হিংসা
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 613 বার পঠিত
আল-কুরআনুল কারীম :
1- أَفَغَيْرَ اللَّهِ أَبْتَغِي حَكَمًا وَهُوَ الَّذِي أَنْزَلَ إِلَيْكُمُ الْكِتَابَ مُفَصَّلًا وَالَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَعْلَمُونَ أَنَّهُ مُنَزَّلٌ مِنْ رَبِّكَ بِالْحَقِّ فَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِينَ- وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ صِدْقًا وَعَدْلًا لَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِهِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ- وَإِنْ تُطِعْ أَكْثَرَ مَنْ فِي الْأَرْضِ يُضِلُّوكَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ إِنْ يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَإِنْ هُمْ إِلَّا يَخْرُصُونَ-
(১) ‘(তুমি বল) তবে কি আমি আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে ফায়ছালাদানকারী হিসাবে কামনা করব? অথচ তিনি তোমাদের প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন (আক্বীদা ও বিধানগত বিষয়ে) বিস্তারিত বর্ণনাসহ। আর যাদেরকে আমরা ইতিপূর্বে কিতাব (তওরাত-ইনজীল) দিয়েছিলাম, তারা ভালভাবেই জানে যে, এটি (অর্থাৎ কুরআন) তোমার প্রভুর পক্ষ হ’তে সত্যসহ নাযিল হয়েছে। অতএব তুমি অবশ্যই সন্দেহবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।তোমার প্রতিপালকের বাণী সত্য ও ন্যায় দ্বারা পূর্ণ। তাঁর বাণীর পরিবর্তনকারী কেউ নেই। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। অতএব যদি তুমি জনপদের অধিকাংশ লোকের কথা মেনে চল, তাহ’লে ওরা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। তারা তো কেবল ধারণার অনুসরণ করে এবং তারা তো কেবল অনুমান ভিত্তিক কথা বলে’ (আন‘আম ৬/১৪-১৬)।
2- يا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ لِلَّهِ شُهَداءَ بِالْقِسْطِ وَلا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلى أَلَّا تَعْدِلُوا اعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوى وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِما تَعْمَلُونَ -
(২) ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে সত্য সাক্ষ্য দানে অবিচল থাক এবং কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাদেরকে সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে। তোমরা ন্যায়বিচার কর, যা আল্লাহভীতির অধিকতর নিকটবর্তী। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের সকল কৃতকর্ম সম্পর্কে সম্যক অবগত’ (মায়েদাহ ৫/৮)।
3- إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَماناتِ إِلى أَهْلِها وَإِذا حَكَمْتُمْ بَيْنَ النَّاسِ أَنْ تَحْكُمُوا بِالْعَدْلِ إِنَّ اللَّهَ نِعِمَّا يَعِظُكُمْ بِهِ إِنَّ اللَّهَ كانَ سَمِيعاً بَصِيراً -
(৩) ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা আমানত সমূহকে তার যথার্থ হকদারগণের নিকট পৌঁছে দাও। আর যখন তোমরা লোকদের মধ্যে বিচার করবে, তখন ন্যায়বিচার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে সর্বোত্তম উপদেশ দান করছেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’ (নিসা ৪/৫৮)।
4 -وَإِنْ طائِفَتانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُما فَإِنْ بَغَتْ إِحْداهُما عَلَى الْأُخْرى فَقاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّى تَفِيءَ إِلى أَمْرِ اللَّهِ فَإِنْ فاءَتْ فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُما بِالْعَدْلِ وَأَقْسِطُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ-
(৪) ‘যদি মুমিনদের দুই দল পরস্পরে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহ’লে তোমরা তাদের মধ্যে সন্ধি করে দাও। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর সীমালংঘন করে, তাহ’লে তোমরা ঐ দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, যে দল সীমালংঘন করে। যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের (সন্ধির) দিকে ফিরে আসে। অতঃপর যদি তারা ফিরে আসে, তাহ’লে তোমরা উভয় দলের মধ্যে ন্যায়ানুগভাবে মীমাংসা করে দাও এবং ন্যায়বিচার কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়নিষ্ঠদের ভালবাসেন’ (হুজুরাত ৪৯/৯)।
5- إِنَّا أَنْزَلْنا إِلَيْكَ الْكِتابَ بِالْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ بِما أَراكَ اللهُ وَلا تَكُنْ لِلْخائِنِينَ خَصِيماً- وَاسْتَغْفِرِ اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ كانَ غَفُوراً رَحِيماً- وَلا تُجادِلْ عَنِ الَّذِينَ يَخْتانُونَ أَنْفُسَهُمْ إِنَّ اللَّهَ لا يُحِبُّ مَنْ كانَ خَوَّاناً أَثِيماً-
(৫) ‘নিশ্চয়ই আমরা তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি সত্যসহকারে। যাতে তুমি সে অনুযায়ী লোকদের মধ্যে ফায়ছালা করতে পার, যা আল্লাহ তোমাকে জানিয়েছেন। আর তুমি খেয়ানতকারীদের পক্ষে বাদী হয়ো না। আর তুমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (নিসা ৪/১০৫-১০৬)।
6- يا داوُدُ إِنَّا جَعَلْناكَ خَلِيفَةً فِي الْأَرْضِ فَاحْكُمْ بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَلا تَتَّبِعِ الْهَوى فَيُضِلَّكَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ إِنَّ الَّذِينَ يَضِلُّونَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ لَهُمْ عَذابٌ شَدِيدٌ بِما نَسُوا يَوْمَ الْحِسابِ-
(৬) ‘হে দাঊদ! আমরা তোমাকে পৃথিবীতে শাসক নিযুক্ত করেছি। অতএব তুমি লোকদের মধ্যে ন্যায়বিচার কর। এ বিষয়ে প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। তাহ’লে তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়, তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। এ কারণে যে, তারা বিচার দিবসকে ভুলে গেছে’ (ছ-দ ৩৮/২৬)।
7- وَلا تَقْرَبُوا مالَ الْيَتِيمِ إِلَّا بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ حَتَّى يَبْلُغَ أَشُدَّهُ وَأَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيزانَ بِالْقِسْطِ لا نُكَلِّفُ نَفْساً إِلَّا وُسْعَها وَإِذا قُلْتُمْ فَاعْدِلُوا وَلَوْ كانَ ذا قُرْبى وَبِعَهْدِ اللَّهِ أَوْفُوا ذلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ-
(৭) ‘তোমরা ইয়াতীমদের মাল-সম্পদের নিকটবর্তী হয়োনা উত্তম পন্থা ব্যতীত, যতদিন না ঐ ইয়াতীম তার যোগ্য বয়সে উপনীত হয়। তোমরা মাপ ও ওযন পূর্ণ কর ইনছাফ সহকারে। বস্ত্ততঃ আমরা কাউকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেই না। আর যখন তোমরা কথা বলবে তখন ন্যায় কথা বলবে, তা নিকট জনের বিরুদ্ধে হলেও। আর তোমরা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ কর। এসব বিষয় তিনি তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর’ (আন‘আম ৬/১৫২)।
8- إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالْإِحْسانِ وَإِيتاءِ ذِي الْقُرْبى وَيَنْهى عَنِ الْفَحْشاءِ وَالْمُنْكَرِ وَالْبَغْيِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ -
(৮) ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্মীয়-স্বজনকে দান করার নির্দেশ দেন এবং অশ্লীলতা, অন্যায় কাজ ও অবাধ্যতা হতে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর’ (নাহল ১৬/৯০)।
9- يا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ بِالْقِسْطِ شُهَداءَ لِلَّهِ وَلَوْ عَلى أَنْفُسِكُمْ أَوِ الْوالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ إِنْ يَكُنْ غَنِيًّا أَوْ فَقِيراً فَاللَّهُ أَوْلى بِهِما فَلا تَتَّبِعُوا الْهَوى أَنْ تَعْدِلُوا وَإِنْ تَلْوُوا أَوْ تُعْرِضُوا فَإِنَّ اللَّهَ كانَ بِما تَعْمَلُونَ خَبِيراً-
(৯) ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক আল্লাহর জন্য সাক্ষ্যদাতা হিসাবে, যদিও সেটি তোমাদের নিজেদের কিংবা তোমাদের পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে যায়। (বাদী-বিবাদী) ধনী হৌক বা গরীব হৌক (সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করো না)। কেননা তোমাদের চাইতে আল্লাহ তাদের অধিক শুভাকাংখী। অতএব ন্যায়বিচারে প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বল অথবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে জেনে রেখ আল্লাহ তোমাদের সকল কর্ম সম্পর্কে অবহিত’ (নিসা ৪/১৩৫)।
হাদীছে নববী :
10- عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللَّهُ فِى ظِلِّهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلُّهُ الإِمَامُ الْعَادِلُ، -
(১০) আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী করীম (ছাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন, ‘যে দিন আল্লাহর রহমতের ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না, সেদিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তা’আলা তাঁর নিজের (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। ১. ন্যায়পরায়ণ শাসক। [1]
11- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّ الْمُقْسِطِينَ عِنْدَ اللَّهِ تَعَالَى عَلَى مَنَابِرَ مِنْ نُورٍ عَلَى يَمِينِ الرَّحْمَنِ الَّذِينَ يَعْدِلُونَ فِى حُكْمِهِمْ وَأَهْلِيهِمْ وَمَا وَلُوا-
(১১) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আ‘ছ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহর নিকট যারা ন্যায়পরায়ণ তারা দয়াময়ের ডান পার্শ্বে জ্যোতির মিম্বরের উপর অবস্থান করবে। আর তাঁর উভয় হস্তই ডান। (ঐ ন্যায়পরায়ণ তারা) যারা তাদের বিচারে, পরিবারে এবং তার কর্তৃত্ব ও নেতৃত্বাধীন ব্যক্তিবর্গের ব্যাপারে ন্যায়নিষ্ঠ’।[2]
12- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ أَطَاعَنِي فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ عَصَى اللَّهَ، وَمَنْ يُطِعِ الْأَمِيرَ فَقَدْ أَطَاعَنِي وَمَنْ يَعْصِ الْأَمِيرَ فَقَدْ عَصَانِي وَإِنَّمَا الْإِمَامُ جُنَّةٌ يُقَاتَلُ مِنْ وَرَائِهِ وَيُتَّقَى بِهِ فَإِنْ أَمَرَ بِتَقْوَى اللَّهِ وَعَدَلَ فَإِنَّ لَهُ بِذَلِكَ أَجْرًا وَإِنْ قَالَ بِغَيْرِهِ فَإِنَّ عَلَيْهِ مِنْهُ-
(১২) আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করল। আর যে আমার অবাধ্যতা করল, সে আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্যতা করল। আর যে আমীরের (নেতার) আনুগত্য করল, সে আমারই আনুগত্য করল। যে আমীরের অবাধ্যতা করল, সে আমারই অবাধ্যতা করল। প্রকৃতপক্ষে ইমাম (নেতা) হলেন ঢাল স্বরূপ। তার পিছন থেকে যুদ্ধ করা হয়, তার দ্বারা (শত্রুদের কবল থেকে) নিরাপত্তা পাওয়া যায়। সুতরাং শাসক যদি আল্লাহর প্রতি ভয়প্রদর্শন পূর্বক প্রশাসন চালায় এবং ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠা করে, তাহ’লে এর বিনিময়ে সে ছওয়াব (প্রতিদান) পাবে। কিন্তু সে যদি এর বিপরীত কর্ম সম্পাদন করে, তাহ’লে তার গুনাহও তার ওপর কার্যকর হবে’।[3]
13- وَعَنْ بُرَيْدَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْقُضَاةُ ثَلَاثَةٌ وَاحِدٌ فِي الْجَنَّةِ وَاثْنَانِ فِي النَّارِ فَأَمَّا الَّذِي فِي الْجَنَّةِ فَرَجُلٌ عَرَفَ الْحَقَّ فَقَضَى بِهِ، وَرَجُلٌ عَرَفَ الْحَقَّ فَجَارَ فِي الْحُكْمِ فَهُوَ فِي النَّارِ، وَرَجُلٌ قَضَى لِلنَّاسِ عَلَى جَهْلٍ فَهُوَ فِي النَّارِ-
(১৩) আবু বুরায়দাহ্ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, বিচারক তিন শ্রেণীর হয়। তন্মধ্যে এক প্রকারের (বিচারকদের) জন্য জান্নাত আর দু’ প্রকারের জন্য রয়েছে জাহান্নাম। সে বিচারক জান্নাতে যাবেন, যিনি হক চিনলেন এবং তদানুযায়ী ফায়ছালা করেন। আর যে বিচারক হক উপলব্ধি করেও বিচার-ফায়ছালার মধ্যে অন্যায়-অবিচার করে, সে বিচারক জাহান্নামী এবং যে বিচারক অজ্ঞতার সাথে বিচার-ফায়ছালা করে, সেও জাহান্নামী’।[4]
14- عَنْ عِيَاضِ بْنِ حِمَارٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَهْلُ الْجَنَّةِ ثَلَاثَةٌ ذُو سُلْطَانٍ مُقْسِطٌ مُتَصَدِّقٌ مُوَفَّقٌ، وَرَجُلٌ رَحِيمٌ رَقِيقُ الْقَلْبِ لِكُلِّ ذِي قُرْبٍ وَمُسْلِمٍ، وَعَفِيفٌ مُتَعَفِّفٌ ذُو عِيَالٍ-
(১৪) ইয়ায ইবনু হিমার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) তিন প্রকার লোক জান্নাতবাসী। যথা- ১. দেশের শাসক, যিনি সুবিচারক ও দাতা, যাকে ভালো ও সৎ কাজ করার যোগ্যতা দান করা হয়েছে, ২. যিনি সকলের প্রতি অনুগ্রহকারী- নিকটাত্মীয় ও মুসলিমদের প্রতি কোমলপ্রাণ এবং ৩. যিনি নিষিদ্ধ বস্তু এবং ভিক্ষাবৃত্তি থেকে আত্মরক্ষাকারী- সন্তান-সন্ততি সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলার ওপর ভরসাকারী’।[5]
15- عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ قُرَيْشًا أَهَمَّهُمْ شَأْنُ الْمَرْأَةِ الْمَخْزُومِيَّةِ الَّتِي سَرَقَتْ، فَقَالُوا مَنْ يُكَلِّمُ فِيهَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالُوا وَمَنْ يَجْتَرِئُ عَلَيْهِ إِلَّا أُسَامَةُ بْنُ زَيْدٍ حِبُّ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَكَلَّمَهُ أُسَامَةُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَتَشْفَعُ فِي حَدٍّ مِنْ حُدُودِ اللَّهِ ثُمَّ قَامَ فَاخْتَطَبَ ثُمَّ قَالَ: إِنَّمَا أَهْلَكَ الَّذِينَ قَبْلَكُمْ أَنَّهُمْ كَانُوا إِذَا سَرَقَ فِيهِمُ الشَّرِيفُ تَرَكُوهُ وَإِذَا سَرَقَ فِيهِمُ الضَّعِيفُ أَقَامُوا عَلَيْهِ الْحَدَّ وَايْمُ اللَّهِ لَوْ أَنَّ فَاطِمَةَ بِنْتَ مُحَمَّدٍ سَرَقَتْ لَقَطَعْتُ يَدَهَا -
(১৫) আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন মাখযূমী গোত্রের জনৈকা নারীর চুরির ব্যাপারে কুরায়েশগণ অত্যন্ত মর্মাহত হয়ে পড়েছিল। তারা (পরস্পরের মধ্যে) বলল, রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এ এতদসম্পর্কে কে সুফারিশ করবে? তারাই পুনরায় বলল, উসামা ইবনু যায়দ ব্যতীত কে আছে, এ ব্যাপারে সাহস করার? কেননা সে রাসূল (ছাঃ)-এর অত্যন্ত আস্থাভাজন। অতঃপর উসামা তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এতদসম্পর্কে জানালেন। এতদশ্রবণে রাসূল (ছাঃ) (ক্রোধান্বিত হয়ে) বললেন, তুমি আল্লাহ তা‘আলার দন্ডবিধিতে এই সুফারিশ করছ? অতঃপর তিনি (ছাঃ) দাঁড়িয়ে বক্তব্যদানকালে বললেন, হে লোক সকল! নিঃসন্দেহে তোমাদের পূর্বেকার লোকেরা এ আচরণেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে যে, যদি তাদের মধ্যে কোনো সম্মানী লোক চুরি করত, তাহ’লে তাকে মাফ করে দিত। আর যদি কোনো অসহায় দরিদ্র শ্রেণীর লোক চুরি করত, তবে তার ওপর দন্ড কার্যকর করত। আল্লাহর কসম! যদি মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমাও চুরি করত, তাহ’লে অবশ্যই আমি তার হাত কেটে দিতাম’।[6]
মনীষীদের বক্তব্য :
১. সাঈদ ইবনুল যুবাইর আব্দুল মালেক-এর প্রশ্নের জবাবে ন্যায়বিচার প্রসঙ্গে বলেন, ‘আদল বা ন্যায়বিচার চার ভাবে হয়ে থাকে ক. বিচারের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার (মায়েদাহ ৫/৪২) খ. কথায় বলার ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার (আন‘আম ৬/১৫২) গ. ফিদইয়া প্রদানের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার (বাক্বারাহ ২/১২৩) ঘ. শিরক করার ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার (আন‘আম ৬/১)’।[7]
২. ইবনুল কাইয়িম আল-জাওযী বলেন, ‘তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ববাদ এবং আদল বা ন্যায়বিচার হ’ল পরিপূর্ণ গুণাবলীর আধার’।[8]
৩. ইবনু তায়মিয়াহ বলেন, ‘আদল বা ন্যায়বিচারের ফলাফল অত্যন্ত চমৎকার। এ কথা সর্বজনবিদিত যে, ন্যায়বিচার সম্পন্ন দেশে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ সাহায্য নেমে আসে, যদিও সেটি আল্লাহদ্রোহী দেশ হয়। পক্ষান্তরে ন্যায়বিচারশূন্য যালেম দেশ থেকে মহান আল্লাহ সাহায্যের হাত গুটিয়ে নেন যদিও তা একটি ইসলামী দেশ হয়’।[9]
৪. ইবনু তায়মিয়াহ (রহ.) ‘কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাদেরকে সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে.. (মায়েদা ৮)’ আয়াতটি উল্লেখ করার পর বলেন, ‘যদি কাফেরদের প্রতি বিদ্বেষ থাকা সত্বেও তাদের প্রতি ইনছাফ করার নির্দেশ থাকে, তবে যারা ফাসেক, যালেম কিংবা শরীআতের ভুল ব্যাখ্যাকারী মুমিন, তাদের প্রতি ইনছাফ করা নিঃসন্দেহে অধিকতর আবশ্যক’।[10]
সারবস্ত্ত :
১. ন্যায়বিচার হ’ল সামাজিক শান্তি, স্থিতি ও শৃঙ্খলার সোপান।
২. ন্যায়বিচারই বিচার বিভাগ ও প্রশাসনযন্ত্রের মূল উপাদান।
৩. ন্যায়বিচারের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক হ’ল প্রবৃত্তির অনুসরণ। ফলে তিন শ্রেণীর বিচারকদের মধ্যে শুধুমাত্র পক্ষপাতহীন বিচারকই ন্যায়বিচার করতে পারে।
৪. ন্যায়বিচারকের ওপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়। আর যালিম আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়।
৫. ইসলামের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য হ’ল মাযলুম মানবতাকে ন্যায়বিচারের স্বাদ আস্বাদন করানো।
৬. আল্লাহর যমীনে আল্লাহর তাওহীদী বিধান কায়েম করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় মাধ্যম হ’ল ন্যায়বিচার।
[1]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৭০১।
[2]. মুসলিম, নাসাঈ, মিশকাত হা/৩৬৯০।
[3]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩৬৬১।
[4]. আবুদাউদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩৭৩৫।
[5]. মুসলিম, নাসাঈ, মিশকাত হা/৪৯৬০।
[6]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩৬১০।
[7]. আত-তাওফীক আলা মুহিম্মাতিত তাআরীফ লিল মানাবী ৫০৬ পৃ.।
[8]. তাফসীর ইবনুল কাইয়িম ১৭৯ পৃ.।
[9]. আল-হিসবাহ ১৬/১৭০ পৃ.।
[10]. আল-ইসতিক্বামাহ ১/৩৮ পৃ.।