পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের করণীয় (৫ম কিস্তি)

আব্দুর রহীম 9805 বার পঠিত

পিতা-মাতার মৃত্যু পরবর্তী অধিকার : পিতা-মাতা মৃত্যুর পরেও সন্তানের নিকট পরোক্ষভাবে সুন্দর আচরণ পাওয়ার অধিকার রাখেন। যেমন পিতা-মাতার বন্ধু-বান্ধবের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, তাদের জন্য দো‘আ করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা, তাদের অছিয়ত পূরণ করা, তাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করা, মানত পূর্ণ করা, ঋণ পরিশোধ করা, ক্বাযা ছওম পালন করা, বদলী হজ্জ আদায় করা, দান-ছাদাক্বাহ করা ইত্যাদি।

عَنْ أَبِى أُسَيْدٍ قَالَ بَيْنَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا جَاءَهُ رَجُلٌ مِنْ بَنِى سَلِمَةَ فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللهِ! هَلْ بَقِىَ مِنْ بِرِّ أَبَوَىَّ شَىْءٌ أَبَرُّهُمَا بِهِ بَعْدَ مَوْتِهِمَا قَالَ : نَعَمِ الصَّلاَةُ عَلَيْهِمَا وَالاِسْتِغْفَارُ لَهُمَا وَإِنْفَاذُ عَهْدِهِمَا مِنْ بَعْدِهِمَا وَصِلَةُ الرَّحِمِ الَّتِى لاَ تُوصَلُ إِلاَّ بِهِمَا وَإِكْرَامُ صَدِيقِهِمَا-

আবু উসাইদ (রাঃ) বলেন, আমরা নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এ সময় বনু সালমা গোত্রের এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করার কোন অবকাশ আছে কি? তিনি বলেন, হ্যাঁ, চারটি উপায় আছে। (১) তাদের জন্য দো‘আ করা, (২) তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা, (৩) তাদের প্রতিশ্রুতিসমূহ পূর্ণ করা এবং (৪) তাদের বন্ধু-বান্ধবদের সম্মান করা ও তাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করা, যারা তাদের মাধ্যমে তোমার আত্মীয়’।[1]

(ক) পিতা-মাতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা :

পিতা-মাতার জন্য সকলকে প্রার্থনা করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা পিতা-মাতার জন্য দো‘আ শিক্ষা দিয়েছেন এবং দো‘আ করার আদেশও দিয়েছেন। তিনি বলেন,

وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِيْ صَغِيْراً-

‘অনুকম্পায় তাদের প্রতি বিনয়াবনত থেকো এবং বল, (উচ্চারণ: রাবিবর হাম্হুমা কামা রাববাইয়া-নী ছাগীরা)

‘হে পালনকর্তা! তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন’ (বনী ইসরাঈল ১৭/ ২৪)। মৃত্যুর পর মানুষের তিনটি আমল জারী থাকে, তার মধ্যে সৎ সন্তানের দো‘আ সব থেকে বেশী গুরুত্বপূর্ণ।

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ:  إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন কোন মানুষ মারা যায়, তখন তার তিনটি আমল ব্যতীত সকল কর্ম বন্ধ হয়ে যায় (১) ছাদাক্বা জারিয়াহ, (২) উপকারী বিদ্যা এবং (৩) সৎ সন্তান যে তার জন্য দো‘আ করে’।[2] সন্তানের প্রার্থনার কারণে পিতা-মাতার সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়।

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ لَيَرْفَعُ الدَّرَجَةَ لِلْعَبْدِ الصَّالِحِ فِى الْجَنَّةِ فَيَقُولُ : يَارَبِّ أَنَّى لِى هَذِهِ فَيَقُولُ بِاسْتِغْفَارِ وَلَدِكَ لَكَ –

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে তাঁর কোন নেক বান্দার মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন। এ অবস্থা দেখে সে (নেক বান্দা) বলবে, হে আমার রব! আমার এ মর্যাদা কিভাবে বৃদ্ধি হ’ল? তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তোমার সন্তান-সন্ততি তোমার জন্য মাগফিরাত কামনা করার কারণে’।[3]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ تُرْفَعُ لِلْمَيِتِ بَعْدَ مَوْتِهِ دَرَجَتُهُ، فَيَقُولُ : أَيْ رَبِّ، أَيُّ شَيْءٍ هَذَا؟ فَيُقَالُ : وَلَدُكَ اسْتَغْفَرَ لَكَ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, মানুষের মৃত্যুর পর তার মর্যাদা      বৃদ্ধি করা হয়। তখন সে বলে, হে প্রভু! এটা কি জিনিস? তাকে বলা হয়, তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছে’।[4]

عَنْ مُحَمَّدِ بْنْ سِيرِينَ: كُنَّا عِنْدَ أَبِي هُرَيْرَةَ لَيْلَةً، فَقَالَ: اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِأَبِي هُرَيْرَةَ، وَلِأُمِّي، وَلِمَنِ اسْتَغْفَرَ لَهُمَا قَالَ لِي مُحَمَّدٌ: فَنَحْنُ نَسْتَغْفِرُ لَهُمَا حَتَّى نَدْخُلَ فِي دَعْوَةِ أَبِي هُرَيْرَةَ-

প্রখ্যাত তাবেঈ মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন (রহঃ) বলেন, এক রাতে আমরা আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ! আবু হুরায়রাকে, আমার মাকে এবং তাদের দু’জনের জন্য যারা ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাদের সকলকে তুমি ক্ষমা কর’। মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন (রহঃ) বলেন, আমরা তার দো‘আয় শামিল হওয়ার আশায় তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি’।[5]

নবী-রাসূলগণের পিতা-মাতার জন্য দোআ : সকল নবী-রাসূল তাদের পিতা-মাতার জন্য প্রার্থনা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য তাদের দো‘আর কিছু নমুনা কুরআনে উপস্থাপন করেছেন। পিতা-মাতার জন্য  তাদের কিছু দো‘আ নিম্নে পেশ করা হ’ল-

সুলায়মান (আঃ)-এর দোআ :

رَبِّ أَوْزِعْنِىْ أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِىْ أَنْعَمْتَ عَلَىَّ وَعَلَى وَالِدَىَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَهُ وَأَدْخِلْنِىْ بِرَحْمَتِكَ فِىْ عِبَادِكَ الصَّالِحِيْنَ-

উচ্চারণ : রাবিব আওঝিনী আন্ আশ্কুরা নিমাতাকা-ল্লাতী আন্আম্তা আলাইয়্যা ওয়া আলা ওয়া-লিদাইয়্যা ওয়া আন আমালা ছা-লিহান্ তারযা-হু ওয়া আদ্খিল্নী বিরাহ্মাতিকা ফী ইবা-দিকাছ ছা-লিহীন

অর্থ : হে আমার পালনকর্তা! আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে যে নে‘মত তুমি দান করেছ তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার শক্তি দান কর। আর আমি যাতে তোমার পসন্দনীয় সৎকর্ম করতে পারি এবং আমাকে তোমার অনুগ্রহে তোমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর’ (নামল ১৬/১৯)

নূহ (আঃ)-এর দোআ :

رَبِّ اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِمَنْ دَخَلَ بَيْتِيَ مُؤْمِنًا وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ-

উচ্চারণ : ‘রাবিবগ্ফির্লী ওয়ালি ওয়া-লি দাইয়া ওয়ালিমান দাখালা বায়তিয়া মুমিনাও ওয়া লিল মু’মিনীনা ওয়াল মু’মিনাত’।

‘হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে বিশ্বাসী হয়ে প্রবেশ করবে এবং মু’মিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন’ (নূহ ৭১/২৮)

ইবরাহীম (আঃ)-এর দোআ :

رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ-

উচ্চারণ : রববানাগফিরলী ওয়ালি ওয়া-লিদাইয়া ওয়া লিল মুমিনীনা ইয়াওমা ইয়কবূমুল হিসা-ব

‘হে আমাদের প্রভু! আমাকে ও আমার পিতামাতাকে এবং ঈমানদার সকলকে ক্ষমা কর যেদিন হিসাব দন্ডায়মান হবে (ইবরাহীম ১৪/৪০-৪১)

সৎ বান্দাদের পিতা-মাতার জন্য দোআ :

رَبِّ أَوْزِعْنِىْ أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِىْ أَنْعَمْتَ عَلَىَّ وَعَلَى وَالِدَىَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَصْلِحْ لِىْ فِىْ ذُرِّيَّتِىْ، إِنِّىْ تُبْتُ إِلَيْكَ وَإِنِّىْ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ-

উচ্চারণ: রাবিব আওযিনী আন্ আশ্কুরা নিমাতিকাল্লাতী আনআম্তা আলাইয়্যা ওয়া আলা ওয়া-লিদাইয়্যা ওয়া আন আমালা ছা-লিহান্ তারযা-হু ওয়া আছলিহ্লী ফী যুররিইয়্যাতী, ইন্নী তুব্তু ইলাইকা ওয়া ইন্নী মিনাল মুসলিমীন

অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! আমাকে শক্তি দাও যাতে আমি তোমার নে‘মতের শোকর আদায় করি। যা তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে দান করেছ এবং যাতে আমি তোমার পসন্দনীয় সৎকর্ম করি। আমার পিতা-মাতাকে সৎকর্ম পরায়ণ করো, আর সন্তানদেরকেও সৎকর্মপরায়ণ করো। আমি তোমার প্রতি তওবা করলাম। আমি তোমার একান্ত একজন আজ্ঞাবহ’ (আহক্বাফ ৪৬/১৫)

(খ) পিতা-মাতা জীবিত বা মৃত উভয় অবস্থায় তাদের জন্য দোআ করা :

পিতা-মাতা জীবিত থাকা অবস্থায় তাদের সার্বিক কল্যাণের জন্য দো‘আ করা ও তাদের জন্য দান ছাদাক্বাহ করা উত্তম কাজ। তারা যেমন মৃত্যুর পর দো‘আ পাওয়ার অধিকার রাখেন তেমনি জীবিত থাকা অবস্থাতেও অধিকার রাখেন। এটি অন্যতম সদ্ব্যবহারের মাধ্যম’।[6] কাযী ইয়ায বলেন, لَا نَعْرِفُ رِوَايَةً بِالْفَرْقِ بَيْنَ الْحَيِّ وَالْمَيِّتِ ‘এ ক্ষেত্রে আমরা কোন বর্ণনা জানিনা যা মৃত্যু ও জীবিতদের মাঝে পার্থক্য করে’।[7]

(গ) ঋণ পরিশোধ করা : পিতা-মাতার ঋণ থাকলে সন্তানরা সর্বপ্রথম তাদের ঋণ পরিশোধ করবে। কারণ ঋণ এমন এক বোঝা যা ঋণদাতা ব্যতীত কেউ হালকা করতে পারবে না। সেজন্য পিতা-মাতার যাবতীয় সম্পদ দ্বারা হ’লেও তাদের ঋণ পরিশোধ করবে, সামর্থ্য না থাকলে ঋণদাতার নিকট থেকে মওকুফ করিয়ে নিবে। মওকুফ না করলে দাতাদের সহযোগিতার নিয়ে হ’লেও তা পরিশোধ করার চেষ্টা করবে। কারণ ঋণ মাফ হবে না। তবে পিতা-মাতা অন্যায় কাজে অনেক ঋণ করে থাকলে তা পরিশোধ করতে সন্তান বাধ্য নয়।

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : نَفْسُ الْمُؤْمِنِ مُعَلَّقَةٌ بِدَيْنِهِ حَتَّى يُقْضَى عَنْهُ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘মুমিন ব্যক্তির রূহ তার ঋণের কারণে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে, যতক্ষণ না তা পরিশোধ করা হয়’।[8]

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : يُغْفَرُ لِلشَّهِيدِ كُلُّ ذَنْبٍ إِلاَّ الدَّيْنَ-

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত যে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ঋণ ছাড়া শহীদের সকল গুনাহই মাফ করে দেওয়া হবে’।[9]

(ঘ) অছিয়ত পূর্ণ করা : পিতা-মাতার কোন ন্যায়সঙ্গত অছিয়ত থাকলে তা পালন করা সন্তানদের জন্য আবশ্যক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, কিন্তু যদি মৃতের ভাইয়েরা থাকে, তাহ’লে মা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ মৃতের অছিয়ত পূরণ করার পর এবং তার ঋণ পরিশোধের পর (নিসা ৪/১১)। .... কাউকে কোনরূপ ক্ষতি না করে। এটি আল্লাহ প্রদত্ত বিধান। আল্লাহ মহাজ্ঞানী ও সহনশীল (নিসা ৪/১২)। তিনি আরো বলেন,كُتِبَ عَلَيْكُمْ إِذَا حَضَرَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ إِنْ تَرَكَ خَيْرًا الْوَصِيَّةُ لِلْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ بِالْمَعْرُوفِ حَقًّا عَلَى الْمُتَّقِينَ ‘তোমাদের কারু যখন মৃত্যুকাল উপস্থিত হয়, তখন যদি সে কিছু ধন-সম্পদ ছেড়ে যায়, তবে তার জন্য অছিয়ত করা বিধিবদ্ধ করা হ’ল পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের জন্য ন্যায়ানুগভাবে। এটি আল্লাহভীরুদের জন্য আবশ্যিক বিষয় (বাকারাহ ২/১৮০)।[10] একজন ব্যক্তি তার সম্পদের সর্বোচ্চ এক তৃতীয়াংশ সম্পদ অছিয়ত করতে পারে। এর বেশী করলে তা পালন করা যাবে না’।[11] তবে অছিয়ত আছাবাদের  জন্য নয়।

عَنْ أَبي أُمَامَةَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَعْطَى كُلَّ ذِى حَقٍّ حَقَّهُ فَلاَ وَصِيَّةَ لِوَارِثٍ –

আবু উমামাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক হকদারের অংশ নির্দিষ্ট করেছেন। সুতরাং কোনো ওয়ারিছের জন্য অছিয়ত করা যাবে না’।[12]

আমের বিন সা‘দ বর্ণনা করেন, তার পিতা সা‘দ বর্ণনা করেন, বিদায় হজ্জের সময় আমি রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুপথযাত্রী হয়ে পড়ছিলাম। নবী করীম (ছাঃ) সে সময় আমাকে দেখতে এলেন। তখন আমি বললাম, আমি যে রোগাক্রান্ত, তাতো আপনি দেখছেন। আমি একজন বিত্তবান লোক। আমার এক মেয়ে ব্যতীত কোন ওয়ারিছ নেই। তাই আমি কি আমার দু’তৃতীয়াংশ মাল ছাদাক্বাহ করে দিতে পারি? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তবে অর্ধেক মাল? তিনি বললেন, না। এক তৃতীয়াংশ অনেক। তোমার ওয়ারিছদের মানুষের কাছে ভিক্ষার হাত বাড়ানোর মত অভাবী রেখে যাবার চেয়ে তাদের বিত্তবান রেখে যাওয়া তোমার জন্য অনেক উত্তম। আর তুমি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যা কিছুই ব্যয় করবে নিশ্চয়ই তার প্রতিদান দেয়া হবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যে লুকমাটি তুলে দিয়ে থাকো, তোমাকে এর প্রতিদান দেয়া হবে। আমি বললাম, তা হ’লে আমার সঙ্গীগণের পরেও কি আমি বেঁচে থাকবো? তিনি বললেন, নিশ্চয়ই তুমি এদের পরে বেঁচে থাকলে তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যা কিছু নেক আমল করো না কেন, এর বদলে তোমার মর্যাদা ও সম্মান আরও বেড়ে যাবে। আশা করা যায় যে, তুমি আরও কিছু দিন বেঁচে থাকবে। এমনকি তোমার দ্বারা অনেক ক্বওম উপকৃত হবে। আর অনেক সম্প্রদায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারপর তিনি দু’আ করলেন, হে আল্লাহ! আপনি আমার ছাহাবীগণের হিজরতকে বহাল রাখুন। আর তাদের পেছনে ফিরে যেতে দেবেন না। কিন্তু সা‘দ ইবনু খাওলাহ এর দূর্ভাগ্য। (কারণ তিনি বিদায় হজ্জের সময় মক্কায় মারা যান) সা‘দ বলেন, মক্কায় তাঁর মৃত্যু হওয়ায় রাসূল (ছাঃ) তাঁর জন্য শোক প্রকাশ করেছেন’।[13]

(ঙ) মানত পূর্ণ করা : পিতা-মাতার কোন শরী‘আত সম্মত মানত থাকলে তা পালন করা সন্তানের আবশ্যক।

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضى الله عنهما: قَالَ جَاءَتِ امْرَأَةٌ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللهِ! إِنَّ أُمِّى مَاتَتْ وَعَلَيْهَا صَوْمُ نَذْرٍ أَفَأَصُومُ عَنْهَا قَالَ : أَرَأَيْتِ لَوْ كَانَ عَلَى أُمِّكِ دَيْنٌ فَقَضَيْتِيهِ أَكَانَ يُؤَدِّى ذَلِكِ عَنْهَا. قَالَتْ نَعَم قَالَ : فَصُومِى عَنْ أُمِّكِ 

ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, জনৈকা মহিলা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে বললেন হে আল্লাহর রাসুল! আমার মা মৃত্যুবরণ করেছেন। তার উপর মান্নতের ছাওম এর কাযা রয়েছে। আমি তার পক্ষ হ’তে এ ছাওম  আদায় করতে পারি কি? তখন তিনি বললেন, যদি তোমার মায়ের উপর কোন ঋণ থাকত তাহ’লে তুমি তা পরিশোধ করে দিতে, তবে তা তার পক্ষ হ’তে আদায় হতো কি? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, ‘তোমার মায়ের পক্ষ হ’তে তুমি ছাওম পালন কর’।[14]

(চ) কাফ্ফারা আদায় করা : পিতা-মাতার উপর কোন কাফফা্রা থাকলে সন্তান তা আদায় করবে। তা কসমের কাফ্ফারা হ’তে পারে বা ভুলবশতঃ হত্যার কাফফা্রাও হ’তে পারে। কারণ এগুলো পিতা-মাতার ঋণের মধ্যে অর্ন্তভুক্ত।

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ : أَنَّ امْرَأَةً رَكِبَتِ الْبَحْرَ فَنَذَرَتْ إِنْ نَجَّاهَا اللَّهُ أَنْ تَصُومَ شَهْرًا فَنَجَّاهَا اللَّهُ فَلَمْ تَصُمْ حَتَّى مَاتَتْ فَجَاءَتِ ابْنَتُهَا أَوْ أُخْتُهَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَمَرَهَا أَنْ تَصُومَ عَنْهَا-

ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, এক মহিলা সমুদ্রে ভ্রমণে গিয়ে মানত করলো, আল্লাহ যদি তাকে নিরাপদে ফেরার সুযোগ দিলে সে একমাস ছিয়াম পালন করবে। অতঃপর আল্লাহ তাকে সমুদ্রে বিপদ থেকে মুক্তি দিলেন। কিন্তু ছিয়াম পালনের পূর্বেই সে মারা গেলো। তার মেয়ে অথবা বোন রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট আসলে তিনি তাকে মৃতের পক্ষ থেকে ছিয়াম পালনের নির্দেশ দিলেন’।[15]

(ছ) ফরয ছিয়াম, মানতের ছিয়াম বা বদলী হজ্জ পালন করা : ফরয ছিয়াম যা সফর বা রোগের কারণে আদায় করতে পারেনি। পরবর্তীতে আদায় করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু হঠাৎ মৃত্যুবরণ করাই কাযা আদায় করতে পারেনি। এমন ছিয়াম নিকটতম আত্মীয়রা আদায় করে নিবে। আর যদি রোগের কারণে রামাযান মাসে ছিয়াম আদায় না করে এবং রামাযানের পরেও সুস্থ হ’তে না পারে ও মারা যায় তাহ’লে তার ছিয়ামের ক্বাযা আদায় করতে হবে না। কারণ এমন সময় তার জন্য ছিয়াম ফরয নয়। অনুরূপভাবে সম্পদশালী পিতা-মাতা যেকোন কারণে হজ্জ পালন না করে পর্যাপ্ত সম্পদ রেখে মারা গেলে সন্তানের জন্য পিতা-মাতার পক্ষ থেকে বদলী পালন করতে হবে’। [16]

عَنْ عَائِشَةَ رضى الله عنها  أَنَّ رَسُولَ اللهِ  صلى الله عليه وسلم  قَالَ : مَنْ مَاتَ وَعَلَيْهِ صِيَامٌ صَامَ عَنْهُ وَلِيُّهُ –

আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘ছিয়ামের ক্বাযা যিম্মায় রেখে যদি কোন ব্যক্তি মারা যায় তাহ’লে তার নিকট আত্মীয় তার পক্ষ হ’তে ছিয়াম আদায় করবে’। [17]

عَنْ بُرَيْدَةَ رَضِيَ الله عَنْهُ قَالَ كُنْتُ جَالِسًا عِنْدَ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم إِذْ أَتَتْهُ امْرَأَةٌ فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللهِ إِنِّى كُنْتُ تَصَدَّقْتُ عَلَى أُمِّى بِجَارِيَةٍ وَإِنَّهَا مَاتَتْ، قَالَ : وَجَبَ أَجْرُكِ وَرَدَّهَا عَلَيْكِ الْمِيرَاثُ. قَالَتْ يَا رَسُولَ اللهِ! إِنَّهَا كَانَ عَلَيْهَا صَوْمُ شَهْرٍ أَفَأَصُومُ عَنْهَا؟ قَالَ: صُومِى عَنْهَا . قَالَتْ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّهَا لَمْ تَحُجَّ قَطُّ أَفَأَحُجُّ عَنْهَا قَالَ : نَعَمْ حُجِّى عَنْهَا-

বুরায়দা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) নিকটে আমি বসা ছিলাম। এমন সময় তার নিকট এক মহিলা এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার মাকে একটি দাসী দান করেছিলাম। তিনি মারা গেছেন। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি ছাওয়াবের অধিকারী হয়ে গেছ এবং উত্তরাধিকার স্বত্ত্ব দাসীটি তোমাকে ফেরত দিয়েছে। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এক মাসের ছিয়াম আদায় করা তার বাকী আছে, তার পক্ষ হ’তে আমি কি ছিয়াম আদায় করতে পারি? তিনি বললেন, তার পক্ষে তুমি ছিয়াম আদায় কর। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! কখনও তিনি হজ্জ করেননি। তার পক্ষ হ’তে আমি কি হজ্জ আদায় করতে পারি? তিনি বলেন, হ্যাঁ, তার জন্য তুমি হজ্জ আদায় কর’। [18]

عن ابن عَبَّاسٍ أَنَّ رَجُلًا أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: إِنَّ أَبِيْ مَاتَ وَلَمْ يَحُجَّ أَفَأَحُجَّ عَنْهُ؟ قَالَ: "أَرَأَيْتَ لَوَ كَانَ عَلَى أَبِيكَ دَيْنٌ أَكُنْتَ قَاضِيَهُ؟  قَالَ: نَعَمْ، قال: حُجِّ عَنْ أَبِيْكَ-

ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, একজন লোক নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট গমন করে বলল, (হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার পিতা হজ্জ পালন না করে মারা গেছেন, আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্জ পালন করব? তিনি বললেন, তুমি কি মনে কর, যদি তোমার পিতার উপর ঋণ থাকত, তাহ’লে কি তুমি তা পরিশোধ করতে না? সে বলল, হ্যাঁ। রাসূল (ছাঃ) বললেন, অতএব তুমি তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ পালন কর’।[19]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضى الله عنهما  قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ! إِنَّ أُمِّى مَاتَتْ وَعَلَيْهَا صَوْمُ شَهْرٍ أَفَأَقْضِيهِ عَنْهَا؟ فَقَالَ : لَوْ كَانَ عَلَى أُمِّكَ دَيْنٌ أَكُنْتَ قَاضِيَهُ عَنْهَا. قَالَ نَعَمْ. قَالَ : فَدَيْنُ اللهِ أَحَقُّ أَنْ يُقْضَى-

ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নবী (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মা এক মাসের ছিয়াম যিম্মায় রেখে মারা গেছেন, আমি কি তাঁর পক্ষ হ’তে এ ছিয়াম কাযা করতে পারি? তিনি বললেন, যদি তোমার আম্মার উপর ঋণ থাকত তাহ’লে কি তুমি তা আদায় করতে না? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আল্লাহর ঋণ পরিশোধ করাই হ’ল অধিক উপযুক্ত’।[20] 

(জ) পিতা-মাতার বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ভাল আচরণ করা : পিতা-মাতার সাথে তাদের জীবদ্দশায় ভাল সম্পর্ক ছিল এমন ব্যক্তিদের সাথে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ أَبَرَّ الْبِرِّ صِلَةُ الْمَرْءِ أَهْلَ وُدِّ أَبِيهِ بَعْدَ أَنْ يُوَلِّىَ ‘সব চাইতে বড় নেকীর কাজ এই যে, ব্যক্তি তার পিতার ইন্তিকালের পর, তার বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে’।[21]

আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি নবী করীম (ছাঃ)-এর অন্য কোন সহধর্মিণীর প্রতি এতটুকু অভিমান করিনি, যতটুকু খাদীজা (রাঃ)-এর প্রতি করেছি। অথচ আমি তাকে দেখিনি। কিন্তু নবী করীম (ছাঃ) তার কথা অধিক সময় আলোচনা করতেন। কোন কোন সময় বকরী যবেহ করে গোশতের পরিমান বিবেচনায় হাড়-গোশতকে ছোট ছোট টুকরা করে হ’লেও খাদীজা (রাঃ)-এর বান্ধবীদের ঘরে পৌঁছে দিতেন। আমি কোন সময় অভিমানের সুরে নবী করীম (ছাঃ)-কে বলতাম, (আপনার অবস্থা দৃষ্টে) মনে হয়, খাদীজা (রাঃ) ছাড়া পৃথিবীতে যেন আর কোন নারী নেই। প্রতি উত্তরে তিনি বলতেন, হ্যাঁ। তিনি এমন ছিলেন, তার গর্ভে আমার সন্তান জন্মেছিল’।[22] অন্য বর্ণনায় রয়েছে, وَإِنْ كَانَ لَيَذْبَحُ الشَّاةَ فَيُهْدِى فِى خَلاَئِلِهَا مِنْهَا مَا يَسَعُهُنَّ ‘কোন দিন বকরী যবেহ হ’লে খাদীজা (রাঃ)-এর বান্ধবীদের নিকট তাদের প্রত্যেকের আবশ্যক পরিমাণ গোশত নবী (ছাঃ) হাদীয়া স্বরূপ পাঠিয়ে দিতেন’।[23] আরেক বর্ণনায় রয়েছে,إِذَا ذَبَحَ الشَّاةَ فَيَقُولُ أَرْسِلُوا بِهَا إِلَى أَصْدِقَاءِ خَدِيجَةَ ‘রাসূল (ছাঃ) যখন বকরী যবেহ করতেন তখন বলতেন, এ গোশত খাদীজার বান্ধবীদের পাঠিয়ে দাও’।[24]

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত যে, মক্কার এক রাস্তায় তার সঙ্গে এক বেদুঈনের সাক্ষাৎ হ’ল। আব্দুল্লাহ (রাঃ) তাঁকে সালাম দিলেন এবং তিনি যে গাধার পিঠে সওয়ার হ’তেন সে গাধা তাকে সওয়ারীর জন্য দিয়ে দিলেন। তিনি তাঁর মাথার পাগড়ী তাকে দান করলেন। তখন আব্দুল্লাহ ইবনু দ্বীনার (রহঃ) বলেন, আমরা তাকে বললাম, আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন। বেদুঈনরা তো অল্পতেই তুষ্ট হয়ে যায়। (এতো দেওয়ার প্রয়োজন কী ছিল?) তখন আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বললেন, এই ব্যক্তির পিতা ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর বন্ধু ছিলেন। আর আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, ‘কোন ব্যক্তির সর্বোত্তম নেকীর কাজ হচেছ তার পিতার বন্ধুজনের সঙ্গে সদাচরণের মাধ্যমে সম্পর্ক রক্ষা করা’।[25]

عَنْ أَبِي بُرْدَةَ، قَالَ: قَدِمْتُ الْمَدِينَةَ، فَأَتَانِي عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ، فقَالَ: أَتَدْرِي لِمَ أَتَيْتُكَ؟، قَالَ: قُلْتُ: لَا، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: "مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَصِلَ أَبَاهُ فِي قَبْرِهِ، فَلْيَصِلْ إِخْوَانَ أَبِيهِ بَعْدَهُ" وَإِنَّهُ كَانَ بَيْنَ أَبِي عُمَرَ وَبَيْنَ أَبِيكَ إِخَاءٌ وَوُدٌّ، فَأَحْبَبْتُ أَنْ أَصِلَ ذَاكَ-

আবু বুরদাহ হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি মদীনায় গমন করলে আব্দুল্লাহ বিন ওমর আমার নিকট এসে বললেন, আমি তোমার নিকট কেন এসেছি তুমি কি জান? সে বলল, আমি বললাম, না। তিনি বললেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি চায় যে, তার কবরস্ত বাবার সাথে সদাচরণ করবে সে যেন তার মৃত্যুর পরে তার বন্ধুদের সাথে সুসম্পর্ক রাখে। আর বাবা ওমর তোমার বাবার মধ্যে বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্ব ছিল। আর আমি সে  সম্পর্ক বহাল রাখতে পসন্দ করছি’।[26]

(ঝ) দান-ছাদাক্বাহ করা : পিতা-মাতার জন্য সন্তানের দো‘আ সর্বোত্তম হ’লেও তাদের জন্য দান-ছাদাক্বাহ করা উত্তম। এতে দানকারীও ছওয়াব পাবে।

عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَجُلاً قَالَ لِلنَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم إِنَّ أُمِّىَ افْتُلِتَتْ نَفْسُهَا وَإِنِّى أَظُنُّهَا لَوْ تَكَلَّمَتْ تَصَدَّقَتْ فَلِىَ أَجْرٌ أَنْ أَتَصَدَّقَ عَنْهَا قَالَ:  نَعَمْ –

আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নবী করীম (ছাঃ)-কে বললেন, আমার মায়ের আকস্মিক মৃত্যু ঘটে, কিন্তু আমার বিশ্বাস তিনি (মৃত্যুর পূর্বে) কথা বলতে সক্ষম হ’লে কিছু ছাদাক্বাহ করে যেতেন। এখন আমি তাঁর পক্ষ হ’তে ছাদাক্বাহ করলে তিনি এর ছওয়াব পাবেন কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ’।[27]

عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ امْرَأَةً قَالَتْ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ أُمِّىَ افْتُلِتَتْ نَفْسُهَا وَلَوْلاَ ذَلِكَ لَتَصَدَّقَتْ وَأَعْطَتْ أَفَيُجْزِئُ أَنْ أَتَصَدَّقَ عَنْهَا فَقَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم  نَعَمْ فَتَصَدَّقِى عَنْهَا-

আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিবিলেন, জনৈক স্ত্রীলোক বলল, হে আললাহর রাসূল! আমার মা হঠাৎ মারা গেছেন। তিনি এভাবে মারা না গেলে ছাদাক্বাহ ও দান করে যেতেন। এখন আমি যদি তার পক্ষ থেকে ছাদাক্বাহ করি তবে তিনি কি এর ছওয়াব পাবেন? নবী করীম (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ, তুমি তার পক্ষ থেকে ছাদাক্বাহ কর’।[28]

সাঈদ বিন সা‘দ বিন উবাদাহ হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, সা‘দ বিন উবাদাহ নবী (ছাঃ)-এর সাথে কোন এক যুদ্ধে গমন করলেন। এরই মধ্যে সা‘দের মায়ের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসল। তখন তাকে বলা হ’ল-আপনি অছিয়ত করেন। তিনি বললেন, কীসের অছিয়ত করব। ধন-সম্পদ যা আছে তাতো সা‘দের। সা‘দ ফিরে আসার পূবেই তিনি মারা গেলেন। সা‘দ ফিরে আসলে বিষয়টি তাকে বলা হ’ল। তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তার পক্ষ থেকে ছাদাক্বাহ করলে এতে তার উপকার হবে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সা‘দ (রাঃ) বললেন, উমুক উমুক বাগান তার জন্য ছাদাক্বাহ। তিনি বাগানটির নাম উল্লেখ করেছিলেন’।[29]

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ سَعْدَ بْنَ عُبَادَةَ أَخَا بَنِي سَاعِدَةَ ، قَالَ : يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ أُمِّي تُوُفِّيَتْ ، وَأَنَا غَائِبٌ ، فَهَلْ يَنْفَعُهَا إِنْ تَصَدَّقْتُ عَنْهَا بِشَيْءٍ ؟ قَالَ : نَعَمْ، قَالَ : فَإِنِّي أُشْهِدُكَ أَنَّ حَائِطِي الَّذِي بِالْمِخْرَافِ صَدَقَةٌ عَنْهَا-

ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, সা‘দ ইবনু উবাদাহ (রাঃ)-এর মা মারা গেলেন এবং তিনি সেখানে অনুপস্থিত ছিলেন। পরে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মা আমার অনুপস্থিতিতে মারা যান। আমি যদি তাঁর পক্ষ থেকে কিছু ছাদাক্বাহ করি, তাহ’লে কি তাঁর কোন উপকারে আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সা‘দ (রাঃ) বললেন, তাহ’লে আমি আপনাকে সাক্ষী করছি আমার মিখরাফ নামক বাগানটি তাঁর জন্য ছাদাক্বাহ করলাম’।[30]

মাতা-পিতার আদেশে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার বিধান :

আবুদ্দারদা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি শামে তার নিকটে এসে বলল, আমার মা, অন্য বর্ণনায় আমার পিতা বা মাতা (রাবীর সন্দেহ) আমাকে বারবার তাকীদ দিয়ে বিয়ে করালেন। এখন তিনি আমাকে আমার স্ত্রীকে তালাক দানের নির্দেশ দিচ্ছেন। এমতাবস্থায় আমি কি করব? জবাবে আবুদ্দারদা বলেন, আমি তোমাকে স্ত্রী ছাড়তেও বলব না, রাখতেও বলব না। আমি কেবল অতটুকু বলব, যতটুকু আমি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট থেকে শুনেছি। তিনি বলেছেন,الْوَالِدُ أَوْسَطُ أَبوابِ الْجَنَّةِ، فَحَافِظْ إِنْ شِئْتَ أَوْ ضَيِّعْ ‘পিতা হ’লেন জান্নাতের মধ্যম দরজা। এক্ষণে তুমি তা রেখে দিতে পার অথবা বিনষ্ট করতে পার’।[31]  

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, আমার স্ত্রীকে আমি ভালবাসতাম। কিন্তু আমার পিতা তাকে অপসন্দ করতেন।  তিনি তাকে তালাক দিতে বলেন। আমি তাতে অস্বীকার করি। তখন বিষয়টি রাসূল (ছাঃ)-কে বলা হ’লে তিনি বলেন, أَطِعْ أَبَاكَ وَطَلِّقْهَا، فَطَلَّقْتُهَا ‘তুমি তোমার পিতার আনুগত্য কর এবং তাকে তালাক দাও। অতঃপর আমি তাকে তালাক দিলাম’।[32] ঈমানদার ও দূরদর্শী পিতার আদেশ মান্য করা ঈমানদার সন্তানের জন্য অবশ্য কর্তব্য। কিন্তু পুত্র ও তার স্ত্রী উভয়ে ধার্মিক ও আনুগত্যশীল হ’লে ফাসেক পিতা-মাতার নির্দেশ এক্ষেত্রে মানা যাবে না। একইভাবে সন্তান ছহীহ হাদীছপন্থী হ’লে বিদ‘আতী পিতা-মাতার নির্দেশও মানা চলবে না। কারণ সকল ক্ষেত্রে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বিধান অগ্রাধিকার পাবে।

উপরোক্ত হাদীছদ্বয়ের ভিত্তিতে কেউ কেউ বলে থাকেন যে  পিতা-মাতার কথায় স্ত্রীকে তালাক দিতে হবে। যা শরী‘আত সম্মত নয়। কারণ সবাই আল্লাহর রাসূল বা ওমর ফারূক নয়। সবার নিকট অহির আগমন বা ইলহামও হয়না। ইবনু আববাস ও আবুদ্দারদা (রাঃ) পিতা-মাতার আদেশে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হ’লে তারা বলেন, مَا أَنَا بِالَّذِي آمُرُكَ أَنْ تُطَلِّقَ امْرَأَتَكَ، وَلَا أَنْ تَعُقَّ وَالِدَيْكَ، قَالَ: فَمَا أَصْنَعُ بِهَذِهِ الْمَرْأَةِ؟ قَالَ: ابْرِرْ وَالِدَيْكَ ‘আমি তোমাকে স্ত্রী তালাক দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারছিনা আবার পিতা-মাতার অবাধ্যতা করারও আদেশ করছিনা। প্রশ্নকারী বললেন, তাহ’লে আমি এই নারীর ব্যাপারে কী করব? ইবনু আববাস বলেন, (স্ত্রী রেখেই) পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ কর’।[33] ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বলকে জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল-

إنَّ أَبِي يَأْمُرُنِي أَنْ أُطَلِّقَ امْرَأَتِي قَالَ: لَا تُطَلِّقْهَا قَالَ: أَلَيْسَ عُمَرُ أَمَرَ ابْنَهُ عَبْدَ اللهِ أَنْ يُطَلِّقَ امْرَأَتَهُ قَالَ حَتَّى يَكُونَ أَبُوك مِثْلَ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ-

আমার পিতা আমাকে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার আদেশ দিচ্ছেন। (আমি কি করব?) তিনি বললেন, তুমি তালাক দিও না। বর্ণনাকারী বলল, ওমর (রাঃ) কি তার ছেলে আব্দুল্লাহকে স্বীয় স্ত্রীকে তালাক দিতে বলেননি। তিনি বললেন, তোমার বাবা কি ওমরের মত হয়েছেন’।[34] শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ)-কে মায়ের কথায় স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হ’লে তিনি বলেন,  لَا يَحِلُّ لَهُ أَنْ يُطَلِّقَهَا، بَلْ عَلَيْهِ أَنْ يَبَرَّهَا وَلَيْسَ تَطْلِيقُ امْرَأَتِهِ مِنْ بِرِّهَا ‘তার জন্য স্ত্রীকে তালাক্ব দেওয়া হালাল হবে না। বরং তার জন্য আবশ্যক হ’ল মায়ের সাথে সদাচরণ করা। আর স্ত্রীকে তালাক্ব দেওয়া সদাচরণের অন্তর্ভুক্ত নয়’।[35] প্রখ্যাত তাবেঈ হাসান বছরীকে জিজ্ঞেস করা হ’ল-জনৈক মা তার সন্তানকে স্ত্রী তালাক্ব দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন সে কী করবে? তিনি বললেন, لَيْسَ الطَّلَاقُ مِنْ بِرِّهَا فِي شَيْءٍ ‘তালাক্ব দেওয়া মায়ের সাথে সদাচরণেন কোন অংশ নয়’।[36] মুছতফা বিন সা‘দ রুহায়বানী বলেন,  وَلَا تَجِبُ عَلَى ابْنٍ طَاعَةُ أَبَوَيْهِ وَلَوْ كَانَا عَدْلَيْنِ فِي طَلَاقِ زَوْجَتِهِ؛ لِأَنَّهُ لَيْسَ مِنْ الْبِرِّ ‘স্ত্রী তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রে পিতা-মাতার আনুগত্য করা সন্তানের জন্য আবশ্যক নয়। কারণ এটি সদাচরণের অংশ নয়’।[37]

তবে পিতা-মাতা শরী‘আত সম্মত কোন কারণে স্ত্রীকে তালাক দিতে বললে তালাক দিতে হবে। যেমন ওমর (রাঃ) তার ছেলে আব্দুল্লাহকে স্ত্রী তালাক দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যেখানে শারঈ কারণ ছিল’।[38] ইবরাহীম (আঃ) তার ছেলে ইসমাঈল (আঃ) কে স্ত্রী তালাক দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তাতে তিনি স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন। সেখানেও শারঈ কারণ ছিল’।[39] অতএব স্পষ্ট শারঈ কারণ ছাড়া পিতা- মাতার আদেশে স্ত্রীকে তালাক দেওয়া যাবে না। (ক্রমশঃ)

[1]. আবুদাউদ হা/৫১৪২মিশকাত হা/৪৯৩৬ইবনু হিববান হা/৪১৮ইবনু হিববানহাকেমযাহাবীহুসাইন সুলাইম আসাদ-এর সনদকে ছহীহ ও জাইয়েদ বলেছেন (হাকেম হা/৭২৬০মাওয়ারিদুয যামআন হা/২০৩০)। তবে শায়খ আলবানী  ও শুআইব আরনাউত্ব যঈফ বলেছেন। এর সনদ যঈফ হলেও মর্ম ছহীহ

[2]মুসলিম হা/১৬৩১মিশকাত হা/২০৩

[3]ইবনু মাজাহ হা/৩৬৬০মিশকাত হা/২৩৫৪ছহীহাহ হা/১৫৯৮

[4]আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৩৬সনদ হাসান

[5]আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৩৭সনদ ছহীহ

[6]মারদাভীআল ইনছাফ ফী মারিফাতির রাজেহ মিনাল খিলাফ ২/৫৬০

[7]আল ইনছাফ ফী মারিফাতির রাজেহ মিনাল খিলাফ ২/৫৬০

[8]ইবনু মাজাহ হা/২৪১৩;; মিশকাত হা/২৯১৫

[9]মুসলিম হা/১৮৮৬মিশকাত হা/২৯১২ছহীহুল জামে হা/৮১১৯

[10].মীরাছ বণ্টনের নীতিমালা সম্বলিত সূরা নিসা ১১-১২ আয়াত দ্বারা অত্র আয়াতের সামগ্রিক হুকুম রহিত (মানসূখ) হয়েছে। তবে নিকটাত্মীয়দের মধ্যে যাদের মীরাছ নেইতাদের জন্য বা অন্যদের জন্য এক তৃতীয়াংশ সম্পদ থেকে অছিয়ত করা মুস্তাহাব হওয়ার হুকুম বাকী রয়েছে (ইবনু কাছীর)

[11].  বুখারীমুসলিমমিশকাত হা/৩০৭১

[12]আবুদাউদ হা/২৮৭০ইবিনু মাজাহ হা/২৭১৩তিরমিযী হা/২১২০মিশকাত হা/৩০৭৩ছহীহুল জামে হা/১৭২০৭৮৮,১৭৮৯

[13].  বুখারী হা/৬৩৭৩মুসলিম হা/১৬২৮মিশকাত হা/৩০৭১

[14].  বুখারী হা/১৯৫৩মুসলিম হা/১১৪৮

[15].  আবুদাউদ হা/৩৩০৮নাসাঈ হা/৩৮১৬ছহীহাহ হা/১৯৪৬

[16].  ফাৎহুল বারী ৪/৬৪

[17]বুখারী হা/১৯৫২মুসলিম হা/১১৪৭মিশকাত হা/২০৩৩

[18]মুসলিম হা/১১৪৯ তিরমিযী হা/৬৬৭মিশকাত হা/১৯৫৫

[19]নাসাঈ হা/২৬৩৯ইবনু হিববান হা/৩৯৯২ছহীহাহ হা/৩০৪৭

[20]বুখারী হা/১৫৫৩মুসলিম হা/১১৪৮

[21]আহমাদ হা/৫৬১২;ছহীহুল জামে হা/১৫২৫

[22]বুখারী হা/৩৮১৮মিশকাত হা/৬১৭৭

[23]বুখারী হা/৩৮১৬

[24]মুসলিম হা/২৪৩৫ছহীহুল জামে হা/৪৭২২

[25]মুসলিম হা/২৫৫২মিশকাত হা/১৯১৭

[26]ইবনু হিববান হা/৪৩২ছহীহ আত-তারগীব হা/২৫০৬

[27]বুখারী হা/ ১৩৮৮মুসলিম হা/১০০৪মিশকাত হা/১৯৫০

[28]আবুদাউদ হা/২৮৮১

[29]নাসাঈ হা/৩৬৫০ইবনু হিববান হা/৩৩৫৪ইবনু খুযায়মা হা/২৫০০মুজামুল কাবীর হা/৫৫২৩সনদ ছহীহ

[30]বুখারী হা/২৭৫৬,২৭৬২আহমাদ হা/৩০৮০

[31].শারহুস সুন্নাহ হা/৩৪২১আহমাদ হা/২৭৫৫১তিরমিযী হা/১৯০০ইবনু মাজাহ হা/২০৮৯মিশকাত হা/৪৯২৮ছহীহাহ হা/৯১৪

[32]হাকেম হা/২৭৯৮ছহীহ ইবনু হিববান হা/৪২৬ছহীহাহ হা/৯১৯

[33]ইবনু আবী শায়বাহ হা/১৯০৫৯১৯০৬০হাকেম হা/২৭৯৯ছহীহুত তারগীব হা/২৪৮৬ইবনু আববাস বর্ণিত হাদীছটি হাসান ও আবুদ্দারদা বর্ণিত হাদীছটি ছহীহ

[34]মুহাম্মাদ ইবনু মুফলেহআল-আদাবুশ শারঈয়া ১/৪৪৭

[35]মাজমূ ফাতাওয়া ৩৩/১১২

[36]মারুযীআল-বিররু ওয়াছ ছিলাতু ৫৬ পৃঃ

[37]মুতালিব উলিল নুহা ফী শারহি গায়াতিল মুনতাহা ৫/৩২০

[38]হাকেম হা/২৭৯৮ছহীহ ইবনু হিববান হা/৪২৬ছহীহাহ হা/৯১৯

[39]বুখারী হা/৩৩৬৪





আরও