নফল ইবাদতের গুরুত্ব
জাহিদুল ইসলাম
এ. এইচ. এম. রায়হানুল ইসলাম 9654 বার পঠিত
১৪. বিবাদমান মানুষের মাঝে মীমাংসা করা :
একজন আদর্শ মানুষ কখনো কারো সাথে অন্যায় ঝগড়ায় লিপ্ত হবে না; বরং তার কর্তব্য হবে কোন মানুষ যদি পরস্পর বিবাদে লিপ্ত হয় তাহ’লে সে তাদের মাঝে মিমাংসা করে দেবে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ ‘নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহর তাক্বওয়া অবলম্বন কর, আশা করা যায় তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে’ (হুজুরাত ৪৯/১০)। অত্র আয়াতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন যে, মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। অর্থাৎ মুমিনরা সবাই পরস্পর দ্বীনী ভাই।
ছহীহ হাদীছে রয়েছে, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, وَاللَّهُ فِى عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِى عَوْنِ أَخِيهِ ‘আল্লাহ ততক্ষণ বান্দাকে সাহায্য করতে থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইকে সাহায্য করতে থাকে’। [1] তিনি আরো বলেন, যখন কোন মুসলমান তার (মুসলমান) ভাই-এর অনুপস্থিতিতে তার জন্য দো‘আ করতে থাকে; তখন ফেরেশতা তার দো‘আয় আমীন বলে থাকেন এবং বলেন আল্লাহ তোমাকেও অনুরূপই প্রদান করুন।
অতএব আমাদের দুই ভাইয়ের মাঝে মীমাংসা করে দিতে হবে। আর সমস্ত কাজ কর্মের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে চলতে হবে। আর যার মধ্যে এমন গুণ বা বিশেষণ থাকবে কারণে তার উপর আল্লাহর দয়া ও করুণা বর্ষিত হবে। যারা আল্লাহকে ভয় কর চলে তাদের সাথেই আল্লাহর রহমত থাকে। মহান আল্লাহ বলেন, فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَصْلِحُوا ذَاتَ بَيْنِكُمْ ‘অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং পরস্পরে আপোষ মীমাংসা করে নাও’ (আনফাল ৮/১)। অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় সুদ্দী (রহঃ) বলেন, أَصْلِحُوا ذَاتَ بَيْنِكُمْ ‘এর অর্থ হচ্ছে তোমরা পরস্পর ঝগড়া-বিবাদ করো না এবং গালিগালাজও করো না।
আনাস (রাঃ) বলেন, একদা আমরা দেখলাম, নবী করীম (ছাঃ) মুচকি হাসছেন। এদেখে হযরত উমার (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার হাসির কারণ কি? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উত্তরে বললেন, আমার উম্মতের দু‘জন লোক জানুর উপর ভর করে আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে গেছে। একজন বলছে, হে আমার প্রভু! এ লোকটি আমার উপর অত্যাচার করেছে। আমি এর প্রতিশোধ চাই। তখন আল্লাহ বলবেন, এ লোকটিকে অত্যাচারের বদলা দিয়ে দাও। অত্যাচারী উত্তরে বলবে, হে আমার প্রভু! এখন আমার কোন পুণ্য অবশিষ্ট নেই যে, আমি একে অত্যাচারের বিনিময়ে প্রদান করতে পারি। তখন ঐ অত্যাচারিত ব্যক্তি বলবে, হে আল্লাহ! আমার পাপের বোঝা তার উপর চাপিয়ে দিন। এ কথা বলতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কেঁদে ফেললেন এবং তিনি কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বললেন, ওটা বড়ই কঠিন দিন হবে। লোক এর প্রয়োজন বোধ করবে যে, সে তার পাপের বোঝা অন্যের উপর চাপিয়ে দিয়। তখন আল্লাহ পাক প্রতিশোধ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে সম্বোধন করে বলবেন, তুমি মাথা উঠিয়ে জান্নাতের দিকে লক্ষ কর। সে তখন মাথা উঠিয়ে জান্নাতের দিকে তাকাবে এবং আরয করবে, হে আমার প্রভু! এখানে স্বর্ণ, রৌপ্য ও মণি-মুক্তার তৈরী অট্টালিকা রয়েছে। হে আল্লাহ! এ অট্টলিকা কোন নবী, ছিদ্দীক ও শহীদদের? আল্লাহ উত্তরে বলবেন, যে কেউ এর মূল্য আদায় করবে তাকেই এটা দিয়ে দেওয়া হবে। সে বলবে, হে আমার প্রভু! কে এর মূল্য আদায় করতে সক্ষম হবে? আল্লাহ বলবেন, এর মূল্য তুমি আদায় করতে পার। সে বলবে, হে আল্লাহ! কিভাবে আমি এর মূল্য পরিশোধ করতে পারি? তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, এটা এইভাবে যে, তুমি তোমার ভাইকে ক্ষমা করে দিবে। সে বলবে, হে আমার প্রভু! ঠিক আছে আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। তখন আল্লাহ বলবেন, এখন তোমারা উভয়ে একে অপরের হাত ধর জান্নাতে প্রবেশ কর।
এরপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং পরস্পরের মধ্যে সন্ধি ও মিল প্রতিষ্ঠিত কর। কেননা আল্লাহ তা‘আলাও ক্বিয়ামতের দিন মুমিনদের পরস্পরের মাঝে মীমাংসা করিয়ে দিবেন’।[2]
বিবাদমান মানুষের মাঝে মিমাংসা করার প্রতি গুরুত্বারোপ করে হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كُلُّ سُلاَمَى مِنَ النَّاسِ عَلَيْهِ صَدَقَةٌ كُلَّ يَوْمٍ تَطْلُعُ فِيهِ الشَّمْسُ، يَعْدِلُ بَيْنَ الاِثْنَيْنِ صَدَقَةٌ ، وَيُعِينُ الرَّجُلَ عَلَى دَابَّتِهِ، فَيَحْمِلُ عَلَيْهَا، أَوْ يَرْفَعُ عَلَيْهَا مَتَاعَهُ صَدَقَةٌ، وَالْكَلِمَةُ الطَّيِّبَةُ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ خَطْوَةٍ يَخْطُوهَا إِلَى الصَّلاَةِ صَدَقَةٌ، وَيُمِيطُ الأَذَى عَنِ الطَّرِيقِ صَدَقَةٌ আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, প্রতিদিন যাতে সূর্যদয় হয় এমন প্রতিদিন মানুষের মধ্যে সুবিচার করা ছাদাক্বাহ। মানুষের মাঝে মীমাংসা করাটাই ছাদাক্বাহ। কোন মানুষকে তার বাহনের উপর উঠতে সাহায্য করা বা তার উপর তার মাল-সামান উঠিয়ে সাহায্য করাও ছাদাক্বাহ। ভাল কথা বলা ছাদাক্বাহ। ছালাতের জন্য প্রতিটি পদক্ষেপ ছাদাক্বাহ। রাস্তা হ’তে কষ্টদায়ক জিনিষ দূর করাও হচ্ছে ছাদাক্বাহ’।[3]
عَنْ أُمِّ كُلْثُومٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْسَ الْكَذَّابُ الَّذِي يُصْلِحُ بَيْنَ النَّاسِ وَيَقُولُ خَيْرًا وَيَنْمِي خَيْرًا উম্মে কুলছূম বিনতে উকবা বিন মু‘ইত (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ঐ ব্যক্তি মিথ্যাবাদী নয় যে মানুষের মধ্যে মীমাংসা করার জন্য বানিয়ে ভাল কথা পৌঁছিয়ে দেয় অথবা ভাল কথা বলে’।[4] মুসলিমে অপর বর্ধিত বর্ণনায় এসেছে, وَلَمْ أَسْمَعْ يُرَخَّصُ فِى شَىْءٍ مِمَّا يَقُولُ النَّاسُ كَذِبٌ إِلاَّ فِى ثَلاَثٍ الْحَرْبُ وَالإِصْلاَحُ بَيْنَ النَّاسِ وَحَدِيثُ الرَّجُلِ امْرَأَتَهُ وَحَدِيثُ الْمَرْأَةِ زَوْجَهَا. ‘আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে কেবলমাত্র তিন অবস্থায় মিথ্যা বলার অনুমতি দিতে শুনেছি। ১. যুদ্ধের ব্যাপারে। ২. লোকদের মাঝে মীমাংসা করার সময়। ৩. স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের আলাপ-আলোচনায়।
عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ عَنْ أَبِى الرِّجَالِ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَنَّ أُمَّهُ عَمْرَةَ بِنْتَ عَبْدِ الرَّحْمَنِ قَالَتْ سَمِعْتُ عَائِشَةَ تَقُولُ سَمِعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم صَوْتَ خُصُومٍ بِالْبَابِ عَالِيَةً أَصْوَاتُهُمَا وَإِذَا أَحَدُهُمَا يَسْتَوْضِعُ الآخَرَ وَيَسْتَرْفِقُهُ فِى شَىْءٍ وَهُوَ يَقُولُ وَاللَّهِ لاَ أَفْعَلُ. فَخَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَيْهِمَا فَقَالَ أَيْنَ الْمُتَأَلِّى عَلَى اللَّهِ لاَ يَفْعَلُ الْمَعْرُوفَ. قَالَ أَنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ فَلَهُ أَىُّ ذَلِكَ أَحَبَّ.
আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দরজার নিকট দু’জন বিবাদকারীর উচ্চ আওয়াজ শুনতে পেলেন। তাদের মধ্যে একজন অপরজনকে কিছু ঋণ কমাবার ও নম্রতা প্রদর্শন করার জন্য অনুরোধ করছিল। আর ঋণদাতা বলছিল, আল্লাহর কসম আমি এটা করব না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের নিকট বেরিয়ে এলেন এবং বললেন, সে ব্যক্তি কোথায়, যে আল্লাহর উপর কসম খাচ্ছিল যে, সে ভাল কাজ করবে না? সে বলল, আমি হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এখন সে যা পসন্দ করবে, আমি তাতেই রাযী’।[5]
১৫. আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা :
সৃষ্টির শ্রেষ্ট হিসেবে মানুষের অন্যতম গুণাবলী হবে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে চলা। তাদের হক যথাযথ আদায় করা। কেননা যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে মহান আল্লাহও তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন। মহান আল্লাহ বলেন, وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ ‘আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচঞা করে থাক এবং আত্মীয়তার বন্ধন সম্পর্কে সতর্ক হও’ (নিসা ৩/১)। অত্র সূরার প্রথম আয়াতেই মহান আল্লাহ আত্মীয়তা সম্পর্কের কথা বলেছেন। আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক কথাটি অত্যন্ত ব্যাপক। এর দ্বারা সব রকম আত্মীয়ই বুঝানো হয়েছে। কালাম পাকে ارحام শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যা মূলত বহুবচন। একবচন হ’ল رحم এর অর্থ জরায়ু বা গর্ভাশয়। জন্ম সূত্রেই মূলত মানুষ পারস্পরিক এ সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
আত্মীয়-স্বজনের অধিকার আদায়ের চেতনায় উদ্ধুব্ধ করার জন্য বলা হয়েছে। আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে খুবই সচেতন ও পর্যবেক্ষণকারী। কিন্তু যদি লোক লজ্জার ভয়ে অথবা সমাজ ও পরিবেশের চাপে পড়ে আত্মীয়-স্বজনের প্রতি সু-ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাহলে আল্লাহর কাছে এর কোনই মূল্য নেই’।[6] মহান আল্লাহ বলেন, وَالَّذِينَ يَصِلُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَنْ يُوصَلَ وَيَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ وَيَخَافُونَ سُوءَ الْحِسَابِ ‘আর আল্লাহ যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে বলেছেন যারা তা অক্ষুণ্ণ রাখে এবং ভয় করে তাদের পালনকর্তাকে ও ভয় করে কঠিন হিসাবকে’ (রা‘দ ১৩/২১)। আর ঐ উত্তম গুণের অধিকারী মুমিনদের স্বভাব এই যে, তারা আত্মীয়তার সম্পর্ক যুক্ত রাখেন, তাদের সাথে সদাচরণ করেন, অভাবগ্রস্থ ও দরিদ্র লোকদের দান করেন এবং সকলের সাথে সদয় ব্যবহার করেন। তারা আল্লাহর নির্দেশ ক্রমেই এগুলি করে থাকেন। তারা তাদের প্রতিপ্রালককে ভয় কর সৎ কাজ করেন এবং অসৎ কাজ হ’তে বিরত থাকেন। তারা আখিরাতের কঠোর হিসাবকে ভয় করেন। এজন্যই তারা মন্দ কাজ হ’তে বেঁচে থাকেন। সৎ কাজের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং মধ্যম পথকে কখনোই পরিত্যাগ করেন না’।[7]
আত্মীয়তার বন্ধনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) :
হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلاَ يُؤْذِ جَارَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহমানের সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন আত্মীয়তার বন্ধন অক্ষুন্ন রাখে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।[8]عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ خَلَقَ اللَّهُ الْخَلْقَ، فَلَمَّا فَرَغَ مِنْهُ قَامَتِ الرَّحِمُ فَأَخَذَتْ بِحَقْوِ الرَّحْمَنِ فَقَالَ لَهَا مَهْ. قَالَتْ هَذَا مَقَامُ الْعَائِذِ بِكَ مِنَ الْقَطِيعَةِ. قَالَ أَلاَ تَرْضَيْنَ أَنْ أَصِلَ مَنْ وَصَلَكِ وَأَقْطَعَ مَنْ قَطَعَكِ. قَالَتْ بَلَى يَا رَبِّ. قَالَ فَذَاكِ لَكِ আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করেন। অতঃপর তিনি নিঃশেষ করার পর রক্ত সম্পর্ক দাঁড়িয়ে পরম করুনাময়ের কাপড় টেনে ধরল। তিনি তাকে বললেন, থামে, সে বলল, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী ব্যক্তি হ’তে আশ্রয় চাওয়ার জন্যই আমি দাঁড়িয়েছি। আল্লাহ বললেন, যে তোমার সাথে সম্পর্ক রাখবে আমি তার সাথে সম্পর্ক রাখব। আর যে তোমার সাথে সম্পর্ক রাখবে না আমি তার সাথে সম্পর্ক রাখব না। এতে কি তুমি খুশী নাও? সে বলল, নিশ্চয় হে আমার প্রভু! তিনি বললেন, যাও তোমার জন্য তাই করা হ’ল’। [9] عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَحَبَّ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ فِي رِزْقِهِ وَيُنْسَأَ لَهُ فِي أَثَرِهِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ. আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি চায় যে তার রূযী প্রশস্ত হোক এবং হায়াত বৃদ্ধি হোক সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখে’।[10]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَجُلًا قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ لِي قَرَابَةً أَصِلُهُمْ وَيَقْطَعُونِي، وَأُحْسِنُ إِلَيْهِمْ وَيُسِيئُونَ إِلَيَّ، وَأَحْلُمُ عَنْهُمْ وَيَجْهَلُونَ عَلَيَّ. فَقَالَ لَئِنْ كُنْتَ كَمَا قُلْتَ فَكَأَنَّمَا تُسِفُّهُمُ الْمَلَّ، وَلَا يَزَالُ مَعَكَ مِنَ اللَّهِ ظَهِيرٌ عَلَيْهِمْ مَا دُمْتَ عَلَى ذَلِكَ আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার কিছু আত্মীয় আছে, আমি তাদের সাথে আত্মীয়তা বজায় রাখি, আর তারা ছিন্ন করে। আমি তাদের সাথ সদ্ব্যবহার করি আর তারা আমার সাথে দুর্ব্যবহার করে। তারা কষ্ট দিলে আমি সহ্য করি আর তারা আমার সাথে মূর্খের আচরণ করে। তিনি (ছাঃ) বললেন, তুমি যেরূপ বললে, যদি তাই হয়, তাহ’লে তুমি যেন তাদের মুখে গরম ছাই নিক্ষেপ করছ (অর্থাৎ এ কাজে তারা গুনাহগার হয়) এবং তোমার সাথে আল্লাহর পক্ষ হ’তে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্যকারী থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি এর উপর অনড় থাকবে’।[11] عَنِ ابْنِ عَمْرٍو رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْسَ الْوَاصِلُ بِالْمُكَافِئِ، وَلَكِنَّ الْوَاصِلَ الَّذِي إِذَا قُطِعَتْ رَحِمُهُ وَصَلَهَا. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, সেই ব্যক্তি সম্পর্ক বজায়কারী নয়, যে সম্পর্ক বজায় রাখার বিনিময়ে বজায় রাখে। বরং প্রকৃত সম্পর্ক বজায়কারী হ’ল সেই ব্যক্তি কেউ তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সে তার কায়েম করে’।[12] عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّحِمُ مُعَلَّقَةٌ بِالْعَرْشِ تَقُولُ مَنْ وَصَلَنِي وَصَلَهُ اللَّهُ، وَمَنْ قَطَعَنِي قَطَعَهُ اللَّهُ হযরত আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, রক্ত সম্পর্ক আরশে ঝুলন্ত আছে এবং সে বলছে যে আমাকে অক্ষুন্ন রাখবে আল্লাহ তাঁর সম্পর্ক তার সাথে অক্ষুন্ন রাখবেন। আর যে আমাকে বিচ্ছিন্ন করবে আল্লাহ তার সাথে সম্পর্ক তার সাথে বিচ্ছিন্ন করবেন’।[13]
عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّدَقَةُ عَلَى الْمِسْكِينِ صَدَقَةٌ، وَهِيَ عَلَى ذِي الرَّحِمِ ثِنْتَانِ صَدَقَةٌ وَصِلَةٌ. সালমান ইবনু আমের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, মিসকীনকে ছাদাক্বাহ করলে ছাদাক্বাহ করার ছওয়াব হয় আর আত্মীয়কে ছাদাক্বাহ করলে দু’টি ছাওয়াব হয়। ছাদাক্বাহ করার ও আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখার’।[14]
১৬. অল্পে তুষ্ট হওয়া :
অল্পে তুষ্ট হওয়া এমন একটি মহৎগুণ যা একজন আদর্শ ও শ্রেষ্ঠ মানুষের মধ্যে অবশ্যই থাকতে হবে। আর এগুণ ছিল বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মধ্যে। তিনি এতটাই অল্পে তুষ্ট ছিলেন যে, তাঁর ঘরে দু’বেলার খাবারও থাকত না। অধিকাংশ সময় তিনি অনাহারে থাকতেন। অথচ তিনি বিশ্ব নবী। তাহ’লে তাঁর অনুসারী হিসাবে আমাদের অবশ্যই এই গুণে গুণান্বিত হ’তে হবে। যদি আমরা তাঁর আদর্শে আদর্শবান হ’তে চাই। অবশ্যই আমাদেরকে যাবতীয় বিলাসিতা পরিহার করতে হবে। মহান আল্লাহ বলন, فَخَرَجَ عَلَى قَوْمِهِ فِي زِينَتِهِ قَالَ الَّذِينَ يُرِيدُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا يَالَيْتَ لَنَا مِثْلَ مَا أُوتِيَ قَارُونُ إِنَّهُ لَذُو حَظٍّ عَظِيمٍ- وَقَالَ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ وَيْلَكُمْ ثَوَابُ اللَّهِ خَيْرٌ لِمَنْ آمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا وَلَا يُلَقَّاهَا إِلَّا الصَّابِرُونَ ‘অতঃপর ক্বারূন জাঁকজমক সহকারে তার সম্প্রদায়ের সামনে বের হ’ল। তখন যারা পার্থিব জীবন কামনা করত তারা বলল, হায় ক্বারূন যা পেয়েছে আমাদেরকে যদি অনুরূপ দেওয়া হ’ত? সত্যিই মহা ভাগ্যবান। পক্ষান্তরে যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছিল তারা বলল, ধিক তোমাদের! যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য আল্লাহর দেওয়া পুরস্কারই সর্বোত্তম বস্ত্ত। এটা কেবল তারাই পায়, যারা (আল্লাহর অনুগ্রহের উপর) দৃঢ়চিত্ত’ (ক্বছাছ ২৮/৭৯-৮০)।
একদা কারুন অতি মূল্যবান পোষাক পরে অত্যন্ত জাঁমজমক সহকারে উত্তম সওয়ারীতে আরোহন করে স্বীয় গোলামদের মূল্যবান পোষাক পরিয়ে সামনে ও পিছনে নিয়ে দাম্ভিকতার সাথে বের হ’ল। তার এই জাঁকজমক ও শান-শওকত দেখে দুনিয়াদারদের মুখ পানিতে ভরে গেল এবং তারা বলতে লাগল আহা! করুনকে যেরূপ (সম্পদ) দেয়া হয়েছে। আমাদেরকেউ যদি তা দেয়া হত! আসলেই সে ভাগ্যবান। তৎকালীন আলেমরা তাদের এই কথাগুলি শুনে তাদেরকে এ ধারনা হ’তে বিরত রাখার জন্য বুঝাতে লাগলেন। দেখ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৎ ও মুমিন বান্দাদের জন্য নিজের কাছে যা কিছু তৈরী কর রেখেছেন তা এর চেয়ে বহুগুণে শ্রেষ্ঠ ও মূল্যবান। আর ধৈর্যশীল ছাড়া কেউ এটা লাভ করতে পারে না’।[15] আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন, مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْعَاجِلَةَ عَجَّلْنَا لَهُ فِيهَا مَا نَشَاءُ لِمَنْ نُرِيدُ ثُمَّ جَعَلْنَا لَهُ جَهَنَّمَ يَصْلَاهَا مَذْمُومًا مَدْحُورًا‘যে ব্যক্তি দুনিয়া কামনা করে, আমরা সেখানে যাকে যা ইচ্ছা করি দিয়ে দেই। পরে তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত করি। সেখানে সে প্রবেশ করবে নিন্দিত ও লাঞ্ছিত অবস্থায়’ (বনী ইসরাঈল ১৭/১৮)। অত্র আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, যে ব্যক্তি দুনিয়া কামনা করে তার সব চাহিদাই যে পূর্ণ হবে তা নয়। বরং তিনি যার যে চাহিদা পূরণ করতে চান তা পূর্ণ করেন। হ্যাঁ, তবে এরূপ লোক পরকালে সম্পূর্ণ শূন্য হস্ত হয়ে যাবে। সেখানে সে জাহান্নামের গর্তে নিক্ষিপ্ত হবে। আর সেখানে সে অত্যন্ত লাঞ্চিত ও অপমানিত অবস্থায় থাকবে। কেননা সে ধ্বংসশীলকে চিরস্থায়ীর উপর এবং দুনিয়াকে আখিরাতের উপর প্রাধান্য দিয়েছিল। তাই সে সেখানে আল্লাহর করুনা হ’তে দূরে থাকবে’।[16]
অল্পে তুষ্ট হওয়া সম্পর্কে বহু হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اللَّهُمَّ اجْعَلْ رِزْقَ آلِ مُحَمَّدٍ قُوتًا. আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, দো‘আ করতেন, হে আল্লাহ! মুহাম্মাদের পরিবার-পরিজনের জন্য প্রয়োজনীয় জীবিকা প্রদান কর’।[17]عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ مَا شَبِعَ آلُ مُحَمَّدٍ مِنْ خُبْزِ الشَّعِيرِ يَوْمَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ حَتَّى قُبِضَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর পরিবার তাঁর ইন্তেকাল পর্যন্ত ক্রমাগত দু’দিন যবের রূটি পরিতৃপ্ত হয়ে খেতে পাননি’।[18] অন্য এক বর্ণনায় আছে, مَا شَبِعَ آلُ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم مُنْذُ قَدِمَ الْمَدِينَةَ مِنْ طَعَامِ الْبُرِّ ثَلاَثَ لَيَالٍ تِبَاعًا حَتَّى قُبِضَ. ‘মুহাম্মাদের পরিবার মদীনায় আগমনের পর থেকে তার ইন্তেকাল পর্যন্ত ক্রমাগত তিনদিন পর্যন্ত গমের রূটি পরিতৃপ্ত হয়ে খেতে পান নি’।[19] عَنْ سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ،عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ مَرَّ بِقَوْمٍ بَيْنَ أَيْدِيهِمْ شَاةٌ مَصْلِيَّةٌ، فَدَعَوْهُ، فَأَبَى أَنْ يَأْكُلَ، وَقَالَ خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الدُّنْيَا وَلَمْ يَشْبَعْ مِنْ خُبْزِ الشَّعِيرِ. আবু সাঈদ মাকবুরী হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা আবু হুরায়রা (রাঃ) একদল লোকের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন যাদের সামনে ভুনাবকরী ছিল। তারা তাঁকে খেতে ডাকল। তিনি খেতে রাযী হ’লেন না এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন অথচ তিনি কোন দিন যবের রুটিও পেট পূর্ণ করে খাননি’।[20] عَنْ سِمَاكِ بْنِ حَرْبٍ قَالَ سَمِعْتُ النُّعْمَانَ يَخْطُبُ قَالَ ذَكَرَ عُمَرُ مَا أَصَابَ النَّاسُ مِنَ الدُّنْيَا فَقَالَ لَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَظَلُّ الْيَوْمَ يَلْتَوِى مَا يَجِدُ دَقَلاً يَمْلأُ بِهِ بَطْنَهُ. নু‘মান ইবনু বশীর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, যে সমস্ত লোকেরা দুনিয়ার ধন-সম্পদ অধিক জমা করে ফেলেছে তাদের কথা উল্লেখ করে উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দেখেছি তিনি সারাদিন ক্ষুধার্ত থাকার ফলে পেটের উপর ঝুকে থাকতেন। যেন ক্ষুধার জ্বালা কম অনুভব হয়)। তিনি পেট ভরার জন্য নিকৃষ্টমানের খুরমাও পেতেন না’।[21]عَنْ أَبِى بُرْدَةَ قَالَ أَخْرَجَتْ إِلَيْنَا عَائِشَةُ رضى الله عنها كِسَاءً مُلَبَّدًا وَقَالَتْ فِى هَذَا نُزِعَ رُوحُ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم وَزَادَ سُلَيْمَانُ عَنْ حُمَيْدٍ عَنْ أَبِى بُرْدَةَ قَالَ أَخْرَجَتْ إِلَيْنَا عَائِشَةُ إِزَارًا غَلِيظًا مِمَّا يُصْنَعُ بِالْيَمَنِ، وَكِسَاءً مِنْ هَذِهِ الَّتِى يَدْعُونَهَا الْمُلَبَّدَةَ. আবু মুসা আশ‘আরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আয়েশা (রাঃ) আমাদের সামনে একখানি চাদর ও একখানি মোটা লুঙ্গী বের করে আনলেন এবং বললেন, এ দু‘টি পরে থাকা অবস্থায়ই রাসূল (ছাঃ) ইন্তেকাল করেছেন’।[22] حَدَّثَنَا قَيْسٌ قَالَ سَمِعْتُ سَعْدًا يَقُولُ إِنِّى لأَوَّلُ الْعَرَبِ رَمَى بِسَهْمٍ فِى سَبِيلِ اللَّهِ، وَرَأَيْتُنَا نَغْزُو، وَمَا لَنَا طَعَامٌ إِلاَّ وَرَقُ الْحُبْلَةِ وَهَذَا السَّمُرُ، وَإِنَّ أَحَدَنَا لَيَضَعُ كَمَا تَضَعُ الشَّاةُ، مَا لَهُ خِلْطٌ সাদ ইবনু আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি প্রথম ব্যক্তি যে আল্লাহর পথে তীর নিক্ষেপ করেছি। আমরা যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে থেকে যুদ্ধ করি; তখন আমাদের অবস্থা এরূপ ছিল যে, হুবলা গাছের পাতা ও এর ছাল ছাড়া আমাদের অন্য কিছু খাবার ছিল না। এজন্য আমাদের প্রত্যেকেই ছাগলের লাদির মত মল ত্যাগ করতেন। যার একটি আরেকটির সাথে মিশত না’।[23] عَنْ أَيُّوبَ عَنْ مُحَمَّدٍ قَالَ كُنَّا عِنْدَ أَبِى هُرَيْرَةَ وَعَلَيْهِ ثَوْبَانِ مُمَشَّقَانِ مِنْ كَتَّانٍ فَتَمَخَّطَ فَقَالَ بَخْ بَخْ أَبُو هُرَيْرَةَ يَتَمَخَّطُ فِى الْكَتَّانِ، لَقَدْ رَأَيْتُنِى وَإِنِّى لأَخِرُّ فِيمَا بَيْنَ مِنْبَرِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى حُجْرَةِ عَائِشَةَ مَغْشِيًّا عَلَىَّ، فَيَجِىءُ الْجَائِى فَيَضَعُ رِجْلَهُ عَلَى عُنُقِى، وَيُرَى أَنِّى مَجْنُونٌ، وَمَا بِى مِنْ جُنُونٍ، مَا بِى إِلاَّ الْجُوعُ মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন হ’তে বর্ণিত আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমার এ অবস্থা ছিল যে, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মিম্বার এবং আয়েশা (রাঃ)-এর কক্ষের মধ্যস্থলে (ক্ষুধার জ্বালায়) বেহুশ হয়ে পড়ে থাকতাম। অতঃপর আগন্তুক আসত এবং আমাকে পাগল মনে করে সে তার পা আমার গর্দানের উপর রাখত; অথচ আমার মধ্যে কোন পাগলামী ছিল না। কেবলমাত্র ক্ষুধা ছিল যার তীব্রতায় আমি বেহুশ হয়ে পড়তাম’।[24]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَبِيتُ اللَّيَالِىَ الْمُتَتَابِعَةَ طَاوِيًا وَأَهْلُهُ لاَ يَجِدُونَ الْعَشَاءَ وَكَانَ عَامَّةَ خُبْزِهِمْ خُبْزُ الشَّعِيرِ.
ইবনে আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একাধারে কয়েক রাত অনাহারে কাটাতেন এবং পরিবার-পরিজনরা রাতের খাবার পেতেন না। আর তাদের অধিকাংশ রুটি হত যবের’।[25] عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ مِحْصَنٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَصْبَحَ مِنْكُمْ آمِنًا فِي سِرْبِهِ، مُعَافًى فِي جَسَدِهِ، عِنْدَهُ قُوتُ يَوْمِهِ، فَكَأَنَّمَا حِيزَتْ لَهُ الدُّنْيَا بِحَذَافِيرِهَا উবায়দুল্লাহ ইবনু মিহছান আনছারী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি পরিবার-পরিজনসহ নিরাপদে সকালে উপনীত হয়, সুস্থ শরীরে দিনাতিপাত করে এবং তার নিকট সারা দিনের খোরাকী থাকে তবে তার জন্য যেন গোটা দুনিয়াটাই একত্র করা হলো’।[26]
অতএব আমাদেরকে অবশ্যই অল্পে তুষ্ট হ’তে হবে।
[লেখক : সভাপতি, দিনাজপুর সাংগঠনিক যেলা ]
[1]. মুসলিম হা/২৬৯৯; আবু দাঊদ হা/৪৯৪৮; ইবনু মাজহ হা/২১৫; তিরমিযী হা/১৪২৫; মিশকাত হা/২০৪।
[2]. তাফসীর ইবনু কাছীর ৯/৫০২পৃ.।
[3]. বুখারী হা/২৭০৭; মুসলিম হা/১০০৯; আহমাদ হা/২৭৪০০, ৮১৬৪; মিশকাত হা/১৮৯৬।
[4]. বুখারী হা/২৬৯২; মুসলিম হা/২৬০৫; মিশকাত হা/৪৮২৫।
[5]. বুখারী হা/২৭০৫; মুসলিম হা/১৫৫৭।
[6]. তাফসীর মা‘আরেফুল কুরআন ২২৮পৃ.।
[7]. তাফসীল ইবনু কাছীর ১২/২৯৫ পৃ.।
[8]. বুখারী হা/৬০১৮; মুসলিম হা/৪৭ তিরমিযী হা/২৫০০; আহমাদ হা/৮৯৪৯;মিশকাত হা/৪২৪৩।
[9]. বুখারী হা/৪৮৩০; মুসলিম হা/২৫৫৪; আহমাদ হা/৭৮৭২, ৮১৬৭; মিশকাত হা/৪৯১৭।
[10]. বুখারী হা/৫৯৮৬; মুসলিম হা/২৫৫৭; আদাবুল মুফরাদ হা/১৬৯৩; আহমাদ হা/১৩৬১০।
[11]. মুসলিম হা/২৫৫৮; আহমাদ হা/৭৯৭৯,৯৩৩২; মিশকাত হা/৪৯২৪।
[12]. বুখারী হা/৫৯৯১; তিরমিযী হা/১৯০৮; আহমাদ হা/৬৭৮৫; মিশকাত হা/৪৯২৩।
[13]. বুখারী হা/৫৯৮৯; মুসলিম হা/২৫৫৫; আহমাদ হা/২৪৩৮১; মিশকাত হা/৪৯২১।
[14]. নাসাঈ হা/২৫৮২; তিরমিযী হা/৬৫৮; ইবনু মাজাহ হা/১৮৪৪; আহমাদ হা/১৬২৭৭; মিশকাত হা/১৯৩৯।
[15]. ইবনু কাছীর ১৫/৫৪০ পৃ.।
[16]. ইবনু কাছীর ১৩/৩৪০।
[17]. বুখারী হা/৬৪৬০; মুসলিম হা/১০৫৫; তিরমিযী হা/২৩৬১; ইবনু মাজাহ হা/৪১৩৯; আহমাদ হা/৭১৭৩; মিশকাত হা/৫১৬৪।
[18]. বুখারী হা/৫৪১৬; মুসলিম হা/২৯৭০; তিরমিযী হা/২৩৫৭; নাসাঈ হা/৪৪৩২; আহমাদ হা/২৪৭০৯; মিশকাত হা/৫২৩৭।
[19]. বুখারী হা/৫৩৭৪; মুসলিম হা/২৯৭০; নাসাঈ হা/২৩৪৬।
[20]. বুখারী হা/৫৪১৪; মিশকাত হা/৫২৩৮।
[21]. মুসলিম হা/২৯৭৮; তিরমিযী হা/২৩৭২; ইবনু মাজাহ হা/৪১৪৬; আহমাদ হা/১৫৯।
[22]. বুখারী হা/৩১০৮; মুসলিম হা/২০৮০; ইবনু মাজাহ হা/৩৫৫১।
[23]. বুখারী হা/৬৪৫৩; মুসলিম হা/২৯৬৬; ইবনু মাজাহ হা/১৩৬; আহমাদ হা/১৫৬৬; মিশকাত হা/৬১১৯।
[24]. বুখারী হা/৭৩২৪; তিরমিযী হা/২৩৬৭।
[25]. তিরমিযী হা/২৩৬০; ইবনু মাজাহ হা/৩৩৪৭; আহমাদ হা/২৩০৩।
[26]. তিরমিযী হা/২৩৪৬; ইবনু মাজাহ হা/৪১৪১; মিশকাত হা/৫১৯১; হাদীছটি হাসান।