তাবলীগ
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 1324 বার পঠিত
আল-কুরআনুল কারীম :
1 -إِنَّ اللَّهَ مَعَ الَّذِينَ اتَّقَوْا وَالَّذِينَ هُمْ مُحْسِنُونَ.
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরই সঙ্গে আছেন, যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করে এবং সৎকর্মপরায়ণ’ (নাহল ১৬/১২৮)।
২- وَالَّذِينَ جاهَدُوا فِينا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنا وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ.
‘যারা আমার পথে সংগ্রাম করে আমি তাদেরকে অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সাথে থাকেন’ (আনকাবূত ২৯/৬৯)।
৩- وَأَنْفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ.
‘তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় কর এবং নিজেদের হাত ধ্বংসের দিকে প্রসারিত কর না এবং কল্যাণ সাধন করতে থাক। নিশ্চয়ই আল্লাহ কল্যাণসাধনকারীদেরকে ভালবাসেন’ (বাক্বারাহ ২/১৯৫)।
4- وَإِذْ قُلْنَا ادْخُلُوا هذِهِ الْقَرْيَةَ فَكُلُوا مِنْها حَيْثُ شِئْتُمْ رَغَداً وَادْخُلُوا الْبابَ سُجَّداً وَقُولُوا حِطَّةٌ نَغْفِرْ لَكُمْ خَطاياكُمْ وَسَنَزِيدُ الْمُحْسِنِينَ.
‘আমি যখন বললাম, তোমরা এ নগরে প্রবেশ কর, অতঃপর তা হতে ইচ্ছামত ভক্ষণ কর আর তোমরা যে বল আমরা ক্ষমা প্রার্থনা করছি, তাহলে আমি তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা কবর। আর অচিরেই আমি সৎকর্মশীলগণকে অধিকতর প্রতিদান দান করব’ (বাক্বারাহ ২/৫৮)।
৫- الَّذِينَ اسْتَجابُوا لِلَّهِ وَالرَّسُولِ مِنْ بَعْدِ ما أَصابَهُمُ الْقَرْحُ لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا مِنْهُمْ وَاتَّقَوْا أَجْرٌ عَظِيمٌ.
‘যারা আঘাত পাওয়ার পরেও আল্লাহ ও রাসূলের নিদের্শের সাড়া দিয়েছিল, তাদের মধ্যে যারা উত্তম আমল করেছে এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করেছে, তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার’ (আলে-ইমরান ৩/১৭২)।
৬- فَأَثابَهُمُ اللَّهُ بِما قالُوا جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهارُ خالِدِينَ فِيها وَذلِكَ جَزاءُ الْمُحْسِنِينَ.
‘ফলে তাদের এই উক্তির বিনিময়ে আল্লাহ তাদেরকে এমন জান্নাত দান করবেন, যার তলদেশ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত। তারা সেখানে চিরস্থায়ীভাবে বসবাস করবে। আর এটাই সৎকর্মশীলদের প্রতিদান’ (মায়েদা ৫/৮৫)।
৭- وَلا تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ بَعْدَ إِصْلاحِها وَادْعُوهُ خَوْفاً وَطَمَعاً إِنَّ رَحْمَتَ اللَّهِ قَرِيبٌ مِنَ الْمُحْسِنِينَ.
‘পৃথিবীতে শান্তি স্থাপনের পর সেখানে বিপর্যয় সৃষ্টি কর না। তোমরা আল্লাহকে ভয়ভীতি ও আশা-আকাঙ্খার সাথে ডাক। নিঃসন্দেহে আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের অতি নিকটে’ (আ‘রাফ ৭/৫৬)।
8- إِنْ أَحْسَنْتُمْ أَحْسَنْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ وَإِنْ أَسَأْتُمْ فَلَها فَإِذا جاءَ وَعْدُ الْآخِرَةِ لِيَسُوؤُا وُجُوهَكُمْ وَلِيَدْخُلُوا الْمَسْجِدَ كَما دَخَلُوهُ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَلِيُتَبِّرُوا ما عَلَوْا تَتْبِيراً.
‘তোমরা সৎকর্ম করলে নিজেদের জন্যই করবে এবং মন্দ কর্ম করলে তাও নিজেদের জন্য। অতঃপর যখন পরবর্তী দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতি উপস্থিত হল তখন (আমি আমার বান্দাদেরকে প্রেরণ করলাম) তোমাদের মুখম-ল কালিমাচ্ছন্ন করার জন্য, প্রথমবার তারা যেভাবে মসজিদে প্রবেশ করেছিল পুনরায় সেভাবেই তাতে প্রবেশ করার জন্য এবং তারা যা অধিকার করেছিল তা সর্ম্পূণভাবে ধ্বংস করার জন্য’ (বানী ইসরাঈল ১৭/৭)।
9- قالُوا أَإِنَّكَ لَأَنْتَ يُوسُفُ قالَ أَنَا يُوسُفُ وَهذا أَخِي قَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَيْنا إِنَّهُ مَنْ يَتَّقِ وَيَصْبِرْ فَإِنَّ اللَّهَ لا يُضِيعُ أَجْرَ الْمُحْسِنِينَ.
‘তারা বলল, তবে কি তুমিই ইউসুফ? তিনি বললেন, আমিই ইউসুফ। আর এটা আমার সহোদর ভাই; আল্লাহ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। যে ব্যক্তি মুত্তাক্বী ও ধৈর্যশীল আল্লাহ সেইরূপ সৎকর্মপরায়ণদের প্রতিদান নষ্ট করেন না’ (ইউসুফ ১২/৯০)।
10- وَمِنْ قَبْلِهِ كِتابُ مُوسى إِماماً وَرَحْمَةً وَهذا كِتابٌ مُصَدِّقٌ لِساناً عَرَبِيًّا لِيُنْذِرَ الَّذِينَ ظَلَمُوا وَبُشْرى لِلْمُحْسِنِينَ.
‘এর পূর্বে মূসার কিতাব অনুসরণযোগ্য এবং রহমত স্বরূপ এসেছিল। আর এ এমন কিতাব (কুরআন) যা আরবী ভাষায়, তার সত্যতা প্রমাণকারী, যা যালিমদেরকে সতর্ক করার জন্য। যারা সৎকর্ম করে তাদের জন্য সুসংবাদ’ (আহক্বাফ ৪৬/১২)।
11- إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ -آخِذِينَ ما آتاهُمْ رَبُّهُمْ إِنَّهُمْ كانُوا قَبْلَ ذلِكَ مُحْسِنِينَ.
‘সেদিন মুত্তাক্বীরা জান্নাতে ও ঝর্ণার মধ্যে থাকবে, যা তাদের প্রতিপালক তাদেরকে দান করবেন আর তা তারা গ্রহণ করবে। নিশ্চয়ই তারা ইতিপূর্বে সৎকর্মপরায়ণ ছিল’ (যারিয়াত ৫১/১৫-১৬)।
12- هَلْ جَزاءُ الْإِحْسانِ إِلَّا الْإِحْسانُ.
‘উত্তম কাজের পুরস্কার উত্তম (জান্নাত) ব্যতীত আর কি হতে পারে?’ (আর-রহমান ৫৫/৬০)।
13- وَفَواكِهَ مِمَّا يَشْتَهُونَ-كُلُوا وَاشْرَبُوا هَنِيئاً بِما كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ-إِنَّا كَذلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِين.
‘যে ফল-মূল তারা কামনা করবে (তা তারা পাবে)। তোমরা মজা করে খাও এবং পান কর, তোমরা যেমন আমল করেছিলে। আর এভাবে আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি’ (মুরসালাত ৭৭/৪২-৪৪)।
হাদীছে নববী থেকে :
14- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ أَقْبَلَ رَجُلٌ إِلَى نَبِىِّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ أُبَايِعُكَ عَلَى الْهِجْرَةِ وَالْجِهَادِ أَبْتَغِى الأَجْرَ مِنَ اللَّهِ. قَالَ فَهَلْ مِنْ وَالِدَيْكَ أَحَدٌ حَىٌّ قَالَ نَعَمْ بَلْ كِلاَهُمَا قَالَ فَتَبْتَغِى الأَجْرَ مِنَ اللَّهِ قَالَ نَعَمْ قَالَ فَارْجِعْ إِلَى وَالِدَيْكَ فَأَحْسِنْ صُحْبَتَهُمَا.
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনু ‘আছ (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকটে হিজরত ও জিহাদের বায়‘আত করার জন্য আগমন করল, যার বিনিময়ে সে আল্লাহর সাহায্য কামনা করে। নবী করীম (ছাঃ) তাকে বললেন, তোমার পিতা-মাতার একজন বা উভয়জন কি জীবিত আছেন? লোকটি বলল, হ্যাঁ, দু’জনই আছেন। তিনি আবার বললেন, তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চাও? লোকটি বলল, হ্যাঁ। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, তুমি ফিরে যাও এবং তোমারা পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর’ (মুসলিম হা/৬৬৭১; মিশকাত হা/৩৮১৭)।
15- عَنِ أَبِيْ سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ قَالَ إِنَّ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ إِذَا أَسْلَمَ الْعَبْدُ فَحَسُنَ إِسْلاَمُهُ يُكَفِّرُ اللَّهُ عَنْهُ كُلَّ سَيِّئَةٍ كَانَ زَلَفَهَا وَكَانَ بَعْدَ ذَلِكَ الْقِصَاصُ الْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعِمِائَةِ ضِعْفٍ وَالسَّيِّئَةُ بِمِثْلِهَا إِلاَّ أَنْ يَتَجَاوَزَ اللَّهُ عَنْهَا.
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, বান্দা যখন ইসলাম গ্রহণ করে এবং তার ইসলামকে উত্তম করে, আল্লাহ তা‘আলা তার পূর্বের পাপ সমূহ ক্ষমা করে দেন। অতঃপর শুরু হয় প্রতিফল; একটি পুণ্যের বিনিময়ে দশ হতে সাতশ গুণ পর্যন্ত দেয়া হয়; আর একটি পাপ কাজের বিনিময়ে ঠিক ততটুকু মন্দ ফল রয়েছে। অবশ্যই আল্লাহ যদি ক্ষমা করে দেন তবে তা অন্য ব্যাপার (বুখারী হা/৪১; মিশকাত হা/২৩৭৩)।
16- عَنْ عَائِشَةَ زَوْجَ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم حَدَّثَتْهُ قَالَتْ جَاءَتْنِى امْرَأَةٌ مَعَهَا ابْنَتَانِ تَسْأَلُنِى فَلَمْ تَجِدْ عِنْدِى غَيْرَ تَمْرَةٍ وَاحِدَةٍ فَأَعْطَيْتُهَا فَقَسَمَتْهَا بَيْنَ ابْنَتَيْهَا ثُمَّ قَامَتْ فَخَرَجَتْ فَدَخَلَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم فَحَدَّثْتُهُ فَقَالَ مَنْ يَلِى مِنْ هَذِهِ الْبَنَاتِ شَيْئًا فَأَحْسَنَ إِلَيْهِنَّ كُنَّ لَهُ سِتْرًا مِنَ النَّارِ.
নবী করীম (ছাঃ)-এর স্ত্রী আয়েশা (রাঃ) বলেন, একটি স্ত্রীলোক দু’টি মেয়ে সাথে নিয়ে আমার কাছে এসে কিছু চাইল। আমার কাছে একটি খুরমা ব্যতীত আর কিছু্ই সে পেল না। আমি তাকে ওটা দিলাম। স্ত্রীলোকটি দু’মেয়েকে খুরমাটি ভাগ করে দিল। তারপর সে উঠে বের হয়ে গেল। এ সময় নবী (ছাঃ) এলেন। আমি তাকে ব্যাপারটি জানালাম। তখন তিনি বললেন, যাকে এ সব কন্যা সন্তান দিয়ে কোন পরীক্ষা করা হয়, অতঃপর সে তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করে এ কন্যারা তার জন্য জাহান্নামের পর্দা হবে (বুখারী হা/৫৯৯৫)।
17- عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنُؤَاخَذُ بِمَا عَمِلْنَا فِى الْجَاهِلِيَّةِ قَالَ مَنْ أَحْسَنَ فِى الإِسْلاَمِ لَمْ يُؤَاخَذْ بِمَا عَمِلَ فِى الْجَاهِلِيَّةِ وَمَنْ أَسَاءَ فِى الإِسْلاَمِ أُخِذَ بِالأَوَّلِ وَالآخِرِ .
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! জাহেলী যুগের কাজকর্মের জন্য আমাদের কি পাকড়াও করা হবে? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি ইসলামী যুগে ভাল কাজ করবে তাকে জাহেলী যুগের কাজ কর্মের জন্য পাকড়াও হবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলাম কবুলের পর অসৎ কাজ করবে, তাকে প্রথম ও পরবর্তীর জন্য পাকড়াও করা হবে (বুখারী হা/৬৯২১; মুসলিম হা/৩৩৪)।
18- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ قَالَ رَجُلٌ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَيْفَ لِى أَنْ أَعْلَمَ إِذَا أَحْسَنْتُ وَإِذَا أَسَأْتُ قَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا سَمِعْتَ جِيرَانَكَ يَقُولُونَ قَدْ أَحْسَنْتَ فَقَدْ أَحْسَنْتَ وَإِذَا سَمِعْتَهُمْ يَقُولُونَ قَدْ أَسَأْتَ فَقَدْ أَسَأْتَ.
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-কে বললেন, যখন আমি ভাল ও মন্দ সম্পর্কে জেনে যাব তখন আমি কী করব? নবী করীম (ছাঃ) বললেন, যদি তুমি তোমার প্রতিবেশীর নিকট থেকে ভাল কিছু শুনে থাক তবে তা ভাল করলে। আর যদি তার নিকট থেকে খারাপ কিছু শুনে থাক, তবে তুমি খারাপ করলে (ইবনু মাজাহ হা/৪২২৩; মিশকাত হা/৪৯৮৮, সনদ ছহীহ)।
19- عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ مَنْ أَحَقُّ النَّاسِ بِحُسْنِ صَحَابَتِى قَالَ أُمُّكَ قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ ثُمَّ أُمُّكَ قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ ثُمَّ أُمُّكَ قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ ثُمَّ أَبُوكَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, মানুষের মধ্যে আমার উত্তম ব্যবহার পাওয়ার সর্বাধিক হক্বদার কে? তিনি বললেন, তোমার মাতা। সে বলল, তারপর কে? তিনি আবার বললেন, তোমার মাতা। অতঃপর লোকটি বলল, তারপর কে? রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমার মাতা। লোকটি আবার বলল, তারপর কে? রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমার পিতা (মুসলিম হা/৬৬৬৪)।
20- عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَا أَبَا هُرَيْرَةَ كُنْ وَرِعًا تَكُنْ أَعْبَدَ النَّاسِ وَكُنْ قَنِعًا تَكُنْ أَشْكَرَ النَّاسِ وَأَحِبَّ لِلنَّاسِ مَا تُحِبُّ لِنَفْسِكَ تَكُنْ مُؤْمِنًا وَأَحَسِنْ جِوَارَ مَنْ جَاوَرَكَ تَكُنْ مُسْلِمًا وَأَقِلَّ الضَّحِكَ فَإِنَّ كَثْرَةَ الضَّحِكِ تُمِيتُ الْقَلْبَ.
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ) বলেন, হে আবু হুরায়রা! আল্লাহভীরুতা অর্জন কর, তাহলে তুমি মানুষদের মধ্যে থেকে সর্বাধিক ইবাদতগুযার হবে। অল্পে তুষ্ট থাক, তাহলে তুমি মানুষদের মধ্যে সর্বাধিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী হবে। তুমি তোমার নিজের জন্য যা পসন্দ কর, অন্যের জন্য তাই পসন্দ কর, তাহলে তুমি মুমিন হবে। তুমি তোমার প্রতিবেশীর নিকট উত্তম প্রতিবেশী হও, তাহলে তুমি প্রকৃত মুসলিম হতে পারবে। আর কম হসো, কেননা অধিক হাসিতে অন্তর মরে যায়’ (ইবনু মাজাহ হা/৪২১৭; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৫০৬)।
২১- عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ بَيْنَمَا رَجُلٌ يَمْشِى بِطَرِيقٍ وَجَدَ غُصْنَ شَوْكٍ عَلَى الطَّرِيقِ فَأَخَّرَهُ ، فَشَكَرَ اللَّهُ لَهُ ، فَغَفَرَ لَهُ.
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে চলার সময় রাস্তায় পড়ে থাকা একটা কাঁটাযুক্ত ডাল দেখে তা সরিয়ে ফেলল। আল্লাহ তা‘আলা তার এ কাজ সাদরে কবুল করলেন অতঃপর তার গুনাহ মাফ করে দিলেন (বুখারী হা/৬৫২; ৫০৪৯)।
22- عَنْ أَبِى ذَرٍّ قَالَ قَالَ لِىَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم لاَ تَحْقِرَنَّ مِنَ الْمَعْرُوفِ شَيْئًا وَلَوْ أَنْ تَلْقَى أَخَاكَ بِوَجْهٍ طَلْقٍ.
আবু যার (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) আমাকে বলেছেন, ‘তুমি কোন সৎ কাজকে ছোট মনে কর না, যদি তুমি তোমার অপর ভাইয়ের সাথে সহাস্য বদনে সাক্ষাৎও কর’ (মুসলিম হা/৬৮৫৭; মিশকাত হা/১৮৯৪)।
23- عَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ صُنِعَ إِلَيْهِ مَعْرُوفٌ فَقَالَ لِفَاعِلِهِ جَزَاكَ اللَّهُ خَيْرًا فَقَدْ أَبْلَغَ فِى الثَّنَاءِ.
উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, কাউকে অনুগ্রহ করা হলে সে যদি অনুগ্রহকারীকে বলে, আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন, তবে সে উপযুক্ত ও পরিপূর্ণ প্রশংসা করল (তিরমিযী হা/২০৩৫; মিশকাত হা/৩০২৪, সনদ ছহীহ)।
মনীষীদের বক্তব্য থেকে :
১. হাসান বাছরী (রহঃ) বলেন, ‘অঙ্গসজ্জা ও আশা-আকাঙ্খায় ঈমান নেই। বরং অন্তরসমূহ যাকে প্রশান্ত করে এবং আমলসমূহ যাকে সত্যায়ণ করে তা-ই ঈমান। যে ব্যক্তি অসৎ আমল করে আল্লাহ ঐ ব্যক্তির উপর তা ফিরিয়ে দেন।
২. ওছমান ইবনু আফ্ফান (রাঃ) অবরুদ্ধ থাকার সময় ওবাইদুল্লাহ ইবনু আদী (রহঃ) তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনিই জনগণের ইমাম। আর আপনার বিপদ আপনি নিজেই বুঝতে পারছেন। এখন আমাদের ইমামতি করছে বিদ্রোহীদের নেতা। ফলে আমরা গুনাহগার হওয়ার আশংকা করছি। তখন তাকে লক্ষ্য করে ওছমান (রাঃ) বলেন, মানুষের আমলের মধ্যে ছালাত হল সর্বোত্তম। কাজেই লোকেরা যখন উত্তম কাজ করে, তখন তুমিও তাদের সাথে উত্তম কাজে অংশ নিবে। আর যখন তারা মন্দ কাজে লিপ্ত হবে, তখন তাদের মন্দ কাজ হতে বেঁচে থাকবে।
সারবস্ত্ত
১. সৎকর্মশীল ব্যক্তি তার সৎকর্মের দ্বারা আল্লাহর ভালবাসা অর্জন করেন।
২. সৎকর্মশীলদের জন্য পরকালে মহান প্রতিদান রয়েছে। তারা ভয় ও চিন্তা থেকে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করবেন।
৩. সৎকর্মশীল ব্যক্তি আল্লাহর রহমতের অতি নিকটে ।
৪. সৎকর্মশীল ব্যক্তির জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণের সুসংবাদ রয়েছে।
৫. বয়স, সম্পদ ও পরিবারে বরকত হাছিলের মাধ্যম হল সৎকর্ম।
৬. অন্তরের কদর্য এবং খারাপ বুঝ, ধারণা ও অন্যান্য অনিষ্টতা দূর করার মাধ্যম হল ইহসান।
৭. আল্লাহ তা‘আলার ভয়-ভীতি উপলব্ধির মাধ্যম যেমন সৎকর্ম, তেমনি মহান আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশারও মাধ্যম।
৮. সৎকর্ম এমন এক রাস্তা, যা তার সাথীকে ইলম অর্জনের পথ সহজ করে দেয় এবং তাতে জ্ঞানের ঝর্ণা প্রবাহিত করে।