দ্বি-বার্ষিক কর্মী সম্মেলন ২০১০
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
মুযাফফর বিন মুহসিন 919 বার পঠিত
তরুণ
ছাত্র ও যুব সমাজ দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। তাদেরকে যদি উৎকৃষ্ট আদর্শ ও উত্তম
চরিত্রে গড়ে তোলা যায়, তবে তারা দেশ ও জাতির কল্যাণ বয়ে আনবে। আর তারা যদি
ভ্রান্ত দর্শন ও নষ্ট সংস্কৃতির ছত্র-ছায়ায় বেড়ে উঠে, তবে তারাই হবে দেশ ও
জাতি ধ্বংসের শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার। উক্ত চূড়ান্ত বাস্তবতা জানার পরও একশ্রেণীর
জ্ঞানপাপী তরুণ প্রজন্মকে নিরন্তর অপসংস্কৃতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। প্রগতির
দোহাই দিয়ে পাশ্চাত্যের অপসভ্যতার ক্রীড়নক হিসাবে গড়ে তুলছে।
নাস্তিক্যবাদের মিথ্যা দর্শন দ্বারা তাদের মস্তিষ্ক ধোলাই করছে। ঢাকার
শাহবাগসহ বিভিন্ন স্থানে সেই জিঘাংসার বিষবাষ্প প্রতিনিয়ত ছড়াচ্ছে। একমাত্র
চিরন্তন জীবন বিধান ইসলাম এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ
(ছাঃ) সম্পর্কেও তারা মিথ্যা বেসাতি প্রচার করছে। যারা বস্তাপচা রাজনীতির
সাথে সম্পৃক্ত তারা মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। তাদের জানা আবশ্যক যে,
পৃথিবীতে আল্লাহর বিধান ও তাঁর নবী-রাসূলদের বিরোধিতা করে কেউ টিকে থাকতে
পারেনি। নূহ (আঃ)-এর কওম, ‘আদ, ছামূদ, লূত্ব (আঃ)-এর জাতি ও ফেরাঊনরা তার
জ্বলন্ত সাক্ষী।
মূলতঃ ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিকরা ভাল-মন্দ, সত্য-মিথ্যা, সচ্চরিত্র আর কুচরিত্র নির্ণয়ে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। নভোমন্ডল, ভূমন্ডলসহ সবকিছুর স্রষ্টা মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ নিহিত আছে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর মধ্যে’ (সূরা আহযাব ২১)। তিনি মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে লক্ষ্য করে বলেন, ‘নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত’ (ক্বলম ৪)। আল্লাহ মানুষের স্রষ্টা। তিনিই ভাল জানেন কোন চরিত্রে গড়ে উঠলে মানুষ সাফল্যের স্বর্ণশিখরে আরোহণ করতে পারবে। তাই মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আদর্শই যে সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ তাতে কোন সন্দেহ নেই।
ইসলামপূর্ব সমাজ জাহেলিয়াতের অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। ব্যভিচার, খুন, মদ্যপান, অন্যায়-অত্যাচার ও নষ্টামিতে ভরপুর ছিল। আর এ জন্যই সে যুগকে বর্বরতা ও মূর্খতার যুগ বলা হয়। উক্ত পতিত সমাজেই মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে পাঠানো হয়েছিল। তিনি সেই নোংরা জাহেলিয়াতের মূলোৎপাটন শুরু করেছিলেন যুবকদের মাধ্যমে। রাসূল (ছাঃ)-এর নবুওয়াতের প্রথম ১০ম বছর মানুষ তাঁর দাওয়াত গ্রহণ করেনি। অবশেষে ১১ নববী বর্ষে হজ্জের সময় মদীনা থেকে আসা ৬ জন যুবকের সামনে রাসূল (ছাঃ) তাঁর দাওয়াত পেশ করেন। সেই দাওয়াত তারা মদীনায় প্রচার করেন। ফলে পরের বছর পুরানো পাঁচ জন এবং নতুন সাত জন মোট বারো জন মক্কায় এসে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট বায়‘আত করেন। তাদের কাছে রাসূল (ছাঃ) যে কর্মসূচী পেশ করেছিলেন তার মাধ্যমে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, তরুণ সমাজ ব্যক্তিগতভাবে যাবতীয় অন্যায় ও নোংরা কাজ থেকে বিরত থাকবে। সেই সাথে সমাজ সংস্কার আন্দোলনে আত্মনিয়োগ করবে। নির্দিষ্ট নেতৃত্বের মাধ্যমে সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে বাধা প্রদানের সংগ্রাম করবে। রাসূল (ছাঃ) উক্ত কর্মসূচীর আলোকে তরুণদের মাধ্যমে অন্ধ জাহেলিয়াতের শিকড় উপড়ে ফেলেছিলেন। ইবরাহীম (আঃ) যেমন শিরকের উৎস মূর্তি ভেঙ্গে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছিলেন (আম্বিয়া ৫৮), তেমনি মুহাম্মাদ (ছাঃ) মক্কা বিজয়ের দিনে কা‘বা চত্বর থেকে ৩৬০টি মূর্তি ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছিলেন (বুখারী হা/২৪৭৮, ১/৩৩৬ পৃঃ)। অতঃপর যুবক আলীকে ছবি-মূর্তি ও পাকা কবর ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন (মুসলিম হা/২২৮৭; মিশকাত হা/১৬৯৬)। সেই সাথে খালিদ বিন ওয়ালীদকে দ্বারা উয্যা নামক নগ্ন জিনরূপী মূর্তিকে হত্যা ও তার আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন (নাসাঈ কুবরা হা/১১৫৪৭; মুসনাদে আবী ইয়ালা হা/৯০২, সনদ ছহীহ)। ব্যভিচার, হত্যা, সন্ত্রাস, চুরি, মদ্যপান, মিথ্যা অপবাদ ইত্যাদি অপরাধের বিরুদ্ধে শক্ত আইন করেন এবং বলিষ্ঠভাবে তা প্রয়োগ করেন। উক্ত আপোসহীন ভূমিকার মাধ্যমে মুহাম্মাদ (ছাঃ) যাবতীয় জাহেলিয়াত দূর করেছিলেন। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সোনালী সমাজ। পৃথিবীর ইতিহাসে তাঁর যুগই সোনালী যুগ বলে প্রথম স্বীকৃতি পায়। কারণ উক্ত আদর্শের আলোকেই আবুবকর, ওমর, উছমান, আলী প্রমুখ শ্রেষ্ঠ মানুষের আবির্ভাব ঘটেছিল। বেলাল (রাঃ)-এর মত দাসও শ্রেষ্ঠ মর্যাদা লাভ করেছিলেন। অন্যায় কাজ করে এসে অপরাধী নিজের অপরাধ স্বীকার করেছে। যেনার মত অপরাধ করে রজমের মত কঠিন শাস্তি ভোগ করার জন্য বারবার রাসূলের দরবারে ছুটে এসেছে (মুসলিম হা/৪৫২৭; মিশকাত হা/৩৫৬২)। অথচ কোন গোয়েন্দা ছিল না, পুলিশ ছিল না, র্যাব ছিল না। তাহলে কিসে তাকে বারবার হাযির করেছিল? সেটাই ছিল মুহাম্মাদী আদর্শ ও সর্বশ্রেষ্ঠ চরিত্রের অনুপম দৃষ্টান্ত।
এভাবে যুগ যুগ ধরে তরুণরাই জাতির পরিবর্তন এনেছে। এমনকি উপমহাদেশের বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে তরুণরাই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। একশ্রেণীর বেনিয়া গোষ্ঠীর কারণে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার দেখা পেতে ১৯০ বছর সময় লেগেছিল বটে, কিন্তু আন্দোলন সফল হয়েছিল। শাহ ইসমাঈল, সাইয়েদ আহমাদ ব্রেলভী, তিতুমীর, এনায়েত আলী, বেলায়েত আলীর অপ্রতিরোধ্য সংগ্রাম জাতির বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। মুসলিম সাংবাদিকতার জনক মাওলানা আকরম খাঁর সূচনা করা ভাষা আন্দোলন এবং বাংলাদেশ-এর স্বাধীনতা আন্দোলন তরুণ ছাত্র সমাজ ও বীরসেনানী যুবকদের মাধ্যমেই সফল হয়েছে। মুসলিম চেতনার উপর বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বিশ্বমানচিত্রে ঠাঁই পেয়েছে।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হল, বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরকে জাহেলী যুগের পচা নর্দমায় ফেলে দেয়া হচ্ছে। অসভ্য রাজনীতির নামে পাশ্চাত্যের মুরীদরা ভাস্কর্যের দোহাই দিয়ে মূর্তি, স্মৃতিস্তম্ভ, শিখা অনির্বাণ, শিখা চিরন্তন ইত্যাদির পূজা করাচ্ছে। অন্যদিকে ধর্মের নামে একশ্রেণীর ধর্ম ব্যবসায়ীরা কবর, মাযার, খানকা, গাছ ইত্যাদির পূজা করাচ্ছে। তরুণরা বৈশাখী সংস্কৃতির নামে কুকুর, শূকর, বানর, সাপ, ব্যাঙ প্রভৃতি মূর্তির মুখোশ পরে বেহায়ার মত রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। ১৪ ফেব্রুয়ারীর ‘ভালবাসা দিবস’, ১লা ফাল্গুনের ‘বসন্ত বরণ’ প্রভৃতি দিবসের নামে সমাজের সর্বত্র বেলেল্লাপনার ভাইরাস ছড়িয়ে দিচ্ছে। আর আমেরিকা-বৃটেনের খুদকুঁড়ো খাওয়া একশ্রেণীর বশংবদ মিড়িয়া কর্মী ও সংবাদ মাধ্যম এই নষ্টামিকেই গর্বের সাথে সামাজের সামনে তুলে ধরছে। এভাবে বেহায়াপনার হিংস্র ছোবলে মুসলিম চেতনা ও সমাজ ব্যবস্থা ধ্বংস করছে।
দুর্ভাগ্য হল, যে তরুণদের মাধ্যমে রাসূল (ছাঃ) যাবতীয় নোংরামি দূর করে সোনালী সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই তরুণদের মাধ্যমে বর্তমানে নব্য জাহেলিয়াতের আমদানি করা হচ্ছে। আমাদের একান্ত বিশ্বাস যে, ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর কর্মীদের মত তাওহীদী চেতনাসম্পন্ন আপোসহীন কাফেলা একদিন রাসূল (ছাঃ)-এর উক্ত কর্মসূচী আল্লাহর মদদে বাস্তবায়ন করবেই ইনশাআল্লাহ। নব্য জাহেলিয়াতের দ্বার ভাঙ্গবেই। সেদিন কোন নষ্টামির ঠাঁই হবে না। নমরূদ, ফেরাঊন, হামান, কারূণ, আবু জাহালরা দীর্ঘদিন রাজত্ব করলেও তাদেরকে যেমন লাঞ্ছনা নিয়ে বিদায় নিতে হয়েছে, তেমনি নব্য ফেরাঊনদেরও একদিন পতন হবে। ইনশাআল্লাহ এদেশে ইসলামের সুমহান আদর্শের পতাকা একদিন পত পত করে উড়বে। আল্লাহ আমাদের এই প্রার্থনা কবুল করুন-আমীন!!