গাযওয়াতুল হিন্দ : একটি পর্যালোচনা

মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম 2995 বার পঠিত

ভূমিকা : ইসলাম সার্বজনীন কালজয়ী আদর্শ হিসাবে বিশ্বের প্রতিটি বাড়িতে বা অঞ্চলে পৌঁছে যায়। ‘একটি আয়াত জানা থাকলেও প্রচার কর’ ইসলাম প্রচারে রাসূল (ছাঃ)-এর এমন হাদীছের অনুসরণ করা ছাহাবীদের নিকট প্রণিধানযোগ্য আমল ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় দ্বীনের সর্বাত্মক প্রচার-প্রসারে রাসূল (ছাঃ)-এর সঙ্গী-সাথীগণ নিজেদেরকে আত্মনিয়োগ করেন এবং বিভিন্ন ইসলামী খেলাফতকালে মুসলমানদের বিশ্বজয় ত্বরান্বিত হতে থাকে। ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) অর্ধ পৃথিবীতে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিয়েও পরিতৃপ্ত হননি। তিনি চেয়েছিলেন গোটা বিশ্বে ইসলামের শান্তির বাণী পৌঁছে দিবেন। প্রাণভরা আশা নিয়ে তাঁর জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। পরবর্তী খলীফা ওছমান (রাঃ) সুদূর চীনে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে প্রতিনিধি প্রেরণ করেন। তারা তৎকালীন চীন সম্রাটের নিকট ইসলামের বাণী পৌঁছে দেন। এরপরে ব্যাপক হারে ইসলামের বাণী দুনিয়ার সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে দলে দলে মুসলমানেরা ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। হিন্দ বা ভারতবর্ষে তো রাসূল (ছাঃ)-এর যুগেই ইসলাম দাওয়াত পৌঁছে যায়। বিশেষ করে ভারতবর্ষের ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ)-এর ভবিষ্যৎ বাণী থাকায় আমীরে মু‘আবিয়ার আমলে ছাহাবী ও তাদের অনুসারীরা ইসলামের দাওয়াত নিয়ে ভারতবর্ষে ছুটে আসেন। পরবর্তীতে মুহাম্মদ বিন কাসিম ও তৎপরবর্তীতে গযনীর সুলতান মাহমূদ ভারতবর্ষ বা হিন্দুস্থানের উপর বিজয় লাভ করেন। এভাবে হিন্দুস্থান বা ভারতবর্ষে মুসলমানেরা প্রায় আটশ বছর শাসন করেন। দূর্ভাগ্যক্রমে মুসলমানদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বিশ্বাসঘাতকতার কারণে ১৭৫৭ সালে ইংরেজদের হাতে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটে। ইংরেজ শাসনের ২০০ বছর পরে আবার হিন্দুস্তানের বড় অঞ্চলের শাসনভার হিন্দুদের হাতে চলে যায়।

এক্ষণে গাযওয়াতুল হিন্দ বা ‘হিন্দুস্থানের যুদ্ধ’ অর্থাৎ ভারত বা হিন্দুস্থানের বিরুদ্ধে মুসলমানদের যুদ্ধ নিয়ে বিভ্রান্তিতে পতিত একদল মানুষ মনে করে, বর্তমান হিন্দুস্থানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলে হাদীছে বর্ণিত মর্যাদা লাভ করা যাবে। এই হাদীছের সঠিক মর্ম না বোঝার কারণে একদল যুবক জড়িয়ে পড়ছে ইসলাম ও রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকান্ডে। অযথা নষ্ট করছে অর্থ ও মূল্যবান মেধা। এমনকি বিপথগামী হয়ে বিলিয়ে দিচ্ছে নিজের মূল্যবান জীবনটাকেও। অথচ জান্নাত পাওয়ার অসংখ্য সহজ ও সরল পথের দিকে তারা ভ্রক্ষেপও করছে না। কেন এই ভ্রান্ত নেশায় জড়িয়ে পড়ছে এই যুবকেরা? এর ভিত্তিই বা কী? হাদীছের ভুল ব্যাখ্যা বুঝেই তারা আবেগে ভেসে এই পথে এগুচ্ছে। আসলে হাদীছে কী বলা হয়েছে বা এর সঠিক ব্যাখ্যাই বা কী? নিমেণর আলোচনায় তা স্পষ্ট করা হবে ইনশাআল্লাহ।

গাযওয়াতুল হিন্দ সংক্রান্ত বর্ণিত হাদীছ সমূহের পর্যালোচনা :

গাযওয়াতুল হিন্দ সম্পর্কে বেশ কিছু বর্ণনা এসেছে যার দু’একটি ব্যতীত সবগুলো যঈফ অথবা জাল। যেমন :

-1عَنْ ثَوْبَانَ، مَوْلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم :عِصَابَتَانِ مِنْ أُمَّتِي أَحْرَزَهُمَا اللهُ مِنَ النَّارِ : عِصَابَةٌ تَغْزُو الْهِنْدَ، وَعِصَابَةٌ تَكُونُ مَعَ عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ ، عَلَيْهِمَا السَّلاَمُ-

(১) ছাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আমার উম্মতের দু’টি দলকে আল্লাহ জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন। তার একটি হচ্ছে যারা হিন্দুস্থানবাসীদের সাথে যুদ্ধ করবে। আর একটি হচ্ছে যারা ঈসা (আঃ)-এর সাথে থাকবে।[1] কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, من أدركه منكم فليقرئه مني السلام ‘যে তোমাদের মধ্যে তাঁকে (ঈসাঃ)-কে পাবে, আমার পক্ষ থেকে সালাম দিবে’।[2]

-2عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضِيَ الله عنْهُ ، قَالَ : وَعَدَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَزْوَةَ الْهِنْدِ فَإِنْ أَدْرَكْتُهَا أُنْفِقْ فِيهَا نَفْسِى وَمَالِى وَإِنْ قُتِلْتُ كُنْتُ أَفْضَلَ الشُّهَدَاءِ وَإِنْ رَجَعْتُ فَأَنَا أَبُو هُرَيْرَةَ الْمُحَرَّرُ-

(২) আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমাদের সাথে হিন্দুস্থানের যুদ্ধের ওয়াদা করেছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি সে যুদ্ধ পেলে আমার জান ও মাল দিয়ে যুদ্ধ করব। আর আমি মারা গেলে শহীদদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি হব এবং ফিরে এলে আমি জাহান্নাম থেকে মুক্ত আবু হুরায়রা’।[3]

-3عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضِيَ الله عنْهُ ، قَالَ حَدَّثَنِى خَلِيلِى الصَّادِقُ رَسُولُ اللهِ صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يكُونُ فِى هَذِهِ الأُمَّةِ بَعْثٌ إِلَى السِّنْدِ وَالْهِنْدِ. "فَإِنْ أَنَا أَدْرَكْتُهُ فَاسْتَشْهَدْتُ فَذَلِكَ وَإِنْ أَنَا - فَذَكَرَ كَلِمَةً - رَجَعْتُ وَأَنَا أَبُو هُرَيْرَةَ الْمُحَرَّرُ قَدْ أَعْتَقَنِى مِنَ النَّارِ.

(৩) আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার সত্যবাদী বন্ধু রাসূল (ছাঃ) হাদীছ বর্ণনা করেছেন, ‘এই উম্মতের মধ্যে থেকেই অভিযান প্রেরিত হবে সিন্দ ও হিন্দে। আমি সেটা পেলে তাতে শহীদ হওয়ার কামনা করি। আর যদি ফিরে আসি তাহলে আমি মুক্ত আবু হুরায়রা- অবশ্যই আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করা হয়েছে’।[4]

4- عَنْ صَفْوَانَ بْنِ عَمْرٍو، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : يَغْزُو قَوْمٌ مِنْ أُمَّتِي الْهِنْدَ ، فَيَفْتَحُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ حَتَّى يُلْقُوا بِمُلُوكِ الْهِنْدِ مَغْلُولِينَ فِي السَّلاسِلِ ، يَغْفِرُ اللَّهُ لَهُمْ ذُنُوبَهُمْ ، فَيَنْصَرِفُونَ إِلَى الشَّامِ فَيَجِدُونَ عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ بِالشَّامِ-

(৪) ছাফওয়ান বিন আমর হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের একদল লোক হিন্দুস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। আল্লাহ তাদেরকে বিজয় দান করবেন। তারা হিন্দুস্তানের রাজাকে শৃঙ্খলিত অবস্থায় নিয়ে আসবে। আল্লাহ তাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। যখন তারা সিরিয়ার দিকে ফিরে যাবে ঈসা বিন মারিয়াম (আঃ)-কে শামে পেয়ে যাবে’।[5]

 5-عَنْ كَعْبٍ، قَالَ: يَبْعَثُ مَلِكٌ فِي بَيْتِ الْمَقْدِسِ جَيْشًا إِلَى الْهِنْدِ فَيَفْتَحُهَا، وَيَأْخُذُ كُنُوزَهَا، فَيَجْعَلُهُ حِلْيَةً لَبَيْتِ الْمَقْدِسِ، وَيُقْدِمُوا عَلَيْهِ بِمُلُوكِ الْهِنْدِ مَغْلُولِينَ، يُقِيمُ ذَلِكَ الْجَيْشُ فِي الْهِنْدِ إِلَى خُرُوجِ الدَّجَّالِ-

(৫) কা‘ব আল আহবার হতে বর্ণিত তিনি বলেন, বায়তুল মাকদিসের সুলতান হিন্দুস্তানের বিরুদ্ধে সেনা প্রেরণ করবে। তারা বিজয় লাভ করবে এবং ধনভান্ডার গ্রহণ করে বায়তুল মাকদেসের সৌন্দর্যবর্ধনে খরচ করবে। তারা হিন্দুস্তানের রাজাকে শৃঙ্খলিত অবস্থায় মুসলিম শাসকের নিকট উপস্থিত করবে। ঐ সৈন্যদল দাজ্জালের আবির্ভাব পর্যন্ত হিন্দুস্তানে অবস্থান করবে’।[6]

‘গাযওয়াতুল হিন্দু’ সর্ম্পকিত পাঁচটির বর্ণনার মধ্যে চারটিরই সনদ যঈফ। তবে প্রথম বর্ণনাটি ছহীহ সনদ দ্বারা প্রমাণিত, যাতে বলা হয়েছে, ‘আমার উম্মতের দু’টি দলকে আল্লাহ জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন। তার একটি হচ্ছে যারা হিন্দুস্থানবাসীদের সাথে যুদ্ধ করবে। আর একটি হচ্ছে যারা ঈসা (আঃ)-এর সাথে থাকবে।[7] হিন্দুস্থানবাসীদের সাথে যুদ্ধকারী দলটি জাহান্নাম থেকে নাজাতপ্রাপ্ত। এক্ষণে যুদ্ধটি হয়ে গেছে? নাকী হবে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, উক্ত যুদ্ধ হয়ে গেছে। যেমন ওমর (রাঃ)-এর খেলাফতকালে সর্বপ্রথম ১৫ হিজরীতে ওছমান বিন আবুল আছের নেতৃত্বে একটি সেনাদল হিন্দুস্থানে প্রেরিত হয়। যারা হিন্দুস্থানের থানা, ব্রূছ ও দেবল বন্দরে সফল অভিযান পরিচালনা করেন। থানাকে বর্তমানে মুম্বাই, ব্রূছকে গুজরাট এবং দেবলকে করাচী বলা হয়। তারা এ সময় সরনদ্বীব জয় করেন। যাকে বর্তমানে শ্রীলঙ্কা বলা হয়’।[8] ওছমান বিন আবিল আছের পর তার ভাই মুগীরা বিন আবিল আছও নতুনভাবে অভিযান পরিচালনা করেন’।[9]

এরপর ইসলামের তৃতীয় খলীফা ওছমান (রাঃ)-এর আমলে হাকীম বিন জাবালাহ আবাদীকে হিন্দুস্তানের অবস্থান জানার জন্য প্রেরণ করা হয়। তিনি ঘুরে এসে খলীফাকে প্রতিকূল অবস্থার কথা জানালে তিনি নতুন করে কোন অভিযান প্রেরণ করেননি। ৩৮ হিজরীর শেষে এবং ৩৯ হিজরীর শুরুর দিকে আলী (রাঃ)-এর খেলাফতকালে হারেছ বিন মুর্রাহ আবাদীর নেতৃত্বে হিন্দুস্তানের বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরিত হয়। তিনি বিজয় লাভ করেন এবং অনেক গণীমতের সম্পদ লাভ করেন। এরপর ৪৪ হিজরীতে আমীরে মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর আমলে মুহাল্লাব বিন আবী ছাফরার নেতৃত্বে অভিযান প্রেরিত হয়। তিনি মুলতান ও কাবুল অঞ্চলে পৌঁছলে শক্রর মুখোমুখি হন এবং শক্রদের হত্যা করে বিজয় লাভ করেন। ১৮ জন তুর্কী অশ্বারোহী তার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ালে তিনি তাদের হত্যা করেন এবং বহু গণীমতের সম্পত্তি লাভ করেন। এরপর আব্দুল্লাহ বিন সাওয়ার আবাদীর নেতৃত্বে সৈন্য প্রেরিত হয়। তিনি কীকানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিজয় লাভ করেন এবং বহু সম্পদ লাভ করেন। তিনি একটি কীকানী ঘোড়া মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর জন্য হাদিয়া হিসাবে প্রেরণ করেন’।[10] এরপর ৯৩ হিজরীতে খলীফা ওয়ালীদ বিন আব্দুল মালিকের আমলে (৮৬-৯৬ হি.) মুহাম্মাদ বিন কাসেম ছাক্বাফীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সিন্ধু ও হিন্দুস্থান বিজীত হয়। তিনি প্রভাবশালী রাজা দাহিরকে পরাস্ত করে তাকে হত্যা করতে সক্ষম হন।[11]

এভাবে মুসলমানগণ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের উপর বিজয় লাভ করেন। যা হিজরী চতুর্থ শতাব্দীর শেষের দিকে গযনীর সুলতান মাহমূদ বিন সুবুকতিগীন ও তাঁর প্রতিনিধিদের হিন্দুস্তানের উপর ১৭ বার আক্রমণ করার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছিল। হাফেয ইবনু কাছীর, যাহাবী ও ইবনুল আছীরসহ অন্যান্য ঐতিহাসিকগণ বলেন,وَقَدْ غَزَاهَا الْمَلِكُ السَّعِيدُ الْمَحْمُودُ مَحْمُودُ بْنُ سُبُكْتِكِينَ صَاحِبُ غَزْنَةَ وَمَا وَالَاهَا، فِي حُدُودِ أَرْبَعِمِائَةٍ، فَفَعَلَ هُنَالِكَ أَفْعَالًا مَشْهُورَةً، وَأُمُورًا مَشْكُورَةً؟ كَسَرَ الصَّنَمَ الْأَعْظَمَ الْمُسَمَّى بِسُومَنَاتَ، وَأَخَذَ قَلَائِدَهُ وَجَوَاهِرَهُ وَذَهَبَهُ وَشُنُوفَهُ، وَأَخَذَ مِنَ الْأَمْوَالِ مَا لَا يُحْصَى، وَرَجَعَ إِلَى بِلَادِهِ سَالِمًا مُؤَيَّدًا مَنْصُورًا. ‘সৌভাগ্যবান, প্রশংসিত, গযনীর সুলতান মাহমূদ বিন সুবুকতিগীন এবং গভর্নরেরা ৪০০ হিজরীর দিকে হিন্দুস্তানবাসীর সাথে যুদ্ধ করেন। তিনি সেখানে যে অভিযান প্রেরণ করেন তা ছিল প্রসিদ্ধ ও প্রশংসিত। তিনি বিখ্যাত সোমনাথ মন্দিরের সকল মূর্তি ভেঙ্গে চুরমার করে দেন এবং তথাকার যাবতীয় অলংকার, মণিমুক্তা, স্বর্ণ ও রোপ্যগুলো বাজেয়াপ্ত করেন। তিনি সেখানে অগণিত সম্পদ লাভ করেন এবং নিরাপদে বিজয়ীবেশে দেশে ফিরে যান।[12] তারও পরে আববাসীয় যুগে ৬০২ হিজরীতে দিল্লী ও বাংলা বিজিত হয় এবং সারা ভারত বর্ষে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটে।

আর এভাবেই পুরো ভারতের উপর মুসলমানদের কর্তৃত্ব চলে আসে এবং পরে মামলুক, খিলজী, তুঘলক, সাইয়িদ, লোদী এবং মুঘলেরা পুরো ভারতবর্ষ শাসন করে। সুতরাং উপরোক্ত

বর্ণনা থেকে ধরে নেওয়া যায় যে, হাদীছে বর্ণিত হিন্দুস্তান বাসীর

সাথে যে যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে, তা ইতিমধ্যে ঘটে গেছে।

এক্ষণে যদি ধরে নেওয়া হয় যে, ভারতবাসীর সাথে যুদ্ধ হবে শেষ যামানায়, যেমনটি কোন কোন বিদ্বান মনে করেন।[13] এতেও কিন্তু নির্দিষ্ট সময় ও কোন দলকে নির্দিষ্ট করার কোন সুযোগ নেই। কারণ রাসূল সাধারণভাবে একটি দলের কথা বলেছেন।

শেষকথা :

গাযওয়াতুল হিন্দ সম্পর্কে উক্ত আলোচনার পর একথা নিঃসন্দেহে স্পষ্ট হয়েছে যে, হাদীছে বর্ণিত গাযওয়াতুল হিন্দ বা হিন্দুস্তানবাসীর সাথে যুদ্ধ ইতিমধ্যে সংঘটিত হয়ে গেছে, যা বিদ্বানদের ব্যাখ্যায় সুপ্রমাণিত। তবুও যদি কারো মতে এই যুদ্ধ শেষ যামানায় হবে বলে ধরে নেয়া হয়, তবুও এ কথা নিশ্চিত করার সুযোগ নেই যে, ঠিক কোন সময় এটি সংঘটিত হবে বা কার নেতৃত্বে হবে। সুতরাং গাযওয়াতুল হিন্দ নিয়ে কতিপয় যুবসমাজের অতিশয়োক্তি, মাতামাতি কিংবা রঙিন স্বপ্ন দেখানো একেবারেই অর্থহীন কর্ম। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে জান্নাতের শর্টকাট রাস্তা খুঁজে পাওয়ার নামে একশ্রেণীর মুসলিম যুবক উগ্রবাদ ও চরমপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ছে, যা খুবই ভয়ংকর। এই চরমপন্থীদের কারণে মুসলিম উম্মাহ ভেতরে ও বাইরে থেকে চরম অনিরাপদ ও কোনঠাঁসা হয়ে পড়ছে। বিশ্বব্যাপী নষ্ট হচ্ছে দাওয়াতের উর্বর ক্ষেত্রসমূহ। মহান আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দ্বীনের নামে হৃদয়কে প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে হেফাযত করে কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর অনুসরণ করার তাওফীক দান করুন- আমীন!

[লেখক : গবেষণা সহকারী, হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ]


[1]. নাসাঈ হা/৩১৭৫; ছহীহাহ হা/১৯৩৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৪০১২, সনদ ছহীহ।

[2]. আলবানী, কিছছাতু মাসীহিদ দাজ্জাল ১৪২ পৃ.।

[3]. নাসাঈ হা/৩১৭৪; আহমাদ হা/৭১২৮; বাযযার হা/৮৮১৯; সাঈদ ইবনু মানছুর হা/২৩৭৪, সনদ যঈফ।.

[4]. আহমাদ হা/৮৮০৯; ইবনু হাজার ইত্তেহাফ হা/১৭৯৫০; ইবনু কাছীর, আল বিদায়াহ ৯/২১৮, অত্র হাদীছের সনদে বারা বিন আব্দুল্লাহ গনভী থাকার কারণে সনদ যঈফ। তাছাড়া এতে ইনকেতা‘ রয়েছে

[5]. নাঈম ইবনু হাম্মাদ, আল ফিতান হা/১২০২ ও ১২৩৯, উক্ত হাদীছের সনদও যঈফ। প্রথম এতে ওয়ালিদ বিন মুসলিম আনআনা করেছেন, দ্বিতীয়ত: এতে ইরসাল রয়েছে

[6]. নাঈম ইবনু হাম্মাদ, আল-ফিতান হা/১২১৫, উপরোক্ত হাদীছটির বর্ণনাকারী ইহূদী পন্ডিত কা‘ব আল আহবার হওয়ায় সনদ অগ্রহণযোগ্য।

[7]. নাসাঈ হা/৩১৭৫; ছহীহাহ হা/১৯৩৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৪০১২, সনদ ছহীহ।

[8]. কাযী আতহার মুবারকপুরী, আল-ইক্বদুছ ছামীন ফী ফুতূহিল হিন্দ (কায়রো : দারুল আনছার, ২য় সংস্করণ ১৩৯৯ হি./১৯৭৯) ১/২৬, ৪০, ৪২, ৪৪।

[9]. রাসায়েলে ইবনু হাযম ২/১৩২; বালাযুরী, ফুতূহুল বুলদান ৪/১৬

[10]. বালাযুরী, ফতুহুল বুলদান ৪১৬-১৮ পৃ.; ইয়াকুব আল হামাভী, মু‘জামুল বুলদান ৪/৪২৩।

[11]. আল-বিদায়াহ ৯/৭৭, ৯৫; আল-ইক্বদুছ ছামীন ১/১৪১-৪২।

[12]. আল বিদায়া ১৯/১১; আল-কামেল ফিত তারীখ ৭/৬০৭’ যাহাবী, তারীখুল ইসলাম ২৭/২৪৪।

[13]. হামূদ তুওয়াইজেরী, ইত্তেহাফুল জামা‘আত ১/৩৬৬।



বিষয়সমূহ: বিবিধ
আরও