সাম্প্রতিক মুসলিম বিশ্ব

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 811 বার পঠিত

নাস্তিকদের বিরুদ্ধে হেফাযতে ইসলামের মাসব্যাপী আন্দোলনকে ফিল্মি স্টাইলে রক্তাক্তভাবে দমন করল বাংলাদেশ সরকার

গত ৫ই মে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে গড়ে ওঠা সবচেয়ে শক্তিশালী ইসলামী আন্দোলনটির আপাতত পরিসমাপ্তি ঘটল এক রক্তাক্ত ট্রাজেডীর মাধ্যমে। ব্লগে ও ইন্টারনেটে রাসূল (ছাঃ)-এর অবমাননা এবং শাহবাগে ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদগার ও নাস্তিক্যবাদের প্রচারের বিরুদ্ধে সারাদেশের ইসলামপ্রিয় জনতার যে গণজোয়ার উঠেছিল, তা যে এমন পরিণতি লাভ করবে তা ৫ই মে’র আগ পর্যন্ত কল্পনা করা যায়নি। একমাস পূর্বে হেফাজতে ইসলাম ঘোষিত কর্মসূচী মোতাবেক ৫ই মে ছিল ঢাকা অবরোধ কর্মসূচী। সারাদেশের ইসলামপ্রিয় জনতার জেগে ওঠার এই অবিস্মরণীয় মুহূর্তকে অধীর আগ্রহে পর্যবেক্ষণ করছিল সর্বস্তরের মানুষ। একটা লক্ষ্যণীয় পরিবর্তনের আশায় বুক বেঁধেছিল সবাই। কিন্তু শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচী শেষ হবার পর সেদিন দুপুরে হঠাৎ করে পল্টন এলাকায় হেফাযত কর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে। অপরদিকে অজ্ঞাত দুষ্কৃতিকারীরা বিভিন্ন স্থানে আগুন লাগিয়ে দিয়ে পুর্ব পরিকল্পিতভাবে নাশকতা সৃষ্টি করে এবং এর জন্য সমস্ত মিডিয়ায় হেফাজত কর্মীদের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা চালানো হয়। দিনব্যাপী এসব অঘটনের পর রাতে হেফাযতকর্মীরা শাপলা চত্বরে অবস্থানের সিদ্ধান্ত নেয়। সবাই অপেক্ষা করতে থাকে পরদিন কি ঘটে তা নিয়ে। কিন্তু সেদিনই দিবাগত রাত আড়াইটা নাগাদ পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির প্রায় ৮ হাযার সদস্য অকস্মাৎভাবে শাহবাগ চত্বরে বিশ্রামে থাকা লাখো জনতার উপর বৃষ্টির মত গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাস সেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে শাহবাগ চত্বরে সৃষ্টি হয় এক নৃশংস ও নারকীয় দৃশ্য। নিহত ও আহত হয় হাযারো মানুষ। সরকারের এই হিংস্র তান্ডবে সারাদেশ হতবাক হয়ে পড়ে। এই রক্তাক্ত ট্রাজেডির মধ্য দিয়ে হেফাজত ইসলামের সম্ভাবনাময় মাসব্যাপী আন্দোলনের দৃশ্যত পরিসমাপ্তি ঘটল।      

জর্দানে মহিলা হিফয প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ ১ম

জর্দানের রাজধানী আম্মানে বিশ্বের নির্বাচিত নিজ নিজ দেশে প্রথম স্থান অধিকারকারীনী বালিকা হাফেযাদের মধ্যে ৪৩টি দেশের হাফেযাদের পরাজিত করে উপস্থিত দর্শক ও বিচারকদের মন জয় করে প্রথম স্থান অধিকার করেছে বাংলাদেশের খুদে বালিকা হাফেযা ফারিহা তাসনীম। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে সঊদী আরব এবং তৃতীয় স্থান অধিকার করে লিবিয়া। প্রথম স্থান অধিকারীনী ফারিহা তাসনীম মাত্র ছয় বছর বয়সেই নেছার আহমাদ আন-নাছিরী কর্তৃক পরিচালিত মারকাযুত তাহফীজ ইন্টারন্যাশনালে কুরআন হিফয করতে সক্ষম হয়।

এ প্রতিযোগিতায় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জর্দানের ধর্মমন্ত্রী ড. মুহাম্মাদ নূহ এবং কূটনৈতিক, রাষ্ট্রদূত, সরকারী কর্মকর্তা ও দেশ-বিদেশী রাষ্ট্রীয় মেহমানগণ। ধর্মমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ নূহ বিশ্বসেরা হাফেযা ফারিহা তাসনিমকে আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেট, ক্রেস্ট ও নগদ অর্থ প্রদান করেন। তিনি বিশ্বের সেরা হাফেযা ফারীহা তাসনীমের প্রশংসা করে বলেন, সৌদি আরবে আন্তর্জাতিক হিফযুল কুরআন প্রতিযোগিতায় ৭৩টি দেশের মধ্যে একাধিক গ্রুপে বাংলাদেশ প্রথম স্থান অধিকার করার পর এবার জর্দানেও বাংলাদেশী মেয়ে হাফেযা প্রথম স্থান অধিকার করায় আমি মুগ্ধ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের হাফেয ছেলেদের সঙ্গে হাফেযা মেয়েরাও বিশ্ব কুরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকারের গৌরব অর্জন করছে। আমি বাংলাদেশের সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করছি।

লন্ডনের উলউইচে সন্ত্রাসী হামলা

গত ২২ মে বুধবার দুপুরে দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনে প্রকাশ্যে রাস্তায় দুই সন্ত্রাসী ছুরিকাঘাতে লি রাগবি নামের ২০ বছর বয়সী এক বৃটিশ সেনাকে হত্যা করেছে। নিহত ব্যক্তি উলউইচ রয়েল আর্টিলারি ব্যারাকের সেনা সদস্য ছিলেন। ঘটনাস্থলের ফুটেজে দেখা যায়, এক ব্যক্তি রক্তমাখা মাংস কাটার ছুরি উঁচিয়ে ধরে বলছে, ‘তারা আমাদের বিরুদ্ধে হামলা করলে আমাদেরও পাল্টা হামলা করতে হবে। চোখের বদলে চোখ আর দাঁতের বদলে দাঁত ফেলতে হবে।’ ওই লোকটি আরও বলছিল, ‘মহিলাদের আজ এমন দৃশ্য দেখতে হচ্ছে বলে আমি দুঃখিত। কিন্তু আমাদের দেশের মহিলাদেরও এমন দৃশ্য দেখতে হয়। তোমরা কখনও নিরাপদ অনুভব করবে না। তোমাদের সরকারকে উৎখাত করো। তারা তোমাদের কথা ভাবে না।’ বিবিসি জানায়, হামলাকারীরা ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি উচ্চারণ করেছিল। প্রত্যক্ষদর্শী জেমস জানান, এ হামলার পর দুই লোক প্রকাশ্যে ছুরি উঁচিয়ে আশপাশের লোকজনকে তাদের ছবি তোলার আহবান জানাচ্ছিল। পুলিশ জানিয়েছে হামলাকারী মাইকেল এডিবলোজা (২৮) ও তার সতীর্থ দু’জনই বৃটিশ নাইজেরিয়ান মুসলিম।

বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এ হামলার নিন্দা করে বলেন, ইসলাম এ ধরনের ঘটনা সমর্থন করে না। তিনি আরো বলেন, এ ঘটনা শুধু বৃটেনের উপরই আক্রমণ নয়, এটা ইসলাম ও মুসলিম কমিউনিটির জন্য বিদ্রূপের বিষয়। মুসলিম কাউন্সিল অব বৃটেন এক বিবৃতিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে অত্যন্ত নৃশংস বলে উল্লেখ করেছে। ইউরোপের সবচেয়ে বড় মসজিদ ইষ্ট লন্ডন মসজিদ ও লন্ডন মুসলিম সেন্টার এক বিবৃতিতে এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, জঘন্য এই অপরাধের কোন যুক্তি নেই। অপরাধী বা হত্যাকারীরা কোন সম্প্রদায় বা ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে না। এদিকে এ ঘটনার পর বর্ণবাদী ইডিএল (ইংলিশ ডিফেন্স লীগ) উলউইচ ও নিউহাম এলাকায় বিক্ষোভ করে। তারা কয়েকদিন ধরে মুসলিম অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে আক্রমণ করার হুমকি দেয়।
এরই প্রেক্ষিতে গত ৫ই জুন লন্ডনের আল-রহমা ইসলামিক সেন্টার অ্যান্ড মসজিদটি পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া হয়। উল্লেখ্য, ফেইথ মেটার্স-এর তথ্য মতে বৃটিশ সেনা নিহত হওয়ার পর বৃটেনে দুই সপ্তাহের মধ্যে ২২২টি মুসলিম বিদ্বেষী ঘটনা ও ১২টি মসজিদে হামলা চালানো হয়েছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করলেন নওয়াজ শরীফ

পাকিস্তানে ইতিহাস গড়লেন নওয়াজ শরীফ। পাকিস্তান মুসলিম লীগের (পিএমএল-এন) প্রধান নওয়াজ শরীফ তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন। পাকিস্তানের ১৮তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর নওয়াজ শরীফ বলেছেন, মানুষ যে আকাংক্ষা নিয়ে তার দলকে ভোট দিয়েছে সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করাই হবে তার মূল কাজ। নওয়াজ শরীফ জাতীয় পরিষদে ২৪৪ ভোট পেয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রার্থী মাখদুম আমীন ফাহিম ৪২ ভোট এবং পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রার্থী পেয়েছেন ৩১ ভোট। ১৯৮০ সালে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন নওয়াজ শরীফ। এরপর পাঞ্জাব প্রদেশের অর্থমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৯০ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান নওয়াজ। ১৯৯৩ সালে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। এরপর ১৯৯৭ সালে আবার প্রধানমন্ত্রী হন এবং ১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন নওয়াজ। এরপর সাত বছর স্বেচ্ছানির্বাসন শেষে ২০০৭ সালে দেশে ফেরেন তিনি। গত ১১ মে’র নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয় তার দল।

বায়ার্ন মিউনিখ ক্লাবের স্টেডিয়ামে নির্মিত হবে মসজিদ

জার্মানীর বিখ্যাত বায়ার্ন মিউনিখ ক্লাব একটি মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফরাসী জাতীয় ফুটবল টিম ও এ দলের বিখ্যাত মুসলিম তারকা ফুটবলার ফ্রাঙ্ক রিবেরীর প্রস্তাবে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বুন্দেস লিগার বায়ার্ন মিউনিখ টিমের সদস্য ফরাসী ফুটবল তারকা ২০০৬ সালে মুসলমান হন এবং তিনি ‘বেলাল ইউসুফ মুহাম্মাদ’ নাম বেছে নেন। বিয়ে করেছিলেন মরক্কোয় জম্ম নেয়া মুসলিম মেয়েকে। মুসলমান খেলোয়াড়দের ছালাত আদায়ের সুবিধার জন্য একটা ছোট রুমের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন রিবেরি। তার অনুরোধে সাড়া দিয়ে বায়ার্ন কর্তৃপক্ষ প্রার্থনার জন্য কক্ষ নয়, নিজস্ব স্টেডিয়াম এলিয়ান্স আরেনায় পরিপূর্ণ একটা মসজিদ তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে, যেখানে খেলোয়াড়দের পাশাপাশি সমর্থকরাও ছালাত আদায় করতে পারবেন। শুধু তা-ই নয়, একজন ইমামও নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে বায়ার্নের। ইসলামী বই সমৃদ্ধ একটা লাইব্রেরীও থাকবে পাশেই, থাকবে ধর্মীয় আলোচনার সুযোগও। এ মসজিদ নির্মাণের ৮৫% খরচ বায়ার্ন মিউনিখ কর্তৃপক্ষ বহন করবে এবং মুসলিম ফুটবলার ও দর্শকরা অবশিষ্ট অর্থ প্রদান করবেন। বলাবাহুল্য, এর পূর্বে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ‘নিউক্যাসল’ টিমও মুসলিম ফুটবলারদের জন্য প্রার্থনাঘর নির্মাণ করেছে। 



বিষয়সমূহ: বিবিধ
আরও