সাম্প্রতিক মুসলিম বিশ্ব

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 582 বার পঠিত

মিসর : সেনা অভ্যুত্থান ও মুরসির বিদায়

আফ্রিকা তথা আরব বিশ্বের অন্যতম দেশ মিসরকে বলা হয় ‘নীল নদের দান’। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, বর্তমানে এই নীলনদ পরিণত হয়েছে অসহায় মানুষের মৃত্যুপুরীতে। গত ৩ জুলাই ২০১৩ মিসরের ইতিহাসের সর্বপ্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদ মুরসী এক বছরের মাথায় ধর্মনিরপেক্ষ আর উদারপন্থীদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে ক্ষমতাচ্যুত হন এবং কার্যত বন্দী হন। এরপর মুরসির দল ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’-এর সমর্থকবাহিনী রাস্তায় নেমে আসেন। দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে স্মরণকালের ভয়ংকর সংঘাত ও সহিংসতা। দেশ এক গভীর সংকটের মুখে নিমজ্জিত হয়। মিসরবাসী হয়ে পড়ে দ্বিধা-বিভক্ত ও অভিভাবকশূন্য। লেলিয়ে দেওয়া হয ‘মিসরের নব্য ফারাও’ হিসাবে পরিচিত আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সৈন্যবাহিনী। চালানো হয় গণহত্যা। শত শত মানুষের মৃত্যুতে মিসর রক্তাক্ত ইতিহাসের এক রক্তস্রোত নদীতে পরিণত হয়।

প্রশ্ন হল, যে তাহরীর স্কয়ারে মিসরবাসী মুরসির সমর্থনে গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, মাত্র এক বছরের মাথায় এমন কি ঘটল যে ঐ একই স্থানে তার বিরুদ্ধে পুনরায় বিক্ষোভ শুরু হল। এর জবাব হল, তিনি মার্কিন মোড়ল বারাক ওবামার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেননি। সেনাপ্রধান তানতাবীকে পদচ্যূত করার পর মুরসি তার ঘনিষ্ট সেনাকর্মকর্তা আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসিকে মিসরের সেনাপ্রধান হিসাবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। সেই সিসিই পরবর্তীতে মুরসি বিরোধী আন্দোলনের সময় ২ জুলাই সংকট নিরসনে বিক্ষোভকারীদের পাশাপাশি সরকারকে ৪৮ ঘন্টা সময় বেঁধে দেন। অতঃপর ৩ জুলাই তিনি ক্ষমতা দখল করেন। পাশাপাশি ২৬ জুলাই ফিলিস্তীনের কট্টোরপন্থী সংগঠন হামাসের সাথে যোগাযোগের অভিযোগে মুরসিকে ১৫ দিনের আটকাদেশ প্রদান করা হয়। ফলশ্রুতিতে গণতান্ত্রিক ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা মুরসির ছন্দপতন হল। আর মিসরে পুনরায় গণতন্ত্রের পরিবর্তে স্বৈরশাসনের আবির্ভাব ঘটল।

পাকিস্তানে মামনুন হুসাইন নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত

পাকিস্তানে ক্ষমতাসীন দল (পিএমএলএন)-এর প্রার্থী মামনুন হুসাইন (৭৩) দেশটির ১২তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। গত ৩০ জুলাই মঙ্গলবার জাতীয় ও প্রাদেশিক এমপিদের ভোটে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। সেপ্টেম্বরে মেয়াদ শেষে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারীর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন তিনি।

প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন নিয়ে বিতর্কের জের ধরে এই নির্বাচন বয়কট করেছিল। তারা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েও পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়। তবে পাকিস্তানের রাজনীতিতে নতুন ও তৃতীয় শক্তি হিসাবে আবির্ভূত সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি ওয়াজিউদ্দীন আহমাদকে প্রার্থী দিয়েছিল। তিনি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট পান। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মামনুন হুসাইন ৯ সেপ্টেম্বর শপথ বাক্য পাঠ করে দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন। দেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ফখরুদ্দীন জি ইবরাহীম জানান, পিএমএল-এন সমর্থিত প্রার্থী মামনুন হুসাইন পার্লামেন্টের দুই কক্ষ ও চারটি প্রাদেশিক পরিষদ মিলিয়ে মোট ৪৩২ টি ভোট পেয়েছেন। যদিও তার জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২৬৩ টি ভোট। আবার এর মধ্যে তিনি জাতীয় পরিষদ ও সিনেট মিলিয়েই ২৭৭ টি ভোট পেয়ে জয়লাভ নিশ্চিত করেন। নির্বাচনে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তেহরিক-ই-ইনসাফের প্রার্থী বিচারপতি ওয়াজিদ্দীন আহমাদ মোট ভোট পেয়েছেন ৭৭ টি। আর ভোট বাতিল হয় মোট ৯টি। উল্লেখ্য যে, পাকিস্তানে সংসদীয় পদ্ধতি সরকারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের মাধ্যমে। এতে পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ সিনেট ও নিম্ন কক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি এবং চারটি প্রাদেশিক পরিষদের আসন সংখ্যা বিবেচনায় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেক্টোরালের সর্বমোট সংখ্যা ১১৭০টি। আর ভোটের সংখ্যা ৭০৬ টি। অন্যদিকে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর হত্যা মামলায় সাবেক সেনাশাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফকে অভিযুক্ত করেছে দেশটির আদালত।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরীর ফিলিস্তীনে আগমন

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি গত ২৯ জুলাই সোমবার ফিলিস্তীন ও ইসরাইলের মধ্যকার বিরাজমান সংকটে শান্তি স্থাপনের জন্য ফিলিস্তীনে গমন করেন। সেখানে তিনি ফিলিস্তীন ও ইসরাইলের মধ্যকার তিন বছর পর ওয়াশিংটন কর্তৃক প্রথম এই শান্তি আলোচনা শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র এই শান্তিচুক্তিতে উপনীত হতে বড় ধরনের ছাড় দিতে দুই পক্ষের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরীর সাথে গত ২৯ জুলাই সোমবার এক সন্ধ্যায় এক ভোজসভায় মিলিত হন। এ সময় ফিলিস্তীনের প্রধান আলোচক সায়েব ইরাকাত ও ইসরাঈলের প্রধান আলোচক জিপি লিভনি কেরীর বিপরীত দিকে পাশাপাশি বসেন। সেখানে তারা একত্রে ইফতার করেন। কেরী তাদের স্বাগত জানিয়ে ওই মুহুর্তটিকে ‘অত্যন্ত ব্যতিক্রমী ও গুরুত্বপূর্ণ’ বলে বর্ণনা করেন।

কেরী দুই পক্ষের মধ্যকার অচলাবস্থা ভাঙ্গতে ওই গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে রসিকতা করে বলেন, ‘আসলে এ ব্যাপারে তেমন কিছু বলার নেই’। তার এ মন্তব্যে অনেকে মনে করেছেন যে, এর মধ্যে দিয়ে শান্তি আলোচনার অচলাবস্থা অবসানের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সাফল্য অর্জিত হতে পারে। কেরী সেখানে বিভিন্ন বিষষ নিয়ে উভয় রাষ্ট্রের সাথে ত্রিমুখি বৈঠক করেন। অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা শান্তি আলোচনা শুরুকে স্বাগত জানিয়ে একে সামনে এগিয়ে নিতে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহবান জানান। তবে তিনি সতর্ক করে দেন যে, এ বিষয়ে তাদের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ত্রাস সৃষ্টিকারী প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদের নিরব বিদায়

হাসান রূহানী ইরানের সপ্তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত

২০১৩ সালের জুনের ১৪ তারিখে ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের পর ইরানের ১১তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অতঃপর উক্ত নির্বাচনে ইরানের সপ্তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে হাসান রূহানী গত ৩ আগষ্ট সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আল-খামেনীর মাধ্যমে সাবেক কার্পেটে ঘুমানো প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদের স্থলাভিষিক্ত হলেন। আর এরই মাধ্যমে ইরানের পরপর দুই মেয়াদে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদের নিরব বিদায় হল। গত ৪ আগষ্ট ২০১৩ হাসান রূহানী পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন। প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেওয়ার পরপরই ১৮ সদস্যের মন্ত্রীপরিষদের নাম প্রস্তাব করেন তিনি। অবশেষে ১৫ আগষ্টে পার্লামেন্ট রূহানী প্রস্তাবিত ১৮ সদস্য বিশিষ্ট মন্ত্রীপরিষদের মধ্য থেকে ১৫ জনের মনোনয়ন চুড়ান্ত করে।

অন্যদিকে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট তার ক্ষমতাকালীন সময়ে অত্যন্ত সাহসী ও সাধারণ জীবন-যাপন করতেন। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার সাথে সাথে প্রেসিডেন্সিয়াল অফিসে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনেন। প্রেসিডেন্ট অফিসে সপ্তাহে পাঁচ দিন সকাল-সন্ধ্যা সাধারণ ইরানীদের চিঠি গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়। প্রেসিডেন্টের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হ’ল তিনি তার ভবনকে সর্বসাধারণের জন্য সর্বদা উম্মুক্ত করে দেন। তিনিই একমাত্র প্রেসিডেন্ট যে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আঙ্গুলী ইশারায় বক্তব্য দিতেন। এরই জন্য তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একজন ত্রাসসৃষ্টিকারী ব্যক্তিত্ব।উসুফ মুহাম্মাদ’ নাম বেছে নেন।



আরও