কেন্দ্রীয় কাউন্সিল সদস্য সম্মেলনে প্রদত্ত কেন্দ্রীয় সভাপতির উদ্বোধনী ভাষণ
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব 697 বার পঠিত
[প্রাচীন
কালে হাযরামাউত নামে খ্যাত মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলীয় শহর
ছা‘দা। এর দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত এক মরুময় পাহাড়ী উপত্যকার নাম
দাম্মাজ। আজ থেকে ২০ বছর পূর্বে এই দাম্মাজ ইয়েমেনের একটি অখ্যাত অজপাড়াগাঁ
ভিন্ন কিছুই ছিল না। মরুময় এই শহরের অধিবাসীরা সে সময় ছিল শী‘আ যায়দিয়া
সম্প্রদায়ভুক্ত। এই সম্প্রদায়েরই একজন সৌভাগ্যবান সন্তান শায়খ মুক্ববিল বিন
হাদী আল-ওয়াদেঈ গত শতাব্দীর মধ্যভাগে সঊদী আরবে পড়াশোনা করতে গিয়ে সুন্নী
আক্বীদা গ্রহণ করেন। তখন থেকে দাম্মাজের উষর প্রান্তরে তাওহীদের সজীব চারা
গজানো শুরু হয়। শায়খ মুক্ববিল পড়াশোনা শেষ করে সঊদী আরব থেকে ফিরে আসেন
১৯৭৯ সালে। সেই বছরই তিনি নিজ গ্রামে ‘দারুল হাদীছ’ নামে একটি মাদরাসা চালু
করেন। এ মাদরাসার মাধ্যমে ধীরে ধীরে শায়খ মুক্ববিলের বিদ্যাবত্তার খ্যাতি
ছড়িয়ে পড়তে থাকে দিগ্বিদিক। দাম্মাজের শীআ অধিবাসীরা দলে দলে ভ্রান্ত
আক্বীদা থেকে ফিরে এসে সুন্নী মতবাদ গ্রহণ করা শুরু করে। ফলে বিগত শতাব্দীর
শেষভাবে এই প্রতিষ্ঠানটির খ্যাতি এতই বৃদ্ধি পায় যে, সমগ্র ইয়েমেনসহ
বহির্বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে ছাত্ররা এখানে জ্ঞানার্জনের জন্য ছুটে
আসতে থাকে। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানটি সারাবিশ্বে এককভাবে সর্ববৃহৎ সালাফী
শিক্ষাগার হিসাবে স্বীকৃত। ফলে দু’দশক পূর্বের অখ্যাত দাম্মাজ গ্রামটি আজ
বিশ্বব্যাপী পরিচিত স্থান। এই বিখ্যাত মাদরাসাটি গড়ে উঠার ইতিহাস এবং এর
প্রাতিষ্ঠানিক পরিচিতি নিয়েই এবারের বিশেষ নিবন্ধটি। - নির্বাহী সম্পাদক]।
দাম্মাজ পরিচিতি :
ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলে ছাফরা প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ছা‘দা যেলার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে এক মরুময় পাহাড়ঘেরা ক্ষুদ্র নগরী দাম্মাজ। এই নগরীর পূর্বদিকে অবস্থিত সঊদী আরবের নাজরান প্রদেশ। ২০০৪ সালের হিসাব অনুযায়ী এই নগরীর জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১৬ হাজার। অধিবাসীদের একটা বড় অংশ বহু পূর্ব থেকেই শী‘আ যায়দিয়া মতাবলম্বী। আর বাকী প্রায় ৫ সহস্রাধিক অধিবাসী শী‘আ মতবাদ পরিত্যাগী সুন্নী ও সালাফী মতাবলম্বী মুসলিম। অল্পসংখ্যক ইহুদীও এখানে বসবাস করত, যারা পরবর্তীতে আমেরিকা ও ইসরাঈলে অভিবাসিত হয়ে চলে গেছে। ১৯৭৯ খৃষ্টাব্দে এই শহরেরই সৌভাগ্যবান সন্তান শায়খ মুক্ববিল বিন হাদী আল ওয়াদেঈ নগরীর উপকণ্ঠে ‘দারুল হাদীছ’ নামক একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র হিসাবে ধীরে ধীরে সমগ্র ইয়েমেনে একটি স্বতন্ত্র পরিচিতি লাভ করে এই মাদরাসাটি। ফলে প্রাচীন শিক্ষা কারিকুলাম অনুযায়ী পরিচালিত এই মাদরাসা বর্তমানে কেবল ইয়েমেনেই নয়, বরং বহির্বিশ্বেও ইসলামের মূলধারার জ্ঞানচর্চায় আগ্রহী ছাত্রদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। এ মাদরাসাকে কেন্দ্র করে অখ্যাত দাম্মাজ শহর আজ পরিণত হয়েছে সুপরিচিত শিক্ষা নগরীতে।
দারুল হাদীছ দাম্মাজের পরিচিতি :
অবস্থান : ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলের বিভাগীয় শহর ছাফরার অন্তর্গত ছা‘দা যেলার একটি শহরতলী হল দাম্মাজ। এখানেই দারুল হাদীছ দাম্মাজ অবস্থিত। ছা‘দা সিটি থেকে এর দূরত্ব ৭ কিলোমিটার। গাড়ীতে যেতে আধাঘন্টার পথ। এছাড়া ইয়েমেনের ছান‘আ, হাদীদাহ, মা‘বার, ইব, যিমার, ‘আতামাহ, মাভিয়া, আশ-শাহার প্রভৃতি শহরে এই মারকাযের অধীনস্ত শাখা রয়েছে। দেশের বাইরেও মিসর, সোমালিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশে এর কার্যক্রম চালু হয়েছে।
প্রতিষ্ঠাকাল : ১৩৯৯ হিজরী মোতাবেক ১৯৭৯ খৃষ্টাব্দ।
প্রতিষ্ঠাতা : প্রখ্যাত ইয়েমেনী বিদ্বান শায়খ মুক্ববিল বিন হাদী আল ওয়াদেঈ আল-খাল্লালী এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ১৯৩৩ খৃষ্টাব্দে দাম্মাজ উপত্যকার ওয়াদেঈ গ্রামে আলী রাশাদ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবেই তিনি পিতৃহারা হন। দাম্মাজে তখন জ্ঞানচর্চার অনুকূল পরিবেশ ছিল না। নিজ গ্রামে কেবল প্রাথমিক অক্ষরজ্ঞান এবং কুরআন তেলাওয়াত শিক্ষালাভ করেন। অতঃপর ২০ বছর বয়সে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য সঊদীআরব গমন করেন এবং সেখানকার ওলামায়ে কেরামের মজলিসে অংশগ্রহণ করা শুরু করেন। সেখানে তিনি ‘ফাতহুল মাজীদ শারহু কিতাবুত তাওহীদ’ গ্রন্থটি অধ্যয়ন করার পর এর দ্বারা খুবই প্রভাবিত হন। অতঃপর ইয়েমেনে ফিরে এসে সালাফী দাওয়াত প্রচার করা শুরু করেন। মুখ খুলেন শী‘আ আক্বীদার বিরুদ্ধে। ফলে যায়দিয়া ও রাফেযী শী‘আদের তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়েন তিনি। এক পর্যায়ে তাদের চাপের মুখে তিনি শী‘আদেরই একটি মাদরাসায় ভর্তি হন এবং আরবী ভাষার উপর গভীর দক্ষতা অর্জন করেন। এসময় তিনি আরবী ব্যাকরণের নাহু শাস্ত্রের প্রসিদ্ধ বই ‘কাৎরুন নাদা’ অধ্যয়ন করেন অন্তত ৭ বার এবং তা কন্ঠস্থ করে ফেলেন। অতঃপর ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ (১৯৬২-১৯৭০) শুরু হলে তিনি আবার ফিরে যান সঊদী আরবে এবং মসজিদে হারামের মা‘হাদে ভর্তি হন। সেখানে উচ্চ-মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার পর মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে ‘উছূলুদ্দীন’ বিভাগে অনার্স এবং ‘হাদীছ’ বিভাগে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। অতঃপর হাদীছ, তাফসীর ও ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে গভীর গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেন। প্রায় দুই দশক সঊদী আরবে অবস্থানকালে তিনি অধ্যয়নের সুযোগ লাভ করেন শায়খ বিন বায, শায়খ মুহাম্মাদ ইবনুল উছায়মীন, শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী, মুহাম্মাদ বিন আব্দু্ল্লাহ আস-সোমালী, আব্দুল মুহসিন আল আববাদ, মুহাম্মাদ আমীন আশ-শানক্বীতীসহ তৎকালীন সময়ের বড় বড় সকল বিদ্বানদের নিকটে। যদিও তিনি বলতেন, ‘আমি আমার শিক্ষকদের নিকট থেকে যত না শিখেছি, তার চেয়ে বেশী শিখেছি সালাফদের রচিত গ্রন্থ পাঠে।’ এরপর তিনি নিজেই বিভিন্ন হালাকায় শিক্ষাদান করা শুরু করেন এবং স্বীয় জ্ঞানবত্তার কারণে অল্পদিনেই খ্যাতি লাভ করেন।
১৯৭৯ সালে তাঁকে সরকারবিরোধী সন্দেহে গ্রেফতার করা হয় এবং কয়েকমাস পর শায়খ বিন বাযের হস্তক্ষেপে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন। তবে তাঁকে ইয়েমেনে ফিরতে বাধ্য হতে হয়। ইয়েমেনে ফেরার পর তিনি সালাফী সংস্কারবাদী দাওয়াত প্রচার করা শুরু করে। এ সময় যথারীতি ইসমাঈলী এবং যায়দী শী‘আরা তাঁর চরম বিরোধিতা করে। তিনি বলেন, আমি মসজিদে ইমামতি করতাম। কিন্তু মুছল্লীরা আমার বামপার্শ্বে দাঁড়াত। আমি তাদেরকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তারা বলল, শী‘আ মারকায মসজিদ ‘মাসজিদুল হাদী’র একজন মুফতী আমাদের বলেছেন, যদি কোন মুছল্লী ওয়াহহাবী ইমামের ডানপার্শ্বে দাঁড়ায়, তবে তার ছালাত বাতিল হয়ে যাবে। অতঃপর আমি সেই মসজিদে গিয়ে ছালাত আদায়ের পর মাইক নিয়ে মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখা শুরু করলাম এবং তাদেরকে ধারণা দিলাম আহলে বায়েতের প্রতি আহলে সুন্নাহ কেমন শ্রদ্ধা পোষণ করে সে সম্পর্কে। কিন্তু লোকেরা আমার বিরুদ্ধে চরম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। এমনকি তারা দলবদ্ধ হয়ে উদ্যত হল আমাকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করতে। চরম উত্তেজনার মুহূর্তে আমাকে বাঁচানোর জন্য আমার এক শী‘আ আত্মীয় হঠাৎ পিছন থেকে পিস্তল বের করে ফাঁকা গুলি করল। এতে লোকেরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। আমি রক্ষা পেলাম সে যাত্রায়। এটা ছিল আল্লাহর অসীম রহমত। ঐ শীআ আত্মীয়টি ধর্মীয়ভাবে আমার বিদ্বেষী হলেও বংশীয় ঐতিহ্যবশত সেদিন আমাকে রক্ষা করেছিল।
এভাবে সকল বিরোধিতা মুকাবিলা করে তিনি তাঁর দাওয়াত প্রচার করতে থাকেন এবং নিজ জন্মভূমি দাম্মাজে ‘দারুল হাদীছ’ নামক একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এখানেই তিনি জীবনের শেষ ২২ বছর অতিবাহিত করেন এবং মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পশ্চিমা দেশগুলো থেকে আগত হাযার হাযার ছাত্রদেরকে পাঠদানে নিয়োজিত থাকেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি আক্বীদা, তাফসীর, হাদীছ ও ফিকহসহ সমসাময়িক বিভিন্ন দল ও মতবাদ সম্পর্কে সমালোচনামূলক ৪০টিরও বেশী গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর নিরন্তর প্রচেষ্টায় হাজার বছর ধরে শীআদের একচেটিয়া আদিবাস হিসাবে স্বীকৃত শহর দাম্মাজ আজ পরিণত হয়েছে একটি সালাফী অধ্যুষিত নগরীতে। বর্তমানে দাম্মাজ শহরের অর্ধেকের বেশী অধিবাসীই হল তাঁর মাদরাসায় শিক্ষালাভের জন্য আগত স্থায়ী-অস্থায়ী ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ।
জীবনের শেষপ্রান্তে এসে তিনি জটিল লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। চিকিৎসার জন্য তাঁর ভক্তরা আমেরিকা, জার্মানী পর্যন্ত তাঁকে নিয়ে যান। কিন্তু কোন ফল না হওয়ায় তিনি সঊদী আরবের জেদ্দার একটি হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকেন। অবশেষে ১৪২২ হিজরীর ৩০ রবীঊছ ছানী মোতাবেক ২০০১ সালের ২১ জুলাই তিনি জেদ্দাতেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর জানাযা হয় মক্কায় এবং আল আ‘দল কবরস্থানে শায়খ বিন বায, শায়খ উছায়মীনের কবরের নিকটবর্তী স্থানে কবরস্থ হন।
‘দারুল হাদীছ’ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস :
শায়খ মুক্ববিল সঊদীআরব থেকে ফিরে আসার পর নিজ গ্রাম দাম্মাজে ছোট ছোট শিশুদের কুরআন শিক্ষা দেয়া শুরু করলেন। কিন্তু অসহনীয় বিরোধপূর্ণ পরিবেশ তাকে অচিরেই নিজ গ্রাম ছাড়তে বাধ্য করলো। ফলে নিজ গ্রাম ছেড়ে তিনি ইয়েমেনের বিভিন্ন শহরে তাঁর দাওয়াত নিয়ে ঘুরতে লাগলেন। বিভিন্ন স্থানে অনেক মানুষ তাঁর দাওয়াত গ্রহণ করল এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিল। ইতোমধ্যে শায়খের সঊদী আরব অবস্থানকালীন সময়ে যে সকল ছাত্র তাঁর কাছে পাঠ গ্রহণ করেছিলেন, তাদের কেউ কেউ তাঁর নিকট শিক্ষালাভের জন্য ইয়েমেনে আগমন করলেন। যাদের অধিকাংশই ছিলেন মিসরীয় এবং সঊদী। তাদের সংখ্যা দশের অধিক ছিল না। শেষ পর্যন্ত এদের সহযোগিতায় জন্মভূমি দাম্মাজেই শায়খ ছোট্ট একটি মসজিদ নির্মাণ করলেন এবং সেখানেই ছোট শিশু ও বিদেশী ছাত্রদের নিয়ে একটি ক্ষুদ্র শিক্ষায়তন গড়ে তুললেন। এতে গ্রামের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা এবং আলেম হিসাবে পরিচিত ব্যক্তিরা নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ক্ষুণ্ণ হবার আশংকায় প্রমাদ গুণল। তারা ভাবল শায়খ মুক্ববিল গ্রামে এসে মাতববরী গ্রহণের চেষ্টা করছেন। শায়খ তাদের আশ্বস্ত করলেন কেবলমাত্র ছাত্রদের দ্বীনের সঠিক জ্ঞানদান ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য তাঁর নেই। এভাবেই শুরু হল আপন বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল এই ভিন্নধর্মী প্রতিষ্ঠানটির অনাড়ম্বর যাত্রা। মদীনায় শায়খের একটি ব্যক্তিগত লাইব্রেরী ছিল, যা তিনি ইয়েমেনে চলে আসার সময় রেখে এসেছিলেন। পরবর্তীতে এক ছাত্রের সহযোগিতায় তাঁর লাইব্রেরীর সমুদয় গ্রন্থ স্থানীয় শী‘আ প্রশাসনের নানা বাধার মুখেও দাম্মাজে নিয়ে আসতে সমর্থ হন। সমগ্র ইয়েমেনে তাঁর লাইব্রেরীটিই তখন সর্ববৃহৎ এবং সমৃদ্ধতম সংগ্রহশালা হিসাবে বিবেচিত হত। ধীরে ধীরে ছাত্রদের জমায়েত বৃদ্ধি পেতে পেতে আজকের অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অখ্যাত এক অজপাড়াগাঁয়ে গ্রামীণ পরিবেশে এত বিশাল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে এবং দেশ-বিদেশের হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী এখানে এসে ভীড় জমাবে, তা কেউ কল্পনাও করেনি। স্বয়ং প্রতিষ্ঠাতা শায়খ বলেন, ‘এখানে যা কিছু হয়েছে, তা সবকিছুই আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহেই হয়েছে। আমাদের ক্ষমতা, জ্ঞানের পরিধি বা ক্ষুরধার বক্তব্য ইত্যাদি কোন কিছুরই ভূমিকা ছিল না এর পিছনে। একমাত্র আল্লাহ চেয়েছেন বলেই এত কিছু সম্ভব হয়েছে। সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি এ প্রতিষ্ঠানে এত বরকত দান করেছেন’।
বর্তমান মুদীর : ২০০১ সালে শায়খ মুক্ববিল মৃত্যুবরণ করলে তাঁর ওছিয়ত মোতাবেক মাদরাসার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন শায়খ আবু আব্দুর রহমান ইয়াহইয়া বিন আলী আল-হাজূরী। ১৯৬২ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয় সঊদী আরবে। অতঃপর ১৯৮৫ সালে তিনি শায়খ মুক্ববিলের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। অত্যন্ত কর্মঠ ও বিজ্ঞ আলেমে দ্বীন হিসাবে তিনি দক্ষতার সাথে এই মারকায পরিচালনা করে চলেছেন।
অবকাঠামো : ‘দারুল হাদীছ’ পুরোপুরিভাবে একটি মসজিদভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয় একটি ছোট্ট মাটির মসজিদের মাধ্যমে। ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে শায়খ মুক্ববিলের বাড়ির পার্শ্বে এক বড় আকারের মসজিদ নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে ছাত্র বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আরো বৃহৎ আকারে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। সম্প্রতি এই মসজিদটিকে লাইব্রেরীতে পরিণত করে আরো একটি বিশালাকার মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। দিন-রাত সর্বক্ষণ এই মসজিদ ছাত্র-শিক্ষকে পরিপূর্ণ থাকে। কোথাও ক্লাস হয়, কোথাও ছাত্ররা কুরআন ও হাদীছ মুখস্ত করে, আবার কোথাও নতুন ছাত্ররা আবাসস্থল গেঁড়েছে। এছাড়া মসজিদের বাইরে কাচা মাটির ইটের তৈরী এটাচ্ড বাথসহ রুম রয়েছে, যেখানে ছাত্ররা ভাড়া দিয়ে থাকে।
আবাসন : বর্তমানে প্রায় সমগ্র দাম্মাজ শহর পরিণত হয়েছে ছাত্রদের আবাসিক হোস্টেলে। পরিবারসহ আগত ছাত্ররা অথবা কয়েকজন মিলে যদি কেউ চায় তবে বাড়ী ক্রয় করতে পারে। সাড়ে তিন লাখ টাকা থেকে সাত লাখ টাকার মধ্যে এসব বাড়ী কেনা যায়। তবে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছলরা সাধারণত পাহাড়ী অঞ্চলে সস্তা দামে জমি কিনে নিজেরাই বাড়ি তৈরী করে নেয়। আর শায়খ মুক্ববিলের ওয়াক্বফকৃত জমিতে নির্মিত বাড়ীসমূহ খালি থাকা সাপেক্ষে ছাত্রদেরকে ফ্রি প্রদান করা হয়। এসব বাড়ীর অধিকাংশই মাটির নির্মিত। পানির ব্যবস্থা থাকলেও বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই। তবে রাতে কোন কোন জায়গায় জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুত সরবরাহ করা হয়। সাধারণভাবে ছোট একটি পরিবারের জন্য মাসিক ৬-৭ হাজার টাকার মধ্যে জীবন-যাপন করা সম্ভব।
মাদরাসার নিজস্ব খাদ্য-ব্যবস্থাপনা খুব সাধারণ। সকালে-বিকালে রুটি এবং দুপুরে ভাতের ব্যবস্থা রয়েছে। অবশ্য ছাত্ররা চাইলে বাইরের হোটেলে কিংবা নিজেরা রান্না করেও খেতে পারে।
|
শিক্ষাদান পদ্ধতি : দারুল হাদীছের শিক্ষাদান পদ্ধতি বর্তমান বিশ্বের প্রচলিত কোন পদ্ধতির সাথে সামঞ্জস্যশীল নয়। সম্ভবতঃ প্রাচীন যুগে সালাফে ছালেহীন যেভাবে শিক্ষালাভ করতেন ঠিক সে পদ্ধতিকেই ধরে রাখার চেষ্টা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি কোন নির্দিষ্ট ক্লাস রুম পর্যন্ত নেই। ক্লাসের জন্য ধরাবাঁধা কোন শিডিউল নেই। সারাদিনই সেখানে ক্লাস নেন শিক্ষকগণ। প্রতিষ্ঠানের প্রধান শায়খ ইয়াহইয়া আল-হাজূরী দিনে ৩টি ক্লাস নেন। যেখানে সকল শিক্ষার্থীর উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। ক্লাসগুলি হল যোহরের পর ইবনে কাছীর ও ছহীহুল জামে‘, আসরের পর ছহীহ বুখারী এবং মাগরিবের পর আক্বীদা ও উছূলে ফিকহবিষয়ক গ্রন্থসমূহ। এই ক্লাসগুলোর মাধ্যমে তিনি ছাত্রদের নিয়মিত পাঠ অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করেন। এছাড়া অন্যান্য শিক্ষকরা নিয়মিত বিষয়ভিত্তিক ক্লাস গ্রহণ করে থাকেন। মসজিদের উপরতলা মহিলাদের ছালাত আদায়ের জন্য নির্ধারিত। সেখানে শায়খ মুক্ববিলের দুই স্ত্রী এবং কন্যা উম্মে আব্দুল্লাহ আয়েশা মহিলা শাখার ক্লাস নেন। মহিলা শাখা পরিচালনার জন্য তাঁরা ছাড়াও আরো কয়েকজন শিক্ষিকা রয়েছেন। এছাড়া সাউন্ডবক্সের মাধ্যমে শায়খ ইয়াহইয়া আল-হাজূরীসহ অন্যান্য শিক্ষকদের ক্লাসে ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করে। মহিলাদের জন্য পৃথক একটি বিরাট লাইব্রেরী রয়েছে, যেখানে তাদের গবেষণা করার সুযোগ রয়েছে।
আক্বীদা বিষয়ক গ্রন্থাবলী অধ্যয়নের ব্যাপারে এখানে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়। এছাড়া তাফসীর, হাদীছ, ফিকহ প্রভৃতি বিষয়ে বুনিয়াদী শিক্ষা দেয়া হয়। সালাফে ছালেহীনের শিক্ষাপদ্ধতির অনুসরণে এখানে মুখস্তবিদ্যার প্রতি গুরুত্ব অত্যধিক। কুরআন হিফয, হাদীছ ও মৌলিক গ্রন্থসমূহের মতন ও ইবারত মুখস্ত করা বাধ্যতামূলক। বলা হয়ে থাকে, সবচেয়ে কম মেধার শিক্ষার্থীরাও এখানে সপ্তাহে গড়ে ২৫টি হাদীছ মুখস্ত করে।
কোর্স শেষে এখানে কোন সার্টিফিকেট প্রদানের ব্যবস্থা নেই। শায়খ মুক্ববিল এর জওয়াবদিহিতায় বলেন, ‘আমরা এখানে কোন সার্টিফিকেটের জন্য কাজ করি না। আমি মদীনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে মাস্টার্স সার্টিফিকেটটি পেয়েছিলাম তা পরে কোথায় রেখেছি, নিজেই জানি না। খুঁজলেও পাব না, কেননা বহুদিন আগেই আমি তা হারিয়ে ফেলেছি’। তাঁরা মনে করেন মুসলিম উম্মাহ মাস্টার্স, পিএইচ.ডি ডিগ্রিধারীদের ভীড়ে ভরপুর, কিন্তু প্রকৃত দ্বীনদার আলেম খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সুতরাং সার্টিফিকেটধারী নয়, বরং খালিছ প্রকৃত আলেম তৈরীর জন্য তাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন।
ছাত্রসংখ্যা : এখানে ইয়েমেন ছাড়াও ছাত্রদের একটা বিরাট অংশ বহির্বিশ্ব থেকে আগমনকারী। বর্তমানে সেখানে দেশী-বিদেশী প্রায় ১২ হাজার ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়নরত রয়েছে। ইউরোপ-আমেরিকা থেকে আগত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীরা মূলতঃ নবমুসলিম। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া থেকেও অনেক শিক্ষার্থী সেখানে অধ্যয়নরত রয়েছে। লন্ডনপ্রবাসী কিছু বাংলাদেশীও সেখানে পড়াশোনা করছেন। বিদেশ-বিভূঁই থেকে এসে অনেক শিক্ষার্থীই আবার সপরিবারে বসবাস করছেন কেবলমাত্র জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যেই। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নির্ধারিত কোন বয়সসীমা না থাকায় যে কোন বয়সী জ্ঞানপিপাসুরা এখানে ভর্তি হতে পারে। আর অনিবন্ধিত মাদরাসা হওয়ায় বিদেশী শিক্ষার্থীরা স্টুডেন্ট ভিসা পান না। তাই সাধারণত তারা ভিসিট ভিসায় এসে এখানে থেকে যান। তবে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও তাঁদেরকে দাম্মাজে অবস্থানকালীন সময়ে সরকারী বাঁধার মুখে পড়তে হয় না। সরকার থেকে এ ব্যাপারে কিছুটা নমনীয়তা প্রদর্শন করা হয়।
দারুল হাদীছের স্বতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য :
(ক) মানহাজ : মানহাজের দিক থেকে এই প্রতিষ্ঠান কঠোরভাবে সালাহে ছালেহীনের মানহাজ অনুসরণ করেন। প্রতিটি কাজে-কর্মে সুন্নাতকে অনুসরণ করা এবং সকল কিছুর উপর সুন্নাতকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। সুন্নাতের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করার এখানে জোর প্রচেষ্টা চালানো হয়। মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শুরু থেকে এই ঐতিহ্য বজায় রাখলেও বর্তমানে সেখানকার পরিবেশ অনেকটা মিশ্রিত হয়ে উঠেছে। এজন্য শায়খ রাবী মাদখালী বলেছিলেন, ‘যদি তুমি ইলম শিখতে চাও, তাহলে দাম্মাজে যাও’।
(খ) যুহদ (দুনিয়াবিমুখতা) : দাম্মাজের ছাত্ররা এই ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর পিছনে না ছোটার শিক্ষা নিয়ে বেড়ে উঠে। এখানকার আবাসন, খানাপিনা ইচ্ছাকৃতভাবেই খুব সাধারণ মানের। ছাত্ররা অন্যদের মত সার্টিফিকেটের আশায় পড়াশোনা করে না। তারা কুরআন ও সুন্নাহকে স্রেফ এজন্যই অধ্যয়ন করে যে, তারা এর মাধ্যমে পরকালীন মুক্তি পেতে চায়। এখানে কেবলমাত্র পরকালীন মুক্তির আশায় সুদূর বিদেশ-বিভূঁই থেকে আসা বিত্তশালী ছাত্র-ছাত্রীদের অতি সাধারণ জীবন-যাপন দেখলে সত্যিই মনে হবে তারা যেন উক্ত হাদীছের প্রতিমূর্তি হয়ে উঠেছে যেখানে বলা হয়েছে, كن في الدنيا كأنك غريب أو عابر سبيل وعد نفسك في أهل القبور অর্থাৎ তুমি দুনিয়ায় এমনভাবে বসবাস কর যেন তুমি একজন আগন্তুক বা পথচারী মুসাফির, আর নিজেকে গণ্য কর কবরবাসীদের একজন হিসাবে (বুখারী, মিশকাত হা/৫২৭৪)।
(গ) ফলপ্রসূ জ্ঞান : পরীক্ষা পাশ করে বা ভাল রেজাল্ট করে দুনিয়াবী কোন প্রতিষ্ঠানে উচ্চ বেতনে চাকুরীর স্বপ্ন দেখার পরিবর্তে কেবলমাত্র দ্বীনের প্রকৃত জ্ঞানলাভের জন্য ছাত্ররা এখানে গভীর মনোনিবেশ সহকারে অধ্যয়ন করে। নিজের প্রয়োজন মত যে কোন গ্রন্থ তারা যোগ্য শিক্ষকের অধীনে অধ্যয়ন করতে পারে। কোন ছাত্র যদি কোন বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন করে এবং সে বিষয়ে পাঠদান করতে চায় তবে মসজিদের বাইরে পোস্টারে নিজের নাম ও বিষয় লিখে দিতে পারে। এভাবে সে নিজের জ্ঞান বিতরণেরও সুযোগ পায়। জ্ঞানচর্চার উত্তম সুযোগের সাথে সাথে তাদের জ্ঞানার্জন হয় পুরোপুরি আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে। ফলে দ্বীনের জ্ঞান তাদের মাঝে স্বল্প সময়েই বদ্ধমূল হয়ে উঠে। তাদের লিখিত গ্রন্থ, প্রবন্ধ-নিবন্ধ এবং বক্তব্যের প্রতি লক্ষ্য করলেই এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়। বিশুদ্ধ জ্ঞানের এই নিশানকে সম্বল করে বিশ্বের আনাচে-কানাচে তারা দ্বীনের সঠিক জ্ঞান বিতরণ করে চলেছেন। বিশ্বজুড়ে সালাফী মানহাজের প্রসারে তারা ভূমিকা রাখছেন জোরালোভাবে। ফালিল্লাহিল হামদ।
ইয়েমেনে দারুল হাদীছের প্রভাব :
শায়খের দাওয়াত শুরু হওয়ার পূর্বে ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চল ছিল শীআ মতবাদের ঘাঁটি এবং দক্ষিণাঞ্চল ছিল ছূফী মতবাদের ঘাঁটি। কিন্তু বর্তমানে এই দাওয়াতের বরকতে সমগ্র ইয়েমেনে আজ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের অনুসারীরা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। শত শত বছর ধরে লালিত শী‘আ ও ছূফী মতবাদের ভ্রান্তি থেকে মানুষ দলে দলে মুক্তির পথ সন্ধান করছে।
এই মারকাযের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় ফিরে গিয়ে দ্বীনের সঠিক দাওয়াত মানুষের দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে দিচ্ছেন। আক্বীদা, ফিকহ, হাদীছ প্রভৃতি বিষয়ে তাদের লিখিত বই-পুস্তক ও প্রবন্ধ-নিবন্ধ সংখ্যা ১০ সহস্রাধিক। এছাড়া মুশরিক ও বিদ‘আতীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রামে তাদের অবস্থান মধ্যগগণের সূর্যের মতই তেজোদ্দীপ্ত। তাদের সাহসী ভূমিকার কারণে কেবল দাম্মাজ নয়, বরং সমগ্র ইয়েমেন জুড়ে তাওহীদ ও সুন্নাহর নবআলোর বিকিরণ শুরু হয়েছে। ফালিল্লাহিল হামদ।
দারুল হাদীছ দাম্মাজ সম্পর্কে কিছু সমালোচনা :
এই মারকাযের বিরোধী কিছু ব্যক্তিরা বলে থাকে যে, এখানকার ছাত্ররা শায়খ ইয়াহইয়া আল-হাজূরীর অন্ধ অনুসারী এবং এখানকার শিক্ষকদের কোন মতের বিরুদ্ধাচরণ করা যায় না। যদি করা হয়, তবে তাকে ‘বিদ‘আতী’ আখ্যা দিয়ে মারকায থেকে বিতাড়িত করা হয়। কেউ কেউ বলেন, এখানকার শায়খগণ আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধাচারণে সিদ্ধহস্ত ইত্যাদি। তবে এসব অভিযোগ অতিরঞ্জিতই বলা যায়। আর যদি কিছু সত্যতা থেকেও থাকে তবুও এই প্রতিষ্ঠানের সুউচ্চ মর্যাদা এবং মহান খেদমতের সামনে তা নিতান্তই অনুল্লেখযোগ্য।
শেষকথা : বর্তমান বিশ্বে মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পর যদি কোন গুরুত্বপূর্ণ সালাফী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম করতে হয়, তবে প্রথমেই আসে ‘দারুল হাদীছ দাম্মাজ’-এর নাম। সারা বিশ্বে সালাফী আন্দোলনের যে ব্যাপ্তি ঘটছে এবং মানুষের মধ্যে দ্বীনের ব্যাপারে যে সচেতনতা জাগ্রত হচ্ছে, তার পিছনে এই সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রয়েছে অসামান্য অবদান। সাথে সাথে দ্বীনের সঠিক শিক্ষাগারের সন্ধানে আজও যে বহু মানুষ উদগ্রীব হয়ে রয়েছে, দাম্মাজের মত অখ্যাত দুর্গম অজপাড়াগাঁয়ে এবং এই সুপ্রাচীন কারিকুলামের মাদরাসায় দেশ-বিদেশের এত ছাত্র-ছাত্রীর সমাবেশ তাই প্রমাণ করে। এখানে নেই কোন স্বাস্থ্যকর আবাসন ও চিকিৎসার ব্যবস্থা। নেই কোন পুষ্টিকর খাবারের নিশ্চয়তা। নেই কোন সার্টিফিকেট প্রাপ্তি বা উন্নত ভবিষ্যতের প্রত্যাশা। এমনকি স্থায়ী ভিসা পাওয়াও অসম্ভব। তবুও মানুষ এখানে ছুটে আসছে যাবতীয় বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে। শুধু তাই নয়, পশ্চিমা বিলাসবহুল লাইফস্টাইল থেকে আসা বহু ছাত্ররাও এখানে নিতান্ত দীনহীনের বেশে দিন কাটাচ্ছে কেবলমাত্র সঠিক দ্বীনের জ্ঞান অর্জনের আশায়। কেবল একটা দ্বীনী পরিবেশে সন্তানদের মানুষ করার জন্য ইউরোপ-আমেরিকার অনেক পরিবার বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে হিজরত করে চলে আসছে এখানে। এসবই প্রমাণ করে আল্লাহর নেক বান্দাদের অন্তরে কতটা স্থান করে নিয়েছে এই মাদরাসা। আল্লাহ এই প্রতিষ্ঠানকে কবুল করুন এবং বিশ্বের আনাচে-কানাচে পথহারা মানুষের কাছে দ্বীনের সঠিক দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার তাওফীক দিন। আমীন!!