মিসরের রাজনৈতিক বিপর্যয় ও গণতন্ত্রের প্রতারণা

ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব 785 বার পঠিত

২০১২ সালের ২৪ জুন মিসরের ইতিহাসে প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত গণতান্ত্রিক নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে ইসলামপন্থী দল ইখওয়ানুল মুসলিমীন বা মুসলিম ব্রাদারহুড। ৩০ জুন ক্ষমতারোহণ করেন ইখওয়ানুল মুসলিমীনের রাজনৈতিক শাখা জাস্টিস এন্ড ফ্রী্ডম পার্টির নেতা ডঃ মুহাম্মাদ মুরসী ঈসা আল-আইয়াত্ব (১৯৫১-)। উপনিবেশবাদ উত্তর মিসরে দীর্ঘ ৬০ বছরের (১৯৫২-২০১২ইং) স্বৈরশাসন ও সামরিক শাসনের ধারাবাহিকতায় ছেদ টেনে এই প্রথম  সেখানে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ‘আরব বসন্তে’র উত্থানপর্বের শুরুতেই ২০১১ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারী হোসনী মোবারকের পতনের মাধ্যমে এই নির্বাচনের পথ প্রশস্ত হয়। আর সে নির্বাচনে বহু কাংখিত জয়ের মুখ দেখতে সক্ষম হয় সমকালীন মুসলিম বিশ্বে রাজনীতির ময়দানে সবচেয়ে সক্রিয় ইসলামী সংগঠন ‘ইখওয়ানুল মুসলিমীন’ বা ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’। ১৯২৮ সালে জন্ম নেয়া এই সংগঠনটির সুদীর্ঘ ৮০ বছরের আন্দোলনের তাৎপর্যপূর্ণ ফসল হিসাবে তাদের এই রাজনৈতিক বিজয় বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দেয়। এর আগে তাদেরকে বছরের পর বছর ধরে মোকাবিলা করতে হয়েছে সরকারী যুলুম-নির্যাতন ও নিষ্ঠুর সাঁড়াশী আক্রমণ। এমনকি হোসনী মোবারকের পতনের মুহূর্তেও সংগঠনটি সরকারীভাবে নিষিদ্ধ ছিল। সে কঠিন পরিস্থিতিকে তিলে তিলে মোকাবিলা করে মিসরীয় প্রেক্ষাপটে এমন একটি রাজনৈতিক অবস্থান গড়ে তোলাটা খুব সাধারণ কাজ ছিল না। কেননা মিসরীয় জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার বিকাশসাধনে সরকার এবং সমাজের সুবিধাভোগী শ্রেণীর বেপরোয়া পদক্ষেপের বিপরীতে প্রতিনিয়ত তাদেরকে দিতে হয়েছে চরম পরীক্ষা। অবশেষে ইসলামপন্থী ও ডানপন্থীদের নিরংকুশ সহযোগিতায় তারা চূড়ান্ত সাফল্যের মুখ দেখে। তাদের এই অভূতপূর্ব সাফল্যে উল্লসিত হয়ে উঠে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোও, যারা আধুনিক যুগে ‘গণতন্ত্র’কেই ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার উপায় মনে করে বছরের পর বছর ধরে সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছে।

ব্রাদারহুডের এই বিজয় ‘মডারেট’, ‘কনজারভেটিভ’ সকল চিন্তাধারার মুসলমানদের মধ্যে আত্মপ্রসাদ ও প্রশস্তির পরশ বুলিয়ে দিলেও একইসাথে সচেতন মহলে পুরোনো একটি আশংকার দানাও যে বেঁধে উঠেনি তা নয়। কারণ ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় ইসলামী দলসমূহ গণতন্ত্রের পপুলার ভোটের মাধ্যমে বিজয়লাভের বিরল অভিজ্ঞতা যতবারই লাভ করেছে ততবারই শেষ পর্যন্ত তারা ক্ষমতায় আসতে পারে নি বা আসতে দেয়া হয়নি। তবে এবারে যেহেতু ‘আরব বসন্তে’র এক অচিন্তনীয় প্রবল ধাক্কায় মিসরের প্রতাপশালী স্বৈরশাসকের পতন ঘটেছিল এবং গণতন্ত্রের জন্য একটা জাতীয় মতৈক্য গড়ে উঠেছিল, তাই ‘ব্রাদারহুড’কে আলজেরিয়ায় ১৯৯১ সালে নির্বাচিত ‘ইসলামিক স্যালভ্যাশন ফ্রন্ট’ বা ফিলিস্তীনে ২০০৬ সালে নির্বাচিত ‘হামাস’-এর মত বিজয়লাভের পরও ক্ষমতায় বসতে না পারার দুর্ভাগ্য বরণ করতে হবে-এমনটা প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায়নি।

যাইহোক অনেক জল্পনা-কল্পনা মাড়িয়ে অবশেষে ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ ক্ষমতায় বসার সৌভাগ্য অর্জন করতে সক্ষম হল। বরাবরের মত পশ্চিমা ধর্মনিরপেক্ষ মহল প্রমাদ গুণল। তবে তাদেরই রফতানীকৃত গণতন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়ায় ব্রাদারহুডকে তারা প্রাথমিকভাবে মুখ রক্ষার্থে মেনে নিতে বাধ্য হয়। কিন্তু ভিতরে ভিতরে তারা কঠোর নজরদারি শুরু করল। সেক্যুলার গণতন্ত্রকে মূলমন্ত্র বানিয়ে ক্ষমতায় আসা ইসলামপন্থী ‘ব্রাদারহুড’ যেন কোনক্রমেই ইসলামের নাম না উচ্চারণ করতে পারে সে জন্য লক্ষে-অলক্ষে সতর্কবাণী দেয়া শুরু করল। আর ‘ব্রাদারহুড’ও অত্যন্ত সাবধানতা ও ‘হেকমতে’র সাথে ঝুঁকিমুক্ত পথ অবলম্বনের নীতি অনুসরণ করতে লাগল। এজন্য ক্ষমতায় বসতে না বসতেই ‘ব্রাদারহুড’ নেতা মুহাম্মাদ মুরসী পশ্চিমা বিশ্বকে আশ্বস্ত করে ঘোষণা করলেন, He respect all international agreements অর্থাৎ ১৯৭৯ সালে ইসরাইলের সাথে কৃত শান্তিচুক্তিসহ সকল আন্তর্জাতিক চুক্তিকে তিনি শ্রদ্ধার সাথে অটুট রাখবেন (The guardian, 25 Jun 2012)। অক্টোবর ২০১২ সালে তিনি ইসরাঈলের প্রেসিডেন্ট শিমন পিরেজের উদ্দেশ্যে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে একটি চিঠি দিলেন যেখানে তিনি ইসরাঈলকে সম্বোধন করেছিলেন "a great and good friend" হিসাবে। সে চিঠিতে ইসরাঈলের সাথে পূর্ব সম্পর্ক অব্যাহত থাকার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি আরো লিখেছিলেন, "maintaining and strengthening the cordial relations which so happily exist between our two countries." একই চিঠির শেষভাগে তিনি ইসরাঈলের জন্য "highest esteem and consideration’’ প্রকাশ করেছেন (The Times of Israel, 27 October 2012)। এভাবে মুসলিম বিশ্বের জানি দুশমন ইসরাঈলকে খুশী রাখার সাথে সাথে পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি কূটনৈতিক আনুগত্য ও বশ্যতা স্বীকারেও মুহাম্মাদ মুরসী যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন কোন রকম ত্রুটি না রাখার। এখান থেকে বোঝা যায় গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বিজয়ী অন্যান্য দেশের ইসলামী দলগুলোর অভিজ্ঞতা ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ খুব ভালভাবেই স্টাডি করেছিল এবং দীর্ঘ সংগ্রামের পর অর্জিত এই সফলতাকে ধরে রাখতে যে কোন প্রকার স্বার্থ বিসর্জন দিতে তাদের দ্বিধা ছিল না। কিন্তু তবুও শেষ রক্ষা হল না। কেননা পশ্চিমা কায়েমী স্বার্থবাদ কখনই কামনা করে না ইসলামের নাম কখনও রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পর্যায়ে উচ্চারিত হোক। ধর্মের মত ‘অপাঙক্তেয়’ ও ‘সাম্প্রদায়িক’ বিষয় কোন ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অংশ হতে পারে-এটা তারা ঘূণাক্ষরেও কল্পনা করতে পারে না। তাই ‘ব্রাদারহুড’-এর ‘মডারেট’ ইমেজ বজায় রাখার আপ্রাণ প্রচেষ্টা কিংবা তাদের কর্মকান্ডে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র সর্বোচ্চ নমুনা প্রতিফলিত হওয়া পশ্চিমাদের কখনই আশ্বস্ত করতে পারেনি। বরং তাদের মধ্যে অন্তর্হিত হয়ে থাকা ইসলামী লেবেলটাই তাদের কাছে গুরুত্ব পেয়েছে এবং এটাকে তারা সর্বদাই নিজেদের জন্য হুমকি হিসাবে নিয়েছে। তাই নির্বাচনের পর পশ্চিমা বিশ্ব মুখে শুষ্ক হাসি বজায় রেখেছে বটে, কিন্তু মিছরির ছুরি নিয়ে সুযোগের অপেক্ষায় ছিল সর্বক্ষণ। তাদের জন্য সেই মস্ত সুযোগ এনে দেয় মুরসির ক্ষমতারোহনের ঠিক একবছর পর ৩০ জুন মিসরের তাহরীর স্কয়ারে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশ। বিগত নির্বাচনে পরাজিত ধর্মনিরপেক্ষ আহমাদ শফিক ব্লকের আয়োজিত এই বিক্ষোভ সমাবেশের পরদিন ১ জুলাই পশ্চিমা বিশ্বের ইশারা পেয়ে সেদেশের সেনাবাহিনী কালবিলম্ব না করে মুরসী সরকারের প্রতি ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেয়। ২ জুলাই প্রেসিডেন্ট মুরসী স্বাভাবিকভাবেই এই আল্টিমেটাম প্রত্যাখ্যান করেন। অতঃপর ৩ জুলাই সেনাপ্রধান আব্দুল ফাতাহ আল-সিসি প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদ মুরসীর পদচ্যুতি ঘোষণা করে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসাবে আদলী মনসূরের নাম ঘোষণা করেন। এভাবেই পশ্চিমা নীল নকশা মোতাবেক পতন ঘটল ইসলামপন্থী ব্রাদারহুড সরকারের। দৃশ্যপটে দেখা গেল মাত্র একবছর পূর্বে যে জনগণ সেনাশাসনের বিরুদ্ধে সারা মিশর কাপিয়ে দিয়েছিল এবং লৌহকঠিন স্বৈরশাসক হোসনী মোবারককে পদত্যাগে বাধ্য করেছিল, সেই একই জনগণ সেনাবাহিনীর ক্ষমতা পুনর্দখলে বন্য উল্লাসে মেতে উঠেছে। যেই আমেরিকা সারাবিশ্বে গণতন্ত্রের কলরব তুলে মুখে ফেনা তুলে দিচ্ছে সেই আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি মিসরীয় সেনাবাহিনীর এই অবৈধ ক্ষমতাদখলের কোন নিন্দা করলেন না, এমনকি একে ‘সেনা অভ্যুত্থান’ও বললেন না। উপরন্তু ঘোষণা করলেন যে, সেনাবাহিনী ‘গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা’ করেছে (!)। যেই মিডিয়া মোঘলরা মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্র নেই বলে মাতম করে আকাশ-বাতাস উজাড় করে আসছে, সেই মিডিয়া মোঘলদের কন্ঠে শোনা গেল সম্পূর্ণ বিপরীত সুর (!)। এভাবে  গণতন্ত্র এবং গণতন্ত্রসেবীদের নগ্ন প্রতারণা বিশ্ববাসীর সামনে আরো একবার ধরা পড়ে গেল।

মিসরে গণতন্ত্র উচ্ছেদের পর পশ্চিমাদের বক্তব্য, মুরসী সরকার ছিল অদক্ষ, দুর্নীতিগ্রস্ত, এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ। তাই তাদের পতনের বিকল্প ছিল না। তাদের এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে এ কথাই বলতে হয় যে, কেবল মুরসী কেন, স্বয়ং ইমাম মাহদীও যদি এখন বিশ্বে আবির্ভূত হতেন এবং রাষ্ট্রক্ষমতায় আরোহন করতেন তবুও তাঁকে অদক্ষতা ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিদায় করা হত। কারণ তাদের কাছে মূল সমস্যা তো এখানে নয়, সমস্যা হল ইসলাম। অভিযোগটি যদি অদক্ষতা ও দুর্নীতিরই হত তবে তা নিরসনের জন্য মাত্র ১টি বছর সময় কি খুব বেশী ছিল? এত সংক্ষিপ্ত পর্যবেক্ষণে কি একটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে এমন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া যায়? কোন যুক্তিতেই এটা সমর্থনযোগ্য? তবুও সারা বিশ্ব এই অন্যায়ের পক্ষে সরব কিংবা মৌন স্বীকৃতি দিয়েছে। তার  কারণ একটাই-‘ইসলাম ঠেকাও’।

মজার ব্যাপার হল, স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে সামরিক হস্তক্ষেপের নতুন নিয়ম ও ধারার সঙ্গে মিল রেখে মিসরের সামরিক বাহিনী সরাসরি রাষ্ট্রক্ষমতা নেয়নি। নববইয়ের দশকের পূর্ববর্তী ইতিহাসে দেখা যায় এশিয়া-আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকায় যখন কোন সামরিক অভ্যুত্থান হত, তখন তার প্রতি পাশ্চাত্যের বিশেষ করে মার্কিন সমর্থন প্রায় খোলামেলা ছিল। নতুন সামরিক শাসকরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে রাজনৈতিক প্রশ্রয় পেত। তাদের জন্য মার্কিন অর্থনৈতিক-সামরিক সহায়তার নিশ্চয়তা থাকত। তখনকার আন্তর্জাতিক দ্বন্দ্বে এসব সামরিক শাসক মার্কিন সমর্থক বনে যেত। কিন্তু বর্তমান যুগে সামরিক শাসনের প্রতি শক্তিশালী বিরোধিতা থাকায় সামরিক বাহিনী সরাসরি শাসনক্ষমতা হাতে নেয় না। রাজনীতিকদের মধ্য থেকে কাউকে বেছে নিয়ে পরোক্ষভাবে সামরিক বাহিনী ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। মিসরের বেলায় এবার তা-ই ঘটল। বাকি বিশ্বে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য  পাশ্চাত্য বিশ্ব এভাবে একবার স্বৈরতন্ত্রকে, আরেকবার গণতন্ত্রকে প্রয়োজন মত ব্যবহার করে চলেছে। এমনকি ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে মিসর সেনাবাহিনীর নারকীয় আক্রমণে সারা মিসরে যে হাযার হাযার মানুষের রক্তের বন্যায় ভেসে গেল তবুও ‘মানবতার পক্ষে সদা সোচ্চার’ (!) পশ্চিমাদের মুখে কোন রা নেই। একদিকে তারা রক্তপাত এড়ানোর লোকদেখানো পরামর্শ দিচ্ছে, অন্যদিকে ঠিকই সেনা সরকারকে অর্থনৈতিক ও সামরিক সাহায্য দিচ্ছে।

মিসরে পশ্চিমাদের এই বর্বর মুনাফেকী নীতি, গণতন্ত্র নামক হাওয়াই মিঠাইয়ের সুচতুর প্রতারণা, মুরসির শোচনীয় পতন কিংবা নিরস্ত্র ব্রাদারহুড সমর্থকদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর নির্মম রক্তপাতের বেদনাদায়ক ইতিহাস বহু শিক্ষা নিয়ে আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে। বিশেষ করে যে সকল ইসলামী দল ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি করেন কিংবা গণতন্ত্রকে ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি মনে করেন তাদের জন্য নিঃসন্দেহে এটা এক বিরাট ধাক্কা। এই ধাক্কা খাওয়ার পর গণতন্ত্রের ধাপ্পাবাজি সম্পর্কে আর কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়। মিসরে গণতন্ত্রের জাজ্বল্যমান প্রতারণার উদাহরণ দেখার পরও যেসব ইসলামপন্থী গণতন্ত্রের নাম মুখে আনবেন তারা নিঃসন্দেহে আত্মপ্রতারণা করছেন কিংবা জনগণকে ধোঁকা দিচ্ছেন।

মূলতঃ মিসরে বছর দুয়েক ধরে যা কিছু ঘটছে এবং গত জুলাই-আগস্টে যে ভয়াবহ রাজনৈতিক বিপর্যয় পরিলক্ষিত হল তা থেকে কেবল একটি উপসংহারেই আসা যায় শয়তানী শক্তির বিরুদ্ধে ঈমানী শক্তির লড়াই চিরন্তন। ব্রাদারহুডের মত মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে সংগঠিত ও শক্তিশালী দল যখন ক্ষমতায় গিয়ে টিকে থাকতে পারেনি, তখন অদূর ভবিষ্যতে কোন ইসলামী দলের পক্ষে গণতন্ত্রের নামে বিজয় লাভের স্বপ্ন দেখা স্রেফ বাতুলতা। অতএব সময় এসেছে আত্মসমালোচনার, সময় এসেছে আত্মোপলব্ধির। পাশ্চাত্যের আপাত সুন্দর দূর্গন্ধময় গণতান্ত্রিক রাজনীতির মাধ্যমে আর যাই হোক ইসলামের কোনই কল্যাণ আসতে পারে না, এ কথা আজ দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট। অতএব ইসলামকে আল্লাহর যমীনে প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করতে হবে একমাত্র নবী-রাসূলদের দেখানো পদ্ধতিতে; কোন বাতিল পন্থায় ইসলাম যদি কখনো শাসন ক্ষমতায় আসেও তবুও তার অবস্থা ‘ব্রাদারহুডে’র চেয়ে ব্যতিক্রম কিছু হবে না, এ কথা চোখ বন্ধ করেই বলে দেয়া যায়। সর্বোপরি এটাই সত্য যে, আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে কোন মহৎ অর্জনও সাফল্য পেতে পারে না। তাই সর্বাগ্রে আমাদেরকে হক্বকে চেনা এবং হক্বকে মানার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তবেই আল্লাহর মদদ নেমে আসবে। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দান করুন। সাথে সাথে বিশ্বজুড়ে যে অন্যায়-অত্যাচার ও মিথ্যা-প্রতারণার জোয়ার প্রবাহিত হচ্ছে তার গতিকে থামিয়ে দিয়ে সত্যের ঝান্ডা ওড়ানোর মত শক্তি-সামর্থ্য আমাদের দান করুন। আমীন!



আরও