ইসলামের বিধান চিরকল্যাণকর
অধ্যাপক মুহাম্মাদ জালালুদ্দীন
বযলুর রহমান 1082 বার পঠিত
জান্নাতের দালানকোটা ও প্রাসাদসমূহ :
জান্নাতের প্রাসাদসমূহ হবে বহুতল ও একাধিক কক্ষবিশিষ্ট। তা হবে সৌন্দর্যময় ও চির সুখের স্থান। জান্নাতীরা জান্নাতের এই সুন্দর ও নান্দনিক প্রাসাদসমূরে মধ্যে বসবাস করবে। তাছাড়া উক্ত দালানগুলো যাবতীয় ছোট-বড় অপবিত্রতা ও ময়লা-আবর্জনা থেকে সম্পূর্ণ পুতঃপবিত্র থাকবে। আল্লাহ বলেন,
وَعَدَ اللهُ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ وَرِضْوَانٌ مِنَ اللهِ أَكْبَرُ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
‘আল্লাহ তা‘আলা মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের এমন জান্নাতের ওয়াদা করেছেন, যার তলদেশ দিয়ে প্রস্রবণ প্রবাহিত থাকবে। তারা সেখানে চিরস্থায়ীভাবে বসবাস করবে। আর এই চিরন্তন আবাসস্থলে থাকবে পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র প্রাসাদসমূহ। বস্ত্ততঃ আল্লাহর সন্তুষ্টিই সবচেয়ে বড় আর এটাই হ’ল মহা পুরস্কার’ (তওবা ৯/৭২)। অন্যত্র তিনি বলেন,
لَكِنِ الَّذِينَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ لَهُمْ غُرَفٌ مِنْ فَوْقِهَا غُرَفٌ مَبْنِيَّةٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَعْدَ اللهِ لَا يُخْلِفُ اللهُ الْمِيعَادَ
‘কিন্তু যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, তাদের জন্য রয়েছে বহুতলা বিশিষ্ট প্রাসাদসমূহ। যার উপর আরো বহু প্রাসাদ নির্মিত হয়েছে, যার নিন্মদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত, এটা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী নয়’ (যুমার ৩৯/২০)। মহান আল্লাহ আরো বলেন, أُولَئِكَ يُجْزَوْنَ الْغُرْفَةَ بِمَا صَبَرُوا وَيُلَقَّوْنَ فِيهَا تَحِيَّةً وَسَلَامًا ‘তাদের ধৈর্যশীলতার দরুন তাদেরকে দেওয়া হবে জান্নাতের প্রাসাদসমূহ, তাদেরকে সেখানে অভ্যর্থনা জানানো হবে অভিবাদন ও সালাম সহকারে’ (ফুরক্বান ২৫/৭৫)।
জান্নাতীদের জন্য জান্নাতে বিরাটকায় অট্টালিকা বা প্রাসাদসমূহ থাকবে। যার ইট হবে স্বর্ণ-রৌপ্যের নির্মিত। থাকবে র্স্বণ ও চাঁদি নির্মিত উদ্যানসমূহ এবং বিশাল বিশাল নয়াভিরাম সৌধ। সেখানে চন্দন কাঠ জ্বলতে থাকবে, যার কারণে সুঘ্রাণ চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়বে। সেখানে তারা প্রত্যেক শ্বাস-নিশ্বাসে আল্লাহর প্রশংসাগীত রচনা করবে। জান্নাতীরা কখনো বার্ধক্য হবে না, সর্বদা চিরস্থায়ীভাবে যুবক থাকবে। জান্নাতের মাটি হবে মিশকে আম্বরের সুঘ্রাণযুক্ত, কংকর হবে মণি-মুক্তা খচিত এবং ঘাস হবে সুদৃশ জাফরানের। হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ t قَالَ ...قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم مِمَّ خُلِقَ الْخَلْقُ قَالَ مِنَ الْمَاءِ قُلْنَا الْجَنَّةُ مَا بِنَاؤُهَا قَالَ لَبِنَةٌ مِنْ فِضَّةٍ وَلَبِنَةٌ مِنْ ذَهَبٍ وَمِلاَطُهَا الْمِسْكُ الأَذْفَرُ وَحَصْبَاؤُهَا اللُّؤْلُؤُ وَالْيَاقُوتُ وَتُرْبَتُهَا الزَّعْفَرَانُ مَنْ يَدْخُلْهَا يَنْعَمْ وَلاَ يَبْأَسْ وَيُخَلَّدْ وَلاَ يَمُوتْ لاَ تَبْلَى ثِيَابُهُمْ وَلاَ يَفْنَى شَبَابُهُمْ...
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! সৃষ্টি জগতকে কী দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, পানি দিয়ে। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, জান্নাত কী দিয়ে নির্মিত হয়েছে? উত্তরে তিনি বললেন, তার একটি ইট স্বর্ণের অন্যটি চাঁদির। আর সিমেন্ট সুগন্ধিযুক্ত মিশকে আম্বরের। এর কংকর মণি-মুক্তার। মাটি জাফরানের। যে ব্যক্তি সেখানে প্রবেশ করবে, সেখানে সে জীবন-যাপন করবে কিন্তু কোন কষ্ট তার দৃষ্টিগোচর হবে না। চিরকাল জীবিত থাকবে, মৃত্যুবরণ করবে না। পরিধেয় কাপড় কখনো পুরাতন হবে না। আর তাদের যৌবনও কখনো ফুরিয়ে যাবে না...। [1]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ قَيْسٍ عَنْ أَبِيهِ t عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ جَنَّتَانِ مِنْ فِضَّةٍ آنِيَتُهُمَا وَمَا فِيهِمَا وَجَنَّتَانِ مِنْ ذَهَبٍ آنِيَتُهُمَا وَمَا فِيهِمَا وَمَا بَيْنَ الْقَوْمِ وَبَيْنَ أَنْ يَنْظُرُوا إِلَى رَبِّهِمْ إِلاَّ رِدَاءُ الْكِبْرِيَاءِ عَلَى وَجْهِهِ فِى جَنَّةِ عَدْنٍ.
আব্দুল্লাহ ইবনু ক্বায়েস (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, দু’টি উদ্যান হবে রৌপ্যের, যার পাত্র ও সকলকিছু হবে রৌপ্যের। দু’টি উদ্যান হবে স্বর্ণের। যার পাত্র ও সকলকিছু হবে স্বর্ণের। মানুষের জন্য জান্নাতে আদনে আল্লাহকে দেখার ব্যাপারে কোন বাধা থাকবে না। তবে একমাত্র আল্লাহর অহংকারের চাদর থাকবে, যা তার চেহারার উপর থাকবে।[2]
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ t قَالَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم ...ثُمَّ أُدْخِلْتُ الْجَنَّةَ فَإِذَا فِيهَا جَنَابِذُ اللُّؤْلُؤِ وَإِذَا تُرَابُهَا الْمِسْكُ.
আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) থেকে মি‘রাজের হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ...আমাকে অতঃপর জান্নাতে প্রবেশ করানো হ’ল। সেখানে মণি-মুক্ত নির্মিত গম্বুজ রয়েছে এবং তার মাটি হ’ল মিশকে আম্বরের।[3]
জান্নাতের প্রাসাদ বা অট্টালিকা পাওয়ার মাধ্যম :
জানণাতের প্রাসাদ বা অট্টালিকা পাওয়ার গুণাবলী আলোচনা করতে গিয়ে রাসূল (ছাঃ) বলেন,
(১) عَنْ عَلِى tقَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم اِنّ فِى الْجَنّةِ لَغُرَفًا تُرَى ظُهُوْرُهَا مِنْ بُطُوْنِهَا وَبُطُوْنُهَا مِنْ ظُهُوْرِهَا فَقَامَ اِلَيْهِ اَعْرَابِىُ فَقَالَ لِمَنْ هِىَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ هِىَ لِمَنْ اَطَابَ الْكَلَامَ وَاَطْعَمَ الطَّعَامَ وَادَامَ الصِيَامَ وَصَلَّى لِلّهِ بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ.
আলী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, জান্নাতে এমন কতগুলি বালাখানা রয়েছে, যার ভিতর থেকে বাহির দেখা যায় এবং বাহির থেকে ভিতর দেখা যায়। একজন গ্রাম্য বেদুইন রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে গিয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এমন জান্নাত কোন্ ব্যক্তির জন্য? নবী করীম (ছাঃ) বললেন, যারা মানুষের সাথে নরমভাবে কথা বলে, ক্ষুধার্ত মানুষকে খাদ্য খাওয়ায়, নিয়মিত ছিয়াম পালন করে এবং রাতে মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন তাহাজ্জুদ ছালাত আদায় করে।[4] জান্নাতে সবচেয়ে উন্নত মানের বালাখানাগুলি এত স্বচ্ছ পদার্থ ও শৈল্পিক কারুকার্য দ্বারা তৈরী যে, তার ভিতর থেকে বাহির এবং বাহির থেকে ভিতর দেখা যাবে। আর এর জন্য চারটি কাজ করা যরূরী। ১. মানুষের সাথে নরমভাবে কথা বলতে হবে ২. ক্ষুধার্ত ও অসহায় মানুষকে খাদ্য খাওয়াতে হবে ৩. নিয়মিত নফল ছিয়াম পালনে অভ্যাসী হ’তে হবে এবং ৪. রাতে তাহাজ্জুদ ছালাত আদায় করতে হবে।
(২) عَنْ أُمِّ حَبِيبَةَ زَوْجِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهَا قَالَتْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يُصَلِّى لِلَّهِ كُلَّ يَوْمٍ ثِنْتَىْ عَشْرَةَ رَكْعَةً تَطَوُّعًا غَيْرَ فَرِيضَةٍ إِلاَّ بَنَى اللهُ لَهُ بَيْتًا فِى الْجَنَّةِ أَوْ إِلاَّ بُنِىَ لَهُ بَيْتٌ فِى الْجَنَّةِ.
(২) উম্ম হাবীবাহ (রাঃ), যিনি নবী করীম (ছাঃ)-এর স্ত্রী বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, মুসলিমদের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রত্যহ দিনে বার রাক‘আত সুন্নাত বা নফল ছালাত আদয় করবে, তাহ’লে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মান করবেন।[5] উক্ত হাদীছ থেকে বুঝা গেল, দৈনিক বার রাক‘আত সুন্নাত বা নফল ছালাত আদায় করলে ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ বা অট্টালিকা তৈর করা হবে।
(3) عَنْ مَحْمُودِ بْنِ لَبِيدٍ أَنَّ عُثْمَانَ بْنَ عَفَّانَ tأَرَادَ بِنَاءَ الْمَسْجِدِ فَكَرِهَ النَّاسُ ذَلِكَ فَأَحَبُّوا أَنْ يَدَعَهُ عَلَى هَيْئَتِهِ فَقَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ مَنْ بَنَى مَسْجِدًا لِلَّهِ بَنَى اللهُ لَهُ فِى الْجَنَّةِ مِثْلَهُ.
(৩) মাহমুদ ইবনু লাবীদ থেকে বর্ণিত, ওছমান বিন আফ্ফান (রাঃ) মসজিদ (নববী নতুন করে) তৈরী করার ইচ্ছা পোষণ করলে মানুষ তা অপসন্দ করে। বরং তারা ওটাকে তার নিজস্ব স্থানে ছেড়ে দেওয়াকে ভাল মনে করে। তখন ওছমান (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ একটি ঘর নির্মাণ করবেন।[6]
(4) عَنْ أَبِى مُوسَى الأَشْعَرِىِّ tأَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِذَا مَاتَ وَلَدُ الْعَبْدِ قَالَ اللهُ لِمَلاَئِكَتِهِ قَبَضْتُمْ وَلَدَ عَبْدِى فَيَقُولُونَ نَعَمْ فَيَقُولُ قَبَضْتُمْ ثَمَرَةَ فُؤَادِهِ فَيَقُولُونَ نَعَمْ فَيَقُولُ مَاذَا قَالَ عَبْدِى فَيَقُولُونَ حَمِدَكَ وَاسْتَرْجَعَ. فَيَقُولُ اللهُ ابْنُوا لِعَبْدِى بَيْتًا فِى الْجَنَّةِ وَسَمُّوهُ بَيْتَ الْحَمْدِ.
(৪) আবু মূসা আল-আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যখন কোন বান্দার সন্তান মারা যায়, তখন আল্লাহ তাঁর ফেরেশতাদের ডেকে বলেন, আমার বান্দার সন্তানের জান ছিনিয়ে এনেছ? ফেরেশতারা তখন বলেন, হ্যাঁ। তিনি আবার বলেন, তোমরা কি তার হৃদয়ের টুকরাকে ছিনিয়ে এনেছ? ফেরেশতাগণ বলেন, হ্যাঁ। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তখন আমার বান্দা কী বলেছে? ফেরেশতাগণ বললেন, সে আপনার প্রশংসা করেছে এবং ‘ইন্না লিল্লা-হি ওয়াইন্না ইলাইহি রা-জেঊন’ পাঠ করেছে। তখন আল্লাহ তাদেরকে বলবেন, যাও। তোমরা আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ কর। যার নাম হবে ‘বায়তুল হামদ’ বা প্রশংসার ঘর।[7]
(5) عَنْ أَبِى أُمَامَةَ tقَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَنَا زَعِيمٌ بِبَيْتٍ فِى رَبَضِ الْجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ الْمِرَاءَ وَإِنْ كَانَ مُحِقًّا وَبِبَيْتٍ فِى وَسَطِ الْجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ الْكَذِبَ وَإِنْ كَانَ مَازِحًا وَبِبَيْتٍ فِى أَعْلَى الْجَنَّةِ لِمَنْ حَسَّنَ خُلُقَهُ.
(৫) আবু উমামা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আমি জান্নাতে গৃহের নেতা। যে ব্যক্তি ন্যায়ের স্বপক্ষে থেকেও তর্ক পরিহার করে তার জন্য জান্নাতের উপকণ্ঠে একটি গৃহ নির্মাণ করা হবে। হাসি-ঠাট্টা ও কৌতুক হলেও যে ব্যক্তি মিথ্যা পরিত্যাগ করে তার জন্য জান্নাতের মধ্যস্থলে একটি গৃহ নির্মাণ করা হবে। আর যে ব্যক্তি উন্নত বা উত্তম চরিত্রের অধিকারী তার জন্য জান্নাতের উপরিভাগে একটি গৃহ নিমার্ণ করা হবে।[8]
(6) عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ tعَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ قَالَ حِينَ يَدْخُلُ السُّوقَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِى وَيُمِيتُ وَهُوَ حَىٌّ لاَ يَمُوتُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ كُلُّهُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ كَتَبَ اللهُ لَهُ أَلْفَ أَلْفِ حَسَنَةٍ وَمَحَا عَنْهُ أَلْفَ أَلْفِ سَيِّئَةٍ وَبَنَى لَهُ بَيْتًا فِى الْجَنَّةِ.
(৬) সালেম ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) তাঁর পিতা অতঃপর তার দাদার সূত্রে বর্ণনা করে বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি যখনই বাজারে প্রবেশ করে তখন বলে, لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِى وَيُمِيتُ وَهُوَ حَىٌّ لاَ يَمُوتُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ كُلُّهُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ বলবে, আল্লাহ তার জন্য দশ লক্ষ নেকী লিপিবদ্ধ করবেন, দশ লক্ষ গোনাহ মাফ করে দেন এবং জান্নাতে তার জন্য একটি গৃহ নির্মাণ করেন।[9]
জান্নাতের নদীসমূহ
জান্নাতের নদী আর পৃথিবীর নদী সমান নয়। পৃথিবীর নদীসমূহের পানি প্রক্রিয়াজাতকরণ ছাড়া পান কর বা ব্যবহার করা যায় না। পক্ষান্তরে জান্নাতের পানি কোন কিছু করা ব্যতীতই পান করা যায়। জান্নাতী নদীর পার্শ্বে নয়নাভিরাম নান্দনিক সবুজাভ বৃক্ষ থাকবে। যা দেখলে নয়ন জুড়াবে। জান্নাতের অনেকগুলো নদী রয়েছে। যেমন,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْكَوْثَرُ نَهَرٌ فِى الْجَنَّةِ حَافَتَاهُ مِنْ ذَهَبٍ مَجْرَاهُ عَلَى الْيَاقُوتِ وَالدُّرِّ تُرْبَتُهُ أَطْيَبُ مِنَ الْمِسْكِ وَمَاؤُهُ أَحْلَى مِنَ الْعَسَلِ وَأَشَدُّ بَيَاضًا مِنَ الثَّلْجِ.
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, কাওছার একটি জান্নাতী নদীর নাম। যার উভয় তীর স্বর্ণ নির্মিত। তার পানি ইয়াকুত ও মোতির উপর প্রবহমান। তার মাটি মিশক আম্বারের চেয়ে বেশী সুগন্ধিময়। তার পানি মধু অপেক্ষা সুমিষ্ট এবং বরফ অপেক্ষা স্বচ্ছ ও শুভ্র।[10]
عَنْ أَنَسٍ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ بَيْنَمَا أَنَا أَسِيرُ فِى الْجَنَّةِ إِذَا أَنَا بِنَهَرٍ حَافَتَاهُ قِبَابُ الدُّرِّ الْمُجَوَّفِ قُلْتُ مَا هَذَا يَا جِبْرِيلُ قَالَ هَذَا الْكَوْثَرُ الَّذِى أَعْطَاكَ رَبُّكَ فَإِذَا طِينُهُ أَوْ طِيبُهُ مِسْكٌ أَذْفَرُ.
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, (মি‘রাজের সময়) আমি জান্নাত দেখতে ছিলাম। সেখানে আমি একটা নদী দেখতে পেলাম, যার উভয় তীরে মোতি তৈরী গম্বুজ রয়েছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরীল! এগুলো কী? তিনি বললেন, এ হ’ল কাওছার নদী, যা আপনাকে আপনার প্রভু দিয়েছেন। আর তার মাটি বা সুগন্ধি মিশকে আম্বারের ন্যায়।[11]
কাওছার নদীর পানি দুধ থেকে সাদা এবং মধু থেকে অধিক মিষ্টি হবে। আর এই কাওছার নদী আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে রাসূল (ছাঃ)-কে উপঢৌকন দিবেন। যেমন,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ سُئِلَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَا الْكَوْثَرُ قَالَ ذَاكَ نَهْرٌ أَعْطَانِيهِ اللهُ يَعْنِى فِى الْجَنَّةِ أَشَدُّ بَيَاضًا مِنَ اللَّبَنِ وَأَحْلَى مِنَ الْعَسَلِ فِيهَا طَيْرٌ أَعْنَاقُهَا كَأَعْنَاقِ الْجُزُرِ قَالَ عُمَرُ إِنَّ هَذِهِ لَنَاعِمَةٌ. قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَكَلَتُهَا أَنْعَمُ مِنْهَا.
আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) জিজ্ঞাসিত হলেন যে, কাওছার কী? উত্তরে তিনি বললেন, এটা একটি নদী, যা জান্নাতে আল্লাহ আমাকে দান করবেন। যার পানি দুধের চেয়ে সাদা হবে, মধুর চেয়ে মিষ্টি হবে এবং সেখানে পাখি থাকবে, যাদের গর্দান হবে উঠের ন্যায়। ওমর (রাঃ) তখন বললেন, ঐ পাখিরা খুবই আনন্দে রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) তখন বললেন, ঐ পাখিগুলোকে ভক্ষণকারী আরো আনন্দে রয়েছে।[12]
عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم دَخَلْتُ الْجَنَّةَ فَإِذَا أَنَا بِنَهَرٍ حَافَتَاهُ خِيَامُ اللُّؤْلُؤِ فَضَرَبْتُ بِيَدِى إِلَى مَا يَجْرِى فِيهِ الْمَاءُ فَإِذَا مِسْكٌ أَذْفَرُ قُلْتُ مَا هَذَا يَا جِبْرِيلُ قَالَ هَذَا الْكَوْثَرُ الَّذِى أَعْطَاكَهُ اللهُ.
আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমি জান্নাতে প্রবেশ করলাম, জান্নাতের নদীর পার্শেব মণিমুক্তা খচিত তাঁবু রয়েছে। অতঃপর আমার হাত দিয়ে তাতে আঘাত করলে সেখান থেকে পানি প্রবাহিত হ’ল, যা মিশকে আম্বরের চেয়ে সুগন্ধিময়। আমি বললাম, হে জিবরীল! এটা কী? তিনি বললেন, এটা কাওছার নদী, যা আল্লাহ আপনাকে দান করবেন।[13]
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم سَيْحَانُ وَجَيْحَانُ وَالْفُرَاتُ وَالنِّيلُ كُلٌّ مِنْ أَنْهَارِ الْجَنَّةِ.
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, সাইহান, জাইহান, ফুরাত ও নীল জান্নাতের নদী।[14](ক্রমশঃ)
[1]. তিরমিযী হা/২৫২৬; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬৬২; ছহীহুল জামে‘ হা/২১১৬, সনদ ছহীহ।
[2]. ছহীহ বুখারী হা/৪৮৭৮ ও ৭৪৪৪; ছহীহ মুসলিম হা/৪৬৬; ইবনু মাজাহ হা/১৮৬; মুসনাদে আহমাদ হা/১৯৬৯৭; ইবনু হিববান হা/৭৩৮৬; মুসনাদে আবী ইয়ালা হা/৭৩৩১।
[3]. ছহীহ বুখারী হা/৩৩৪২; ছহীহ মুসলিম হা/৪৩৩; মিশকাত হা/৫৮৬৪; মুসনাদে আহমাদ হা/২১৩২৬; ইবনু হিববান হা/৭৪০৬।
[4]. তিরমিযী হা/২৫২৭, সনদ হাসান।
[5]. ছহীহ মুসলিম হা/১৭২৯; আবুদাঊদ হা/১২৫০; মুসনাদে আহমাদ হা/২৬৮১৮; দারেমী হা/১৪৩৮; ইবনু খুযায়মাহ হা/১১৮৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৭৩৬।
[6]. মুসলিম হা/১২১৮; ইবনু মাজাহ হা/৭৩৮; মুসনাদে আহমাদ হা/৪৩৪; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৩৯৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৬১৩০।
[7]. তিরমিযী হা/১০২১; ইবনু হিববান হা/২৯৪৮; মিশকাত হা/১৭৩৬; রিয়াযুছ ছালেহীন হা/৯২৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৯৫, সনদ হাসান।
[8]. আবুদাঊদ হা/৪৮০০; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭৩, সনদ ছহীহ।
[9]. ইবনু মাজাহ হা/২২৩৫; তিরমিযী হা/৩৪২৮; মিশকাত হা/২৪৩১; হাকিম হা/১৯৭৪; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩১৩৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৬২৩১, সনদ হাসান।
[10]. ইবনু মাজাহ হা/৪৩৩৪; তিরমিযী হা/৩৩৬১; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৬১৫, সনদ ছহীহ।
[11]. ছহীহ বুখারী হা/৬৫৮১।
[12]. তিরমিযী হা/২৫৪২; মুসনাদে আহমাদ হা/১৩৫০৫; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৫১৪, সনদ ছহীহ।
[13]. মুসনাদে আহমাদ হা/১২০২৭; মুসনাদে আবী ইয়ালা হা/৩৭২৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৩৬৫, সনদ ছহীহ।
[14]. ছহীহ মুসলিম হা/৭৩৪০; মুসনাদে আহমাদ হা/৭৮৭৩; মিশকাত হা/৫৬২৮; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১১০; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৬৫২।