ভ্রান্ত আক্বীদা : পর্ব-১
মুযাফফর বিন মুহসিন
(৩) আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রূযীদাতা বলে স্বীকার করা; কিন্তু যাবতীয় ইবাদতের যোগ্য বলে গ্রহণ না করা :
পর্যালোচনা : মানুষ ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করার মৌলিক উদ্দেশ্য হল, তারা জীবনের সর্বক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহরই দাসত্ব করবে। অর্থাৎ সকল কাজকর্মে আল্লাহর এককত্ব প্রমাণ করবে। আরবীতে এটাকে বলা হয় ‘তাওহীদে উলূহিয়াহ’। আল্লাহর এই মৌলিক অধিকার আদায়ে অধিকাংশ মানুষ ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। তারা তাদের দাসত্বকে কিছু আল্লাহর জন্য আর কিছু সৃষ্টির জন্য নির্ধারণ করেছে। যেমন মসজিদে গিয়ে ছালাত আদায়ের সময় আল্লাহকে সিজদা করে। কিন্তু কোন কিছু চাওয়া ও প্রার্থনার জন্য মাযার, খানকা, মূর্তি, কবর, গাছ, পাথর ও তীর্থস্থানে যায়। সেখানে কোটি কোটি টাকা, গরু, ছাগল ইত্যাদি মানত করে। যেমন রাজনৈতিক ব্যক্তিরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও শুভ কাজের সূচনার জন্য প্রতিকৃতি, স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার, শিখা চিরন্তন, শিখা অনির্বাণে যায় এবং ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। এছাড়া নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে বিভিন্ন মাযার ও খানকা থেকে। এভাবে বিভিন্ন জড় বস্ত্তর পূজা করে থাকে। অথচ ইবাদত করতে হবে একমাত্র আল্লাহর। যাবতীয় প্রার্থনা, ইবাদত, মানত, দু‘আ সবই পেশ করতে হবে এক আল্লাহর শানে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ ‘আমি জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি এই জন্য যে, তারা একমাত্র আমারই ইবাদত করবে’ (যারিয়াত ৫৬)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُوْلٍ إِلَّا نُوْحِىْ إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُوْنِ ‘আমরা আপনার পূর্বে যে রাসূলকেই প্রেরণ করেছি, তাঁর কাছেই অহি করেছি যে, আমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। সুতরাং তোমরা একমাত্র আমারই ইবাদত কর’ (আম্বিয়া ২৫)। এছাড়া আমরা যখন সূরা ফাতিহা পাঠ করি তখন আল্লাহর প্রশংসা ও বড়ত্ব প্রকাশের পর বলি- إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ ‘একমাত্র আপনারই ইবাদত করি এবং একমাত্র আপনার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি’ (ফাতিহা ৫)।
উক্ত তিনটি আয়াতে বর্ণিত ‘ইবাদত’ করার অর্থ হল ‘তাওহীদ প্রতিষ্ঠা’ করা।[1] অর্থাৎ মানুষ তার জীবনের সকল কর্মে আল্লাহকে একক বলে প্রমাণ করবে। শুধু ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ, যাকাত, ছাদাক্বার ক্ষেত্রে নয়; বরং সমাজনীতি, অর্থনীতি, রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ প্রদত্ত বিধান নিঃসঙ্কোচে মেনে নিবে এবং পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করবে। যদি উক্ত ক্ষেত্র সমূহে আল্লাহর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে না পারি, তবে জানতে হবে তাওহীদকে মেনে নেওয়ার ব্যাপারে ত্রুটি রয়েছে। বুঝতে হবে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু’ বলে সাক্ষ্য প্রদানে ঘাটতি রয়েছে। এ ধরনের দ্বিমুখী বিশ্বাস যার মাঝে বিদ্যমান রয়েছে তার আক্বীদায় শিরকের সংমিশ্রণ রয়েছে। তার আমল শিরক ও বিদ‘আতে নিমজ্জিত। তাই যাবতীয় কাজকর্মে আল্লাহ তা‘আলাকে একক গণ্য করা এবং চূড়ান্তভাবে মেনে নেওয়ার বিষয়টিই সর্বাগ্রে পরিষ্কার করতে হবে। নিমেণর হাদীছটি গভীরভাবে উপলব্ধির দাবী রাখে :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لَمَّا بَعَثَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُعَاذًا نَحْوَ الْيَمَنِ قَالَ لَهُ إِنَّكَ تَقْدَمُ عَلَى قَوْمٍ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ فَلْيَكُنْ أَوَّلَ مَا تَدْعُوْهُمْ إِلَى أَنْ يُوَحِّدُوا اللَّهَ تَعَالَى فَإِذَا عَرَفُوا ذَلِكَ فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللَّهَ فَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِىْ يَوْمِهِمْ وَلَيْلَتِهِمْ فَإِذَا صَلُّوْا فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللَّهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ زَكَاةً فِىْ أَمْوَالِهِمْ تُؤْخَذُ مِنْ غَنِيِّهِمْ فَتُرَدُّ عَلَى فَقِيْرِهِمْ فَإِذَا أَقَرُّوْا بِذَلِكَ فَخُذْ مِنْهُمْ وَتَوَقَّ كَرَائِمَ أَمْوَالِ النَّاسِ.
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) যখন মু‘আয (রাঃ)-কে ইয়ামানে পাঠালেন, তখন তিনি তাকে বললেন, তুমি আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের নিকট যাচ্ছ। সুতরাং তাদেরকে প্রথম আহবান করবে, তারা যেন আল্লাহ তা‘আলার একত্বকে মেনে নেয়। যদি তারা তা স্বীকার করে তবে তাদেরকে বলবে, আল্লাহ তাদের উপর দিনে-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতকে ফরয করেছেন। তারা যদি ছালাত আদায় করে তবে তাদেরকে জানাবে, আল্লাহ তাদের উপর যাকাত ফরয করেছেন, যা ধনীদের নিকট থেকে আদায় করা হবে এবং গরীবদের মাঝে বিতরণ করা হবে। তারা যদি এটা মেনে নেয় তাহলে তাদের নিকট থেকে তা গ্রহণ করবে। তবে মানুষের সম্পদের মূল্যের ব্যাপারে সাবধান থাকবে ।[2]
উক্ত হাদীছে প্রথম শর্ত করা হয়েছে- আল্লাহ তা‘আলার একত্ব প্রমাণ করা। এটা মনেপ্রাণে গ্রহণ করার পর দ্বিতীয়টির প্রসঙ্গ আসবে। কিন্তু তাওহীদকে মেনে নেওয়ার গুরুত্ব যেমন আমাদের মাঝে নেই, তেমনি উক্ত হাদীছের ধারাবাহিকতার অনুভূতিও নেই। কারণ প্রথম শর্ত পূরণ না হলে অন্যগুলো যে মূল্যহীন তার বুঝ আমাদের নেই। ভিত স্থাপন না করে শূন্যের উপরে ভিত গড়ার আমরা চেষ্টা করি না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَمَا أُمِرُوْا إِلَّا لِيَعْبُدُوْا إِلَهًا وَاحِدًا لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ سُبْحَانَهُ عَمَّا يُشْرِكُوْنَ ‘তাদের প্রতি শুধু আদেশ করা হয়েছে, তারা একমাত্র এক আল্লাহর ইবাদত করবে, যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তারা যা অংশীদার স্থির করে তা থেকে তিনি মহাপবিত্র’ (তওবা ৩১)। অন্যত্র বলেন, وَمَا أُمِرُوْا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ حُنَفَاءَ وَيُقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِيْنُ الْقَيِّمَةِ ‘তাদেরকে কেবল আদেশ দেয়া হয়েছে, তারা বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে শুধু আল্লাহর ইবাদত করবে এবং ছালাত আদায় করবে ও যাকাত প্রদান করবে। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন’ (বাইয়েনাহ ৫)।
(৪) আল্লাহর ফায়ছালা প্রত্যাখ্যান করে ত্বাগূতের ফায়ছালা গ্রহণ করা :
পর্যালোচনা : আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা ফায়ছালাই হল চূড়ান্ত ফায়ছালা। আল্লাহ মানুষের স্রষ্টা। তিনিই সবচেয়ে ভাল জানেন কোথায় মানুষের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তাই কোন মানুষ আল্লাহর আইন ব্যতীত আল্লাহদ্রোহী ত্বাগূতের রচনা করা কোন আইনকে বিশ্বাস করতে পারে না, মানতেও পারে না। উক্ত নির্দেশ কার্যকর করার জন্য আল্লাহ প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক জনপদে নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন।
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِىْ كُلِّ أُمَّةٍ رَسُوْلًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَ.
‘আমরা প্রত্যেক উম্মতের মাঝে রাসূল পাঠিয়েছি এই জন্য যে, তারা যেন নির্দেশ দেন- তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং ত্বাগূতকে বর্জন কর’ (নাহল ৩৬)।
দুঃখজনক হল, আমরা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু’-এর অর্থ যেমন বুঝি না, তেমনি ত্বাগূতের অর্থও বুঝি না। যতক্ষণ ত্বাগূত বা মানব রচিত মতবাদকে অস্বীকার না করা হবে, তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান না নেয়া হবে এবং তাকে উৎখাত ও প্রতিরোধ করার জন্য সংগ্রাম অব্যাহত না রাখবে, ততক্ষণ আল্লাহর একত্ব প্রমাণিত হবে না। সুতরাং প্রচলিত মা‘বূদগুলোকে আগে সম্পূর্ণরূপে বিতাড়িত করতে হবে, নাকচ করতে হবে। তারপর এক আল্লাহকে স্থান দিতে হবে। কারণ বিষের মধ্যে দুধ ঢেলে কোন লাভ নেই। আলকাতরার মাঝে ঘি রেখে কোন ফায়েদা নেই। এ জন্য ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু’-এর অর্থ সে সময় মক্কার মূর্তিপূজারী মুশরিকরা বুঝেছিল। তাই তারা রাসূল (ছাঃ)-কে পাথর মেরেছিল। তারা বুঝেছিল যে, এই বাক্য উচ্চারণ করলে বাপ-দাদার প্রতিষ্ঠিত জাহেলী যুগের ধর্ম আর চলবে না। সব বাতিল প্রমাণিত হবে।
বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ উক্ত বাক্য অনর্গল উচ্চারণ করে। কিন্তু গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, জাতীয়তাবাদ বিভিন্ন শিরকী ধর্ম ও মতবাদের আইন-কানূন, নিয়ম-নীতি ও আদর্শ মেনে চলছে। অথচ এগুলো সব ত্বাগূতী বিধান ও শিরকের শিখ-ী, যা রাজনীতির নামে চলছে। অনুরূপ ছূফীবাদী কুমন্ত্রণা, পীর-মুরীদী ধোঁকাবাজী, মারেফতী শয়তানী, মাযহাবী ফেতনা, তরীক্বার নষ্টামি, ইলিয়াসী ফযীলত, মওদূদী থিওরি ইত্যাদি মতবাদের নীতি-আদর্শ স্রেফ ধর্মের নামে লুকোচুরি। উপরিউক্ত উভয় প্রকার ত্বাগূতী ফায়সালাকে যতক্ষণ অস্বীকার না করবে, ততক্ষণ কেউ আল্লাহ তা‘আলার শক্ত হাতলকে ধারণ করতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
لَا إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ قَدْ تَبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّ فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ وَيُؤْمِنْ بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى لَا انْفِصَامَ لَهَا وَاللَّهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ.
‘দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই। নিশ্চয় ভ্রষ্টতা হতে হেদায়াত স্পষ্ট হয়ে গেছে। সুতরাং যে ব্যক্তি ত্বাগূতকে অস্বীকার করল এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করল, সে সুদৃঢ় হাতলকে শক্ত করে ধরল, যা কখনো বিচ্ছিন্ন হবার নয়। আল্লাহ সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞানী’ (বাক্বারাহ ২৫৬)। অতএব ত্বাগূতকে অস্বীকার করা ছাড়া মুমিনের জন্য অন্য কোন পথ খোলা নেই।
কিন্তু বড় পরিতাপের বিষয় হল, উপরিউক্ত শিরকী ও কুফুরী কর্মকা-- জড়িত থাকার পরও অসংখ্য মানুষ নিজেদেরকে ঈমানদার মনে করে। অথচ তারা শয়তানের আনুগত্য করে থাকে। শয়তান তাদেরকে ধোঁকায় ফেলেছে এবং পথভ্রষ্ট করেছে। আল্লাহ বলেন,
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِيْنَ يَزْعُمُوْنَ أَنَّهُمْ آمَنُوْا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيْدُوْنَ أَنْ يَتَحَاكَمُوْا إِلَى الطَّاغُوْتِ وَقَدْ أُمِرُوْا أَنْ يَكْفُرُوْا بِهِ وَيُرِيْدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيْدًا.
‘আপনি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করেননি, যারা মনে করে যে, আপনার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা নাযিল করা হয়েছে তার প্রতি তারা বিশ্বাস করে- অথচ তারা তাদের ফায়ছালা ত্বাগূতের কাছে কামনা করে। যদিও তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তারা যেন ত্বাগূতকে অস্বীকার করে। মূলতঃ শয়তান তাদেরকে দূরতম বিভ্রান্তিতে ফেলতে চায়’ (নিসা ৬০)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللَّهِ إِلَّا وَهُمْ مُشْرِكُوْنَ ‘তাদের অধিকাংশই আল্লাহকে বিশ্বাস করে; কিন্তু তাঁর সাথে শরীক স্থাপন করে’ (ইউসুফ ১০৬)। তাই ত্বাগূতের সাথে আপোস করে ঈমানদার হওয়ার দাবী করে কোন ফায়েদা নেই। বরং ত্বাগূতকে প্রত্যাখ্যান করতে পারলেই আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ রয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন, وَالَّذِيْنَ اجْتَنَبُوا الطَّاغُوْتَ أَنْ يَعْبُدُوْهَا وَأَنَابُوْا إِلَى اللَّهِ لَهُمُ الْبُشْرَى فَبَشِّرْ عِبَادِ ‘যারা ত্বাগূতের পূজা থেকে দূরে থাকে এবং আল্লাহর দিকে ধাবিত হয় তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ। সুতরাং আপনি আমার বান্দাদেরকে সুসংবাদ প্রদান করুন’ (যুমার ১৭)।
(৫) ধর্মীয় জীবন ও বৈষয়িক জীবন বলে দুনিয়াবী যিন্দেগীকে ভাগ করা এবং বৈষয়িক জীবনকে ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা :
পর্যালোচনা : সমাজের অধিকাংশ রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী মানুষ মনে করে ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি ধর্মীয় দিক সম্পর্কে আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে। কিন্তু রাজনীতি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি, চাকরি, কৃষি, ডাক্তারী ইত্যাদি বৈষয়িক ব্যাপারে আল্লাহর কাছে কোন জবাবদিহি করা লাগবে না। অন্যায়, অত্যাচার, প্রতারণা, চুরি-ডাকাতি, আত্মসাৎ, হত্যা, গুম, যেনা-ব্যভিচার, সূদ-ঘুষ, জুয়া-লটারী, নেশা, মওজুদদারী, মোনাফাখরী প্রভৃতি সব দুনিয়াবী ব্যাপার। এতে কোন জবাবদিহিতা নেই। মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও যারা এই আক্বীদা পোষণ করে তারা পাশ্চাত্যের চর, অমুসলিমদের ক্রীড়নক, ইহুদী-খ্রীস্টানদের দালাল, আল্লাহদ্রোহী। শিক্ষিত হলেও তারা নিম্নশ্রেণীর মূর্খ ও সমাজের নিকৃষ্ট প্রাণী, পাপাচারের শিখ-ী। তাদেরকে বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ, রাজনীতিক বলাই পাপ। কারণ তারাই দেশকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে। আল্লাহভীতি, পরকালভীতি, জবাবদিহিতা নেই বলেই ক্ষমতা ও অস্ত্রের বলে যাবতীয় দুর্নীতি, অন্যায় তারাই করে থাকে। সেজন্য এগুলোর বিরুদ্ধে আলোচনা করলেই বলা হয়, এগুলো ধর্মীয় আলোচনায় আসবে কেন? এগুলো তো রাজনৈতিক ব্যাপার। অথচ ইসলামে ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ, যাকাতের বিধান যেমন আছে, তেমনি রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি, ব্যবসারও বিধান রয়েছে। তারা ঠিকই জানেন যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) হলেন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক, সর্বশ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদ, সর্বশ্রেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ, সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। কিন্তু স্বীকার করেন না। কারণ তাদের অন্তরটা ইবলীস শয়তানের স্বর্গরাজ্য। আল্লাহ বলেন, তাদের চক্ষু অন্ধ নয়, বরং অন্ধ তাদের হৃদয় (হজ্জ ৪৬)। এভাবেই নমরূদ, ফেরআউন, হামান, কারূণ, আবু জাহল, আবু লাহাবরা যুগে যুগে জনগণকে শোষণ করেছে। অবশ্য তাদেরও শেষ রক্ষা হয়নি। লাঞ্ছিত হয়ে কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। স্বার্থের কারণে মুসলিম জীবনকে উক্ত দুই শ্রেণীতে ভাগ করা তাদেরই শিক্ষা ও সবক। আল্লাহ বলেন,
إِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيُرِيْدُوْنَ أَنْ يُفَرِّقُوْا بَيْنَ اللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيَقُوْلُوْنَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَيُرِيْدُوْنَ أَنْ يَتَّخِذُوْا بَيْنَ ذَلِكَ سَبِيْلًا- أُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ حَقًّا وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِيْنَ عَذَابًا مُهِيْنًا.
‘নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও রাসূলগণের সাথে কুফুরী করে, তাদের মাঝে পার্থক্য করার ইচ্ছা করে এবং যারা বলে, আমরা শরী‘আতের কিছু বিষয়ের প্রতি ঈমান আনব আর কিছু বিষয়কে অস্বীকার করব, এছাড়া যারা মধ্যবর্তী পথ অবলম্বন করতে চায়, তারাই প্রকৃত কাফের। আর আমরা কাফেরদের জন্য অপমানজনক শাস্তি প্রস্ত্তত করে রেখেছি’ (নিসা ১৫০-১৫১)।
মূলতঃ মানুষের জীবনে অনেকগুলো কর্মক্ষেত্র থাকলেও প্রত্যেকটিই পরিচালিত হবে আল্লাহ প্রদত্ত চূড়ান্ত সংবিধান পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের মাধ্যমে। যেমন একজন মানুষের শরীরের অনেক অঙ্গ-প্রতঙ্গ রয়েছে। প্রত্যেকটির কাজ ভিন্ন ভিন্ন হলেও সবগুলোই পরিচালিত হয় হেড অফিস মাথা থেকে। অনুরূপ একটি দেশে নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হলেও সবকিছুই সংঘটিত হয় একক সংবিধানের আলোকে। যদি কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংস্থা সেই সংবিধান বা তার ধারা অমান্য করে, তবে তা হয় দ-নীয় অপরাধ। যদি সাধারণ কোন প্রতিষ্ঠান গঠনতন্ত্র কিংবা সংবিধান ছাড়া না চলে, তবে সমগ্র মানব জাতি সংবিধান ছাড়া কিভাবে পরিচালিত হবে? আর আল্লাহ প্রদত্ত সেই চূড়ান্ত সংবিধান লংঘন করলে কী ধরনের অপরাধ হতে পারে? তাই প্রত্যেক উম্মতের উপর ফরয দায়িত্ব হল, পরিপূর্ণভাবে আল্লাহ প্রদত্ত সংবিধানের অনুসরণ করা। আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا ادْخُلُوْا فِى السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِيْنٌ- فَإِنْ زَلَلْتُمْ مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَتْكُمُ الْبَيِّنَاتُ فَاعْلَمُوْا أَنَّ اللَّهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ.
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা পূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ কর এবং শয়তানের রাস্তা সমূহের অনুসরণ কর না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। তোমাদের নিকট স্পষ্ট দলীল আসার পরেও যদি পদস্খলিত হও, তাহলে জেনে রেখো- আল্লাহ মহা পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়’ (বাক্বারাহ ২০৮ ও ২০৯)।
উক্ত আয়াত প্রমাণ করে যে, ইসলামের প্রত্যেকটি বিধানকেই গ্রহণ করতে হবে। কিছু গ্রহণ করব আর কিছু প্রত্যাখ্যান করব তা হবে না। কারণ ইসলাম ছাড়া আর যারই অনুসরণ করা হোক তা হবে শয়তানের অনুসরণ, যা উক্ত আয়াতে পরিষ্কার করা হয়েছে। সুতরাং যে ব্যক্তি ইসলামের বিধান কিছু মানবে আর শয়তান বা ত্বাগূতের কিছু বিধান মানবে, তার পরিণাম হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। আল্লাহ বলেন,
أَفَتُؤْمِنُوْنَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُوْنَ بِبَعْضٍ فَمَا جَزَاءُ مَنْ يَفْعَلُ ذَلِكَ مِنْكُمْ إِلَّا خِزْيٌ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّوْنَ إِلَى أَشَدِّ الْعَذَابِ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ- أُولَئِكَ الَّذِيْنَ اشْتَرَوُا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا بِالْآخِرَةِ فَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلَا هُمْ يُنْصَرُوْنَ.
‘তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশের প্রতি ঈমান আনয়ন করবে, আর কিছু অংশের সাথে কুফরী করবে? তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করবে তাদের জন্য দুনিয়াবী জীবনে লাঞ্ছনা রয়েছে এবং ক্বিয়ামতের দিন তাদেরকে কঠোর শাস্তিতে নিক্ষেপ করা হবে। আর তোমরা যা কর সে বিষয়ে আল্লাহ অমনোযোগী নন। এরাই পরকালের বিনিময়ে দুনিয়াবী জীবনকে খরিদ করে নিয়েছে। অতএব তাদের শাস্তি হালকা করা হবে না এবং তাদেরকে সাহায্যও করা হবে না’ (বাক্বারাহ ৮৫ ও ৮৬)।
অতএব মানুষের জীবনের কোন ক্ষেত্রকে আল্লাহর হুকুমের আওতামুক্ত করা যাবে না। সে যখন যে ক্ষেত্রে অবস্থান করবে তখন সেই স্থানের শারঈ নীতি নিরঙ্কুশভাবে অনুসরণ করবে। একজন ব্যবসায়ী শরী‘আতের বিধান মেনেই ব্যবসা করবেন। যেমন- (ক) হালাল মালের ব্যবসা করবেন।[3] চুরি বা আত্মসাৎ করা কোন মালের ব্যবসা করবেন না। কিংবা মদ, গাঁজা, চুয়ানি, ফেন্সিডিল, বিড়ি, সিগারেট, জর্দা, তামাক, গুলসহ যাবতীয় মাদকদ্রব্য বর্জন করবেন। কারণ এগুলোর ব্যবসা করা পরিষ্কার হারাম।[4] (খ) সূদী লেনদেন থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকবেন।[5] যেমন শেয়ার বাজার, সূদী ব্যাংক, বীমা, সংস্থার সাথে সম্পৃক্ত থাকা, জমি বন্ধক নেয়া বা দেয়া, ফল পুষ্ট না হতেই বাগানের পাতা ক্রয়-বিক্রয় করা কিংবা পাঁচ/দশ বছরের চুক্তিতে ফলের বাগান ক্রয়-বিক্রয় করা।[6] (গ) ঘুষ ও প্রতারণার আশ্রয় নিবেন না, যা বর্তমান ব্যবসার মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।[7] যেমন- মাপে কম দেয়া, খারাপ মালকে ভাল বলে চালিয়ে দেয়া ইত্যাদি (ঘ) মূল্য বৃদ্ধির জন্য কোন মাল মওজূদ রাখবেন না। অর্থাৎ মওজুদদারী নীতি গ্রহণ করবেন না। এটা হারাম।[8] (ঙ) বাজার মূল্যের অধিক লাভ গ্রহণ করবেন না এবং সুযোগে মূল্য বৃদ্ধি করবেন না। অর্থাৎ মুনাফাখোর বনে যাবেন না। উক্ত নীতির উপর অটল থাকতে না পারলে তিনি এ ধরনের ব্যবসা থেকে ফিরে আসবেন। কারণ এগুলোর ব্যত্যয় ঘটলে আল্লাহর বিধানকে লংঘন করা হবে।
অনুরূপভাবে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি শরী‘আতের অনুসরণ করেই রাজনীতির ময়দানে বিচরণ করবেন। মিথ্যা, প্রতারণা ও শঠতার রাজনীতি করবেন না। অর্থ ও নেতৃত্বের নেশায় মানুষ হত্যা করে ক্ষমতা দখল করার জন্য মত্ত হবেন না। সন্ত্রাসীদের মত অস্ত্রের মহড়া দেখিয়ে ত্রাসের রাজ্য কায়েম করবেন না। যেমন- (ক) রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে রাসূল (ছাঃ) ও খোলাফায়ে রাশেদীনের পদ্ধতি অনুসরণ করবেন। এক্ষেত্রে মানব রচিত আধুনিক বা প্রাচীন কোন পদ্ধতি বা থিওরিকে সমর্থন ও গ্রহণ করবেন না। (খ) আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে তিনি শারঈ আইন প্রয়োগ করবেন এবং এর পক্ষে জনমত সৃষ্টি করবেন। আল্লাহ প্রদত্ত আইনের বিরোধিতা করে নতুন কোন আইন রচনা করবেন না। কারণ তিনি আইন প্রণেতা নন; বরং আইনের প্রয়োগকারী মাত্র। মূলতঃ আইন প্রণেতা হলেন আল্লাহ। তাঁর আইনকে উপেক্ষা করে কোন আইন ও বিধান তৈরির অধিকার কারো নেই। এটা করলে আল্লাহর অধিকারের উপর হঠকারিতা করা হবে। ঐ শুনুন আল্লাহর হুঁশিয়ারী-
أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوْا لَهُمْ مِنَ الدِّيْنِ مَا لَمْ يَأْذَنْ بِهِ اللَّهُ وَلَوْلَا كَلِمَةُ الْفَصْلِ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ وَإِنَّ الظَّالِمِيْنَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ.
‘তাদের কি এমন কিছু শরীক আছে, যারা তাদের জন্য আইন প্রণয়ন করে, যে বিষয়ে আল্লাহ অনুমতি দেননি? (ক্বিয়ামতের) ফায়ছালার ঘোষণা না থাকলে তাদের বিষয়ে ফায়ছালা হয়েই যেত। নিশ্চয় সীমালংঘনকারীদের জন্য কঠোর শাস্তি বিদ্যমান’ (শূরা ২১)। আল্লাহ প্রণীত আইনকে উপেক্ষা করা এবং নতুন আইন রচনা করা কত বড় অন্যায় তা উক্ত আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।
(গ) মুসলিম ব্যক্তি মাত্রই যেন ছালাত আদায় করে সে জন্য বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এবং সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে বাধা প্রদান করবেন। আল্লাহ তা‘আলা রাজনৈতিক ময়দানে আইন প্রয়োগের ধারাবাহিকতা উল্লেখ করে বলেন,
الَّذِيْنَ إِنْ مَكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوْا بِالْمَعْرُوْفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُوْرِ.
‘আমি যদি তাদেরকে পৃথিবীতে রাজত্ব দান করি তবে তারা ছালাত প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত দিবে, সৎকাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ হতে বাধা প্রদান করবে। আর সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর ইখতিয়ারে’ (হজ্জ ৪১)। অতএব রাজনৈতিক ময়দানে বিচরণকালে ছালাতই হবে প্রধান কর্মসূচী। কারণ যাবতীয় অন্যায়-অশ্লীলতা প্রতিরোধে ছালাতই সবচেয়ে বেশী কার্যকরী ঔষধ (আনকাবূত ৪৫)।
(ঘ) শরী‘আত বিরোধী প্রচলিত যাবতীয় মতবাদ ও দর্শন, নিয়ম-নীতি বাতিল ও উচ্ছেদ করবেন। যার জন্য আল্লাহ মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে প্রেরণ করেছিলেন। هُوَ الَّذِىْ أَرْسَلَ رَسُوْلَهُ بِالْهُدَى وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّيْنِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُوْنَ. ‘তিনিই তাঁর রাসূলকে হেদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, যেন তিনি সকল দ্বীনের উপর তাকে বিজয়ী করতে পারেন। যদিও তা মুশরিকরা অপসন্দ করে’ (ছফ্ফ ৯)। উক্ত আয়াতের হুকুম কার্যকর করার জন্য রাসূল (ছাঃ) মক্কা বিজয়ের দিন সর্বাগ্রে কা‘বা চত্বর থেকে ৩৬০টি মূর্তি অপসারণ করেন।[9] তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, ‘আমার রব আমাকে মূর্তি ভাঙ্গার জন্য প্রেরণ করেছেন’।[10] আলী (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলেন, ছবি-মূর্তি ও সৌধ নির্মাণ করা যত উঁচু কবর আছে সবগুলো ভেঙ্গে দাও। কোথাও যেন অবশিষ্ট না থাকে।[11] লাত, মানাত, উযযা, দেব-দেবী, পূর্বপুরুষ, গোত্রপ্রধান ও সমাজ নেতাদের দোহাই দিয়ে প্রণীত আইনকে বাতিল করে বলে দিলেন, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তোমরা তার আনুগত্য কর (আ‘রাফ ৩)।
অতএব রাজনৈতিক ব্যক্তি যদি উক্ত কর্মসূচী কার্যকর করতে অপারগ হন, তবে প্রচলিত মিথ্যা ও প্রতারণাপূর্ণ রাজনীতি থেকে ফিরে আসবেন। সেটাই হবে তার জন্য বড় রাজনীতি। কারণ তিনি আল্লাহর বিধান লংঘন করে ত্বাগূতের আইন ও বিধানের তাবেদারী করতে পারেন না। মুসলিম হিসাবে তিনি কেন শয়তানী নীতির সামনে মাথা নত করবেন? কেন তিনি নিজের পরকাল হারাবেন?
শরী‘আত বিরোধী গঠনতন্ত্র ও সংবিধান সম্পর্কে বিশেষ হুঁশিয়ারী :
পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ হল আল্লাহ প্রদত্ত সর্বশেষ ও চূড়ান্ত সংবিধান। তাই একে বাদ দিয়ে কেউ যদি পূর্বের কোন নবী ও কিতাবেরও অনুসরণ করে তবুও গ্রহণযোগ্য হবে না; বরং পথভ্রষ্ট হবে। যেমন-
عَنْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَتَى رَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِنُسْخَةٍ مِنَ التَّوْرَاةِ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللَّهِ هَذِهِ نُسْخَةٌ مِنَ التَّوْرَاةِ فَسَكَتَ فَجَعَلَ يقْرَأ وَوَجْهُ رَسُوْلِ اللهِ يَتَغَيَّرُ فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ ثَكِلَتْكَ الثَّوَاكِلُ مَا تَرَى مَا بِوَجْهِ رَسُوْلِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَنَظَرَ عُمَرُ إِلَى وَجْهِ رَسُوْلِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ أَعُوْذُ بِاللَّه مِنْ غَضَبِ اللهِ وَغَضَبِ رَسُوْلِهِ رَضِيْنَا بِاللَّهِ رَبًّا وَبِالْإِسْلَامِ دِيْنًا وَبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا فَقَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالَّذِىْ نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَوْ بَدَا لَكُمْ مُوْسَى فَاتَّبَعْتُمُوْهُ وَتَرَكْتُمُوْنِىْ لَضَلَلْتُمْ عَنْ سَوَاءِ السَّبِيْلِ وَلَوْ كَانَ حَيًّا وَأَدْرَكَ نُبُوَّتِىْ لَاتَّبَعَنِىْ.
জাবের (রাঃ) বলেন, ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) একদা তাওরাতের একটি কপি নিয়ে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এটি তাওরাতের কপি। একথা শুনে তিনি চুপ থাকলেন। তখন ওমর (রাঃ) পড়তে শুরু করলেন। রাসূল (ছাঃ)-এর চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেল। তখন আবুবকর (রাঃ) ওমরকে বললেন, তোমার ধ্বংস হৌক! তুমি কি রাসূল (ছাঃ)-এর চেহারার দিকে দেখছ না? তখন ওমর (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর মুখের দিকে তাকালেন। অতঃপর বললেন, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ক্রোধ হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমরা আল্লাহকে রব হিসাবে, ইসলামকে দ্বীন হিসাবে এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে নবী হিসাবে পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছি। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বললেন, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ রয়েছে, তার কসম করে বলছি, যদি আজ মূসা (আঃ) তোমাদের নিকটে আবির্ভূত হন আর তোমরা তার অনুসরণ কর এবং আমাকে পরিত্যাগ কর, তবুও তোমরা সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যাবে। আজ মূসা (আঃ) যদি বেঁচে থাকতেন আর আমার নবুওঅত পেতেন, তবে তিনিও আমার অনুসরণ করতেন’।[12] অন্য বর্ণনায় এসেছে, ওমর (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-কে বলেন,
إِنَّا نَسْمَعُ أَحَادِيْثَ مِنْ يَهُوْدَ تُعْجِبُنَا أَفْتَرَى أَنْ نَكْتُبَ بَعْضَهَا؟ فَقَالَ أَمُتَهَوِّكُوْنَ أَنْتُمْ كَمَا تَهَوَّكَتِ الْيَهُوْدُ وَالنَّصَارَى؟ لَقَدْ جِئْتُكُمْ بِهَا بَيْضَاءَ نَقِيَّةً وَلَوْ كَانَ مُوْسَى حَيًّا مَا وَسِعَهُ إِلَّا اتِّبَاعِىْ.
আমরা ইহুদীদের নিকটে অনেক কাহিনী শুনি, যা আমাদেরকে মুগ্ধ করে। আমরা কি সেগুলোর কিছু অংশ লিখে রাখব? তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, ইহুদী-খ্রীস্টানরা যেভাবে দিশেহারা হয়েছে তোমরা কি সেভাবে দিশেহারা হবে? অথচ আমি তোমাদের কাছে উজ্জ্বল ও পরিচ্ছন্ন দ্বীন নিয়ে এসেছি। শুনে রাখ, আজ মূসা (আঃ)ও যদি বেঁচে থাকতেন, তবুও তাঁর আমার অনুসরণ করা ছাড়া কোন গত্যন্তর থাকত না’।[13]
অতএব পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের উপস্থিতিতে আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হওয়া তাওরাত, ইঞ্জীল, যাবূরসহ অন্যান্য কিতাব যদি বাতিল হয়ে যায়, তাহলে মানুষের রচনা করা আল্লাদ্রোহী আইন কিভাবে বৈধ হতে পারে? তাই উক্ত সংবিধান বিরোধী যেকোন নীতিমালা, গঠনতন্ত্র, সংবিধান বাতিল বলে গণ্য হবে। আমরা আল্লাহ প্রদত্ত বিধান প্রত্যাখ্যান করে মানব রচিত মতবাদ গ্রহণের মাধ্যমে তাওহীদে রুবূবিয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহকে পূর্ণভাবে গ্রহণ করতে পারিনি।
আল্লাহর অধিকার ও তার গুরুত্ব :
আল্লাহর প্রতি দৃঢ় ঈমান পোষণ করা বা তাওহীদকে পোক্ত করার জন্য আলোচিত উক্ত তিনটি পর্যায়কে চূড়ান্ত করতে হবে। (ক) তাওহীদে রুবূবিয়াহ (খ) তাওহীদে উলূহিয়াহ, যা বর্তমান আলোচনায় স্পষ্ট হয়েছে এবং (গ) ‘তাওহীদে আসমা ওয়া ছিফাত’ যা প্রথম পর্বে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হয়েছে। উক্ত তিনটি বিষয় পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করলে আল্লাহর অধিকার পূর্ণভাবে আদায় হবে। আর এর পুরস্কার স্বরূপ বান্দা জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে এবং জান্নাত লাভে ধন্য হবে। নিমেণর হাদীছটি লক্ষণীয়-
عَنْ مُعَاذٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كُنْتُ رِدْفَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى حِمَارٍ يُقَالُ لَهُ عُفَيْرٌ فَقَالَ يَا مُعَاذُ هَلْ تَدْرِى حَقَّ اللَّهِ عَلَى عِبَادِهِ وَمَا حَقُّ الْعِبَادِ عَلَى اللَّهِ قُلْتُ اللَّهُ وَرَسُوْلُهُ أَعْلَمُ قَالَ فَإِنَّ حَقَّ اللَّهِ عَلَى الْعِبَادِ أَنْ يَعْبُدُوْهُ وَلاَ يُشْرِكُوْا بِهِ شَيْئًا وَحَقَّ الْعِبَادِ عَلَى اللَّهِ أَنْ لاَ يُعَذِّبَ مَنْ لاَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا.
মু‘আয (রাঃ) বলেন, আমি একদা রাসূল (ছাঃ)-এর গাধার পিছনে ছিলাম। তাকে বলা হত ‘উফাইর’। তখন তিনি আমাকে বললেন, হে মু‘আয! তুমি কি জান বান্দার প্রতি আল্লাহর অধিকার কী? আর আল্লাহর প্রতি বান্দার অধিকার কী? আমি বললাম, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই সর্বাধিক অবগত। তখন তিনি বললেন, বান্দার প্রতি আল্লাহর অধিকার হল, তারা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কোনকিছুকে শরীক করবে না। আর আল্লাহর প্রতি বান্দার অধিকার হল- যে বান্দা আল্লাহর সাথে শরীক করবে না তাকে শাস্তি না দেওয়া।[14]
আল্লাহ তা‘আলার অধিকারে যদি একটু ত্রুটি হয়ে যায়, তাহলে তার ফলাফল অত্যন্ত ভয়াবহ হবে। অর্থাৎ তাঁর সাথে কাউকে বা কোনকিছুকে শরীক করলে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। প্রথমতঃ ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ হবে। এই পাপ কখনো ক্ষমা হবে না। দ্বিতীয়তঃ সারা জীবনে অর্জিত নেকী ধ্বংস হয়ে যাবে। শিরকের পরিণাম সম্পর্কে নিমেণ কয়েকটি দলীল পেশ করা হল -
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيْدًا.
‘নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শরীক করবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না। তবে তিনি চাইলে ইহা ব্যতীত অন্য পাপ ক্ষমা করতে পারেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শরীক করবে সে দূরতম পথভ্রষ্ট হবে’ (নিসা ৪৮ ও ১১৬)। ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ বান্দার অন্যান্য যাবতীয় পাপ ক্ষমা করে দিবেন, যদি তার সাথে শরীক না করা হয়।[15] অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তারা যদি শিরক করে তাহলে তারা যা আমল করেছে সবই বাতিল হয়ে যাবে’ (আন‘আম ৮৮)। মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, ‘আপনি যদি শিরক করেন তবে অবশ্যই অবশ্যই আপনার আমল বাতিল হয়ে যাবে। আর আপনি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন’ (যুমার ৬৫)। হাদীছে শিরককে জান্নাত ও জাহান্নামের মূল প্রতিপাদ্য হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। শিরক না করলে জান্নাত, করলে জাহান্নাম।
عَنْ جَابِرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ثِنْتَانِ مُوجِبَتَانِ قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُوْلَ اللَّهِ مَا الْمُوْجِبَتَانِ قَالَ مَنْ مَاتَ لاَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ مَاتَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا دَخَلَ النَّارَ.
জাবের (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) একদা বলেন, দু’টি বিষয় অপরিহার্য। জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! উক্ত দু’টি বিষয় কী? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক না করে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি শরীক করে মারা যাবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।[16] তাই রাসূল (ছাঃ) অত্যন্ত কঠোর ভাষায় বলেন, لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ شَيْئًا وَإِنْ قُتِلْتَ وَحُرِّقْتَ ‘তুমি কোনকিছুকে আল্লাহর সাথে শরীক করো না, যদিও তোমাকে হত্যা করা এবং আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয়’।[17]
অতএব তাওহীদ বা আল্লাহর অধিকার আদায়ের ব্যাপারে সর্বদা সচেতন থাকতে হবে। বান্দা সৃষ্টিকর্তা, রূযীদাতা, পালনকর্তা হিসাবে যেভাবে আল্লাহকে বিশ্বাস করে তেমনি আইন ও বিধানদাতা হিসাবেও বিশ্বাস করবে। নিজের রুচি মোতাবেক কোন বিধান রচনা করবে না। আল্লাহ মনোনীত চূড়ান্ত জীবন বিধান ইসলামকে বাদ দিয়ে ইহুদী-খ্রীস্টানদের তৈরি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, জাতীয়তাবাদ, পুঁজিবাদ প্রভৃতি শিরকী মতবাদকে গ্রহণ করা যাবে না। অন্যথা তাওহীদের রুবূবিয়ার মাঝে শিরক প্রবেশ করবে, যা দুধের মধ্যে গোমূত্র বা চোনা ফেলার মত হবে। অনুরূপভাবে মাথা নত করা, সাহায্য চাওয়া, প্রার্থনা করা, দান করা, যবহ, মানতসহ যাবতীয় ইবাদতের জন্য একমাত্র আল্লাহকেই নির্ধারণ করতে হবে। খানকা, মাযার, কবর, গাছ, পাথর, মৃত পীর, শহীদ মিনার, প্রতিকৃতি, শিখা চিরন্তন, শিখা অনির্বাণে শ্রদ্ধা জানানো, সংসদে নীরবতা পালন, পতাকাকে সালাম দেওয়া, কুর্নিশ করা, ভাষা দিবস, শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, জন্ম দিবস, মৃত্যু দিবস ইত্যাদি দিনকে শ্রদ্ধা জানানো ও পূজা করা যাবে না। কারণ এর মাধ্যমে তাওহীদে ঊলূহিয়ার মাঝে শিরক প্রবেশ করবে। আল্লাহ আমাদেরকে পূর্ণভাবে নির্ভেজাল তাওহীদের আনুগত্য করার তাওফীক দান করুন- আমীন!!
[1]. তাফসীরে ইবনে কাছীর ১/১৩৫ পৃঃ; তাফসীরে কুরতুবী ১৭/৫৫ পৃঃ।
[2]. ছহীহ বুখারী হা/৭৩৭২, ‘তাওহীদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১।
[3]. মুসলিম হা/২৩৯৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২০; মিশকাত হা/২৭৬০, ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়।
[4]. বুখারী হা/২২৩৬, ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১১২; মুসলিম হা/৪১৩২, ‘মুসাক্বাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৩; মিশকাত হা/২৭৬৬; আবুদাঊদ হা/৩৪৮৮, সনদ ছহীহ।
[5]. বাক্বারাহ ২৭৫; মুসলিম হা/৪১৭৭; ইবনু মাজাহ হা/২২৭৪; মিশকাত হা/২৮০৭।
[6]. মুসলিম হা/৩৯৯৪; মিশকাত হা/২৮৩৬।
[7]. আবুদাঊদ হা/৩৫৮০; তিরমিযী হা/১৩৩৬; সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৩৭৫৩; মুসলিম হা/২৯৪, ‘ঈমান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪৫; মিশকাত হা/৩৫২০।
[8]. মুসলিম হা/৪২০৬, ‘মুসাক্বাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৬; মিশকাত হা/২৮৯২, ‘মওজুদ করা’ অনুচ্ছেদ; আহমাদ হা/৮৬০২; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৩৬২।
[9]. বুখারী হা/২৪৭৮, ১/৩৩৬ পৃঃ।
[10]. মুসলিম হা/১৯৬৭, ১/২৬৭ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৮০০)।
[11]. মুসলিম হা/২২৮৭, ১/৩১২ পৃঃ, (ইফাবা হা/২১১২); মিশকাত হা/১৬৯৬, পৃঃ ১৪৮।
[12]. দারেমী হা/৪৪৩; সনদ হাসান, মিশকাত হা/১৯৪, পৃঃ ৩২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৮৪, ১ম খ-, পৃঃ ১৩৫।
[13]. আহমাদ হা/১৫১৯৫; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/১৭৪; মিশকাত হা/১৭৭, ১/৩০ পৃঃ, সনদ হাসান, আলবানী, যিলালুল জান্নাহ হা/৫০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৬৮, ১ম খ-, পৃঃ ১২৯।
[14]. ছহীহ বুখারী হা/২৮৫৬, ‘জিহাদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪৬; মুসলিম হা/১৫৩, ‘ঈমান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১২; মিশকাত হা/২৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২২, ১ম খ-, পৃঃ ২৮।
[15]. তিরমিযী হা/৩৫৪০, ২/১৯৪ পৃঃ, সনদ ছহীহ, ‘দু‘আ সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১০৯; মিশকাত হা/২৩৩৬, ‘দু‘আ সমূহ’ অধ্যায়, ‘তওবা ও ইস্তিগফার’ অনুচ্ছেদ।
[16]. ছহীহ মুসলিম হা/২৭৯, ‘ঈমান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪২; মিশকাত হা/৩৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৪, ১ম খ-, পৃঃ ৩৪, ‘ঈমান’ অধ্যায়।
[17]. আহমাদ হা/২২১২৮, সনদ ছহীহ; আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/২০২৬; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৫১৬; মিশকাত হা/৬১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৫, ‘কাবীরা গোনাহ ও মুনাফেক্বীর নিদর্শন’ অনুচ্ছেদ।