ক্ষমাসুন্দর আচরণ

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 578 বার পঠিত

আল-কুরআনুল কারীম :

1- وَدَّ كَثِيرٌ مِنْ أَهْلِ الْكِتابِ لَوْ يَرُدُّونَكُمْ مِنْ بَعْدِ إِيمانِكُمْ كُفَّاراً حَسَداً مِنْ عِنْدِ أَنْفُسِهِمْ مِنْ بَعْدِ ما تَبَيَّنَ لَهُمُ الْحَقُّ فَاعْفُوا وَاصْفَحُوا حَتَّى يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ إِنَّ اللَّهَ عَلى كُلِّ شَيْ ءٍ قَدِيرٌ-

‘আহলে কিতাবের অনেকেই চায়, যদি তারা তোমাদেরকে ঈমান আনার পর কাফির অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে পারত! সত্য স্পষ্ট হওয়ার পর তাদের পক্ষ থেকে হিংসাবশত (তারা এরূপ করে থাকে)। সুতরাং তোমরা ক্ষমা কর এবং এড়িয়ে চল, যতক্ষণ না আল্লাহ তাঁর নির্দেশ দেন। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান’ (বাকারা ১০৯)

২- فَبِما رَحْمَةٍ مِنَ اللَّهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ-

‘অতঃপর আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতের কারণে তুমি তাদের জন্য নম্র হয়েছিলে। আর যদি তুমি কঠোর স্বভাবের, কঠিন হৃদয়সম্পন্ন  হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। সুতরাং তাদেরকে ক্ষমা কর এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। আর কাজে-কর্মে তাদের সাথে পরার্মশ কর’ (আলে ঈমরান ১৫৯)

- فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاصْفَحْ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ-

‘সুতরাং তুমি তাদেরকে ক্ষমা কর এবং এড়িয়ে যাও। নিশ্চয় আল্লাহ মুহসিনদের ভালবাসেন’ (মায়েদা ১৩)

4- وَلْيَعْفُوا وَلْيَصْفَحُوا أَلا تُحِبُّونَ أَنْ يَغْفِرَ اللَّهُ لَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ-

আর তারা যেন তাদের ক্ষমা করে এবং তাদের দোষত্রুটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি পছন্দ কর না যে, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করে দেন? আর আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (নূর ২২)

৫- وَما أَصابَكُمْ مِنْ مُصِيبَةٍ فَبِما كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُوا عَنْ كَثِيرٍ-

‘আর তোমাদের প্রতি যে মুসীবত আপতিত হয়, তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। আর তোমাদের অনেক কিছুই তিনি ক্ষমা করে দেন’ (শূরা ৩০)

৬-  وَجَزاءُ سَيِّئَةٍ سَيِّئَةٌ مِثْلُها فَمَنْ عَفا وَأَصْلَحَ فَأَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ إِنَّهُ لا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ-

এবং মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ। আর যে ক্ষমা করে দেয় এবং আপোস নিষ্পত্তি করে, তার পুরস্কার আল্লাহর নিকট রয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ যালিমদের পছন্দ করেন না (শূরা ৪০)

৭- وَلَمَنْ صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ-

‘এবং যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করে এবং ক্ষমা করে, সেটা তার জন্য নিশ্চয়ই দৃঢ় সংকল্পের কাজ’ (শূরা ৪৩)।       

8- وَإِنْ تَعْفُوا وَتَصْفَحُوا وَتَغْفِرُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ-

‘আর যদি তোমরা মার্জনা কর, এড়িয়ে যাও এবং মাফ করে দাও তবে নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, অসীম দয়ালু’ (তাগাবুন ১৪)। 

10- خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجاهِلِينَ

‘তুমি ক্ষমা প্রদর্শন কর এবং ভালো কাজের আদেশ দাও। আর মূর্খদের থেকে বিমুখ থাক’ (আ‘রাফ ১৯৯)

11- قَوْلٌ مَعْرُوفٌ وَمَغْفِرَةٌ خَيْرٌ مِنْ صَدَقَةٍ يَتْبَعُها أَذىً وَاللَّهُ غَنِيٌّ حَلِيمٌ

‘উত্তম কথা ও ক্ষমা প্রদর্শন শ্রেয়, যে দানের পর কষ্ট দেয়া হয় তার চেয়ে। আর আল্লাহ অভাবমুক্ত, সহনশীল’ (বাক্বারা ২৬৩)

12- إِنْ تُبْدُوا خَيْرًا أَوْ تُخْفُوهُ أَوْ تَعْفُوا عَنْ سُوءٍ فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ عَفُوًّا قَدِيرًا-

‘যদি তোমরা ভালো কিছু প্রকাশ কর, কিংবা গোপন কর অথবা মন্দ ক্ষমা করে দাও, তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, ক্ষমতাবান’ (নিসা ১৪৯)

১৩- وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ-

‘যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে ব্যয় করে এবং ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন’ (আলে ঈমরান ১৩৪)

14- وَأَنْ تَعْفُوا أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى-

‘আর তোমাদের মাফ করে দেয়া তাকওয়ার অধিক নিকটতর’ (ইবরাহীম ১২)

15- وَإِنْ عَاقَبْتُمْ فَعَاقِبُوا بِمِثْلِ مَا عُوقِبْتُمْ بِهِ وَلَئِنْ صَبَرْتُمْ لَهُوَ خَيْرٌ لِلصَّابِرِينَ-

‘আর যদি তোমরা শাস্তি দাও, তবে ঠিক ততটুকুই শাস্তি দাও যতটুকু তোমাদের দেয়া হয়েছে। আর যদি তোমরা সবর কর, তবে তা-ই সবরকারীদের জন্য উত্তম’ (নাহল ১২৬)

১৬- وَاصْبِرْ عَلَى مَا يَقُولُونَ وَاهْجُرْهُمْ هَجْرًا جَمِيلًا-

‘আর তারা যা বলে, তাতে তুমি ধৈর্য ধারণ কর এবং সুন্দর ভাবে তাদেরকে পরিহার করে চল’ (মুযাম্মিল ১০)

17- وَعِبَادُ الرَّحْمَنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا-

‘আর রহমানের বান্দা তারাই যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং অজ্ঞ লোকেরা যখন তাদেরকে সম্বোধন করে তখন তারা বলে ‘সালাম’ (ফুরক্বান ৬৩)

হাদীছে নববী থেকে :

17- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا نَقَصَتْ صَدَقَةٌ مِنْ مَالٍ وَمَا زَادَ اللَّهُ عَبْدًا بِعَفْوٍ إِلَّا عِزًّا وَمَا تَوَاضَعَ أَحَدٌ لِلَّهِ إِلَّا رَفَعَهُ اللَّهُ-

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘দান সম্পদ কমায় না; ক্ষমা দ্বারা আল্লাহ কোন বান্দার সম্মান বৃদ্ধি ছাড়া হ্রাস করেন না এবং যে কেউ আল্লাহর জন্য বিনয় প্রকাশ করে আল্লাহ তার সম্মান বাড়িয়ে দেন’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৮৮৯)

18-أن عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ عَوْفٍ يَقُولُ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ ثَلَاثٌ وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ إِنْ كُنْتُ لَحَالِفًا عَلَيْهِنَّ لَا يَنْقُصُ مَالٌ مِنْ صَدَقَةٍ فَتَصَدَّقُوا وَلَا يَعْفُو عَبْدٌ عَنْ مَظْلَمَةٍ يَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللَّهِ إِلَّا رَفَعَهُ اللَّهُ بِهَا وفي رواية إِلَّا زَادَهُ اللَّهُ بِهَا عِزًّا يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يَفْتَحُ عَبْدٌ بَابَ مَسْأَلَةٍ إِلَّا فَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِ بَابَ فَقْرٍ

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তিনটি বিষয় আছে যার সত্যতার ব্যাপারে আমি শপথ করতে পারি। ছাদাকার কারণে কখনও সম্পদ হ্রাস পায় না, অতএব তোমরা ছাদাকা কর। কোন ব্যক্তি যুলুমের শিকার হওয়ার পর যদি শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই তাকে ক্ষমা করে দেয়, তবে আল্লাহ তার মর্যাদাকে উঁচু করে দেন, অন্য বর্ণনায় এসেছে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার সম্মান বাড়িয়ে দেন। আর যেই বান্দা ভিক্ষার দুয়ার উন্মুক্ত করে, আল্লাহ তার অভাব ও দারিদ্রে্যর দরজা উন্মুক্ত করে দেন’  (তিরমিযী, মিশকাত হা/৫২৮৪, সনদ শক্তিশালী)

20- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى مِنْبَرِهِ يَقُولُ ارْحَمُوا تُرْحَمُوا وَاغْفِرُوا يَغْفِرْ اللَّهُ لَكُمْ-

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা দয়া কর, তাহলে তোমাদের উপরও দয়া করা হবে, তোমরা ক্ষমা কর, তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন’ (আহমাদ, হা/৬৫৪১, ৭০৪১, সনদ হাসান)

21-  عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْها قَالَتْ مَا ضَرَبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَيْئًا قَطُّ بِيَدِهِ وَلَا امْرَأَةً وَلَا خَادِمًا إِلَّا أَنْ يُجَاهِدَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَمَا نِيلَ مِنْهُ شَيْءٌ قَطُّ فَيَنْتَقِمَ مِنْ صَاحِبِهِ إِلَّا أَنْ يُنْتَهَكَ شَيْءٌ مِنْ مَحَارِمِ اللَّهِ فَيَنْتَقِمَ لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ-

আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘রাসূল (ছাঃ) জিহাদরত অবস্থা ব্যতীত কাউকে নিজ হাতে প্রহার করেন নি। নিজের স্ত্রীদেরকেও না, খাদেমদেরকেও না। কোন ব্যক্তির দ্বারা শারীরিক বা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও নিজের ব্যাপারে কখনও প্রতিশোধ নেননি, তবে আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত কোন বিষয় ভঙ্গ করা ব্যতীত। এটা নিতেন  তিনি কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যেই’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮১৮)

22-عَنْ شَقِيقٍ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بن مسعودٍ كَأَنِّى أَنْظُرُ إِلَى النَّبِىِّ - صلى الله عليه وسلم - يَحْكِى نَبِيًّا مِنَ الأَنْبِيَاءِ ضَرَبَهُ قَوْمُهُ فَأَدْمَوْهُ ، وَهْوَ يَمْسَحُ الدَّمَ عَنْ وَجْهِهِ ، وَيَقُولُ «اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِقَوْمِى فَإِنَّهُمْ لاَ يَعْلَمُونَ-

আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) বলেন, আমি যেন এখনও রাসূল (ছাঃ)-এর দিকে তাকিয়ে আছি, যখন তিনি এমন একজন নবীর ঘটনা বর্ণনা করছিলেন, যাকে তাঁর আপন কওমের লোকেরা প্রহার করে রক্তাক্ত করেছিল; আর তিনি নিজের চেহারা হতে রক্ত মুছছিলেন আর বলছিলেন, হে আল্লাহ! তুমি আমার কওমের কৃত অপরাধ ক্ষমা করে দাও। কেননা, তারা অজ্ঞ’ (মুত্তাফাক আলাইহ, হা/৫৩১৩)

23- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: " لَيْسَ الشَّدِيدُ بِالصُّرْعَةِ، إِنَّمَا الشَّدِيدُ الَّذِي يَمْلِكُ نَفْسَهُ عِنْدَ الْغَضَبِ

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘ঐ ব্যক্তি শক্তিশালী নয়, যে প্রতিপক্ষকে মুকাবিলায় পরাভূত করে ফেলে। বস্ত্ততঃ সেই ব্যক্তিই প্রকৃত বীর, ক্রোধের সময় যে নিজেকে সংযত রাখতে পারে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১০৫)

26- عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ كُنْتُ أَمْشِي مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَلَيْهِ بُرْدٌ نَجْرَانِيٌّ غَلِيظُ الْحَاشِيَةِ فَأَدْرَكَهُ أَعْرَابِيٌّ فَجَبَذَهُ جَبْذَةً حَتَّى رَأَيْتُ صَفْحَ أَوْ صَفْحَةَ عُنُقِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ أَثَّرَتْ بِهَا حَاشِيَةُ الْبُرْدِ مِنْ شِدَّةِ جَبْذَتِهِ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ أَعْطِنِي مِنْ مَالِ اللَّهِ الَّذِي عِنْدَكَ فَالْتَفَتَ إِلَيْهِ فَضَحِكَ ثُمَّ أَمَرَ لَهُ بِعَطَاءٍ

আনাস (রাঃ) বলেন, আমি একদিন রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে পথ চলছিলাম। তাঁর গায়ে মোটা পাড়ের একটি নাজরানী চাদর ছিল। এমন সময় একজন গ্রাম্য বেদুঈন তাঁকে পেয়ে তাঁর চাদর ধরে জোরে টান দিল। সেই টানের চোটে আমি রাসূল (ছাঃ)-এর কাঁধে দেখলাম চাদরের ডোরা কাটা ছাপ পড়ে গেছে। অতঃপর বেদুঈনটি বলল, হে মুহাম্মাদ! তোমার কাছে যে আল্লাহর মাল আছে, তা থেকে আমাকে কিছু দেয়ার নির্দেশ দাও। রাসূল (ছাঃ) সে বেদুঈনের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললেন এবং তাকে কিছু প্রদানের নির্দেশ দিলেন (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৫৮০৩)

২৭- عن أبي هريرة : عن رسول الله صلى الله عليه و سلم أنه قال : سأل موسى ربه عن ست خصال... فأي عبادك أعزُّ ؟ قال : الذي إذا قَدَرَ غَفَرَ-

২৭. আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, মূসা (আঃ) তাঁর প্রভুকে ৬টি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে চাইলেন... হে প্রভু! আপনার সর্বাধিক ক্ষমতাশালী বান্দা কে? আল্লাহ বললেন, ঐ ব্যক্তি যে (প্রতিশোধ গ্রহণের) ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ক্ষমা করে দেয় (আহমাদ, ইবনু হিববান, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৩৫০)

মনীষীদের বক্তব্য থেকে :

  1. হাসান (রাঃ) বলেন, মুমিনের সর্বোত্তম গুণ হল ক্ষমাপরায়ণতা (আল আদাবুশ শারঈয়াহ ১/৭১)
  2. সাঈদ বিন মুসাইয়েব (র.) বলেন, সকল ব্যাপারে আল্লাহ ক্ষমাকে ভালবাসেন কেবলমাত্র আরোপিত হদ্দ (আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তিযোগ্য অপরাধ) ব্যতীত।
  3. জনৈক আরব সাহিত্যিক বলেন, ليس الحليم من ظلم فحلم، حتّى إذا قدر انتقم، ولكنّ الحليم من ظلم فحلم حتّى إذا قدر عفا ‘সে ব্যক্তি ধৈর্যশীল নয়, যে যুলুমের শিকার  হয়ে ধৈর্য ধরে, অতঃপর যখন সুযোগ পায় প্রতিশোধ গ্রহণ করে; বরং সেই ধৈর্যশীল যে যুলুমের শিকার হয়ে ধৈর্যধারণ করে। অতঃপর যখন প্রতিশোধ গ্রহণের সামর্থ্য হয় তখন ক্ষমা করে দেয়’।
  4. ইংরেজীতে বলা হয়- Forgiveness is the economy of the heart... forgiveness saves the expense of anger, the cost of hatred, the waste of spirits অর্থাৎ ‘ক্ষমা হল অন্তরের অর্থনীতি। কেননা এটা ক্রোধের ব্যয় সংকোচন করে, ঘৃণা ও বিরাগের খরচ হ্রাস করে এবং কর্মোদ্দীপনার অপচয় প্রতিহত করে’। কেউ বলেন, Forgiveness is the best revenge অর্থাৎ ‘ক্ষমা হল সবচেয়ে বড় প্রতিশোধ’।
  5. উমর (রাঃ) বলেন, "لا تظن بكلمة خرجت من أخيك المؤمن شرًّا، وأنت تجد لها في الخير محملاً ‘তোমার কোন মুমিন ভাইয়ের মুখ থেকে প্রকাশিত কথাকে খারাপ ভাবে নিও না, যতক্ষণ না পর্যন্ত তাকে কল্যাণার্থে ধরে নেয়া যায়’।
  6. ইবনু সীরীন (র.) বলেন, إذا بلغك عن أخيك شيء فالتمس له عذرًا ، فإن لم تجد فقل: لعل له عذرًا لا أعرفه ‘যখন তুমি তোমার ভাইয়ের ব্যাপারে খারাপ কিছু শোন, তবে তার পক্ষে কিছু ওজর খোঁজার চেষ্টা কর, যদি তা না পার, তবে বল, নিশ্চয়ই তার পক্ষে কোন ওজর আছে যা আমি জানি না’।

সারবস্ত্ত

  1. ক্ষমাশীলতা উত্তম চরিত্রের অনুপম বহিঃপ্রকাশ।
  2. ক্ষমা ঈমানের পূর্ণতা ও ইসলামের সেŠন্দর্যের প্রমাণ।
  3. ক্ষমাপরায়ণতা মানুষের অন্তরের প্রশস্ততা, অপরের প্রতি সুধারণা ও মহত্বের প্রমাণ বহণ করে।
  4. ক্ষমা আল্লাহ ও মানুষের প্রতি ভালবাসার সৃষ্টি করে।
  5. ক্ষমা মানুষকে অনেক দুনিয়াবী ফিৎনা থেকে রক্ষা করে।
  6. ক্ষমাকারী ও ক্ষমাপ্রাপ্ত উভয়ের জন্যই ক্ষমা অনেক কল্যাণ বয়ে আনে।
  7. মানুষকে যে ক্ষমা করতে পারে, আল্লাহর কাছেও সে ক্ষমা আশা করতে পারে।
  8. সর্বোপরি ক্ষমা হল আলোর পথ যে পথ মানুষকে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি লাভে নিত্য প্রেরণা যোগায়।


বিষয়সমূহ: বিবিধ
আরও