তাওহীদুল ইবাদাত
ড. আবু আমীনা বিলাল ফিলিপ্স
মুযাফফর বিন মুহসিন 1103 বার পঠিত
(৬) মুহাম্মাদ (ছাঃ) নূরের তৈরী :
সমাজে উক্ত ভ্রান্ত আক্বীদা বহুল প্রচলিত। এর পক্ষে কতিপয় জাল দলীল পেশ করা হয়। সেই জাল বর্ণনাগুলোই মূল পুঁজি।
(১) أَوَّلُ مَا خَلَقَ اللهُ نُوْرِىْ
(ক) (রাসূল (ছাঃ) বলেছেন) ‘আল্লাহ সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন’।
(ب) عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ بِأَبِىْ أَنْتَ وَأُمِّىْ أَخْبِرْنِىْ عَنْ أَوَّلِ شَيْءٍ خَلَقَهُ اللهُ قَبْلَ الْأَشْيَاءِ؟ قَالَ يَا جَابِرُ إِنَّ اللهَ تَعَالَى خَلَقَ قَبْلَ الْأَشْيَاءِ نُوْرَ نَبِيِّكَ مِنْ نُوْرِهِ فَجَعَلَ ذَلِكَ النُّوْرُ يَدُوْرُ بِالْقُدْرَةِ حَيْثُ شَاءَ اللهُ وَلَمْ يَكُنْ فِىْ ذَلِكَ الْوَقْتِ لَوْحٌ وَلاَ قَلَمٌ وَلاَ جَنَّةٌ وَلاَ نَارٌ وَلاَ مَلَكٌ وَلاَ سَمَاءٌ وَلاَ أَرْضٌ وَلاَ شَمْسٌ وَلاَ قَمَرٌ وَلاَ جِنِّىٌ وَلاَ إِنْسِىُّ فَلَمَّا أَرَادَ اللهُ أَنْ يَّخْلُقَ الْخَلْقَ قَسَّمَ ذَلِكَ النُّوْرَ أَرْبَعَةَ أَجْزَاءٍ فَخَلَقَ مِنَ الْجُزْءِ الْأَوَّلِ الْقَلَمَ وَمِنَ الثَّانِىْ اللَّوْحَ وَمِنَ الثَّالِثِ الْعَرْشَ ثُمَّ قَسَّمَ الْجُزْءَ الرَّابِعَ أَرْبَعَةَ أَجْزَاءٍ فَخَلَقَ مِنَ الْجُزْءِ الْأَوَّلِ حَمْلَةَ الْعَرْشِ وَمِنَ الثَّانِىْ الْكُرْسِىَّ وَمِنَ الثَّالِثِ بَاقِى الْمَلاَئِكَةِ ثُمَّ قَسَّمَ الْجُزْءَ الرَّابِعَ أَرْبَعَةَ أَجْزَاءٍ فَخَلَقَ مِنَ الْأَوَّلِ السَمَاوَاتِ وَمِنَ الثَّانِىْ الْأَرْضِيْنَ وَمِنَ الثَّالِثِ الْجَنَّةَ وَالنَّارَ...
(খ) জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক! আমাকে বলুন, সৃষ্টি সমূহের মধ্যে আল্লাহ তা‘আলা কোন্ জিনিসকে প্রথম সৃষ্টি করেছেন? তিনি বললেন, হে জাবের! নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা সবকিছুর পূর্বে তাঁর নূর থেকে তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর এই নূর আল্লাহর কুদরতে স্বাধীনভাবে ঘুরতে লাগল। আর তখন লাওহে মাহফূয, কলম, জান্নাত, জাহান্নাম, ফেরেশতা, আসমান, যমীন, সূর্য, চন্দ্র, জিন, মানুষ কিছুই ছিল না। অতঃপর যখন জগৎ সৃষ্টি করার ইচ্ছা করলেন তখন তিনি ঐ নূরকে চার ভাগে ভাগ করলেন। ১ম ভাগ দ্বারা কলম, দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা লাওহে মাহফূয, তৃতীয় ভাগ দ্বারা আরশ তৈরি করলেন। তারপর চতুর্থ ভাগকে আবার চার ভাগে ভাগ করলেন। ১ম ভাগ দিয়ে আরশ বহনকারী ফেরেশতা, দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা কুরসী, তৃতীয় ভাগ দ্বারা অন্যান্য ফেরেশতা সৃষ্টি করলেন। তারপর উক্ত চতুর্থ ভাগকে আবার চার ভাগে ভাগ করলেন। ১ম ভাগ দ্বারা আসমান সমূহ, দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা যমীন সমূহ, তৃতীয় ভাগ দ্বারা জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন..। [1]
(গ) এছাড়া একটি আয়াতের অপব্যাখ্যা করা হয়। যেমন- আল্লাহ বলেন, قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللهِ نُوْرٌ وَكِتَابٌ مُبِيْنٌ ‘নিশ্চয় তোমাদের নিকটে আল্লাহর পক্ষ থেকে নূর এসেছে এবং তা স্পষ্ট কিতাব’ (মায়েদাহ ১৫)।
পর্যালোচনা :
(ক) প্রথমে যে বর্ণনাটি উল্লেখ করা হয়েছে, তার পক্ষে কোন জাল বর্ণনাও নেই। শুধু মানুষের মুখে মুখেই প্রচলিত। তাই প্রখ্যাত হানাফী বিদ্বান আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভী বর্ণনাটিকে জাল হাদীছের গ্রন্থে উল্লেখ করে বলেন, لَمْ يَثْبُتْ بِهَذَا الْمَبْنَى ‘উক্ত শব্দে কোন হাদীছ প্রমাণিত হয়নি’।[2] তাই উক্ত মিথ্যা ও বানোয়াট বর্ণনা আলোচনারই দাবী রাখে না। যারা রাসূল (ছাঃ)-এর নাম দিয়ে এগুলো প্রচার করে থাকে তাদের কী হবে? কবি গোলাম মুছত্বফা তার ‘বিশ্ব নবী’ বইয়ে উক্ত অংশটুকু বাংলা উচ্চারণ করে লিখেছেন।
(খ) উক্ত বর্ণনাও মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। পাঠক মাত্রই বুঝতে পারছেন যে, এটি একটি গালগল্প ছাড়া কিছু নয়। নবীর নূর দ্বারা যদি জাহান্নাম তৈরি হয়, তবে সে জাহান্নাম মানুষকে পোড়াতে পারবে কি? যদি মানুষকে পুড়িয়ে ফেলে তবে নবীর নূরের মর্যাদা কি থাকল? দুঃখজনক হল এই জাজ্বল্য কাহিনীটি কোন জাল হাদীছের গ্রন্থেও বর্ণিত হয়নি। মুহাদ্দিছ আলী হাশীশ বলেন, هَذِهِ الْقِصَّةُ الْوَاهِيَةُ قِصَّةُ خَلْقِ الْعَالَمِ مِنْ نُوْرِ النَّبِيّ صلى الله عليه وسلم ‘রাসূল (ছাঃ)-এর নূর দ্বারা জগৎ সৃষ্টি করা হয়েছে মর্মে বর্ণিত কাহিনী একবারে বাজে কাহিনী’।[3] শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বাতিল হাদীছ বলে আখ্যা দিয়েছেন।[4] আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভী বলেন, كُلُّ ذَلِكَ كِذْبٌ مُفْتَرَى بِاتِّفَاقِ أَهْلِ الْعِلْمِ ‘মুহাদ্দিছগণের ঐকমত্যে এগুলো সবই মিথ্যা অপবাদ’।[5]
সুধী পাঠক! উক্ত মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বর্ণনার কারণেই সমাজে ভ্রান্ত আক্বীদা চালু আছে। আরো দুঃখজনক হল, কথিত বড় বড় মুহাদ্দিছ ও ওলামা মাশায়েখের মুখ থেকে বিশাল বিশাল সমাবেশে উক্ত বর্ণনাগুলো শুনা যায়। তারা কি রাসূল (ছাঃ)-এর উপর মিথ্যাচার করে পার পেয়ে যাবে? অসম্ভব। মূলতঃ এই মিথ্যা কাহিনীগুলো তৈরি করেছে তথাকথিত ছূফী তরীকাধারী শিরকের এজেন্টরা।[6]
(গ) উক্ত আয়াতে বর্ণিত ‘নূর’ দ্বারা হেদায়াতের নূর উদ্দেশ্য। অর্থাৎ কিতাব। যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, وَاتَّبَعُوا النُّوْرَ الَّذِىْ أُنْزِلَ مَعَهُ ‘মুমিনরা ঐ নূরের অনুসরণ করে, যা মুহাম্মাদের সাথে নাযিল হয়েছে’ (আ‘রাফ ১৫৭)। এছাড়া অন্য আয়াতে আরো স্পষ্ট করে আল্লাহ বলেন, فَآمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ وَالنُّوْرِ الَّذِىْ أَنْزَلْنَا ‘সুতরাং তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং ঐ নূরের প্রতি ঈমান পোষণ কর, যা আমরা নাযিল করেছি’ (তাগাবুন ৮)। অতএব উক্ত নূর দ্বারা কিতাবকেই বুঝানো হয়েছে।
মুহাম্মাদ (ছাঃ) মাটির তৈরী :
অন্যান্য আদম সন্তানের ন্যায় মুহাম্মাদ (ছাঃ)ও একজন মাটির তৈরি মানুষ। এটাই সঠিক আক্বীদা এবং সালফে ছালেহীন ছাহাবায়ে কেরামের আক্বীদা।
(ক) আল্লাহ বলেন,
قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوْحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَمَن كَانَ يَرْجُو لِقَاء رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلاً صَالِحاً وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَداً.
‘বলুন, আমি তো তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি অহি করা হয় যে, তোমাদের মা‘বূদ একজন। সুতরাং যে তাঁর প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে ও তাঁর প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে’ (কাহফ ১১০)।
উক্ত আয়াত ছাড়াও আরো আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাসূল (ছাঃ) একজন মানুষ (বানী ইসরাঈল ৯৩; হা-মীম সিজদা ৬)। তাহলে মানুষ কিসের তৈরি? আমরা আল্লাহর ভাষায় দেখি- وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَكُمْ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ إِذَا أَنْتُمْ بَشَرٌ تَنْتَشِرُوْنَ ‘আর তাঁর নিদর্শন সমূহের মধ্যে হচ্ছে- তিনি তোমাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তোমরা মানুষ হিসাবে ছড়িয়ে গেছ’ (রূম ২০)। হাদীছেও বহু স্থানে বলা হয়েছে যে, রাসূল (ছাঃ) মাটির তৈরি। যেমন-
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم خُلِقَتِ الْمَلاَئِكَةُ مِنْ نُوْرٍ وَخُلِقَ الْجَانُّ مِنْ مَارِجٍ مِنْ نَارٍ وَخُلِقَ آدَمُ مِمَّا وُصِفَ لَكُمْ.
আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘সকল ফেরেশতাকে নূর থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং জিন জাতিকে আগুন থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে সেই সমস্ত ছিফাত দ্বারা, যে ছিফাতে তোমাদের ভূষিত করা হয়েছে’। অর্থাৎ মানব জাতিকে মাটি ও পানি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে।[7] অন্য বর্ণনায় সরাসরি বলা হয়েছে, وَالنَّاسُ بَنُوْ آدَمَ وَخَلَقَ اللهُ آدَمَ مِنْ تُرَابٍ ‘মানুষ আদমের সন্তান। আর আল্লাহ আদম (আঃ)-কে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন’।[8]
অতএব মুহাম্মাদ (ছাঃ) মাটির তৈরি এই আক্বীদাই পোষণ করতে হবে। তিনি নূরের তৈরি এই আক্বীদা বর্জন করতে হবে। বিভিন্ন ব্যক্তি উক্ত মর্মে কবিতাও লিখেছেন। নূর মুহাম্মাদ, নূরুন্নবী ইত্যাদি নাম সমাজে দেখা যায়। এগুলোও পরিবর্তন করতে হবে।
(৭) আল্লাহ তা‘আলা রাসূল (ছাঃ)-কে সৃষ্টি না করলে পৃথিবী, জান্নাত-জাহান্নাম কিছুই সৃষ্টি করতেন না :
উক্ত আক্বীদা সঠিক নয়। আল্লাহ তাঁর ইচ্ছানুযায়ী সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। এটি কারো সাথে শর্তযুক্ত নয়। উক্ত ভ্রান্ত দাবীর পক্ষে কতিপয় জাল বর্ণনা সমাজে প্রচলিত আছে। যেমন-
(أ) لَوْلاَكَ لَمَا خَلَقْتُ الْأَفْلاَكَ
(ক) (আল্লাহ বলেন) আপনাকে সৃষ্টি না করলে বিশাল জগৎ সৃষ্টি করতাম না।[9]
(ب) عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَتَانِىْ جِبْرِيْلُ فَقَالَ قَالَ اللهُ يَا مُحَمَّدُ لَوْلاَكَ لَمَا خَلَقْتُ الْجَنَّةَ وَلَوْلاَكَ مَا خَلَقْتُ النَّارَ.
(খ) ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, একদা জিবরীল (আঃ) আমার কাছে আসলেন। অতঃপর বললেন, আল্লাহ বলেছেন, হে মুহাম্মাদ (ছাঃ)! আপনাকে সৃষ্টি না করলে জান্নাত সৃষ্টি করতাম না এবং আপনাকে সৃষ্টি না করলে জাহান্নাম সৃষ্টি করতাম না।[10]
(ج) لَوْلاَكَ مَا خَلَقْتُ الدُّنْيَا
(গ) আপনাকে সৃষ্টি না করলে আমি দুনিয়া সৃষ্টি করতাম না।[11]
(ه) عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَمَّا اقْتَرَفَ آدَمُ الْخَطِيْئَةَ قَالَ يَا رَبِّ أَسْأَلُكَ بِحَقِّ مُحَمَّدٍ لِمَا غَفَرْتَ لِىْ فَقَالَ اللهُ يَا آدَمُ وَ كَيْفَ عَرَفْتَ مُحَمَّدًا وَلَمْ أَخْلُقْهُ؟ قَالَ يَا رَبِّ لَأَنَّكَ لَمَا خَلَقْتَنِىْ بِيَدِكَ وََنفَخْتَ فِىَّ مِنْ رُوْحِكَ وَرَفَعْتُ رَأْسِىْ فَرَأَيْتُ عَلَى قَوَائِمِ الْعَرْشِ مَكْتُوْبًا لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ مُحَمَّدٌ رَسُوْلُ اللهِ فَعَلِمْتُ أَنَّكَ لَمْ تَضِفْ إِلَى اسْمِكَ إِلَى أَحَبِّ الْخَلْقِ فَقَالَ اللهُ صَدَقْتَ يَا آدَمُ إِنَّهُ لَأَحَبُّ الْخَلْقِ إِلَىَّ اُدْعُنِىْ بِحَقِّهِ فَقَدْ غَفَرْتُ لَكَ وَلَوْلاَ مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُكَ.
(ঘ) ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যখন আদম (আঃ) অপরাধ করে ফেললেন, তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর অসীলায় ক্ষমা চাচ্ছি, যেন আপনি আমাকে ক্ষমা করেন। তখন আল্লাহ বললেন, হে আদম! তুমি কিভাবে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে চিনতে পারলে, অথচ আমি তাকে এখনো সৃষ্টি করিনি? আদম (আঃ) তখন বললেন, হে আল্লাহ! আপনি যখন আমাকে আপনার হাত দ্বারা সৃষ্টি করেন এবং আমার মাঝে আপনার পক্ষ থেকে রূহ ফুঁকে দেন তখন আমি মাথা তুলে দেখি যে, আরশের পায়ের সাথে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ লেখা আছে। তখন আমি উপলব্ধি করলাম যে, সৃষ্টির মধ্যে সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তির নামই আপনার নামের সাথে যুক্ত করেছেন। তখন আল্লাহ বললেন, তুমি ঠিকই বলেছ হে আদম! নিশ্চয় মুহাম্মাদই আমার নিকট অধিকতর প্রিয়। তুমি তার অসীলায় আমার কাছে দু‘আ কর আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিব। আর মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে সৃষ্টি না করলে আমি তোমাকে সৃষ্টি করতাম না।[12]
(د) كُنْتُ نَبِيَّا وَلاَ آدَمَ وَلاَ مَاءَ وَلاَ طِيْنَ.
(ঙ) যখন আদম, পানি ও মাটি কিছুই ছিল না তখন আমি নবী ছিলাম।
(ه) كُنْتُ أَوَّلَ النَّبِيِّيْنَ فِى الْخَلْقِ وَآخَرَهُمْ فِى الْبَعْثِ فَبَدَأَ بِىْ قَبْلَهُمْ.
(চ) সৃষ্টির মধ্যে আমিই প্রথম নবী ছিলাম। প্রেরণের সময় আমি তাঁদের সবশেষে এসেছি। তাঁদের পূর্বে আমার দ্বারাই সৃষ্টির সূচনা করেছেন।[13]
পর্যালোচনা :
বর্ণনাগুলো জাল হাদীছের গ্রন্থে মুহাদ্দিছগণ একত্রিত করেছেন। কিন্তু সমাজের তথাকথিক আলেমরা সে দিকে ভ্রূক্ষেপ করে না। (ক) প্রথম বর্ণনাটি প্রসিদ্ধ হলেও বর্ণনাটি জাল ও ভিত্তিহীন। কোন হাদীছগ্রন্থে এর কোন অস্তিত্ব নেই।[14] (খ) বাতিল বর্ণনা। একেবারেই উদ্ভট।[15] (গ) এটিও মিথ্যা বা জাল বর্ণনা।[16] (ঘ) মিথ্যা বর্ণনা। এর সনদে আব্দুর রহমান ইবনু যায়েদ এবং আব্দুল্লাহ ইবনু মুসলিম নামে দুইজন মিথ্যুক রাবী আছে। যদিও ইমাম হাকেম বলেছেন, ছহীহ সনদ। কিন্তু তিনি শৈথিল্যবাদীদের একজন। তার সব মন্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।[17] দ্বিতীয়তঃ যার অস্তিত্বই নেই তার অসীলায় কিভাবে দু‘আ করা যায়? এটি শিরকী আক্বীদা। (ঙ) এ বর্ণনাটিও জাল।[18] তবে ছহীহ বর্ণনা হল, আমি তখন থেকেই নবী যখন আদম (আঃ) রূহ এবং শরীরের মাঝে ছিলেন।[19] এর উদ্দেশ্য হল- তাক্বদীর, যা পৃথিবী সৃষ্টির ৫০ হাযার বছর পূর্বে নির্ধারিত হয়েছে।[20] (চ) সর্বশেষ বর্ণনাটিও মিথ্যা ও বাতিল।[21]
অতএব উক্ত ভ্রান্ত আক্বীদা বর্জন করতে হবে। সাথে সাথে এর বিরুদ্ধে জন-সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
(৮) মুহাম্মাদ (ছাঃ) মারা যাননি; বরং স্থানান্তরিত হয়েছেন মাত্র। তিনি কবরে জীবিত আছেন। অর্থাৎ হায়াতুন্নবীতে বিশ্বাস করা। এমনকি ওলী-আওলিয়াও কবরে জীবিত আছেন।
খানকা ব্যবসায়ীরা উক্ত ভ্রান্ত আক্বীদা সমাজে চালু রেখেছে। তারা নিম্নোক্ত দলীলগুলোর অপব্যাখ্যা করে থাকে। যেমন-
(أ) عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الأَنْبِيَاءُ أَحْيَاءٌ فِىْ قُبُوْرِهِمْ يُصَلُّوْنَ.
(ক) আসান ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, নবীগণ তাদের কবরে জীবিত থেকে ছালাত আদায় করছেন।[22]
(ب) عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَرَرْتُ عَلَى مُوْسَى لَيْلَةَ أُسْرِىَ بِىْ عِنْدَ الْكَثِيْبِ الأَحْمَرِ وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّىْ فِىْ قَبْرِهِ.
(খ) আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, মি‘রাজের রাত্রে আমি যখন লাল টিলার নিকট দিয়ে মূসা (আঃ) কে অতিক্রম করছিলাম, তখন তিনি তাঁর কবরে দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করছিলেন।[23] অনুরূপ ইবরাহীম (আঃ) সম্পর্কেও বর্ণিত হয়েছে।[24]
(ج) إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ حَرَّمَ عَلَى الأَرْضِ أَجْسَادَ الأَنْبِيَاءِ.
(গ) ‘নিশ্চয় মহান আল্লাহ যমীনের উপর নবীগণের শরীরকে হারাম করে দিয়েছেন।[25] অন্যত্র এসেছে, مَا مِنْ أَحَدٍ يُسَلِّمُ عَلَىَّ إِلاَّ رَدَّ اللهُ عَلَىَّ رُوحِىْ حَتَّى أَرُدَّ عَلَيْهِ السَّلاَمَ ‘কোন ব্যক্তি আমার প্রতি সালাম প্রেরণ করলে আমার রূহ ফেরত দেয়া হয় এবং আমি তার প্রতি সালামের উত্তর দেই’।[26]
পর্যালোচনা :
বর্ণিত হাদীছগুলো ছহীহ। কিন্তু তা বারযাখী জীবনের বিষয় অর্থাৎ দুনিয়াবী জীবন ও পরকালীন জীবনের মাঝের জীবন। দুনিয়াবী জীবনের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। যেভাবে বর্ণিত হয়েছে ঠিক সেভাবেই বিশ্বাস করতে হবে। কারণ এগুলো গায়েবের বিষয়। যেমন- রাসূল (ছাঃ) মূসা (আঃ)-কে কবরে ছালাত আদায় করতে দেখলেন কিন্তু একটু পরে ৬ষ্ঠ আসমানে দেখা হল।[27] এরপর যখন ফিরে আসলেন তখন সকল নবী-রাসূলগণ তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করলেন এবং তাঁর ইমামতিতে ছালাত আদায় করলেন বায়তুল মাক্বদেছে।[28] সুতরাং এগুলোর কোন কল্পিত ব্যাখ্যা করা যাবে না।
দ্বিতীয়তঃ কবরে ছালাত আদায়ের বিষয়টি কেবল নবীদের সাথে খাছ। অন্যদের ব্যাপারে নয়। কারণ মৃত্যুর পর কোন ইবাদত নেই। তাছাড়া কবরস্থানে ছালাত আদায় করা নিষেধ।[29] তাহলে তারা কিভাবে সেখানে ছালাত আদায় করছেন? অতএব তা দুনিয়াবী বিষয়ের সাথে মিলানো যাবে না।
তৃতীয়তঃ রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি কেউ দরূদ ও সালাম পাঠালে ফেরেশতাদের মাধ্যমে তাঁর কাছে পাঠানো হয়। অতঃপর আল্লাহ তাঁর মাঝে রূহ ফেরত দিলে সালামের উত্তর দেন। কবর থেকে রাসূল (ছাঃ) নিজে সরাসরি শুনতে পেলে কেন উক্ত মাধ্যমের প্রয়োজন হয়? অতএব দুনিয়ার মানুষের কোন কথা সরাসরি কেউ কবর থেকে শুনতে পায় না এটাই চূড়ান্ত। আল্লাহ চাইলে কাউকে শুনাতে পারেন। এটার তাঁর ইচ্ছাধীন।[30] কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল, তাবলীগ জামায়াতের ফাযায়েলে আমল বইয়ের হজ্জ ও দরূদ অংশে রাসূল (ছাঃ)-এর কবর নিয়ে এত যে মিথ্যা ঘটনা লেখা আছে, তা গুণে শেষ করা যাবে না। অতএব উক্ত বই থেকে সাবধান!
চতুর্থতঃ সাধারণ মানুষকে কবরে রাখার পর লোকেরা যখন চলে আসে তখনও মৃত ব্যক্তি তাদের পায়ের জুতার শব্দ শুনতে পায়। উক্ত মর্মেও ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।[31] এছাড়া মুমিন ব্যক্তিকে কবরে বসানোর সাথে সাথে আছরের ছালাত আদায় করতে চায়।[32] কিন্তু কুরআন-হাদীছ থেকে এর বেশী কিছু জানা যায় না। তাই যেভাবে বর্ণিত হয়েছে সেভাবেই বিশ্বাস করতে হবে।
মূলতঃ উক্ত বিষয়গুলো কোনটিই দুনিয়াবী জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। কারণ ছাহাবায়ে কেরাম উক্ত হাদীছগুলো জানা সত্ত্বেও তাঁরা কখনো কবরের কাছে চাননি কিংবা তাঁর কাছে কোন অভিযোগ করেননি এবং তাঁকে অসীলা মেনে দু‘আও করেননি। বরং দুর্ভিক্ষের কারণে তাঁরা রাসূল (ছাঃ)-এর কবরের কাছে না গিয়ে তাঁর জীবিত চাচা আববাস (রাঃ)-এর কাছে গিয়ে দু‘আ চেয়েছেন। কারণ কবরে যাওয়ার পর দুনিয়ার সাথে যেমন কোন সম্পর্ক থাকে না, তেমনি কারো কোন উপকার বা ক্ষতিও করতে পারেন না। যেমন-
عَنْ أَنَسٍ أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رضى الله عنه كَانَ إِذَا قَحَطُوْا اسْتَسْقَى بِالْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَقَالَ اللهُمَّ إِنَّا كُنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّنَا فَتَسْقِينَا وَإِنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِعَمِّ نَبِيِّنَا فَاسْقِنَا قَالَ فَيُسْقَوْنَ .
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মানুষ যখন দুর্ভিক্ষের মাঝে পড়ত তখন ওমর (রাঃ) আববাস ইবনু আব্দুল মুত্ত্বালিব (রাঃ)-এর মাধ্যমে পানি প্রার্থনা করতেন। তিনি বলতেন, হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে পানি প্রার্থনা করতাম আপনার নবীর মাধ্যমে। আপনি আমাদের পানি দিতেন। এখন আমরা আমাদের নবীর চাচার মাধ্যমে পানি প্রার্থনা করছি। আপনি আমাদেরকে পানি দান করুন। রাবী বলেন, অতঃপর পানি হত।[33]
উক্ত হাদীছ প্রমাণ করে যে, ছাহাবীগণ কবরের কাছে গিয়ে নবী (ছাঃ)-কে অসীলা ধরে দু‘আ করতেন না। অথচ তাঁর কবর তাঁদের নিকটেই ছিল। বরং তাঁরা জীবিত ব্যক্তি হিসাবে রাসূল (ছাঃ)-এর চাচার কাছে গিয়ে দু‘আ চাইতেন। লক্ষণীয় হল, যদি মুহাম্মাদ (ছাঃ) কবর থেকে তাঁর ছাহাবীদের কোন উপকার করতে না পারেন, তবে পৃথিবীতে আর কোন ব্যক্তি আছে যে কবর থেকে মানুষকে উপকার করতে পারবে?
সুধী পাঠক! বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ হায়াতুন্নবীতে বিশ্বাসী। এমনকি তথাকথিত পীর-ফকীর ও ওলীরা কবরে জীবিত থাকে বলে ভ্রান্ত আক্বীদা পোষণ করে থাকে। উক্ত শিরকী আক্বীদা থেকে আমাদেরকে বিরত থাকতে হবে।
(৯) মুহাম্মাদ (ছাঃ) গায়েব জানতেন :
দেশের অধিকাংশ মানুষ উক্ত ভ্রান্ত আক্বীদায় বিশ্বাসী। এ জন্যই নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে বিভিন্ন মীলাদের মজলিসে হাযির কারানোর জন্য পৃথক চেয়ার রাখা হয় (নাঊযুবিল্লাহ)।
পর্যালোচনা :
এটি মহা অন্যায়। কারণ বিষয়টি সরাসরি আল্লাহর সাথে জড়িত। মানুষ হিসাবে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর সাথে জড়িত নয়। আল্লাহ ব্যতীত অদৃশ্যের জ্ঞান কারো নেই। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন, قُلْ لاَ يَعْلَمُ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللهُ وَمَا يَشْعُرُوْنَ أَيَّانَ يُبْعَثُوْنَ. ‘হে মুহাম্মাদ (ছাঃ) বলুন, আল্লাহ ছাড়া আসমান ও যমীনের কেউই গায়েবের জ্ঞান রাখে না এবং তারা এটাও বুঝে না যে তারা কখন পুনরুত্থিত হবে’ (নামল ৬৫)। আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছেন, قُلْ لاَ أَقُوْلُ لَكُمْ عِنْدِىْ خَزَائِنُ اللهِ وَلَا أَعْلَمُ الْغَيْبَ وَلَا أَقُوْلُ لَكُمْ إِنِّىْ مَلَكٌ إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوْحَى إِلَيَّ. ‘আপনি বলুন, আমি তোমাদের একথা বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ধন-ভান্ডার রয়েছে, আর আমি গায়েব সম্পর্কে কোন জ্ঞান রাখি না এবং আমি তোমাদেরকে এ কথাও বলি না যে, আমি একজন ফেরেশতা। আমার কাছে যা কিছু ওহীরূপে পাঠানো হয়, আমি শুধুমাত্র তারই অনুসরণ করে থাকি’ (আন‘আম ৫০)।
উক্ত আয়াত প্রমাণ করে যে, রাসূল (ছাঃ) গায়েবের খবর জানতেন না, তবে তাঁকে অহির মাধ্যমে যা জানানো হত তিনি তাই বলতেন। অন্য আয়াতে এসেছে, وَلَا أَقُوْلُ لَكُمْ عِنْدِىْ خَزَائِنُ اللهِ وَلَا أَعْلَمُ الْغَيْبَ ‘আমি তোমাদেরকে এ কথা বলছি না যে, আমার নিকট আল্লাহর ধন-ভান্ডার আছে এবং আমি গায়েবের খবর রাখি না’ (হূদ ৩১)।
قُلْ لاَ أَمْلِكُ لِنَفْسِىْ نَفْعًا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَاءَ اللهُ وَلَوْ كُنْتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لاَسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوْءُ إِنْ أَنَا إِلَّا نَذِيْرٌ وَبَشِيْرٌ لِقَوْمٍ يُؤْمِنُوْنَ.
‘আপনি বলুন! আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া আমার নিজের ভাল-মন্দ লাভ-ক্ষতি বিষয়ে আমার কোন অধিকার নেই। আমি যদি গায়েবে সম্পর্কে জানতাম তবে আমি অনেক কল্যাণ লাভ করতে পারতাম। আর কোন অমঙ্গল ও অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করতে পারত না। আমি শুধু মু‘মিন সম্প্রদায়ের জন্য একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা’ (আরাফ ১৮৮)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, وَلِلَّهِ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَإِلَيْهِ يُرْجَعُ الْأَمْرُ كُلُّهُ فَاعْبُدْهُ وَتَوَكَّلْ عَلَيْهِ وَمَا رَبُّكَ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ. ‘আকাশ ও যমীনের অদৃশ্য জ্ঞান আল্লাহরই এবং তাঁরই কাছে সব কিছু প্রত্যাবর্তিত হবে। সুতরাং তাঁর ইবাদত কর এবং তাঁর উপর নির্ভর কর। আর তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালক অনবহিত নন’ (হূদ ১২৩)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,
وَعِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لاَ يَعْلَمُهَا إِلَّا هُوَ وَيَعْلَمُ مَا فِى الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَمَا تَسْقُطُ مِنْ وَرَقَةٍ إِلَّا يَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِىْ ظُلُمَاتِ الْأَرْضِ وَلَا رَطْبٍ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِىْ كِتَابٍ مُبِيْنٍ.
‘গায়েব বা অদৃশ্যের চাবিকাঠি তাঁরই নিকট রয়েছে; তিনি ছাড়া আর কেউই তা জ্ঞাত নয়। স্থল ও জলভাগের সব কিছুই তিনি অবগত রয়েছেন, তাঁর অবগতি ব্যতীত বৃক্ষ হতে একটি পাতও ঝরেনা এবং ভূ-পৃষ্ঠের অন্ধকারের মধ্যে একটি দানাও পড়ে না, এমনি ভাবে কোন সরস ও নিরস বস্ত্তও পতিত হয় না। সমস্ত বস্ত্তই সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে’ (আন‘আম ৫৯)। আয়েশা (রাঃ) বলেন, مَنْ حَدَّثَكَ أَنَّهُ يَعْلَمُ الْغَيْبَ فَقَدْ كَذَبَ ‘যে ব্যক্তি তোমাকে বলবে যে, রাসূল (ছাঃ) গায়েব জানেন তাহলে সে মিথ্যা বলবে।[34]
সুধী পাঠক! উপরিউক্ত সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকতেও একশ্রেণীর মানুষ বিশ্বাস করে রাসূল (ছাঃ) গায়েব জানতেন (নাঊযুবিল্লাহ)। এর মূল কারণ হল, তারা মাযারে বসে বিনা পুঁজির যে ব্যবসা চালু রেখেছে তা যেন জমজমাট রাখা যায়। যারা খানকায় বসে সাধারণ জনগণের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারাই উক্ত শিরকী আক্বীদা চালু রেখেছে। অথচ রাসূল (ছাঃ)-এর অসংখ্য ঘটনা রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে পূর্বে জানা থাকলে তাঁকে কষ্ট স্বীকার করতে হত না। (চলবে)
[1]. ইসমাঈল বিন মুহাম্মাদ আল-জারাহী আল-আজলূনী, কাশফুল খাফা মুযীলুল ইলবাস আম্মা ইশতাহারা আলা আলসিনাতিন নাস হা/৮২৭, ১/২৫৬ পৃঃ।
[2]. আল-আছারুল মারফূ‘আহ ফিল আখবারিল মাওযূ‘আহ, পৃঃ ৪৩।
[3]. সিলসিলাতুল আহাদীছিল ওয়াহেয়াহ, পৃঃ ১৫৭।
[4]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/৪৫৮-এর আলোচনা দ্রঃ-خلقت الملائكة من نور وخلق إبليس من نار السموم وخلق آدم عليه السلام مما قد وصف لكم . رواه مسلم وغيره . وفيه إشارة إلى بطلان الحديث المشهور على ألسنة الناس : أول ما خلق الله نور نبيك يا جابر ! ونحوه من الأحاديث التي تقول بأنه صلى الله عليه وسلم خلق من نور।
[5]. আল-আছারুল মারফূ‘আহ ফিল আখবারিল মাওযূ‘আহ, পৃঃ ৪৩।
[6]. সিলসিলাতুল আহাদীছিল ওয়াহেয়াহ, পৃঃ ২৭৪- قد نقلناه بتمامه لنبين مدى الكذب والكفر والهذيان وهذا الحديث هو عمدة الصوفية فيما زعموه واعتقدوه ونشروه أن الرسول هو قبة الكون، وهو أول الوجود، وأنه جزء من نور الله تعالى الله عما يقولون علوا كبيرا، وأن كل المخلوقات خلقت بأجزاء منه، بل قال ابن العربي أن الرسول هو الذي استوى على عرش الله حيث يقول بالنص "بدء الخلق الهباء وأول موجود فيه الحقيقة المحمدية الرحمانية الموصوفة بالاستواء على العرش الرحماني وهو العرش الإلهي "-الفتوحات المكية ج১ ص১৫২،
[7]. মুসলিম হা/৭৬৮৭, ২/৪১৩ পৃঃ, ‘যুহদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১১; মিশকাত হা/৫৭০১।
[8]. তিরমিযী হা/৩২৭০, ‘তাফসীর’ অধ্যায়, সূরা হুজুরাতের ১৩ নং আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রঃ।
[9]. ছাগানী, মাওযূ‘আত, পৃঃ ৭।
[10]. দায়লামী, আল-ফেরদাঊদ ১/৪১ পৃঃ; আল-আছারুল মারফূ‘আহ ফিল আখবারিল মাওযূ‘আহ, পৃঃ ৪৪।
[11]. ইবনু আসাকির; দায়লামী, আল- ফেরদাঊস হা/৮০৩১।
[12]. মুস্তাদরাক হাকেম হা/৪২২৮।
[13]. আবু নু‘আইম, আদ-দালায়েল, পৃঃ ৫। সিলসিলা যঈফাহ হা/৬৬১।
[14]. শাওকানী, আল-ফাওয়াইদুল মাজমূ‘আহ ফিল আহাদীছিল মাওযূ‘আহ, পৃঃ ৩২৬।
[15]. সিলসিলা যঈফাহ হা/২৮২।
[16]. ইমাম সুয়ূত্বী, আল-লাইলিল মাছনূ‘আহ ফিল আহাদীছিল মাওযূ‘আহ, পৃঃ ২৪৯।
[17]. সিলসিলা যঈফাহ হা/২৫।
[18]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৩০৩।
[19]. তিরমিযী হা/৩৬০৯; আহমাদ হা/; মিশকাত হা/৫৭৫৮; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৮৫৬।
[20]. মুসলিম হা/৬৯১৯; মিশকাত হা/৭৯।
[21]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৬৬১।
[22]. মুসনাদে বাযযার হা/৬৮৮৮; মুসনাদে আবী ইয়ালা হা/৩৪২৫; বায়হাক্বী, হায়াতুল আম্বিয়া, পৃঃ ৩; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬২১; ফাযায়েলে দুরুদ শরীফ, পৃঃ ৩৪; (উর্দূ), পৃঃ ১৯।
[23]. ছহীহ মুসলিম হা/৬৩০৬, ‘মর্যাদা’ অধ্যায়, ‘মূসা (আঃ)-এর ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-৪২।
[24]. ছহীহ মুসলিম হা/৪৪৮, ‘ঈমান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭৭।
[25]. আবুদাঊদ হা/১০৪৭ ও ১৫৩১; মিশকাত হা/১৩৬১ ও ১৩৬৬।
[26]. আবুদাঊদ হা/২০২১; মিশকাত হা/৯২৫, সনদ হাসান।
[27]. বুখারী হা/৩৮৮৭; মিশকাত হা/৫৮৬২।
[28]. মুসলিম হা/৪৪৮।
[29]. বুখারী হা/১৩৩০; মিশকাত হা/৭১২।
[30]. ফাত্বির ২২; যুমার ৫২; ইবনু মাজাহ হা/১৯৮।
[31]. বুখারী হা/১৩৩৮; মিশকাত হা/১২৬।
[32]. ইবনু মাজাহ হা/৪২৭২, সনদ হাসান; মিশকাত হা/১৩৮।
[33]. ছহীহ বুখারী হা/১০১০, ১/১৩৭ পৃঃ।
[34]. ছহীহ আল-বুখারী হা/৭৩৮০।