কেন্দ্রীয় কাউন্সিল সদস্য সম্মেলন ২০১১ : প্রেক্ষাপট ও প্রত্যাশা
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 412 বার পঠিত
[২৫শে
অক্টোবর ’৯৬ শুক্রবার সকালে রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আহলেহাদীছ
যুবসংঘের প্রথম দ্বি-বার্ষিক কর্মী সম্মেলনে মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের
প্রদত্ত ভাষণ। অসুখের তীব্রতায় আসতে পারবেন না ভেবে প্রথমে তিনি ভাষণটি
লিখে পাঠিয়েছিলেন। পরে কিছুটা সুস্থবোধ করলে চিকিৎসকের অনুমতিক্রমে
সম্মেলনের দিন সকালে বিমানযোগে ঢাকা থেকে রাজশাহী আসেন। ঐদিন হাযারো কর্মীর
মুহর্মুূহু তাকবীরধ্বনি ও আনন্দাশ্রুতে বিমানবন্দরে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের
অবতারণা হয়। অতঃপর তিনি সরাসরি সম্মেলন মঞ্চে এসে ভাষণটির অংশবিশেষ পাঠ
করেন]
প্রিয় সাথী ও বন্ধুগণ!
হাম্দ-ছানা ও তাসলীমবাদ আপনারা সকলে আমার প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও আন্তরিক ভালবাসা গ্রহণ করুন। ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর দীর্ঘ পথপরিক্রমায় স্বতন্ত্রভাবে এবার প্রথম নতুন ও পুরাতন কর্মীদের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হতে যাচ্ছে দেখে আমি যারপরনেই আনন্দিত। আশা করি এর মাধ্যমে পারস্পরিক মহববতের বন্ধন আরো মযবুত হবে এবং আন্দোলনের গতি আরও যোরদার হবে। আমি কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং আল্লাহ পাকের শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
প্রিয় সাথীগণ!
বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট এক কথায় ধ্বংসের দিকে দ্রুত ধাবমান একটি উল্কাপিন্ডের ন্যায়। সভ্যতা, মানবতা ও ন্যায়বিচার বর্তমানে ভূলুণ্ঠিত। অন্যায়কারীদের দোর্দন্ড প্রতাপে ন্যায়পন্থীরা আজ কিংকর্তব্যবিমূঢ়। এই ধ্বংসোন্মুখ সামাজিক প্রেক্ষাপট সৃষ্টির মূল কারণ একটাই। আর তা হ’ল আমাদের ‘ঈমানী দুর্বলতা’। কেননা প্রত্যেক মানুষ এক একটি বিশ্বাসে ভর করে এ পৃথিবীতে চলাফেরা করে। স্ব স্ব লালিত বিশ্বাস অনুযায়ী মানুষ তার জীবন পথে পদচারণা করে। এই বিশ্বাসের পরিবর্তনের মাধ্যমেই একটি সমাজের সার্বিক অবস্থা পরিবর্তন করা সম্ভব হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের সমাজ জীবনে এ বিশ্বাস অর্থাৎ ঈমানী ক্ষেত্রে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। সহজ-সরল ধর্মভীরু এই মুসলিম দেশটির ঈশান কোণে আবির্ভূত হয়েছে দেশী-বিদেশী সন্দেহবাদী বুদ্ধিজীবীদের কুটিল চক্রান্তের গাঢ় মেঘ, যা ঘনঘটার আকারে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ইতিমধ্যেই উন্মত্ত হস্তির মত সমাজ জীবনকে পর্যুদস্ত করতে শুরু করেছে। আল্লাহ ও আখেরাতের উপরে বিশ্বাসের যে গভীর অনুভূতি বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিশ্বের উন্নত সেরা সভ্য মানুষে পরিণত করেছিল; শত অভাবের তাড়নায়ও যাদের দ্বারা কোন অন্যায় আচরণ সম্ভব ছিল না। তারাই আজ বস্ত্তবাদী দুনিয়াসর্বস্ব মতবাদে বিভ্রান্ত হয়ে নৈতিকতাহীন পশুতে পরিণত হতে চলেছে। জ্বলন্ত অঙ্গারে আত্মাহুতি দানকারী উড়ন্ত পতঙ্গ যেমন নিজের আসন্ন ধ্বংসকে নিশ্চিত জেনেও নিঃসংকোচে আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে; ঈমানহীন দুনিয়াদার মানুষও তেমনি ভোগবাদী আদর্শের মায়া মরীচিকার পিছনে ছুটে কামনা-বাসনার জ্বলন্ত অঙ্গারে নিজেদের ধ্বংস নিশ্চিত জেনেও সেদিকেই দ্রুতবেগে এগিয়ে যাচ্ছে। দিনে দিনে এদের সংখ্যা বাড়ছে। সমাজের শাসনযন্ত্র হতে শুরু করে নিম্নস্তরের সাধারণ মানুষও ভোগবাদী বিশ্বাসের রাহুগ্রাসে ক্রমেই আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে।
প্রাণপ্রিয় সাথীগণ!
আল্লাহপাক মানুষকে এ পৃথিবীর যে ভূখন্ডে সৃষ্টি করেছেন, সে ভূখন্ডে বসবাসরত মানবগোষ্ঠির জন্য তার উপর বিশেষ কিছু গুরু দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। বাংলাদেশের এই সবুজ ভূখন্ডের মানুষগুলিকে আল্লাহমুখী করে সুন্দর ও সুখী সমাজ গড়ার দায়িত্ব আমাদের সকলের। বিশেষ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণের। কেননা আল্লাহপাক আমাদেরকে বিশেষ মর্যাদা দান করে এরশাদ করেছেন : كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি। মানুষের কল্যাণের জন্য তোমাদের উত্থান ঘটানো হয়েছে। তোমরা মানুষকে ন্যায়ের আদেশ করবে ও অন্যায় থেকে বিরত রাখবে’ (আলে ইমরান ৩/১১০)।
উক্ত দায়িত্ব পালন না করলে আমরা নিজেরা ক্ষতিগ্রস্ত হব ও সমাজ বিপর্যস্ত হবে। বর্তমানে মুসলিম সমাজ তার দায়িত্ব অনেকাংশে ভুলতে বসেছে এবং পাশাপাশি ভোগবাদী আদর্শ ও সন্দেহবাদী বুদ্ধিজীবীদের সৃষ্ট ধূম্রজালে নিজেদেরকে জড়িয়ে ফেলেছে। আমরা মনে করি এদেশে বর্তমানে বস্ত্তগত দারিদ্রে্যর চাইতে বিশ্বাসগত দারিদ্র্যই প্রকট আকার ধারণ করেছে। ঈমানের দারিদ্র্য হতে তাই আমাদেরকে অবশ্যই মুক্ত হতে হবে। স্মরণ করুন আল্লাহর বাণী- بَلْ تُؤْثِرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا - وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ وَأَبْقَى ‘বস্ত্ততঃ তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাক, অথচ পরকালের জীবন উৎকৃষ্ট ও চিরস্থায়ী’ (আ‘লা ৮৭/১৬)।
ভোগবাদী আদর্শ মানুষকে কখনোই অল্পে তুষ্ট হতে দেয় না। ‘আরো চাই, আরো চাই’-এই অধিক পাওয়ার তাড়না তাকে কবরে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তাড়া করে ফেরে। স্মরণ করুন আল্লাহর অহি- أَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ - حَتَّى زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ ‘অধিক পাওয়ার প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে (আখেরাত থেকে) গাফেল করে ফেলেছে। যতক্ষণ না তোমরা কবরস্থানসমূহে পৌঁছে যাও’ (তাকাছুর ১০২/১-২)। মূলতঃ ইসলাম ও ইসলাম বিরোধী আদর্শের মধ্যে মৌলিক দ্বন্দ্ব এখানেই। ইসলাম তার বিশ্বাসীদেরকে আখেরাতমুখী করে গড়ে তোলে। আল্লাহর নিকটে জওয়াবদিহিতার তীব্র দায়িত্বানুভূতি মুসলমানের কথা ও কর্মকে সুন্দর ও সুষমামন্ডিত করে তোলে। আর তাই মুসলমানের সমাজ হয়ে উঠে পৃথিবীর সর্বাধিক সুখী ও শান্তিময় সমাজ। পক্ষান্তরে আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাসহীন ব্যক্তি চরমভাবে বস্ত্তবাদী হয়ে উঠে এবং তার চরম ভোগলিপ্সা চরিতার্থ করতে গিয়ে এ পৃথিবীকে পরিণত করে অনাচার ও অশান্তির এক দুঃসহ কারাগারে। ভোগের প্রতিযোগিতায় মত্ত মানুষ নেমে যায় পশুত্বের নিম্নতম স্তরে। ন্যায়-অন্যায় সুনীতি-দুর্নীতি ইত্যাদি কথাগুলি তাদের কাছে হয়ে উঠে নিতান্তই কথার কথা। ধর্মগ্রন্থ কিংবা দেশের শাসন সংবিধানে যত সুন্দর কথাই লেখা থাক না কেন, সেগুলি তাদের কাছে শিল্পী কণ্ঠের সুন্দর কোরাসের মতই শুনায়। হৃদয়ে যা রেখাপাত করে না। কর্ম জীবনে যার প্রতিফলন ঘটে না। স্মরণ করুন পবিত্র কুরআনের সেই সুন্দরতম বাণীচিত্র :وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ لَهُمْ قُلُوبٌ لَا يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَا يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ آذَانٌ لَا يَسْمَعُونَ بِهَا أُولَئِكَ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ أُولَئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ ‘আমরা সৃষ্টি করেছি জাহান্নামের জন্য বহু জিন ও ইনসান। তাদের হৃদয় রয়েছে কিন্তু বুঝতে চেষ্টা করে না। তাদের চক্ষু রয়েছে কিন্তু তা দ্বারা তারা দেখে না। তাদের কান রয়েছে কিন্তু তারা তা দ্বারা শুনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায় বরং তার চাইতেও পথভ্রষ্ট। তারা হল গাফেল’ (আ‘রাফ ৭/১৭৯)।
বাংলাদেশে আমরা অধিকাংশ মুসলমান। এদেশের শাসনযন্ত্রের মালিকানা মুসলমানদেরই হাতে। অথচ এদেশের মানুষ অন্যান্য দেশের তুলনায় বিভিন্ন বিষয়ে অনেক পিছিয়ে আছে। এর মৌলিক কারণ হিসাবে আমরা আমাদের ঈমানের দুর্বলতাকেই দায়ী করি। এই দুর্বলতা সাধারণ জনগোষ্ঠীর চাইতে শাসক সম্প্রদায়ের ও সমাজের বিভিন্ন স্তরে নেতৃত্ব দানকারী লোকদের মধ্যেই বেশী। আর তাদেরই প্রভাবে বরং তাদেরই চক্রান্তে আজ সমাজের মেরুদন্ড যুবশক্তি নৈতিক দিক দিয়ে দেওলিয়াত্বের পর্যায়ে নেমে যাচ্ছে। আজকের শিক্ষিত যুবসমাজ বিভিন্ন দলের লেজুড় ও আর্মস ক্যাডার হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। নেতৃবৃন্দের অদূরদর্শিতা অথবা অনীহার কারণেই এদেশের শিক্ষিত বেকার যুবকের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে বর্তমানে কোটির অংক ছাড়িয়ে গেছে। আর এদেরই বেকারত্বের সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে বিভিন্ন পর্যায়ের চতুর নেতারা। উপরন্তু নৈতিকতা বিবর্জিত শিক্ষার ফলে শিক্ষিত তরুণ সমাজ ক্রমেই ভোগবাদী হয়ে উঠছে। চাকুরী-বাকুরীর বিভিন্নস্তরে এমনকি চিকিৎসার ন্যায় জনসেবামূলক চাকুরীতে গিয়েও এরা শোষকের মূর্তি নিয়ে জনগণের সামনে আবির্ভূত হচ্ছে। ফলে কি শিক্ষিত বেকার কি কর্মজীবী বা উচ্চ পর্যায়ের চাকুরীজীবি বা শাসনযন্ত্রের পরিচালক সকলেই চরিত্রগত দিক দিয়ে হয়ে উঠেছে একেকজন ভোগবাদী শোষক। ইতিমধ্যেই মাধ্যমিক পর্যায়ে ইসলামিয়াত বিষয়ে ১০০ নম্বরকে ৫০ নম্বরে পরিণত করার সরকারী প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে, যাতে ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের ক্ষীণ আলোটুকুও তরুণ ছাত্রদের অন্তর থেকে মুছে যায়। ডঃ কুদরত-ই-খুদা-এর নাস্তিক্যবাদী শিক্ষা কমিশন রিপোর্টকে আল্লাহভীরু বাংলাদেশী ছাত্র সমাজের উপরে চাপিয়ে দেওয়ার অপতৎপরতা চলছে। এমনকি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম এই স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্রটির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতাকেও পার্শ্ববর্তী ইসলামবৈরী রাষ্ট্রটির ইচ্ছা-অনিচ্ছা ও মতি-মর্যির নিকটে সমর্পণ করার সমস্ত আলামত ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ছে। উপরোক্ত প্রেক্ষাপটে আহলেহাদীছ আন্দোলনের সকল পর্যায়ের কর্মীদের ও সাথীদের করণীয় কি হবে?
আমি মনে করি আমাদের প্রথম কর্তব্য হবে স্ব স্ব ঈমানকে মযবুত করা। যে ঈমানে প্রাচীন বা আধুনিক কোনরূপ সন্দেহবাদের সংমিশ্রণ থাকবে না। আধুনিক বস্ত্তবাদী আদর্শ যে ঈমানকে গ্রাস করবে না। ইসলামের নামে সৃষ্ট যুগে যুগে বিভিন্ন তরীকা ও মাযহাবী ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের ধূম্রজাল যে ঈমানের স্বচ্ছ নীল আকাশকে মেঘাচ্ছন্ন করবে না।
২য় : আমাদেরকে নিজ নিজ কর্মজীবনে ইসলামের পূর্ণ অনুসারী হতে হবে। কারণ ইসলাম মূলতঃ কর্মের নাম, কেবলমাত্র বিশ্বাসের নাম নয়। ঈমান অনুযায়ী আমল যিনি করেন, তিনিই প্রকৃত অর্থে মুসলিম। আর এই আমলের সঠিক দিক-নির্দেশিকা হবে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও বৈষয়িক স্বার্থের কারণে পরবর্তীকালে সৃষ্ট বিভিন্ন মাযহাবী ব্যাখ্যার গোলকধাঁধায় পড়ে মুসলিম জাতি আজ শতধাবিভক্ত ও পরস্পরে শত্রুভাবাপন্ন। এমনকি খোদ আমরাই আজ স্বগোত্রীয় হিংসার শিকারে পরিণত হয়েছি। এই অবস্থার আশু নিরসনের জন্য আমাদেরকে সবদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের দিকে ফিরে যেতে হবে। ইসলামের নামে বা আধুনিকতার নামে সৃষ্ট যাবতীয় মাযহাব, মতবাদ, তরীকা ও ইজম হতে মুখ ফিরিয়ে আল্লাহ প্রেরিত অহির বিধানের দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। আমাদের আমলী যিন্দেগীকে বাতিলপন্থীদের বিরুদ্ধে নিশ্ছিদ্র দুর্গ হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। ছাত্র জীবনে হৌক আর কর্ম জীবনে হৌক, ব্যক্তি জীবনে হৌক আর সমাজ জীবনে হৌক, সর্বাবস্থায় কুরআন ও সুন্নাহের সনিষ্ঠ অনুসারী হিসাবে নিজেকে উত্তম দৃষ্টান্ত রূপে পেশ করতে হবে। শ্লোগান ও মিছিল দিয়ে নয়, নিজের আচরণ দিয়ে বাতিলকে সর্বত্র মুকাবিলা করতে হবে। রাসূল (ছাঃ)-এর ও তাঁর অতুলনীয় সাথীদের আচরণকে মনে রাখুন- مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِمْ مِنْ أَثَرِ السُّجُودِ ‘মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল ও তাঁর সাথীগণ কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোরতর ও আপোষে রহমদিল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকূ ও সিজদারত দেখবেন। তাদের কপোলদেশে দেখবেন সিজদার চিহ্ন’ (ফাৎহ ৪৮/২৯)। বাতিলের সঙ্গে আপোষ করে নয় বরং বাতিলকে প্রতিরোধ করে প্রতিটি ক্ষেত্রে হককে বিজয়ী করতে হবে। মনে রাখুন আল্লাহর বাণী-هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ ‘তিনিই সেই সত্তা যিনি স্বীয় রাসূলকে পথনির্দেশ ও সত্যধর্ম সহকারে প্রেরণ করেছেন, যাতে একে সকল ধর্মের উপরে তিনি বিজয়ী করেন। যদিও মুশরিকরা তা পসন্দ করে না’ (ছফ ৬১/৯)।
পিতা ইবরাহীম ও তাঁর সাথীদের দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা শ্রবণ করুন- إِنَّا بُرَآءُ مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاءُ أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ ‘আমরা তোমাদের সাথে এবং যাদের তোমরা দাসত্ব কর, তাদের সাথে বিচ্ছিন্নতা ঘোষণা করলাম। এবং আমাদের ও তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ বিঘোষিত হ’ল চিরকালের জন্য, যতক্ষণ না তোমরা কেবলমাত্র একক আল্লাহর উপরে ঈমান আনবে’ (মুমতাহিনা ৬০/৪)। শ্রবণ করুন আমাদের রাসূলের সিদ্ধান্তকারী চূড়ান্ত জওয়াব মুশরিক নেতাদের আপোষ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে- قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ- لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ - وَلَا أَنْتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ - وَلَا أَنَا عَابِدٌ مَا عَبَدْتُمْ - وَلَا أَنْتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ- لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِينِ ‘হে অবিশ্বাসীগণ! আমি তার ইবাদত করি না, তোমরা যার ইবাদত কর এবং তোমরাও তাঁর ইবাদতকারী নও আমি যাঁর ইবাদত করি।.. তোমাদের দ্বীন তোমাদের জন্য এবং আমার দ্বীন আমার জন্য’ (কাফেরূণ ১০৯/১-৬)।
৩য় : আহলেহাদীছ আন্দোলনের সকল পর্যায়ের মুরববী যুবক মহিলা ও শিশুদেরকে একই আন্দোলনের সাথী হিসাবে ভাবতে হবে। সকলকে একই লক্ষ্যপথের যাত্রী হিসাবে পারস্পরিক সহযোগিতার কাঠামোকে সুদৃঢ় করতে হবে। প্রত্যেককেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। কুরআন ও ছহীহ হাদীছ-এর সত্যকে সামনে নিয়ে নির্ভীক চিত্তে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলার যমীনে আমাদের সমাজ বিপ্লবের স্বপ্নকে সার্থক করে তুলতে হবে।
৪র্থ : প্রত্যেককেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে দাওয়াতের ফরয দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। আগামী দিনের সোনালী ভবিষ্যতের রূপকার হিসাবে যুবসমাজকে নতুনভাবে প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতে হবে। আমাদের এই মাতৃভূমিকে সাক্ষাত ধ্বংসের দোরগোড়া থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য কুরআন ও হাদীছ ভিত্তিক নির্ভেজাল ইসলামের দিকে সকলকে ফিরে আসতে হবে। ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ ব্যতীত যার কোন বিকল্প নেই। তাই বিগত দিনের যে কোন সময়ের চাইতে বর্তমান সময়ে আহলেহাদীছ আন্দোলনের গুরুত্ব সর্বাধিক। এই আন্দোলনই ফিরিয়ে আনতে পারে ইসলামের স্বচ্ছ সুন্দর আদি রূপ। আল-হেরা ও আল-মদীনার ফেলে আসা সেই নির্ভেজাল ইসলামের পুনঃ প্রতিষ্ঠার প্রতিজ্ঞা নিয়েই সৃষ্টি হয়েছে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’, ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ ও অন্যান্য সকল অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
আমি আপনাদেরকে সমাজ সংস্কারের লক্ষ্যে সমাজ জীবনের বৃহত্তর কর্মক্ষেত্রে খালেদ, তারেক, মুহাম্মাদ বিন কাসিম, মূসা বিন নুছাইর ও কুতাইবা বিন মুসলিমের মত দিগ্বিজয়ী বীরের বেশে আবির্ভূত হওয়ার উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন আমীন!
দীর্ঘ অসুস্থতা ও চিকিৎসকের উপদেশ অগ্রাহ্য করে আপনাদের মহতী সম্মেলনে উপস্থিত হতে না পারায় আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। প্রধান অতিথির শূন্য চেয়ারের দিকে তাকিয়ে আপনারা নৈরাশ্যে ভেঙ্গে পড়বেন না, এটাই আমার কামনা। আমার স্বপ্ন জগতের প্রিয়তম আকাংখার প্রথম রূপকার ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র প্রাণপ্রিয় সাথীদেরকে স্বচক্ষে দেখতে না পেয়ে আমি দারুণভাবে দুঃখিত ও আন্তরিকভাবে ব্যথিত।
আহলেহাদীছ আন্দোলনের স্বার্থে প্রয়োজন মনে করলে আল্লাহ যেন আমাকে দ্রুত সুস্থতা দান করেন এবং এই দীর্ঘ রোগ ভোগকে আমার গুনাহ সমূহের কাফফারা হিসাবে কবুল করে নেন। আপনারা সকলে আমার জন্য প্রাণ খুলে সেই দো‘আ করবেন। রাজধানীর একপ্রান্তের গৃহকোণে অবস্থিত রোগশয্যা থেকে আমি সম্মেলনের সফলতার জন্য আন্তরিকভাবে দো‘আ করছি এবং আপনাদেরকে আমার অন্তরখোলা সালাম জানাচ্ছি। আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।