স্বাধীনতার নতুন সূর্যোদয়
ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
মুযাফফর বিন মুহসিন 1009 বার পঠিত
বাংলাদেশ
মুসলিম প্রধান দেশ। ১৯৪৭ সালে মুসলিম চেতনার উপর যেমন পাকিস্তান স্বাধীন
হয়েছে, তেমনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামক ছোট্ট রাষ্ট্রটি স্বাধীন হয়েছে
মুসলিম চেতনার উপর। কিন্তু স্বাধীনতার বয়স ৪২ বছর হলেও দেশের মানুষ স্বাধীন
হয়নি এবং মুসলিম চেতনারও বহিঃপ্রকাশ ঘটেনি। কারণ বৃটিশ প্রণীত আইনে দেশ
পরিচালিত হওয়ায় পরাধীনতার অভিশাপে বাংলাদেশ আজ পর্যুদস্ত, সাম্রাজ্যবাদী
রাক্ষসদের অসহায় খোরাক। ফলে প্রতিনিয়ত মানুষ মরছে, অঙ্গহানি হয়ে পুঙ্গত্ব
বরণ করছে, পরিবার ধ্বংস হচ্ছে, অবরোধ, হরতাল ও নানা কর্মসূচীর কারণে শিক্ষা
ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অফিস-আদালত, কল-কারখানা, প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের
মুখে পড়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অর্থনীতির মেরুদ- ভেঙ্গে গেছে। হতদরিদ্র
মানুষগুলো ক্ষুধার তাড়নায় একমুঠো খাবারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। তাদের
আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে যাচ্ছে। এর মূল কারণ বস্তাপচা জাহেলী
গণতন্ত্র, ঘৃণিত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, পরিত্যক্ত জাতীয়তাবাদ, অধঃপতিত
সাম্যবাদ প্রভৃতি। এ সমস্ত শিরকী মতবাদ মুসলিমদের জন্য তো নয়ই, কোন মানুষের
জন্যও সুখকর নয়।
এদেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ মুসলিম। তারা আল্লাহ প্রদত্ত এলাহী বিধানে বিশ্বাসী। মহান আল্লাহ তাদের স্রষ্টা হিসাবে তিনিই জানেন কোন্ বিধান মানুষের জন্য কল্যাণকর। তাই বিশ্ব মানবতার কল্যাণের জন্য তিনি ইসলামকে দ্বীন হিসাবে মনোনীত করেছেন। যার স্বরূপ তুলে ধরার জন্য নাযিল করেছেন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ চূড়ান্ত সংবিধান পবিত্র কুরআন। সেটা প্রয়োগ করার জন্য মনোনীত করেছেন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানব মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে। তাই কোন মুসলিম নর-নারী উক্ত আসমানী বিধানকে প্রত্যাখ্যান করে নিজেদের ইচ্ছামত কোন কিছু করতে পারবে না। যদি কেউ তা লংঘন করে তবে সে বিভ্রান্তিতে নিপতিত হবে। সে নিজের ধ্বংস নিজেই নিশ্চত করবে (আহযাব ৩৬)। রাসূল (ছাঃ) উক্ত মিশন কার্যকর করার জন্যই ২৩টি বছর সংগ্রাম করেছেন (ছফ্ফ ৯)। এরপরও বিদায় হজ্জের শেষ ভাষণে পরিষ্কার ভাষায় বলে গেছেন, যতক্ষণ তোমরা দুইটি বস্ত্ত আকঁড়ে ধরে থাকবে ততক্ষণ পথভ্রষ্ট হবে না। সে দু’টি বস্ত্ত হল, পবিত্র কুরআন ও নবীর সুন্নাত (হাকেম হা/৩১৮, সনদ ছহীহ)। তাছাড়া সত্তাগত দিক থেকেও মুসলিমদের জন্য ইসলামী আদর্শ ছাড়া অন্য কোন আদর্শ শোভা পায় না। হিন্দুদের ধুতি, পৈতা, মরণত্তোর পুড়িয়ে ফেলা মুসলিম ব্যক্তির জন্য যেমন আদর্শ হতে পারে না, তেমনি হিন্দু সেজে ছালাত আদায় করা, ছিয়াম পালন করা, কা‘বা ঘরে হজ্জের নিয়ত করা শোভা পায় না। তাই মুসলিম ব্যক্তির জন্য ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম, ইযম ও মানব রচিত কোন বিধান শোভা পায় না। তাই তার জন্য এলাহী বিধান মেনে নেওয়া ছাড়া কোন বিকল্প পথ থাকতে পারে না। দ্বিতীয়তঃ মানুষ মাত্রই ইসলামী আদর্শের উপর জন্মগ্রহণ করে এবং উক্ত মর্মে রূহ জগতে আল্লাহর কাছে স্বীকারোক্তি প্রদান করেছে (রূম ৩০; বুখারী হা/১৯৮৫; আ‘রাফ ১৭২)। সুতরাং তার অঙ্গীকার ভঙ্গ করে সে শান্তিপূর্ণভাবে কখনোই বসবাস করতে পারবে না, পদস্খলিত হবেই। আর যদি অঙ্গীকার পূর্ণ করে তবে রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীদের যুগের ন্যায় আবার শান্তিময় যুগের আগমন ঘটবে ইনশাআল্লাহ। যেভাবে দীর্ঘদিন পরে ওমর বিন আব্দুল আযীয (রহঃ)-এর যুগে ইসলামের পুনর্জাগরণ সাধিত হয়েছিল।
অতএব একথা স্পষ্টভাবে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে হবে যে, মানব রচিত থিওরি ও দর্শনের মধ্যে মানুষের জন্য কোন প্রকার কল্যাণ নেই। যদিও এ সমস্ত আধুনিক মতবাদ সৃষ্টিই হয়েছে দেড় থেকে দুইশ’ বছরের মধ্যে। এরই মাঝে বহু অসার দর্শনের অকাল মৃত্যু ঘটেছে। ভবিষ্যতে আরো যত থিওরি সৃষ্টি হবে সেগুলোরও ধ্বংস অনিবার্য। কেবল ইসলামই অবত থাকবে ইনশাআল্লাহ। মুসলিম হিসাবে আল্লাহ প্রদত্ত আইন ও বিধান প্রত্যাখ্যান করে ইহুদী, খ্রীষ্টান ও ব্রাহ্মণ্যবাদী ঔষধ খাওয়ার কারণে দুর্গন্ধময় গলিত লাশ বহন করছে। ঐ সমস্ত বিদেশী প্রভুদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চলার কারণে সমগ্র দেশ আজ নৈরাজ্যের অগ্নিগর্ভে পরিণত হয়েছে। রাজনীতির নামে পাশ্চাত্যের মরণ ব্যধিতে সংক্রমিত হয়েছে। এজন্য দায়ী মূলতঃ বিদেশী ক্রীড়নকদের রসদপুষ্ট অসভ্য রাজনীতিবিদরা; অশিক্ষিত ও উন্মাদ পাতি নেতারা। তারাই দেশকে পিছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এক্ষণে জনগণের দায়িত্ব হল এ সমস্ত দেশদ্রোহী মোড়লদেরকে চিরদিনের জন্য অবাঞ্চিত ঘোষণা করা, শিরকী মতবাদের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তুলা। বর্তমানে প্রচলিত জঘন্য ও নোংরা রাজনীতি ঘৃণাভরে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা। দেশকে সংক্রামক ব্যাধি থেকে মুক্ত করা। পুনরায় নির্ভেজাল ইসলামী চেতনায় ফিরে আসা, যে ইসলামের অনুশীলনের কারণে রাসূল (ছাঃ) অন্ধকারাচ্ছন্ন জাহেলী যুগকে স্বর্ণযুগে পরিণত করেছিলেন। সে যুগের মানুষই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। তারা ইসলামের বিধিবিধান অনুসরণ করেই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিলেন। তাছাড়া যে যুগে বা যে দেশে ইসলামী আইনের অনুশাসন বিদ্যমান ছিল সে যুগ বা সে দেশ শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। এখনো যে দেশে ইসলামের অনুশাসন যত বেশী সে দেশ তত উন্নত, সভ্য, মডেল। অতএব আমাদেরকে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে জীবন পরিচালনা করতে হবে। তাহলে তাঁর পক্ষ থেকে রহমত নাযিল করা হবে এবং প্রবৃদ্ধিতে দেশকে সমৃদ্ধ করা হবে। আল্লাহ বলেন, ‘জনপদের অধিবাসীরা যদি ঈমান আনয়ন করে এবং আল্লাহভীতি অর্জন করে, তবে তাদের প্রতি আসমান-যমীনের যাবতীয় বরকতের পথ উন্মুক্ত করে দিব’ (আ‘রাফ ৯৬)। আল্লাহ আমাদের এই দেশকে জাহেলী মতবাদ ও বিদেশী রাক্ষসদের আগ্রাসন থেকে মুক্ত করুন। এই দেশকে নির্ভেজাল ব্যক্তিদের লীলাভূমি হিসাবে কবুল করুন-আমীন!!