জাতের বড়াই
শরীফ আবু হায়াত তপু
১.
‘তুমিও জিতবে’ আর ‘প্রতিপত্তি ও বন্ধুলাভ' বইগুলো যথাক্রমে শিবখেরা আর ডেল কার্নেগীর লেখা। আমাদের দেশের দিশেহারা তর্রণ-যুবকের কাছে এমন পুস্তকগুলো আলাদীনের চেরাগসম। আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেকে বিত্ত আর চিত্তের সমন্বয়ে একজন সফল মানুষ হিসেবে তৈরী করার একটা সিলেবাস মনে করা হয় এমন পুস্তকগুলোকে। এসব থেকে খুব উৎসাহ পাওয়া যায় এটা ঠিক। কিন্তু উৎসাহটা যখন আসে কেবলমাত্র পার্থিব আরাম-আয়েশ আর প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণের জন্যে তখন একটু ভয় হয়। আবার এসব প্রাপ্তির প্রতি যে লোভ দেখানো হয় তা আমাদের পরকালীন জীবনের জন্যে করণীয় সম্পর্কে উদাসীন হতে বিপুলভাবে সহায়তা করে, এই বিষয়টা একদম শিউরে উঠার মতো।
আমাদেরকে বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে দেখানো হয় কীভাবে একজন সফল মানুষ তার জীবনে এত এত সফলতা লাভ করেছেন। আমাদের কাছে তাই রোল মডেল হিসেবে আবির্ভূত হন টলস্টয়, কনফুসিয়াস, রবার্ট ব্রুস, কার্লাইল, আব্রাহাম লিঙ্কন, হালের বিল গেটস, স্টিভ জবস আর জুকারবার্গরা। আমরাও বিপুল উদ্যমে এমন রোল মডেলদের অনুসরণ করতে গিয়ে ভুলে যাই মানবজন্মের উদ্দেশ্য আর পরকালের জন্যে করণীয়গুলো। আমাদের মনোযোগটা চলে যায় পার্থিব জীবনের সাফল্যের দিকে, একমুখীভাবে।
সাধারণ মানুষ মাত্রই সম্ভবত কীর্তিমানদের দ্বারা প্রভাবিত হতে পছন্দ করে। যুগে যুগে অসংখ্য কীর্তিমানরা তাই আমাদের মানসপটে রোল মডেলের আসন দখল করে আছেন। আমরা আমাদের রোল মডেলদের অনুসরণ করে বড় হতে চাই, জীবন পরিচালনা করতে চাই। বর্তমান আধুনিক যুগটা তাই আমাদের শিশুকাল থেকে রোল মডেল সাপ্লাই দিয়ে আসছে। একটি শিশুর কাছে সুপারম্যান, স্পাইডারম্যান আর পাপাইরা হলো রোল মডেল। 'এসব কমিক হিরোরা তাদের অলৌকিক ক্ষমতা দিয়ে মন্দকে ধ্বংস করে ফেলবে', 'আমাদের নিরাপত্তার জন্যে এসব সুপারহিরোরাই শেষ ভরসা', এমনকিছু ধারণা নিয়ে আধুনিক শিশুরা বড় হতে থাকে। শিশুরা তারপর শুর্র করে অ্যাকশন কার্টুন দেখা এবং তার হাত ধরে প্লে-স্টেশন আর কম্পিউটারে হিংস্রতার চর্চাটা। আরেকটু বড় হবার সাথে সাথে সুপারহিরোর জায়গা দখল করে নেয় বিভিন্ন রেসলার আর হলিউডের মাসলম্যনরা। বয়স বাড়ার সাথে সাথে শোবিজ আর স্পোর্টস সেলিব্রিটিদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমনা আর ইসলামবিদ্বেষী শিক্ষক এবং প্রগতিশীল মেধাবী বড় ভাইগুলো যারা গাজার ফিলিংস ছাড়া পড়াশোনায় মন বসাতে পারেন না, তারা চলে আসনে আমাদের রোল মডেল হিসেবে। এছাড়া পৃথিবীর তাবৎ কর্পোরেট সেলিব্রিটিরাও সেই শ্রদ্ধার আসনে ঠাঁই পান। আমরাও পৃথিবীর বুকে দৃপ্ত পায়ে টিকে থাকার জন্যে এবং আরো আধুনিক হবার আশায় পারিবারিকভাবে গড়ে ওঠা ইসলামী মূল্যবোধগুলোর কারণে লজ্জিত হতে থাকি। পরবর্তীতে এসব মূল্যবোধ সুষ্ঠুভাবে উপড়ে ফেলার চেষ্টা করি। এমন একটা জীবনে মাঝে মাঝে যখন খানিকটা হতাশা আসে তখন আশ্রয় নেই আরজ আলী মাতবর, বার্ট্রান্ড রাসেল, চে গুয়েভারা, পীর-ফকির কিংবা কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের। জীবনের মানে খুঁজে পাই এইসব হিরোদের ফিলোসফিতে।
আমরা আধুনিক হতে থাকি। খানিকটা ইসলামপ্রীতি আমাদের ভেতর তবু রয়েই যায় তাই নানান কিসিমের আইডলদেরকে আমরা আমাদের প্রয়োজনে আমদানী করি। কেবল জুম‘আর ছালাতের মুছল্লী আর শেভ করা চকচকে মুখের অর্থনীতিবিদ রোল মডেলরা আমাদেরকে শেখান, আধুনিক যুগের ব্যাংক ইন্টারেস্ট আর ইসলামে নিষিদ্ধ সুদ এক বিষয় না। আমাদের হাসিটা একান-ওকান হয় খুশীতে, ‘যাক, আমরা তাহলে সুদ খাª্রছ না’। রোল মডেলরা ঘোষণা করেন, বিয়ের উদ্দেশ্যে প্রেম করাটা ইসলামে নিষেধ নেই। আমাদের হাসি আরো লম্বা হয়। আমরা সোডিয়াম বাতির ঝাপসা আলোর নিচে ডেটিং স্পটগুলোকে প্রেমের আলোয় উজ্জল করতে থাকি। আমাদের সুপারহিরোর কাছ থেকে ঘোষণা আসে কোরআন শরীফে পর্দার আয়াত রাসূল (ছাঃ)-এর স্ত্রীদের জন্যে নাযিল হয়েছিল, ম্যাংগো পিপলদের জন্যে এটা আবশ্যক না। আমাদের খুশী আর ধরে না। আপুরা তাই ফতোয়া আর জিন্সকে জাতীয় পোষাক বানিয়ে নেন। জীবনে মাস্তি করার সকল উপাদানই ইসলামে হালাল। ইসলামের মডার্ণ এডিশনটা তাই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বলিউডের সালমান খান পুরো পরিবার নিয়ে ঈদের নামাজ পড়েন জেনে আমরা আপ্লুত হই, বাংলার চিত্রনায়কদের উমরাহ করার খবরে আহ্লাদিত হই। ঈদকে সামনে রেখে বলিউড-ঢালিউডে 'ঈদের ছবি' ট্যাগ নিয়ে মুভি রিলিজ হয়, আমরাও ‘ঈদের ছবি’কে ঈদেরই একটা অংশ হিসেবে মেনে নিই।
আমাদের দৃঢ় ধারণা হয়, যেহেতু আমরা মুসলমান, মাঝে মাঝে ছালাত পড়ি আর ছালাত শেষে হাত তুলে তুমুল দোয়া করি, আল্লাহ আমাদেরকে অবশ্যই ক্ষমা করে বেহেশত দিয়ে দেবেন, তিনি তো দয়ালু। একদিকে পৃথিবীর তাবৎ সুখ এনজয় করলাম আর অন্যদিকে মৃত্যুর পরের জীবনেও (যদি থেকে থাকে) আরাম-আয়েশটা নিশ্চিত থাকলো। এভাবে কোনো একদিন এমন আধুনিক কেউ সারা জীবন অসাম্প্রদায়িক এক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতে দেখতে মারা গেলে তার শুভাকাঙ্খীরা হুজুর ডেকে মৃতের কানের কাছে সূরা ইয়াসিন পাঠ আর কোরআন খতম করান। স্বজনেরা সাদা কাপড় আর টুপি পরে দফায় দফায় জানাজা আর কুলখানি-চেহলাম করে মৃত ব্যক্তির বেহেশত নিশ্চিত করে ফেলেন!
কী বীভৎস আমাদের ইসলাম চিন্তা!
২.
আমাদের সৃষ্টিকর্তা আমাদের কাছে রোল মডেল হিসেবে রাসূল (ছাঃ) কে পাঠিয়েছেন যেনো আমরা তাঁর অনুসরণ করি আর পথহারা হয়ে না যাই। সম্মানিত পাঠক, আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তার প্রেরিত রাসূলকে অনুসরণ করে কীভাবে একেকজন কীর্তিমান মানুষ পার্থিব জীবন আর পরকালীন জীবনে সফল হয়েছেন তা যদি আমরা জানতাম তাহলে তথাকথিত রোল মডেলদের ধোঁকায় পড়ে আমাদের দুই জীবনকেই অন্ধকারে ছুঁড়ে ফেলতাম না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছাহাবীরা যেভাবে তাঁকে অনুসরণ করেছেন আমাদের জন্যে সেইসব থেকে শিক্ষা গ্রহণ করাটা হবে সবচাইতে বুদ্ধিমানের কাজ। রাসূল (ছাঃ)-এর ছাহাবীরা হতে পারেন আমাদের কাছে একেকজন হিরো। আমাদের হাতের নাগালেই আজকাল এসব মর্যাদাবান ছাহাবীদের জীবনী বই পাওয়া যায়। ছাহাবীদের জীবন সম্পর্কে জানতে পারলে আমরা এটাও জেনে যাবো যে ইসলামে কোনো শর্টকাট নেই। একেকজন ছাহাবীর জীবন একেকটা জ্বলন্ত মশালের মতো, আলো ছড়িয়ে যায় যুগ যুগ ধরে। ইসলামের জন্যে সীমাহীন ত্যাগ আর কঠিন কঠিন সব পরীক্ষায় চমৎকারভাবে তাঁদের উৎরে যাওয়া, এসব সম্পর্কে জানতে পারলে একজন মুসলিমের (হোক সে যত দুর্বল ঈমানের অধিকারী) হিরোদের তালিকায় কখনোই ছাহাবায়ে কেরামদের চেয়ে উপরে অন্য কেউ (নবী-রাসূল ব্যতীত) স্থান পেতে পারবে না, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। এই হিরোদের সম্পর্কে জানতে পারলে আমাদের ইসলামের প্রতি আনুগত্য বাড়তে পারে আর বর্তমান যুগে আমাদের ভুলগুলো শোধরানোর তাগিদ পেতে পারি। লাভগুলো সব আমাদেরই।
আমরা যারা সাধারণ মুসলিম, ইসলাম সম্পর্কে মোটামুটি কিছু জানি তারা হয়তো চার খলীফা, হযরত বেলাল, আবু হুরায়রা, ইবনে মাসঊদ (রাঃ) এবং আরো অল্প কয়েকজন ছাহাবায়ে কেরামদের সম্পর্কে সামান্য কিছু জানি। এমন আরো অসংখ্য ছাহাবায়ে কেরাম রয়েছেন যাদের যে কারও জীবন-আলোচনা আমাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে যথেষ্ট। রাসূল (সাঃ)-এর নবুয়্যত প্রাপ্তির প্রথমদিকে ইসলাম গ্রহণ করা ছাহাবী হযরত মুসআব ইবনে উমাইর (রাঃ) এমন একজন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-এর ছাহাবীদের মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে আমার অত্যন্ত পছন্দের একজন হলেন মুসআব ইবনে উমাইর (রাঃ)। যতবার আমি তাঁর সম্পর্কে পড়ি, আমার চোখদুটো টলমল করতে থাকে।
হযরত মুসআব (রাঃ)-এর মা ছিলেন প্রচুর ঐশ্বর্যের মালিক। ধনীর দুলাল মুসআব (রাঃ) বেড়ে উঠেছিলেন বিপুল ভোগ-বিলাসের মধ্যে। মক্কার সবচেয়ে সুদর্শন যুবক ছিলেন তিনি। তাঁর থেকে উত্তম পোষাক মক্কার আর কেউ পরতো না। ইতিহাসবিদরা বলেন, মুস‘আব ইবনে উমাইর (রাঃ) ছিলেন মক্কার সর্বোৎকৃষ্ট সুগন্ধী ব্যবহারকারী। মক্কার সকল মজলিশ আর বৈঠকে তিনি ছিলেন খুব কাঙ্খিত একজন। তাঁর তীক্ষ্ণ মেধা, ব্যক্তিত্ব আর উন্নত ব্যবহার সবাইকে মুগ্ধ করতো। সুদর্শন আর ধনীর আদুরে দুলাল এই সদ্য যুবক দার্রল আরকামে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। নবুয়্যতের প্রথমদিকে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) দার্রল আরকামে তখন পর্যন্ত ইসলাম গ্রহণ করা হাতেগোনা মুসলিমদের ইসলাম শিক্ষা দিতেন। এরকম একটা সময়ে মুসআব (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি তাঁর ইসলাম গ্রহণ করার বিষয়টা মায়ের কাছে গোপন রাখেন, তাঁর মা ছিলেন প্রচন্ড ব্যক্তিত্বের অধিকারিণী। মাকে ভয় করতেন তিনি খুব বেশী। একপর্যায়ে মায়ের কাছে তাঁর ইসলাম গ্রহণের খবর প্রকাশ হয়ে পড়লো। অবশেষে মুসআব (রাঃ)-কে গৃহবন্দী করা হলো। বাধ্য হয়ে তিনি একদিন ঘর থেকে পালিয়ে গেলেন এবং পরবর্তীতে হাবশায় হিজরত করেন। হাবশা থেকে মক্কায় আসার পর তিনি তাঁর মাকে ইসলাম কবুল করতে বলেন। মা উত্তর দেন, ‘আমি তোমার দ্বীন গ্রহণ করবো না’। এরপর মুসআব ইবনে উমাইর (রাঃ)-কে তাঁর মা বাড়ী থেকে খালি হাতে বিতাড়িত করে দেন। কুরাইশদের সেই আদুরে দুলাল এরপর থেকে মোটা শতছিন্ন তালিযুক্ত কাপড় পরেন। তাকে একদিন খাবার খেলে অন্যদিন অভুক্ত থাকতে হতো। একদল ছাহাবী একদিন রাসূল (ছাঃ)-এর সামনে বসা ছিলেন। তারা দেখতে পেলেন মুসআব (রাঃ) হেঁটে যাª্রছন, পরনে শত তালি দেয়া মোটা একটা পোষাক। একদম হতদরিদ্র অবস্থা। সম্মানিত পাঠক, ইসলামের প্রাথমিক যুগে সকল মুসলমানরা তখন কঠিন সময় পার করছিলেন। ছাহাবীরা সবাই তখন একজন আরেকজনের তীব্র কষ্ট দেখে অভ্যস্ত ছিলেন। এমন একটা সময়ে মুসআব ইবনে উমাইর (রাঃ)-এর এমন কর্রণ অবস্থা দেখে ছাহাবীদের মধ্যে ব্যাপক ভাবান্তর হলো। তাদের দৃষ্টি নত হয়ে গেলো। অনেকের দুই চোখে ভেঙে পানি এসে গিয়েছিলো। তারা কল্পনা করছিলেন মুস‘আবের ইসলাম পূর্ব জীবনটা, কত কোমল আর সুগন্ধিময় ছিলো, কত প্রাচুর্য পরিবেষ্টিত ছিলো!
রাসূল (ছাঃ)-এর এই ছাহাবী ইসলামের জন্যে কী পরিমাণ ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন, পাঠক কল্পনা কর্রন।
উহুদ যুদ্ধে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) মুসলিম বাহিনীর পতাকা এই মুসআব ইবনে উমাইর (রাঃ)-এর হাতে তুলে দিয়েছিলেন। যুদ্ধের এক পর্যায়ে মুসলিমরা বিপর্যয়ে পড়ে যান। এমন সংকটময় অবস্থায় কুরাইশ বাহিনী রাসূল (ছাঃ)-কে ঘিরে ফেললো। মুসআব ইবনে উমাইর (রাঃ) বিপদের ভয়াবহতা উপলব্ধি করলেন। তিনি তখন চিৎকার করে তাকবীর দিয়ে আর ঝান্ডা হাতে লাফ-ঝাপ দিয়ে কাফিরদের দৃষ্টি নিজের দিকে নিয়ে আসতে চাইলেন। কাফিররা তার প্রতি দৃষ্টি ফেরালো। একহাতে মুসলিম বাহিনীর পতাকা আর অন্যহাতে তরবারী নিয়ে তিনি প্রচন্ড বেগে লড়াই করতে থাকেন। এক অশ্বারোহীর তরবারীর আঘাতে তার ডান হাতটি বিª্রছন্ন হয়ে যায়। এবারে তিনি বাম হাতে পতাকা তুলে ধরেন। আরেকটি আঘাতে তাঁর বাম হাতটাও দেহ থেকে বিª্রছন্ন হয়ে যায়। তিনি তখন বলে ওঠেন, وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ যা পরবর্তীতে কোরআনের আয়াত হিসেবে নাযিল হয় (আলে ঈমরান ১৪৪)। দুই বাহু দিয়ে এবার তিনি ইসলামের পতাকা তুলে ধরেন। এবার বর্শার একটা তীব্র আঘাত তাকে পরাভূত করে। পতাকাসহ তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
যুদ্ধ শেষে রক্ত আর ধুলোবালিতে একাকার মুসআব ইবনে উমাইর (রাঃ)-এর লাশ খুঁজে পাওয়া গেলো। তাঁর লাশ দাফনের জন্যে অল্প এক টুকরো কাপড় ছাড়া আর কিছু পাওয়া গেলো না। এই কাপড়টা দিয়ে তাঁর সমস্ত শরীর ঢাকা সম্ভব হলো না। অবশেষে রাসূল (ছাঃ) মাথার দিকটা চাদর দিয়ে আর পায়ের দিকটা ঘাস দিয়ে ঢেকে দেয়ার আদেশ করলেন। লাশের পাশে দাঁড়িয়ে রাসূল (ছাঃ) পাঠ করলেন, ‘মুমিনদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার সত্যে পরিণত করেছে’ (আহযাব ২৩)। তারপর কাফনের দিকে তাকিয়ে বললেন, لقد رأيتك بمكة وما بها أحدٌ أرق حلةً ولا أحسن لمةً منك، ثم أنت شعث الرأس في بردة ‘আমি তোমাকে মক্কায় দেখেছি, সেখানে তোমার চেয়ে কোমল চাদর আর সুন্দর যুলফী আর কারো ছিলো না। আর আজ তুমি এই চাদরে ধুলি-মলিন অবস্থায় পড়ে আছো’ (তাবাক্বাত ইবনু সা‘দ, ৩/১২১ পৃ., কিতাবুল মাগাযী লিল ওয়াকেদী ১১৭ পৃ.)।
হযরত খাববাব ইবনুল আরাত (রাঃ) বলেন, ‘আমরা আল্লাহর রাস্তায় আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে হিজরত করেছিলাম। আমাদের এ কাজের প্রতিদান দেয়া আল্লাহর দায়িত্ব। আমাদের মধ্যে যারা তাঁদের এ কাজের প্রতিদান মোটেও না নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে, তাঁদের একজন মুস‘আব ইবনে উমাইর (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৬১৯৬)।
পার্থিব জীবনের কাজের দ্বারা পরকালের অনন্ত জীবনে সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা এমন সব কৃতি মানুষকেই তো যুগে যুগে সকল মুসলিমদের ‘আইডল’ হিসেবে মানা উচিত। আমরা কাদেরকে আইডল মানছি
আহসান সাদী আল-আদেল
এমবিএ, এ্যাংলিয়া রাস্কিন ইউনিভার্সিটি
চেমসফোর্ড, ইংল্যান্ড।