সাম্প্রতিক মুসলিম বিশ্ব

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 393 বার পঠিত

রাসূল (ছাঃ)-এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কয়েকটি ব্লগে জঘন্য লেখা প্রকাশ ও দেশব্যাপী নিন্দা

সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় রাজীব হায়দার নামক জনৈক ব্লগারের নিহত হবার পর তার বিরুদ্ধে ব্লগে রাসূল (ছাঃ)-এর স্বভাব-চরিত্র এবং ইসলামের বিভিন্ন ইবাদত-বন্দেগী সম্পর্কে অতি জঘন্য লেখা প্রকাশের অভিযোগ উঠে। পত্র-পত্রিকায় এ সকল কূরুচিপূর্ণ লেখা প্রকাশিত হলে দেশব্যাপী ঘৃণা ও নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। এর প্রতিবাদে গত ২২শে ফেব্রুয়ারী সারাদেশে জুম‘আর ছালাত পরবর্তী বিক্ষোভ সমাবেশের আহবান জানায় দেশের বেশ কয়েকটি ইসলামী রাজনৈতিক দল। এই আহবানে সাড়া দিয়ে শুক্রবার বাদ জুম‘আ দেশের সকল যেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ময়দানে নেমে আসে। কিন্তু সরকারের হঠকারী সিদ্ধান্তের ফলে পুলিশ মারমুখীভাবে এই বিক্ষোভ দমন করে এবং তাদের নির্বিচার গুলিবর্ষণ ও লাঠিচার্জে সারাদেশে ৪ জন নিহত এবং কয়েকশত মুছল্লী আহত হয়। গ্রেফতার হয় আরো কয়েক হাজার। গায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে পুলিশের ঠান্ডা মাথায় মানুষ হত্যা হতবাক করে দেয় সবাইকে। সরকারের এই মারমুখী অবস্থানের প্রতিবাদে ও নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তির দাবীতে বিক্ষুব্ধ ইসলামী দলগুলো দেশব্যাপী হরতাল আহবান জানায় ২২ তারিখ রবিবার। সারাদেশে এদিন শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালিত হলেও পুলিশের ন্যক্কারজনক ভূমিকার কারণে মানিকগঞ্জে নিহত হয় আরো ৫ জন। বর্তমানে একদিকে সরকারের দমননীতি, অন্যদিকে এই কুরুচিপূর্ণ ব্লগারদের শাস্তির দাবিতে দেশব্যাপী নিন্দা ও প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে।

উল্লেখ্য যে, ইন্টারনেটে বাংলাভাষায় সর্বপ্রথম ব্লগিং-এর চর্চা শুরু হয় ২০০৬ সালে ‘সামহোয়্যার ইন ব্লগ’-এর মাধ্যমে। মুক্ত লেখালেখি ও মতপ্রকাশের জায়গা হিসাবে এই ব্লগগুলি তরুণসমাজে দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। কিন্তু মুক্ত মতপ্রকাশের এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একশ্রেণীর ব্লগার দীর্ঘদিন যাবৎ অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ ভাষায় রাসূল (ছাঃ)-এর চরিত্র হনন  এবং ইসলামী আইন ও বিধানের বিরুদ্ধে অপপ্রচারণা চালাতে থাকে। শুধু তাই নয় অধিকাংশ ব্লগ এসব অশ্লীলভাষী নাস্তিক ব্লগারদের কেবল সুযোগই দেয় নি; বরং সহযোগিতা করেছে। ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদ প্রচারে শীর্ষস্থানীয় সামহোয়্যার ইন ব্লগ, আমার ব্লগ, মুক্তমনা ব্লগ, নাগরিক ব্লগ, প্রথম আলো ব্লগ, ধর্মকারী ব্লগ, নবযুগ ব্লগ, সচলায়তন ব্লগ, অগ্নিসেতু ব্লগ ইত্যাদি নামের ব্লগগুলো অনবরত দেশী-বিদেশী এনজিওগুলোর মদদে দ্বীন ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়ে স্বীয় স্বার্থ চরিতার্থের পাঁয়তারায় লিপ্ত রয়েছে। এদের অশুভ অপতৎপরতা সম্পর্কে মিডিয়ায় কোন রহস্যময় কারণে এ পর্যন্ত কিছুই প্রকাশ পায় নি। বর্তমানে যখন দেশব্যাপী এই নাস্তিক ব্লগারদের অপকীর্তি ছড়িয়ে পড়েছে, তখনও সেক্যুলার মিডিয়াগুলো এবং সরকার তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে বরং প্রকারান্তরে জোর পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করছে। ইসলামপন্থী ব্লগ বলে পরিচিত ‘সোনার বাংলা’ ব্লগকে সরকার তুচ্ছ কারণ দেখিয়ে বন্ধ করে দিলেও এসকল নাস্তিক্যবাদী ব্লগ ও ওয়েব সাইট এখনও বন্ধ করা হয় নি। যে সব ব্লগাররা বিভিন্ন ‘নিকে’ নগ্নভাবে ইসলাম বিদ্বেষ প্রচার করে আসছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, ইসলামবিদ্বেষী স্বঘোষিত কুখ্যাত নাস্তিক আসিফ মহিউদ্দীন, আরিফুর রহমান ওরফে নিতাই ভট্টাচার্য, সুব্রত শুভ, আশীষ চ্যাটার্জী, অরুণ মজুমদার, তন্ময় তালুকদার, অভিজিৎ রায়, সুমিত চৌধুরী, বিপ্লব কান্তি দে, শুভজিৎ ভৌমিক, প্রিতম দাস, রনদ্বিপম বসু, ডাক্তার আইজুদ্দীন, চিন্তিত সৈকত ওরফে সৈকত বরুয়া, শর্মি আমিন, আল্লামা শয়তান ওরফে বিপ্লব, আহমেদ রাজিব হায়দার শোভন, অমিত হাসান, নূর নবী দুলাল, ইব্রাহীম খলীল সবাক, পারভেজ আলম, আশরাফুল ইসলাম রাতুল, তানজিমা, আরজ আলী মাতববর, নাস্তিকের ধর্মকথা, দূরের পাখি প্রমুখ শয়তানরূপী নাস্তিক ব্লগাররা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ‘নিক’ নামে রাসূল (ছাঃ) ও ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে অবমাননাকর কুরুচিপূর্ণ ও জঘন্য লেখা নিয়মিত প্রকাশ করে যাচ্ছে। লক্ষ্যণীয় ব্যাপার যে, অনেকে মুসলিম ‘নিক’ নিয়ে ব্লগিং করে, অথচ তারা মূলতঃ হিন্দু। এদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন পর হলেও যে আওয়াজ উঠেছে তা অত্যন্ত জরুরী হয়ে উঠেছিল। এ আন্দোলনের ফলে সরকার ইতিমধ্যে একটি ইন্টারনেট মনিটরিং সেল গঠন করেছে। সচেতন মহল আশা করছে, এই মনিটরিং সেলের মাধ্যম সরকার সকল নাস্তিক্যবাদী ব্লগ এবং ব্লগারদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সেই সাথে তরুণ সমাজের চরিত্র বিধ্বংসী অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ সকল ওয়েবসাইট ব্লক করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পবিত্র কুরআন

সারা বিশ্বে ১ নং র‌্যাংকিংধারী যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের প্রবেশমুখে ন্যায়বিচার বিষয়ক একটি কুরআনের আয়াত টানিয়ে দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কুরআনের সূরা নিসা’র ১৩৫ নং আয়াতে সর্বোৎকৃষ্ট ন্যায়বিচারের কথা বলা হয়েছে যার মাধ্যমে মানুষ ন্যায়বিচার পেতে পারে।

আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে সাক্ষী রেখে তোমরা ন্যায়বিচারের ওপর অটল থাক, যদিও এটা তোমাদের, তোমাদের বাবা-মায়ের এবং আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে যায়; হোক সম্পদশালী অথবা গরীব- সবাই আল্লাহর মুখাপেক্ষী। যদি ন্যায়বিচার অস্বীকার করো অথবা ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করো, তবে জেনে রাখ আল্লাহ তোমাদের সব কর্মকান্ড সম্পর্কে অবগত (সূরা নিসা ১৩৫)

সৌদি দৈনিক আজেল পত্রিকা জানায়, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল্লাহ জুম্মা নামের একজন ছাত্র তার টুইটারে এ ঘটনা জানান। ঐ ছাত্র লিখেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের প্রবেশমুখে যে আয়াতটি লেখা হয়েছে, তা বিশ্বে ন্যায়বিচারের ইতিহাসের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠতম প্রকাশ হিসেব মূল্যায়িত হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ১৫০ জন স্টাফ ও শিক্ষার্থীর মতামতের মাধ্যমে বাছাই করা হয়েছে ন্যায়বিচার সম্পর্কিত কুরআনের এই আয়াতটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, বিশ্বের মানুষ ন্যায়বিচার কিভাবে পাবে তার সুস্পষ্ট নিদের্শনা রয়েছে কুরআনের এই কথাগুলোতে। কুরআনের এই আয়াতের কথার প্রেক্ষিতে এখন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শক ও গবেষকরা স্মরণকালের ইতিহাসে সবচেয়ে ভালো ন্যায়বিচারকদের শনাক্ত করার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

মালির সালাফী সংগঠন আনছারুদ্দীন বিরুদ্ধে পশ্চিমা দমন অভিযান

১১ই জানুয়ারী ২০১৩ মালির সালাফী বিদ্রোহী সংগঠন আনছারুদ্দীনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে ফরাসী নেতৃত্বাধীন আফ্রিকান কোয়ালিশন বাহিনী। গত বছর মালির উত্তরাঞ্চলের দেশটির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার পর আনছারুদ্দীন সংগঠনটি। অবশেষে তাদেরকে দমনের জন্য মালির প্রেসিডেন্ট বিদেশী সামরিক সহায়তা আহবান করলে ফরাসী সামরিক বাহিনী এই অভিযান শুরু করে। পরে আফ্রিকান ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশও এই অভিযানে যোগদান করে। এমনকি আনছারুদ্দীনের সাবেক সহযোগী এমএনএলএ গ্রুপটিও এই বাহিনীর সহায়তা করছে। এই সম্মিলিত সামরিক জোট ক্রমাগত বিমান ও স্থল হামলার মাধ্যমে ৭ই ফেব্রুয়ারী উত্তর মালির অধিকাংশ স্থান বিদ্রোহীদের দখলমুক্ত করে।  

উল্লেখ্য, উক্ত সালাফী সংগঠনটি গত বছর মে-জুন মাসে টিম্বুকটু শহরের ছূফী সাধকদের বড় বড় মাযারসমূহ ভেঙে ফেলার মাধ্যমে সারাবিশ্বের নজর কাড়ে। তারা সমগ্র মালিতে ইসলামী শরী‘আ আইন চালু করা এবং সকল প্রকার শিরকের মূলোৎপাটন করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল।

অভিযোগ উঠেছে আফ্রিকার ৩য় বৃহত্তম স্বর্ণ উৎপাদকারী দেশ মালির প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ হস্তগত করার মতলবেই আন্তর্জাতিক বাহিনী স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই অভিযানে অংশগ্রহণ করছে। উল্লেখ্য, মালিতে বর্তমানে ৭টি স্বর্ণখনি থেকে স্বর্ণ উত্তোলন করা হচ্ছে।



আরও