জ্ঞানার্জনে ব্রতী হৌন!

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 9252 বার পঠিত

মানুষের জ্ঞান সসীম। আল্লাহর জ্ঞান অসীম। অসীম জ্ঞানের অধিকারী আল্লাহ প্রদত্ত সামান্য জ্ঞানের মাধ্যমে মানুষ অন্যান্য জীব থেকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত হয়েছে। অমূল্য এ জ্ঞানের লালন ও কর্ষণের মাধ্যমে মানুষ তার ভিতরে লুক্কায়িত প্রতিভা বিকাশে সদাতৎপর থাকে। সে মেধা খাটিয়ে নিত্য-নতুন আবিষ্কারের জন্য বৈদগ্ধের সবুজ চারণভূমিতে বিচরণ করে। কিন্তু নিরন্তর কোশেশের বদৌলতে সে এ মহাবিশ্বের কতটুকু আবিষ্কার করতে পেরেছে তা জানলে বিস্ময়াভিভূত হতে হয়। মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার এক গবেষণায় দেখা গেছে, মহাবিশ্বের মাত্র ৫% মানুষ জানতে পেরেছে। বাকী ৯৫% এখনো মানুষের অজানা রয়ে গেছে। নাসার বিজ্ঞানীদের ভাষ্য হল, More is unknown than is Known. No one expected this, no one knew how to explain it. But something was causing it. It is a complete mystery. But it is an important mystery. অন্যদিকে আমেরিকার ন্যাশনাল একাডেমী অব সায়েন্সের গবেষণামতে পৃথিবীর ৯৯.৯৯ শতাংশ প্রজাতি এখনো অনাবিষ্কৃত। পৃথিবীতে আরো এক হাযার কোটি প্রজাতির প্রাণী রয়েছে, যার কথা বিজ্ঞানীরা এখনো পর্যন্ত জানেন না।

জ্ঞানের তারতম্যের কারণে মানুষের মধ্যে মর্যাদাগত অবস্থানেরও প্রভেদ ঘটে। আল্লাহ রববুল আলামীন আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করে সকল বস্ত্তর নাম শিখিয়ে দেন। এর মাধ্যমে ফেরেশতাদের উপর তাঁর মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। ফেরেশতারা এক বাক্যে আদমের মর্যাদা স্বীকার করে নেন। অন্যদিকে ইবলীস গর্বোদ্ধত হয়ে আদম (আঃ)-এর মর্যাদাকে অস্বীকার করতঃ চির অভিশপ্ত শয়তানে পরিণত হয়। মানুষের মধ্যেও এ স্বভাব বিদ্যমান রয়েছে। সামান্য জ্ঞান অর্জন করে সে নিজেকে জ্ঞানী ভাবতে শুরু করে। অথচ বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী নিউটন বলেছেন, ‘আমি জ্ঞান সমুদ্রের বেলাভূমিতে কেবল উপলখন্ডই কুড়িয়ে গেলাম। জ্ঞানের বিস্তীর্ণ সমুদ্র এখনো সামনেই পড়ে রইল’।

অনেকে না জেনে ফৎওয়া প্রদান করে প্রতিনিয়ত মানুষকে ভ্রষ্টতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। ফলে নিজেরা যেমন পথভ্রষ্ট হয়, তেমনি অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করে (বুখারী হা/১০০)। অথচ সালাফে ছালেহীনের নীতি ও আদর্শ ছিল এর সম্পূর্ণ বিপরীত। ছাহাবায়ে কেরামকে রাসূল (ছাঃ) কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা নির্দ্বিধায় বলতেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সর্বাধিক অবগত। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলতেন, হে জনগণ! যে জানে সে বলুক। আর যে জানে না, সে যেন বলে اَللهُ اَعْلَمُ ‘আল্লাহ সর্বাধিক অবগত’। কেননা এটিই হল জ্ঞানী ব্যক্তির কথা (বুখারী হা/৪৮০৯; মুসলিম হা/২৭৯৮)। ইমাম মালেক (রহঃ) তাঁর নিকট জিজ্ঞাসিত ৪৮টি প্রশ্নের উত্তরে ৩২টিতেই لاَ اَدْرِىْ ‘আমি জানি না’ বলেছিলেন (তাফসীরে কুরতুবী, বাক্বারাহ ৩২ আয়াতের তাফসীর দ্র:)। আব্দুর রহমান বিন মাহদী (১৩৫-১৯৮ হিঃ) বলেন, একদিন আমরা মালেক বিন আনাসের নিকটে ছিলাম। এমন সময় জনৈক ব্যক্তি এসে তাঁকে একটি বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি ভাল জানি না’। তখন লোকটি হতবাক হয়ে গেল। কেননা সে ভেবেছিল যে সে এমন একজন ব্যক্তির কাছে এসেছে, যিনি সবকিছু জানেন। লোকটি বলল, আমি ছয় মাসের পথ অতিক্রম করে এসেছি। এখন আমি ফিরে গিয়ে আমার এলাকার লোকদের কি বলব? তিনি বললেন, তুমি বলে দিয়ো, মালেক বলেছেন যে, তিনি এ বিষয়ে ভাল জানেন না’ (জামে‘উ বায়ানিল ইলম ২/৫৩)। এজন্যই আলী (রাঃ) বলেছেন, مَنْ تَرَكَ قَوْلَ : "لاَ أَدْرِى" أُصِيْبَتْ مَقَاتِلُهُ ‘আমি জানি না’ বলা যে পরিত্যাগ করবে, সে ধ্বংস হবে (নাহজুল বালাগাহ)।

সুতরাং আমাদেরকে তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতঃ জ্ঞানচর্চায় মনোনিবেশ করতে হবে। জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত জ্ঞানচর্চায় ব্রতী হতে হবে। কেননা চর্চার মাধ্যমেই জ্ঞানের দিগন্ত সম্প্রসারিত হয়। আলী (রাঃ) যথার্থই বলেছেন, كُلُّ وِعَاءٍ يَضِيْقُ بِمَا جُعِلَ فِيْهِ إِلاَّ وِعَاءَ الْعِلْمِ فَإِنَّهُ يَتَّسِعُ بِهِ ‘প্রত্যেক পাত্রই তাতে জিনিস রাখার কারণে সংকুচিত হয়, একমাত্র জ্ঞানের পাত্র ব্যতীত, যা আরও প্রশস্ত হয়’ (নাহজুল বালাগাহ)।

প্রিয় পাঠক! রামাযান মাস সমাগত। এ মাস হ’তে পারে আমাদের জন্য জ্ঞানচর্চার এক মোক্ষম সুযোগ। কুরআন মাজীদ অধ্যয়নের পাশাপাশি এ মাসে আমরা আমাদের জ্ঞানের জগতকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারি। নির্ভেজাল ইসলামী সাহিত্যের নিবিড় সান্নিধ্যে আসতে পারি। এতে আমাদের জীবনের গতিধারা অধিকতর বৈচিত্র্যময় এবং স্বচ্ছন্দ হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন! আমীন!!


আরও