ক্ষণিকের মিছে মায়া
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
ছেলেটার
কথা শুনেছি অনেক, কিন্তু দেখেছি একবারই। রাতের অন্ধকারে বিল্ডিংয়ের
সানশেডের নীচে সিঁড়ি থেকে যে সামান্য আলো ঠিকরে পড়ছিল সেই আলো আঁধারীতে বসে
পড়াশোনা করছিল। আমাকে দেখেই তড়াক করে উঠে দাঁড়ালো। মাঝারী রকম লম্বা,
ফর্সা, টানা টানা দু’টো চোখ, মায়াবী চেহারা, হাল্কা ঢেউ খেলানো চুল কানের
দু’পাশ বেয়ে নেমে এসেছে, বয়স বিশ হলেও দেখতে আরো ছোট মনে হয়। সালামের জবাব
দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কি করছ?’
বলল, ‘ম্যাডাম, ক’দিন পরই বি এ পরীক্ষা, প্রস্তুতি নিচ্ছি’।
আমি বললাম, ‘তাহলে তুমি পড়, আমি আর ডিস্টার্ব না করি। ভাল করে পরীক্ষা দিয়ো’।
আর কোন কথা হলনা। কিন্তু হাফিজ সাহেব আসতে দেরী হচ্ছিল, খুব অস্বস্তি লাগছিল যে সে আর কিছুতেই আমার সামনে বসলনা, দাঁড়িয়েই রইল যতক্ষণ না আমরা বাইক নিয়ে চলে এলাম।
আমাদের ছোট্ট স্কুলটা দিনে দিনে বড় হতে থাকে। স্কুলের পরিধির সাথে সাথে একসময় কাজের পরিমাণও বাড়তে থাকে। দেখা গেল প্রায়ই সন্ধ্যার পর নানা ধরনের ট্রেনিং, আলোচনা বা অনুষ্ঠান থাকছে। সারাদিনের কর্মক্লান্ত পিয়নরা সন্ধ্যার পর দ্বিতীয় শিফটে রাত পর্যন্ত কাজ করে পরদিন আবার ভোরে স্কুল খুলতে আসে, এটা তাদের ওপর জুলুম হয়ে যাচ্ছে। তখন একজন নাইটগার্ডের প্রয়োজন দেখা দিল যে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত গেট খোলাবন্ধ করবে এবং সকালে স্কুল খুলে দেবে। যেহেতু কাজের পরিমাণ কম তাই এই কাজের জন্য বেতন বরাদ্দ ছিল অল্প। এই বেতনে উপযুক্ত লোক খুঁজে পাওয়াটা ছিল বেশ মুশকিলের ব্যাপার। কারণ তাকে বিশ্বস্তও হতে হবে। এগিয়ে এলো আমাদের পিয়ন জামশেদ। বলল, ‘আমার ফুপাত ভাই সাইফুল ভাল ছাত্র, টাকার অভাবে ওর পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। ওকে যদি এই কাজ দেয়া হয় তাহলে সে বেতনের টাকা দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পারবে, পাশাপাশি পড়াশোনা করার মত যথেষ্ট সময়ও পাবে’। এতে উভয়পক্ষের উপকার হয়। ওর চাকরী হয়ে গেল।
আমাদের নানান কাজে প্রায়ই সন্ধ্যার পর স্কুলে যাওয়া হত। কিন্তু ভীষণ লাজুক এই ছেলেটির সাথে দেখা হতনা খুব একটা। তবে ওর প্রশংসা শুনতাম সবার কাছে। সে ছালাতের ব্যাপারে ভীষণ নিয়মিত ছিল, এমনকি তাহাজ্জুদ ছালাত, কিন্তু সে ছালাত একাই পড়তনা, সবাইকে ডেকে ডেকে পড়তে উৎসাহিত করত, সবাই বলতে আমাদের যেসব স্টাফ স্কুলের পেছনে স্টাফ কোয়ার্টারে থাকত, তার মধ্যে ওর মামাত ভাই জামশেদও ছিল। মুখচোরা ছেলেটি দিনের বেলা খুব প্রয়োজন ব্যতিরেকে রুম থেকে বেরই হতনা। অন্যান্য পিয়নরা অনেক সময় স্কুলের আয়াদের সাথে কথাবার্তা বলত, সে কিছুতেই সামনে আসতনা। রুমের ভেতর ঘাপটি মেরে পড়াশোনা করত আর সন্ধ্যা হলেই নিজের কাজে লেগে যেত।
একদিন সকালে স্কুলে গিয়ে দেখি স্টাফ কোয়ার্টারের ওখানে বেশ ভিড়। বাচ্চাদের বকাঝকা করে ওখান থেকে তাড়া করা হচ্ছে। ব্যাপার কি? ওপরতলায় গিয়ে শুনলাম অদ্ভুত ঘটনা। রাতে গেট বন্ধ করে, খেয়েদেয়ে, গল্পসল্প করে ওরা সবাই ঘুমাতে গেল। মধ্যরাতে জামশেদ বাথরুমে যাবার জন্য উঠে সাইফুলকে ডাক দিল, ‘কি রে, আজ তাহাজ্জুদ পড়বিনা?’ সে কোন সাড়া দিলনা। জামশেদ ভাবল, হয়ত আজ শরীরটা ভাল নেই, তাই আর কিছু বললনা। ভোরে ফজর ছালাতের সময়ও সাইফুল উঠলনা। জামশেদ ভাবলো শরীর মনে হয় নিতান্তই খারাপ, নইলে সে প্রতিদিন ভোরে উঠে ছালাত পড়ে কুর’আন পড়ে। সকালে স্কুল খোলার টাইমেও ওর কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে জামশেদ গিয়ে ধাক্কা দিল। গায়ে হাত দিতেই সে চমকে উঠল। হিম হয়ে আছে সাইফুলের দেহ। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার, প্রিন্সিপাল স্যারসহ অন্যান্য লোকজন মিলে গিয়ে দেখার পর সবাই হতবাক হয়ে গেল, ছেলেটা আসলেই রাতে ঘুমের ভেতর মারা গিয়েছে! বিশ বছর বয়স, কিন্তু ওর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে!
কয়েক ঘন্টার ভেতর গ্রাম থেকে ওর বাবা এলেন। আমাদের ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিলো না, এমনটা কি করে হতে পারে? স্কুল কর্তৃপক্ষ পোস্ট মর্টেম করতে চাইল। কিন্তু ওর বাবা বললেন, ‘আমার ছেলেটাকে আল্লাহ নিয়ে গিয়েছেন। আমি মেনে নিয়েছি। ওর মৃতদেহটাকে আপনারা আর কষ্ট দিয়েন না। এখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা ওকে দাফন করতে চাই’। কিন্তু বেচারা দরিদ্র মানুষ, শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত যে লাশ পরিবহন করবেন সেই সামর্থ্য তো তার নেই। তাকে আশ্বস্ত করা হ’ল, ‘আপনি বাড়ী যান, দাফনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করুন, আমরা লাশ নিয়ে আসছি’। উনি চলে গেলেন। স্কুল ছুটির পর আমরা দু’টো মাইক্রোবাস ভাড়া করে একটাতে ওকে নিলাম, আরেকটাতে প্রিন্সিপ্যাল স্যারসহ আমরা কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক গেলাম। ওদের গ্রামের বাড়ী পৌঁছতেই চারিদিক থেকে গ্রামবাসী ঘিরে ধরল। ভাল ছেলে হিসেবে সুপরিচিতির কারণে সবাই সাইফুলকে খুব পছন্দ করত। তাই তারা তাকে শেষবারের জন্য এক নজর দেখতে এসেছে।
আমরা গিয়ে ওদের ঘরে প্রবেশ করতেই বাড়ীর মহিলারা ভেতরের ঘরে চলে গেলেন। আমরা মহিলা শিক্ষকরা ভেতরে গিয়ে তাদের সান্ত্বনা দেয়ার বৃথা চেষ্টা করতে লাগলাম। কি বলব সেই মাকে যে বসে ছিল ছেলে বিএ পরীক্ষা দেবে, ভাল চাকরী করবে, তাদের সংসারে অভাব দূর হবে, ছেলেকে সে মনের মত করে খাওয়াতে পারবে, বিয়ে দেবে, নাতি-নাতনীদের নিয়ে উঠোনে বসে খেলবে? কি বলে বোঝাব সেই বোনটিকে যে বসে আছে ভাই শহর থেকে তার জন্য খেলনা কিনে আনবে, ভাইকে সে পিঠা বানিয়ে খাওয়াবে? ওদিকে পুরুষমহলেও একই অবস্থা। হৃদয়বিদারক একটি দিন শেষে শ্রান্ত ক্লান্ত আচ্ছন্ন হৃদয়মন নিয়ে বাড়ী ফিরে এলাম।
সাইফুলকে স্মৃতি থেকে মুছে ফেলা খুব একটা কঠিন ছিলনা। যে সবসময় নিজেকে লুকিয়ে রাখত তাকে মনে করাটাই তো আসলে কঠিন। শুধু জামশেদ এই স্মৃতি ভুলতে পারলনা। সে প্রথমে অন্যত্র বাসা নিলো। পরে অন্যত্র চাকরী নিয়ে চলে গেল। তবে আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখত সবসময়।
আর আমরা। কেন যেন এই পরিবারটিকে আমরা ভুলতে পারতাম না। ওরা দরিদ্র ছিল, কিন্তু ওদের ছেলেটিকে ওরা নৈতিক শিক্ষায় দীক্ষিত করেছিল। ভুলতে পারতাম না ওর বাবা কি কঠিন পরিস্থিতিতে কি অসাধারণ ধৈর্যধারণ করেছিলেন যেন তার ছেলেটি মৃত্যুর পর কোন কষ্ট না পায়। কি করে ভুলব সেই দুঃখিনী মাকে যে তার প্রথম সন্তান হারিয়ে বাকহারা হয়ে গিয়েছিল? তাই হয়ত প্রতিবছর ঘুরেফিরে সাইফুলের মৃত্যুর সময়টাতে আমরা একবার ওর গ্রামের বাড়ী ঘুরে আসতাম, ওর পরিবারের খোঁজখবর নিতাম। আমাদের কিছুই ছিলনা ওদের দেয়ার মত। তবু হেলিকপ্টার নামধারী বাইকটা নিয়ে চলে যেতাম সেই সুদূরে, ওদের একনজর দেখে আসতাম। ওরা খুশি হত, আমরাও মনে শান্তি পেতাম।
একবার সাইফুলদের বাড়ীতে যাবার পথে বাইকে বসে দু’জনে কথা বলতে বলতে আমরা ভুল করে ডানে মোড় নেয়ার পরিবর্তে বাঁয়ে মোড় নিয়ে অনেকদূর চলে গেলাম। চারপাশের দৃশ্যাবলী দেখেই সন্দেহ হল, ‘পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ!’ তবু পথ খুঁজে পাবার ক্ষীণ আশা নিয়ে আরো কিছুদূর যাবার পর সামনে একটা নদী দেখে আমরা নিশ্চিত হলাম ভুল পথে এসে পড়েছি। ঐ মোড় পর্যন্ত পুরোটা পথ ফিরে গিয়ে আবার ডানে মোড় ধরতে হবে। হাফিজ সাহেব বললেন, ‘শোন, যেহেতু এতদূর চলেই এসেছি, চল তোমাকে একটা জিনিস দেখাই। শর্ত একটাই, যতক্ষণ ওখানে থাকবে কোন শব্দ করতে পারবেনা’। একটু অবাক হলাম এমন অদ্ভুত শর্তে, কিন্তু ভাবলাম, ‘যাক, একটা নতুন জায়গা যদি ঘুরে দেখা যায় আর অসুবিধা কি?’
একটু পর উনি বাইক এক জায়গায় ঢুকিয়ে দিলেন, দেখি এই প্রত্যন্ত গ্রামের ভেতর শত শত লেটেস্ট মডেলের দামী দামী গাড়ী, আমাদের ছোট্ট বাইকখানা রাখার জায়গা পাওয়াই মুশকিল! তারস্বরে গান বাজছে, পথের দু’ধারে নানারকম জিনিসের পসরা, ভাবলাম হয়ত কোন মেলা বসেছে। ভেতরে গিয়ে দেখি সারিসারি কবর, নতুন কবর, পুরান কবর, বড় কবর, ছোট কবর, ঘেরা দেয়া কবর, ঘেরা ছাড়া কবর। কোন কোন কবরের ওপর দামী ঝালর পাতা কিংবা আরো অনেক কারুকাজ করা, প্রতিটি কবরের পাশেই কেউ না কেউ বসে পয়সা নিচ্ছে, কেউ কেউ বসে কুর’আন পড়ছে, কিছু কিছু জায়গায় দেখলাম বোরকা পরা মহিলারা কবরের সামনে ঝুঁকে সিজদা দিচ্ছে! চোখের সামনে স্পষ্ট শিরক দেখে আমার গা শিউরে উঠল, আমি চিৎকার দিতে যাচ্ছিলাম, ‘কি করছেন আপনারা?’ কিন্তু হাফিজ সাহেব আমার মুখ চেপে ধরলেন, ‘খবরদার, এখানে কোন কথা বলবেনা, শুধু দেখতে থাকো’। ওখান থেকে বের হয়ে দেখলাম কয়েকটা পুকুর, ঐ পুকুরে খোসপাঁচড়া থেকে শুরু করে ক্যান্সারের রোগী নেমে গোসল করছে, আবার কিছু কিছু মানুষ ঐ ‘পবিত্র’ পানি বোতলে ভরে নিয়ে যাচ্ছে রোগাক্রান্ত কাউকে খাওয়ানোর জন্য যেন ওরা ভাল হয়ে যায়। আরেকটা চিৎকার উঠে এলো গলা থেকে, ‘এই পানি খেলে তো সুস্থ মানুষও মারা যাবে!’ চিৎকারটা মাঝ পথে গিলে ফেললাম কিন্তু হজম করতে পারলাম না। হাফিজ সাহেবকে বললাম, ‘এখান থেকে চলো, আমার দম বন্ধ লাগছে!’
আজও সেই দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠলে স্বাভাবিক হতে পারিনা। ভারতে দেখা যায় সেইসব মুসলিমদের সাথে হিন্দুদের কোন দ্বন্দ্ব নেই, তাদের নিয়ে এদের কোন মাথাব্যথা নেই যারা কবরপূজা করে। কারণ প্রকৃতপক্ষে তাদের উভয়ের মাঝে পার্থক্য কেবল পূজার জন্য পূজ্য বেছে নেয়ায়, যেই আরাধ্য আল্লাহ নন, এছাড়া আর কিছু নয়।
আল্লাহ তাঁর নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘বলুন, তিনি আল্লাহ, এক। আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। এবং তার সমতুল্য কেউ নেই’ (সুরা ইখলাস)। এর চেয়ে স্পষ্ট আর কি নির্দেশ হতে পারে? তিনিই একমাত্র প্রভু, একমাত্র আরাধ্য, একমাত্র দাতা এবং একমাত্র ক্ষমাকারী। তারপরেও শিক্ষিত অশিক্ষিত, ধনী গরীব সকল ক্যাটাগরীর মানুষ কতগুলো কবরের সামনে কিছু মৃত মানুষের কাছে গিয়ে প্রার্থনা করছে- আমাকে একটি সন্তান দাও, আমাকে একটি চাকরী দাও, আমার পরীক্ষার ফলাফল ভাল করে দাও, আমাকে আরো ধনবান করে দাও, আমার রোগ ভাল করে দাও- অথচ এই অসহায় মানুষগুলোর ক্ষমতা নেই তারা নিজের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করে, তারা অপরের জন্য কি করবে? ওরা তো দুনিয়ার পাট চুকিয়ে চলে গিয়েছে! কিয়ামতের দিন পর্যন্ত তাদের পৃথিবীর সাথে আর কোন সম্পর্কে নেই সাদকায়ে জারিয়া ছাড়া। আল্লাহ বলেছেন কিয়ামতের দিন ‘আল্লাহ একত্রিত করবেন তাদেরকে এবং তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদত করত তাদেরকে, সেদিন তিনি উপাস্যদেরকে বলবেন, তোমরাই কি আমার এই বান্দাদেরকে পথভ্রান্ত করেছিলে, না তারা নিজেরাই পথভ্রান্ত হয়েছিল? তারা বলবে-আপনি পবিত্র, আমরা আপনার পরিবর্তে অন্যকে মুরুববীরূপে গ্রহণ করতাম না; কিন্তু আপনিই তো তাদেরকে এবং তাদের পিতৃপুরুষদেরকে ভোগসম্ভার দিয়েছিলেন, ফলে তারা আপনার স্মৃতি বিস্মৃত হয়েছিল এবং তারা ছিল ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতি। আল্লাহ মুশরিকদেরকে বলবেন, তোমাদের কথা তো তারা মিথ্যা সাব্যস্ত করল, এখন তোমরা শাস্তি প্রতিরোধ করতে পারবে না এবং সাহায্যও করতে পারবে না। তোমাদের মধ্যে যে গোনাহগার আমি তাকে গুরুতর শাস্তি আস্বাদন করাব’ (ফুরকান ১৭-১৯)।
অথচ এই বেচারাদের অনেকেই আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্যের সাথে, তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম হিসেবেই শিরক করছেন! যারা তাদের পথ দেখাতে পারত তারা তাদের প্রতারিত করছে, তারা এই সাধারন জনগোষ্ঠীর মূর্খতার সুযোগ নিচ্ছে। কিন্তু এক্ষেত্রে যে প্রতারণা করে এবং যে প্রতারিত হয় উভয়ে সমান অপরাধী। কেননা আল্লাহ আমাদের বিবেক দিয়েছেন, বুদ্ধি দিয়েছেন, বোধশক্তি দিয়েছেন, তারপরেও ‘অনেক মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে’ (সুরা ইউসুফ ১০৬)। কি করে মানুষ কাউকে সৃষ্টিকর্তার সমকক্ষ মনে করতে পারে যখন তিনি বলেই দিয়েছেন তাঁর সমতুল্য কেউ নেই? তবুও কেন মানুষের বোধোদয় না হয়! সামান্য একটু জানার অভাব, জানার চেষ্টা করার অভাব, অন্যের কথায় ফাঁকফোঁকর আছে কিনা তা যাচাই করে দেখার অভাব কত মানুষকে ইসলামের নামে শিরকের পথে নিয়ে যাচ্ছে ভাবতেই অবাক লাগে।
কারো কারো বক্তব্য, ‘আমরা তো তাদের কাছে চাইনা, আমরা তাদের বলি আমাদের পক্ষ হয়ে আল্লাহর সাথে কথা বলতে’। কিন্তু প্রথমত তারা নিজেরাই মৃত, দ্বিতীয়ত আল্লাহর সাথে মধ্যস্ততা করার জন্য আমাদের কোন মাধ্যম প্রয়োজন নেই, তিনি নিজেই বলেছেন, ‘কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া?’ (বাকারা ২৫৫)। আমরা দিনে পাঁচবার তাঁর সাথে নিয়মিত এবং এর বাইরে যখন ইচ্ছে তখন অনিয়মিতভাবে যোগাযোগ করতে পারি। বরং মাধ্যম খুঁজতে গিয়েই অনেক জনগোষ্ঠী পথভ্রষ্ট হয়েছে। আল্লাহ তাঁর নবীকে পর্যন্ত সাবধান করে দিয়েছেন, ‘আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছে, যদি আল্লাহর শরীক স্থির করেন, তবে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের একজন হবেন’ (সুরা যুমার ৬৫)।
সাইফুলকে হিংসা হয়। এত পঙ্কিলতার মাঝে সে পণ করে নিয়েছিল, ‘নিশ্চয়ই আমার ছালাত, আমার কোরবাণী এবং আমার জীবন ও মরন বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য’ (সুরা আনআম ১৬২) এবং সে অনুযায়ী নিজের ওয়াদা পূর্ণ করে কোন প্রলোভন কিংবা প্রতারণার দিকে না তাকিয়ে পথের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেই সে চলে গিয়েছে। আমরা কি ততটা ভাগ্যবান হতে পারব?
রেহনুমা বিনতে আনীস
ক্যালগেরী, কানাডা