আমেরিকায় পড়ি
শাহরিয়ার নির্ঝর
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 763 বার পঠিত
‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ একটি নাম, একটি আন্দোলন, একটি চেতনা, একটি প্রেরণা; যে সংগঠনের রূপকার ও প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব।
তিনি আমার জীবনে সকল প্রেরণার উৎস ও মহান দীক্ষাগুরু। তাঁর পুণ্যময়
সংস্পর্শ, অতুল্য আদর্শ ও গতিশীল নেতৃত্ব আমার জীবনে এককভাবে প্রভাব
বিস্তার করে আছে। তাই তাঁকে ঘিরে অমলীন হয়ে থাকা কিছু ‘স্মৃতিকথা’ দিয়ে
গাঁথলাম এই পুষ্পমাল্য।
সূত্রপাত : ১৯৭৫ সালের মার্চ মাস। গোদাগাড়ী থানার ঝিনা ইসলামিয়া মাদ্রাসায় ঘটনাক্রমে তালেবুল এল্ম হয়ে পড়তে গেলাম। মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদের সদস্য মাষ্টার আব্দুল খালেক সাহেব (বর্তমানে আন্দোলনের শূরা সদস্য) তখন সাপ্তাহিক আরাফাত পত্রিকার গ্রাহক ছিলেন। তাঁর কাছ থেকে ধার নিয়েই সর্বপ্রথম এই পত্রিকা পাঠের সুযোগ পেয়েছিলাম। পাড়া-গাঁয়ে তখন আরাফাত পত্রিকার বেশ কদর ছিল। ছাত্র-শিক্ষকদের আগ্রহের কারণে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আরাফাত পত্রিকা নিয়মিতভাবে পাঠের ব্যবস্থা করলেন। বিকেলে মাদ্রাসার খোলা মাঠে বসে আমরা আরাফাত পত্রিকার খুঁটি-নাটি বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করতাম। ১৯৭৫-৭৬ সনের কথা। আরাফাত পত্রিকার প্রায় প্রতি সংখ্যাতেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একজন নিবন্ধকার নিবন্ধ লিখতেন। তাঁর নাম মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। মূলতঃ আরাফাত পত্রিকায় লেখা পড়েই তাঁর নামের সাথে প্রাথমিক পরিচয় ঘটে। সে সময় বরং তাঁকে না দেখেই, না জেনেই তাঁর প্রতি এক প্রকার অনুরাগ ও আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। কিছুদিন পর পাকড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক মাওলানা আবুল কালাম আযাদ আমাদের নিকট তাঁর পরিচিতি পেশ করে বললেন, আসাদুল্লাহ আল-গালিব আমার ক্লাসমেট ছিলেন। আরামনগর আলিয়া মাদরাসা থেকে আমরা এক সঙ্গে কামিল পাশ করেছি। তাঁর পিতা মাওলানা আহমাদ আলী প্রণীত ‘আকীদায়ে মুহাম্মাদী বা মাযহাবে আহলেহাদীছ’, ‘সংসার পথে’ প্রভৃতি পুস্তক ইতিমধ্যে সৌভাগ্যক্রমে আমার সংগ্রহে এসে গেছে। খুলনা-যশোর যেলা জমঈয়তে আহলেহাদীছের সহ-সভাপতি ও আমার প্রিয় লেখকের পিতা মাওলানা আহমাদ আলী এরই মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আরাফাতের মাধ্যমে সে সংবাদ আমরা পেতে থাকি। বিশেষভাবে জমঈয়ত সভাপতি জনাব ড. আব্দুল বারী একবার তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন, সেখবর আরাফাতে ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছিল। সে খবর আজও মনে পড়ে। ১৯৭৬ সালের এপ্রিল/মে মাস হবে। পাবনা আরিফপুর ঈদগাহ ময়দানে জমঈয়তে আহলেহাদীছের জাতীয় কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে। আরাফাত পত্রিকার বর্ধিত পৃষ্ঠায় আমন্ত্রিত ওলামায়ে কেরামের তালিকায় মাওলানা মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব (যেলা খুলনা)- এই নাম বিজ্ঞাপিত হতে দেখলাম এবং পাবনা কনফারেন্স গিয়ে তাঁর সাক্ষাত পাব, এই আশায় বুক বাঁধলাম। কিন্তু কনফারেন্সে গিয়ে হতাশ হলাম। কনফারেন্সে তিনি যোগদান করতে পারেননি। অনুমান করেছিলাম হয়ত স্বীয় পিতার অসুস্থতার কারণেই কনফারেন্সে যোগদান করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। ৭৬-এর জুন মাসে তাঁর বুযুর্গ পিতা মৃত্যুবরণ করেন। সাপ্তাহিক আরাফাতে তাঁর মৃত্যু সংবাদ ও সংক্ষিপ্ত জীবনী প্রকাশিত হয়েছিল।
প্রথম সাক্ষাৎ : ঢাকায় তাঁর সাথে আমার সাক্ষাতের ঘটনাটি আমার জীবনের একটি মধুরতম স্মৃতি হয়ে আছে। ১৯৭৭ সনের সেপ্টেম্বর মাস। জীবনের প্রথম ঢাকায় গিয়েছি। প্রয়াত শিক্ষক ডঃ আফতাব আহমাদ রহমানীর হাতে লেখা পরিচয়পত্র নিয়ে ৭৬, কাজী আলাউদ্দীন রোডের আরাফাত অফিসে আশ্রয় নিয়েছি। সেদিন নাজিরাবাজার মসজিদে মাগরিবের ছালাত আদায়ের পর বারান্দায় দাঁড়িয়েছি। এ সময় পাতলা ছিপছিপে বিস্কুট রঙের পাঞ্জাবী পরা একজন সৌম্যদর্শন যুবক বারান্দায় এক পাশে রাখা সাইকেলে হাত রাখলেন। উভয়ের মাঝে দৃষ্টি বিনিময় হল। অতঃপর ছালাম-মুছাফান্তে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘ভাই, আপনার বাড়ী কোথায়?’ বললাম, রাজশাহী। আমিও জিজ্ঞেস করলাম, ভাই, আপনার বাড়ী কোথায়? বললেন, আমার বাড়ী খুলনায়। বললাম-আপনি কি খুলনার আসাদুল্লাহ আল-গালিবকে চিনেন? মৃদু হেসে তিনি বললেন, হ্যা ভাই, আমিই তো আসাদুল্লাহ আল-গালিব। আমার নাম জানলেন কীভাবে? বললাম, আরাফাতে আপনার লেখা পড়ে। উনি বললেন, আমি মহসিন হলে থাকি, সময় পেলে এখানে ছালাত পড়তে আসি। সেদিনের সংক্ষিপ্ত আলাপচারিতার সব কথা এখন মনে নেই। তবে সেসময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মহসিন হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। আর এটা ছিল যুবসংঘ প্রতিষ্ঠার চার মাস পূর্বের ঘটনা।
যুবসংঘ প্রতিষ্ঠা : ৭৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসেই আমি ময়মনসিংহের ত্রিশাল চক পাঁচপাড়া মাদরাসায় ভর্তি হই। ৭৮ সালের ৫ ফের্রুয়ারী মাননীয় মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিবকে আহবায়ক করে ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ গঠিত হয়। দেশব্যাপী দ্রুতগতিতে শাখা গঠনের মাধ্যমে কাজ শুরু হয়, যা তখনকার দিনে আরাফাত পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট দ্বারা আমরা অবগত হতে থাকি। আহলেহাদীছ যুবসমাজ ও ছাত্রদের মাঝে ‘যুবসংঘ’ সেসময় যে উদ্দীপনা, উচ্ছ্বাস ও নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল, তা কেবল ‘মরা গাঙ্গে নতুন জোয়ার’-এর সাথেই তুলনা করা যেতে পারে। প্রিয় মানুষের নেতৃত্বে গড়া সংগঠনের কথা শোনামাত্র আমি ও আমার সহপাঠীরা শতগুণ উৎসাহ নিয়ে সংগঠনে যোগদানের জন্য প্রস্ত্ততি নিলাম। আমাদের চক পাঁচপাড়া মাদরাসায় শাখা গঠিত হল। রাজশাহীতে রাণীবাজার মাদরাসা ইশা‘আতে ইসলাম-এ প্রথম শাখা গঠিত হয়। ছুটিতে বাড়ী এসে আমি নিজ গ্রাম রাজশাহী, মোহনপুরের জাহানাবাদে শাখা গঠন করেছিলাম। যা ছিল রাজশাহী যেলায় গ্রামাঞ্চলের মধ্যে গঠিত যুবসংঘের প্রথম শাখা।
দ্বিতীয়বার সাক্ষাৎ : সম্ভবত ১৯৭৯ সালের জানুয়ারী মাসে মাদরাসার বার্ষিক জালসায় যোগদান ও সাংগঠনিক কাজে মাননীয় আহবায়ক সাহেব চক পাঁচপাড়া গেলে সেখানে দ্বিতীয়বারের মত তাঁর সাথে সাক্ষাৎ হয়। উত্তর যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসার ছাত্র ও যুবসংঘের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক ময়মনসিংহের আব্দুল হাফিয ভাই তাঁর সঙ্গে ছিলেন। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ-এর উদ্যোগে প্রথম ঢাকায় যে জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, তা আরো এক বছর পূর্বেই ১৯৭৯ সালের মে বা জুন মাসে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। যা বিজ্ঞপ্তি আকারে আরাফাতে প্রকাশিত হয়েছিল। নির্ধারিত তারিখে সম্মেলনে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে আমরা ঢাকা গেলাম। উত্তর যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসায় আহবায়কের রুমে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি আমাদের জানালেন, অনিবার্য কারণে সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। একটি সাদা খাতায় জীবনের প্রথম রচিত কিছু সাহিত্যকর্ম তাঁকে দেখালাম। দেখে খুশি হলেন এবং দো‘আ করলেন। যুবসংঘের ‘গঠনতন্ত্র’ বা ‘কর্মপদ্ধতি’ কিছুই তখন পর্যন্ত প্রণীত হয়নি। তাই যুবসংঘের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং পাঁচটি মূলনীতি আমার সেই খাতায় তিনি লিখে দিয়েছিলেন। কথা প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মুহাম্মাদ যিয়ারত হোসেনের খুলনার বাড়ীর ঠিকানাটিও লিখে দিয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শবেবরাতের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে যিয়ারত হোসেন তাঁর উপর ক্ষিপ্ত আচরণ করে। কিছুদিন পর তাঁর কাছেই যিয়ারত হোসেন আহলেহাদীছ হয়ে যান। সেই খাতাটি স্মৃতিস্বরূপ আমি আগলে রাখি। দু’বছর পর ১৯৭৯ সনের আগষ্ট মাসে আমি রাজশাহী চলে যাই। এ সময় যুবসংঘের কর্মী হিসেবে মাননীয় আহবায়কের সঙ্গে পুরোদমে পত্র যোগাযোগ চলছিল। রাজশাহীর মোহনপুর থানার পিয়ারপুর, মহববতপুর, মেলান্দি, সিন্দুরী প্রভৃতি গ্রামে এবং গোদাগাড়ী থানার ঝিনা, উপরবিল্লী, নামোবিল্লী, খটন্দর, আলোকছত্র, প্রসাদপাড়া প্রভৃতি গ্রামে এসময় আমি যুবসংঘের শাখা গঠন করে উত্তর যাত্রাবাড়ীর কেন্দ্রীয় অফিসের ঠিকানায় প্রেরণ করি। উপরবিল্লীর শ্রদ্ধেয় মাষ্টার আব্দুল খালেক ও ঝিনার মোসলেম ভাইকে এই সময় আমিই প্রথম যুবসংঘের দাওয়াত দিয়ে সংগঠনের অধীনে সংঘবদ্ধ করেছিলাম। ১৯৮০ সালে আমি বগুড়া সোনাতলা নাজির আখতার কলেজে ভর্তি হলাম। সোনাতলার মধুপুর গ্রামে ওসমান গণি ভাইকে আহবায়ক করে যুবসংঘের শাখা গঠিত হল। যেলা বোর্ডের রাস্তার ধারে সাইনবোর্ড লাগিয়ে অফিসঘর তৈরী করা হল। পার্শ্ববর্তী গ্রামেও যুবসংঘের দাওয়াতী কাজ চলতে লাগল। ১৯৮১ সালের মার্চ/এপ্রিল মাসের কথা। হুয়াকুয়া গ্রামে বগুড়া যেলা জমঈয়তে আহলেহাদীছের কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। রাজশাহী থেকে জমঈয়তের সহ-সভাপতি ডঃ আফতাব আহমাদ রহমানী প্রধান অতিথি ও যুবসংঘের মাননীয় সভাপতি মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে গিয়েছিলেন। আমি যুবসংঘ সভাপতির সঙ্গে দেখা করে বর্তমান অবস্থা অবহিত করলাম। তিনি কিছু পরামর্শ দিয়েছিলেন। ১৯৮২ সাল এইচএসসি পাশ করার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলাম। ভর্তি ও বিষয় নির্বাচনের ব্যাপারে সর্বতোভাবে তিনি আমাকে সহযোগিতা করেন। এজন্য কৃতজ্ঞতার সাথে তাঁর কথা স্মরণ করি। প্রসঙ্গত, এ সময় গালিব স্যার শহীদ শামসুজ্জোহা হলের আবাসিক শিক্ষক হিসেবে হলে থাকতেন। এটা ১৯৮২/৮৩ সালের কথা। জোহা হলের আবাসিক ছাত্র ও আমার ক্লাসমেট যশোরের মনিরুল ইসলাম এ সময় যুবসংঘের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। স্যার তাঁকে খুব স্নেহের চোখে দেখতেন। স্যারের রুমে আমি মাঝে-মধ্যে যেতাম। দেখতাম, স্যারের জনৈক ভাগিনা (রুহুল আমীন) যিনি ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের ছাত্র ছিলেন, স্যারের নিকট থেকে ইংলিশ মিডিয়ামের পাঠ্যবইয়ের পড়া বুঝিয়ে নিতেন। ১৯৮৪ সালের ৩০ মে যুবসংঘের কেন্দ্রীয় অফিস ঢাকা থেকে রাজশাহী রাণীবাজার মাদ্রাসা মার্কেট (৩য় তলা) স্থানান্তরিত হওয়ার আগে এ বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য রাজশাহীতে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সে বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে মনিরুল ইসলাম, সিরাজ ভাই (যশোর) ও আমি উপস্থিত ছিলাম। রাণীবাজারে অফিস স্থানান্তরের সময় কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক পদে সিরাজুল ভাই, তাবলীগ সম্পাদক পদে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-এর এনামুল হক এবং দফতর সম্পাদক পদে আমার দায়িত্ব ছিল। এনামুল হক ও আমি মাদ্রাসা মার্কেটের অফিসেই থাকতাম। কিন্তু মাদরাসা কর্তৃপক্ষের অনুদারতার কারণে সেসময় আমাদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এ সময় সাংগঠনিক সফরে পাবনা শহর ও তার পার্শ্ববর্তী গ্রাম শালগাড়িয়া, খয়েরসূতী প্রভৃতি শাখা গঠনের কথা মনে আছে। মনে পড়ে, সে সময় রবিউল ইসলাম ভাই ও মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইনের সক্রিয় সহযোগিতা দানের কথা। মনে পড়ে বগুড়া সদর থানার বৃকুষ্টিয়া, কামারপাড়া, ডেমাজানী প্রভৃতি গ্রামে সংগঠনের প্রথম দাওয়াত পৌঁছানো ও শাখা গঠন করার কথা। এ ছাড়াও সোনাতলা, শিবগঞ্জ ও অন্যান্য এলাকায় সফর করেছিলাম। রংপুর শহরের সেন্ট্রাল রোডের মাদরাসা দারুলহাদীছ সালাফিইয়াতে তখন যুবসংঘের শাখা ও কার্যক্রম ছিল। মাদরাসার ছাত্র আব্দুস সাত্তার সক্রিয় কর্মী হিসাবে আমাকে সহযোগিতা করেছিলেন এবং তাঁকে সঙ্গে নিয়ে হারাগাছ বন্দরে গিয়েছিলাম। হারাগাছ বন্দরে কয়েকটি মসজিদে শাখা গঠন করা হয়েছিল এবং মুছল্লীদের মাঝে সংগঠনের দাওয়াত পৌঁছানো হয়েছিল। হারাগাছ বায়তুল মা‘মূর মসজিদের তৎকালীন ইমাম মাওলানা লুৎফর রহমান আমাদের সক্রিয় সহযোগিতা করেছিলেন, যিনি গালিব স্যারের কামিলের ক্লাসমেট ছিলেন। সেসময় রাজশাহী যেলার বিভিন্ন অঞ্চলে সাংগঠনিক সফরে গিয়েছি। সত্য কথা বলতে কি, এখন যেভাবে ‘আন্দোলনকে বুঝেছি, সে সময় তা না বুঝা অন্যদিকে আর্থিক টানাপোড়েনের ঠুনকো অজুহাতে বেশ কিছুদিন সংগঠন থেকে নিষ্ক্রিয় ছিলাম। কিন্তু সংগঠন ও সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতার প্রতি আন্তরিক আবেগ ও আকর্ষণ আর শুভ কামনার ঘাটতি কখনই ছিল না। যুবসংঘের প্রতিষ্ঠাকালীন ও প্রতিষ্ঠাপরবর্তী নাম জানা-অজানা অনেক সাথী ও বন্ধুরা আজও জীবিত আছেন; যাদের অনেকে আবার সংগঠন থেকে ছিটকেও পড়েছেন। কিন্তু শূন্যস্থান কখনও অপূর্ণ থাকেনি। আল্লাহ তা‘আলা সময়মত যোগ্য উত্তরসূরী দিয়ে শূন্যস্থানগুলো পূরণ করেছেন এবং আগামীতেও পূরণ করে যাবেন-এ আমার সুনিশ্চিত বিশ্বাস ইনশাআল্লাহ। আল্লাহর দ্বীনের প্রকৃত লক্ষ্য অর্জনের মহান উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৯৪ সালে যেদিন ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ নির্দিষ্ট ইমারতের অধীনে পদযাত্রা শুরু করেছিল, সেদিন থেকে ইমারতের অধীনে বায়আত গ্রহণপূর্বক আমীরে জামা‘আতের ইসলামী শরী‘আত সম্মত যে কোন নির্দেশ বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নেয়ার প্রতিজ্ঞা করেছি এবং তাঁর নেতৃত্বে জামা‘আতবদ্ধ জীবনযাপনে সচেষ্ট রয়েছি। জানি না কতদূর দায়িত্ব পালন করতে পারছি, তবে যতটুকু করেছি তা যেন আল্লাহ তাঁর দ্বীনের খেদমতে কবুল করে নেন- এই প্রার্থনাই করছি নিরন্তর। আল্লাহ আমাদের এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে এদেশের পথভোলা মানুষের কাছে যেন জান্নাতের রাস্তা উন্মুক্ত করে দেন এবং আমাদের পরকালীন মুক্তির পথ সুগম করেন। আমীন!!
অধ্যাপক মুহাম্মাদ আব্দুল হামীদ
সভাপতি, আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ
পিরোজপুর সাংগঠনিক যেলা