পথে-প্রান্তরে
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
রেযওয়ানুল ইসলাম 512 বার পঠিত
কেন আব্দুর রহীম গ্রীণ ইসলাম গ্রহণ করলেন?
তানজানিয়ার রাজধানী দারুস সালামে আমার জন্ম। সেখানে আমার বাবা বিলুপ্ত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের একজন ঔপনিবেশিক প্রশাসক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। এই তো কয়েক দশক পূর্বেও ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সমগ্র ভূ-ভাগের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জুড়ে বিস্তৃত ছিল। বর্তমানে সেই সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব শুধুমাত্র ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের কয়েকটি দ্বীপে বিদ্যমান আছে। বাকি সবই কালের অতল গহবরে বিলীন হয়ে গেছে। সবকিছু কত দ্রুত বদলায়! কিভাবে ক্ষমতাবানদের পতন ঘটে! এসব বাস্তব ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণের জন্যই মহাক্ষমতাবান আল্লাহ কুরআনে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা যেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত পরিভ্রমণ করে অতীতের ক্ষমতাধরদের করুন পরিণতি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করতে পারি যারা এক সময় দোর্দন্ড প্রতাপশালী ছিল এই পৃথিবীতে। যাইহোক, আমার বাবার কথায় ফিরে আসি যিনি আমার জন্মের সময় তানজানিয়ার ঔপনিবেশিক প্রশাসক ছিলেন। বাবা-মা আমার নাম রাখলেন অ্যান্থনী ভ্যাটসফ গ্যালভিন গ্রীন। আমার মনে হয় আপনারা আমার নাম দেখে হাসছেন। ভ্যাটসফ একটা পোলিশ নাম। কারণ আমার মা ছিলেন পোলিশ।
ক্যাথলিক শিক্ষা :
পোলিশ হওয়ায় আমার মা ছিলেন রোমান ক্যাথলিক। তাই তিনি চেয়েছিলেন যে, আমি এবং আমার সহোদর ডানকান (ডানকান চার্লস আলেকজান্ডার গ্রীন) যেন আদর্শ ক্যাথলিক হিসাবে বড় হই। ফলে বলতে গেলে আমাদের জন্মের দিনই আমাদের নাম একটি বিখ্যাত রোমান ক্যাথলিক আবাসিক স্কুলে তালিকাভুক্ত হয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে, এই স্কুলটি একটি মঠ বা আশ্রম জাতীয় আবাসিক স্কুল। তার মানে হল, ঐ স্কুলে সন্ন্যাসীরা (খ্রিষ্টান নান) বাস করেন এবং পড়ান। স্কুলটির নাম হল ‘অ্যামপ্লিফোর্থ কলেজ’, যা উত্তর ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারে অবস্থিত। আমার বয়স যখন ২ বছর তখন আমরা দারুস সালাম ছেড়ে চলে আসি। আমার ছোট ভাইয়ের জন্ম লন্ডনে। যখন তার বয়স প্রায় ৮ বছর আর আমার প্রায় ১০ বছর তখন আমাদেরকে সেই আবাসিক স্কুলে পাঠানো হয়। সুতরাং ১০ বছর বয়সেই আমাকে অ্যামপ্লিফোর্থ কলেজের প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণীতে ভর্তি হতে হয়। মনে পড়ে, স্কুলে পাঠানোর পূর্বে মা আমাদের ক্যাথলিকদের কিছু উপাসনা পদ্ধতি এবং রীতি-নীতি শিক্ষা দিয়েছিলেন যাতে করে অন্যরা বলতে পারে যে, ‘আশ্রম’ স্কুলের নতুন জীবনের জন্য তিনি আমাদেরকে ভালমতো প্রস্ত্তত করতে পেরেছেন। মা আমার বাবাকে জীবনসঙ্গী হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন যিনি, ছিলেন একজন অজ্ঞেয়বাদী (জড়বস্ত্ত ছাড়া অন্য কিছু বা ঈশ্বর সম্বন্ধে কিছুই জানা সম্ভব নয়, বলে যারা বিশ্বাস করে)। সবাই ধারণা করেছিল তিনি হয়তো কোন ক্যাথলিককে বিয়ে করবেন, কিন্তু তিনি আর এক ধাপ এগিয়ে আমার বাবাকে বিয়ে করেছিলেন। যাইহোক, তিনি নিজেকে খুব একনিষ্ঠ ক্যাথলিক মনে করতেন না। কিন্তু আমাদের দু’ভাইকে ঐ ক্যাথলিক স্কুলে পাঠিয়ে তিনি তা হ’তে চেয়েছিলেন। মনে পড়ে এক রাতে তিনি আমাকে একটি প্রার্থনা শেখালেন, যে পদ্ধতিতে ক্যাথলিকরা প্রায়ই উপাসনা করে থাকে। সেটি ছিল ক্যাথলিকদের একটি অন্যতম প্রধান প্রার্থনা, যা বার বার করা হয়। এ সময় তাদের হাতে জপমালা থাকে, যার দ্বারা তারা তাদের ধারাবাহিক প্রার্থনা গণনা করে। তাদের প্রধান প্রার্থনার শিরোনাম হল, ‘হে মেরী’ (Hail Mary)। এই উপাসনা এভাবে শুরু হয়- ‘হে মেরী! ঈশ্বরের জননী, তুমি আর্শীবাদ কর সকল মহিলাদেরকে এবং আর্শীবাদ কর তোমার গর্ভের সন্তান যিশুকে’। নয় বছর বয়সে প্রথম মাকে আমি এভাবে প্রার্থনা করতে শুনি, ‘হে মেরী! ঈশ্বরের জননী’। মনে মনে ভাবলাম, ‘ঈশ্বরের কিভাবে মা থাকতে পারে?’ ঈশ্বর তো এমন, যার কোন শুরু নেই এবং শেষও নেই। তাহলে কিভাবে ঈশ্বরের ‘মামনি’ থাকতে পারে? বসে বসে এই ঈশ্বরের মা সম্বন্ধে চিন্তা করতে লাগলাম এবং নিজেই একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম। যদি মেরী ঈশ্বরের গর্ভধারিণী মা হয়েই থাকেন, তবে তাকেই তো প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বর অপেক্ষা বড় ঈশ্বর গণ্য করা উচিত।
পাপ স্বীকার-এর কারণ কী :
স্কুলে যাওয়ার পর বেশী বেশী পড়াশোনা এবং চিন্তা ও গবেষণা করতে শুরু করলাম। তখন মাথার মধ্যে আরো প্রশ্নের উদয় হতে লাগল। স্কুলে আমাদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে ‘পাপ স্বীকার’ করতে হত। যাজক বলতেন, ‘তোমাদেরকে অবশ্যই ছোট-বড় সকল অপরাধ স্বীকার করতে হবে। যদি সব পাপ স্বীকার না কর, তবে পাপ স্বীকারের কোন মূল্যই নেই এবং তোমাদের কোন পাপই ক্ষমা করা হবে না’। কল্পনা করতে পারেন? ১০-১১ বছর বয়সের স্কুল বালকদেরকে ১৯-২০ বছর বয়স পর্যন্ত নিয়মিত সকল অপরাধ স্বীকার করে যেতে হবে! উপরন্তু এমন ব্যক্তিদের কাছে করতে হবে, যারা আমাদের আবাসিক শিক্ষক। অন্য কথায় যারা আমাদের সার্বিক দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন। এটা হল একটা মারাত্মক সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র, যাতে পাপ স্বীকার করিয়ে সাধারণ মানুষদেরকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। আমি তাদের প্রশ্ন করতাম, কেন আপনাদের কাছে নিজের সব পাপকর্ম স্বীকার করব? কেন সরাসরি ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা চাইতে পারব না? আসলে বাইবেল অনুযায়ী যিশু বলেছেন যে, শুধু পিতার (ঈশ্বর) কাছেই আমাদের অপরাধ মার্জনার জন্য প্রার্থনা করা প্রয়োজন। তবে কিসের জন্য যাজকের শরণাপন্ন হতে হয়?’’তারা আমাকে বোঝাতেন; ‘ঠিক আছে, তুমি ঈশ্বরের কাছেও ক্ষমা চাইতে পার, যদি তুমি চাও। কিন্তু তুমি নিশ্চিত হতে পার না ঈশবর তোমার নিবেদন আদৌ শুনবেন কি-না।’’ ব্যাপারটা নিয়ে সমস্যায় পড়লাম। চার্চের অন্য মতাবাদগুলো নিয়েও সমস্যায় পড়লাম। তবে সবচেয়ে বেশি দ্বিধাদ্বন্ধে পড়লাম যে মতবাদ নিয়ে তা হল অবতারবাদ-‘‘একটা ধারণা যা বলে ঈশ্বর মানুষ হয়ে মর্ত্যে এসেছিলেন।’’
মিশরে কাটানো ছুটির দিনগুলো :
যখন ১১ বছরে পা দিই ঠিক তখনই বাবা মিশরে একটি চাকুরী পেলেন। তিনি বার্কলেস ব্যাংকের কায়রো শাখার মহাব্যবস্থাপক হলেন এবং তার ফলে আমার পরবর্তী ১০ বছরের ছুটিগুলো মিশরেই অতিবাহিত হয়েছিল। কাজেই আমাকে ইংল্যান্ডের স্কুলেও যেতে হতো, আবার ছুটি পেলে মিশরেও আসতে হতো। আপনারা জানেন, পশ্চিমা সমাজ আমাদের একটা সমীকরণ শিক্ষা দিয়ে থাকে। তারা বলে, ধন-সম্পদ=সুখ-শান্তি। আপনি যদি সুখী হতে চান এবং জীবনটাকে ভালভাবে উপভোগ করতে চান, তবে আপনার দরকার প্রচুর টাকা-পয়সা। কারণ টাকা-পয়সা থাকলে আপনি সুন্দর গাড়ী, টিভিসেট ইত্যাদি যেমন কিনতে পারবেন আবার সিনেমা দেখতে কিংবা অবকাশ যাপনেও বের হতে পারবেন। পাশাপাশি আপনার জীবনকে সুখী করতে অপরিহার্যভাবে যে জিনিসগুলো প্রয়োজন তাও কিনতে পারবেন। তারা সব সময় এই দর্শনই প্রচার করে, যদিও বাস্তবে ব্যাপারটা আদৌ তা নয়।
আমাকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, ঐ স্কুল আমার কখনোই ভাল লাগত না। নিজেকে প্রশ্ন করতাম, আমি তো আবাসিক স্কুল একদমই পসন্দ করি না তাহলে কেন আমি আমার সবকিছু, সব আত্মীয়-পরিজন ছেড়ে শত শত মাইল দূরবর্তী ইয়র্কশায়ার মুরসের এই স্থানে পড়ে আছি। ‘কিন্তু কেন? নিজের বিবেককে প্রতিনিয়ত প্রশ্নবানে বিদ্ধ করতাম। মিশরের জীবনই আমার প্রিয় ছিল। যখন ইংল্যান্ডে ফিরে যেতাম তখন ভাবতাম, কেন আমি এখানে? আরও ভাবতাম, জীবনের লক্ষ-উদ্দেশ্য কী? কিসের জন্য আমরা বেঁচে আছি? এত সব কিছুর অর্থ কী? ভালবাসা মানে কী? আমাদের জীবন কিসের জন্য? এই জীবনের প্রকৃত স্বরূপই বা কেমন? এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করতে থাকলাম এবং অবশেষে একটা সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দাঁড় করালাম। ‘হ্যাঁ, আমি আজ এই স্কুলে আছি কঠোর পরিশ্রম করার জন্য, যাতে পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করতে পারি, যাতে কোন ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারি, যাতে ভাল বেতনের একটা চাকরি পাই যা আমাকে অঢেল টাকার যোগান দেবে। যাতে করে যখন আমি বিয়ে-শাদী করব এবং আমার সন্তানাদী হবে তখন যেন আমি তাদের সেই একই রকম ব্যয়বহুল প্রাইভেট স্কুলে পাঠাতে পারি এবং যাতে করে তারা আবার কঠোর পরিশ্রম করে বড় ডিগ্রী লাভ করতে পারে। যাতে তারাও একটা ভাল চাকুরী পায়, যাতে করে যখন তাদের আবার সন্তান-সন্ততি হবে তখন যেন তাদেরও যথেষ্ট ধন-সম্পদ থাকে, যাতে তাদের সন্তানদেরও আবার সেই একই রকম স্কুলে ভর্তি করানো যায়। বুঝলেন? অবশেষে নিশ্চিত হলাম। এই তো! এটাই তো আমাদের সবার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য! তাহলে এই উদ্দেশ্য পূরনের জন্যই কি বিশ্ব-সংসারে এত কিছুর আয়োজন? মনে মনে বললাম, অসম্ভব। এটাই জীবনের একমাত্র লক্ষ-উদ্দেশ্য হতে পারে না। তাহলে কোন্টি জীবনের প্রকৃত লক্ষ্য?
উত্তরের সন্ধানে : আমার মনে কৌতূহল উদয় হল। আসলে সত্য জানার প্রতি আমার এই দুর্বার আগ্রহ একদিনে সৃষ্টি হয়নি। বরং তা সৃষ্টি হয়েছে যখন থেকে আমি চিন্তা-গবেষণা শুরু করি এবং অন্যান্য ধর্ম এবং দর্শনগুলোর মধ্যে ও জীবনের প্রকৃত লক্ষ্য এবং এই লক্ষ্যের প্রকৃত স্বরূপের সন্ধান করতে শুরু করি এই আশায়, হয়তো সেগুলোর কোন একটি আমাকে তার সন্ধান দিতে পারবে। ১৯ বছর বয়সে আমার জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। যে ১০ বছর আমি মিশরে ছুটি কাটিয়েছিলাম সে দীর্ঘ সময়ে শুধুমাত্র ১ জন ব্যক্তির সাথেই ইসলাম নিয়ে আমার গঠনমূলক আলোচনা হয়েছিল। যদিও ক্যাথলিক ধর্ম সম্পর্কে আমার নিজেরই অনেক প্রশ্ন ছিল। তবুও কেউ যখন আমাকে আমার ধর্ম নিয়ে চ্যালেঞ্জ জানাত বা আক্রমণ করত তখন আমি বলিষ্ঠভাবে তার প্রতিবাদ করতাম। তখন আমি হয়ে পড়তাম ধর্ম রক্ষক, যদিও আমি নিজেই তা মন থেকে বিশ্বাস করতাম না। এটা ছিল একটা বিস্ময়কর স্ববিরোধিতা। যাইহোক, সেই মিশরীয় ব্যক্তির কাছে আমার অসংখ্য প্রশ্ন ছিল। কিন্তু প্রথমে ভেবেছিলাম তিনি আর কতটুকুই বা জানেন? আমরা হলাম ইংরেজ। এই তো ক’ বছর আগেও আমরা এই তুচ্ছ দেশটা শাসন করতাম।
মনে হল যেন মাইক টাইসন আমার মুখে ঘুষি মারল :
৪০ মিনিট ধরে চলা সেই কথোপকথনের শেষে তিনি আমায় কয়েকটি সাধারণ প্রশ্ন করলেন, যেগুলো আজ অবধি আমার মস্তিষ্কে বিদ্ধ হয়ে আছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘সুতরাং আপনি বিশ্বাস করেন যে, যিশুই হলেন ঈশ্বর?’ আমি বললাম, ‘হ্যঁা’। তিনি বললেন, ‘আপনি বিশ্বাস করেন যিশু ক্রশবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন?’ জবাব দিলাম, ‘হ্যাঁ, নিশ্চিতভাবে’। তখন তিনি তার মোক্ষম অস্ত্রটি ছুঁড়লেন, ‘তাহলে আপনি বিশ্বাস করেন ঈশ্বর মারা গেছেন?’ তিনি যখন এই বাক্যটি উচ্চারণ করলেন, তখন জানেন আমার কী ত্রাহি অবস্থা হয়েছিল? মনে হল যেন এইমাত্র মাইক টাইসন তার মুষ্টি দিয়ে আমার মুখে জোরসে এক ঘুসি মারলেন। আমি সম্পূর্ণরূপে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। কারণ সাথে সাথেই আমি আমার বিশ্বাসের অযৌক্তিকতা এবং নিজের বোকামিটা ধরতে পেরেছিলাম। অবশ্যই এটা বিশ্বাস করা যায় না যে, ঈশ্বর মারা গেছেন। আপনি তো ঈশ্বরকে খুন করতে পারেন না। এতদিন ধরে আমাকে যা কিছু জানানো হয়েছে, যা কিছু শেখানো হয়েছে, যেগুলো নিয়ে আমি সব সময়ই অস্বস্তিতে থাকতাম সেই সব শিক্ষার অসারতা আমার কাছে দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে গেল। উপলব্ধি করলাম, না। আমি তো বিশ্বাস করি না যে, ঈশ্বর মারা গেছেন। কিন্তু আমি সেই লোকের সামনে তা স্বীকার করতে রাজি ছিলাম না। তাই বললাম, ‘ওহ এটাতো কৌতূহলোদ্দীপক। কিন্তু আমাকে এখন বাড়ি ফিরতে হবে। বিদায়’। আমি এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে চাচ্ছিলাম না। তাই সেখান থেকে চলে আসলাম। সিগারেট ধরালাম, কফি পান করতে লাগলাম। তারপর লেখালেখি বা অন্য কিছু করেও সেই লোকটির বলা কথাগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে সাধ্যমত চেষ্টা করলাম। কিন্তু পারলাম না। সেই কথোপকথনটা ছিল আমার জীবনের মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা। আপনারা এটাকে আমার পুনর্জন্মও বলতে পারেন। আপনারা যারা সত্যের সন্ধানে আধ্যাত্মিক সফর করছেন, হয়তো আপনাদের অনেকেই ইসলামকে চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেন না। কিন্তু আমি ছিলাম কিছুটা ব্যতিক্রম। তাই সব কিছু নিয়েই আমি মাথা ঘামিয়েছিলাম আর এজন্যই আমি লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি। বস্ত্তত ১৯-২০ বছর বয়সে আমি ছিলাম এক হিপ্পি (অদ্ভুত বেশ-তূষার মাধ্যমে ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব প্রকাশকারী ব্যক্তি)। সে সময় আমি নিজের জন্য এক নতুন ধর্ম উদ্ভাবন করলাম। যা ছিল এক জগাখিচুড়ী ধর্ম। কারণ যে সব ধর্ম নিয়ে আমি পড়াশোনা করেছিলাম সেগুলোর প্রত্যেকটি থেকে কিছু কিছু অংশ একত্রিত করে আমি সেই বিশেষ ধর্ম উদ্ভাবন করলাম। কিন্তু এই নব্য ধর্ম নিয়ে আমি বেশী দূর এগোতে পারিনি। কারণ এটা ছিল এক রকম ময়লা আবর্জনার স্তূপ। যে সব বিধি-বিধান আমি সে ধর্মে যোগ করেছিলাম, সেগুলো ছিল একেবারেই জঘন্য।
ধর্মকে ভুলে যাও : কিভাবে সম্পদের পাহাড় গড়া যায়?
নিজেকে বললাম, ভুলে যাও। ধর্মের বিধি-বিধানের কথা বেমালুম ভুলে যাও। আধ্যাত্মিকতার কথা চিরতরে ভুলে যাও। ভুলে যাও এই সকল গুরুত্বহীন বিষয়। হতে পারে জীবনে ধর্মের কোন গুরুত্ব নেই। হতে পারে জীবনে ধনী হওয়া ছাড়া আর সবই অর্থহীন। আর হতে পারে তোমার প্রধান সমস্যা হল তোমার যথেষ্ট ধনবত্তা নেই। বুঝতেই পারছেন টাকার নেশায় কতটা বুঁদ হয়ে ছিলাম। কারণ ভেবেছিলাম শুধু টাকা-পয়সাই আমাকে সুখী করতে পারে। সে সময় আমার মানসপটে ইয়োটস (দ্রুতগতিসম্পন্ন অত্যন্ত মূল্যবান নৌযান) আর প্রাইভেট জেট বিমান ছাড়া আর কোন কিছুরই অস্তিত্ব ছিল না। প্রিয় পাঠক, আপনাদের এ যাত্রায় আমার অতীতে নিয়ে যাচ্ছি যাতে অনুমান করতে পারেন তখন আমার জীবন-যাপন পদ্ধতি কেমন ছিল। তখন মনে মনে ভাবতাম, কেমন করে অতি স্বল্প প্রচেষ্টায় অঢেল সম্পদ উপার্জন করা যায়? কষ্ট করতে কে চায় বলুন? কে চায় সমস্ত সময় কাজে ব্যয় করতে? আমরা শুধু ধনসম্পদ চাই আর চাই সেই সমস্ত সম্পদ আয়েশে ভোগ করতে। সুতরাং আমার দরকার অল্প পরিশ্রমে অধিক রোজগার। পাশাপাশি সীমাহীন আনন্দ বিনোদন। তাই ঠিক করলাম, ‘ঐসব সফল মানুষদের নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করি, যাদের অনেক ধন-সম্পদ আছে এবং খুঁজে বের করি কিভাবে তারা এত ধনী হলো’। সর্বপ্রথম ব্রিটেনকে বেছে নিলাম। কোন সমস্যা নেই। সীমাহীন প্রাচুর্য। কিন্তু অমানুষিক খাটা-খাটুনি। তাহলে কিসের শিল্প-বিপ্লব? ছ্যাহ! কি সব অন্ধকারাচ্ছন্ন শয়তানের কল-কারখানা। ওফ! ভাবা যায় না। তারপর যাওয়া যাক আমেরিকায়। কী আছে আমেরিকান স্বপ্নে? আপনি একটা নোংরা নর্দমার মধ্যে যেন ইঁদুর দৌঁড় দৌড়াচ্ছেন আর আপনি তা করছেন মিলিয়নিয়ার হওয়ার নেশায়, যা নিশ্চিতভাবেই হাড়ভাঙ্গা খাটুনির ব্যাপার। আর জাপানীরা? হ্যাঁ, তারাও অনেক সমৃদ্ধিশালী কিন্তু তারা যে কাজ ছাড়া আর কিছুই বোঝে না। এরপর সৌদি আরবের কথা আমার মাথায় এলো। তারা তো উটে চড়ে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু তাদেরও অনেক প্রাচুর্য আছে। আহ! এটাই তো চাই। বিন্দুমাত্র ক্লেশ নাই তবুও টাকা আর টাকা। সুতরাং সেখানে আমার জন্য কিছু থাকলেও থাকতে পারে।
কুরআন পাঠ : মনে মনে ঠিক করলাম, অবশ্যই তাদের নিয়ে ভাবা উচিত- তাদের ধর্ম কী, ধর্মগ্রন্থ কী! হ্যাঁ সেটা কুরআন। তাহলে কুরআন নিয়ে একটু চেষ্টা করা যাক না। বলা যায় না, সেখানে কোন অমূল্য রতন থাকলেও থাকতে পারে। বাস্ত্তবিকই, এই ধরনের ভাবনাই আমাকে একটা বইয়ের দোকানে নিয়ে গেল। আমি কুরআনের একটা অনুবাদ কিনে ফেললাম। শুধুমাত্র কৌতূহলই আমাকে কুরআনের সংস্পর্শে নিয়ে আসল। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ মনে আমি কুরআন পড়া শুরু করেছিলাম। কোন নিগূঢ় সত্য উদঘাটনের উদ্দেশ্য আমার ছিল না। কেবল জানার আগ্রহ জেগেছিল যে, এই গ্রন্থ কী বলে। স্রেফ এই কারণেই, নতুবা হয়তো কোনদিনই কুরআনের দ্বারস্থ হতাম না। আমি খুব দ্রুত পড়তে পারি। পরিষ্কারভাবে মনে আছে, তখন আমি ট্রেনে ছিলাম। লন্ডনে টেম্স নদীর তীরে আমি বাস করতাম। সেখান থেকে ট্রেনে চেপে ভিক্টোরিয়া যাচ্ছিলাম। ট্রেনের জানালার পাশের সিটে বসে কুরআনের অনুবাদ পড়তে লাগলাম। কিছুক্ষণ পড়ার পর অনুধাবন করলাম, ‘যদি আমি জীবনে কোন ঐশবরিক গ্রন্থ পড়ে থাকি তবে তা এটাই’। সত্যি বলতে কি ঐ মুহূর্তেই আমি নিশ্চিত হয়েছিলাম এবং বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম যে, কুরআন হল আল্লাহর বাণী। সবসময় আমার একটা অভ্যাস ছিল, কোন কিছু পড়লে তা শুধু ভাসা ভাসা করে পড়তাম না। বরং তা বারবার পড়ে ভালভাবে বোঝার চেষ্টা করতাম। ভাসাভাসা করে কোন কিছু পড়া ঠিক যেন এমন, আপনি একটা সুস্বাদু রসালো আপেলের দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন এবং নাক দিয়ে সেটার মিষ্টি ঘ্রান নিচ্ছেন কিন্তু আপনি জানেন না তার স্বাদ আসলে কেমন। অবশ্যই আপনাকে সেটার স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। তারপর একদিন কোন এক মসজিদের লাইব্রেরীতে গিয়ে উপস্থিত হলাম। সেখানে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর জীবনী এবং বিভিন্ন ইবাদাত বিষয়ক বেশ কিছু বই দেখে বেজায় খুশি হলাম। সেগুলো একটা একটা করে দেখছিলাম আর ভাবছিলাম, ‘ওয়াও! কী চমৎকার! এখানে কত কী রয়েছে’। হঠাৎ এক ব্যক্তি এসে পাশে দাঁড়াল এবং জানতে চাইল, ‘দুঃখিত, আপনি কি মুসলিম?’ মনে মনে বললাম ‘আমি মুসলিম? কী বলছে লোকটা?’ তাকে জবাব দিলাম, ‘দেখুন, আমি শুধু বিশ্বাস করি, ঈশ্বর মাত্র একজনই যিনি আল্লাহ এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ) হলেন তার বার্তাবাহক’। তিনি বললেন, ‘তাহলে তো আপনি একজন মুসলিম।’ আমি বললাম, ‘সত্যি? আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ’। তারপর তিনি বললেন, ‘এখন ছালাতের সময়। আপনি কি ছালাতে আসতে চান?’ সম্ভবত সেদিন ছিল শুক্রবার। কারণ দিনের মধ্য ভাগেই মসজিদটি পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমি তো তখনও জুম‘আর ছালাত সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। তবুও মসজিদে প্রবেশ করলাম এবং ছালাতে দাঁড়ালাম। তারপর ছালাত শুরু হতেই হতবিহবল হয়ে পড়লাম। আমার ধারণা, পুরোটা সময় জুড়েই আমি উল্টাপাল্টাভাবে ছালাতের আহকাম আরকানগুলো আদায় করেছিলাম। এখনও স্পষ্ট মনে আছে, সেদিন ছালাত শেষ হওয়ার সাথে সাথেই মসজিদের মুছল্লিরা আমাকে ঘিরে ধরল এবং তাদের প্রত্যেকেই মাত্র ৫ মিনিটে আমাকে সম্পূর্ণ ইসলামটাই শেখাতে চাইল। এমন এক বিস্ময়কর অনুভূতি নিয়ে আমি সেদিন মসজিদ থেকে বের হয়েছিলাম যেন এইমাত্র আমার বিক্ষিপ্ত, উত্তপ্ত আত্মাকে কেউ যেন ঠান্ডা পানি দ্বারা ধুয়ে দিল। কল্পনার সুখরাজ্যে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করে দেখতে পেলাম আমি শুভ্র, সুন্দর, সিণগ্ধ মেঘের উপর দিয়ে হাঁটছি। এটা ছিল আত্মিক পরিতৃপ্তির এক অসাধারণ অনুভূতি।
ইতিমধ্যে আমি সত্যি সত্যিই মনে প্রাণে ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধানে বিশ্বাস স্থাপন করেছিলাম। তা সত্ত্বেও সম্পূর্নরূপে ইসলামে প্রবেশ করতে প্রকৃতপক্ষে আমার আরো প্রায় ২ বছর সময় লেগেছিল। যে ধরনের জীবন যাপনে এতদিন আমি অভ্যস্থ ছিলাম তা পরিত্যাগ করতে বাস্তবিকই অনেক বেগ পেতে হয়েছিল। আল্লাহ আমাকে ধৈর্যধারণের তাওফীক্ব দিয়েছিলেন। এখনও অতীতের দিকে ফিরে তাকালে সেই দিনগুলো আমায় অনুপ্রেরণা জোগায়, সাহস দেয় আর অনেক বাস্তবতা শিক্ষা দেয়। ঐ ২ বছর ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে দুর্বিষহ অধ্যায়। কেন? এজন্য যে, আমি সত্য জানতাম। কিন্তু তা অনুসরণ করতাম না। যদি আপনি অজ্ঞ হন তবে এই অজ্ঞতা আপনার জন্য এক অর্থে আশীর্বাদ। তার মানে হল, যতক্ষণ পর্যন্ত সত্য আপনার অজানা ততক্ষণ পর্যন্ত এক দিক দিয়ে আপনি নিষ্পাপ। যদিও প্রকৃত প্রস্তাবে অজ্ঞতা কোনভাবেই আশীর্বাদ নয়। কিন্তু যখন সত্য জানা সত্ত্বেও সে অনুযায়ী আপনি আপনার জীবন পরিচালনা করছেন না, তখন তো আপনি নিজের সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা করছেন। এটা মারাত্মক ভুল, ভয়ানক আত্মপ্রতারণা! আমার ক্ষেত্রেও ঠিক এ ধরনের ঘটনাই ঘটেছিল। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ, আমি ইসলামে ফিরে আসতে পেরেছি। প্রথমদিকে, আমি নিজেকে মুসলিম হিসাবে পরিচয় দিলে কেউ তা বিশ্বাস করত না। সবসময় বলতাম যে, আমি একজন খাঁটি মুসলিম। কিন্তু অন্যরা আমার সে কথায় মোটেও গুরুত্ব দিত না। অনেক সময় এমনও ঘটত, হয়তো কোন পার্টিতে মদ গিলছি আর অন্যদেরকে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান দিচ্ছি। তারা তখন উপহাস করে মন্তব্য করত, ‘হ্যাঁ, সত্যি? অসাধারণ। বলো আরো বলো’। আমি বলতাম, ‘না, আর পারছি না। আমি ভীষণ ক্লান্ত’। আসলে অতিরিক্ত মদ্য পানের কারণে ততক্ষনে আমি নেশাগ্রস্ত। এই ছিল আমার অবস্থা। আর এমনই ছিল আমার ইসলাম। আলহামাদুলিল্লাহ পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহ তা‘আলা আমাকে সে যন্ত্রণাময় জীবন থেকে মুক্ত করেছেন, আমায় পথ দেখিয়েছেন। এক সময় আমি প্রত্যহ পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করা শুরু করলাম। আল্লাহর কাছে শপথ করলাম যে, যদিও আমি ছালাতের নিয়ম-কানূন, দো‘আ-দরূদ কিছুই ভাল করে জানি না। তবুও অন্য কোন ইবাদাত না করলেও আমি নিয়মিত ছালাত আদায় করবই। এই চ্যালেঞ্জটা আমি খুব গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করলাম এবং সফলও হলাম। যখন ছালাত সঠিকভাবে আদায় হবে, দেখবেন আপনার সম্পূর্ণ জীবটাই পাল্টে যাবে।
প্রিয় পাঠক, আমি নিশ্চিত এই মুহূর্তে আপনারা আমার কাছ থেকে আরো দ’ুটি প্রশ্নের উত্তর আশা করছেন।
১ম প্রশ্ন : আপনার মুসলিম হওয়ার অনুভূতি কেমন ছিল?
একটা উপমার সাহায্যে বোঝানোর চেষ্টা করছি। ধরে নিন, এক অমাবশ্যার রাতে আপনাকে কেউ সম্পূর্ণ অচেনা একটি পরিত্যাক্ত নির্জন ভূতুড়ে বাড়িতে নিয়ে গেল, যে বাড়ির সর্বত্র চেয়ার, টেবিল, ল্যাম্প ইত্যাদি ভাঙ্গা জিনিসপত্র ছড়ানো ছিটানো রয়েছে। অত:পর সেই নিকষকালো অন্ধকার বাড়িতে আপনাকে একাকী রেখে বাকি সবাই দরজা বন্ধ করে চলে গেল। অনন্যোপায় হয়ে আপনি বের হবার পথ খুঁজতে আরম্ভ করলেন যদিও কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না। ফলশ্রুতিতে এটা ওটার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলেন এবং প্রচন্ড আঘাত পেলেন। কিন্তু মুক্তির কোন রাস্তা খুঁজে পেলেন না। কাজেই বাধ্য হয়েই আপনাকে সেই অন্ধকার জগতেই বাস করতে হল। ‘কুফরী’ ব্যাপারটিও ঠিক এমন। আপনার ক্ষেত্রেও ঠিক এমনই ঘটছে, যখন আপনি ইসলাম থেকে বহু ক্রোশ দূরে আছেন। আপনি যেন আঁধার জগতের বাসিন্দা। আপনার আসল গন্তব্য কী তা আপনি জানেন না। কোত্থেকে এসেছেন তাও আপনার অজানা। আপনি এও জানেন না যে, মানবজীবন বাধা-বিপত্তি, চড়াই-উৎরাই, সমস্যা-সংকটে পরিপূর্ণ এক অত্যন্ত দুর্গম পথ। আর সেই পথ নিরাপদে পাড়ি দেয়ার উপায়ও আপনার সম্পূর্ণ অজানা। একমাত্র ইসলামই পারে সেই আঁধার ঘরের দরজা উন্মুক্ত করতে, যাতে আপনি যন্ত্রনাময় জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে আলোকময় জগতে পা রাখতে পরেন। তখন সবকিছুই আপনার কাছে স্বচ্ছ হয়ে যাবে এবং অনুধাবন করতে পারবেন সত্যি সত্যিই আপনি বেঁচে আছেন না ইতিমধ্যে আপনার আত্মার মৃত্যু ঘটেছে। ইসলাম বয়ে আনে জ্যোতি, তৃপ্তি এবং হৃদয়ের প্রশান্তি। তাইতো ইসলাম এত মহান! এভাবেই ইসলামের তুলনা করা যেতে পারে।
আপনাদের ২য় প্রশ্ন হতে পারে : আপনার বাবা-মার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?
শতভাগ সততার সাথেই বলছি মুসলিম হওয়ার পর এখন বাবা-মার সাথে আমার সম্পর্ক আগের তুলনায় অনেক অনেক ভাল আলহামদুলিল্লাহ্। আমি বিশ্বাস করি, আপনি যদি বাস্তবিকই বাবা-মার সাথে সদ্ব্যবহার করতে সক্ষম হন, তবে তারা নিঃসন্দেহে স্বীকার করতে বাধ্য হবেন যে, ইসলাম আপনাকে আরো দায়িত্ববান করেছে। ইসলাম মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি নম্রতার পক্ষপুট অবনমিত করে সর্বোচ্চ সুন্দর ও শ্রদ্ধাপূর্ণ ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়। যদি এমন আচরণ করা যায় তবে অমুসলিম পিতা-মাতাগণও বলতে বাধ্য হবেন যে, ‘ইসলাম এমন এক ধর্ম যা আমাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে এবং আমাদের সাথে আমাদের সন্তানদের সম্পর্ক আরও উষ্ণ করে তুলে’। আলহামদুলিল্লাহ, বাবা-মার সাথে আমার সম্পর্ক সত্যিই খুব ভাল।
অনুবাদক : কে,এম, রেযওয়ানুল ইসলাম
ইংরেজী বিভাগ, নর্দান ইউনিভার্সিটি, রাজশাহী; তাহেরপুর, বাগমারা