রাত্রি জাগরণ
এ. এইচ. এম. রায়হানুল ইসলাম
১.
রানা প্লাজার উচ্চতা ছিলো নয় তলা। এখন বড় জোর তিন তলা। ছাদগুলো আলিঙ্গন করেছে একে অপরকে। মাঝে কোনো ফাঁকা জায়গা নেই, আছে কেবল মেশিন, কাপড়, জঞ্জাল আর মানুষ। মরা মানুষ, জ্যান্ত মানুষ। হঠাৎ হল্লা, সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছে একটি দেহ। ঘুটঘুটে অন্ধকারে টর্চের আলো জ্বেলে এদিক ওদিক ঘুরছি। যদি কিছু করা যায়। ‘জক’ লাগবে─চিৎকার শুনে হাত বাড়িয়ে দিলাম। ছাদের উপরে আরেকজনের কাছে পৌঁছে দিলাম ‘জক’টা। দুটো স্টিলের টিফিন বাটিতে ভাত পড়ে আছে একখানে। একটু পাশে একটা দেয়ালের ফাঁকা দিয়ে একটা লাশ দেখা যাচ্ছে। তার গলার উপরে একটা পাইপ। পাশে আরেকটা মেয়ে বসা। সেও মৃত। কংক্রিট কাটছে দমকলের মানুষরা। এলাকার ছেলেরা কাঁধ পেতে বের করছে লাশ। কানে এল কথা গুলো, ‘হাতটা কেটে ফেল তাহলে বের করা যাবে।’ একজন চিৎকার করে জানালো─ভাই ওখান থেকে সরে যান, নীচে ইট পড়ছে। বুঝলাম কোন কাজে আসছি না। বেরিয়ে এলাম।
একটা হাসপাতালে ঢুকলাম। কিছু আহত সেখানে। একজনকে জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছেন? মুখের ভেতরে কেটে গেছে। কথা বলতে পারল না। গোঁফের রেখা ওঠেনি এমন একটা ছেলে এল জরুরী বিভাগে। কতই বা বয়স? ১৪, ১৫? হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে দেখি মধ্যবয়সী একটা লোক হাটুতে মুখ বুঁজে কাঁদছে। পাশের মানুষটি সান্তনা দিচ্ছে। কাঁদিস না, খুঁজে পাবি।
অধরচন্দ্র স্কুল। বনেদি আমলের বিশাল লম্বা বারান্দা। সারি সারি লাশ। মানুষজন লাইন ধরেছে। হেটে যাচ্ছে বারান্দা ধরে। প্রিয়জনের মুখটা চিনতে পারলে ডুকরে কেঁদে উঠছে। নাহ, এত লম্বা বারান্দাতেও ধরেনি সব লাশ। মাঠেও লাশের মিছিল। ধূলায় ধুসরিত লাশ। রক্তমাখা, চেপ্টে যাওয়া মুখগুলো ঢেকে দেওয়া কাপড়ে।
২.
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সত্য কী? মৃত্যু। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উপেক্ষিত সত্যও তাই। সাভারের ঘটনা দেখে আমাদের অনেকের অনেক কিছু মনে হয়েছে। মনে হয়নি কেবল আমার নিজের মৃত্যুর কথা। আমরা লোক দেখানো শোক প্রকাশ করি। পতাকা নামিয়ে রাখি। ভবন মালিকের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করি। চোখ-মুখ শক্ত করে এক মিনিট চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকি। এরপরে কালো ব্যাজ সহই লঘু ঠাট্টায় মেতে উঠি। পত্রিকায় পড়ি অকাল মৃত্যু। মৃত্যু অকাল হয় না। আগের দিন বিশ জন আহত হয়েছিল ভবন ছেড়ে পালাতে গিয়ে, সে দালানেই মানুষগুলোকে ঢোকানো হয়েছে। অনেকের মৃত্যু লেখা ছিল। যাদের লেখা ছিল না, তারা বেঁচে গেছে। আল্লাহর অভিধানে অকাল বলে কিছু নেই, সব কিছু মিনিট-সেকেন্ড অবধি হিসেব করা আছে। অসময়ে মৃত্যু কথাটা আমাদের আবিষ্কার। আমরা যা পছন্দ করিনা তাকে ঠেলে দেই দূরে। আমি ভুলে থাকলেই মৃত্যু আমাকে ভুলে যাবে এমনটি নয়। আল্লাহর নির্ধারিত সময়ে সে আসবে। যেখানে আমার মরার কথা, সেখানে আমি নিজেই যাব। কথাগুলো আল্লাহ আমাদের আগেই জানিয়ে দিয়েছেন। আমরা বিশ্বাস করি না। যখন আল্লাহ আমাদের উদাহরণসহ শিক্ষা দেন আমরা জিহবা দিয়ে তু তু তু শব্দ করি। আসলে যে এ ঘটনাগুলো আমাদের জন্য শিক্ষা সেটা বুঝতেও পারি না।
৩.
সাভারে মৃতের সংখ্যা প্রায় বার’শ ছুঁয়েছে। আহত হাজারেরও বেশি। এ ধরণের যেসব বিপর্যয় প্রতিনিয়ত পৃথিবীকে স্পর্শ করছে তা মানুষের হাতের কামাই। মানুষের লোভের ফলাফল। জানা লোভ, অজানা লোভ। বিশ্বায়নের এ যুগে শুধু হীরে বা ওষুধ নয়, কাপড়েও মিশে আছে রক্ত।
একটি রপ্তানী সমিতির দাবী অনুসারে বাংলাদেশে অন্তত ৯০টি প্রতিষ্ঠান আছে যারা বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড নাইকির জন্য কাপড় তৈরি করে। নাইকির তৈরি বার্সেলোনার একটি রেপ্লিকার জার্সির দাম ৮৫ ডলার। এটি তৈরি করতে আসলে কত খরচ হয়? নাইকির এক কর্তা বাবু যাকে বনানীতে বিকেলে সাইকেল চালাতে দেখা যায়, তিনি হিসেব করে দেখলেন জার্সিটির দাম পড়ে ২০০ টাকা। ন্যুনতম মজুরি ৩,০০০ টাকা ধরেই। এখন আপনি-আমি মোটা বুদ্ধিতে ভাবি ২০০ টাকা যদি মোট খরচ হয় তাহলে আড়াই শতাংশ লাভে গার্মেন্টস মালিক পাবে ২০৫ টাকা। কিন্তু লালমুখো সাহেব আমেরিকার আরাম ফেলে ভূ-নরক বাংলাদেশে তো আর সবরি কলা চাষ করতে আসেনি। সে বলবে ১৮০ টাকা। গার্মেন্টস মালিক যেই লাফিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে বলবে হোয়াট? তখনই সাহেবের হাত চলে যাবে গার্মেন্টসটির কিছু ফাইলের দিকে। শ্রমিকদের কাজের অবস্থা অবর্ণনীয়। আগুন নেভানোর ব্যবস্থা নেই। শিশু শ্রমিক আছে। সাহেব আরো লাল হয়ে বলবে, নাহ তোমাকে কাজটা দেওয়া যাবে না। আমাদের ব্র্যান্ডের সুনাম ক্ষতিগ্রস্থ হবে। গার্মেন্টস মালিক বলবে আচ্ছা অন্তত ১৯০ টাকা দিও। টেবিলের উপরে পুমা ব্র্যান্ডের একজোড়া জুতা দেখা যাবে। চুক্তি সই করে বের হয়ে যাবার সময় মালিক ভাবতে থাকবে, শালা খবিস। রিয়েল এস্টেট এজেন্ট অটোয়াতে একটা ওয়াটারফ্রন্ট বাড়ি দেখিয়েছিল, এবারের টাকা দিয়ে সেটা কিনে ফেলার কথা ছিলো। যাইহোক, ন্যুনতম বেতন স্কেল নিয়ে আরো ছ’মাস গড়িমসি করতে হবে। পুরনো কিছু শ্রমিককে ছাটাই করতে হবে। ওভারটাইমের টাকা কমাতে হবে। মেরে হোক, পিটিয়ে হোক ঘন্টায় উৎপাদন ১০ থেকে বাড়িয়ে ১২ করতে হবে। একটা জার্সির দাম যেন ১৭৫ টাকা না পেরোয়। বাড়ি কেনা ঠেকায় কোন শালা!
ব্র্যান্ড বাদ দেই, যেই ওয়ালমার্টে আমেরিকার সব শ্রেণীর লোকেরা বাজার করে সেই ওয়ালমার্ট কী করে? মেইড ইন বাংলাদেশ ফ্লিস হুডির দাম ৮.৪৭ ডলার। পলওয়েলে একই জিনিস পাওয়া যায় দেড়শ টাকায়। একদম একই জিনিস। ‘আমাদের নিজস্ব কোন কারখানা নেই, আমরা অন্যদের দিয়ে কাজ করাই। তবে আমাদের মূল ব্যবসা উৎপাদন খরচ কমানো’-বলেছিলেন ওয়ালমার্টের এক সাপ্লাই চেইন ম্যানেজার। দাম কমালে মানুষ আসবেই আসবে। ঔচিত্যবোধ দিয়ে পেট চলে না, মাথা চলে পণ্যের দামের হিসেবে। ওয়ালমার্টের আবার অন্য বুদ্ধিও আছে। এরা পণ্যের দাম দেবে ৯০ দিন পরে, এই মর্মে আগেই চুক্তি করে নেয়। এর মধ্যে তারা কাপড় বিক্রি করে, ব্যাংকে টাকা রেখে সুদ খায় নয়ত আবার অন্য কোন জায়গায় বিনিয়োগ করে। এই বাটপারিকালীন সময়ে গার্মেন্টসের শ্রমিকদের বেতন বকেয়া থেকে যায়। এ পৃথিবীতে বড়লোকদের চেয়ে ছোটলোক বোধকরি আর কেউ নেই। নাইকির মত ব্র্যান্ডগুলোর ব্যবসায় নীতিতে কর্পোরেট সোশাল রেসপনসিবিলিটির মতো গালভরা সব ব্যাপার আছে। সেখানে লেখাও আছে- While we neither owncontract factories nor employ their workers, we can influence their businesspractices–including wages– through our own sourcing and assessment processes.
কথা সত্য। প্রভাব বিস্তার সাহেবরা করে বটে! মাল্টি-ন্যাশনালরা ফিরিস্তি দেবে কত শতাংশ মজুরি বেড়েছে। তবে তারা বলবে না সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য যে মজুরি দরকার সেটা শ্রমিকেরা পায় কিনা। কেউ জিজ্ঞেস করে উত্তর পাবে না যে ইউরোপ আর উত্তর আমেরিকাতে ক’টা ব্র্যান্ডের ক’টা কাপড়, জুতা তৈরি হয়? কেন হয় না? ঠিক কোন মন্ত্রে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে শ্রমবাজার এত সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে?
এভাবেই প্রতিটি শ্রমিকদের দেহ থেকে একটি নল বেরিয়ে গেছে বড় আরেকটা নলে। সে নল থেকে রক্ত চুষে খাওয়ার সময় পুঁজিবাদি দেশের সাহেবরা কুলি করে কিছু রক্ত ফেলে দেয়। সিংহভাগ গার্মেন্টস মালিকদের খাবার সেই উচ্ছিষ্ট রক্ত। তবে উচ্ছিষ্ট বলে সেই রক্তের পুষ্টিগুণ কম নয়। আমেরিকা বা কানাডার সিটিজেন নয় এমন বাংলাদেশী গার্মেন্টস মালিকের সংখ্যা হাতেগোণা। ঢাকার তিন-চার-পাঁচ তারা হোটেলে মদের জোয়ার আর বাঈজিদের আড্ডা বসে। বিদেশি বায়ারদের সুধা-সঞ্জীবনী সমেত আপ্যায়ন করে বিজিএমইএ। ডেইলি স্টারে খবর আসে বাংলাদেশ এখন নামী-দামী সব ব্র্যান্ডের কাপড় বানায়। টমিহিল ফিগার, ডিজেল, রালফ লরেন, কেলভিন ক্লেইন, বেনেটন, ম্যাংগো...। হু হু, বাবা আমরা আর ফকিন্নিদের দেশ নই বুঝেছ? দেশ থেকে ফকিন্নির পুতদের দূর করার মহান ব্রতে যদি দুই একটা ভবন ধসে পড়ে কিইবা যায় আসে? শ্রমিকদের জীবন তো তুচ্ছ জিনিস, গার্মেন্টস মালিকরা যে দেশের সরকার, আইনকে দুই পয়সা দাম দেয় না, সেটা হাতিরঝিলের মাঝে বিজিএমইএ ভবন দেখে কি বোঝা যায় না?
রানা প্লাজা বাংলাদেশের একমাত্র ডোবা ভরাট করে বানানো দালান নয়। ক’টা দালানে পাইলিং হচ্ছে ঠিক মতো? জায়গা বাঁচাতে কলামের বেড় কমছে। সিমেন্ট জমাট বাঁধতে দেওয়ার মতো সময় নেই, কিউরিং করা তো দূরে থাক। এ সরকারের আমলেই কাজ শেষ করতে হবে। এসব ভবনে মুরগি পালা হলে এক কথা ছিল, এখানে গার্মেন্টসের ভারি মেশিনপত্র চলবে। মেশিনগুলোর নিজস্ব একটা ভাইব্রেশন আছে। ইঞ্জিনিয়াররা এসব হিসেব করার কথা মনেই রাখে না পকেটে টাকা এলে। কর্তৃপক্ষকে তাদের বখরা দিলে খুশি, কী রাজউক, কী পৌরসভা। সবাই চোখ বন্ধ করে সাধুবাবা হয়ে যাবে, পাঁচতলার জায়গা দশতলা উঠবে নিশ্চিন্তে।
এর সাথে আছে রাষ্ট্র। দুর্জনের তোষণ আর শিষ্টের দমন যার মূলনীতি। বিল্ডিং মালিক রানা সাহেবকে এলাকার এমপি মুরাদ জং নিজে এসে উদ্ধার করে নিয়ে গেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মখা আলমগীর তত্ত্ব ঝেড়েছেন গেট, দেয়াল আর স্তম্ভ ধরে ঝাঁকি দেওয়া দালান ধসের সম্ভাব্য কারণ। রানা সাহেবের এতগুলো হাইরাইজের টাকার ভাগ কোন পর্যন্ত যায় সেটা বুঝতে কি কারো বাকি আছে?
৪.
এ পর্যন্ত যে ছবি আমরা দেখলাম তা খুবই ধূসর, বিষণ্ণ। এই দুনিয়ায় আমরা টিকব কীভাবে? পৃথিবীতে লোভকে কেন্দ্র করে যত সমস্যা আছে তার সমাধান একটাই, আল্লাহকে রিযিকের মালিক বলে বিশ্বাস করা। কুরআন-সুন্নাহতে আল্লাহ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন রিযিক অর্থাৎ মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যা কিছু লাগে, টাকা-পয়সা, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, মর্যাদা, দৈহিক শক্তি, মানসিক বুদ্ধি সবকিছু আল্লাহই বন্টন করেন। কাকে কতটুকু দেবেন সেটা পূর্বনির্ধারিত। আল্লাহই রিযিক বাড়ান আবার কমান। এই বন্টন স্বেচ্ছাচারিতা নয়। রিযিক বাড়া-কমানোর বর্ণনার পরে আল্লাহ আমাদের জানিয়ে দেন তিনি তার বান্দাদের খোজ-খবর রাখেন, তাদের তিনি দেখছেন। আল্লাহ জানেন কার চাহিদা কতটুকু। তিনি সেভাবেই রিযিক বাড়ান বা কমান।
আল্লাহ আর-রায্যাক-এ কথাটার মানে আসলে কী? যে শ্রমিক বোনটি সকালে বেগুন ভর্তা দিয়ে ভাত খেয়েছিল তার জন্য ঐ সকালে ঐ খাবারটিই লেখা ছিল। রানা সাহেব ফাটলকে পলেস্তারার খসে পড়া বলে চালিয়ে দুপুরে যে কাচ্চি বিরিয়ানি খেয়েছিল, তার কপালে সেটিই ছিল। তার মানে আমাদের সবার কপালে লেখা আছে আমরা কবে কখন কী খাব। আল্লাহ আমাদের পরীক্ষা নিচ্ছেন এভাবে যে আমাদের সামনে সেই একই খাবারটি খাওয়ার দুটো পন্থা আসবে, হালাল আর হারাম। আমরা যদি হালালটি নেই তাহলে আমরা মুক্তি পেয়ে গেলাম পরকালে। এই দুনিয়াতে আমাদের যা পাওয়ার কথা ছিলো তা কিন্তু একরত্তিও বদলাচ্ছে না। কিন্তু কেউ যদি পরকালকে তোয়াক্কা না করে, আল্লাহর সামনে হিসাব দেওয়াকে গ্রাহ্য না করে হারাম পথটি বেছে নেয়, তবে আল্লাহ তাকে তার ইহকালের বরাদ্দটুকু দেবেন বটে; কিন্তু পরকালে লাঞ্চিত-অপমানিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।
রানা সাহেব যদি রিযিকের ব্যাপারটা বুঝত, তাহলে ডোবা দখল করত না। ফাটলকে পলেস্তারার খসে পড়া বলত না। তার বরাদ্দ কাচ্চি সে ঠিকই পেত। কিন্তু আজ রানা সাহেব জাতীয় অপরাধী। সারাদেশের মানুষ তার মুখে থু থু ছিটাবে। তার সন্তানেরা বাবার পরিচয় দিতে লজ্জা পাবে আজীবন। শ্রমিক বোনটি যদি বুঝতেন, আল্লাহ উত্তম রিযিকদাতা, তিনি যা লিখে রেখেছেন তাই আসবে তাহলে কি তিনি কারখানায় শরীরে রক্ত বেচতেন? যে সংসারের আয় আল্লাহ বরাদ্দ রেখেছেন ৬০০০ টাকা সেখানে স্বামী একাকি বাইরে কাজ করুক আর স্বামী-স্ত্রী দুইজন মিলে কামাই করুক; বরাদ্দ ঐ ৬০০০ টাকাই!
যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে না তারা বলে বেড়ায় মোল্লারা মেয়েদের ঘরে বন্দী করতে চায়। আচ্ছা ঘর কি কয়েদখানা যে তাতে মানুষকে বন্দী করা চলে? নাকি কারাগার ঐ গার্মেন্টসটা যেখানে ঢুকতে বেরোতে হলে দশ জায়গায় অনুমতি নিতে হয়? নিজের ঘরে মেয়েরা বন্দী আর লম্পট মালিকের অফিস ঘরে মেয়েরা মুক্ত! দেহ বেয়ে শিশুদের খেলা বন্দীত্বের নিদর্শন, সিকিউরিটির হাত সেখানে খেলা না করা অবধি মেয়েদের মুক্তি নেই। এসব কথা আবার শিক্ষিত মানুষরা খায়ও বটে!
এ দেশে নারী শ্রমিকদের সহজলভ্যতার সুযোগ নিয়েই গার্মেন্টস নামের শোষণ শিল্পটা দাঁড়িয়ে গেছে। হাত বাড়ালেই কর্মী পাওয়া না গেলে মালিকরা মুখের উপরে বলতে পারত না, ১৬৬২ টাকা বেতনে কাজ করলে করো নাহলে যাও। আল্লাহ মেয়েদের টাকা কামানোর যন্ত্র হিসেবে সৃষ্টি করেননি। মা হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, স্ত্রী হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। বাবা, স্বামী, ভাই, সন্তান বাধ্য কাজ করে ঘরের মেয়েদের খাওয়াবে। বাইরের কাজ তো দূরের কথা ইমাম নববীর মতে, রান্না-বান্না, কাপড় কাঁচা, ধোয়া-মোছা─ইত্যাদি কাজও নারীদের জন্য অবশ্য কর্তব্য নয়। নারীমুক্তির নামে মেয়েদের সকাল ন’টা থেকে রাত ন’টা কুকুরের মতো খাটানো থেকে পুঁজিবাদের কালো চেহারাটা স্পষ্ট হয়। মেয়েদের মুক্তির নামে ঘরের বাইরে আনো। শ্রমবাজার সস্তা করো। উৎপাদন খরচ কমাও। আর পুরুষদের বসে বসে মদ-গাজা খেয়ে পড়ে থাকার সুযোগ দাও। আমাদের এ ব্যাপারগুলো বুঝতে হবে। শয়তানদের হাতে নিজেদের শোষণের জন্য তুলে দেব না আমরা।
মেয়েরা পড়াশোনা শিখবে ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থে; শিক্ষার উদ্দেশ্য টাকা কামানো নয়। অর্থ ছাড়া কাজ অর্থহীন, এই বিশ্বাস মন থেকে সরাতে হবে। মেয়েরা পরিবারের জন্য কাজ করবে। এতে ভালোবাসা থাকবে। সমাজের জন্য কাজ করবে। ডাক্তার, শিক্ষিকা, দর্জি সবই হবে। এতে অর্থোপার্জন হতে পারে, কিন্তু সেটা মূখ্য নয়। যে বোঝা আল্লাহ মেয়েদের উপরে চাপিয়ে দেননি, সেটা জোর করে কাঁধে তুলে নেওয়াটা বোকামি।
আল্লাহ যে রিযিক বরাদ্দ করেছেন, তা আসবেই এটা বুঝলে গার্মেন্টস মালিকরা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দিতেন, রাসুলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কথা মেনে ঘাম শুকানোর আগেই দিতেন। বায়ারদের সামনে মিন মিন না করে স্পষ্ট বলতেন, দরে না পোষালে তোমার কাজ আমার না করলেও চলবে। দালান ধসে যারা মরেছে তারা যে মাটির কবরে গেছে, শিল্পপতিরা হার্ট এটাক করে ঐ একই কবরেই তো যাবে।
আমরা যেন আল্লাহকে একমাত্র রিযিকদাতা বলে চিনতে শিখি, মানতে শিখি, দুনিয়ার মোহ থেকে বের হতে শিখি। আল্লাহ যেন আমাদের লোভ থেকে, জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন। আমীন!
শরীফ আবু হায়াত অপু
মুহাম্মাদপুর, ঢাকা