সাম্প্রতিক মুসলিম বিশ্ব

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 898 বার পঠিত

আপনারা একা বা পরিত্যক্ত নন

-ওআইসি মহাসচিব

‘ইসলামী সম্মেলন সংস্থা’ (ওআইসি)-এর একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়ে গত ১৪ নভেম্বর মহাসচিব একলেমেদ্দীন এহসানোগুল সম্প্রতি মিয়ানমারে এক শুভেচ্ছা সফর করেন। মিয়ানমারে অব্যাহত নির্যাতন ও নিষ্পেষণের শিকার বিপন্ন রোহিঙ্গা মুসলমানদের উদ্দেশ্যে আশ্বাসবাণী উচ্চারণ করে উক্ত কথা বলেন। অতঃপর ওআইসি প্রতিনিধি দল ইয়াঙ্গুন বিমানবন্দর থেকে বাইরে এলে উগ্রপন্থী বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তাদের আগমনের আগের দিন তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রদর্শন করে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা মিছিল করে ও শ্লোগান দেয়। তারা ওআইসি প্রতিনিধি দলের মিয়ানমার সফরকে সে দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বলে আখ্যায়িত করে।

বৌদ্ধ ও মুসলিমদের এক যৌথ মতবিনিময় সমাবেশে ওআইসি মহাসচিব বলেন, এ সংস্থা মিয়ানমারের সকল অধিবাসীর প্রতিই বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বৌদ্ধদের মধ্যে ধুমায়িত ভুল ধারণা দূর করার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘ওআইসি কোন ধর্মীয় সংস্থা নয়, এ সংস্থা ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে সাহায্য দেয় না’। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, সহিংসতা কিংবা ঘূর্ণিঝড় নার্গিসের ধ্বংসকা--র পরিপ্রেক্ষিতে ওআইসির সদস্যভুক্ত দেশগুলো যে সাহায্য প্রেরণ করেছিল, তাতে কোন বৈষম্য না করে মিয়ানমার সরকারের মাধ্যমে দেয়া হয়েছিল। উক্ত কথার জবাবে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতারা বলেন, ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গা বলে কিছু নেই, তারা বাঙালি। তাদের সেখানেই ফিরে যাওয়া উচিত। তারা মিথ্যা ইতিহাস বলে। তারা এখানে সহিংসতার সৃষ্টি করছে’। তারা বলেন, ‘আমরা ওআইসির কাছ থেকে কোন সাহায্য পাইনি, পেয়েছে রোহিঙ্গা মুসলিমরা’। তারা আরো বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের প্রতি ওআইসি যদি এতই দরদবোধ করে, তাহলে সদস্য দেশগুলোতে নিয়ে তাদের পুনর্বাসন করুক’।

উল্লেখ্য যে, ওআইসি প্রতিনিধি দল ‘সিওওয়’-এ পৌঁছলে সেখানখার মুসলিম জনতা তাদের স্বাগত জানায়। অতঃপর তারা ‘থাবুচাউং মসজিদ’ পরিদর্শন করেন। বহু মুসলিম তাদেরকে দেখে আবেগ-আপস্নুত হয়ে পড়েন। তাদের  চরম দুঃসময়ে এই প্রথম কোন বিশ্ব মুসলিম সংগঠনের প্রতিনিধিদের পাশে পেয়ে অনেকে আনন্দে কেঁদে ফেলেন। যারা কিছু ইংরেজি বলতে পারেন, তারা তাদের অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশা-দুর্ভোগের কথা জানান। তারা বলেন, তাদের কোনো স্বাস্থ্য সেবা নেই, ছেলেমেয়েরা স্কুলে পড়তে পারে না, কেউ চাকরি পায় না, এমনকি উগ্র বর্মীদের হামলার ভয়ে তারা গ্রামের বাইরেও যেতে পারেন না’।

তখন ওআইসি মহাসচিব তাদের উদ্দেশ্যে আবেগ জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা এ কথা বলতেই এখানে এসেছি যে, ‘আপনারা একা নন, আপনারা পরিত্যক্ত নন’। সমবেত মুসলমানরা তার এ কথা শুনে ‘আল-হামদুলিল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনিতে চারদিক মুখরিত করে তোলে।

ইসলামী সিমকার্ড

গ্রিসের এক ইঞ্জিনিয়ার ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের জন্য একটি মোবাইল ফোনের সিমকার্ড উদ্ভাবন করেছেন। যা দিয়ে তারা দৈনন্দিন জীবনে ধর্ম সংক্রান্ত আচার-অনুশাসন মেনে চলতে পারেন। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মুসলমানের বাস আফ্রিকা এবং এশিয়া মহাদেশে। এই দু’টি মহাদেশে মুঠোফোনের ব্যবহারও বাড়ছে অতিদ্রম্নত। ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ)-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের অর্ধেক মোবাইল ফোন এশিয়াতেই বাজারজাত করা হয়। কিন্তু এশিয়া ও আফ্রিকায় ব্যবহৃত মোবাইল ফোনগুলো স্মার্টফোন নয়, বরং পুরনো মুঠোফোন।

ইয়ানিস হাৎসোপুলোস একজন ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার। যিনি বসবাস করেন গ্রিসের থেসালোনিকিতে। তিনি যে ইসলামী সিমকার্ডটি উদ্ভাবন করেছেন তার বৈশিষ্ট্য হ’ল :

(ক) উক্ত সিমকার্ডটি স্মার্টফোন কিংবা পুরনো মডেলের মুঠোফোন দুটোতেই ব্যবহার করা যাবে।

(খ) ব্যবহারকারী এই মুঠোফোন দিয়ে ছালাতের ক্বিবলা নির্ধারণ করতে পারবেন।

(গ) এই মুঠোফোন মুছল্লীকে দিনে পাঁচবার ছালাত আদায়ের সময় রিংটোন বাজিয়ে মনে করিয়ে দেবে।

(ঘ) এমনকি ছালাত আদায়ের সময় ফোন নিজে থেকেই ‘মিউট’ বা বন্ধ হয়ে যাবে। তবে শিঘ্রই আরো দু’টি উপকারিতা পাওয়া যাবে। যথা :

(১) রামাযান মাসে এই ইসলামী মুঠোফোন ছিয়াম শুরু করা এবং ইফতার করার সময় রিংটোনের মাধ্যমে জানিয়ে দিবে ।

(২) এটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফাংশনগুলোকে ফেসবুকের সঙ্গে যুক্ত করে তা  বিশ্বের মুসলিম তরুণদের কাছে এর বার্তা পৌঁছে দিবে।

ইসলামী সিমকার্ড তৈরীর প্রেরণা : মূলতঃ ২০০৯ সালে ইয়ানিস হাৎসোপুলোসের প্রথম এ সিমকার্ডটি আবিষ্কারের ধারণাটা আসে। যখন তিনি স্পেনের বার্সেলোনায় ‘মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস’ (এমডবিস্নউসি)-এ অংশগ্রহণ করছিলেন। ‘এলজি সংস্থা’ সেই কংগ্রেসে একটি মোবাইল পেশ করে, যাতে মুসলিমদের জন্য বিশেষ ফাংশন ছিল। তা থেকেই হাৎসোপুলোসের মাথায় আইডিয়া আসে। এসব ফাংশন একটি সহজ সিমকার্ডে দিতে পারলে মুসলিমরা যে কোনো মুঠোফোনে সেই সিমকার্ড ঢুকিয়ে ফোনটিকে একটি ‘ইসলামী মুঠোফোনে’ পরিণত করতে পারবেন।

লিবিয়া ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদাসীনতায় বিপুল তেল ও গ্যাস সমৃদ্ধ দেশ লিবিয়া ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। কর্নেল গাদ্দাফীর পতনের ঠিক দু’বছর পর দেশটি আবারও একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার দুর্বল ও অকার্যকর। সশস্ত্র মিলিশিয়ারা বেপরোয়া, জাতীয় সেনাবাহিনী সদস্যদের আইন উপেক্ষায় দেশব্যাপী  বিরাজ করছে বিশৃঙ্খলা, অনিয়ম ও অশান্তি। আইন বলে সেখানে এখন কিছু নেই বললেই চলে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেমে গেছে। রাষ্ট্রীয় ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যর্থতায় জনগণ ক্রুদ্ধ।  সেখানে স্বায়ত্তশাসন ঘোষণা করা হয়েছে। ৬০ লাখ জনসংখ্যার দেশ লিবিয়ায় রাজনৈতিক প্রক্রিয়া মৃত। দক্ষিণ ও পন্ডিমে সক্রিয় হয়ে উঠেছে আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট গ্রম্নপগুলো। ইতিমধ্যেই দৈনিক তেল উৎপাদন ১৫ লাখ ব্যারেল থেকে ৬ লাখ ব্যারেলে নেমে এসেছে। ফলে অর্থনীতি হুমকির মুখে পতিত হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা তেল রফতানি টার্মিনালগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। লিবিয়ার তেলমন্ত্রী দাবি করেছেন, তেল রফতানির এ প্রতিবন্ধকতার কারণে শুধু গত পাঁচ মাসেই দেশ ১শ কোটি ডলার হারিয়েছে। পূর্বাঞ্চলের স্বঘোষিত সাইরেনাইকা সরকার স্বাধীনভাবে তেল বিক্রি করার চেষ্টা করছে। ১৫ নভেম্বর গণহত্যার ঘটনা ঘটে। এ সপ্তাহের শুরুতেই লিবিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান জেনারেল ইউসুফ আল-আতরাশকে হত্যা ও তার ডেপুটি মুছত্বফা নাহকে অপহরণ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র এখন লিবিয়ার সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে তাদের সাথে নানা গোষ্ঠী ও ব্যক্তির প্রতি অনুগত বিপুল অস্ত্র সজ্জিত মিলিশিয়াদের সংঘাতের আশংকা রয়েছে। অন্যদিকে সরকার ইসলামপন্থীসহ রাজনৈতিক দল ও গ্রম্নপগুলোর মধ্যে কোন উন্মুক্ত সংলাপ অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হয়েছে।



আরও