একজন আদর্শবান ব্যক্তির গুণাবলী
এ. এইচ. এম. রায়হানুল ইসলাম
বযলুর রহমান 1365 বার পঠিত
ভূমিকা :
আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীতে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁরই ইবাদত করার জন্য (যারিয়াত ৫১/৫৬)। পাশাপাশি আল্লাহ প্রদত্ত নে‘মত ভোগ করে তাঁরই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য। অবশ্য আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য অনেক লোভনীয় বস্ত্তও তৈরী করেছেন। আর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মুমিন বান্দাদের জন্য প্রস্ত্তত করে রেখেছেন পরকালীন কল্যাণের স্থান জান্নাত। তাই জান্নাতে বান্দার জন্য যে সমস্ত নে‘মত প্রস্ত্তত রয়েছে, সে সম্পর্কে সকলের অবগত থাকা উচিত। উল্লেখ্য বাজারে এ মর্মে অসংখ্য বই পাওয়া গেলেও সেগুলোতে মিথ্যা ও কল্পনার আশ্রয় নেয়া হয়েছে। অথচ জান্নাতের সঠিক ও বিশুদ্ধ বিবরণ পাওয়া যাবে একমাত্র পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ সমূহে। আমরা ‘জান্নাতের অফুরন্ত নে‘মত সমূহ’ শিরোনামে বিশুদ্ধ তথ্যসূত্র থেকে নির্ভরযোগ্য আলোচনা করার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।
ক. সুসজ্জিত সিংহাসন :
জান্নাতীরা স্বর্ণখচিত সবুজ রঙের রেশমী বস্ত্ত দ্বারা তৈরী অত্যন্ত আরামদায়ক সিংহাসনে হেলান দিয়ে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে বসবে। সেখানে মহান আল্লাহ তাদের অন্তর থেকে যাবতীয় হিংসা-বিদ্বেষ দূরীভূত করে দিবেন। আল্লাহ বলেন, وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِمْ مِنْ غِلٍّ إِخْوَانًا عَلَى سُرُرٍ مُتَقَابِلِينَ ‘আমি তাদের অন্তর থেকে হিংসা দূরীভূত করব। তারা সেখানে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে বসবে’ (হিজর ১৫/৪৭)। অন্যত্র তিনি বলেন, عَلَى سُرُرٍ مُتَقَابِلِينَ يُطَافُ عَلَيْهِمْ بِكَأْسٍ مِنْ مَّعِينٍ، بَيْضَاءَ لَذَّةٍ لِلشَّارِبِينَ. ‘তারা পরস্পর মুখোমুখি হয়ে তাদের আসনে বসবে। তাদেরকে ঘুরেফিরে পরিবেশন করানো হবে স্বচ্ছ সুরাপূর্ণ পানপাত্র, যা অতি শুভ্র এবং পানকারীদের জন্য সুস্বাদু’ (ছাফ্ফাত ৩৭/৪৪-৪৫)। সেখানে উন্নত, সুসজ্জিত, সবুজ রঙের দুর্লভ মখ্মল এবং নরম কার্পেট হবে তাদের বসার স্থান। উৎকৃষ্ট বিছানা ও কারুকার্য খচিত সুন্দর বালিশ থাকবে। মহান আল্লাহ বলেন, فِيهَا سُرُرٌ مَّرْفُوعَةٌ، وَأَكْوَابٌ مَّوْضُوعَةٌ، ونَمَارِقُ مَصْفُوفَةٌ، وَزَرَابِيُّ مَبْثُوثَة. ‘সেখানে থাকবে সুউচ্চ আসন আর সংরক্ষিত পানপত্র, সারি সারি বালিশ এবং সম্প্রসারিত গালিচাসমূহ’ (গাশিয়াহ ৮৮/১৩-১৬)। অতঃপর আসন ও বসার বৈশিষ্ট্যের বিবরণ দিয়ে আল্লাহ বলেন, عَلَى سُرُرٍ مَوْضُونَةٍ، مُتَّكِئِينَ عَلَيْهَا مُتَقَابِلِينَ. ‘(তারা) জহরত খচিত আসনসমূহের উপর হেলান দিয়ে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে বসবে’ (ওয়াক্বি‘আহ ৫৬/১৫-১৬)। তিনি আরো বলেন, مُتَّكِئِينَ عَلَى رَفْرَفٍ خُضْرٍ وَّعَبْقَرِيٍّ حِسَانٍ ‘তারা সবুজ মসনদ এবং অতি বিরল ও উত্তম গালিচার উপর হেলান দিয়ে বসবে’ (আর-রহমান ৫৫/৭৬)।
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, উক্ত মসনদ বা তকিয়া হবে খুবই উন্নতমানের ও নকশাযুক্ত। এই মসনদ, বিছানা ও বালিশগুলো জান্নাতী বাগিচা ও পুষ্প বীথির উপর থাকবে। এটাই হবে তাদের বিছানা। কোনটা হবে লাল রং-এর, আবার কোনটা হবে হলদে রং-এর এবং কোনটা হবে সবুজ রং-এর। জান্নাতীদের পোশাকও এরূপ মূল্যবান হবে। দুনিয়ায় এমন কোন জিনিস নেই, যার সাথে এগুলোর তুলনা করা যাবে। এটা হবে মখ্মলের বিছানা ও গদি বিশিষ্ট, যা অত্যন্ত নরম ও খাঁটি।[1] আল্লাহ বলেন, مُتَّكِئِينَ عَلَى فُرُشٍ بَطَائِنُهَا مِنْ إِسْتَبْرَقٍ وَجَنَى الْجَنَّتَيْنِ دَانٍ ‘তারা পুরু রেশমের আস্তরণযুক্ত বিছানার উপর হেলান দিয়ে বসবে। আর বাগানদ্বয়ের ফল তাদের কাছাকাছি থাকবে’ (আর-রহমান ৫৫/৫৪)। জান্নাতীরা দীর্ঘ ছায়াময় স্থানে আসন স্থাপন করবে। এমতাবস্থায় তারা স্ত্রীদের সাথে আনন্দে মত্ত থাকবে। আল্লাহ বলেন, إِنَّ أَصْحَابَ الْجَنَّةِ الْيَوْمَ فِي شُغُلٍ فَاكِهُونَ، هُمْ وَأَزْوَاجُهُمْ فِي ظِلَالٍ عَلَى الْأَرَائِكِ مُتَّكِئُونَ ‘এদিন জান্নাতীরা আনন্দে মত্ত থাকবে। তারা ও তাদের স্ত্রী ছায়াময় পরিবেশে একসাথে হেলান দিয়ে উপবিষ্ট থাকবে’ (ইয়াসিন ৩৬/৫৫-৫৬)। এমনি করে জান্নাতীরা অত্যন্ত আনন্দ ও উপভোগের সাথে সুসজ্জিত সিংহাসনে উপবেশন করবে, যার বিবরণ পবিত্র কুরআনের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
খ. কিশোরদের আপ্যায়ন :
জান্নাতীদের আশেপাশে চির কিশোররা তাদেরকে আনন্দ দেয়ার জন্য সর্বদা ঘোরাফেরা করবে। তারা সর্বদা কিশোরই থাকবে। তাদের বয়সের কোন তারতম্য হবে না। তারা জান্নাতীদের খেদমতে সর্বদা নিয়োজিত থাকবে। তারা দেখতে এত সুন্দর ও মনঃপূত চেহারার হবে, যেন বিক্ষিপ্ত মণিমুক্তা। মহান আল্লাহ বলেন, وَيَطُوفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَانٌ مُّخَلَّدُونَ إِذَا رَأَيْتَهُمْ حَسِبْتَهُمْ لُؤْلُؤًا مَّنْثُورًا ‘তাদের মাঝে পরিবেশন করবে চির তরুণ বালকেরা। আপনি তাদেরকে দেখলে বিচ্ছুরিত মুক্তা মনে করবেন’ (দাহর ৭৬/১৯; ওয়াক্বি‘আহ ৫৬/১৭)। অন্যত্র তিনি বলেন, وَيُطَافُ عَلَيْهِمْ بِآنِيَةٍ مِّنْ فِضَّةٍ وَّأَكْوَابٍ كَانَتْ قَوَارِيرَا. ‘তাদের মাঝে (খাদ্য ও পানীয়) পরিবেশন করা হবে রৌপ্য পাত্রে ও স্ফটিকের মত স্বচ্ছ পানপাত্রে’ (দাহর ৭৬/১৫)। জান্নাতীদের সেবক ধূলাবালিমুক্ত পরিচ্ছন্ন মোতির ন্যায় হবে। মহান আল্লাহ বলেন, وَيَطُوفُ عَلَيْهِمْ غِلْمَانٌ لَهُمْ كَأَنَّهُمْ لُؤْلُؤٌ مَّكْنُونٌ. ‘ সুরক্ষিত মুক্তার মত কিশোর সেবকেরা তাদের কাছে সর্বদা ঘোরাঘুরি করবে’ (তূর ৫২/২৪)।
উল্লেখ্য, জান্নাতের এই কিশোর সেবকরা কি শুধুমাত্র মুসলিম কিশোরদের মধ্যে সীমাবদ্ধ? আবার অমুসলিম অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু মারা গেলে তাদের স্থান কোথায় হবে? তারা কি তাদের অমুসলিম পিতা-মাতার সাথে জাহান্নামে প্রবেশ করবে? অথচ শরী‘আত আবশ্যক হওয়ার পূর্বেই তারা মারা গেছে। তাদের অবস্থান কোথায় হবে? এর নিরসন নিমেণর হাদীছে বর্ণিত হয়েছে :
عَنْ أَنَسٍ بْنِ مَالِكٍ t قَالَ سَأَلْتُ رَسُوْلُ اللهِ r عَنْ ذُرَارِيِّ الْمُشْرِكِيْنَ لَمْ يَكُنْ لَّهُمْ ذُنُوْبٌ يُعَاقَبُوْنَ بِهَا فَيَدْخُلُوْنَ النَّارَ وَ لَمْ تَكُنْ حَسَنَةٌ يُّجَاوِزُوْنَ بِهَا فَيَكُوْنُوْنَ مِنْ مُلُوْكِ الْجَنَّةِ؟ فَقَالَ النَّبِي r هُمْ خَدَمُ أَهْلِ الْجنَّةِ.
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে মুশরিকদের বাচ্চা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম এই মর্মে যে, জাহান্নামে প্রবেশের মত তাদের তো কৃত কোন পাপ নেই। আবার জান্নাতের আধিকারী হওয়ার মতও তাদের কোন কৃত ছাওয়াবও নেই। এমতাবস্থায় তাদের কী অবস্থা হবে? উত্তরে নবী করীম (ছাঃ) বললেন, তারা জান্নাতের সেবক হবে।[2]
গ. পানি ও শরাব আপ্যায়ন :
জান্নাতীদেরকে কিশোররা রূপা ও স্ফটিকের মত পাত্রে স্বচ্ছ পানি ও খাঁটি শরাব পরিবেশন করবে। পানি হবে অত্যন্ত সুস্বাদু। শরার এমন হবে, যা পান করলে শিরপীড়া ও বিকারগ্রস্ত হবে না। মহান আল্লাহ বলেন, يَتَنَازَعُونَ فِيهَا كَأْسًا لَا لَغْوٌ فِيهَا وَلَا تَأْثِيمٌ ‘সেখানে তারা একে অপরের মধ্যে শরাবের পেয়ালা আদান প্রদান করবে, যাতে কোন অসার কথা কিংবা পাপ নেই’ (তূর ৫২/২৩)। তিনি আরো বলেন, وَيُطَافُ عَلَيْهِمْ بِآنِيَةٍ مِّنْ فِضَّةٍ وَّأَكْوَابٍ كَانَتْ قَوَارِيرَا، قَوَارِيرَ مِنْ فِضَّةٍ قَدَّرُوهَا تَقْدِيرً. ‘তাদের পরিবেশন করা হবে রূপালী পাত্রে আর স্ফটিকের ন্যায় স্বচ্ছ পানপাত্রে। আর রূপালী ও স্ফটিক পাত্রে পরিবেশনকারীরা তা যথেষ্ট পরিমাণে পূর্ণ করবে’ (দাহর ৭৬/১৫-১৬)। তিনি আরো বলেন,
مَثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِي وُعِدَ الْمُتَّقُونَ فِيهَا أَنْهَارٌ مِّنْ مَّاءٍ غَيْرِ آسِنٍ وَأَنْهَارٌ مِّنْ لَبَنٍ لَمْ يَتَغَيَّرْ طَعْمُهُ وَأَنْهَارٌ مِّنْ خَمْرٍ لَذَّةٍ لِلشَّارِبِينَ وَأَنْهَارٌ مِّنْ عَسَلٍ مُصَفًّى وَلَهُمْ فِيهَا مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ وَمَغْفِرَةٌ مِّنْ رَبِّهِمْ كَمَنْ هُوَ خَالِدٌ فِي النَّارِ وَسُقُوا مَاءً حَمِيمًا فَقَطَّعَ أَمْعَاءَهُمْ.
‘মুত্তাক্বীদের জন্য যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তার বর্ণনা : তাতে আছে বিশুদ্ধ পানির নহর, স্বাদ পরিবর্তন হয়নি এমন দুধের নহর, পানকারীদের জন্য সুস্বাদু শরাবের নহর ও পরিশোধিত মধুর নহর। সেখানে তাদের জন্য আরো আছে সব রকমের ফল-মূল ও তাদের প্রভুর ক্ষমা। (মুত্তাক্বীরা কি) তাদের মত, যারা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে এবং যাদেরকে ফুটন্ত পানি পান করতে দেওয়া হবে, যা তাদের নাড়িভুঁড়ি ছিন্ন-ভিন্ন করে দেবে?’ (মুহাম্মাদ ৪৭/১৫)। অন্যত্র তিনি বলেন, بِأَكْوَابٍ وَّأَبَارِيقَ وَكَأْسٍ مِّنْ مَعِينٍ- لَا يُصَدَّعُونَ عَنْهَا وَلَا يُنْزِفُونَ. ‘পানপাত্র, জগ ও বিশুদ্ধ পানির পেয়ালা নিয়ে, যা পান করলে তাদের মাথা ব্যাথাও হবে না, নেশাও লাগবে না’ (ওয়াক্বি‘আহ ৫৬/১৮-১৯)। জান্নাতবাসীদের কাফূরের গন্ধ বিশিষ্ট শরাব পান করানো হবে। যেমন- إِنَّ الْأَبْرَارَ يَشْرَبُونَ مِنْ كَأْسٍ كَانَ مِزَاجُهَا كَافُورًا، عَيْنًا يَّشْرَبُ بِهَا عِبَادُ اللَّهِ يُفَجِّرُونَهَا تَفْجِيرًا. ‘সৎকর্মশীলরা এমন এক পেয়ালা থেকে পান করবে যাতে সুগন্ধিময় কাফূরের মিশ্রণ থাকবে, সেখান থেকেই আল্লাহর বান্দারা পান করবে এবং তারাই সেটা তাদের সুবিধামত প্রবাহিত করবে’ (দাহর ৭৬/৫-৬)।
জান্নাতে শরাব পানের জন্য অসংখ্য নদী থাকবে। তন্মধ্যে কাওছার অন্যতম, যা হবে স্বর্ণ নির্মিত। এর তীরের কঙ্করসমূহ হবে মণি-মুক্তার এবং মাটি হবে মিশক আম্বরের চেয়ে সুগন্ধিময়। যেমন-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ t قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ r الْكَوْثَرُ نَهْرٌ فِى الْجَنَّةِ حَافَّتَاهُ مِنْ ذَهَبٍ وَمَجْرَاهُ عَلَى الدُّرِّ وَالْيَاقُوتِ تُرْبَتُهُ أَطْيَبُ مِنَ الْمِسْكِ وَمَاؤُهُ أَحْلَى مِنَ الْعَسَلِ وَأَبْيَضُ مِنَ الثَّلْجِ.
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘কাওছার জান্নাতের একটি নদী, যার উভয় তীর স্বর্ণ নির্মিত। তার পানি মণি-মুক্তার উপর প্রবহমান। আর এটি মিশক অপেক্ষা সুগন্ধিময়, মধু অপেক্ষা অধিক মিষ্টি ও বরফের চেয়ে অধিক শুভ্র’।[3]
জান্নাতে সর্বোৎকৃষ্ট পানীয় হ’ল ‘তাসনীম’ এবং পরিষ্কার শরাব হ’ল ‘রাহীক্ব’। উভয় পানীয়ের আপ্যায়নে জান্নাতবাসীরা অত্যন্ত আনন্দিত হবে এবং আত্মতৃপ্তি লাভ করবে। ফলশ্রুতিতে তাদের মুখ থেকে মিশক আম্বরের সুঘ্রাণ বের হবে। মহান আল্লাহ বলেন, يُسْقَوْنَ مِنْ رَحِيقٍ مخَّتُومٍ، خِتَامُهُ مِسْكٌ وَّفِي ذَلِكَ فَلْيَتَنَافَسِ الْمُتَنَافِسُونَ، وَمِزَاجُهُ مِنْ تَسْنِيمٍ، عَيْنًا يَّشْرَبُ بِهَا الْمُقَرَّبُونَ. ‘তাদেরকে সীলমোহরকৃত সুমধুর পানীয় পান করতে দেওয়া হবে, যা হবে কস্তূরীর ঘ্রাণ। অতএব এর জন্য প্রতিযোগীদের প্রতিযোগিতা করা উচিত। আর তার মিশ্রণ হবে তাসনীমের পানি। এটি জান্নাতের একটি ঝর্ণা, যেখান থেকে আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা পান করবে’ (মুত্বাফ্ফিফীন ৮৩/২৫-২৮)।
জান্নাতে রয়েছে অসংখ্য পানির ঝর্ণা। তাদের মধ্যে ‘সালসাবিল’, ‘কাফূর’, ও ‘তাসনীম’ নামে তিনটি ঝর্ণা মর্যাদার দিক দিয়ে সবার শীর্ষে। আমলের তারতম্যের কারণে জান্নাতবাসীদেরকে এর দ্বারা আপ্যায়ন করানো হবে। যা কখনো শেষ হবে না। মহান আল্লাহ বলেন, وَمَاءٍ مَسْكُوبٍ ‘(সেখানে থাকবে) প্রবহমান ঝর্ণা’ (ওয়াক্বি‘আহ ৫৬/৩১)। তিনি অন্যত্র বলেন, فِيهِمَا عَيْنَانِ نَضَّاخَتَانِ ‘বাগান দু’টিতে আছে দ’ুটি বেগবান ঝর্ণা’ (আর-রহমান ৫৫/৬৬)। তিনি আরো বলেন, جَزَاؤُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا... ‘তাদের প্রভুর কাছে তাদের পুরস্কার হল স্থায়ী জান্নাত, যার নীচ দিয়ে ঝর্ণাসমূহ প্রবাহিত হয়, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে...’ (বাইয়েনাহ ৯৮/৮)।
‘সালসাবিল’ ঝর্ণার বিবরণ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَيُسْقَوْنَ فِيهَا كَأْسًا كَانَ مِزَاجُهَا زَنْجَبِيلًا- عَيْنًا فِيهَا تُسَمَّى سَلْسَبِيلًا. ‘সেখানে তাদের পান করতে দেওয়া হবে আদা মিশ্রিত (ঝর্ণার) পানি। জান্নাতের এমন এক ঝর্ণার নাম ‘সালসাবিল’ (দাহর ৭৬/১৭-১৮)।
‘কাফূর’ ঝর্ণার পানীয় পান করে জান্নাতবাসীরা আত্মতৃপ্তি অনুভব করবে। যে পানিতে সর্বদা কাফূরের সুঘ্রাণ পাওয়া যাবে। মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّ الْأَبْرَارَ يَشْرَبُونَ مِنْ كَأْسٍ كَانَ مِزَاجُهَا كَافُورًا- عَيْنًا يَشْرَبُ بِهَا عِبَادُ اللَّهِ يُفَجِّرُونَهَا تَفْجِيرًا. ‘সৎকর্মশীল ব্যক্তিরা পান করবে এমন পানীয়, যার মিশ্রণ হবে কাফূরের। এটা এমন একটি ঝর্ণা, যা থেকে আল্লাহর বান্দারা পান করতে থাকবে। আর এই ঝর্ণাকে তারা যেমন খুশি তেমন প্রবাহিত করতে পারবে’ (দাহর ৭৬/৫-৬)।
জান্নাতীদের আত্মা ও চক্ষুযুগল পরিতৃপ্ত করার জন্য সেখানে সর্বদা ঝর্ণা ও জলপ্রপাত প্রবাহিত হবে। সেখানে মুত্তাক্বীদের জন্য উত্তম পানীয়ের সাথে তাসনীমের স্বচ্ছ ও সুমিষ্ট পানি মিশ্রণ করা হবে। যেমন-আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فِيهَا عَيْنٌ جَارِيَةٌ ‘সেখানে রয়েছে প্রবহমান ঝর্ণাসমূহ’ (গাশিয়াহ ৮৮/১২)। হাদীছে এসেছে,
عَنْ حَكِيْمِ بْنِ مُعَاوِيَةَ عَنْ اَبِيْهِ عَنِ النّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إنّ فِى الْجَنَّةِ بَحْرَ الْعَسَلِ وَبَحْرَ اللَّبَنِ وَبَحرَ الْخَمْرِ ثُمَّ تُشَقَّقُ الْانْهَارُ بَعْدُ.
হাকীম ইবনে মু‘আবিয়া (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, জান্নাতে পানির সাগর, মধুর সাগর, দুধের সাগর এবং শরাবের সাগর রয়েছে। অতঃপর তাদের থেকে আরও অনেক নদী প্রবাহিত হবে।[4] সুতরাং উক্ত হাদীছ থেকে প্রমাণিত হয় যে, জান্নাতে সাধারণত মোট চারটি নহর রয়েছে। যেমন- (১) পানির (২) মধুর (৩) দুধের ও (৪) শরাবের। যা জান্নাতবাসীরা অত্যন্ত আনন্দের সাথে পান করবে এবং আত্মতৃপ্তিতে ভরপুর থাকবে। কোন কমতি থাকবে না।
ঘ. পাখির ভূনা গোশত ও মাছের কলিজা :
জান্নাতবাসীদের জন্য থাকবে তাদের পসন্দমত পাখির গোশত। তারা যখন যেভাবে পাখির গোশত খেতে চাইবে, তখন সেভাবে তাদের সামনে এসে যাবে। আল্লাহ বলেন, وَلَحْمِ طَيْرٍ مِمَّا يَشْتَهُونَ ‘এবং এমন সব পাখির গোশত দেয়া হবে, যা তারা কামনা করবে’ (ওয়াক্বি‘আহ ৫৬/২১)। জান্নাতীদেরকে হাউযে কাওছারে উড়ে বেড়ানো পাখির গোশত খেতে দেওয়া হবে। যাতে তারা পূর্ণ আত্মতৃপ্তি অনুভব করবে। সেখানে তাদের সর্বপ্রথম খাদ্য দেওয়া হবে মাছের কলিজা এবং গরুর গোশত। আর সর্বপ্রথম পানীয় হবে ‘সালসাবিল’ নামক কূপের পানি।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍt قَالَ سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ r مَا الْكَوْثَرُ قَالَ ذَاكَ نَهْرٌ أَعْطَانِيهِ اللَّهُ يَعْنِى فِى الْجَنَّةِ أَشَدُّ بَيَاضًا مِنَ اللَّبَنِ وَأَحْلَى مِنَ الْعَسَلِ فِيهَا طَيْرٌ أَعْنَاقُهَا كَأَعْنَاقِ الْجُزُرِ قَالَ عُمَرُ إِنَّ هَذِهِ لَنَاعِمَةٌ. قَالَ رَسُولُ اللَّهِ r أَكَلَتُهَا أَنْعَمُ مِنْهَا.
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হল, ‘কাওছার’ কী? উত্তরে তিনি বললেন, এটা একটা নদী, যা আল্লাহ আমাকে জান্নাতে দান করবেন। এর পানি দুধ অপেক্ষা শুভ্র হবে ও মধু অপেক্ষা মিষ্টি হবে। আর সেখানে এমন পাখি থাকবে যাদের গর্দান হবে উটের ন্যায়। তখন ওমর (রাঃ) বললেন, ঐ পাখিরা খুব আনন্দে আছে। জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ঐ পাখিগুলোর ভক্ষণকারীরা তাদের চেয়ে আরো আনন্দে রয়েছে।[5] অন্য হাদীছে এসেছে, ‘ জনৈক ইহুদী রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল, যেদিন আসমান ও যমীন পরিবর্তন হয়ে যাবে, সেদিন মানুষ কোথায় থাকবে? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, পুলছিরাতের নিকটবর্তী এক অন্ধকার জায়গায়। অতঃপর সে পুনরায় প্রশ্ন করল, সর্বপ্রথম কে পুলছিরাত অতিক্রম করবে? তিনি বললেন, গরীব মুহাজিরগণ। পাদ্রী আবার জিজ্ঞেস করল, জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশ করার পর সর্বপ্রথম তাদের কী খাবার দেওয়া হবে? তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, মাছের কলিজা। সে আবার বলল, এরপর কী পরিবেশন করা হবে, তিনি বললেন, জান্নাতে পালিত গরুর গোশত। এরপর ইহুদী প্রশ্ন করল, খাদ্য খাওয়ার পর পানীয় হিসাবে কী পরিবশেন করা হবে? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘সালসাবিল’ নামক ঝর্ণার পানি। ইহুদী পাদ্রী বলল, আপনি সত্য বলেছেন...।[6]
ঙ. আয়তনয়না হূর :
জান্নাতবাসী পুরুষদের জন্য ডাগর চক্ষু বিশিষ্ট মণিমুক্তা সদৃশ, স্পর্শহীনা, ষোড়শী যুবতী, সমবয়স্কা, চিরকুমারী, সচচরিত্রতা, সুন্দরী হূর ও রমণীরা থাকবে। তারা মোতির মত শুভ্র ও স্বচ্ছ হবে এবং তাদের রং হবে এমন নিখুঁত, যেন তা সংরক্ষিত স্বর্ণালঙ্কার। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَحُورٌ عِينٌ،كَأَمْثَالِ اللُّؤْلُؤِ الْمَكْنُونِ ‘আর সেখানে থাকবে ডাগর ডাগর চক্ষু বিশিষ্ট হূরেরা, তারা যেন সুরক্ষিত মুক্তার ন্যায়’ (ওয়াকি‘বআহ ৫৬/২০-২৩)। তিনি বলেন, فَجَعَلْنَاهُنَّ أَبْكَارًا, عُرُبًا أَتْرَابًا ‘তাদেরকে আমরা করেছি কুমারী, সোহাগিণী ও সমবয়সী’ (ওয়াক্বি‘আহ ৫৬/৩৬-৩৭)। অতঃপর তিনি বলেন, فِيهِنَّ خَيْرَاتٌ حِسَانٌ ‘এসবের মধ্যে থাকবে উৎকৃষ্ট ও সুন্দরী রমণীরা’ (আর-রহমান ৫৫/৭০)। حُورٌ مَّقْصُورَاتٌ فِي الْخِيَامِ. ‘তাঁবুতে সুরক্ষিত হূরেরা প্রস্ত্তত থাকবে’ (আর-রহমান ৫৫/৭২)। অন্যত্র তিনি বলেন, كَذَلِكَ وَزَوَّجْنَاهُمْ بِحُورٍ عِينٍ ‘এমনিভাবে আমরা তাদেরকে সুনয়না সুন্দরী স্ত্রীর সাথে বিয়ে দেব’ (আদ-দুখান ৪৪/৫৪; তূর ৫২/২০)।
জান্নাতের রমণীরা এত পবিত্র ও নিষ্কলুষ যে, ইতিপূর্বে তাকে কোন মানব বা জিন স্পর্শ করেনি, যা শুধু ঐ জান্নাতীদের জন্যই নির্দিষ্ট থাকবে। আল্লাহ বলেন, فِيهِنَّ قَاصِرَاتُ الطَّرْفِ لَمْ يَطْمِثْهُنَّ إِنْسٌ قَبْلَهُمْ وَلَا جَانٌّ، فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ، كَأَنَّهُنَّ الْيَاقُوتُ وَالْمَرْجَانُ. ‘এসবের মধ্যে থাকবে আয়তনয়না রমণীরা, যাদেরকে এই জান্নাতীদের আগে কোন মানুষ কিংবা জিন স্পর্শ করেনি। অতএব তোমরা তোমাদের প্রভুর কোন্ নে‘মতকে অস্বীকার করবে? তারা যেন নীলকান্তমণি ও প্রবাল (সদৃশ)’ (আর-রহমান ৫৫/৫৬-৫৮)।
হূরেরা ডিমের মধ্যকার লুক্কায়িত শুভ্র ঝিল্লী চামড়ার চেয়েও অধিক সুন্দর, নরম ও মোলায়েম হবে। মহান বলেন, وَعِنْدَهُمْ قَاصِرَاتُ الطَّرْفِ عِينٌ, كَأَنَّهُنَّ بَيْضٌ مَكْنُونٌ. ‘তাদের পাশে থাকবে সংযতদৃষ্টি, ডাগরচক্ষু বিশিষ্ট রমণীরা। তারা যেন সুরক্ষিত ডিম’ (ছাফ্ফাত ৩৭/৪৮-৪৯)। তিনি বলেন, وَعِنْدَهُمْ قَاصِرَاتُ الطَّرْفِ أَتْرَابٌ، هَذَا مَا تُوعَدُونَ لِيَوْمِ الْحِسَابِ. ‘তাদের নিকট থাকবে আয়তনয়না সমবয়স্কা রমণীরা, বিচার দিবসে তোমাদের জন্য যা প্রতিশ্রুতি করা হয়েছিল’ (ছোয়াদ ৩৮/৫২-৫৩)। وَكَوَاعِبَ أَتْرَابًا ‘এবং সমবয়স্কা নব্য কুমারীবৃন্দ’ (নাবা ৭৮/৩৩)।
জান্নাতী রমণীরা সব ধরনের প্রকাশ্য দোষ-ত্রুটি হতে মুক্ত থাকবে। যেমন হায়েয, নিফাস প্রভৃতি। অনুরূপ অপ্রকাশ্য দোষ-ত্রুটি রাগ, হিংসা, বিদ্বেষ ইত্যাদি থেকেও সম্পূর্ণ মুক্ত থাকবে। যেমন-وَلَهُمْ فِيهَا أَزْوَاجٌ مُطَهَّرَةٌ وَهُمْ فِيهَا خَالِدُونَ ‘সেখানে তাদের জন্য রয়েছে পবিত্র স্ত্রীগণ। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে’ (বাক্বারাহ ২/২৫)। জান্নাতী রমণীদের পরিচয় বর্ণনা দিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
(1) عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍt قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ r غَدْوَةٌ فِى سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ رَوْحَةٌ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا وَلَوْ أَنَّ امْرَأَةً مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ اطَّلَعَتْ إِلَى أَهْلِ الأَرْضِ لأَضَاءَتْ مَا بَيْنَهُمَا وَلَمَلأَتْهُ رِيحًا وَلَنَصِيفُهَا عَلَى رَأْسِهَا خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا.
(১) আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, কোন সকাল ও সন্ধ্যা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা দুনিয়া ও তার মধ্যকার সবকিছু থেকে উত্তম। আর যদি জান্নাতী নারীদের মধ্যে কোন নারী পৃথিবীতে উঁকি দিত, তাহলে পূর্বে ও পন্ডিমের মাঝে যা কিছু আছে সবকিছু উজ্জ্বল হয়ে যেত ও সুঘ্রাণে ভরপুর হয়ে যেত। তাছাড়া হূরের মাথার একটা উড়না পৃথিবীর সকল নে‘মত অপেক্ষা মূল্যবান’।[7]
(2) عَنْ أَبِى سَعِيدٍ t عَنِ النَّبِىِّ r قَالَ إِنَّ أَوَّلَ زُمْرَةٍ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ضَوْءُ وُجُوهِهِمْ عَلَى مِثْلِ ضَوْءِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ وَالزُّمْرَةُ الثَّانِيَةُ عَلَى مِثْلِ أَحْسَنِ كَوْكَبٍ دُرِّىٍّ فِى السَّمَاءِ لِكُلِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ زَوْجَتَانِ عَلَى كُلِّ زَوْجَةٍ سَبْعُونَ حُلَّةً يُرَى مُخُّ سَاقِهَا مِنْ وَرَائِهَا.
(২) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন সর্বাগ্রে যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের চেহার মধুপূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল ঝকঝকে হবে। আর দ্বিতীয় দলটির চেহারা হবে আকাশের কোন উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় আলোকজ্জ্বল। আর সেখানে প্রত্যেককে দু’জন করে স্ত্রী দেওয়া হবে। প্রত্যেক স্ত্রী সত্তর জোড়া পোশাক পরিবধান করে থাকবে। বস্ত্রগুলো এমন সূক্ষ্ম হবে যে, বাহির থেকে তাদের পায়ের গোছার মজ্জা দেখা যাবে।[8]
(3) عَنْ أَنَسٍ t أَنَّ النَّبِيَّ r قَالَ إِنَّ الْحُوْرَ الْعِيْنَ لِتَغْنِيَنَّ فِيْ الْجَنَّةِ يَقُلْنَ نَحْنُ الْحُوْرُ الْحِسَانُ خَبِئنَا لِأَزْوَاجٍ كِرَامٍ.
(৩) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, জান্নাতে আকর্ষণীয় ডাগর ডাগর চক্ষু বিশিষ্ট হূরেরা সুমধুর কণ্ঠে সংগীত পরিবেশন করবে। তারা বলবে, আমরা সুন্দরী, সতী ও সৎচরিত্রের অধিকারিণী হূর। এতদিন আমরা আমাদের সম্মানিত স্বামীদের অপেক্ষায় অপেক্ষমাণ ছিলাম।[9]
(4) عَنْ مُحَمَّدٍ قَالَ إِمَّا تَفَاخَرُوا وَإِمَّا تَذَاكَرُوا الرِّجَالُ فِى الْجَنَّةِ أَكْثَرُ أَمِ النِّسَاءُ فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ t أَوَلَمْ يَقُلْ أَبُو الْقَاسِمِ r إِنَّ أَوَّلَ زُمْرَةٍ تَدْخُلُ الْجَنَّةَ عَلَى صُورَةِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ وَالَّتِى تَلِيهَا عَلَى أَضْوَإِ كَوْكَبٍ دُرِّىٍّ فِى السَّمَاءِ لِكُلِّ امْرِئٍ مِنْهُمْ زَوْجَتَانِ اثْنَتَانِ يُرَى مُخُّ سُوقِهِمَا مِنْ وَرَاءِ اللَّحْمِ وَمَا فِى الْجَنَّةِ أَعْزَبُ.
(৪) মুহাম্মাদ ইবনু সিরীন (রহঃ) বলেন, গৌরব হিসাবে বা আলোচনার বস্ত্ত হিসাবে এই তর্ক-বিতর্ক হয় যে, জান্নাতে পুরুষের সংখ্যা বেশী হবে, না নারীদের সংখ্যা বেশী হবে? তখন আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আবুল কাসেম (ছাঃ) কি বলেননি, প্রথম যে দলটি জান্নাতে যাবে তারা চন্দ্রের ন্যায় উজ্জ্বল চেহারা বিশিষ্ট হবে। তাদের পরবর্তী দলটি হবে আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায়। তাদের প্রত্যেকেরই এমন দু’টি করে স্ত্রী হবে, যাদের পদনালীর মজ্জা গোশত ভেদ করে দৃষ্টিগোচর হবে। আর জান্নাতে কেউই স্ত্রীবিহীন থাকবে না।[10]
চ. শান্তির আওয়াজ :
জান্নাতের মধ্যে জান্নাতবাসীরা কোন প্রকার অশ্লীল ও শালীনতাহীন কথা শুনতে পাবে না। কোন আজেবাজে, মিথ্যা, পাপের কথা ও কাজ সেখানে দৃশ্যমান হবে না। তারা চতুর্দিক থেকে শুধু সালাম আর সালাম তথা শান্তি আর শান্তি আওয়াজ শুনতে পাবে। এ মর্মে আল্লাহ বলেন, لَا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْوًا وَّلَا كِذَّابًا ‘সেখানে তারা কোন মিথ্যা ও অসার কথা শুনবে না’ (নাবা ৮৯/৩৫)। لَا تَسْمَعُ فِيهَا لَاغِيَةً ‘সেখানে তারা কোন অবান্তর কথা শ্রবণ করবে না’ (গাশিয়া ৮৮/১১)। لَا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْوًا وَّلَا تَأْثِيمًا، إِلَّا قِيلًا سَلَامًا سَلَامًا. ‘সেখানে তারা কোন আজেবাজে কথা কিংবা পাপের কথা শুনবে না, শুনবে শুধু ‘সালাম সালাম’ (শান্তি শান্তি) আওয়াজ’ (ওয়াক্বি‘আহ ৫৬/২৫-২৬)। তিনি আরো বলেন, لَا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْوًا إِلَّا سَلَامًا وَّلَهُمْ رِزْقُهُمْ فِيهَا بُكْرَةً وَّعَشِيًّا ‘জান্নাতে তারা শান্তি ছাড়া কোন অসার বাক্য শ্রবণ করবে না। তাদের জন্য সেখানে সকাল-সন্ধ্যায় খাদ্য পরিবেশন করা হবে’ (মারিয়াম ১৯/৬২)। সেখানে তারা পরস্পরের সাক্ষাতে সালাম বিনিময় করবে এবং প্রত্যেক কথার পরিসমাপ্তিতে আল্লাহর প্রশংসা করবে। সেখানে তারা সর্বদা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করবে। যেমন- دَعْوَاهُمْ فِيهَا سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَتَحِيَّتُهُمْ فِيهَا سَلَامٌ وَآخِرُ دَعْوَاهُمْ أَنِ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ. ‘সেখানে তাদের প্রার্থনা হ’ল سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ (সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা) পাঠ করা। আর পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যম হল সালাম এবং তাদের প্রার্থনার সমাপ্তি ঘটে الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (আল-হামদুল্লিা-হি রবিবল ‘আলামীন) বাক্য উচ্চারণ করে’ (ইউনুস ১০/১০)।
করুণাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং সকল ডানওয়ালা বা জান্নাতবাসীদের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি সালাম বর্ষিত হবে। যেমন- سَلَامٌ قَوْلًا مِّنْ رَّبٍّ رَحِيمٍ‘পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ হতে তাদের বলা হবে সালাম’ (ইয়াসিন ৩৬/৫৮)। তিনি আরো বলেন, فَأَمَّا إِنْ كَانَ مِنَ الْمُقَرَّبِينَ، فَرَوْحٌ وَّرَيْحَانٌ وَّجَنَّتُ نَعِيمٍ، وَأَمَّا إِنْ كَانَ مِنْ أَصْحَابِ الْيَمِينِ، فَسَلَامٌ لَكَ مِنْ أَصْحَابِ الْيَمِينِ. ‘যদি সে আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের একজন হয়, তাহ’লে তার জন্য রয়েছে শান্তি, উত্তম জীবিকা আর সুখের বাগান। আর যদি সে ডানপন্থীদের একজন হয়, তাহ’লে তাকে বলা হবে, তোমার জন্য ডানপন্থীদের পক্ষ থেকে সালাম’ (ওয়াক্বি‘আহ ৫৬/৮৮/৯১)।
ছ. জান্নাতের বৃক্ষসমূহ :
জান্নাতের মধ্যে নয়নাভিরাম সবুজাভ নান্দনিক দৃশ্যের এক অভূতপূর্ব পরিবেশ সৃষ্টিতে জান্নাতী বৃক্ষের অবদান অতুলনীয়। জান্নাত বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরাজিতে ভরপুর। মৌসুমের ফলের গাছ সেখানে মওজুদ রয়েছে। তবে খেজুর, আঙ্গুর ও ডালিমের গাছ আছে অধিক পরিমাণে। যেমন আল্লাহর বাণী, فِيهِمَا فَاكِهَةٌ وَّنَخْلٌ وَّرُمَّانٌ ‘সেখানে ফল-মূল, খেজুর ও ডালিম রয়েছে (অধিক পরিমাণে)’ (আর-রহমান ৫৫/৬৮)। তিনি আরো বলেন, حَدَائِقَ وَأَعْنَابًا ‘বাগানসমূহ ও নানাবিদ আঙ্গুর’ (নাবা ৭৮/৩২)। জান্নাতের বৃক্ষসমূহ কন্টকমুক্ত এবং ফলভারে নুয়ে পড়া। সেখানে বৃক্ষসমূহ সর্বদা পত্র-পল্লব, শস্য-শ্যামল, লম্বা ও ঘন হবে। আর তাদের রং হবে সবুজ কালো মিশ্রিত। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ذَوَاتَا أَفْنَانٍ ‘উভয় জান্নাতে বিভিন্ন ধরনের পল্লববিশিষ্ট বৃক্ষে পূর্ণ থাকবে’ (আর-রহমান ৫৫/৪৮)। مُدْهَامَّتَانِ ‘সেখানে ঘন সবুজাভ দু’টি উদ্যান থাকবে’ (আর-রহমান ৫৫/৬৪)।
চিরসবুজ ছায়ানীড়, সুনিবিড় বৃক্ষলতা শোভিত জান্নাতের বৃক্ষসমূহের ছায়া অনেক দীর্ঘ হবে। যে ছায়া দ্রম্নতগামী উষ্ট্রারোহী একাধারে শত বছর চলার পরও তা সমাপ্ত হবে না। বৃক্ষগুলো হবে কন্টকহীন পরিষ্কার। জান্নাতের তূবা নামক বৃক্ষের ফলের খোসা দিয়ে তাদের জন্য তৈরী করা হবে পরিধেয় বস্ত্র। মহান আল্লাহ বলেন,فِي سِدْرٍ مَّخْضُودٍ، وَطَلْحٍ مَّنْضُودٍ، وَظِلٍّ مَّمْدُودٍ، وَمَاءٍ مَّسْكُوبٍ،وَفَاكِهَةٍ كَثِيرَةٍ. ‘সেখানে আছে কাঁটাহীন কুলগাছ, সারিবদ্ধ কাঁদিওয়ালা কলাগাছ, সম্প্রসারিত ছায়া, প্রস্রবণ পানি আর প্রচুর ফল-মূল ’ (ওয়াক্বি‘আহ ৫৬/২৭-৩২)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
(1) عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ tعَنِ النَّبِىِّ r قَالَ إِنَّ فِى الْجَنَّةِ لَشَجَرَةً يَسِيرُ الرَّاكِبُ فِى ظِلِّهَا مِائَةَ سَنَةٍ وَاقْرَءُوا إِنْ شِئْتُمْ وَظِلٍّ مَّمْدُودٍ.
(১) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, জান্নাতে একটি বৃক্ষ রয়েছে, যার ছায়ায় কোন অশ্বারোহী শত বছর চলার পর শেষ প্রান্তে পৌঁছতে সক্ষম হবে। তুমি যদি পড়তে চাও তবে وَظِلٍّ مَمْدُودٍ ‘সম্প্রসারিত ছায়া’ পড়তে পার।[11]
(2) عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّt عَنْ رَسُولِ اللَّهِ r أَنَّ رَجُلاً قَالَ لَهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ r طُوبَى لِمَنْ رَآكَ وَآمَنَ بِكَ قَالَ طُوبَى لِمَنْ رَآنِى وَآمَنَ بِى ثُمَّ طُوبَى ثُمَّ طُوبَى ثُمَّ طُوبَى لِمَنْ آمَنَ بِى وَلَمْ يَرَنِى قَالَ لَهُ رَجُلٌ وَمَا طُوبَى قَالَ شَجَرَةٌ فِى الْجَنَّةِ مَسِيرَةُ مِائَةِ عَامٍ ثِيَابُ أَهْلِ الْجَنَّةِ تَخْرُجُ مِنْ أَكْمَامِهَا.
(২) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! যে ব্যক্তি আপনাকে দেখেছে এবং আপনার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে, তার জন্য কি তূবা গাছের সুসংবাদ? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আমাকে দেখেছে এবং আমার উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে তূবা গাছ তার জন্য। অতঃপর তূবা গাছ, অতঃপর তূবা গাছ। অতঃপর তূবা গাছ তার জন্য, যে ব্যক্তি আমার উপর ঈমান এনেছে কিন্তু আমাকে দেখেনি। লোকটি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলল, তূবা গাছটি কী? তিনি বললেন, তা হল জান্নাতের একটি বৃক্ষ, যার ছায়া হবে একশ’ বছর চলার পথের সমান। তার খোসা দিয়ে জান্নাতবাসীদের পরিধেয় বস্ত্র তৈরী করা হবে।[12]
(3) عَنْ أَبِي أُمَامَةَ t قَالَ كَانَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللهِ r يَقُولُونَ إِنَّ اللَّهَ يَنْفَعُنَا بِالأَعْرَابِ وَمَسَائِلِهِمْ أَقْبَلَ أَعْرَابِيٌّ يَوْمًا فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ r لَقَدْ ذَكَرَ اللَّهُ فِي الْقُرْآنِ شَجَرَةً مُؤْذِيَةً وَمَا كُنْتُ أَرَى أَنَّ فِي الْجَنَّةِ شَجَرَةٌ تُؤْذِي صَاحِبَهَا فَقَالَ رَسُولُ اللهِ r وَمَا هِيَ قَالَ السِّدْرُ فَإِنَّ لَهَا شَوْكًا فَقَالَ رَسُولُ اللهِ r (فِي سِدْرٍ مَخْضُودٍ) يَخْضِدُ اللَّهُ شَوْكَهُ فَيُجْعَلُ مَكَانَ كُلِّ شَوْكَةٍ ثَمَرَةٌ فَإِنَّهَا تُنْبِتُ ثَمَرًا تُفْتَقُ الثَّمَرَةُ مَعَهَا عَنِ اثْنَيْنِ وَسَبْعِينَ لَوْنًا مَا مِنْهَا لَوْنٌ يُشْبِهُ الآخَرَ.
(৩) আবু উমামা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছাহাবীগণ বলতেন, নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকটে বেদুইনদের আগমন এবং প্রশণ করা আমাদের জন্য খুবই উপকার হত। একদা এক বেদুইন এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! পবিত্র কুরআনে আল্লাহ এমন একটি গাছের নাম উল্লেখ করেছেন, যা কষ্ট দেয়। আর আমি দেখছি এই গাছটি জান্নাতে তার অধিবাসীদেরকে কষ্ট দিবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বললেন, সেটা কোন্ গাছ? সে বলল, কুলগাছ। কারণ কুলগাছে কাঁটা আছে। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) فِي سِدْرٍ مَخْضُودٍ (‘কন্টকহীন কুলবৃক্ষ’) পাঠ করে বললেন, আল্লাহ তা‘আলা ঐ গাছের কাঁটা দূর করে দিয়েছেন। তাতে প্রত্যেক কাঁটার জায়গায় অধিক ফল তৈরী করা হবে। আর প্রত্যেক কুলের বাহাত্তর প্রকারের স্বাদ থাকবে, যেগুলোর রং ও স্বাদ হবে পৃথক পৃথক।[13]
জান্নাতের বৃক্ষ দুনিয়ার বৃক্ষের ন্যায় হবে না। এগুলো আকৃতিতে অনেক বড় এবং স্বাদে-গন্ধে হবে অতুলনীয়। উক্ত গাছের মূল বা শিকড় সবুজ পান্নার মত। বৃক্ষের শাখার মূল হবে লাল স্বর্ণের। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
(4) عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ t قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ r مَا فِى الْجَنَّةِ شَجَرَةٌ إِلاَّ وَسَاقُهَا مِنْ ذَهَبٍ.
(৪) আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘জান্নাতের প্রত্যেকটির গাছের মূল হবে স্বর্ণ নির্মিত’।[14]
(5) عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ t قَالَ نَخْلُ الْجَنَّةِ جُذُوعُهَا زُمُرُّدٌ أَخْضَرُ وَكَرَبُهَا ذَهَبٌ أَحْمَرُ وَسَعَفُهَا كِسْوَةٌ لأَهْلِ الْجَنَّةِ مِنْهَا مُقَطَّعَاتُهُمْ وَحُلَلُهُمْ وَثَمَرُهَا أَمْثَالُ الْقِلالِ أَوِ الدِّلاءِ أَشَدُّ بَيَاضًا مِنَ اللَّبَنِ وَأَحْلَى مِنَ الْعَسَلِ وَأَلْيَنُ مِنَ الزُّبْدِ لَيْسَ لَهُ عَجْمٌ.
(৫) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জান্নাতে সবুজ বৃক্ষের শিকড় সবুজ পান্নার হবে। আর তার শাখার মূলগুলো হবে লাল স্বর্ণের। তা দিয়ে জান্নাতীদের পোশাক তৈরী করা হবে। ঐ খেজুর হবে মটকা বা বালতির ন্যায়, যা দুধ থেকেও শুভ্র, মধু থেকেও মিষ্টি, মাখন হতেও নরম। যা কখনো শক্ত হবে না।[15]
জান্নাতে খেজুর বৃক্ষ অর্জনের মাধ্যম :
জান্নাতবাসী বলতেই জান্নাতের অফুরন্ত নে‘মতরাজি উপভোগকারী। কিন্তু ব্যক্তি তার দুনিয়াবী জীবনের কৃত কর্মের তারতম্যের ফল স্বরূপ জান্নাতের উত্তরাধিকারী হবে। সে হিসাবে যে বৃক্ষের ফল দুধ থেকেও শুভ্র, মধু থেকেও মিষ্টি এবং মাখন হতেও নরম তা পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার বৈকি। সে বৃক্ষ অর্জনের উপায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিম্মোক্ত বাণীতে বিবৃত হয়েছে।
(1) عَنْ جَابِرٍ t عَنِ النَّبِىِّ r قَالَ مَنْ قَالَ سُبْحَانَ اللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِحَمْدِهِ غُرِسَتْ لَهُ نَخْلَةٌ فِى الْجَنَّةِ.
(১) জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি سُبْحَانَ اللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِحَمْدِهِ (সুবহা-নাল্লাহিল আযীম ওয়াবি হামদিহি) বলবে, তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর বৃক্ষ রোপণ করা হবে।[16]
(2) عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ t أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ r مَرَّ بِهِ وَهُوَ يَغْرِسُ غَرْسًا فَقَالَ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ مَا الَّذِى تَغْرِسُ قُلْتُ غِرَاسًا لِى قَالَ أَلاَ أَدُلُّكَ عَلَى غِرَاسٍ خَيْرٍ لَكَ مِنْ هَذَا قَالَ بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ قُلْ سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ يُغْرَسْ لَكَ بِكُلِّ وَاحِدَةٍ شَجَرَةٌ فِى الْجَنَّةِ .
(২) আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। এমতাবস্থায় তিনি একটি বৃক্ষ রোপণ করছিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হে আবু হুরায়রা! তুমি কী রোপণ করছ? উত্তরে আমি বললাম, আমার জন্য একটি বৃক্ষ রোপণ করছি। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আমি কি তোমাকে এর চেয়ে উত্তম বৃক্ষ রোপণের কথা বলব না? তিনি বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, তাহ’লে তুমি বল سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ (সুবহা-নাল্লাহি ওয়াল হামদুল্লিা-হি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার)। অর্থ : যাবতীয় প্রশংসা পবিত্রময় আল্লাহর জন্য, যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই আর তিনিই মহান), তবে প্রত্যেক বার পাঠের বিনিময়ে জান্নাতে তোমার জন্য একটি করে বৃক্ষ রোপণ করা হবে।[17]
জ. অগণিত ফল-মূল :
জান্নাতের অধিবাসীদের জন্য সেখানে সব ধরণের ফল-মূল পর্যাপ্ত পরিমাণে মওজুদ থাকবে। যা কখনো ফুরিয়ে যাবে না এবং নষ্টও হবে না। দুনিয়ার কুলবৃক্ষগুলো কাঁটাযুক্ত এবং কম ফলবিশিষ্ট। পক্ষান্তরে জান্নাতের কুলবৃক্ষগুলো হবে অধিক ফল বিশিষ্ট ও সম্পূর্ণ কন্টকহীন।[18] আর এ বিষয়ে মহান আল্লাহই সর্বজ্ঞ। আর দুনিয়ার সাধারণ ফলের অবস্থা এই যে, মৌসুম শেষ হয়ে গেলে ফলও শেষ হয়ে যায়। কেননা কোন ফল গ্রীষ্মকালে হয় আবার কোন ফল শীতকালে হয়। আর মৌসুম শেষ হয়ে গেলে ফলের নাম নিশানা পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকে না। কিন্তু জান্নাতের প্রত্যেক ফল চিরস্থায়ী, চিরন্তন ও অপরিবর্তনীয়।[19] আল্লাহ বলেন, فِيهِمَا فَاكِهَةٌ وَنَخْلٌ وَرُمَّانٌ ‘সেখানে ফল-মূল, খেজুর ও ডালিম রয়েছে’ (আর-রহমান ৫৫/৬৮)। وَأَمْدَدْنَاهُمْ بِفَاكِهَةٍ وَلَحْمٍ مِمَّا يَشْتَهُونَ ‘আমি তাদেরকে তাদের আকাঙ্খা অনুসারে ফল-মূল ও গোশতের যোগান দেব’ (তূর ৫২/২২)। أُولَئِكَ لَهُمْ رِزْقٌ مَعْلُومٌ، فَوَاكِهُ وَهُمْ مُكْرَمُونَ ‘(সেখানে থাকবে) ফল-মূল, আর তারা সম্মানিত হবে সুখের উদ্যানে (জান্নাতে)’ (ছাফ্ফাত ৩৭/৪২-৪৩)। অন্যত্র তিনি বলেন, إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي ظِلَالٍ وَعُيُونٍ، وَفَوَاكِهَ مِمَّا يَشْتَهُونَ، كُلُوا وَاشْرَبُوا هَنِيئًا بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ. ‘মুত্তাক্বীগণ থাকবে ছায়া ও প্রস্রবণের ঝর্ণার মধ্যে, তাদের রুচিসম্মত ফল-মূলের প্রাচুর্যের সমাহারে। সুতরাং তোমরা তোমাদের কর্মের প্রতিফলস্বরূপ আত্মতৃপ্তির সাথে পানাহার কর’ (মুরসালাত ৭৭/৪১-৪৩)।
জান্নাতের নে‘মতরাজি ভোগ করার জন্য কারো অনুমতির প্রয়োজন হবে না। এ ব্যাপারে স্বেচ্ছাচারিতার চরমত্ব উম্মুক্ত থাকবে। হীনমন্যতা ও স্বার্থপরতার উপস্থিতিও বিন্দু পরিমাণ থাকবে না। সব সময় নাগালের মধ্যে পেয়ে যাবে জান্নাতী নে‘মত সমূহ। দাঁড়িয়ে, বসে, চলন্ত অবস্থায় যখন খুশি তখনই তা খেতে করতে পারবে। এ মর্মে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَفَاكِهَةٍ كَثِيرَةٍ، لَا مَقْطُوعَةٍ وَلَا مَمْنُوعَة.ٍ ‘প্রচুর ফল-মূল, যা কখনো শেষও হবে না, বাধাপ্রাপ্তও হবে না’ (ওয়াক্বি‘আহ ৫৬/৩২-৩৩)। وَفَاكِهَةٍ مِمَّا يَتَخَيَّرُونَ ‘(কিশোররা ঘুরে বেড়াবে) এমন সব ফল নিয়ে, যা তারা পসন্দ করবে (ওয়াক্বি‘আহ ৫৬/২০)। অন্যত্র তিনি বলেন, وَدَانِيَةً عَلَيْهِمْ ظِلَالُهَا وَذُلِّلَتْ قُطُوفُهَا تَذْلِيلًا ‘জান্নাতের (গাছের) ছায়া তাদের উপর নুয়ে থাকবে এবং তার ফল-মূল তাদের নাগালের মধ্যে নীচে ঝুলিয়ে রাখা হবে’ (দাহর ৭৬/১৪)। قُطُوفُهَا دَانِيَةٌ ‘যার ফলরাশী অবনমিত থাকবে নাগালের মধ্যে’ (হা-ক্কাহ ৬৯/২৩)। মহান আল্লাহ বলেন, مَثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِي وُعِدَ الْمُتَّقُونَ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ أُكُلُهَا دَائِمٌ وَظِلُّهَا تِلْكَ عُقْبَى الَّذِينَ اتَّقَوْا... ‘মুত্তাক্বীদের নিকটে যে জান্নাতের ওয়াদা করা হয়েছিল তার উদাহরণ এইরূপ, যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত। তার ফলসমূহ ও ছায়া চিরস্থায়ী এবং সদা সর্বদা বিদ্যমান, যারা মুত্তাক্বী এটা তাদের জন্য...’ (রা‘দ ১৩/৩৫)।
রাসূল (ছাঃ)-কে মি‘রাজ রজনীতে যখন সিদরাতুল মুনতাহার নিকট নিয়ে যাওয়া হল তখন তিনি দেখলেন যে, نَبِقُهَا مِثْلُ قِلاَلِ هَجَرَ وَإِذَا وَرَقُهَا مِثْلُ آذَانِ الْفِيَلَةِ ‘জান্নাতের ফল হাজার অঞ্চলের মটকার ন্যায় এবং তার পাতাগুলো হাতির কানের মত’।[20] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন,
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ t قَالَ خَسَفَتِ الشَّمْسُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ r فَصَلَّى قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ رَأَيْنَاكَ تَنَاوَلُ شَيْئًا فِى مَقَامِكَ ثُمَّ رَأَيْنَاكَ تَكَعْكَعْتَ قَالَ إِنِّى أُرِيتُ الْجَنَّةَ فَتَنَاوَلْتُ مِنْهَا عُنْقُودًا وَلَوْ أَخَذْتُهُ لأَكَلْتُمْ مِنْهُ مَا بَقِيَتِ الدُّنْيَا.
আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে একবার সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। তখন তিনি সূর্যগ্রহণের ছালাত আদায় করেন। ছাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! ছালাতে দাঁড়ানো অবস্থায় আপনি সামনে কিছু ধরার জন্য এগিয়ে যেতে দেখলাম। অতঃপর আবার পিছিয়ে আসতে দেখলাম। তিনি বললেন, আমাকে জান্নাত দেখানো হয় আর আমি একটি আঙ্গুরের থোকা ধরতে যাচ্ছিলাম। আমি যদি তা নিয়ে আসতে পারতাম, তাহ’লে দুনিয়া স্থায়ী থাকা পর্যন্ত তোমরা তা থেকে খেতে পারতে।[21]
জান্নাতবাসীদের জন্য সেখানে কাঁদি কাঁদি কলাগাছ থাকবে। যে কলা নিমণ থেকে উপর পর্যন্ত সাজানো থাকবে। আল্লাহ বলেন, وَطَلْحٍ مَنْضُودٍ ‘সারিবদ্ধ কাঁদিওয়ালা কলাগাছ’ (ওয়াক্বি‘আহ ৫৬/২৯)। উল্লেখ্য, উক্ত আয়াতে طَلْحٌ শব্দের অর্থ একটা বিরাট গাছ, যা হিজাযের ভূ-খ-- জন্মে থাকে। এটা কন্টকময় বৃক্ষ। এতে কাঁটা অত্যধিক বেশী থাকে। আর مَنْضُوْدٌ শব্দের অর্থ কাঁদি কাঁদি ফলযুক্ত গাছ। আরবরা এই গাছগুলোর গভীরতা ও মিষ্টি ছায়াকে খুবই পসন্দ করত। বাহ্যিকভাবে এই গাছ দুনিয়ার গাছের মতই হবে, কিন্তু কাঁটার স্থলে হবে মিষ্ট ফল। জাওহারী (রহঃ) বলেছেন, এই গাছটিকে طَلْحٌ ও বলে এবং طَلْعٌ ও বলে। আলী (রাঃ)ও অনুরূপ মন্তব্য করেন। তবে ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, এটা কুলের গুণবিশিষ্ট হবে। অর্থাৎ ঐ গাছগুলো কন্টকহীন এবং অধিক ফলদানকারী হবে। ইয়ামানবাসী কলাকে طَلْحٌ বলে এবং হিজাযবাসী مَوْزٌ বলে, যা লম্বা ও সম্প্রসারিত ছায়ায় থাকবে।[22]
ঝ. জান্নাতের সুগন্ধি ও খোশবু :
জান্নাত সুগন্ধিময় ও বিচ্ছুরিত খোশবুতে ভরপুর। পৃথিবীর সুগন্ধির সাথে যার তুলনা চলে না। উক্ত সুগন্ধি ও খোশবু এত সুন্দর ও হৃদয় আকৃষ্টকারী হবে, যা বহুদূর থেকে তার গন্ধ পাওয়া যাবে।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ قَتَلَ نَفْسًا مُعَاهَدًا لَمْ يَرَحْ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ وَإِنَّ رِيحَهَا يُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ أَرْبَعِينَ عَامًا.
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আত্মহত্যা করল, সে জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না। যদিও জান্নাতের সুগন্ধ চল্লিশ বছরের দূরত্বের পথ থেকে পাওয়া যায়।[23]
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَنِ ادَّعَى إِلَى غَيْرِ أَبِيهِ لَمْ يَرَحْ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ خَمْسِمِائَةِ عَامٍ.
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি অন্যের পিতাকে পিতা বলে দাবী করে, সে জান্নাতের সুগন্ধি পাবে না। অথচ তার সুগন্ধি ৫০০ বছরের দূরবর্তী স্থান থেকে পাওয়া যায়।[24] অন্য হাদীছে এসেছে, জেনেশুনে অন্যকে নিজের পিতা বলে আহবানকারী ব্যক্তির উপর জান্নাত হারাম।[25] অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ৭০ বছরের দূরবর্তী স্থান থেকেও তার সুগন্ধি পাওয়া যাবে।[26]
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ قَتَلَ مُعَاهِدًا لَهُ ذِمَّةُ اللَّهِ وَذِمَّةُ رَسُولِهِ لَمْ يَرَحْ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ سَبْعِينَ عَامًا.
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন যিম্মী মানুষকে হত্যা করবে, সে জান্নাতের সুবাসও পাবে না। যদিও তার সুগন্ধি ৪০ বছরের দূরবর্তী স্থান থেকে পাওয়া যায়।[27] উপরোক্ত হাদীছ সমূহ থেকে প্রমাণিত হয়, জান্নাতের সুগন্ধি ও খোশবু এত সুন্দর ও সুগন্ধময় যে, ৫০০ বছর, ৭০ বছর, ৪০ বছরের মত দূরবর্তী স্থান থেকেও তার সুঘ্রাণ পাওয়া যায়। হে আল্লাহ! আমাদেরকে এত নে‘মত সম্ভারে ভরপুর সুগন্ধময় জান্নাত দান করুন। আমীন!! [ক্রমশঃ]
[1]. তাফসীর ইবনু কাছীর ৭/৫০৯-৫১০ পৃঃ, উক্ত আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য।
[2]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৪৬৮; তাবারাণী কাবীর হা/৬৯৯৩, সনদ হাদীছ।
[3]. তিরমিযী হা/৩৩৬১; ইবনু মাজাহ হা/৪৩৩৪; দারেমী হা/২৮৩৭, সনদ ছহীহ।
[4]. তিরমিযী হা/২৫৭১; মিশকাত হা/৫৬৫০; সনদ ছহীহ।
[5]. তিরমিযী হা/২৫৪২; মুসনাদে আহমাদ হা/১৩৫০৫; মিশকাত হা/৫৬৪১; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৫১৪, সনদ ছহীহ।
[6]. মুসলিম হা/৭৪২; হাকিম হা/৬০৩৯; ইবনু হিববান হা/৭৪২২; ইবনু খুযায়মাহ হা/২৩২; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৩০৬।
[7]. বুখারী, তিরমিযী হা/১৬৫১; মিশকাত হা/৫৬১৪ ‘জান্নাত ও তার অধিবাসীদের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ।
[8]. তিরমিযী হা/২৫৩৫; মিশকাত হা/৫৬৩৫; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৭৩৬; ছহীহুল জামে‘ হা/২৫৬৪, সনদ ছহীহ।
[9]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩০০২; ছহীহুল জামে‘১৬০২; তাবারাণী আওসাত্ব হা/৬৪৯৭, সনদ ছহীহ।
[10]. মুসলিম হা/৭৩২৫; মুসনাদে আহমাদ হা/৭১৫২; ইবনু হিববান হা/৭৪২০; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৭৩৬।
[11]. বুখারী হা/৩২৫২; মুসলিম হা/৭৩১৪; ইবনু মাজাহ হা/৪৩৩৫; তিরমিযী হা/২৫২৫; মিশকাত হা/৫৬১৫।
[12]. মুসনাদে আহমাদ হা/১১৬৯১; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৯৮৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৯১৮, সনদ ছহীহ।
[13]. হাকিম হা/৩৭৭৮; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৩৭৪২, সনদ ছহীহ।
[14]. তিরমিযী হা/২৫২৪ ‘জান্নাতের গাছের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ; মিশকাত হা/৫৬৩১; ইবনু হিববান হা/৭৪১০, সনদ ছহীহ।
[15]. ইবনু মাসঊদ আল-বাগাভী (৪৩৬-৫১৬ হিঃ), শারহুস সুন্নাহ (আল-মাকতাবাতুল ইসলামী, বৈরূত ১৪০৩ হিঃ/১৯৮৩ খ্রিঃ) হা/৪৩৮৪, ‘ফিতান’ অধ্যায়; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব হা/৩৭৩৫।
[16]. তিরমিযী হা/৩৪৬৪-৩৪৬৫; হাকিম হা/১৮৮৮; মিশকাত হা/২৩০৪; ইবনু হিববান হা/৮২৬; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬৪; মুসনাদে আবী ইয়ালা হা/২২৩৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৪২৯, সনদ ছহীহ।
[17]. ইবনু মাজাহ হা/৩৮০৭; হাকিম হা/১৮৮৭; ছহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১৫৪৯, সনদ ছহীহ।
[18]. তাফসীর ইবনু কাছীর ৭/৫২৫ পৃঃ।
[19]. মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ শফী, সঊদী আরব থেকে মুদ্রিত, অনুবাদ : মাওলানা মহিউদ্দীন খান, তফসীরে মাআরেফুল ক্বোরান, ১৩২৬-১৩২৭ পৃঃ।
[20]. বুখারী হা/৩৮৮৭; মুসলিম হা/৪২৯; মুসনাদে আহমাদ হা/১৭৮৬৯; ইবনু হিববান হা/৪৮।
[21]. বুখারী হা/৭৪৮; মুসলিম হা/২১৪৭; নাসাঈ হা/১৪৯৩; মিশকাত হা/১৪৮২; মুসনাদে আহমাদ হা/২৭১১; তাফসীর ইবনু কাছীর ৭/৫২৯ পৃঃ।
[22]. তাফসীর ইবনু কাছীর ৭/৫২৬ পৃঃ, উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব; ইমাম জারীর আত-তাবারী (মৃঃ ৩১০ হিঃ), জামি‘উল বায়া-ন ফী তা’বীলিল কুরআন, তাহক্বীক্ব : আহমাদ মুহাম্মাদ শাকের, (মুয়াস্সাসাতুর রিসালাহ, প্রথম সংস্করণ, ১৪২০ হিঃ/২০০০ খ্রিঃ) ২৩/১০৯-১১০ পৃঃ।
[23]. বুখারী হা/৬৯১৪; ইবনু মাজাহ হা/২৬৮৬; ইবনু হিববান হা/৭৩৮২; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৩৫৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৪৫৭।
[24]. ইবনু মাজাহ হা/২৬১১; মুসনাদে আহমাদ হা/৬৮৩৪; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৩০৭; ছহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১৯৮৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৯৮৮।
[25]. বুখারী হা/৪৩২৬; মুসলিম হা/২২৮; আবুদাঊদ হা/৫১১৩; মিশকাত হা/৩৩১৪।
[26]. মুসনাদে আহমাদ হা/৬৮৩৪; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৩০৭; ছহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১৯৮৮, সনদ ছহীহ।
[27]. ইবনু মাজাহ হা/২৬৮৭; তিরমিযী হা/১৪০৩; ছহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৩০০৯, সনদ ছহীহ।