সাম্প্রতিক মুসলিম বিশ্ব
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 786 বার পঠিত
হজ্জ করতে এসে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেলেন
দুই মুসলিম বোন
(১) ফাতিমা আল মাহি নামে সুদানের এক বৃদ্ধা মহিলা এবার হজ্জ করতে এসে মসজিদে নববীতে তার হারানো দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছেন। ৬০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধা মহিলা জানান, তিনি ৮ বছর পূর্বে তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন এবং সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যান। এরপর তিনি বার বার অপারেশন করেও দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাননি। তিনি এ বছর হজ্জ করতে এসে মসজিদে নববীতে বসে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার জন্য দো‘আ করছিলেন। হঠাৎ তিনি বুঝতে পারেন যে, তার চোখের কালো পর্দা সরে যাচ্ছে। অতঃপর তিনি আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিয়ে চিৎকার করে ওঠেন। তিনি বলেন, আমি চিকিৎসকদের উপর আশা ছেড়ে দিয়ে শুধু আল্লাহর কাছে দো‘আ করতাম এবং সেই দো‘আ অবশেষে মসজিদে নববীতে এসে কবুল হয়েছে।
(২) চোখের আলো নিভে গিয়েছিল তার দেড় বছর আগে। আল্লাহর নিকটে প্রতিদিন তিনি আকুতি জানাতেন যে, আল্লাহ যেন তার চোখের হারানো জ্যোতি ফিরিয়ে দেন। এ অবস্থায় এবার তিনি হজ্জ পালন করতে আসেন। আরাফার ময়দানে অবস্থানকালে ঘটে যায় মা‘বুদের অসীম কুদরতের বহিঃপ্রকাশ। দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান তিনি। প্রাণভরে দেখেছেন আল্লাহর ঘর কাবা শরীফ, মদীনায় প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর পবিত্র রওযা মুবারক সহ ইসলামের অন্যান্য পবিত্র স্থান। এ ঘটনা তিউনিসিয়ার ৭০ বছর বয়স্কা মহিলা হাজী নাফীসা আল-কুরমাজির। দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মা নাফীসা অন্ধ অবস্থায় এবার হজ্জ করতে আসেন। দেড় বছর আগে তার এক কঠিন স্ট্রোকে চোখের দৃষ্টি লোপ পায়। চিকিৎসকরা জানান যে, স্ট্রোক হওয়ায় এবং বয়সের কারণে তিনি আর দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন না। তবে নাফীসা বলেন, আল্লাহর উপর থেকে আমি বিশ্বাস হারাইনি। আমি সব সময় তাঁর কাছে প্রার্থনা করতাম তিনি যেন আমার চোখের আলো ফিরিয়ে দেন।
হাজী কুরমাজি বলেন, এর মধ্যেই আমি হজ্জ পালনের সিদ্ধান্ত নেই। অতঃপর আরাফার ময়দানে এসে আমি দো‘আর পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দিই। আমি নিশ্চিত ছিলাম যে, আল্লাহ আমাকে নিরাশ করবেন না। দো‘আ পাঠ করতে করতে হঠাৎ আমি চোখে দেখতে শুরু করি। বুঝতে পারি, মহান করুণাময় প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলা ফিরিয়ে দিয়েছেন আমার দৃষ্টিশক্তি। আনন্দে কাঁদতে থাকি আমি। অন্য হজ্জ পালনকারীরা আমার কাছ থেকে ঘটনা শোনার পর আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করে আল্লাহু আকবার তাকবীর দিতে থাকেন। তিনি বলেন, তিউনিসিয়া থেকে হজ্জে আসার সময় আমার স্বপ্ন ছিল পবিত্র স্থানগুলোসহ মক্কা-মদীনা শরীফ দেখার। মহান আল্লাহর জন্য হাযারো শুকরিয়া যে, আমার সে স্বপ্ন পূর্ণ হয়েছে। কারো সাহায্য ছাড়াই আমি এখন যে কোনো জায়গায় যেতে পারি। আরাফার ময়দানে লক্ষ লক্ষ হাজীর সমাবেশ দেখে হাজী কুরমাজি আনন্দে অভিভূত হয়ে পড়েন। এত মানুষের সমাগম দীর্ঘ জীবনে কখনো দেখেননি তিনি। তিনি বলেন, বিশ্বের সর্বাপেক্ষা পবিত্র স্থান স্বচক্ষে দেখার জন্যই আল্লাহ পাক আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন।
[আল্লাহ তা‘আলা অসীম দয়ালু ও করুণাময় কৃপানিধান। তিনি সকল শক্তির আধার। তিনি তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দার আবেদন পূর্ণ করে থাকেন। তাঁর নিকটে একনিষ্ঠ মনে ও বিনীতচিত্তে কোন কিছুর প্রার্থনা করলে তিনি তা কবুল করেন। তাই তাঁর অসীম কুদরতের লীলাখেলা বিশ্বের সম্মুখে তিনি বিভিন্ন সময়ে দেখিয়ে থাকেন। এ রকমই ঘঠনা ঘটেছে এবার হজ্জ করতে এসে দুই মুসলিমের। যারা তাদের অন্ধত্ব ও দুঃখ-যাতনার জীবন পার করে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছেন আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহে। ফালিল্লা-হিল হামদ। -সহকারী সম্পাদক]
সঊদী আরবের জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যপদ প্রত্যাখ্যান
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রথমবারের মতো ঠাঁই পাওয়া সঊদী আরব সেদিনেই তার সদস্যপদ প্রত্যাখ্যান করেছে। বৈশ্বিক দ্বন্দ্ব নিরসনে পরিষদটির ‘দ্বৈত নীতি’র জন্য দোষারোপ করে সদস্যপদ প্রত্যাখ্যান করেছে দেশটি। সঊদী আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, কাজের পদ্ধতি ও দ্বৈত নীতির কারণে বিশ্ব শান্তি রক্ষায় নিরাপত্তা পরিষদ তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। পরিষদটির সংস্কার না হওয়া এবং দায়িত্ব পালনের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করা পর্যন্ত সদস্যপদ প্রত্যাখ্যান না করে সঊদী আরবের বিকল্প নেই। যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক সিরিয়ায় সামরিক হামলা না হওয়ায় গত মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনেও ব্যাপক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সঊদী আরব।
বেইজিং-এর তিয়ানানমেন স্কোয়ার বিধ্বস্ত : মুসলমানদের উপর নিপীড়ন
গত ২৮ অক্টোবর চীনের রাজধানী বেইজিং-এর তিয়ানানমেন স্কোয়ার এলাকায় উছমান হাসান নামের এক ব্যক্তির এস ইউ ভি (SUV) গাড়ি মাও জে দং নামক বিশাল ছবির সামনে বিস্ফারিত হয়। ফলশ্রুতিতে সেখানে আগুন ধরে যায়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। উক্ত ঘটনায় উছমান হাসান, তার মা, স্ত্রী ও ২ জন পর্যটকসহ মোট ৫ জন নিহত হয় এবং ৪০ জন আহত হয়। বেইজিং এ ঘটনাকে চীনে এটিই প্রথম বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলা বলে আখ্যায়িত করেছে। চীনের একজন ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন যে, এ সন্ত্রাসী হামলার পিছনে ‘ইস্ট তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট (ইটিআইএম)’ নামের একটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের হাত রয়েছে। অন্যদিকে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহিলা মুখপাত্র হুয়া চিনইয়িং গত শুক্রবার বলেন, ‘এ সংগঠনটি চীনের নিরাপত্তার জন্য আশু ও বাস্তব হুমকি’। তাছাড়া চীনের রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদ মাধ্যম বলেছে, তিয়ানানমেন স্কোয়ারের ঘটনার দায়ভার উইঘুরদেরই বহন করতে হবে। গ্লোবাল টাইমস বলেছে, এ ঘটনায় তারাই জড়িত। ফলে দেশের অন্যান্য স্থানে অবস্থানকারী উইঘুর মুসলমানরাও ক্ষতিগ্রস্থ ও নির্যাতিত হবে।
অনদিকে চীনের সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যরা ও প্রবাসী উইঘুর সংগঠনগুলো তিয়ানানমেন স্কোয়ারের ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বলে কর্তৃপক্ষের ভাষ্যকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আর এটাকে তারা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি মুসলমানদের উপর দমন-নিপীড়ন চালানোর অজুহাত হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। বিদেশ ভিত্তিক ‘উইঘুর ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস’ (ডব্লিউইউসি)-এর যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মুখপাত্র আলিম সেইতফ বলেন, গাড়ির লোকেরা ঘটনাচক্রে উইঘুর হওয়ায় এটাকে সন্ত্রাসী ঘটনার রূপ দেওয়া হয়েছে। আর এ ব্যাপারে চীন সরকারের ভাষ্য অসঙ্গতিপূর্ণ ও একপেশে। এটা একেবারেই অবিশ্বাস্য ও জঘন্য মিথ্যাচার। তিনি বলেন, একজন সন্ত্রাসী তার মা ও স্ত্রীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে সন্ত্রাস করতে যাবে একথা অবিশ্বাস্য। তাদের দাবির বিরোধিতা করে তিনি বলেন, গাড়ি আগুনে পুড়ে গেলেও ধর্মীয় বই-পুস্তক রক্ষা পেল কিভাবে? চীনের জাতীয় পতাকাও পুড়ল না কেন?। তিনি আরো বলেন, চীনা কর্তৃপক্ষ এ রকম নানাভাবে উইঘুর মুসলমানদের সন্ত্রাসী বানিয়ে তাদের উপর বিভিন্ন সময়ে নিপীড়ন ও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় সম্পদ সমৃদ্ধ জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলমানের বাস। সমগ্র চীনে মুসলমানদের সংখ্যা ২ কোটিরও বেশী হবে। এর মধ্যে জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি। অথচ এখানে মাঝে মাঝে চীনা জাতি কর্তৃক মুসলমানরা দমন-নিপীড়নের শিকার হন। এর শান্তিপূর্ণ নিরসন হওয়া আশু যরূরী।