ধর্ম নিয়ে বিতর্ক

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 797 বার পঠিত

অর্থই অনর্থের মূল। কথাটি চরম সত্য। কারণ দুনিয়ার জন্মলগ্ন থেকেই মানুষের মাঝে যত শত্রুতা, হানাহনি, রক্তপাত হয়েছে তা প্রধানতঃ দু’টি কারণেই হয়েছে। একটি নারী, অপরটি অর্থ। যেমন পৃথিবীতে সর্বপ্রথম রক্তপাত ঘটিয়েছিল কাবিল, তার কারণ ছিল নারী। মূলত এগুলো অস্থায়ী উপভোগের বিষয়। এই অস্থায়ী উপভোগের বিষয়গুলো নগদ পাই বলে স্থায়ী উপভোগের বিষয়গুলো দূরে ঠেলে দিয়ে জেনে অথবা না জেনে আমরা অনেক সময় তর্ক-বিতর্ক করে থাকি। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু সেই বিতর্ক হয় যদি ধর্মীয় বিষয় নিয়ে- যা পরকালীন স্থায়ী উপভোগ্য জগতের সাথে জড়িত, তাহলে তা সত্যিই ভাবার বিষয়। আবার অন্যদিকে ধর্মীয় বিষয় নিয়েও তর্ক হওয়া স্বাভাবিক। কারণ দুনিয়াতে  অনেক ধর্ম চালু আছে এবং প্রতিটি ধর্ম অনুসরণকারী দাবী করে থাকে আমাদের ধর্মই সত্য। যেমন মরিস বু্কাইলি, পন্ডিত রজনীশ, উইলিয়াম ক্যাম্পবেল, শ্রী শ্রী রবি শংকর এমন অনেক ব্যক্তিই রয়েছেন যারা নিজ নিজ ধর্ম নিয়ে গর্ব ও সত্যতার দাবী করেন। কিন্তু আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনীত ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। সুতরাং অন্যদিকের বিতর্ক নিয়ে না ভেবে আসুন ইসলামকে নিয়ে যে বিতর্কের ঝড়-ঝঞ্ছাবায়ু প্রবাহিত হচ্ছে তা নিয়ে আলোচনা করি। দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা মুসলমানরা এই ইসলামটাকে (শরীয়ত) টেনেহিঁচড়ে চর্ম-পেশী বিহীন খাড়া কংকালের মতই দাঁড় করিয়েছি। আজ বিধর্মীদের মাঝেও বিষয়টি সুস্পষ্ট, এজন্য তারা আমাদেরকে নিয়ে ব্যঙ্গ করার সুযোগ পায়। যেমন ডা. জাকির নায়েকের ‘বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব’ নিয়ে একটি আলোচনার পর প্রশ্নোত্তর পর্বে জনৈক হিন্দু ব্যক্তি বলেন, আপনি বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের ডাক দিচেছন অথচ আপনাদের মুসলমানদের মাঝে নেই ভ্রাতৃত্ব, নেই ঐক্য, আপনারা  আজ বিভিন্ন দলে বিভক্ত। কথাটি যেমন সত্য তেমনি মুসলমানদের জন্য বড় লজ্জাজনক, অপমানজনক। সত্যিই আজ আমরা মুসলমানরা শত শত দলে বিভক্ত এবং প্রত্যেক দলই দাবী করে আসছি আমরাই সঠিক পথের দিশারী। যদিও আমাদের ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থ একই ইসলাম, কুরআন ও ছহীহ হাদীছ। শরীয়তের বিষয় নিয়ে এই দলাদলি দেখে মনে হয় আমাদের ইসলামটা যেন অপূর্ণাঙ্গ ছিল আর প্রত্যেক দলের  নেতারাই নিজ নিজ মত দিয়ে ইসলামটাকে পূর্ণাঙ্গ করেছেন (নাউযুবিল্লাহ)। আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম’ (মায়েদা ৩)। এই আয়াতটি তো বিদায় হজের ভাষণেই নাযিল হয়েছিল, তাহলে নতুন করে আমরা কি কি বিষয় যোগ-বিয়োগ করেছি, যার কারণে আমরা আজ দলে দলে বিভক্ত? এই কারণগুলো আমাদের অনুসন্ধান করে প্রত্যেক মুসলমানের নিরপেক্ষভাবে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের দিকে ফিরে আসা উচিত। আল্লাহ আরও বলেন, ‘অবশ্যই আমি এই কুরআনে সর্বপ্রকার দৃষ্টান্ত উত্থাপন করেছি, যেন তারা চিন্তা করে’ (যুমার ২৭)। আসমান যমীনে এমন কোন অদৃশ্য বস্ত্ত নেই যা স্পষ্ট কিতাবে লেখা নেই (নমল ৭৫)। তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ রয়েছে রাসূলের মধ্যে (আহযাব ২১)। এই আয়াতগুলিতে সুস্পষ্ট যে, আমাদের শরীয়ত মানার জন্য, জান্নাত পাওয়ার জন্য কুরআন ও ছহীহ হাদীছই যথেষ্ট। সত্যিকার অর্থে আমরা সবাই যদি সকল মতভেদকে উপেক্ষা করে কুরআন ও ছহীহ হাদীছকে  সর্বক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেই, তাহলেই আমাদের সার্বিক সফলতা অর্জন করা সম্ভব হবে। সম্ভব হবে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য বাস্তবায়ন।

এই সহজ রাস্তা সামনে থাকার পরও কি কি কারণে আমরা মুসলমানরা শান্তির ধর্ম ইসলাম কে নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করি? এর জন্য মূলত দায়ী কারা?  এক শ্রেণীর নামধারী, পেটপূজারী আলেমরাই যে আমাদের সাথে প্রতারণা করছে এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। আর এ প্রতারণার সুযোগটি আমরাই তৈরি করে দিয়েছি। সোনালী যুগের ইতিহাসের দিকে আমরা ফিরে তাকালে দেখতে পাই যে, সে সময় প্রতিটি মুসলিম পরিবারে ছিল যোগ্য আলেম, প্রতিটি বাড়ী ছিল  শরীয়তের জ্ঞানচর্চার এক পাঠাগার। আর এজন্য তাদের আমল ও আক্বীদা ছিল এক, অভিন্ন। আর বর্তমান সময়ে প্রতিটি পরিবারে যোগ্য আলেম পাওয়া দূরে থাকুক, পুরো একটি সমাজে যোগ্য আলেম খুঁজে পাওয়া দুরূহ ব্যাপার। আর প্রতিটি বাড়ীতে জ্ঞানচর্চার পাঠাগার তো দূরে থাকুক সমাজের কেন্দ্রবিন্দু  মসজিদেও  জ্ঞানচর্চার কোন পাঠাগার নেই। আর এই কুরআন ও ছহীহ হাদীছের জ্ঞানচর্চা ছেড়ে দেওয়ার কারণে আজ চলমান সুষ্ঠু সুন্দর সমাজে এক আলেম এসে বলে, ভাইসব! এটা করা জায়েয। কিছু সংখ্যক লোক তার অনুসরণ করে। আবার কিছুদিন পর আরেক আলেম বলে, ভাইসব! সেটা করা না জায়েয। কিছু সংখ্যাক লোক তার পিছে চলে যায়। আবার কিছুদিন পর আরেক আলেম বলে, ভাইসব! দুটোই করা জায়েয। তৈরি হয়ে যায় আরেক দল। আবার কিছুদিন পর আরেক আলেম বলে, ভাইসব! দুটোই না জায়েয। তৈরি হয়ে যায় আরেক দল। এইভাবে আমাদের অজ্ঞতার কারণে একশ্রেণীর স্বার্থবাদী আলেমরা প্রতারণা করে আসছে। আমাদের উচিত ছিল, যখনই একটি বিষয় নিয়ে মতভেদ দেখা দিবে তখনই কুরআন ও ছহীহ হাদীছের দিকে ফিরে যাওয়া (নিসা ৫৯)। উপরোক্ত উদাহরণটির মত অবস্থা হলে আমরা যদি তাদের ফতোয়ার প্রমাণ চাইতাম, তাহলে ধরা পড়ত কে সঠিক কথা বলেছে। দুঃখের বিষয় আমরা নিজেরা কুরআন-সন্নাহর চর্চা তো ছেড়েই দিয়েছি তদুপরি প্রমাণ চাওয়ারও প্রয়োজনীয়তাটুকুও বোধ করি না। ব্যাপারটি সহজভাবে বোঝার জন্য আমি বাস্তব একটি ঘটনা পেশ করছি। ১৯৮১ অথবা ৮২ সালের ঘটনা। আমাদের গাইবান্ধা যেলার গোবিন্দগঞ্জ থানাধীন কাটাবাড়ী ইউনিয়নে উপজাতি সাঁওতাল আছে। সেসময় তাদের ঘরে তো শিক্ষা ছিলই না; বরং পুরো জাতিই ছিল অশিক্ষিত। বেশ কিছু লোক সেখানে এসে স্থায়ী বসবাসের জন্য তাদের নিকট থেকে জমি কিনতে চাইলো। জমি কিনতে গিয়ে দেখল তারা একেবারে অজ্ঞ জাতি। শুরু করলো প্রতারণা। সাঁওতালদের বলল, আমি এক বিঘা জমি কিনব, তুমি রেজিষ্ট্রি অফিসে গিয়ে বলবে আমি এক একর জমি বিক্রয় করেছি। সাওতাল বলল, মন্ডল সাহেব এক একর কি? শিক্ষিত লোকেরা বলল, একর হচ্ছে ইংরেজী শব্দ, বিঘা হচ্ছে বাংলা। অফিসে সবাই শিক্ষিত। তুমি ইংরেজিতে একর বললে সবাই খুশি হবে। তাদের কথামত অজ্ঞ সাঁওতালরা বলল, আমি এক একর জমি বিক্রি করেছি। ব্যাস দলীল হল তিন বিঘার। কিছুদিন পর জমির মালিকানা সূত্রে তিন বিঘা জমি দখল করতে গেলে সাঁওতালরা বলল, মন্ডল সাব আপনি জমি কিনেছেন এক বিঘা, তিন বিঘা দখল করছেন কেন? অবশেষে বিচার-শালিস বসল। বিচারে হাজারো লোকের উপস্থিতিতে জানতে পারল, একর হচ্ছে তিন বিঘা। সাঁওতাল বুঝতে পারল, তাদের অজ্ঞতার কারণে তারা প্রতারণার শিকার। তারা শিক্ষার দিকে ছুটল। আজ তাদের  প্রত্যেকের ঘরে কমবেশী শিক্ষিত ছেলে-মেয়ে রয়েছে। এখন আর তাদের কেউ ঠকাতে পারে না।

এই ঘটনার সাথে আমাদের দেশের একশ্রেণীর আলেমের দারুণ মিল রয়েছে। আমরা কুরআন ও হাদীছের চর্চা ছেড়ে দেওয়ার কারণে হয়েছি অজ্ঞ। আর এই অজ্ঞতার কারণে সেই সব আলেমগণ মন যা চায় তাই শরীয়ত বলে আমাদের উপর জগদ্দল পাথরের মতো চাপিয়ে দেয়। তাহলে কি আমাদের সে সময় এখনও হয়নি সাঁওতালদের মত সঠিক জ্ঞান অর্জন করে এইসব মুখোশধারী আলেমদের প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার? আমাদের কি সময় আসেনি একটি বিষয় নিয়ে বিভিন্ন রকম ফতোয়া প্রদানকারীদের নিকট দলীল-প্রমাণ চাওয়ার? মনে রাখবেন এটার ভিত্তি যেন হয় অবশ্যই কুরআন ও ছহীহ হাদীছ। প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা, এই বাস্তব ঘটনাটি নিছক সাময়িক। অর্থাৎ দুই দিনের দুনিয়ায় স্বার্থ রক্ষার জন্য শুধু সাঁওতাল নয় আমরা মুসলমানরাও বিভিন্ন কলাকৌশল রপ্ত করতে ব্যস্ত। তাহলে কেন স্থায়ী শান্তির জন্য আমার আমল-আক্বীদা যাচাই-বাছাই করে সংশোধন করব না? যার সাথে আমার পরকালের জান্নাত জাহান্নামের সম্পর্ক বিদ্যমান। আর এই ভেজালমার্কা চলমান আমল-আক্বীদা যাচাই-বাছাই করে সংশোধন করতে চাইলেই লেগে যায় তর্ক। সেটা হয় কখনো জেনে, কখনো হয় না জেনে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘এমন কিছু লোক আছে যারা অজ্ঞতা সত্ত্বেও আল্লাহ সম্পর্কে তর্ক করে এবং প্রত্যেক অবাধ্য শয়তানের অনুসরণ করে’ (হজ্জ ৩)। আল্লাহ পাক আবার বলেন, ‘এমন  কিছু লোক আছে যারা অজ্ঞতা সত্ত্বেও হেদায়াত ও উজ্জ্বল গ্রন্থ ছাড়াই আললাহ সম্পর্কে তর্ক আরম্ভ করে দেয়’ (হজ্জ ৮)। এই দুটি আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়, যদি আমাদের স্রষ্টা এবং তার বিধানের (শরীয়তের) ব্যাপারে কোন বিষয় জানা না থাকে তা নিয়ে তর্ক না করা। নিরপেক্ষভাবে দলীল-প্রমাণের ভিত্তিতে সত্যটা জানা এবং মানা। আমার বাপ-দাদারা যা বলেছে, আমার আলেম যা বলেছে, তাতে ভুল থাকা অস্বাভাবিক নয়। আমি প্রমাণ না জেনে সেইসব শোনা কথা নিয়ে কেন তর্ক-বিতর্ক করে বেড়াব? আল্লাহ পাক বলেন, যারা শোনা কথা (যাচাই-বাছাই না করে) বলে বেড়ায় তারা অধিকাংশই মিথ্যাবাদী’ (শুআরা ২২৩)। আবার আমরা অনেকে আছি, জানি না তেমন কিছু, তারপরও অনুমান করে তর্ক-বিতর্ক করি। আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা! তোমরা অধিক অনুমান থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয়ই কোন কোন অনুমান পাপ’ (হুজুরাত ১১)। শরীয়ত এমন একটি বিষয়, যাতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঘরে বসেই পাপ অথবা পুণ্য অর্জন করা যায় স্থায়ীভাবেই। যেমন হাদীছে এসেছে-যদি কোন ব্যক্তি অপরদের ভাল পরামর্শ, ভাল নির্দেশ, ভালোর দিকে আহবান করে, তার যত অনুসারী সে আমল করবে, আহবানকারী ব্যক্তিও সমপরিমাণ ছওয়াব পাবে। অপরপক্ষে যদি কোন ব্যক্তি অপরকে কুপরামর্শ, কুনির্দেশ, কুপথে আহবান জানায়, তার যত অনুসারী সে আমল করবে, আহবানকারী ব্যক্তিও সমপরিমাণ পাপ অর্জন করবে (মুসলিম, মিশকাত হা/১৫৮,২১০)

প্রিয় ভাইয়েরা! আসুন, অন্তত ধর্ম নিয়ে তর্ক-বিতর্কের বেলায় কখনো নিজে জ্ঞান অর্জন না করে শোনা কথায় অথবা আলেমের দোহাই অথবা বাপদাদার দোহাই অথবা অনুমান করে কথা বলা থেকে বিরত থাকি। আমাদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত  সকল বিধান আল্লাহ ও তার রাসূল (ছাঃ) সুস্পষ্টভাবেই বর্ণনা করেছেন। বস্ত্তত মানবজাতি অধিক বিতর্কপ্রিয় (কাহফ ৫৪)। আসুন! আমরা কুরআন ও ছহীহ হাদীছ থেকেই জানার চেষ্টা করি আমাদের সমস্যার সমাধানগুলো কোথায়। না জেনে অথবা শোনা কথায় তর্ক করলে লাভের চাইতে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। আল্লাহ পাকের সাবধান বাণী, (হে মানব জাতি) যে সম্পর্কে তোমাদের জ্ঞান নেই তার পিছনে লেগে (তর্কে) যেও না। নিশ্চয়ই কান, চোখ ও অন্তর-এদের প্রত্যেকটিই তা সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে (বনী ইসরাঈল ৩৬)। যারা দলীল-প্রমাণ ছাড়াই না জেনে তর্ক করে তাদের সাথে একটি ঘটনার দারুণ মিল রযেছে। যেমন- এক রাজার নাপিত ছিল। নাপিত তার এই পেশার পাশাপাশি বাড়ীতে অবসর সময়ে তৈল মাড়াত। তার তৈল মাড়ানোর জন্য ঘানি টানার একটি গরু ছিল। সে গরুটিকে আদর করে মানকু বলে ডাকত। হঠাৎ গরুটি মারা যায়। নাপিত সেই শোকে মাথা ন্যাড়া করে রাজার চুল কাটতে যায়। রাজা নাপিতকে বলল, তুমি ন্যাড়া করছ কেন? নাপিত বলল, রাজামশাই আমার মানকু মারা গেছে। রাজা বলল, আহা! তোমার মানকু মারা গেছে, তাহলে আমাকেও ন্যাড়া করে দাও। রাজার দেখাদেখি রাণীমা, উজির, উজিরের স্ত্রী, নাজির সকলে ন্যাড়া করল। কিন্তু বাঁধ সাধল নাজিরের স্ত্রী। সে বলল, যে মানকুর জন্য সবাই ন্যাড়া করছে আসলে সে মানকুটি কে? নাজির বলল, আমি তো জানি না, উজিরকে বলি। উজির বলল, আমি তো জানি না, রাজামশাইকে বলি। রাজামশাই বলল, সত্যিই তো যে মানকুর জন্য আমরা সবাই ন্যাড়া করছি সে মানকু কে তা তো জিজ্ঞেস করিনি। নাপিতকে ডেকে জিজ্ঞাসা করা হল। মানকু তোমার কে ছিল? নাপিত জবাবে বলল, রাজামশাই আমি অবসর সময়ে তৈল মাড়াতাম। ঘানি টানার জন্য যে গরুটি ছিল তাকে আদর করে মানকু ডাকতাম। নাপিতের কথা শুনে সবাই বোকা বনে গেল। ঠিক একইভাবে আমাদের সমাজে নামে-বেনামে অনেক ইসলামী অনুষ্ঠান চালু আছে, যা কুরআন ও ছহীহ হাদীছে খুঁজে পাওয়া যায় না। ভালো মনে করে অথবা ইসলামেরই এক অঙ্গ  জেনে আমরা তা পালন করে থাকি। আমাদের উচিত কুরআন ও ছহীহ হাদীছে না থাকা চলমান আমলগুলো থেকে দূরে থাকা এবং সেটার গোড়ার কথা জানা। মানবজাতি বলতেই কমবেশি আবেগ বিদ্যমান থাকবে। বিশেষ করে আমাদের বাংলাদেশের লোকদের মধ্যে অতিরঞ্জিত আবেগ প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। যেমন-হঠাৎ কিছু লোক কোন উদ্দেশ্যে মিছিল বের করল, মানি না, মানব না। সাথে পর্যায়ক্রমে যোগ দিল অনেক লোক। একজনকে প্রশ্ন করা হল, ভাই! এটা কিসের মিছিল? তখন মিছিলের সুরেই মিছিলকারী জবাব দেয়, জানি না, জানি না। আমেরিকার একজন পন্ডিত বলেছিলেন- ‘আবেগ দিয়ে জীবন পরিচালনা করা যায় না’। তবে সাময়িকভাবে জীবন পরিচালনা করা সম্ভব হলেও ইসলামের সাথে সম্পর্কযুক্ত কোন আমল এক মিনিটের জন্যও গ্রহণযোগ্যতা পাবে না আল্লাহর দরবারে। এ ব্যাপারে সকল আলেমই একমত। কারণ আবেগে পড়ে কোন  আমল করলে তা হবে লোক দেখানো, আর যদি কোন আমল লোক দেখানো হয়, তবে তা হবে শিরক বা হারামের অন্তর্ভুক্ত (আহমাদ, মিশকাত হা/৫৩১৮)

অতএব প্রিয় মুসলিম মিল্লাত, আসুন! আমরা সকল প্রকার অহংকার, অহমিকা, হিংসা, আবেগ পরিহার করে একমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্য ইসলামের যে প্রধান উৎস কুরআন ও ছহীহ হাদীছ তা অনুযায়ী জ্ঞানার্জন করে আমাদের আমল-আক্বীদা সংশোধন করি। আর না জেনে ধর্ম নিয়ে বিতর্ক না করি এবং জানার পর তা আমান্য বা অবহেলা না করি। এই আবেদন রেখে একটি আয়াত পেশ করে ইতি টানছি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আল্লাহ এবং তার রাসূল (ছাঃ) কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন কোন মত প্রকাশ বা ভিন্ন কোন আমল করার কোন ক্ষমতা নেই (আহযাব ৩৬)। যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশ অমান্য করে, সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হল (আহযাব ৩৬)। আললাহ আমাদের সকলকে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে জীবন গড়ার এবং একই ছাতার নিচে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন ছুম্মা আমীন!!

এমদাদ বিন মোযাম্মেল

লেখক : তাবলীগ সম্পাদক, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ, সিংগাপুর।



আরও