব। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্তব্য হল, বহির্দেশীয় দূতাবাসসমূহে প্রচুর পরিমাণে প্রচারপত্র সরবরাহ করা, যা ইসলামের আলোকোজ্জ্বল ইতিহাসকে বিশ্ববাসীর নিকট অবমুক্ত করবে’ (খুমায়নী, আল-ওয়াছিইয়াহ আস-সিয়াসিইয়াহ, পৃঃ ৪০)।
এদিকে ইরানের বর্তমান সরকারপ্রধান আহমাদিনেজাদ স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছেন যে, ইরান সরকারের উদ্দেশ্য হল, বিশেব শী‘আ মতবাদের প্রসার ঘটানো এবং প্রতীক্ষিত মাহদীর নিশান বুলন্দ করা। তিনি বলেন, ‘এই আবশ্যকীয় কর্তব্যটি পালনের দায়িত্ব গণপ্রজাতন্ত্রী ইরানের উপর বর্তায়’ (‘মুফাক্কেরাতুল ইসলাম’ ওয়েবসাইট থেকে গৃহীত)।
জনৈক শী‘আ আলেম ০৪/০১/১৪২৮ হিঃ তারিখে ‘আল-মুসতাক্বেল্লাহ’ চ্যানেলে তার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘শী‘আ অধ্যুষিত ক্বুম ও নাজাফ অঞ্চল হেজায, শাম, ইয়েমেন এবং ইরাকে আধিপত্য বিস্তারের সর্বাত্মক প্রয়াস চালাবে। যার উদ্দেশ্য হল, এক সময় গোটা ইসলামী বিশ্বের নেতৃত্ব লাভ করা। এ মতবাদের বিস্তৃতি কোন সীমারেখা মানে না, তাই সারা জাহানে তাদের এই মতবাদ সম্প্রসারণের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
শী‘আ মতবাদ প্রচারের কিছু পদ্ধতি :
শী‘আ মতবাদ প্রচার এবং তাতে তাদের সফল হওয়ার পেছনে বেশ কিছু পথ ও পদ্ধতি রয়েছে, যার মাঝে উল্লেখযোগ্য হল:
১. আহলে বায়েতের প্রতি ভালবাসার আতিশয্য প্রকাশ : রাসূল (ছাঃ)-এর পরিবারের প্রতি ভালবাসা প্রদর্শনের শ্লোগান দেয়া, নিজেদের মতবাদকে তাঁর পরিবারের নামে তথা মাযহাবে আহলে বায়েত নামকরণ, দা‘ওয়াতী কার্যক্রমকে মূলতঃ রাসূল (ছাঃ)-এর পরিবারের প্রতি ভালবাসা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং তাদের প্রাপ্য হক্ব আদায়কে কেন্দ্র করেই আবর্তিত রাখা- ইত্যাদির মাধ্যমে তারা শী‘আ মতবাদের প্রচার করে যাচ্ছে।
এই দাওয়াতের মাধ্যমে শী‘আদের উদ্দেশ্য হল, রাসূল (ছাঃ)-এর পরিবার-পরিজনের প্রতি ভালবাসার আতিশয্য প্রকাশ এবং তাঁদেরকে মা‘ছূম জ্ঞান করা। আর সেই সূত্রে ছাহাবায়ে কেরামকে রাসূল (ছাঃ)-এর পরিবারের অধিকার হরণকারী ও তাঁদের উপর যুলুমকারী হিসাবে আখ্যাদানের মওকা করে নেওয়া (যেমনটি করে চরমপন্থী শী‘আ গোষ্ঠী রাফেযীরা)। একে সামনে রেখেই তারা ছাহাবীগণকে অবিশ্রান্তভাবে নিন্দা ও কটাক্ষ করা এবং তাদেরকে আমানতের খেয়ানতকারী, অভিশপ্ত, কাফির হিসাবে আখ্যা দেয়ার ন্যক্কারজনক কাজটি অবলীলায় করে থাকে।
অতএব আহলুল বায়েত বা রাসূল (ছাঃ)-এর পরিবারের প্রতি ভালবাসা প্রদর্শনের এই ভুয়া শ্লোগান শী‘আদের নিজ মতবাদ প্রচারের সূক্ষ্ম অপকৌশল এবং নিজেদের কালিমাযুক্ত চেহারাকে শোভাময় করে দেখানোর অপ্রপ্রয়াস। তাই মানুষকে আকৃষ্ট করতে তারা তাদের দাওয়াহ মিশন, সাহায্য সংস্থা, এমনকি রাজনৈতিক সংগঠনগুলির নামও আহলে বায়েতের নামে নামকরণ করে।
শুধু তাই নয়, আহলে বায়েতের কবরস্থানগুলোকেও তারা মাযারে পরিণত করেছে এবং তার উপর গম্বুজ বানিয়ে নানা বিদ‘আতী, কুফরী কার্যকলাপের আসর বসিয়েছে। তাছাড়া এসব অঞ্চল পুরোপুরি শী‘আ অধ্যুষিত হিসাবে গড়ে তোলার জন্য আশেপাশের জায়গা-জমি অধিকারে নেয়া ও জমি কিনে রাখার কাজটিও সুকৌশলে তারা করে যাচ্ছে।
২. সুন্নী ও শী‘আদের মধ্যে ধর্মীয় ঐক্যের আহবান করা :
এটি সুস্পষ্ট ধোঁকা। কেননা এই আহবানের অর্থ হল, শী‘আ মতবাদকে স্বীকৃতি দেয়া এবং তাদের সঠিকতার প্রতি ইতিবাচক সাড়া দেয়া- যা প্রকারান্তরে এই মতাবলম্বনের অগ্রযাত্রাকেই সুগম করে। দুঃখের বিষয় হল, এই ধোঁকা দিয়েই শী‘আরা সুন্নী মুসলিম অধ্যুষিত দেশসমূহে নির্বিঘ্নে বিচরণ করে তাদের প্রচারকেন্দ্র, প্রকাশনালয় চালু করেছে। সর্বোপরি সহজেই তাদের ভ্রান্ত মতবাদ প্রসারের সুযোগ পেয়েছে। অন্যদিকে তাদের বিকৃত আক্বীদাসমূহ এবং কুফরী মতবাদপূর্ণ বিষয়াদির ব্যাপারে কেউ আপত্তি তুললে তা হয়ে যায় মুসলিম ঐক্যের জন্য হুমকি সৃষ্টিকারী।
এক্ষণে সুন্নীদের জানতে চাওয়া উচিৎ, ইরানের শী‘আ আলেমরা কি শী‘আ অধ্যুষিত অঞ্চলসমূহে মানুষকে সুন্নী বানানোর প্রক্রিয়া পরিচালনায় অনুমতি দেবে? ইরানীরা সুন্নী হয়ে গেলে কি পারস্য মোড়লরা নীরব থাকবে? আর তারা কি এ ধরনের তৎপরতা অনুমোদন করবে? আল্লাহর কসম! তারা এটা কখনই অনুমোদন করবে না। তাই তো দেখা যায়, উভয় জামা‘আতকে কাছাকাছি করার এই আহবান সত্ত্বেও তারা মানুষকে সুন্নী বানানোর প্রক্রিয়া পরিচালনার অনুমতি দেওয়া তো দূরে থাক, এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে সুন্নী আক্বীদা পাঠকে তারা বাঁধা প্রদান করে থাকে।
বাস্তবতায় দেখা যায়, ধর্মীয়ভাবে কাছাকাছি আসার এই প্রতারণাপূর্ণ আহবানকারীরাই সেখানকার সুন্নী আলেমগণকে এবং ‘আহওয়ায’ অঞ্চলে বসবাসরত আরবদেরকে হত্যা করে গুম করে দেয়। শুধু তাই নয়, তারা সুন্নী মসজিদসমূহ ধ্বংস করে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে তালা ঝুলায় আর সুন্নী দাঈগণকে সেখান থেকে বিতাড়ন করে।
অতএব, সুন্নী মুসলিম হিসাবে আমাদের পক্ষে এমন সম্প্রদায়ের কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ, তারা ইসলাম বিনষ্টকারী বিষয়সমূহকে আঁকড়ে ধরে থাকে, কবরসমূহ প্রদক্ষিণ করে এবং জীবনবাজি রেখে বিদ‘আতের প্রচার ও প্রসারে আত্মনিয়োগ করে।
(৩) শিক্ষাবৃত্তি প্রদান :
তারা ছাত্রদেরকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে। এ উদ্দেশ্যে তারা তেহরান, ক্বুম, মাশহাদ ও তাবরীযের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে অধ্যয়নের জন্য বিশেবর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাযার হাযার সরলমনা মুসলিম যুবককে একত্র করছে। ইরান সরকার সেখানে তাদের খরচ-খরচা, জীবন-যাপন, প্রয়োজনাদি পূরণ এমনকি বিয়ে-শাদীর দায়িত্বও বহন করে থাকে।
এই শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের প্রধান লক্ষ্য হল, তাদেরকে শী‘আ বানানো- যাতে তারা শী‘আ মতবাদ প্রচার ও প্রসারের আহবায়ক হিসাবে নিজ নিজ দেশে কাজ করতে পারে। কয়েক বছর ধরে ছাত্রদেরকে এ মর্মে শিক্ষা দেওয়া হয় যে, সকল সুন্নী সরকার যালেম এবং অবৈধ। কেননা তাদের ধারণামতে, এসব সরকার তাদের ফক্বীহী শাসনব্যবস্থা অর্থাৎ তাদের মতানুযায়ী ইসলামের আসল দল ও মুহাম্মাদী পথের পথিক নয়!
(৪) পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে দাঈ ও শিক্ষকদের প্রেরণ :
শী‘আরা তাদের দাওয়াত প্রসারের লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে দাঈদের প্রেরণ করে থাকে। বিশেষ করে দূরবর্তী মুসলিম সংখ্যালঘু এলাকা সমূহে। একটি বিদেশী পত্রিকা এ মর্মে খবর প্রকাশ করেছে যে, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সেখানকার সদ্য বিভক্ত অঞ্চলসমূহে ইরান শত শত শিক্ষক পাঠিয়েছে। পত্রিকাটি উল্লেখ করেছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ইরান সরকার বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে।
(৫) বিভিন্ন দেশে অবস্থিত ইরানী দূতাবাস সমূহের মাধ্যমে ফায়দা হাছিল করা :
এসব দূতাবাসের সাংস্কৃতিক বিভাগ সংশ্লিষ্ট এলাকায় বসবাসকারী শী‘আদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা, তাদের সমস্যায় সহযোগিতা প্রদান, তাদের অধিকার রক্ষা এবং তাদেরকে শী‘আপন্থী ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বই-পুস্তক যোগান দেওয়ার মাধ্যমে শী‘আ মতবাদের দিকে আহবানকারী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মন্ত্রণালয়ে পরিণত হয়েছে। এজন্য এমন কোন ইরানী দূতাবাস নেই, যেখানে তথাকথিত পাগড়ীধারী দাঈ এবং শী‘আ মতবাদ প্রচারের জন্য তত্ত্বাবধায়ক নেই।
(৬) অর্থনৈতিক অস্ত্র ব্যবহার :
অর্থনৈতিক ও বস্তুগত প্রলোভনকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা এবং নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও সুশীল সমাজের সুধীদেরকে শী‘আ মতবাদে দীক্ষিত করার জন্য তারা অঢেল সম্পদ ব্যয় করে। সাথে সাথে তাঁদেরকে এ ধারণা প্রদান করা যে, ইসলামে শী‘আ ও সুন্নীর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। প্রিয় পাঠক! একথা সুস্পষ্ট যে, নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এবং গোত্র প্রধানগণের সূত্র ধরেই ইরাক ও সিরিয়াতে শী‘আ মতবাদ প্রসার লাভ করেছে (তাহযীরুল বারিইয়াহ মিন নাশাতিশ-শী‘আহ ফী সূরিইয়াহ)।
(৭) দারিদ্রপীড়িত ও শিক্ষাবঞ্চিত অঞ্চলসমূহকে টার্গেট করা :
শী‘আ মতবাদ প্রচারে তাদের আরো একটি মাধ্যম হল, মূর্খতা ও দারিদ্রপীড়িত এলাকাসমূহ খুঁজে টার্গেট করে সেখানে সমাজসেবামূলক কাজ করা। যেমন- হাসপাতাল নির্মাণ, বাড়ী-ঘর নির্মাণ, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং বিভিন্নমুখী সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান ইত্যাদি। ইসলাম এবং আহলুল বায়েতের প্রতি ভালবাসা প্রদর্শনের এই খপ্পরে পড়ে ঐসব এলাকার সরলপ্রাণ দরিদ্র লোকজন দলে দলে শী‘আ ধর্মে দীক্ষিত হচ্ছে।
(৮) মুসলমানদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সোচ্চার হওয়া :
শী‘আ মতবাদ প্রচার ও প্রসারের অন্যতম আরেকটি সহজ মাধ্যম হল, রাজনৈতিকভাবে ইহূদী, জায়োনিস্ট ও পশ্চিমাবিরোধী অবস্থানগ্রহণ করা। মুসলিম বিশেবর রাজনীতিতে শী‘আদের চমকদার স্থান এবং নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর হৃদ্যতা অর্জনে তাদের এই নীতির বিরাট প্রভাব রয়েছে। ইরানী মোড়লদের ফিলিস্তীন সমস্যার সমাধানে হাত বাড়ানোর বিষয়টি জনগণের সহানুভূতি আদায় করা এবং দলীয় স্বার্থসিদ্ধি বা রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি ছাড়া কিছুই নয়। ইরানী সরকার প্রধানের মন্তব্যে তা আরো সুস্পষ্ট হয়। তিনি বলেন, ‘ইসলামী দেশসমূহে ইরানের লজিস্টিক সাপোর্ট মূলতঃ দেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষার্থেই ব্যবহৃত হচ্ছে’ (ওয়েবসাইট: ‘ছহীফাতুল আখবার’, জুম‘আ সংখ্যা, ২৭ জুন ২০০৮ ইং)। এই রাজনৈতিকের স্বীকারোক্তিতেই এটা সুস্পষ্ট যে, ইরান কেবলমাত্র তার নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধির জন্যই কাজ করে যাচ্ছে, মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে নয়।
(৯) সুন্নী দেশসমূহের উপর আক্রমণ পরিচালনায় বিধর্মী রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করা :
শী‘আ মতবাদ প্রচারের একটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ হল, এ মতবাদবিরোধী সুন্নী রাষ্ট্রসমূহের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিধর্মী দেশসমূহের সাথে সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তোলা। সেজন্য সেখানকার পাগড়ীধারীরা সবচেয়ে বড় শয়তান আমেরিকাকে যতই গলা বাজিয়ে অভিশাপ করুক না কেন, ইরান সরকার ইরাক এবং এর আগে আফগানিস্তানের পতনের জন্য বিধর্মীদের সহযোগী শক্তি হিসাবে কাজ করেছিল। সাবেক ইরানী ভাইস প্রেসিডেন্ট তা স্পষ্টই ঘোষণা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘ইরান না থাকলে আমেরিকা ইরাক দখল করতে পারত না এবং ইরান না থাকলে আমেরিকা আফগানিস্তানও দখল করতে পারত না’ (মাযা তা‘রিফু আন হিযবিল্লাহ’, পৃঃ ২০৮)।
(১০) সুন্নীবিরোধী সম্প্রদায়ের সাথে মৈত্রীবন্ধন :
দলীয় শক্তি বৃদ্ধির জন্য তাদের গৃহীত আরেকটি পদক্ষেপ হল, সুন্নী সমাজের প্রতি বিদ্বেষী সম্প্রদায়গুলির সাথে মৈত্রীবন্ধন গড়ে তোলা। যেমনটি পূর্বে মার্কসবাদীদের সাথে এবং বর্তমানে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের সাথে তারা সখ্য গড়ে তুলেছে। সেজন্য শী‘আদের প্রচারমাধ্যম এবং তাদের সভা-সমিতিতে সুন্নীবিরোধী এই দলগুলির উপস্থিতি খুঁজে পাবেন। কেননা সুন্নী পরিচয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের লক্ষ্যে তারা তাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এই মৈত্রীবন্ধনের আরেকটি উদ্দেশ্য হল, সুন্নীদের অবস্থান নড়বড়ে করা এবং ভেতর থেকে তাদের মধ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টি করা।
এছাড়া সুন্নীদের কিছু সংস্থার প্রতি শী‘আদের সম্মান প্রদর্শনও শী‘আ মতবাদ প্রচারের আরেকটি মাধ্যম। দুঃখের বিষয় হল, সুন্নী এই সংস্থাগুলো শী‘আ মতবাদকে বৈধতা দান করে তাদের বক্তব্য এবং ফৎওয়া প্রচার করছে। এসব সংস্থার ধ্বজাধারীদেরকে শী‘আ মিডিয়ায় ঐক্য ও ন্যায়ের প্রতীক হিসাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
সম্মানিত পাঠক! শী‘আ মতবাদের বিস্তৃতি আশংকাজনক বিপদ হিসাবে রয়ে যাবে এবং ইসলামী কোন এলাকা তাদের টার্গেট থেকে বাদ পড়বে না। বিশেষ করে প্রাচুর্যসমৃদ্ধ ও পবিত্র স্থানসমূহের দেশ হারামাইন শরীফাইনের দেশ সঊদী আরব। এ দেশটি রাফেযীদের টার্গেট। যত্র-তত্র রাফেযীদের বিস্তৃতি ও সম্প্রসারণ ঘটলেও এই দেশটিই তাদের মূল টার্গেট। এটি তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তোহমত নয়। বরং তাদের বই-পুস্তক এবং ঐসব পাগড়ীধারীদের বক্তব্য থেকেই এই উদ্দেশ্য বেরিয়ে এসেছে।
তেহরানের একজন মেজর জেনারেল ‘আল-ইসলাম আলা যওইত তাশাইয়ূ’ গ্রন্থের লেখক বলেন, ‘দুনিয়ার সব শী‘আ মক্কা-মদীনার বিজয় এবং এতদুভয় থেকে অপবিত্র ওয়াহ্হাবী সরকারের পতন কামনা করে।’ পারস্যের এক পাগড়ীধারী বলেন, ‘পূর্ব থেকে পশ্চিম দিগন্তের হে আমার মুসলিম ভাইয়েরা! আমি স্পষ্টভাবে বলছি যে, আল্লাহর হারাম মক্কা মুকার্রমা অল্পসংখ্যক এমন কিছু মানুষ দখল করে আছে, যারা ইহুদীদের চেয়েও ভয়ানক’ (‘আল-মিশকাত আল-ইসলামিইয়াহ’ ওয়েবসাইট)। বাহরাইনের ‘কুতলাতুল বিফাক্ব’-এর জনৈক সদস্য হামযাহ আদ-দীরী বলেন, ‘সুন্নীদের আলেম-ওলামা এবং হারাম শরীফের ইমামগণ নাছেবী। সুতরাং হারামে তোমাদের ছালাত একজন নাছেবীর পেছনে আদায়কৃত ছালাত হিসাবে গণ্য হবে’ (‘আল-ওয়াক্ত’ পত্রিকা, রবিবার, ২২ রজব ১৪২৮ হিঃ, ৫৩১ সংখ্যা)।
আর গণপ্রজাতন্ত্রী ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট রাফসানজানী ১৪/১২/১৯৮৭ ইং তারিখে ‘ইত্তেলা‘আত’ পত্রিকাতে তো স্পষ্টই বলেছিলেন, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী ইরানের কাছে মক্কাকে মুক্ত করার জন্য যুদ্ধের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে’।
এদিকে সঊদী শী‘আ মতাবলম্বী ‘নিম্রুন নিম্র’ তার নিজস্ব ওয়েব সাইট ‘আশ-শী‘আহ আলাত-তাহাররুক’-এ প্রচারিত এক উস্কানীমূলক বক্তব্যে বলেন, ‘আমি নিজেকে আহবান করছি এবং সমস্ত মুমিনকে বিশেষ করে আহলুল বায়েতের প্রেমিকদেরকে এবং আরো বিশেষ করে আহলুল বায়েতের মিত্র ও অনুসারীদেরকে শপথ নবায়ন, দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গ্রহণ এবং আমাদের সম্ভবপর সার্বিক শক্তি দিয়ে দ্বিগুণ প্রচেষ্টায় নিরত হওয়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করছি। নির্মম ধ্বংসের এক যুগ অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই সুউচ্চ ভিত্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা যেন লড়াই-সংগ্রাম অব্যাহত রাখি’। লন্ডনে বসবাসরত কুয়েতী শী‘আ মতাবলম্বী ইয়াসের আল-হাবীব এক বক্তব্যে বিদ্রোহের ডাক দিয়ে বলেন, ‘মক্কা ও মদীনা আজ দখলদারিত্বের কবলে। এতদুভয়কে মুক্ত করা আবশ্যক’।
এই হল শী‘আ মতবাদ বিস্তৃতির কতিপয় মাধ্যম এবং তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও সামান্য কিছু বক্তব্য। সর্বোপরি বাস্তবতা এগুলির সাক্ষ্য দেয় এবং সঠিক বিশ্লেষণ এগুলির সত্যতা প্রমাণ করে (আরো জানতে হলে পড়ুন : ‘আল-খুত্ত্বাতুল খামসিনিইয়াহ লিআয়া-তির রাফিযা ফী ইরান’)।
প্রিয় পাঠক! এখন বাকী থাকে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন- শী‘আ মতবাদ প্রচারের এই ঘূর্ণিঝড় এবং স্পষ্ট বিপদ প্রতিরোধে আমাদের করণীয় কী?
সম্মানিত মুসলিম ভাই! শরী‘আতের দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যাবশ্যক এবং মুসলিম জনতার জন্য নছীহত হল, যবান ও মাল দ্বারা রাফেযী বিদ‘আতের মোকাবেলা করতে হবে এবং দ্বীন ও শরী‘আতের হেফাযতার্থে এই বিস্তৃতির ভয়াবহতা সম্পর্কে মুসলমানদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
আমরা শাসকগোষ্ঠী এবং সাধারণ জনগণ সম্মিলিতভাবে যদি শী‘আ মতবাদের এই তুফানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নেই, তাহলে এর দূষিত হাওয়া আমাদের গায়ে লাগবেই। আমাদের পাশর্ববর্তী দেশসমূহের ঘটনাপুঞ্জ কিন্তু অবাস্তব নয়। সুতরাং দ্বীনের প্রতি অধিক আগ্রহী প্রত্যেকটি মুসলমানের উচিৎ, সর্বশক্তি দিয়ে তার সুনণী মতবাদকে সহযোগিতা করা। আমাদের করণীয় কয়েকটি বিষয় নীচে সংক্ষিপ্তাকারে উল্লেখ করা হল-
১. ইসলামী বিশেব সুন্নী মতবাদ প্রসারে আন্তরিকভাবে কাজ করে যেতে হবে এবং এই লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের জন্য দাঈগণ ও ইসলামী প্রতিষ্ঠানসমূহকে সহায়তা প্রদান করতে হবে।
২. প্রিন্ট ও অডিও-ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনার মাধ্যমে শী‘আ মতবাদের রহস্য বিশ্ববাসীর কাছে উন্মোচন করতে হবে এবং এর আসল উদ্দেশ্য প্রকাশ করতে হবে।
৩. সুন্নী সমাজে সুন্নী আক্বীদা পাঠদানের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। বিশেষ করে, ছাহাবীগণকে সম্মান প্রদর্শন এবং তাঁদের সম্পর্কে রাফেযী কর্তৃক সৃষ্ট সন্দেহ ও অস্পষ্টতাসমূহের জবাবদানের বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।
৪. আহলে সুন্নাতকে, বিশেষ করে ইসলামী দা‘ওয়াতের কর্মীদেরকে তাঁদের নিজেদের মতানৈক্য ভুলে গিয়ে সুন্নী মতবাদকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কেননা আমাদের মতানৈক্য আমাদের বিভক্তি ওন্ত্রুর্বলতার কারণ। আর এই বিভক্তি কেবল শত্রুদের স্বার্থেই কাজে লাগে।
৫. সুন্নী দেশসমূহকে অবশ্যই শক্তিশালী হতে হবে এবং এমন শক্তি অর্জনের চেষ্টা করতে হবে, যা সুন্নী দেশসমূহের প্রতি পারসিকদের লোভ-লালসাকে প্রতিহত করতে পারে। বর্তমান শক্তিই হল সব। আজকের বিশব শক্তিশালী ছাড়া কাউকে সমীহ করে না। বিশেষ করে, আজ আমরা প্রতিপক্ষকে নিয়ত ছুরিতে ধার দিতে এবং শক্তি পরীক্ষা করতে দেখতে পাচ্ছি
৬. ইসলামের দাঈ, মিডিয়ার লোকজন এবং ব্যবসায়ীদেরকে ইসলামী চ্যানেল খুলতে হবে, যা শী‘আ মতাবলম্বী উস্কানী সৃষ্টিকারী চ্যানেলগুলির মোকাবেলা করতে পারে। কেননা আজকের যুগ মিডিয়ার যুগ। আর মিডিয়া নামক তরবারী অত্যধিক ধারালো এবং দিগন্ত বিস্তৃত।
৭. আহলে সুন্নাতকে রাফেযীদের আক্বীদা তাদেরই নির্ভরযোগ্য বই-পুস্তক থেকে প্রচার করতে হবে। যুগে যুগে তাদের খেয়ানত এবং মুসলিম উম্মাহর উপর তাদের হিংসার ইতিহাস প্রকাশ করতে হবে। আর এটাও উল্লেখ করতে হবে যে, এরা তারাই, যারা ঐক্য সৃষ্টি ও পরস্পরে কাছাকাছি আসার মিথ্যা দাবী করে।
৮. আহলে সুন্নাতকে নিজেদের ইতিহাস এবং মুসলিম উম্মাহর আক্বীদা ও ঐক্য সংরক্ষণে তাদের দীর্ঘ পথপরিক্রমা তুলে ধরতে হবে। মুসলিম উম্মাহর পবিত্রস্থানসমূহ রক্ষণাবেক্ষণে তাদের অবদানের কথাও তুলে ধরতে হবে এবং এটাও উল্লেখ করতে হবে যে, তাদের হাতেই দুনিয়ার সর্বত্র ইসলাম প্রসার লাভ করেছে।
[সেই সাথে আল্লামা ইহসান ইলাহী রচিত আশ-শী‘আ ওয়াল কুরআন, আশ-শী‘আ ওয়া আহলুল বায়েত, আশ-শী‘আ ওয়াস সুন্নাহ প্রভৃতি বইগুলো পড়ুন- অনুবাদক]
পরিশেষে, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি আমাদের জন্য আমাদের দ্বীন, নিরাপত্তা ও ঈমানকে হেফাযত করুন। তিনি আমাদের শত্রু ও আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের অনিষ্ট থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন। আমীন!
মূল : আব্দুল্লাহ আল-মাত্বরাফী
ভাষান্তর : আব্দুল আলীম বিন কাওছার
লেখক : দ্বিতীয় বর্ষ, এম,এ (উসুলুদ্দীন) মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়।