আল্লাহর পথে দাওয়াত : গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর 2100 বার পঠিত
মানব
জাতির ইতিহাস খুঁজলে পাওয়া যাবে আদমই (আঃ) তাদের আদি পিতা। আর তাঁরই হতে
হাওয়া (আঃ)-কে সৃষ্টি করে আল্লাহ তা‘আলা অগণিত বনু আদম পৃথিবীতে ছড়িয়ে
দিয়েছেন। যখন মানুষ স্বীয় দায়িত্ব-কর্তব্য ভুলে বিপথগামী হতে বসেছে, তখনই
অসীম দয়ালু আল্লাহ তাদেরকে সত্য পথ দেখানোর জন্য যুগে যুগে নবী ও
রাসূলদেরকে এ ধরাপৃষ্ঠে পাঠিয়েছেন। আর এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ এবং
সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল হলেন বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)।
যাকে মহান রববুল আ‘লামীন অমায়িক চরিত্রের ভুষণে ঢেলে সাজালেন। চারিত্রিক
এমন কোন গুণ অবশিষ্ট ছিল না যা তাঁর চরিত্রে অনুপস্থিত। সে সুরেরই
প্রতিধ্বনি শুনা যায় মহান আল্লাহর বাণীতে- وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ
عَظِيمٍ ‘আপনি অবশ্যই মহত্তম চরিত্রে অধিষ্ঠিত’ (কলম ৪)। যাঁকে
বিশ্ব জগতের মালিক আল্লাহ তা‘আলা উত্তম চরিত্রের সনদ দিয়ে পৃথিবীতে
পাঠিয়েছেন, তাঁর শানে নূন্যতম বদনাম অশোভনীয়। আর যারা এরূপ হীন কাজে জড়াবে
তারা কোন শ্রেণীর সৃষ্টি জীব তা ভাষায় প্রকাশ করা কষ্টসাধ্য। কিন্তু
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, তাঁর সম্পর্কেও বর্তমান সময়ের কিছু নাস্তিক অশালীন
ভাষায় কটূক্তি করে পরিবেশ নষ্ট করতে চাচ্ছে। এ যে ইহুদী-খৃষ্টানদের
ষড়যন্ত্রের অংবিশেষ তা কে না জানে। পাশ্চাত্যের মদদপুষ্ট পাকিস্তানী
বংশোদ্ভূত মুসলিম নামধারী নাস্তিক সালমান রুশদী, ভারতের দাউদ হায়দার,
বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত তসলিমা নাসরীন ও তরুণ প্রজন্মের শাহবাগী নাস্তিক
ব্লগাররা যে একই দাবার গুটি তা ধর্মপ্রাণ মানুষের বুঝতে আর বাকী নেই। আর
গুটি কয়েক নাস্তিকদের খুশি করতে গিয়ে অনেক সময় প্রশাসনযন্ত্রও তাদের
শেল্টার দিয়ে থাকে যা অনভিপ্রেত। কেননা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পিছনে
ইসলামী চেতনা মিশে রয়েছে প্রতিটি মুসলিমের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। তাসলীমা
নাসরিনকে এ দেশের মানুষ দেশ ত্যাগে বাধ্য করেছিল। সে দিন আপামর মুসলিম জনতা
প্রতিবাদী কণ্ঠে রাজপথে নেমেছিল। সেই ঈমানী চেতনা দেশের মানুষের হৃদয় থেকে
মুছে যায়নি। এ বাস্তবতা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে অবমাননাকারী নাস্তিকদের ভুলে
যাওয়া উচিত নয়। কারণ ঐসব নাস্তিকদের তুলনায় দেশে ধর্মপ্রাণ আস্তিকদের
তুলনা এতই বেশী যে, তা তুলনা করাও বোকামী। তেজোদীপ্ত ঈমানের বলে বলিয়ান
মুসলিম জনগণ ফুঁসে উঠলে অবমাননাকারী নাস্তিকদের পরিণতি কি হবে তা সময়ই বলে
দিবে। শেষ পর্যন্ত পালানোর রাস্তাটুকু পাবে না। এক শ্রেণীর মুসলমান
পাশ্চত্যের পাতানো ফাঁদে পা রেখে তথাকথিত ‘উদারতা’ দেখাতে গিয়ে স্বীয় রাসূল
(ছাঃ)-এর মর্যাদা পর্যন্ত ভুলতে বসেছে। ছলে বলে কৌশলে নাস্তিকদের বাঁচানোর
জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। আবার গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিচ্ছে আমরা কি মুসলিম নই?
আমরা কি ছালাত পড়ি না? তোমার ঈমানে উইপোকা বাসা বেঁধেছে তা চির সত্য কথা।
কেননা ঈমান ও নাস্তিক্যবাদ কোন দিন এক হতে পারে না। যা সুমেরু ও কুমেরুতে
অবস্থানকারী পরস্পর বিরোধী কাজ। একটি অপরটির ঘোর বিরোধীও বটে। দেশের সরকার ও
জনগণের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড কার্যকর সময়ের
একান্ত দাবী। অন্যথা এলাহী গযব পতিত হলে তখন কেউ তা থেকে রেহাই পাবে না।
সকলকে তার স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। তাই সময় থাকতেই সাবধান হোন। বর্তমান
প্রবন্ধে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে অবমাননা করার ক্ষেত্রে জাহেলী যুগ ও বর্তমান
যুগের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নামে বিভিন্ন অপবাদ :
মক্কার কাফির-মুশরিকরা যখন নবী করীম (ছাঃ)-কে আদর্শিক দিক দিয়ে মুকাবিলা করতে পারছিল না, তখন তারা ভিন্ন পথ খুঁজতে থাকে। তারা ভাবতে থাকে ইসলামের উত্তাল তরঙ্গ কিভাবে স্তব্ধ করা যায়। সে লক্ষ্যে তারা বেছে নেয় গাল-মন্দের পথ ও কুৎসা রটনা সহ বিভিন্ন অশালীন কথার দ্বারা তাঁর নির্মল চরিত্রে কালিমা লেপনের ঘৃণ্য পথ। তাদের বিশ্বাস এ অস্ত্রের আঘাতেই তাঁকে ধরাশায়ী করা সম্ভব। ভিনদেশী লোকেরা দ্বীন গ্রহণ করতে এসে তাঁর বদনাম শুনে ইসলাম গ্রহণ না করে নিজ দেশে ফিরে যাবে। আর যদি তারা যাচাই-বাছাই করতে আসে তাহলে ঘুরে ফিরে তাদের কাছেই তো আসতে হবে। তখন তারা তাদের মগজ ধোলাই করেই ছাড়বে। কাফির-মুশরিক কর্তৃক রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দেয়া গালি ও মিথ্যা অপবাদ সমূহ নিম্নে তুলে ধরা হলো-
জাহেলী যুগের কাফের-মুশরিকদের দেয়া অপবাদ সমূহ :
(১) পাগল (২) কবি : তারা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে পাগল বা কবি হিসাবে প্রচার করতে থাকে। যেন মানুষ তার কাছে না যায় এবং তাঁর নিকট অবতারিত অহী তথা কুরআনুল কারীম থেকে দূরে থাকে। কেননা পাগলের কথায় কেউ কান দেয় না। আর যদি পবিত্র কুরআন কবির কবিতা হয় তাহলে অহীর ভিন্ন কোন মর্যাদাও থাকে না। তাই তারা এ নোংরা পথ বেছে নেয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, إِنَّهُمْ كَانُوا إِذَا قِيلَ لَهُمْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ يَسْتَكْبِرُونَ. وَيَقُولُونَ أَئِنَّا لَتَارِكُو آلِهَتِنَا لِشَاعِرٍ مَجْنُونٍ ‘যখন তাদেরকে বলা হত যে, আল্লাহ ছাড়া কোন (সত্য) মা‘বূদ নেই তখন তারা অহংকার করত এবং বলত, আমরা কি এক পাগল কবির কথায় আমাদের মা‘বূদদেরকে বর্জন করব’ (ছাফফাত ৩৭/৩৫-৩৬)।
(৩) জাদুকর ও (৪) মহা মিথ্যাবাদী : নবী করীম (ছাঃ)-কে তারা জাদুকর ও মিথ্যাবদী হিসাবে প্রচার করে। কেউ যেন তাঁর কথা না শুনে। পবিত্র কুরআনের বাণী শুনে সকলেই মুগ্ধ হয়ে যেত। আর এটাকেই তারা জাদুকরী প্রভাব বলে সমাজে প্রচার করতে থাকে। অপরদিকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করতে পারলে তাঁর প্রচারিত দ্বীন ‘ইসলাম’ কেউ গ্রহণ করবে না। এই ভেবে তারা তাঁকে মিথ্যাবাদী অপবাদ আরোপ করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَعَجِبُوا أَنْ جَاءَهُمْ مُنْذِرٌ مِنْهُمْ وَقَالَ الْكَافِرُونَ هَذَا سَاحِرٌ كَذَّابٌ ‘তারা আশ্চর্যবোধ করছে যে, তাদের নিকট তাদেরই মধ্য হতে একজন সতর্ককারী আসল এবং কাফিররা বলে, এতো এক জাদুকর ও মিথ্যাবাদী’ (ছোয়াদ ৩৮/৪)।
(৫) পুরাকালের উপাখ্যান বর্ণনাকারী : তাঁর উপর অবতীর্ণ কুরআনুল কারীমকে তারা পূর্ববর্তী লোকদের কল্পকথা বলে প্রচার চালিয়ে ছিল। তারা বলে, এসব আগেকার মানুষের অলিক কাহিনী। পবিত্র কুরআনের ‘আহসানুল কাছাছ’ তথা সর্বোত্তম শিক্ষণীয় ঘটনাগুলোকে তারা অতীতের রূপকথার কাহিনী বলে চালিয়ে দিয়েছিল। যেন পবিত্র কুরআন থেকে মানুষ অনেক দূরে অবস্থান করে। কেউ যেন এর ধারে কাছেও যেতে না পারে। যেমন আল্লাহ বলেন, وَإِذَا تُتْلَى عَلَيْهِمْ آيَاتُنَا قَالُوا قَدْ سَمِعْنَا لَوْ نَشَاءُ لَقُلْنَا مِثْلَ هَذَا إِنْ هَذَا إِلَّا أَسَاطِيرُ الْأَوَّلِينَ ‘তাদেরকে যখন আমার আয়াত সমূহ পাঠ করে শুনানো হয় তখন তারা বলে, আমরা শুনেছি, ইচ্ছা করলে আমরাও এর অনুরূপ বলতে পারি, নিঃসন্দেহে এটা পূর্ববর্তীদের মিথ্যা রচনা (উপকথা) ছাড়া আর কিছু নয়’ (আনফাল ৮/৩১)। আল্লাহ আরো বলেন, وَقَالُوا أَسَاطِيرُ الْأَوَّلِينَ اكْتَتَبَهَا فَهِيَ تُمْلَى عَلَيْهِ بُكْرَةً وَأَصِيلًا ‘তারা বলে, এগুলো তো সেকালের উপকথা, যা সে লিখিয়ে নিয়েছে; এগুলো সকাল-সন্ধ্যায় তার নিকট পাঠ করা হয়’ (ফুরক্বান ২৫/৫)।
(৬) অন্যের সাহায্যে মিথ্যা রচনাকারী : তারা নবী করীম (ছাঃ)-কে অন্যের সহযোগিতায় মিথ্যারোপকারী বলে প্রচার করতে থাকে। তারা দাবী করে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর প্রচারিত ধর্ম মিথ্যা। তিনি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকদের সাহায্যে এ মিথ্যা বাণী প্রস্ত্তত করেছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا إِنْ هَذَا إِلَّا إِفْكٌ افْتَرَاهُ وَأَعَانَهُ عَلَيْهِ قَوْمٌ آخَرُونَ فَقَدْ جَاءُوا ظُلْمًا وَزُورًا ‘কাফিররা বলে, এটা মিথ্যা ব্যতীত কিছুই নয়, সে এটা উদ্ভাবন করেছে এবং ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকেরা তাকে এই ব্যাপারে সাহায্য করেছে; এইরূপে তারা অবশ্যই যুলুম ও মিথ্যায় উপনীত হয়েছে’ (ফুরক্বান ২৫/৪)।
(৭) মিথ্যা রটনাকারী : রাসূল (ছাঃ)-কে মিথ্যা রটনাকারী বলে অভিহিত করেছিল। ক্ষেত্র বিশেষে মহান আল্লাহ কখনও কোন বিধানের পরিবর্তে ভিন্ন কোন বিধান নাযিল করলে তারা বলত, তিনি মিথ্যা উদ্ভাবনকারী না হলে এরূপ পরিবর্তন কেন হচ্ছে। যেমন আল্লাহ বলেন, وَإِذَا بَدَّلْنَا آيَةً مَكَانَ آيَةٍ وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا يُنَزِّلُ قَالُوا إِنَّمَا أَنْتَ مُفْتَرٍ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ ‘আমি যখন কোন এক আয়াত পরিবর্তন করে তার স্থলে অন্য এক আয়াত উপস্থিত করি আর আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেন তা তিনিই ভাল জানেন, তখন তারা বলে, তুমি তো শুধু মিথ্যা উদ্ভাবনকারী; কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না’ (নাহাল ১৬/১০১)।
(৮) ভবিষ্যদ্বক্তা : তারা নবী করীম (ছাঃ)-কে গনক বা ভবিষ্যদ্বক্তা হিসাবে চিত্রিত করতে থাকে। আর এসবের উদ্দেশ্য ছিল মানুষ যেন তাঁর প্রচারিত দ্বীন তথা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে। অনেক সময় তাদের মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখা কথাগুলো আল্লাহ জিবরীল মারফতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জানিয়ে দিতেন। তখন তারা বলত এ তো দেখছি ভবিষ্যদ্বক্তা বা জৌতিষী। এমর্মে মহান আল্লাহ বলেন, فَذَكِّرْ فَمَا أَنْتَ بِنِعْمَتِ رَبِّكَ بِكَاهِنٍ وَلَا مَجْنُونٍ ‘অতএব তুমি উপদেশ দিতে থাকো, তোমার প্রভুর অনুগ্রহে তুমি গণক নও, উন্মাদও নও’ (তূর ৫২/২৯)।
(৯) ফেরেশতা নয়, এতো সাধারণ মানুষ : তারা নবী (ছঃ)-কে সাধারণ মানুষ বলে তাঁর নবুওয়াতকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলে। কেননা তিনি নবী হলে তাঁর সাথে কোন ফেরেশতা নেই কেন? যে তাঁর সত্যায়নকারী হত। তারা মনে করত নবী কোন সাধারণ মানুষ হতে পারে না। তিনি ফেরেশতাদের মধ্যে কেউ হবেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, وَقَالُوا مَالِ هَذَا الرَّسُولِ يَأْكُلُ الطَّعَامَ وَيَمْشِي فِي الْأَسْوَاقِ لَوْلَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مَلَكٌ فَيَكُونَ مَعَهُ نَذِيرًا ‘তারা বলে, এ কেমন রাসূল যে আহার করে এবং হাটে বাজারে চলাফেরা করে? তার কাছে কোন ফেরেশতা অবতীর্ণ করা হলো না, যে তার সাথে থাকতো সতর্ককারীরূপে? (ফুরক্বান ২৫/৭)।
(১০) পথভ্রষ্ট : তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হওয়া সত্ত্বেও উল্টো তারাই নবী করীম (ছাঃ)-কে পথভ্রষ্ট বলে গালি-গালাজ করত। তাদের দৃষ্টিতে তারাই হক্ব পন্থী এবং নবী করীম (ছাঃ) ও মুমিনরাই বিপথগামী। যেমন আল্লাহ ত‘আলা বলেন, وَإِذَا رَأَوْهُمْ قَالُوا إِنَّ هَؤُلَاءِ لَضَالُّونَ ‘এবং যখন তাদেরকে (মুমিনদেরকে কাফিররা) দেখত তখন বলত, নিশ্চয়ই এরা পথভ্রষ্ট’ (মুতাফ্ফিফীন ৮৩/৩২)।
(১১) বেদ্বীন : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বেদ্বীন বা ধর্মত্যাগী বলে তাদের প্রচারণা চালাত। ফলে তারা স্বীয় ধর্মীয় লোকদের ক্ষিপ্ত করে তোলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। কারণ হিসাবে তারা বলত মুহাম্মাদ (ছাঃ) পূর্বপুরুষদের ধর্ম ত্যাগ করে নতুন ধর্ম তথা ইসলাম গ্রহণ করে বেদ্বীন হয়ে গেছে। যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মক্কায় হাজীদের নিকট ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছিলেন, তখন আবু লাহাব তাঁর পিছনে পিছনে বলছিল, ‘তোমরা তাঁর কথা শুনবে না, সে হচ্ছে মিথ্যাবাদী বেদ্বীন’ (আর-রাহীকুল মাখতূম, ১৭তম সংস্করণ ২০০৫ইং, পৃঃ ৮৬)। জাহেলী যুগের মানুষদের প্রচারণায় অবাক না হয়ে পারা যায় না। যিনি বেদ্বীন মানুষকে সঠিক দ্বীন তথা ইসলামে ধর্মে দীক্ষিত করার জন্য নিরলসভাবে দাওয়াতী কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁকেই শুনতে হয়েছে ধর্মত্যাগী নামক নোংরা গালি।
(১২) পিতৃধর্ম বিনষ্টকারী (১৩) জামা‘আত বিভক্তকারী : তারা পূর্ব পুরুষদের ধর্ম বিনষ্টকারী ও ঐক্য বিনষ্টকারী হিসাবে সমাজের মাঝে প্রচারণা চালায়। জাহেলী যুগে কুরাইশ নেতারা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর চাচা আবু তালিবের নিকট গিয়ে তাঁর সম্পর্কে বিভিন্ন অভিযোগ করে। এ সব অভিযোগ করে ইসলামের দাওয়াতী মিশন নিস্তব্ধ করতে চেয়েছিল। প্রকারান্তরে তারা নবী করীম (ছাঃ)-কে নিয়ে হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তারা স্বীয় চাচার কাছে অভিযোগ করে যে, ‘আপনার পিতা-পিতামহের বিরোধিতা করছে, আপনার জাতির ঐক্য ছিন্নভিন্ন করছে এবং তাদের বুদ্ধিমত্তাকে নিবুর্দ্ধিতা বলে অভিহিত করছে। (তাকে আমাদের হাতে তুলে দিন) আমরা তাকে হত্যা করব’ (আর-রাহীকুল মাখতূম, ১৭তম সংস্করণ ২০০৫ইং, পৃঃ ৯৪)।
(১৪) জাদুগ্রস্ত : তারা নবী করীম (ছাঃ)-কে জাদুগ্রস্ত হিসাবে সমাজে প্রচার করতে থাকে। যেন তার কথায় কেউ কর্ণপাত না করে। জাদুগ্রস্ত মানুষের কথায় কেউ কর্ণপাত করে না তাই তারা এ পথ বেছে নেয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, نَحْنُ أَعْلَمُ بِمَا يَسْتَمِعُونَ بِهِ إِذْ يَسْتَمِعُونَ إِلَيْكَ وَإِذْ هُمْ نَجْوَى إِذْ يَقُولُ الظَّالِمُونَ إِنْ تَتَّبِعُونَ إِلَّا رَجُلًا مَسْحُورًا ‘যখন তারা কান পেতে তোমার কথা শুনে তখন তারা কেন কান পেতে তা শুনে তা আমি ভাল করে জানি এবং (এটাও জানি) গোপনে আলোচনাকালে যালিমরা বলে, তোমরা তো এক জাদুগ্রস্ত ব্যক্তির অনুসরণ করছ মাত্র’ (বনী ইসরাঈল ১৭/৪৭)।
(১৫) ‘রা’ইনা : অস্পষ্ট নাম ব্যবহার করে মনের ঝাল মিটাতে থাকে। মানুষকে কষ্ট দেয়ার জন্যই সাধারণত তার নাম বিকৃত করা হয়। এক্ষেত্রে তারাও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বিকৃত নাম ধরে ডাকতে শুরু করে। যেমনভাবে আল্লাহ মুমিনদের ডাক দিয়ে বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَقُولُوا رَاعِنَا وَقُولُوا انْظُرْنَا وَاسْمَعُوا وَلِلْكَافِرِينَ عَذَابٌ أَلِيمٌ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ‘রা‘ইনা’ (বিশেষ একটা গালি) বল না বরং ‘উনযুরনা’ (আমাদের প্রতি নেক দৃষ্টি দিন) বল এবং শুনে নাও, আর কাফিরদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’ (বাক্বারা ২/১০৪)। মদীনায় হিজরত করার পর সেখানকার দুরাচার ইহুদীরা রাসূলকে ‘রা‘ইনা’ বলে ডাকত। তাদের মাতৃভাষা হিব্রুতে যার অর্থ ‘আমাদের দুষ্ট ব্যক্তিটি’।
সভ্য যুগের তথাকথিত মুসলিমদের দেয়া অপবাদ সমূহ :
বর্তমান সময়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে গালি দেয়া ও ইসলাম সম্পর্কে অবমাননা করার প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে যুব সমাজ এই আত্মঘাতী পিচ্ছিল পথে পা রাখছে। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র খোদ বাংলাদেশও এর হিংস্র ছোবল থেকে রক্ষা পায়নি। কখনো ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করা হচ্ছে। কখনো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পথনির্দেশিকা পবিত্র কুরআনুল কারীমের বিরুদ্ধে অবমাননাকর কথ প্রচার করছে। আবার কখনো বিশ্ব জগতের সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলার নামে অশালীন তথ্য পরিবেশন করছে। আবার কখনো বা বিশ্বের সর্বোত্তম চরিত্রের অনুসরণীয় মহান ব্যক্তিত্ব নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নামে বিভিন্ন ধরনের কটূক্তি ছড়াচ্ছে। বাংলাদেশে যেভাবে এই ছোঁয়াচে ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে তা রীতিমত উদ্বেগের বিষয়। হাতেগোণা কয়েকজন নাস্তিকের দৌরাত্মে আজ দেশের পরিবেশ অস্থিতিশীল। লাখো মুমিনের হৃদয়ে আঘাত হেনে তারা গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। যে ক্ষত থেকে প্রতিনিয়ত বেদনার অব্যক্ত অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে। যা পর্যায়ক্রমে প্রতিবাদে রূপলাভ করেছে। দেশের মানুষ ফুঁসে উঠেছে, নেমেছে রাজপথে নাস্তিকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করার দাবি নিয়ে। এর পরও যদি প্রশাসনযন্ত্র জেগে জেগে ঘুমায় তাহলে বুঝতে আর বাকী থাকে না তাদের নেপথ্যে রয়েছে ঐ ক্ষমতাধর নেতারাই? যারা সবকিছু জানার পরও কেউবা না জানার ভান করছে। আবার কেউ বা বিভিন্ন খোঁড়াযুক্তি দিয়ে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার অপচেষ্টা করছে। আবার নেতাদের অনেকে একে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠেছে। সময় এসেছে এর সুষ্ঠু সমাধান করার। যা সকল মুসলিম হৃদয়ের একান্ত দাবী।
ব্লগার রাজীব হায়দার নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেক অজানা নোংরা তথ্য বেরিয়ে আসে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর স্বভাব-চরিত্র এবং ইসলামের বিভিন্ন ইবাদত-বন্দেগী সম্পর্কে অতি জঘন্য লেখা প্রকাশের অভিযোগ উঠে। পত্র-পত্রিকায় এ সকল কুরুচিপূর্ণ লেখা প্রকাশ হওয়ায় দেশব্যাপী এই নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তির দাবী এবং ঘৃণা ও নিন্দার ঝড় অব্যাহত রয়েছে। ঐ ব্যক্তি তার ব্লগে গত বছরের জুন মাস থেকে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে ‘মোহাম্মক’ (মহা-আহম্মক), উম্মতে মুহাম্মদীকে ‘উম্মক’ (উম্মত+আহম্মক), মোহরে নবুঅতকে রাসূল (ছাঃ)-এর কাঁধে খাদীজার পেন্সিল হিল জুতার আঘাতের চিহ্ন বলে প্রচারণা চালাচ্ছে (মাসিক আত-তাহরীক, এপ্রিল ২০১৩ইং, পৃঃ ৪৩)।
আইটি বিশেষজ্ঞসহ কয়েকজন আলেম কর্তৃক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুসন্ধান কমিটিকে প্রদত্ত রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, শাহবাগ আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা আসিফ মহিউদ্দিন ইসলামবিদ্বেষী অন্যতম নাস্তিক ব্লগার। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, আসিফ নিজেকে খোদা দাবি করেছে। মসজিদ সম্পর্কে সে লিখেছে, ‘ঢাকা শহরের সব মসজিদকে পাবলিক টয়লেট বানানো উচিত’ (নাঊযুবিল্লাহ)! (দৈনিক আমার দেশ, ২ এপ্রিল ২০১৩ইং, পৃঃ ১, কলাম ৬)।
তাছাড়া আসিফ তার ব্লগে রাসূল (ছাঃ)-কে নারী লোলুপ চরিত্রে চিত্রিত করতে চেয়েছে (নাঊযুবিল্লাহ)! বেহেশতে মুমিনদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত হুরদের সম্পর্কেও সে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় অশালীন মন্তব্য করেছে। এমনকি সে, বিশ্ব জগতের একচ্ছত্র অধিপতি মহান আল্লাহকেও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতেও দ্বিধাবোধ করেনি (দৈনিক আমার দেশ, ২ এপ্রিল ২০১৩ইং, পৃঃ ২, কলাম ৫)। তার ব্যবহৃত ভাষাগুলো এতটাই নোংরা যে, অত্র প্রবন্ধে তুলে ধরা সম্ভব নয়।
ইতিপূর্বে দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক কথা সাহিত্যিক আনিসুল হক পবিত্র কুরআনের ব্যাঙ্গাত্মক অনুবাদ করে ‘ছহি রাজাকারনামা’ নামক প্রবন্ধ লিখে। সে পবিত্র কুরআনের প্রথম আয়াতের অনুবাদ ‘সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য’ এর পরিবর্তে ‘সমস্ত প্রশংসা রাজাকারগণের’ করে। অপর একটি আয়াত ‘আমরা তোমরাই ইবাদত করি এবং তোমারই সাহায্য চাই’ এর অনুবাদের পরিবর্তে সে লিখেছে, ‘আর তোমরা রাজাকারের প্রশংসা কর, আর রাজকারদের সাহায্য প্রার্থনা কর’। সূরা নাবার ৩১-৩৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘পরহেযগার লোকদের জন্য রয়েছে মহা সাফল্য। (তা হচ্ছে) বাগ-বাগিচা, আঙ্গুর (ফলের সমারোহ)। (আরো আছে) পূর্ণ যৌবনা সমবয়সী সুন্দরী তরুণী’। সে এর ব্যঙ্গ অনুবাদ লিখেছে, ‘আর তাহাদের জন্য সুসংবাদ। তাহাদের জন্য অপেক্ষা করিতেছে রাষ্ট্রের শীর্ষপদ আর অনন্ত যৌবনা নারী আর অনন্ত যৌবন তরুণ। কে আছে, যে উত্তম সন্দেশ, মসৃণ তলদেশ ও তৈলাক্ত গুহ্যদেশ পছন্দ করে না’ (দৈনিক আমার দেশ, ২৮ মার্চ ২০১৩ ইং, পৃঃ ৪, কলাম ৫)। অবশ্য আনিসুল হকের এ লেখাটি প্রথম প্রকাশ পায় ১৯৯১ সালের ১২ এপ্রিল পূর্বাভাস পত্রিকায়। ১৯৯৩ সালে লেখাটি আনিসুল হকের ‘গদ্যকার্টুন’ বইতে স্থান পায়। ২০১০ সালে বইটি সন্দেশ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পুনরায় প্রকাশ করে।
ইতিপূর্বে ২০১০ সালের ১৪ মার্চ মানিকগঞ্জ যেলার ঘিওরের ত্বরা জনতা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিত মজুমদার দশম শ্রেণীতে পড়ানোর সময় বলে, ‘কুরআন শরীফ মানুষের বানানো সাধারণ একটি বই। মুহাম্মাদ (ছাঃ) একজন অপবিত্র মানুষ। তার মায়ের বিয়ের ৬ মাস আগেই মুহাম্মাদের জন্ম হয় (নাঊযুবিল্লাহ)! অবশ্য পরবর্তীতে জনরোষে পড়ে সে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয় (মাসিক আত-তাহরীক, এপ্রিল ২০১০, পৃঃ ৪১-৪২)।
এছাড়া মহানবী (ছাঃ)-এর কার্টুন পুনঃপ্রকাশ করে মুসলমানদের অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার কারণে অনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়েছিল ডেনমার্কের পত্রিকা পলিতিকান (মাসিক আত-তাহরীক, এপ্রিল ২০১০, পৃঃ ৪২)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নামে কটূক্তিকারীদের শারঈ বিধান :
কোন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে অবমাননা করলে সে ধর্মত্যাগী বা মুরতাদ হিসাবে গণ্য হবে। যা হত্যাযজ্ঞ অপরাধ। পাশাপাশি কেউ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তা ত্যাগ করলে অথবা এমন কর্ম করলে যা দ্বারা ধর্মত্যাগী হিসাবে গণ্য হয় তাহলে তাকেও ইসলামের বিধান অনুযায়ী হত্যা করতে হবে। এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেছেন, إِنَّمَا جَزَاءُ الَّذِينَ يُحَارِبُونَ اللهَ وَرَسُولَهُ وَيَسْعَوْنَ فِي الْأَرْضِ فَسَادًا أَنْ يُقَتَّلُوا أَوْ يُصَلَّبُوا أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُمْ مِنْ خِلَافٍ أَوْ يُنْفَوْا مِنَ الْأَرْضِ ذَلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِي الدُّنْيَا وَلَهُمْ فِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ. ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, আর ভূ-পৃষ্ঠে (ফিতনা) অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায় তাদের শাস্তি এটাই যে, তাদের কে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ান হবে, অথবা এক দিকের হাত ও অপর দিকের পা কেটে ফেলা হবে, অথবা নির্বাসনে পাঠানো হবে। এটা তো ইহলোকে তাদের জন্য ভীষণ অপমান, আর পরকালেও তাদের জন্য ভীষণ শাস্তি রয়েছে’ (মায়িদা ৫/৩৩)।
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ‘যদি তাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি ধৃত হওয়ার আগে তওবা করে, তবে এ ধরনের তওবা করার কারণে, শরী‘আতের যে নির্দেশ তার প্রতি ওয়াজিব হয়ে যায়, তা মাফ হয় না’ (আবুদাউদ হা/৪৩৭২, সনদ হাসান।)।
অত্র আয়াতে পরিষ্কারভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নামে কটূক্তিকারী ও নাস্তিক-মুরতাদদের শাস্তি হল মৃত্যুদন্ড। তাদের এ শাস্তি মওকুফের কোন সুযোগ নেই। তারা মৃত্যুরপূর্বে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে তাদের তিনি চাইলে ক্ষমা করতে পারেন। এতে করে তাদের পরকালীন শাস্তি আল্লাহ মওকুফ করবেন। তবে ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে দুনিয়াবী শাস্তি তথা মৃত্যুদন্ড বহাল থাকবে। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّ الَّذِينَ يُؤْذُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَأَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُهِينًا ‘নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, তাদের জন্য ইহকালে-পরকালে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে অভিশাপ এবং তাদের জন্য প্রস্ত্তত করে রাখা হয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’ (আহযাব ৫৭)। আল্লাহ ও তদীয় রাসূল (ছাঃ)-কে যে কোনভাবে কষ্ট দিলে তার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ অত্র আয়াতে সে কথারই প্রতিধ্বনি শুনা যায়। আর তাদের জন্য উভয় জগতে রয়েছে অভিশাপ। পাশাপাশি পরকালে অপমানকর আবশ্যিক লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি তাদের জন্য অপেক্ষমাণ।
অনুরূপভাবে হাদীছেও তাদের শাস্তির একই বিধান পরিলক্ষিত হয়। যেমনটি হাদীছে বর্ণিত হয়েছে- عَنْ عِكْرِمَةَ أَنَّ عَلِيًّا عَلَيْهِ السَّلاَمُ أَحْرَقَ نَاسًا ارْتَدُّوا عَنِ الإِسْلاَمِ فَبَلَغَ ذَلِكَ ابْنَ عَبَّاسٍ فَقَالَ لَمْ أَكُنْ لأَحْرِقَهُمْ بِالنَّارِ إِنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ تُعَذِّبُوا بِعَذَابِ اللهِ. وَكُنْتُ قَاتِلَهُمْ بِقَوْلِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَإِنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ بَدَّلَ دِينَهُ فَاقْتُلُوهُ. ইকরামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আলী (রাঃ) ঐ সব লোকদের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন, যারা মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল। এ সংবাদ ইবনু আববাস (রাঃ)-এর নিকট পৌঁছলে তিনি বলেন, যদি আমি তখন সেখানে উপস্থিত থাকতাম, তবে আমি তাদের আগুনে জ্বালাতে দিতাম না। কেননা, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা আল্লাহ প্রদত্ত শাস্তির (বস্ত্ত) দ্বারা কাউকে শাস্তি দিবে না। অবশ্য আমি তাদেরকে আল্লাহর রাসূলের নির্দেশ মত হত্যা করতাম। কেননা, তিনি বলেছেন, যদি দ্বীন পরিত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে যায়, তবে তোমরা তাকে হত্যা করবে’ (ছহীহ বুখারী হা/৩০১৭; আবুদাউদ হা/৪৩৫১; ইবনে মাজাহ হা/২৫৩৫; তিরমিযী হা/১৪৫৮; নাসাঈ হা/৪০৬০; মিশকাত হা/৩৫৩৩, সনদ ছহীহ।)। অত্র হাদীছে বুঝা যায় আলী (রাঃ) মুরতাদদের আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছিলেন। অবশ্য ইবনু আববাস (রাঃ) আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করাকে পছন্দ করেননি। তবে তিনিও মৃত্যুদন্ডের পক্ষেই রায় দেন।
عَنْ عَائِشَةَ رضى الله عنها قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لاَ يَحِلُّ دَمُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ إِلاَّ بِإِحْدَى ثَلاَثٍ رَجُلٌ زَنَى بَعْدَ إِحْصَانٍ فَإِنَّهُ يُرْجَمُ وَرَجُلٌ خَرَجَ مُحَارِبًا لِلَّهِ وَرَسُولِهِ فَإِنَّهُ يُقْتَلُ أَوْ يُصْلَبُ أَوْ يُنْفَى مِنَ الأَرْضِ أَوْ يَقْتُلُ نَفْسًا فَيُقْتَلُ بِهَا.
আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেছেন, কোন মুসলমানের রক্ত হালাল নয়, যে এরূপ সাক্ষ্য দেয় যে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ) আল্লাহর রাসূল’। তবে তিনটির মধ্যে যে কোন একটির কারণে তার রক্ত প্রবাহিত করা হালাল : (১) যদি কেউ বিবাহ করার পর যেনা করে, তবে তাকে পাথর মেরে হত্যা করা হবে (২) যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বের হবে, তাকে হত্যা করা হবে, অথবা শূলে চড়ানো হবে, অথবা দেশান্তর করা হবে এবং (৩) যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করবে, তার জীবনের বিনিময়ে তাকে হত্যা করা হবে’ (আবুদাউদ হা/৪৩৫৩; মিশকাত হা/৩৫৪৪, সনদ ছহীহ।)। হাদীছদ্বয় দ্বারা বুঝা যায় তিনটি কারণ ব্যতীত কোন মুসলিম ব্যক্তিকে হত্যা করা বৈধ নয়। প্রথমত : যে ব্যক্তি বিবাহিত জীবন যাপনের সুযোগ লাভের পর কোন নারীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তাকে হত্যা করা বৈধ। তাকে পাথর মেরে হত্যা করতে হবে। এটা তার জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। কোন ব্যক্তি এরূপ নোংরা কাজে যেন ধাবিত না হয়, তাই তার জন্য এই কঠিন শাস্তি। দ্বিতীয়ত : যদি কেউ অপর কোন ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে অর্থাৎ হদ কায়েম বা ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়ায় হত্যা করা তাহলে তাকেও হত্যা করা হবে। মানব সম্পদ সংরক্ষণের স্বার্থে এটাই ইসলামের চুড়ান্ত বিধান। তৃতীয়ত : কোন ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে আবার তা ত্যাগ করলে তাকেও হত্যা করা হবে।
ইবনু আববাস থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, কোন এক অন্ধ ব্যক্তির একটি দাসী ছিল। সে নবী করীম (ছাঃ)-এর শানে বেআদবীসূচক কথাবার্তা বলতো। সে অন্ধ ব্যক্তি তাকে এরূপ করতে নিষেধ করতো, কিন্তু সে তা মানতো না। সে ব্যক্তি তাকে ধমকাতো, তবু সে তা থেকে বিরত হতো না। এমতাবস্থায় এক রাতে যখন সে দাসী নবী (ছাঃ)-এর শানে অমর্যাদাকর কথাবার্তা বলতে থাকে, তখন ঐ অন্ধ ব্যক্তি একটি ছোরা নিয়ে তার পেটে প্রচন্ড আঘাত করে, যার ফলে সে দাসী মারা যায়। এ সময় তার এক ছেলে তার পায়ের উপর এসে পড়ে, আর সে যেখানে বসে ছিল, সে স্থানটি রক্তাক্ত হয়ে যায়। পরদিন সকালে এ ব্যাপারে যখন রাসূলূল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট আলোচনা হয়, তখন তিনি সকলকে একত্রিত করে বলেন, আমি আল্লাহর নামে শপথ করে এ ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাই এবং এটা তার জন্য আমার হক্ব স্বরূপ। তাই, যে ব্যক্তি তাকে হত্যা করেছে, সে যেন দাঁড়িয়ে যায়। সে সময় অন্ধ লোকটি লোকদের সারি ভেদ করে প্রকম্পিত অবস্থায় নবী করীম (ছাঃ)-এর সামনে গিয়ে বসে পড়ে এবং বলে, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি তার হন্তা। সে আপনার সম্পর্কে কটূক্তি ও গালি-গালাজ করতো। আমি তাকে এরূপ করতে নিষেধ করতাম ও ধমকাতাম। কিন্তু সে তার প্রতি কর্ণপাত করতো না। ঐ দাসী থেকে আমার দু’টি সন্তান আছে, যারা মণি-মুক্তা সদৃশ এবং সেও আমার খুব প্রিয় ছিল। কিন্তু গত রাতে সে যখন পুনরায় আপনার সম্পর্কে কটূক্তি গাল-মন্দ করতে থাকে, তখন আমি আমার উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি এবং ছোরা দিয়ে তার পেটে প্রচন্ড আঘাত করে তাকে হত্যা করি। তখন নবী করীম (ছাঃ) বলেন, তোমরা সাক্ষী থাক যে, ঐ দাসীর রক্ত ক্ষতিপূরণের অযোগ্য বা মূল্যহীন (আবুদাউদ হা/৪৩৬১; নাসাঈ হা/৪০৭০, সনদ ছহীহ।)। অত্র হাদীছে দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, মানব মুক্তির অগ্রদূত নবী করীম (ছাঃ)-এর নামে ব্যঙ্গ বা কটূক্তিকারীর শাস্তি হল মৃত্যুদন্ড। কোন ব্যক্তির জন্য তাঁর পূত-পবিত্রতম চরিত্রে কোন কালিমা লেপনের সুযোগ নেই। তাঁর সম্পর্কে কোন কথা বলতে চাইলে নিশ্চিত হয়ে স্রেফ সত্যটুকুই বলতে হবে। তাঁর সম্পর্কে কোন সন্দেহযুক্ত কথাও বলাও ইসলামে নিষেধ।
বনু কুরাইযা গোত্রের বিখ্যাত কবি ও নেতা কা‘ব ইবনু আশরাফ নানাভাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে কষ্ট দিত। একদা নবী করীম (ছাঃ) ছাহাবীদেরকে বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আছে যে কাবকে হত্যা কারতে পারবে? তখন মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামা তাকে হত্যার জন্য প্রস্ত্তত হয়ে যান এবং তাকে হত্যা করতে গিয়ে কৌশল অবলম্বনের জন্য প্রতারণা করার সুযোগ চাইলে তাকে সে সুযোগও দেয়া হয়। ফলে তিনি কা‘বকে হত্যা করেন (ছহীহ বুখারী হা/৪০৩৭; ছহীহ মুসলিম হা/১৮০১)। একইভাবে আরেকজন ইহুদী নেতা আবু রাফিঈ‘ নবী করীম (ছাঃ)-কে বিভিন্নভাবে কষ্ট দিত। তাকে হত্যা করার জন্য আব্দুল্লাহ বিন আতীক-এর নেতৃত্বে কয়েকজন লোক প্রেরণ করেন। আব্দুল্লাহ বিন আতীক রাতের আঁধার তাকে হত্যা করে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে তার নিহত হওয়ার কাহিনী বর্ণনা করেন (ছহীহ বুখারী হা/৪০৩৯)। প্রিয় পাঠক! এ হাদীছেও ফুটে উঠেছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে কষ্টদানকারী বা তার বিরুদ্ধে কটূক্তিকারীর শাস্তি হল মৃত্যুদন্ড। প্রয়োজনে তাকে গুপ্ত হত্যা করাও যাবে। তাবে এ বিধান কার্যকার করতে হবে রাষ্ট্রের পক্ষ হতে। রাষ্ট্রীয় ফরমান অনুযায়ী এক বা একাধিক ব্যক্তি মিলে এরূপ ব্যক্তিকে দিবা-নিশির যে কোন সময় যেভাবে সুবিধা তার হত্যা নিশ্চিত করবে।
আবু মুসা (রাঃ) বলেন, যখন মা‘আয তার কাছে উপস্থিত হন, তখন তিনি তাকে বসার জন্য অনুরোধ করেন এবং তার জন্য একটি বালিশ রেখে দেন। এ সময় মা‘আয (রাঃ) তাঁর নিকট বন্ধনযুক্ত অবস্থায় এক ব্যক্তিকে দেখতে পান। তিনি জিজ্ঞাসা করেন, এ ব্যক্তি কে? তখন আবু মুসা (রাঃ) বলেন, এই ব্যক্তি আগে ইহুদী ছিল, পরে ইসলাম কবুল করে, এর পার সে ঐ অভিশপ্ত (ইহুদী) ধর্মে প্রত্যাবর্তন করেছে। তখন মা‘আয (রাঃ) বলেন, আমি ততক্ষণ বসব না, যতক্ষণ না এই ব্যক্তিকে আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ মত হত্যা করা হয়। তখন আবু মুসা (রাঃ) বলেন, হ্যাঁ, এরূপই হবে। আপনি বসুন। তখন মা‘আয (রাঃ) তিন বার এরূপ বললেন, আমি ততক্ষণ বসব না, যতক্ষণ না এই ব্যক্তিকে আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ মত হত্যা করা হয়। এর পর আবু মুসা (রাঃ) হত্যার নির্দেশ দেন এবং তা কার্যকর করা হয়। পরে তারা রাত্রি জাগরণ সম্পর্কে আলোচনা শুরু করেন। তখন তাঁদের একজন, সম্ভবত : মু‘আয ইবনে জাবাল (রাঃ) বলেন, আমি রাতে ঘুমাই ও উঠে ছালাতও আদায় করি; অথবা আমি রাতে উঠে ছালাত আদায় করি এবং ঘুমাইও। আর আমি দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করার জন্য যেরূপ ছওয়াবের আশা করি, ঐরূপ ছওয়াব আমি ঘুমিয়ে থাকাবস্থায়ও আশা করি (আবুদাউদ হা/৪৩৫৪, সনদ ছহীহ)।
সম্মানিত পাঠক! অত্র হাদীছেও বুঝা যাচ্ছে যে, ধর্মত্যাগী তথা মুরতাদদের শাস্তি হল মৃত্যুদন্ড। যা রাষ্ট্রীয়ভাবে কার্যকর করা হবে। যদি রাষ্ট্রের সরকার তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে বিলম্ব করে তাহলে মুসলিম জনগণ ন্যায়সঙ্গতভাবে সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করতে পারে। যেমনটি মু‘আয (রাঃ) রাষ্ট্রের দায়িত্বে নিয়েজিত আবু মুসা (রাঃ)-কে তড়িৎ জনৈক মুরতাদ-এর হত্যার বিধান কার্যকর ব্যাপারে চাপ সৃষ্টি করেছিলেন।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে কটূক্তিকারীদের ব্যাপারে ইসলামের বিধান সম্পর্কে ‘ধর্ম সমাজ ও সাহিত্য বিষয়ক গবেষণা পত্রিকা মাসিক আত-তাহরীক’-এর ফৎওয়া নিম্নরূপ :
সে ধর্মত্যাগী কাফের হিসাবে গণ্য হবে (তাওবাহ ৬৫-৬৬)। ছাহাবীগণসহ সর্বযুগের ওলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, ঐ ব্যক্তি কাফের, মুরতাদ এবং তাকে হত্যা করা ওয়াজিব (ইবনু তাইমিয়াহ, আছ-ছারেমুল মাসলূল ২/১৩-১৬)। তবে তা প্রমাণ সাপেক্ষে আদালতের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব সরকারের (কারতুবী)। এ দায়িত্ব পালন না করলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তির সম্মুখিন হতে হবে। ঐ ব্যক্তি তওবা করলে তার তওবা কবুল হবে। কিন্তু মৃত্যুদন্ড বহাল থাকবে। এটাই হল বিদ্বানগণের সর্বাগ্রগণ্য মত (উছায়মীন, লিকাউল বাবিল মাফতূহ ৬/৫৩)। রাসূল (ছাঃ)-কে গালিদাতা জনৈক ইহুদীকে জনৈক মুসলিম শ্বাসরোধ করে হত্যা করলে রাসূল (ছাঃ) তার রক্তমূল্য বাতিল কর দেন (আবূ দাউদ হা/৪৩৬১, ৪৩৬৩, নাসাঈ হা/৪০৭৬); বিস্তারিত দ্রঃ মাসিক আত-তাহরীক, এপ্রিল ২০১৩, প্রশ্ন নং ৩১/২৭১, পৃঃ ৫৪।
সমাপনী : সুধী পাঠক! এ বিশ্ব চরাচরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মত আরেকজন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। মানুষ হিসাবে জীবন যাপন করতে যতগুলো গুণ অর্জন করা প্রয়োজন সবগুলোই তাঁর চরিত্রে সমাহার ঘটেছিল। তাঁর চরিত্রের নির্মলতা সর্বজনবিদিত। অথচ তাঁকে নিয়েও মানুষ কুৎসা রটনা করলে তখন লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে যায়। আমরা লক্ষ্য করেছি অতীতের জাহেলী যুগের বর্বর অসভ্য মানুষগুলো তাঁকে বিভিন্নভাবে অপবাদ দিয়েছে। তথাপিও তাদের অপবাদের মধ্যে শালীনতাবোধ বিবর্জিত হয়নি। আর বর্তমান যুগের কথিত মুসলিম নামধারী নাস্তিকরা যে ভাব ও ভাষায় অপবাদ দিচ্ছে, তাতে শালীনতা তো দূরে থাক, অতি পাশবিক পান্ডবের নৃশংসতাকেও হার মানাবে। তাঁর একান্ত ব্যক্তি জীবন সম্পর্কে কুৎসিত মন্তব্য করতেও এদের বিবেকে বাধে না ও অন্তর প্রকম্পিত হয় না। এ বিষয়ে তারা জাহেলী যুগের চেয়ে বহু ধাপ এগিয়ে। আবার এরাই হল সভ্যতার ধারক ও বাহক! সুশীল সমাজের প্রগতিশীল একজন বিবেকবান মানুষ (?) তনুমনে ভাবলে সে যুগ আর এযুগের মানুষের মাঝে কি কোন পার্থক্য পাবে? এটাই এখন ভাবনার বিষয়। এভাবে পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে অদ্যাবধি দুশ্চরিত্রের কিছু ব্যক্তি সৎ মানুষদেরকে নানাভাবে কষ্ট দিয়েছে। আর সবলরা দুর্বলদের উপর চালিয়েছে বহুবিধ নির্যাতন ও অত্যাচার। কিন্তু আজ নির্যাতনকারী ঐসব নোংরা চরিত্রের মানুষগুলো সর্বমহলে ধিকৃত, নিন্দিত। আর মুখবুঁজে নিরবে যাঁরা নির্যাতন সহ্য করে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানিয়েছিলেন তারাই স্মরণীয়, বরণীয় ও নন্দিত। তাঁদের নামে মানুষ শ্রদ্ধাভরে মনখুলে কল্যাণ কামনায় আল্লাহর নিকট দো‘আ করেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে গালি বা ইসলামের অবমাননা করে কেউ সফলতা পাবে না। ইহ-পর জগতে তাকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে। আল্লাহ আমাদেকে রক্ষা করুন। আর ঐ নাস্তিকদের হেদায়াত করুন নতুবা ধ্বংস করে দিন। আমীন!
লেখক : কেন্দ্রীয় পরিচালক, সোনামণি ও শিক্ষক, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী।