স্মৃতির আরশিতে আব্দুছ ছামাদ
ড. নূরুল ইসলাম
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 434 বার পঠিত
[আল-মারকাযুল
ইসলামী আস-সালাফী’র বর্ষীয়ান মুহাদ্দিছ ও দারুল ইফতা’র সদস্য মাওলানা
বদীউযযামান (৭৩) বাংলা ১৩৪৭ মোতাবেক ১৯৩৯ ইং সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যেলার
আলাতলী ইউনিয়নের রাণীনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হাজী
জার্জিস মন্ডল। স্থানীয় আলেম মাওলানা আব্দুর রঊফের নিকটে তিনি প্রাথমিক
শিক্ষা অর্জন করেন। অতঃপর ভারতের দিলালপুরে পড়াশুনার উদ্দেশ্যে গমন করেন।
অতঃপর দেশে ফিরে ময়মনসিংহের ‘বালিয়া’ মাদরাসা থেকে ‘দাওরায়ে হাদীছ’ সম্পন্ন
করেন। ১৯৭০ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বারোরশিয়া মাদরাসায় তাঁর শিক্ষকতা
জীবনের সূচনা হয়। পরবর্তীতে উজানপাড়া (চাঁপাইনবাবগঞ্জ), দারুল হাদীছ
(চাঁপাইনবাবগঞ্জ), আলাদীপুর (নওগাঁ) ও গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ প্রভৃতি
মাদরাসায় দীর্ঘ ২২ বছর শিক্ষকতা করার পর ১৯৯২ সালে তিনি নওদাপাড়াস্থ
‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় মাদরাসা ‘আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী’র
মুহাদ্দিছ হিসাবে যোগদান করেন। দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর যাবৎ তিনি এখানে
শিক্ষকতা করার পর গত ১৪ নভেম্বর রোজ বুধবার দিবাগত রাত্রি ৯ ঘটিকায়
মহিষালবাড়ীর নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যু পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ
প্রতিষ্ঠানে অত্যন্ত সুনামের সাথে কর্মরত ছিলেন। আদর্শ শিক্ষক হিসাবে তিনি
ছিলেন ছাত্রদের নিকটে অতি প্রিয়। দেশে-বিদেশে তাঁর বহু ছাত্র ও গুণগ্রাহী
রয়েছে। নিম্নে তাঁর ছাত্রদের মধ্যে কয়েকজনের স্মৃতিচারণ তুলে ধরা হ’ল।]
যোগ্য ছাত্র তৈরির আদর্শ কারিগর
-নূরুল ইসলাম
একজন আদর্শ শিক্ষক জ্ঞান-সমুদ্রের আহরিত অমূল্য সম্পদ ছাত্রদের মাঝে বিতরণ করেন অন্তঃপ্রাণ হয়ে। তিনি নিত্য-নতুন বিষয় ছাত্রদেরকে শেখানোর মাধ্যমে মনের গহীন কন্দরে এক অব্যক্ত আনন্দ অনুভব করেন। এ জাতীয় মহান শিক্ষকদের নিরন্তর প্রচেষ্টা থাকে ছাত্রদেরকে পথ দেখিয়ে উন্নতি-অগ্রগতির পথে এগিয়ে দেয়া। এরকম শিক্ষককে ইংরেজিতে বলে Mentor ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ এর কেন্দ্রীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফীর বর্ষীয়ান মুহাদ্দিছ ও ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’ পরিচালিত দারুল ইফতার সম্মানিত সদস্য, আমার পরম প্রিয় শিক্ষক মাওলানা বদীউয্যামান ছিলেন আমার জন্য Mentor সদৃশ। আমার প্রতি তাঁর স্নেহ-ভালবাসা নওদাপাড়া মাদরাসায় তাঁর শিক্ষক হিসাবে যোগদানের (১৯৯২) পর থেকে মৃত্যু অবধি (১৪.১১.১২, ৭৩ বছর বয়সে) বলবৎ ছিল। সুদীর্ঘ ২০ বছরের এ পথপরিক্রমায় ছাত্র ও পরবর্তীতে সহকর্মী হিসাবে একজন আদর্শ শিক্ষকের প্রতিচ্ছবি তাঁর মধ্যে অহর্নিশ লক্ষ্য করেছি খুব কাছ থেকে।
বয়সে প্রবীণ, স্পৃহাই নবীণ-এটা ছিল তাঁর চরিত্রের উজ্জ্বলতম দিক। বিপ্লবী কবি নজরুল বলেছেন- ‘বার্ধক্যকে সব সময় বয়সের ফ্রেমে বাঁধা যায় না। বহু যুবককে দেখিয়াছি যাহাদের যৌবনের উর্দির নিচে বার্ধক্যের কংকাল মূর্তি। আবার বহু বৃদ্ধকে দেখিয়াছি যাঁহাদের বার্ধক্যের জীর্ণাবরণের তলে মেঘলুপ্ত সূর্যের মতো প্রদীপ্ত যৌবন’। ছাত্রদেরকে পাঠদানে অলসতা, অবহেলা, দায়সারাভাব তাঁর মধ্যে কখনোই দেখিনি। সর্বদা তিনি ছাত্রদেরকে নতুন নতুন জিনিস শিখাতে উদগ্রীব ছিলেন। মনের মধ্যে কোন নতুন চিন্তার উদয় হলে ছাত্রদেরকে তা শেখানোর জন্য তিনি আকুলি-বিকুলি করতেন। মৃত্যুর ৪/৫ মাস পূর্বে তিনি আমাকে একদিন মারকাযের লাইব্রেরীতে নিয়ে গেলেন। সেখানে প্রবেশ করেই সরফের একটি পুরাতন জীর্ণশীর্ণ বই বের করে পরম আন্তরিকতায় ذَرْ (যার) শব্দের তা‘লীল শিখিয়ে দিলেন। ইতিপূর্বেও ক্লাসে তিনি আমাদেরকে উক্ত শব্দের তা‘লীল করে দিয়েছিলেন।
তিনি কোন ছাত্রকে পড়াশোনায় অমনোযোগী বা দুষ্টুমী করতে দেখলে প্রায়শই আলী (রাঃ)-এর নিম্নোক্ত কবিতাটি তারস্বরে আবৃত্তি করে শুনাতেন- ليس اليتيم الذى مات والده ু ان اليتيم يتيم العلم والأدب ‘যার পিতা মারা গেছে সে প্রকৃত ইয়াতীম বা অনাথ নয়। বরং জ্ঞান ও শিষ্টাচারে দৈন্য ব্যক্তিই প্রকৃত ইয়াতীম’।
ছাত্রদেরকে তারকীব শেখানোতে তাঁর আগ্রহ ছিল প্রবাদতুল্য। তিনি যখন আমাদেরকে ‘তাফসীরে জালালাইন’ পড়াতেন তখন প্রায় প্রতিটি আয়াতের সূক্ষ্ণাতিসূক্ষ্ণ তারকীব করে দিতেন। মাঝে মাঝে ক্লাসে ও ক্লাসের বাইরে জালালাইনের শরাহ ‘কামালাইন’ ও ‘আল-ফুতূহাতুল ইলাহিয়াহ’ আমাদেরকে দেখাতেন এবং জটিল তারকীবের সহজ সমাধান করে দিতেন। পাঞ্জেগাঞ্জ, শরহে মিয়াতে আমেল, ইলমুল সীগাহ, ফুসূলে আকবরী পড়ানোর সময় তাঁর একাগ্রতা আমাকে বিমুগ্ধ-বিমোহিত করত। ক্লাসে পড়া আদায়ের ব্যাপারে তিনি বজ্রকঠিন ছিলেন। পড়া না পারলে তাঁর পিটুনি থেকে রেহাই পাওয়ার জো ছিল না। তিনি আমাদেরকে ‘ফার্সী কী পহেলী কিতাব’ পড়াচ্ছেন। ক্লাসের প্রথম দিন। কিছু পড়া দিয়েছেন। তাঁর নিয়ম ছিল, যেকোন শব্দ বা বাক্যের উর্দূ বললে ফার্সী করতে হবে আর ফার্সী বললে উর্দূ করতে হবে। ক্লাসে আমাকে হঠাৎ জিজ্ঞেস করে বসলেন, ‘দোযখ কী আগ’ (জাহান্নামের আগুন) এর ফার্সী কি? এ প্রশ্ন করে তিনি পিছনে লাঠি ঝুঁকাচ্ছিলেন। এটা তাঁর অভ্যাস ছিল। লাঠি ঝুঁকানো দেখে ভয়ে আমার ঐ বাক্যটির ফার্সী ‘আতাশে দোযখ’ মনে আসছিল না। তিনি আমাকে খুব স্নেহ করলেও ১/২ বাড়ি ‘লাগিয়ে দিলেন’।। সেদিন থেকে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, এরপর আর কোনদিন ঐ ক্লাসে তাঁকে মারার সুযোগ দেব না। দেইওনি।। ঐদিনের প্রতিজ্ঞা আমার জীবনে দারুণ প্রভাব ফেলেছিল। আমার মৃত লাশকেও যদি বলা হয়, দোযখ কী আগ এর ফার্সী বলতে তাহলেও মনে হয় বলে দিতে পারবে!
মাসিক ‘আত-তাহরীকে’ তিনি নিয়মিত ফৎওয়া লিখতেন। নিজের হাতের লেখা ভাল না হওয়ায় বিভিন্ন ছাত্রকে দিয়ে তিনি ফৎওয়া লিখিয়ে নিতেন। ছাত্র জীবনে ও পরবর্তীতে আমি তাঁকে অনেক ফৎওয়া লিখে দিয়েছি। আমার লিখে দেয়া ফৎওয়া তিনি খুব পছন্দ করতেন। অনেক সময় দেখা যেত, কোন ছাত্র তাঁকে ফৎওয়া লিখে দিয়েছে, কিন্তু সেটার ভাব-ভাষা ওস্তাদযীর পছন্দ হয়নি। তিনি আমাকে মারকায লাইব্রেরীতে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলেছেন, ‘বেটা! এই ফতোয়াটায় একটু ভাষা লাগিয়ে দাও’।
ফতোয়া লেখার জন্য একাগ্রতা, নিষ্ঠা ও গবেষণা প্রয়োজন। এ গুণগুলি তাঁর মধ্যে পুরোমাত্রায় বিদ্যমান ছিল। মৃত্যুর কয়েক মাস পূর্বে তাঁকে আমি একটি ফৎওয়া লিখে দিয়েছিলাম। তিনি আমাকে ফৎওয়াটি লিখানোর পূর্বে বলেছিলেন, এ বিষয়ে মাওলানা আব্দুল্লাহেল কাফী ও ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মাঝে দীর্ঘ বিতর্ক হয়েছিল। বেটা, উত্তরটা ভালভাবে লিখতে হবে। এরপর তিরমিযীর জগদ্বিখ্যাত শরাহ ‘তুহফাতুল আহওয়াযী’ সহ কয়েকটি বই বের করে আমাকে বুঝিয়ে দিলেন। আমি ফৎওয়া লেখা শেষ করে তাঁকে পড়ে শোনালাম। তিনি খুব খুশি হলেন এবং অন্তরখুলে দো‘আ করলেন। তিনি মাঝে মধ্যে রসোচ্ছলে বলতেন, ‘আমি লিখতে পারলে ফৎওয়া লিখে ফাটিয়ে দিতাম’। এরপর মুখ থেকে ঠিকরে পড়ত চিরচেনা অট্রহাসি।
সুদীর্ঘ ৪২ বছর কুরআন মাজীদ ও হাদীছে নববীর দরসে নিবেদিতপ্রাণ এই আদর্শ শিক্ষকের ইন্তেকালে আমি দারুণভাবে ব্যথিত, মর্মাহত, বাকরুদ্ধ। তাঁকে ঘিরে অসংখ্য স্মৃতি ভীড় করছে স্মৃতি-বন্দরে। নোঙর করতে চাচ্ছে কলমের ডগায় ভর করে লেখনীর হরফে। তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তবুও সর্বদা রয়েছেন মনের গভীরে, স্মৃতিতে, শ্রদ্ধায়। কবির ভাষায়- ‘নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে/ রয়েছ নয়নে নয়নে’।
মহান আল্লাহর কাছে বিনীত প্রার্থনা, তিনি যেন তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউসে ঠাঁই দিয়ে সম্মানিত করেন! আমীন!!
প্রেরণার বাতিঘর
-আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
আমাদের সকলেরই জীবনে এমন কিছু কিছু মানুষের সরব উপস্থিতি থাকে যাদের অনুপ্রেরণা, যাদের নিরন্তর উৎসাহ আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে চলার জন্য নিত্যই জাদুমন্ত্রের মত কাজ করে। মাওলানা বদীউয্যামান উস্তাদজীকে আমি কেবল শিক্ষক হিসাবেই নয়, বরং সেরকম একজন প্রেরণার বাতিঘর হিসাবেই জানি ও মানি। নিজ গুণে যিনি ‘শিক্ষক’ পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে বহু ছাত্রদের অন্তরে শ্রদ্ধা ও ভালবাসার বড় একটা স্থান দখল করে নিয়েছিলেন। যার মৃত্যু মনের গভীরে রেখে গেছে শূন্যতার ছাপ, রেখে গেছে স্মৃতিময় হাজারো অব্যক্ত মুহূর্ত।
শিক্ষক হিসাবে সকল ছাত্রের প্রতি ছিল তাঁর সমান দৃষ্টি, তবে যারা একটু ভাল তাদেরকে তিনি স্বভাবতই একটু বিশেষ নজরে দেখতেন। সে কারণেই বোধ হয় ক্লাস নাইনে উঠার পর তাঁর সাথে আমার বিশেষ ঘনিষ্ঠতা তৈরী হয়। ইতিপূর্বে আমরা তাঁকে খুব ভয় করতাম। ক্লাসে ঢুকতেন বড় বেত নিয়ে। কেউ পড়া ঠিকমত আদায় করতে না পারলেই কড়া শাসন। এজন্য তাঁর ক্লাসে ছাত্ররা সবসময় থাকত ভয়ে তটস্থ। অনেক দুর্বল ছাত্রকেও দেখতাম, যেভাবেই হোক অন্ততঃ তাঁর ক্লাসের পড়া শিখে আসত। ক্লাস নাইনে তিনি আমাদের পড়াতেন তাফসীর জালালাইন। ক্লাসে ঢুকেই ইবারত পড়তে বলতেন। সঠিকভাবে পড়তে পারলে যেমন খুব খুশী হতেন, তেমনি ভুল ধরতে পারলেও খুশী হতেন। ঐ যে একটু শেখানোর সুযোগ পেলেন! ছাত্রদের শেখানোতেই যেন তার অপার আনন্দ। একটা প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরী হত উস্তাদজীর সাথে। কয়েকদিন এমন হয়েছে যে, উস্তাদজীর কোন এক জায়গায় ভুল হয়েছে, আমরা সঠিকটা বলেছি। উস্তাদজী এতে কখনো মনঃক্ষুণ্ণ তো হনই নি, বরং পরদিন আরো প্রস্ত্ততি নিয়ে দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে আমাদের ঠেকিয়ে দিতে চাইতেন। আমরাও ভালভাবে পড়ে আসতাম যেন উস্তাদজী কোথাও ঠেকাতে না পারেন। এজন্য তাঁর ক্লাসটা খুব মজার হত এবং তাঁর ক্লাসের পড়াটা খূুব ভালভাবে করা হত। পরে দাওরা পড়ার সময় তিনি প্রথম বর্ষে তাফসীর মারাগী পড়াতেন। সেখানেও একই অবস্থা। ক্লাসের নির্ধারিত পড়ার বাইরেও আরবী ব্যকরণ সংক্রান্ত নিত্য-নতুন নানা খুঁটি-নাটি বিষয় আমাদের শেখাতেন। এমন অনেক ছোট ছোট জিনিস আজও মনে আছে, যেটা তাঁর কাছে শিখেছিলাম। নতুন কিছু শেখাতে পারলে কি যে খুশী হতেন! তাঁর সে খুশীর রেশ ক্লাসে সবার মাঝে যেন ছড়িয়ে পড়ত।
তাঁর ক্লাসটি হতো খুব প্রাণবন্ত ও আনন্দময়, অথচ পড়া এবং পড়াসংক্রান্ত বিষয় ব্যতিরিকে এক মুহূর্ত সময় তিনি অন্য কথায় ব্যয় করতেন না। ক্লাসে ঘুমানো বা বিরক্তিবোধের কোন সুযোগ দিতেন না। সবচেয়ে বয়োজৈষ্ঠ শিক্ষক হলেও তিনি মানসিকতায় ও শারিরীক সুস্থতায় যেন ছিলেন সবার চেয়ে তরুণ। পূর্ণ বই বা সিলেবাস পড়িয়ে শেষ করার জন্য তাঁর যে উদ্যম ছিল, তা অনেক তরুণ শিক্ষকের মাঝেও দুর্লভ। নীচু ক্লাসগুলোতে তাঁকে আমরা যেমন ভয় করতাম, ঠিক তেমনি অন্তর দিয়ে শ্রদ্ধা করতাম। কিন্তু দাওরা ক্লাসে এসে সে সম্পর্ক রূপ নিল একেবারে বন্ধুর মত আপন। ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও নির্দ্বিধায় আমাদের ঘাড়ে হাত রেখে কথা বলতেন। ছাত্রদের শাসন করার সাথে সাথে বন্ধুর মত এভাবে কাছে টেনে নেয়ার অসাধারণ গুণ তাঁর মাঝে ছিল। ছাত্রদের মাঝে সময় কাটাতেই ছিল যেন তাঁর আনন্দ।
মানুষ হিসাবে তাঁর বড় গুণ ছিল, তিনি ছিলেন কথা-বার্তা, আচার-আচরণে একেবারেই সহজ-সরল ও অকপট। তাঁর মধ্যে কৃত্রিমতার লেশমাত্র ছিল না। যা ভাবতেন ও মানতেন, তা কোনরূপ রাখঢাক ছাড়াই অকপটে বলে ফেলতেন। এই সহজাত বৈশিষ্ট্যের কারণে তাকে অনেকসময় বিপদে পড়তে হয়েছে আবার কারো কারো বিরাগভাজন হয়েছিলেন বটে, কিন্তু তাঁর শিশুসুলভ সারল্যের কারণে সেই ক্ষোভ ও বিরাগভাব কারো মনে জমা থাকত না।
আমীরে জামা‘আত গ্রেফতার হওয়ার পর কেন্দ্রীয় মারকায এক বড় ধরনের সংকটে পতিত হয়। আত-তাহরীকের জনপ্রিয় ‘ফৎওয়া বিভাগ’ নিয়ে সৃষ্টি হয় দারুণ সংশয়। কিন্তু সেদিনগুলোতে উস্তাদজীর ভূমিকা ছিল খুবই আন্তুরিক ও দৃঢ়তাপূর্ণ। বলা যায় আত-তাহরীকের ফৎওয়া বিভাগের দায়িত্ব তিনি একাই পালন করেছিলেন। ফৎওয়ার জন্য তিনি যে পরিশ্রম করতেন এবং ছাত্রদের সাথে যেভাবে তা নিয়ে আলোচনা করতেন, তাতে বোঝা যেত, ফৎওয়া প্রদানের জন্য কতটা দায়িত্ববান ছিলেন তিনি। তাঁর মত একজন একনিষ্ঠ খাদেম না পেলে সেই দুঃসময়ে আত-তাহরীকের ‘ফৎওয়া বিভাগ’কে সত্যিই এক দুর্বহ সংকটে পড়তে হত। জীবনের শেষ দিকে (২০০৭-২০০৯) এসে অনেক যুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তিনি। ফলে তাঁর মধ্যে আহলেহাদীছ আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে নতুন এক সচেতনতা ও স্পিরীট তৈরী হয়। জীবনের অন্তিম সময় পর্যন্ত তাঁর মাঝে সেই চেতনা প্রগাঢ়ভাবে অক্ষুণ্ণ ছিল। মনে-প্রাণে ভালবাসতেন এ আন্দোলনকে এবং আমীরে জামা‘আতকে। যুলুমের শিকার হয়ে মারকাযে যখন তাঁর থাকা-খাওয়া সবকিছু বন্ধ করে দেয়া হল, তখন এক পর্যায়ে তাঁকে কয়েকমাস যাবৎ মাসিক আত-তাহরীকের কম্পিউটার রুমে অবস্থান করতে হয়। সেখানে বসেই তিনি ফৎওয়া লিখতেন। মারকায চত্বর, এমনকি মসজিদে যাওয়াও তাঁর জন্য নিষিদ্ধ ছিল। সেসময় মাঝে মাঝে তাঁকে আমাদের বাসা থেকে খাবার পাঠাতাম। বাসায় বানানো চা তিনি খুব পছন্দ করতেন। একদিন ‘পাকান’ পিঠা বানিয়ে পাঠানো হল। বড় সাইজের ১০/১২টি পিঠা সবই খেয়ে ফেললেন। আমার তো চোখ কপালে ওঠার দশা। এতেই বুঝেছিলাম তিনি কেমন ভোজন রসিক মানুষ। শেষ বয়সেও তিনি যে পরিমাণ খেতে পারতেন, তার কাছে আমরা নস্যি। মাঝে মাঝেই তিনি তাঁর যৌবন বয়সের যে খাওয়ার ফিরিস্তি শোনাতেন, তাতে আমরা কেবল হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতাম।
২০১১ সালের রামাযান মাসে লাইব্রেরীতে তাঁর কাছে আরবী ব্যাকরণের একটি জটিল বিষয় কয়েকদিন পড়েছিলাম। খুব খুশী হয়েছিলেন। উনি খুবই চাইতেন যেন সময় করে উনার কাছে যেয়ে নিয়মিত আরবী ব্যাকরণের কোন বিষয় পড়ি। একদিন সন্ধার পরে তাঁর ঘরে ঢুকেছি পড়ার জন্য। আমের মৌসুম। ঘরে কেউ নেই। উনি চৌকির তলা থেকে দু’টি আম বের করে নিজ হাতে ধুয়ে আনলেন বাথরুম থেকে। তারপর প্লেটে করে খেতে দিলেন। আমি তো ভীষণ বিব্রত উস্তাদজীর কাজ দেখে। তবু উনি জোর করে নিজের বিছানায় বসিয়ে দু’টো আমই খেতে বাধ্য করলেন। অসুস্থ শরীরে তাঁর এই আন্তরিক ভালবাসার প্রকাশে আমি অভিভূত হয়েছিলাম। এমন মানুষ কি কখনও স্মৃতির অাঁড়াল হতে পারেন!
মাস্টার্স শেষ করার পরও কেন মাদরাসায় ক্লাস নিতে যাচ্ছি না তা নিয়ে তিনি দেখা হলেই অনুযোগ করে বলতেন, ‘ক্লাস নিচ্ছ না কেন? শিক্ষকতা করতেই হবে, নতুবা তোমার চর্চা থাকবে না তো!’ গবেষণা রুমে বসে আছি, হঠাৎ উপস্থিত হয়ে ভূমিকা ছাড়াই কোন একটা ফৎওয়ার বিষয়ে কথা বলা শুরু করলেন। মসজিদ থেকে বের হয়ে দেখা হয়ে দেখা হল, ব্যাস! সোজা ফৎওয়া বোর্ডে নিয়ে গিয়ে কোন একটি ফৎওয়ার সমস্যা দেখিয়ে সমাধান করে দেয়ার জন্য বললেন। এমনই অকপট ও সোজাসাপ্টা ছিলেন উস্তাদজী। এমন কত যে স্মৃতি আছে তাঁর সাথে! মানসিক শক্তি তাঁর এতই দৃঢ় ছিল যে, চরম অসুস্থতার মধ্যেও আবার মারকাযে ফেরার আশা প্রকাশ করতেন। মারকায নিয়ে, ফৎওয়া নিয়ে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁর চিন্তার অন্ত ছিল না। এমন মহৎপ্রাণ, কর্তব্যপরায়ণ শিক্ষকের জন্য গর্ববোধ না করে কি পারা যায়!
জানাযার পর তাঁকে দাফন করা হচ্ছে। ভীড়ের মধ্য দিয়ে আস্তে আস্তে তাঁর লাশ নামিয়ে কবরে শায়িত করা হল। সফেদ মুখটা কেবলামুখী করে ঢেকে দেয়া হল শেষবারের মত। সদা চঞ্চল প্রিয় উস্তাদজীকে আর দেখবো না কোনদিন মারকায চত্বরে...নিজের অজান্তেই চোখটা ভিজে আসল। পাশে মুযাফফর ভাইকে দেখলাম আনমনে কম্পমান ঠোটে চোখ মুছতে। শূন্য হৃদয়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছি সেই মাটির শয্যার দিকে। সারিবদ্ধভাবে একটার পর একটা বাঁশের টুকরায় সেই শয্যা ঢেকে যাচ্ছে...ক্ষীণতর হয়ে আসছে ভিতরের সর্বশেষ আলোটুকু...। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে...আহা...কী যে অদ্ভুত এক মায়ার এ জগৎ। ভেবে পাই না, এত মায়া-মমতার মাঝেও কীভাবে যেন আশ্রয় পেয়ে যায় হিংসা-বিদ্বেষের মত অপবিত্র মন্ত্রণাগুলো!! আল্লাহ উনাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নছীব করুন। আমীন!
আমার পরম শিক্ষাগুরু
-মেসবাহুল ইসলাম
আমি সৌভাগ্যবান যে, আমার জীবনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত হয়েছে বাংলাদেশে আহলেহাদীছদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফীতে। এখানে আমি প্রথম ভর্তি হই চতুর্থ শ্রেণীতে। যখন ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হলাম তখন থেকে আমাদের ক্লাস নিতেন মাওলানা বদীউযযামান উস্তাদযী। তিনি এমন একজন শিক্ষক যার প্রতি ভক্তি, অনুরাগ নেই এমন ছাত্র পাওয়া নিতান্তই দুষ্কর। অত্যন্ত নিয়মানুবর্তী এই মহান উস্তায ইচ্ছাকৃতভাবে কিংবা অলসতাবশত কোন ক্লাস ছেড়ে দিয়েছেন, তা আমার ১৩/১৪ বছরের ছাত্রজীবনে কখনো দেখিনি। অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সাথে তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করতেন। তাঁর সার্বক্ষণিক চিন্তার বিষয় ছিল ছাত্রদের পড়াশুনার উন্নতি-অগ্রগতি। ক্লাসের পড়া তিনি ক্লাসেই আদায় করার আপ্রাণ চেষ্টা করতেন। পরে কোন পড়া ছাত্রদের নিকট কঠিন মনে হলে তিনি যেভাবেই হোক বুঝিয়ে ছাড়তেন। মাঝে মাঝেই এমন হত যে, আমি রাস্তায় চলাচলের সময় যদি হঠাৎ করে তার সাথে সাক্ষাৎ হত, তিনি আমার কাঁধে হাত দিয়ে বন্ধুর মত চলতেন আর বলতেন আজকের পড়া বুঝেছ? তারপর ক্লাসের সেই পড়া আমাকে রাস্তাতেই আবার বলে দিতেন। ছাত্রদের পড়ানোর জন্য তিনি এতই উদগ্রীব ছিলেন যে, একবার নওদাপাড়ায় বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমায় মারকাযে যখন মানুষের প্রচন্ড ভীড়। কোথাও বসার জায়গা পর্যন্ত নেই। সেই সময় তিনি আমাদের রুমে রুমে গিয়ে খুঁজছিলেন পড়ানোর জন্য। অথচ আমরা তখন ইজতেমার বিভিন্ন দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছি। তিনি আরবী ২য় পত্রের বিভিন্ন জটিল বিষয় নিয়ে যে কোন সময়ে, যে কোন স্থানে ছাত্রদের ডেকে ধরে বসতেন। না পারলে সেটা জানিয়ে দিতেন। ছাত্রদের পড়ানোর বিষয়ে তিনি সর্বদা একপায়ে খাড়া। এজন্য সময় ও মেধা ব্যয় করতে তাঁর কোনরূপ কার্পণ্য ছিল না। ছাত্রদের সামনে পেলেই তার মন যেন আনচান করে উঠত তাদের কিছু শেখানোর জন্য। একদিন এশার ছালাতের আযান হয়েছে। আমি অযু করে মসজিদের দিকে রওয়ানা হয়েছি। পথিমধ্যে সিঁড়িতে তাঁর সঙ্গে দেখা। তিনি আমাকে দেখতে পেয়ে আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন, মেসবাহ! বলতো بسم الله এর ب টি লম্বা কেন? এভাবে তিনি যখন-তখন অনেক প্রশ্ন আমাদের জিজ্ঞাসা করতেন এবং না পারলে অতি আগ্রহের সাথে শিখিয়ে দিতেন।
যখন তিনি মাসিক আত-তাহরীক পত্রিকার ‘ফৎওয়া বিভাগে’র সম্মানিত সদস্য মনোনীত হলেন তখন বিভিন্ন ছাত্রদের ডেকে নিয়ে ফৎওয়া লিখিয়ে নিতেন। কারণ তাঁর বাংলা হাতের লেখা ছিল ছিল বেশ অস্পষ্ট। প্রতি মাসে তিনি প্রায় ১০/২০টি ফৎওয়া লিখতেন। যখন লেখনীর চাপ বৃদ্ধি পেল তখন তিনি আমাকে ও হাফেয হাসিবুল ইসলামকে বিশেষভাবে ফৎওয়া লেখক বা কাতেব হিসেবে মনোনীত করেন। তার কাতেব হিসাবে নিয়োজিত হতে পেরে আমরা খুব গর্ববোধ করতাম। কারণ ফৎওয়া লিখতে গিয়ে তাঁর কাছে বহু কিছু শেখার সুযোগ হত। খুবই জ্ঞানপূর্ণ মতবিনিময় হত। তার মন ছিল শিশুর মত সহজ-সরল। মজার ব্যাপার ছিল, যখন তিনি ডিকশনারী বা নিজের পড়া কোন বইয়ে কিছু খুঁজতেন, তখন কোনদিন সূচিপত্র দেখতেন না। তিনি ছিলেন এর ঘোরবিরোধী। ছাত্ররা সবাই তাঁর এই ব্যাপারটি জানত এবং খুব মজা পেত। তিনি সূচী না দেখেই বইটি ১/২ বার উল্টিয়েই তার কাঙ্খিত জায়গাটি পেয়ে যেতেন। তাঁর এই দক্ষতায় ছাত্ররা বিস্মিত হলে তিনি খুশীতে বাগ-বাগ হয়ে উঠতেন। তিনি ছিলেন আত্মমর্যাসম্পন্ন অথচ একেবারেই নিরংহকারী ব্যক্তি। ফৎওয়ার জন্য তিনি সারাদিন লাইব্রেরীতে খাটা-খাটুনী করতেন। পরে রাতে ফৎওয়া লিখতে বসে প্রতিটি বিষয় আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতেন এবং পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে তারপর ফৎওয়া লিখতে বলতেন। যদি কোন ফৎওয়া খুঁজে পেতে দেরী হত, তখন তিনি প্রায় প্রত্যেক ছালাতের সময় আমাকে বলতেন, কেন ফৎওয়াটি পাওয়া যাচ্ছেনা। তিনি সেই ফৎওয়ার পিছনে রাত-দিন লেগে থাকতেন যতক্ষণ পর্যন্ত সমাধানে আসতে না পারেন। ২০০৫ সালে যখন আমীরে জামা‘আতসহ সংগঠনের ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দ গ্রেফতার হন, তখন আত-তাহরীকের ‘দারুল ইফতা’ সদস্যদের তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে ‘আত-তাহরীক’-এর জন্য ফৎওয়া লিখতেন। এক পর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। ফলে আমরা ফৎওয়া লেখার জন্য তাঁর বাড়ী গোদাগাড়ীতে যেতাম। তিনি রোগে কাতর হয়ে পড়েছেন। উঠার মত শক্তি নেই। তবুও তিনি ফৎওয়া লেখার ব্যাপারে সামান্যতম মনোবল হারাননি। সুস্থ অবস্থায় যেমন লিখতেন তখনও তেমনি লিখতেন। তবে তিনি শুয়ে থেকেই ফৎওয়া লিখতেন। যখন কোন প্রশ্ন তার নিকট আমরা বলতাম তখন তিনি বলতেন, অমুক বইটি দাও। আমরা তাঁর শোয়া অবস্থাতেই তার হাতে বইটি দিতাম। তিনি বই দেখে অত্যন্ত সুন্দরভাবে বলে দিতেন, যা আমরা সহজেই লিখে নিতে পারতাম। পরে আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনি আবার সুস্থ হয়ে মারকাযে ফিরে আসেন। জানি না পড়াশোনার টানেই কি-না, জীবনের শেষ দু’টি বছর মারকায লাইব্রেরীরই একপার্শ্বে তিনি থাকা শুরু করেন। প্রায় সারাক্ষণই দেখতাম চেয়ার-টেবিলে গবেষণারত থাকতে। একদিন কথার মাঝে উস্তাদজীকে জিজ্ঞাসা করলাম, কোন ফৎওয়া কোন গ্রন্থে আছে, তা এত সহজে আপনি বুঝতে পারেন কীভাবে? তিনি তখন বলেছিলেন যে, এই লাইব্রেরীর সকল বই আমার নজরে আছে। শুধু তা-ই নয়, তিনি লাইব্রেরীর একজন দক্ষ সংরক্ষকও ছিলেন। কার কাছে কোন বই আছে তার হিসাব পূর্ণভাবে রাখতেন। এমনকি যখন তিনি সম্পূর্ণ শয্যাশায়ী, নড়াচড়া করতে পারেননা। তখনও আমরা মাদরাসার কয়েকজন ছাত্র তাঁর নিকট গিয়েছিলাম দেখা করার জন্য। হঠাৎ করে তিনি আমাদের একজনকে বললেন, তোমার কাছে অমুক বই আছে, তুমি তা লাইব্রেরীতে দিয়ে দিবে। তিনি ছিলেন তাক্বওয়াসম্পন্ন ও কোমল হদয়ের অধিকারী মানুষ। পড়ানোর সময় আযাবের কোন বর্ণনা আসলে তিনি শিশুর ন্যায় অশ্রুসজল নয়নে কেঁদে উঠতেন। যতটুকু জানি তিনি নিয়মিত তাহাজ্জুদগুজার ছিলেন। একজন আদর্শ ও ছাত্রঅন্তঃপ্রাণ শিক্ষক হিসাবে আমার হৃদয়পটে তাঁর স্মৃতি চিরজাগরুক থাকবে। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতের উচ্চ দরজা দান করুন এবং তাঁর ছাত্র হিসাবে আমাদেরকে তাঁর পদাংক অনুসরণ করার তাওফীক দান করুন। আমীন!!