আশূরায়ে মুহাররম : একটি পর্যালোচনা
মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ
অধ্যাপক মুহাম্মাদ জালালুদ্দীন 799 বার পঠিত
ভূমিকা :
‘সংস্কার’ শব্দের অর্থ শোধন, মার্জন ও কোন কিছুর দোষত্রুটি দূর করে তাকে উন্নত করা। সমাজ সংস্কার বলতে বুঝায় সমাজের উন্নতির জন্য তার নানা দোষত্রুটি দূর করা। মানব রচিত থিওরি দিয়ে অধঃপতিত সমাজের উন্নতি সম্ভব নয়, সম্ভব নয় কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছা। বিশ্ব সংস্কারক বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) নবী হওয়ার পূর্বে নিজস্ব মস্তিষ্কপ্রসূত চিন্তা দিয়ে প্রায় ২৩ বছর সমাজ সংশোধনের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু জাহেলী সমাজের পরিবর্তন আনা তাঁর পক্ষেও সম্ভব হয়নি। ৪০ বছর বয়সে নবী হওয়ার পর পরবর্তী ২৩ বছরে নবুওয়তের মাধ্যমে জাহেলিয়াতের মূলোৎপাটন করে বিশ্ববাসীকে যে সমাজ উপহার দেন, তার নযীর বিশ্ব ইতহাসে আর নেই। এ জন্য জগৎ বিখ্যাত পন্ডিত টমাস কার্লাইল জাহেলিয়াতের অন্ধকারে মহানবী (ছাঃ)-এর প্রতিষ্ঠিত সমাজকে ‘জ্যোর্তিময় স্ফুলিঙ্গ’-এর সাথে তুলনা করে বলেন- These Arabs the man mohammad (sm) and that on century is not it a spark.
‘তাজদীদে মিল্লাত’ বা সমাজ সংস্কার একটি কঠিন কাজ। নবীগণ এই কঠিন দায়িত্ব পালন করেছেন। অতএব সমাজ সংশোধনের প্রয়াসে তাঁদের রেখে যাওয়া আদর্শকে সামনে নিয়ে আমাদেরকে অহি-ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে যেতে হবে। উল্লেখ্য যে, সমাজ পরিবর্তনের জন্য নবীদের পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোন শর্টকার্ট রাস্তা নেই। সমাজ পরিবর্তনের পথ ব্যালট নয়, আবার বুলেটও নয়। মূলতঃ দাওয়াত ও জিহাদের পথ ধরেই নিয়মতান্ত্রিকভাবে সমাজ পরিবর্তনের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এ যুগে সমাজ সংশোধনের বড় হাতিয়ার হ’ল কথা, কলম ও সংগঠন। জিহাদের এ ত্রি-মুখী হাতিয়ার নিয়ে ১৯৭৮ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারী রোজ রবিবার থেকে নির্ভেজাল তাওহীদের ঝা-াবাহী ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ সমাজের পুঞ্জিভূত রসম-রেওয়াজ, শিরক ও বিদ‘আতের মূলোৎপাটনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সমাজ সংশোধনে অত্র সংগঠনের উল্লেখযোগ্য কিছু দিক নিমেণ তুলে ধরা হ’ল।
তাওহীদের প্রতিষ্ঠা :
ইসলামের মূল ভিত্তি হচ্ছে ‘তাওহীদ’। যার তাওহীদ ঠিক তার সব কিছুই ঠিক। যার তাওহীদে গ-গোল তার সব জায়গায় গ-গোল। বিশেষ করে সার্বিক ইবাদত তাওহীদ ভিত্তিক না হলে বান্দার কোন আমল আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ সংগঠন নির্ভেজাল তাওহীদের প্রচার ও প্রসারে ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে। মহান আল্লাহ বলেন- وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ ‘আমি জিন ও মানুষকে এ জন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা একমাত্র আমারই ইবাদত করবে’ (যারিয়াত ৫১/৫৬)। আর এ জন্য প্রত্যেক নবীর দাওয়াত ছিল তাওহীদ তথা আল্লাহর এককত্বের দিকে আহবান করা। আল্লাহ বলেন- وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ ‘অবশ্যই আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যে একজন করে রাসূল প্রেরণ করেছি এ জন্য যে, তারা নির্দেশ দান করবেন, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং ত্বাগূতকে পরিহার করবে’ (নাহল ১৬/৩৬)। ত্বাগূতের সাথে যে কুফরী করে সেই প্রকৃত মুসলিম। আর এটাই আল্লাহর নির্দেশ। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন- فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِنْ بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى لَا انْفِصَامَ لَهَا ‘যে ত্বাগূতকে অস্বীকার করবে ও আল্লাহ্কে বিশ্বাস করবে, সে এমন এক হাতল অাঁকড়ে ধরল, যা বিচ্ছিন্ন হওয়ার নয়’ (বাক্বারাহ ২/২৫৬)। এমতাবস্থায় তাওহীদের উপর মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করে। যেমন হাদীছে এসেছে,
عَنْ عُثْمَانَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ.
ওছমান (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর উপর পূর্ণ আস্থা রেখে মৃত্যুবরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’।[1] যারা বিশুদ্ধমনে তাওহীদের স্বীকৃতি দিবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের জন্য সুপারিশ করবেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন- أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِى يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ خَالِصًا مِنْ قَلْبِهِ أَوْ نَفْسِهِ ‘ক্বিয়ামতের দিন আমার সুপারিশে ধন্য হবে তারাই, যারা একনিষ্ঠচিত্তে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-কে স্বীকার করবে’।[2] নির্ভেজাল মনে তাওহীদকে স্বীকার করা আল্লাহর আরশের নৈকট্য লাভের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَا قَالَ عَبْدٌ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ قَطُّ مُخْلِصًا إِلاَّ فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ السَّمَاءِ حَتَّى تُفْضِىَ إِلَى الْعَرْشِ مَا اجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ.
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন বান্দা নির্ভেজাল মনে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ বলে, তখন তার জন্য আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। এমনকি সে আরশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়, যতক্ষণ সে কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে’।[3]
অতএব বলা যায়, যে ব্যক্তি তাওহীদ ভিত্তিক জীবনযাপন করবে তার চূড়ান্ত ঠিকানা হবে জান্নাত। অতঃপর কোন ত্রুটির কারণে জাহান্নামে গেলেও ত্রুটি অনুযায়ী শাস্তি ভোগের পর জাহান্নাম থেকে মহান আল্লাহর বিশেষ দয়ায় মুক্তি পাবে। চিরকাল জাহান্নামে থাকতে হবে না। তাওহীদের মানদন্ডে বান্দার সার্বিক কর্মকান্ড মূল্যায়ন করা হবে। তাই নির্ভেজাল তাওহীদের ঝান্ডাবাহী এদেশের একক যুবসংগঠন ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ গোটা মুসলিম বিশ্বকে তাওহীদমুখী তথা জান্নাতমুখী করার জন্য নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কবির ভাষায়-
‘অবসর কোথায়, কোথায় শ্রান্তি
এখনও কাজ রয়েছে বাকি,
তাওহীদ আজ পূর্ণ কিরণ
দিগ-দিগন্তে দেয়নি উঁকি’।
শিরকের নির্মূল :
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ সংগঠন শিরককে নির্মূল করে তাওহীদের বীজ বপন করার জন্য নিরলসভাবে দাওয়াতী কাজ করে যাচ্ছে। শিরকের বিরুদ্ধে সোচ্চার বক্তব্য ও লিখনী অব্যাহত রেখেছে। আর এটিই হচেছ আহলেহাদীছের সবচেয়ে বড় নিদর্শন। তারা শিরকের বিরুদ্ধে আপোসহীন তাওহীদপন্থী আর বিদ‘আতের বিরুদ্ধে আপোসহীন সুন্নাতপন্থী। এ দেশের মুসলিমরা ওযূ ভঙ্গের কারণ জানে কিন্তু ইসলাম ভঙ্গের কারণ জানে না। তাওহীদ ও শিরকের সম্পর্ক হল ওযূ ও বায়ু নিঃসরণের সম্পর্ক। যদি কেউ শিরক করে তাহলে সে ঈমানের গন্ডি তথা ইসলাম থেকে বেরিয়ে যায়। তার সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যায়। মহান আল্লাহ বলেন, وَلَوْ أَشْرَكُوا لَحَبِطَ عَنْهُمْ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ‘যদি তারা শিরক করে, তাহলে তাদের সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে’ (আন‘আম ৬/৮৮)। শিরক ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। মুশরিকের জন্য জান্নাত হারাম। আল্লাহ বলেন, إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ শিরকের গুনাহ ক্ষমা করেন না। এছাড়া যাকে ইচ্ছা তার অন্যান্য পাপ মাফ করে দিবেন’ (নিসা ৪/৪৮)। অন্যত্র তিনি বলেন, إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ ‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করবে, অবশ্যই আল্লাহ তার উপর জান্নাত হারাম করে দিবেন। আর তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম। সমস্ত যালেমদের কোন সাহায্যকারী থাকবে না’ (মায়েদা ৫/৭২)। হাদীছে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ جَابِرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثِنْتَانِ مُوْجِبَتَانِ قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا الْمُوجِبَتَانِ قَالَ مَنْ مَاتَ لاَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ مَاتَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا دَخَلَ النَّارَ.
জাবের (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, দু’টি জিনিস অপরিহার্য। জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! অপরিহার্য দু’টি বিষয় কী? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করে মারা গেল, সে জাহান্নামে গেল। আর যে ব্যক্তি শিরকমুক্ত অবস্থায় মারা গেল, সে জান্নাতে গেল।[4] এজন্য ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে শিরকমুক্ত করার জন্য ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ বিভিন্ন কর্মসূচী নিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাই দেশবাসীর প্রতি আমাদের বিশেষ দাওয়াত হল- আসুন! শিরক ও বিদ‘আত মুক্ত ইসলামী জীবন যাপন করি। আমাদের শ্লোগান ‘শিরক-বিদ‘আতের মূলোৎপাটন, আহলেহাদীছ আন্দোলন’ ও ‘আসুন! পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে জীবন গড়ি’। সুতরাং আসুন আমরা যাবতীয় শিরকী কর্মকান্ড নির্মূলে নির্ভীক হই। উন্নত ললাট একমাত্র আল্লাহর দরবারে নত করি। কবির ভাষায়-
‘অসত্যের কাছে কভু নত নহে মম শির
ভয়ে শপে কাপুরুষ লড়ে যায় বীর’।
সুন্নাতের প্রতিষ্ঠা :
ইত্তিবায়ে সুন্নাত রাসূল (ছাঃ)-এর প্রেমের বাস্তব মাপকাঠি। এর প্রতি মহববত করা মুসলিম ব্যক্তির ঈমানের একটি অংশ এবং এটাই প্রকৃত ঈমান।
عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ.
আনাস (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ পূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ সে আমাকে তার সন্তান সন্ততি মাতা-পিতা এবং পৃথিবীর সকল মানুষের চেয়ে বেশী ভাল না বাসবে।[5] ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ, যাকাত, কুরবানী ইত্যাদি সার্বিক ক্ষেত্রে যার নেতৃত্ব নিরঙ্কুশভাবে মেনে নিতে হবে তিনিই হলেন বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)। আল্লাহ বলেন- وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ ‘রাসূল তোমাদের যা দেন তা গ্রহণ কর এবং যা থেকে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহ্কে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা’ (হাশর ৫৯/৭)। সুন্নাতের অনুসারীদের জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ كُلُّ أُمَّتِى يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ إِلاَّ مَنْ أَبَى قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَنْ أَبَى قَالَ مَنْ أَطَاعَنِى دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِى فَقَدْ أَبَى.
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আমার সকল উম্মতই জান্নাতে যাবে। তবে যে অসম্মত সে নয়। জিজ্ঞেস করা হ’ল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! কে অসম্মত? তিনি বললেন, যে আমার আনুগত্য করে সে জান্নাতে যাবে এবং যে আমার অবাধ্য হয়েছে সে অসম্মত।[6] ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর কর্মীরা রাসূল (ছাঃ)-কে মহববত করে এবং তার সুন্নাতকে মহববত করে। তাই মহববতের দাবীতে তারা মৃত সুন্নাতকে জীবিত করছে। ছোটখাটো বিষয় বলে তারা কখনো রাসূল (ছাঃ)-এর কোন সুন্নাতকে অবজ্ঞা করে না। গোটা মুসলিম জাতিকে সুন্নাতমুখী করার জন্য তারা অব্যাহত গতিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া রাসূলে করীম (ছাঃ)-এর মৃত সুন্নাতকে পুনর্জীবিত করাই হচ্ছে মুক্তিপ্রাপ্ত দলের প্রধান বৈশিষ্ট্য। সে জন্য বিশ্বনবী (ছাঃ)-এর পক্ষ থেকে জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন- إن الإِسْلاَمَ بَدَأَ غَرِيباً وَسَيَعُودُ غَرِيباً كَمَا بَدَأَ فَطُوبَى لِلْغُرَبَاءِ قِيلَ مَنْ هُمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ الَّذِينَ يُصْلِحُونَ إِذَا فَسَدَ النَّاسُ مِنْ بَعْدٍي مِنْ سُنَّتِيْ ‘ইসলাম অল্প সংখ্যক মানুষের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করেছিল। অতিসত্তর সেই অবস্থায় আবার ফিরে যাবে। অতএব সুসংবাদ হল সেই অল্প সংখ্যক লোকদের জন্য, যারা আমার পরে ঐ সমস্ত সুন্নাতকে পুনঃসংস্কার করবে যেগুলো লোকেরা ধ্বংস করেছে’।[7] অতএব আসুন, জান্নাত পাওয়ার আশায় সুন্নাতের পথ ধরে এগিয়ে যাই।
বিদ‘আতের নির্মূল :
দ্বীনের সবচেয়ে বড় ক্ষতিকর বস্ত্ত হল বিদ‘আত। যেহেতু বিদ‘আত পুণ্য ও ছাওয়াবের আশায় করা হয়ে থাকে, সেহেতু বিদ‘আতী ব্যক্তি তা ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবতেই পারে না। অথচ অন্যান্য পাপের ব্যাপারে বোধশক্তি ফিরে পেলে এক সময় সে অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে। বিদ‘আতী জাহান্নামী। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন-كُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ وَكُلُّ ضَلَالَةٍ فِيْ النَّارِ ‘প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম’।[8] বিদ‘আতী অভিশপ্ত। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, فَمَنْ أَحْدَثَ فِيهَا حَدَثًا أَوْ آوَى مُحْدِثًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللَّهِ وَالْمَلاَئِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ ‘যে ব্যক্তি কোন বিদ‘আত আবিষ্কার করল অথবা বিদ‘আতীকে সহযোগিতা করল তার উপরে আল্লাহ, ফেরেশতা ও বিশ্ববাসীর পক্ষ থেকে লা‘নত’।[9]
অন্যদিকে যারা দ্বীনকে বিকৃত করেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদেরকে ক্বিয়ামতের দিন অভিশাপ করে তাড়িয়ে দিবেন। যেমন তিনি বলেন, سُحْقًا سُحْقًا لِمَنْ غَيَّرَ بَعْدِى ‘দূর হয়ে যাও দূর হয়ে যাও, যারা আমার পরে আমার দ্বীনকে বিকৃত করেছিলে’ (ক্বিয়ামতের দিন উম্মতদের বাছাই করে নেওয়ার সময় হঠাৎ পর্দা পড়ার কারণে রাসূল (ছাঃ) যখন জানতে পারবেন যে, তাঁর মৃত্যুর পর তারা তাঁর দ্বীনকে বিকৃত করেছিল, তখন তিনি এ কথা বলবেন) ।[10] তাই যে ইবাদত ও সাধনা সুন্নাত মোতাবেক হবে না তা-ই গোমরাহী, তা জাহান্নামের ইন্ধন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন- عَامِلَةٌ نَاصِبَةٌ-تَصْلَى نَارًا حَامِيَةً ‘ক্বিয়ামতের দিন কিছু লোক এমন হবে, যারা আমল করে করে ক্লান্ত হয়ে গেছে কিন্তু জ্বলন্ত আগুনে তাদেরকে নিক্ষেপ করা হবে’ (গাশিয়া ৮৮/৩ ও ৪)।
মহান আল্লাহ আরো বলেন- قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْأَخْسَرِينَ أَعْمَالًا- الَّذِينَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُونَ صُنْعًا ‘হে নবী আপনি বলুন! আমি কি তোমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত আমলকারীদের সম্পর্কে খবর দিব? দুনিয়ার জীবনে যাদের সমস্ত আমল বরবাদ হয়েছে। অথচ তারা ভাবে যে, তারা সুন্দর আমল করে যাচ্ছে’ (কাহফ ১৮/১০৩-১০৪)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ أَحْدَثَ فِى أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ ‘যে ব্যক্তি আমাদের শরী‘আতে এমন কিছু নতুন সৃষ্টি করল যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত’।[11]
ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন-إِنَّ كُلَّ مَالَمْ يَكُنْ عَلَي عَهْدِ رَسُوْلِ صَلَّي اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَ اَصْحَابِهِ دِيِناً لَمْ يَكُوْنِ الْيَوْمَ دِيْناً- ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবীদের সময়ে যেসব বিষয় ‘দ্বীন’ হিসাবে গৃহীত ছিল না, বর্তমানেও তা দ্বীন হিসাবে গৃহীত হবে না’ (আল-ইনছাফ, পৃঃ ৩২)। অতএব বলা যায় যে, এ সংগঠন গোটা জাতিকে বিদ‘আত মুক্ত করে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে যে দ্বীন ছিল, সেদিকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য অবিরতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই সমাজে প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম, শবেবরাত, আখেরী মুনাজাত, দলবদ্ধ মুনাজাত, কুলখানী, চেহলাম, বাড়ী বাড়ী কুরআন পড়া, মৃত্যু ব্যক্তির নামে খানার অনুষ্ঠান প্রভৃতি বিদ‘আতের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। ফালিল্লা-হিল হামদ।
বিশুদ্ধ দলীলের সন্ধান :
ইবাদত প্রতিষ্ঠিত হয় বিশুদ্ধ দলীলের উপর। যার ইবাদত দলীলের উপর হবে এবং কুরআন ও ছহীহ হাদীছ মোতাবেক হবে সে ইবাদত আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে। অন্যথা তা গ্রহণীয় হবে না। বরং এইরকম আমল যে করবে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আজ সাধারণ মানুষের মাঝে এ জাযবা সৃষ্টি হয়েছে যে, কোন আমল করার পূর্বে এর পিছনে দলীল আছে কি-না তা জানতে হবে। দলীল থাকলে গ্রহণ করে, না থাকলে প্রত্যাখ্যান করে। কারণ এটাই আল্লাহর নির্দেশ। মহান আল্লাহ বলেন, -فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ بِالْبَيِّنَاتِ وَالزُّبُرِ ‘অতএব তোমরা যদি না থাক তবে আহলে যিকরের নিকট থেকে স্পষ্ট দলীল সহকারে জেনে নাও’ (নাহল ১৬/৪৩-৪৪)। ১৬ বছর যাবৎ ‘মাসিক আত-তাহরীক’ দলীল ভিত্তিক লেখনী ও ফৎওয়া দানে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
যঈফ ও জাল হাদীছ বর্জন :
সংগঠনের দাওয়াতী কাজের বরকত হচ্ছে-যঈফ ও জাল হাদীছ বর্জন করতঃ ছহীহ হাদীছের উপর আমল করা। এ সংগঠন এটা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে যে, মুসলিম উম্মাহর ঈমান ও আমলের বিভক্তির মূল কারণ হল যঈফ ও জাল হাদীছ। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক আমলই গোটা মুসলিম জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার একমাত্র পথ। যঈফ ও জাল হাদীছ বর্ণনা করা ইসলামে সম্পূর্ণরূপে নিষেধ।
عَنْ حَفْصِ بْنِ عَاصِمٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَفَى بِالْمَرْءِ كَذِبًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ.
হাফছ ইবনে ‘আছিম (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, মিথ্যুক হিসাবে গণ্য হতে মানুষের জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে যা শুনবে তাই বর্ণনা করবে।[12] অন্যত্র এসেছে,مَنْ يَقُلْ عَلَىَّ مَا لَمْ أَقُلْ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ. সালামা (রাঃ) বলেন, আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আমার সম্পর্কে এমন কথা বলল, যা আমি বলিনি সে যেন তার স্থান জাহান্নামে করে নেয়।[13] জাল হাদীছ বর্ণনার ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উম্মতকে সাবধান করে দিয়েছেন,
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ بَلِّغُوا عَنِّى وَلَوْ آيَةً وَحَدِّثُوا عَنْ بَنِى إِسْرَائِيلَ وَلاَ حَرَجَ وَمَنْ كَذَبَ عَلَىَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ.
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেন, একটি আয়াত আমার পক্ষ থেকে হলেও প্রচার কর। আর বনী ইসরাঈলের কাহিনী বর্ণনা কর, তাতে কোন দোষ নেই। তবে সাবধান! যে ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যা বলবে সে যেন তার নিজের স্থান জাহান্নামে করে নেয়’।[14]
অতএব এ সংগঠন প্রত্যেককে যঈফ ও জাল হাদীছ সম্পর্কে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সতর্ক করে আসছে। সুতরাং দেশবাসীর প্রতি আমাদের দাওয়াত, আসুন! পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে জীবন গড়ি। বিশেষ করে বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমা, যেলা ও আঞ্চলিক সম্মেলন, মাসিক আত-তাহরীক, ‘তাওহীদের ডাক’সহ বিভিন্ন সাহিত্য ও সাময়িকী এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে মুসলিম জাতি আজ যঈফ ও জাল হাদীছ বর্জন করে ছহীহ হাদীছের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ফালিল্লা-হিল হামদ।
সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যুবসংঘ :
আমাদের দেশসহ মুসলিম বিশ্ব আজ পন্ডিমা সংস্কৃতি আগ্রাসনের অসহায় শিকার। অসুস্থ সংস্কৃতি আমাদের যুবচরিত্রকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। ঈমান, আক্বীদা ও নৈতিকতার বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত আঘাত হানছে। জাতির এই দুর্দিনে ‘যুবসংঘ’ নকীবের ভূমিকা পালন করছে। নির্ভেজাল তাওহীদের প্রশিক্ষণসহ তাক্বওয়াভিত্তিক সুস্থ সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য এ সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে।
শিক্ষা সংস্কার :
ইলমে অহি তথা কুরআন ও ছহীহ হাদীছের শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা। এ শিক্ষা না থাকার কারণে আজ শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রদের হাতে কলমের পরিবর্তে অস্ত্রের ঝনঝনানী লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ধর্ষণে সেষ্ণুরী করে আনন্দ উৎসব করছে। সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আজ সন্ত্রাসীদের লালনভূমিতে পরিণত হয়েছে, যা জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জার ব্যাপার। এ লজ্জা থেকে বাঁচতে হলে আসমানী শিক্ষার দিকে ফিরে যেতে হবে। ইসলামের প্রথম বাণী اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ- خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ ‘পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন জমাট রক্ত হতে’ (আলাক্ব ৯৬/১-২)। উক্ত আয়াতদ্বয় প্রমাণ করে শিক্ষার উদ্দেশ্য হল দু’টি। প্রথমতঃ রবের পরিচয় জানা। দ্বিতীয়তঃ নিজের পরিচয় জানা। এ সংগঠন শিক্ষার মৌলিক উদ্দেশ্য কী হবে তা জাতির সামনে উন্মুক্ত করেছে। সে লক্ষ্যে দেশে প্রচলিত ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার দ্বিমুখী ধারাকে সমন্বিত করে কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক একমুখী শিক্ষানীতি চালু করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছে।
অর্থনৈতিক সংস্কার :
হালাল রূযী ইবাদত কবূলের আবশ্যিক পূর্বশর্ত। অথচ সূদ-ঘুষ-জুয়া-লটারীর মত হারাম জিনিসগুলো পুঁজিবাদী অর্থনীতির নোংরা হাতিয়ার। যা সর্বযুগে সকল জ্ঞানী মহল কর্তৃক নিন্দিত। অথচ সেই প্রকাশ্য হারামী অর্থ ব্যবস্থাকে বাংলাদেশের মুসলিম সরকার সর্বদা চালু রেখেছে। অথচ স্বতঃসিদ্ধ কথা হ’ল, যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা গঠিত, সে দেহ কখনো জান্নাতে যাবে না (তাবারাণী, আল-আওসাত্ব ৬/১১৩ পৃঃ)। এ চেতনা থেকেই এ সংগঠনের কর্মী, সাধারণ মানুষ এবং সরকারকে হারাম অর্থ ব্যবস্থা সম্পর্কে সতর্ক করছে। পাশাপাশি ইসলামী অর্থনীতির প্রতিষ্ঠার জন্য সূদ ও দুর্নীতিমুক্ত অর্থব্যবস্থা চালু করার জন্য জোর দাবী জানিয়ে আসছে।
রাজনৈতিক সংস্কার :
অসুস্থ রাজনীতি দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ধোঁকাতন্ত্র হল ‘গণতন্ত্র’। যা মাথা গণনা করে কিন্তু মাথায় কী আছে তা বিচার করে না। গণতন্ত্রের বাজারে পুঁটি মাছ আর ইলিশ মাছের দাম সমান। ভি.সি. আর মুচির ভোটের মূল্য সমান। ফলশ্রুতিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অসৎ নেতৃত্ব আজ সমাজ জীবনকে বিষময় করে তুলেছে। শান্তিপ্রিয় সৎ নেতৃত্ব সর্বত্র মুখ লুকিয়েছে। এমতাবস্থায় ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে সুস্থ ধারার রাজনীতি ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সর্বত্র দল ও প্রার্থীবিহীন নেতৃত্ব নির্বাচন ব্যবস্থা চালুর জন্য জোরালোভাবে প্রচারণা চালাচ্ছে। অপরদিকে এ সংগঠনে সার্বিক তত্ত্বাবধানে নেতৃত্বের গুনাবলী সম্পন্ন একদল ঈমানদার ও যোগ্য কর্মীবাহিনী গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
উপসংহার :
পরিশেষে বলা যায় যে, ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ একটি অনন্য দাওয়াতী কাফেলার নাম। সমাজ সংস্কারে এ সংগঠনের অবদান অনস্বীকার্য। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে পরিশুদ্ধ করার জন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে এ সংগঠন। ফলশ্রুতিতে একদল নিবেদিত প্রাণ, যোগ্যতাসম্পন্ন যিন্দাদিল কর্মী বাহিনী গড়ে উঠেছে। যারা জীবন ও যৌবনের উদ্দমতা অহি-র স্রোত ধারায় উৎসর্গ করছে। মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে তাওহীদ ও সুন্নাতের এই কিশতী তার যাত্রীদেরকে নিয়ে একদিন মনযিলে মকছূদে পৌঁছবে ইনশাআল্লাহ। হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে এ কিশতির যাত্রী হয়ে জান্নাতপানে এগিয়ে যাওয়ার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন! কবির ভাষায়,
‘তুমি উঠে এসো,
উঠে এসো
মাঝি মাল্লার দলে,
দেখবে তোমার কিশতি আবার
ভেসেছে সাগর জলে’।
অধ্যাপক মুহাম্মাদ জালালুদ্দীন
লেখক : কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য, আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ ও সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ
[1]. মুসলিম হা/১৪৫, ‘ঈমান’ অধ্যায়; মিশকাত হা/৩৭।
[2]. বুখারী হা/৯৯, ‘ইলম’ অধ্যায়; মিশকাত হা/৫৫৭৪।
[3]. তিরমিযী হা/৩৫৯০; মিশকাত হা/২৩১৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৬৪৮।
[4]. মুসলিম হা/২৭৯; মিশকাত হা/৩৮।
[5]. বুখারী হা/১৫; মুসলিম হা/১৭৮; মিশকাত হা/৭।
[6]. বুখারী হা/৭২৮০; মিশকাত হা/১৪৩।
[7]. আহমাদ হা/৪১৪২; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১২৭৩।
[8]. ইবনু খুযায়মাহ হা/১৭৮৫; ছহীহুল জামে‘ হা/১৩৫৩। সনদ ছহীহ।
[9]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৭২৮।
[10]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ; মিশকাত হা/৫৫৭১।
[11]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ; মিশকাত হা/১৪০।
[12]. মুসলিম হা/৭; মিশকাত হা/১৪৫৬।
[13]. বুখারী হা/১০৯; ইবনু মাজাহ হা/৩৪-৩৫।
[14]. বুখারী হা/৩৪৬১; মিশকাত হা/১৯৮।