জামা‘আতবদ্ধ জীবন-যাপনের সুফল (২য় কিস্তি)
লিলবর আল-বারাদী
আযীযুর রহমান 1718 বার পঠিত
মুখবন্ধ :
মহান আল্লাহ প্রদত্ত অফুরন্ত নে‘মতরাজির মধ্যে গোলাপের মত অন্যতম নে‘মত আমাদের অতি আদরের প্রাণপ্রিয় ‘সোনামণিরা’। আমরা জানি, ‘সোনামণি একটি আদর্শ জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন’। সোনামণিদেরকে শিশু ও কিশোর বয়স থেকে যদি ইসলামী আদর্শে সঠিক পরিচর্চার মাধ্যমে গড়ে তোলা না হয়, তবে তারা আধুনিক বিজ্ঞানের ইন্টারনেটের যুগের পারিপার্শ্বিক অপসংস্কৃতির বিষাক্ত ছোবলে আক্রান্ত হবে। ফলে তারা আদর্শচ্যুত ও বিপথগমী ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে পরিবার সমাজ ও দেশের বোঝা ও ক্ষতিকর কীটে পরিণত হবে। পরবর্তীতে হাযার চেষ্টা করেও তাদেরকে আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। ফুলের মত পবিত্র, নিষ্পাপ ও নিষ্কলুষ সোনামণিদেরকে পবিত্র কুরআনের সূরা আহযাবের ২১ নং আয়াতের আলোকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আদর্শে গড়ে তোলার সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বশ্রেষ্ঠ প্লাটফর্ম হচ্ছে ‘সোনামণি সংগঠন’। তাই আসুন, আমরা আমাদের পরকালীন মহাসাফল্যের জন্য ও সুন্দর ভবিষ্যতের স্বার্থে ‘সোনামণি’ সংগঠন বাস্তবায়নের আলোর পথ খুজি। সোনামণিদের চরিত্র সুন্দর হলে ভবিষ্যতে আমরা পাব আদর্শ ব্যক্তি, পরিবার, সুশৃংখল সমাজ ও দেশ তথা শান্তিময় পৃথিবী। সোনামণি সংগঠনপ্রিয় এদেশের আপামর সকলকে আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার সঙ্গে থেকে মেধা, মনন, অর্থ, সময় ও শ্রম প্রদানে বিনম্র আবেদন রাখছি। ফালিল্লাহিল হামদ।
সোনামণি সংগঠন বাস্তাবায়নের জন্য নিমণ বর্ণিত ১০টি বিষয় অত্যাধিক গুরত্বপূণঃ
১. আনুগত্যের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন।
২. উত্তম চারিত্রিক গুণাবলী অর্জন।
৩. সাংগঠনিক ও পারিবারিকভাবে নিয়মিত সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, ও মাসিক বৈঠকের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা।
৪. সাধ্যানুযায়ী নিয়মিত সময়, শ্রম, মেধা ও অর্থ প্রদানের মানসিকতা অর্জন করা।
৫. ইসলামী রুচি সম্মত সুন্দর পোশাক-পরিচ্ছদের আবশ্যকতা।
৬. সোনামণিদের নিয়মিত উৎসাহিতকরণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।
৭. যথাযথ ইসলামী জ্ঞানার্জনে সর্বদা সচেষ্ট থাকা।
৮. দায়িত্বশীলদের সাংগঠনিক গুণাবলী অর্জন করা।
৯. নিয়মিত বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা
১০. সোণামণি সংগঠনের সাথে অন্যান্য শিশু-কিশোর সংগঠনের পার্থক্য সম্পর্কে জানা। নিম্নে ধারাবাহিকভাবে এ সম্পর্কে আলোচনা করার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।
১. আনুগত্যের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন :
কোন সংগঠনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার মূল নিয়ামক শক্তি হল আনুগত্য। সোনামণি সংগঠনের সকল পর্যায়ের দায়িত্বশীল, নেতা ও কর্মীদের আনুগত্যের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করা অপরিহার্য। সামাজিক যত প্রকার রীতি-নীতি আছে, তার যথাযথ সফলতার জন্য আনুগত্যই হচ্ছে প্রথম ধাপ। সংগঠন, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় যেমন সংগঠনের প্রয়োজন, তেমন ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি লাভের জন্য আনুগত্য অপরিহার্য। এক্ষেত্রে শরীকবিহীনভাবে কেবলমাত্র আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করতে হবে। পাশাপাশি মুসলিম তাক্বওয়াশীল ও নিরহংকারী আমীর বা নেতার আনুগত্যও করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا
‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর ও রাসূলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের আমীরের আনুগত্য কর; অত:পর যদি তোমাদের মধ্যে কোন বিষয়ে মতবিরোধ হয়, তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে তা ফিরিয়ে দাও; যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস করে থাক; এটাই কল্যাণকর ও শ্রেষ্ট’ (নিসা ৪/৫৯)।
একটি সংগঠন বাস্তবায়নের অন্যতম মূল বৈশিষ্ট হল, সকল পর্যায়ের নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্যশীল হওয়া। যে সংগঠনের দায়িত্বশীলগণ নেতৃত্বের প্রতি যতবেশী আনুগত্যশীল হবে, সে সংগঠন ততবেশী মযবুত ও গতিশীল হবে এবং তাদের পক্ষে যে কোন কঠিন, জটিল ও দুরূহ কাজ সম্পাদন করা অতি সহজ হবে। অত্র আয়াতে মহান আল্লাহ স্বীয় আনুগত্যের পাশাপাশি রাসূল (ছাঃ)-এর আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়েছেন। অতঃপর বিজ্ঞ ও সৎ নেতৃত্বের আনুগত্য করারও নির্দেশ দিয়েছেন। এখানে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য হবে শর্তহীনভাবে এবং আমীরের আনুগত্য হবে কুরআন ও ছহীহ হাদীছ অনুসরণের শর্ত সাপেক্ষে। হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ مَنْ أَطَاعَنِى فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ وَمَنْ عَصَانِى فَقَدْ عَصَى اللهَ وَمَنْ أَطَاعَ أَمِيرِى فَقَدْ أَطَاعَنِى وَمَنْ عَصَى أَمِيرِى فَقَدْ عَصَانِى.
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যে ব্যক্তি আমার নাফারমানী করল, সে আল্লাহর নাফরমানী করল। আর যে ব্যক্তি আমার আমীরের আনুগত্য করল সে আমার আনুগত্য করল এবং যে আমার আমীরের অবাধ্যতা করল সে আমারই অবাধ্যতা করল।[1] অন্য হাদীছে বর্ণিত হয়েছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم مَنْ رَأَى مِنْ أَمِيرِهِ شَيْئًا فَكَرِهَهُ فَلْيَصْبِرْ فَإِنَّهُ لَيْسَ أَحَدٌ يُفَارِقُ الْجَمَاعَةَ شِبْرًا فَيَمُوتُ إِلاَّ مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً.
আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যদি কেউ তার নেতাকে অপসন্দনীয় কিছু করতে দেখে, তবে তার ধৈর্যধারণ করা উচিৎ। কেননা যে কেউ ইসলামী জামা‘আত থেকে এক বিঘত পরিমাণ দূরে সরে গেল এবং এমতাবস্থায় তার মৃত্য হলে সে জাহেলিয়াতের মৃত্যবরণ করল।[2] অন্য হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লহ (ছাঃ) বলেন, اتَّقُوا اللهَ رَبَّكُمْ وَصَلُّوا خَمْسَكُمْ وَصُومُوا شَهْرَكُمْ وَأَدُّوا زَكَاةَ أَمْوَالِكُمْ وَأَطِيعُوا ذَا أَمْرِكُمْ تَدْخُلُوا جَنَّةَ رَبِّكُمْ ‘তোমরা তোমাদের প্রভুকে ভয় কর, পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদয় কর, রামাযানের ছিয়াম পালন কর, ধন-সম্পদের যাকাত প্রদান কর, নেতার আনুগত্য কর এবং তোমার প্রভুর জান্নাতে প্রবেশ কর।[3]
ভাল কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করা মহান আল্লাহর নির্দেশ। তিনি বলেন, وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ ‘তোমরা নেকী ও কল্যাণের কাজে পরস্পকে সহযোগিতা কর, কিন্তু পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে কাউকে সহযোগিতা কর না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা’ (মায়েদা ৫/২)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لاَ طَاعَةَ فِى مَعْصِيَةٍ ، إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِى الْمَعْرُوفِ ‘পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে আনুগত্য নেই। আনুগত্য কেবলমাত্র ন্যায় ও সৎ কাজের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য’।[4] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আমি তোমাদের ৫টি বিষয়ে নির্দেশ দিচ্ছি। ১. জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপন করা ২. আমীরের নির্দেশ শ্রবণ করা ৩. তাঁর আনুগত্য করা ৪. প্রয়োজনে হিজরত করা ও ৫. আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।[5] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন, إِذَا خَرَجَ ثَلاَثَةٌ فِى سَفَرٍ فَلْيُؤَمِّرُوا أَحَدَهُمْ ‘যখন তিনজন একত্রে সফরে বের হবে, তখন তাদের মধ্যে একজনকে তারা যেন আমীর (নেতা) নিযুক্ত করে নেয়’।[6] ছালাতের জামা‘আতে যেমন ইমাম ও মুক্তাদী এক সূত্রে বাঁধা, ঠিক তেমনি সংগঠন অর্থই হচ্ছে আনুগত্যের মন্ত্রে বাঁধা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আনুগত্যের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শনকারী একদল ছাহাবী বা সাথী গড়তে পেরেছিলেন, ফলে অন্ধকার সমাজ আলোকিত ও সোনালী সমাজে পরিণত হয়েছিল। অতএব আনুগত্যশীল এক ঝাঁক নেতা, কর্মী ও দায়িত্বশীল তৈরী করতে পারলেই এ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ‘সোনামণি’ সংগঠন বাস্তবায়ন সম্ভব হবে ইনশাল্লাহ।
ঊষার মরুর ধুসর বুকে, বিশাল যদি শহর গড়
একটি জীবন সফল করা, তার চেয়ে অনেক বড়।
২. উত্তম চারিত্রিক গুণাবলী অর্জন :
উত্তম চরিত্র গঠনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হল সাংগঠনিক শৃংখলা বজায় রাখা। সাংগঠনিক শৃংখলার মাধ্যমেই একজন ব্যক্তি উত্তম চারিত্রিক গুণাবলী অর্জন করতে পারে। বর্তমান সমাজে উত্তম চরিত্রের বড়ই অভাব। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ আজ কলুষিত। অথচ মহান আল্লাহ রাসূল (ছাঃ)-কে উত্তম চরিত্রে সর্বোত্তম আদর্শ হিসাবে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيمٍ ‘নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রে উপর প্রতিষ্ঠিত’ (ক্বলম ৬৮/৪)। আল্লাহ বলেন, لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ ‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর জীবনে সর্বোত্তম আদর্শ নিহিত রয়েছে’ (আহযাব ৩৩/২১) । আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّ مِنْ خِيَارِكُمْ أَحْسَنَكُمْ أَخْلاَقًا ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা উত্তম, যে চরিত্রের দিক থেকে উত্তম’।[7]
সাংগঠনিক শৃংখলা বলতে এখানে সংগঠন পরিচালনা ও বাস্তবায়নের নীতিমালাকে বুঝানো হয়েছে। প্রতিদিন লেখাপড়া, কাজ ও চাকুরী জীবনের পাশাপাশি পরকালীন মুক্তির জন্য সংগঠনকে মন ও মগজের সর্বোচ্চ স্থানে আসীন করতে হবে। রুটিন অর্থাৎ নিয়ম মাফিক জীবন পরিচালনার মাধ্যমেই উত্তম চারিত্রিক গুণাবলী অর্জন খুবই সহজ হয়। আমাদের প্রত্যেক দায়িত্বশীল ভাইকে ইসলামী ও সাংগঠনিক বক্তৃতার সাথে সাথে জুম‘আর খুৎবা প্রদানে সক্ষম ও অভ্যস্ত হতে হবে। এ জন্য সোনামণি ও দায়িত্বশীলদেরকে বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করে গড়ে তুলতে হবে। হাদীছে এসেছে,
عَنِ النَّوَّاسِ بْنِ سَمْعَانَ الأَنْصَارِىِّ قَالَ سَأَلْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنِ الْبِرِّ وَالإِثْمِ فَقَالَ الْبِرُّ حُسْنُ الْخُلُقِ وَالإِثْمُ مَا حَاكَ فِى صَدْرِكَ وَكَرِهْتَ أَنْ يَطَّلِعَ عَلَيْهِ النَّاسُ.
নাওয়াস ইবনু সাম‘আম (রাঃ) বলেন, আমি একদা রাসূল (ছাঃ)-কে পূণ্য ও পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, উত্তরে তিনি বলেন, পূণ্য হল উত্তম চরিত্র। আর পাপ হল, যে কাজে তোমার মনে সন্দেহ সৃষ্টি করে এবং মানুষের নিকট তা প্রকাশ পাওয়াকে তুমি অপসন্দ কর।[8] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই মুমিন ব্যক্তি তার উত্তম চরিত্রের কারণে রাত্রিতে তাহাজ্জুদ ছালাত আদায়কারী এবং দিনে নফল ছিয়াম পালনকারীর মর্যাদা লাভ করবে।[9]
عَنْ أَبِى الدَّرْدَاءِ أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَا شَىْءٌ أَثْقَلُ فِى مِيزَانِ الْمُؤْمِنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ خُلُقٍ حَسَنٍ وَإِنَّ اللهَ لَيَبْغَضُ الْفَاحِشَ الْبَذِىءَ.
আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন মুমিনের পাল্লায় সর্বাপেক্ষা ভারী যে আমলটি রাখা হবে, তা হল উত্তম চরিত্র। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ অশ্লীলভাষী দুশ্চরিত্র ব্যক্তিকে ঘৃণা করেন।[10] তাই আসুন, আমরা সকলেই আমাদের চরিত্রকে সুন্দর করি এবং ‘সোণামণি’ সংগঠন বাস্তবায়নে যথাযথ ভূমিকা রাখি। আল্লাহ আমাদের সহায় হউন।
৩. সাংগঠনিক ও পারিবারিকভাবে নিয়মিত সাপ্তাহিক/পাক্ষিক/ মাসিক বৈঠকের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা :
আমাদের যারা দায়িত্বশীল, তাদের পরিবারই এক একটি সংগঠন। তাই প্রত্যেকটি পরিবার ও সংগঠনের জন্য সাপ্তাহিক বৈঠক অপরিহার্য। এই বৈঠকের মাধ্যমে আদর্শ ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও দেশ গড়ার ভিত্তি স্থাপিত হয়। শিশু-কিশোর তথা যুবকদের চরম চারিত্রিক অবক্ষয় রোধে এবং রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শে প্রকৃত ইসলামী সমাজ গঠন ও জ্ঞান আহরণের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে এই ‘সাপ্তাহিক তা‘লীমী বৈঠক’। এটি ‘সোণামণি’ সংগঠন বাস্তবায়নের মৌলিক কাজ। এক্ষেত্রে শাখা সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি শাখার দায়িত্বশীলগণ প্রতি ওয়াক্ত ছালাতে মসজিদে যাওয়া ও আসার সময় সোনামণিদের সাথে সালাম, মুছাফাহা ও কুশল বিনিময় করবে। অতঃপর টার্গেট ভিত্তিক সুসম্পর্ক গড়ে তুলে সোনামণিদেরকে নিয়মিত মুছল্লী বানানোর চেষ্টা করা ও সমাজসেবা মূলক কাজে উদ্বুদ্ধ করা। পরিশেষে সংগঠনের সদস্যভুক্ত হওয়ার আহবান করা। সাপ্তাহিক বৈঠকের মাধ্যমে আদর্শ ব্যক্তি, আদর্শ পরিবার, আদর্শ সমাজ ও আদর্শ দেশ গড়ার ভিত্তি স্থাপিত হয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, لَغَدْوَةٌ فِى سَبِيلِ اللهِ أَوْ رَوْحَةٌ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا ‘একটি সকাল বা একটি সন্ধ্যা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা সমগ্র দুনিয়া ও তার মধ্যকার সকল কিছু হতে উত্তম।[11]
পরামর্শভিত্তিক কার্য সম্পাদনের গুরুত্ব বর্ণনায় আল্লাহ বলেন, وَالَّذِينَ اسْتَجَابُوا لِرَبِّهِمْ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَمْرُهُمْ شُورَى بَيْنَهُمْ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ ‘যারা তাদের প্রতিপালকের আহবানে সাড়া দেয়, ছালাত কায়েম করে, নিজেদের মধ্যে পরামর্শের ভিত্তিতে কার্যসম্পাদন করে এবং তাদেরকে আমি যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে’ (শূরা ৪২/৩৮)। পরিবারের সাথে বসবাসরত সকল পর্যায়ের দায়িত্বশীল ও সোনামণিদের পারিবারিক সাপ্তাহিক/পাক্ষিক/ মাসিক নিয়মিত তা‘লীমী বৈঠকের সুব্যবস্থা থাকা অপরিহার্য। তাহ’লে পুরা পরিবারটাই সাংগঠনিক রূপ নিবে। এসব গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে সোনামণিদের উপযোগী করে বিষয় ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দিলে অতি সহজে তারা অনেক কিছু শিখতে পারে। তার কতিপয় দিক উল্লেখ করা হ’ল :
÷ পানি খাওয়ার নিয়ম ৫টি। যথা : ১. ডান হাতে গ্লাস ধরা ২. বসা, ৩. বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা ৪. তিনি নিঃশ্বাসে পান করা এবং ৫. পান করা শেষে আলহামদুলিল্লাহ’ বলা। এখানে ১০/১৫ টি বড় বড় হাদীছ পাঠ করে শুনালে তারা আসলে তেমন কিছুই শিখতে পারবে না, তেমনি এটা তাদের জন্য রপ্ত করা অনেক কষ্টকর হবে।
÷ নিয়মিত সাপ্তহিক বৈঠকের উপকারিতা নিমণরূপ : সাপ্তাহিক তা‘লীমী বৈঠকের কতিপয় উপকারিতা রয়েছে। যেমন : ১. সাংগঠনিক জীবনের হাতে খড়ি হয় ২. জ্ঞানের প্রসার ও প্রখরতা বৃদ্ধি পায় ৩. নেতৃত্ব সৃষ্টি করে ৪. সময়ানুবর্তিতা শিক্ষা দেয় ৫. আনুগত্যের পরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শনের শিক্ষা দেয় ৬. দাওয়াতী কাজে উৎসাহিত করে ৭. দ্বীন প্রচারের পদ্ধতি ও উপায় শিক্ষা দেয় ৮. দারস ও বক্তৃতার প্রশিক্ষণ হয়। ৯. আমল সংশোধন হয় ১০. পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় হয় ১১. অতুলনীয় জ্ঞানার্জন সম্ভব হয় ১২. পরামর্শের ভিত্তিতে কাজ করা সম্ভব হয় ১৩. খোলামেলা আলোচনার অভ্যাস ও সাহস গড়ে উঠে ১৪. সত্যিকারে দ্বীনের খাদেম ও মুজাহিদ হিসাবে গড়ে উঠা সম্ভম হয়। তাই আসুন! আমরা সকল পর্যায়ের দায়িত্বশীলগণ নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকের অনুশীলন করি এবং রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শে জীবন গড়ি।
৪. সাধ্যানুযায়ী নিয়মিত সময়, শ্রম, মেধা ও অর্থ প্রদানের মানসিকতা অর্জন করা :
ইসলামে নিয়মিত আমলের গুরুত্ব অনেক বেশী। যে কোন উত্তম কাজ নিয়মিত করা বাঞ্চনীয়। হাদীছে এসেছে,
عَنْ مَسْرُوقٍ قَالَ سَأَلْتُ عَائِشَةَ رضى الله عنها أَىُّ الْعَمَلِ كَانَ أَحَبَّ إِلَى النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَتِ الدَّائِمُ قُلْتُ مَتَى كَانَ يَقُومُ قَالَتْ يَقُومُ إِذَا سَمِعَ الصَّارِخَ.
মাস্রূক্ব (রাঃ) বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট কোন্ কাজ সর্বাধিক প্রিয় ছিল? উত্তরে তিনি বললেন, যে কোন আমল নিয়মিত করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তিনি রাতের ছালাত আদায় করতে কখন উঠতেন? তিনি বললেন, যখন মোরগের ডাক শুনতে পেতেন।[12] উক্ত হাদীছ থেকে বুঝা যায় যে, রাসূল (ছাঃ) অল্প হলেও উত্তম আমল নিয়মিত করা পসন্দ করতেন। আল্লাহ প্রেরিত নবী ও রাসূলগণ তাদের অনুসারী ছাহাবী ও সাথীগণ এবং ঈমানদার ব্যক্তিগণ কখনো বৃথা সয় নষ্ট করা পসন্দ করতেন না। তাঁরা সর্বদা ভাল কাজে সময়, শ্রম, মেধা ও অর্থ ব্যয় করেছেন। আর ভাল কাজের গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا وَمَنْ جَاءَ بِالسَّيِّئَةِ فَلَا يُجْزَى إِلَّا مِثْلَهَا وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ ‘কোন ব্যক্তি সৎ কাজ করলে সে তার দশগুণ পাবে এবং কোন ব্যক্তি অসৎ কাজ করলে তাকে শুধু তার প্রতিফল দেওয়া হবে। আর তাদের প্রতি যুলুম করা হবে না’ (আন‘আম ৬/১৬০)।
সংগঠনকে প্রতিদিন এক ঘন্টা করে সময় দিলে বছরে ৩৬৫ দিনে ৩৬৫ ঘন্টা সময় দেওয়া হবে। এভাবে কোন দায়িত্বশীল যদি ১০ বছর সংগঠনের দায়িত্ব পালন করে তার মর্যাদা কত হবে আপনি চিন্তা করে দেখুন। এভাবে একটু একটু করে অল্প শ্রমে ও স্বল্প ব্যয়ে সাংগঠনিক কার্যাবলী সম্পাদনের মাধ্যমে অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জনই হল দক্ষতা। একজন সচ্চরিত্রবান ব্যক্তি অহেতুক গল্প থেকে নিজেকে বিরত রাখে না, বরং অবসরের সাথে সাথে ভাল কথা-বার্তা ও দ্বীনী আলোচনায় মশগুল থাকেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا ، أَوْ لِيَسْكُتْ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে, অথবা নীরব থাকে’ (বুখারী হা/৬৪৭৬; মুসলিম হা/১৮৩; ইবনু মাজাহা হা/৩৬৭২)। রাসূল (ছাঃ) অন্যত্র বলেন, كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। প্রত্যেককেই দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে হবে’।[13]
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ.
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, যখন মানুষ মরে যায় তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, তিনটি আমল ব্যতীত। যথা : ১. ছাদাক্বায়ে জারিয়া (খ) এমন জ্ঞান, যার দ্বারা (মানুষের) উপকার সাধিত হয় এবং (গ) এমন সুসন্তান, যে তার জন্য দো‘আ করে।[14] অতএব সোণামণি সংগঠন বাস্তবায়নের অন্যতম পন্থা হচ্ছে সাধ্যমত সময়, শ্রম, মেধা ও অর্থ ব্যয় করা। এগুলি উপরোক্ত হাদীছটির আলোকে ছাদাক্বায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত হবে ইনশাআল্লাহ। হে আল্লাহ, তুমি এ দেশের সামর্থবান সকলকে এ সংগঠনের জন্য সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের মানসিকতা তৈরী করে দাও। আমিন!
‘সোনামণি এক ফুটন্ত গোলাপের নাম,
রাসূলের আদর্শে জীবন গড়ার সংগ্রাম’।
৫. ইসলামী রুচিসম্মত সুন্দর পোশাক-পরিচ্ছদের আবশ্যকতা : মহান আল্লাহ নিজে অতীব সুন্দর। তিনি সুন্দর ও সৌন্দর্য্যকে ভালবাসেন। আমাদের প্রিয় নবীও সৌন্দর্য ও পবিত্রতাকে আজীবন লালন করেছেন। ঈমান আনার পর ইসলামের সর্বপ্রথম ফরয হল পোশাক। মানুষ ও জন্তু জানোয়ারের মধ্যে পার্থক্য হল পোশাক। ইসলাম পুরুষ ও মহিলাদের পোশাকের ব্যপারে কতকগুলো নীতিমালা দিয়েছে। শালীনতা বজায় রেখে ইসলামের প্রথম যুগ থেকে পুরুষ ও মহিলাগণ ভদ্র পোশাক পরতেন। পোশাক সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,
يَا بَنِي آدَمَ قَدْ أَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآتِكُمْ وَرِيشًا وَلِبَاسُ التَّقْوَى ذَلِكَ خَيْرٌ ذَلِكَ مِنْ آيَاتِ اللهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ.
‘হে আদম সন্তান! আমি তোমাদের জন্য অবশ্যই অবতীর্ণ করেছি এমন পোশাক, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে ও অবতীর্ণ করেছি সাজ-সজ্জার বস্ত্র এবং তাক্বওয়ার পোশাক। এটি সর্বোত্তম। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ নিদর্শন, যাতে তোমরা চিন্তা-ভাবনা কর’ (‘আরাফ ৭/২৬)। উক্ত আয়াতে পোশাকের ৩টি গুণাবলীর কথা বলা হয়েছে। যথা : ১. পোশাক লজ্জাস্থানকে ঢেকে রাখবে ২. এটি সাজ-সজ্জা হবে এবং ৩, তাক্বওয়ার পোশাক হবে। এটি সমগ্র বিশ্ব মানবতার জন্য, শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্য নয়। তাই আমাদের সোনামণিদেরকে শালীনতা যেন বজায় থাকে এমন পোশাক পরিধান করাতে হবে। পোশাক আঁটসাট, ছোটখাটো ও ফিটফাট হবে না। পোশাক তুলনামূলক ঢিলেঢালা ও লম্বা হবে, যা শরীর ঢেকে রাখে ও ভদ্রতার পরিচয় দেয়। আর এ বিষয়ে পিতা-মাতা, অভিভাবকসহ সংগঠনের দায়িত্বশীলদেরকে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, يَا بَنِي آدَمَ خُذُوا زِينَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ وَكُلُوا وَاشْرَبُوا وَلَا تُسْرِفُوا إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ ‘হে আদম সন্তান! তোমরা প্রত্যেক ইবাদতের স্থানে (ছালাতের সময়) সুন্দর পোশাক পরিধান কর। আর খাও ও পান কর কিন্তু অপচয় কর না। কেননা আল্লাহ অপচয়কারীকে ভালবাসেন না (‘আরাফ-৩১)। ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, كُلْ مَا شِئْتَ وَالْبَسْ مَا شِئْتَ مَا أَخْطَأَتْكَ اثْنَتَانِ سَرَفٌ أَوْ مَخِيلَةٌ ‘তোমরা যা ইচ্ছা তাই খাও এবং যা ইচ্ছা তাই পরিধান কর যতক্ষণ না দু’টি জিনিস তোমাদেরকে ভুল করিয়ে দেয়। তা হল : ১. অপব্যয় ২. অহংকার বা দাম্ভিকতা।[15] অপব্যয় আর অহংকার না থাকলে খাওয়া ও পোশাকের ব্যাপারে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই।
উত্তম পোশাকের কতিপয় গুণাবলী :
১. শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা ও ডান দিক থেকে পরিধান করা।[16]
২. পরিষ্কার পরিছন্ন, ভদ্র ও মার্জিত পোশাক পরিধান করা।[17]
৩ পুরুষদের জন্য রেশমী পোশাক ও স্বর্ণালংকার নিষেধ। তবে মহিলাদের জন্য তা জায়েয।[18]
৪. টাখনুর নীচে কাপড় পরিধান করা ছেলেদের জন্য নিষেধ তবে মেয়েদের জন্য তা জায়েয।[19]
৫. ছেলেদের জন্য মেয়েদের এবং অমুসলিমদের পোশাক পরিধান করা নিষেধ। আর মেয়েদের জন্য ছেলেদের এবং অমুসলিমদের পোশাক পরিধান করা নিষেধ।[20]
৬. নতুন পোশাক পরিধান কালে দো‘আ পাঠ করা এবং পোশাক খোলার সময় বাম দিক দিয়ে খোলা ও বিসমিল্লাহ বলা।[21]
৭. মেয়েদের রূপ-লাবন্য বৃদ্ধির জন্য চুল ও ভ্রু ছোট করা, উপড়ে ফেলা, দাঁত চিকন করা ও ফাঁক করা, মাথায় কৃত্রিম চুল ব্যবহার করা। উলকি নিজে আঁকা বা অন্যকে আঁকিয়ে দেওয়া ইত্যাদি নিষেধ।[22] অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِى قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ قَالَ رَجُلٌ إِنَّ الرَّجُلَ يُحِبُّ أَنْ يَكُونَ ثَوْبُهُ حَسَنًا وَنَعْلُهُ حَسَنَةً قَالَ إِنَّ اللهَ جَمِيلٌ يُحِبُّ الْجَمَالَ الْكِبْرُ بَطَرُ الْحَقِّ وَغَمْطُ النَّاسِ.
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেন, যার অন্তরে সরিষা পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে যাবে না। এক ব্যক্তি বললেন, সুন্দর পোশাক ও জুতা পরা যাবে কি? রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ অবশ্যই বেশী সুন্দর। তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন। অহংকার হচ্ছে সত্যকে অস্বীকার করা ও মানুষকে অবজ্ঞা করা।[23] আমাদের সোনামণি সংগঠনের সকল প্রকার দায়িত্বশীলদের কর্তব্য হচ্ছে রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশমত ইসলামী পোশাক পরিধানে সোনামণিদেরকে উৎসাহিত করা এবং অভ্যস্ত করে গড়ে তোলা। (চলবে)
মুহাম্মাদ আযীযুর রহমান
প্রথম কেন্দ্রীয় পরিচালক, সোনামণি
[1]. বুখারী হা/২৯৫৭, মুসলিম হা/৪৮৫২, মিশকাত হা/৩৬৬১।
[2]. বুখারী হা/ ৭১৪৩, মুসলিম হা/৪৮৯৭ মিশকাত হা/৩৬৬৮।
[3]. তিরমিযী হা/৬১৬, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮৬৭, সনদ ছহীহ।
[4]. বুখারী হা/৭২৫৭, মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩৬৬৫।
[5]. আহমাদ হা/১৭৮৩৩, তিরমিযী হা/২৮৬৩, মিশকাত হা/৩৬৯৪, সনদ ছহীহ।
[6]. আবুদাঊদ হা/২৬০৮, মিশকাত হা/৩৯১১, সনদ হাসান।
[7]. বুখারী হা/৩৫৫৯, মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫০৭৫।
[8]. মুসলিম হা/৬৬৮০, মিশকাত হা/৫০৭৩।
[9]. আবুদাঊদ হা/৪৭৯৮, মিশকাত হা/৫০৮২, সনদ ছহীহ।
[10]. তিরমিযী হা/২০০২; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৬৩২, সনদ ছহীহ।
[11]. বুখারী হা/২৭৯২; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩৭৯২।
[12]. বুখারী হা/১১৩২; নাসাঈ হা/১৬১৬; মিশকাত হা/১২০৭।
[13]. বুখারী হা/৮৯৩; মুসলিম হা/৪৮২৮; মিশকাত হা/৩৬৮৫।
[14]. মুসলিম হা/৭৩১০; তিরমিযী হা/১৩৭৬; মিশকাত হা/২০৩।
[15]. বুখারী, ২/৮৬০ পৃঃ, ‘ পোশাক’ অধ্যায়-৮১।
[16]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪১৫৯।
[17]. মুসলিম, মিশকাত হা/৫১০৮।
[18]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৩২১।
[19]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৩১১-৪৩১৪।
[20]. বুখারী, মিশকাত হা/৪৪২৯।
[21]. আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৩৪৩, সনদ হাসান।
[22]. বুখারী হা/৫৯৩১; মিশকাত হা/৪৪৩১।
[23]. মুসলিম হা/২৭৫; মিশকাত হা/৫১০৮।