দ্বীনের পথে আমূল পরিবর্তিত এক পথিক আলী বানাত
ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
মুযাফফর বিন মুহসিন 1216 বার পঠিত
আধুনিক
বিজ্ঞানের যুগে দক্ষ কর্মীর বিকল্প নেই। আর দক্ষতা, অভিজ্ঞতা অর্জনের
প্রধান শর্ত হল জ্ঞান। কারণ বিশুদ্ধ জ্ঞান সমাজ পরিবর্তনের মূল হাতিয়ার। এ
জন্য আল্লাহ তা‘আলার প্রথম বাক্য ছিল ‘পড়’। রাসূল (ছাঃ)-কে লক্ষ্য করে
আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং জানুন যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই’ (মুহাম্মাদ ১৯)।
নির্ভেজাল তাওহীদের দাওয়াতের জন্য প্রথম শর্ত হল নির্ভেজাল ইলম। তাই ইমাম
বুখারী (রহঃ) অধ্যায় রচনা করেছেন ‘কথা বলা এবং কর্ম করার পূর্বেই জানা’ (বুখারী ‘ইলম’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১০)।
বর্তমান সমাজে দু’ধরনের দাওয়াত প্রচলিত আছে। (১) ইসলামী দাওয়াত (২) জাহেলী দাওয়াত। ইসলামী দাওয়াত দু’ধরনের। (ক) শিরক ও বিদ‘আত মিশ্রিত ত্বাগূতী দাওয়াত। (খ) শিরক ও বিদ‘আতমুক্ত নির্ভেজাল তাওহীদী দাওয়াত। তবে এই ত্বাগূতী অপসংস্কৃতি ও নব্য জাহেলিয়াতের কুপ্রভাবেই সমাজ আজ বিপর্যস্ত। একশ্রেণীর আলেমের মাধ্যমে শিরক-বিদ‘আত, যঈফ, জাল ও মিথ্যা কেচ্ছা-কাহিনীর দাওয়াত চালু আছে। ফলে নির্ভেজাল দাওয়াত আজ ভূ-লুণ্ঠিত। অন্যদিকে সমাজে রাজনীতি, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রনীতির নামে জাহেলী দাওয়াত চালু আছে। মূলতঃ ইসলামের শিকড় উচ্ছেদ করে জাহেলী সভ্যতা চাপিয়ে দেয়ার জন্য উক্ত দাওয়াতের আবির্ভাব ঘটেছে।
উক্ত অধঃপতিত সমাজকে সংস্কার করতে হলে প্রয়োজন ভেজালমুক্ত অহি ভিত্তিক দাওয়াত। আর এ জন্য প্রধান শর্ত হল, একদল নিবেদিতপ্রাণ দূরদর্শী তাক্বওয়াশীল কর্মী, যারা হবেন শারঈ জ্ঞানে পরিপক্ক; আন্তর্জাতিক জ্ঞানে হবেন অভিজ্ঞ। কারণ সমাজে প্রতিষ্ঠিত শিরক ও বিদ‘আতী আমল কী কী, কত প্রকার, এর পরিণাম কী, সমাজে তার কুপ্রভাব কেমন, কোন্ পদ্ধতিতে এগুলোর প্রতিকার সম্ভব সে সম্পর্কে পূর্ণ অভিজ্ঞতা থাকা আবশ্যক। অনুরূপভাবে জাহেলী মতবাদের অবস্থা, তার ভয়াবহ কুপ্রভাব, সেগুলোর দুর্বলতা কী সে বিষয়ে পূর্ণ ধারণা রাখা অপরিহার্য। অন্যথা আধুনিক জাহেলিয়াতকে মুকাবেলা করা সম্ভব নয়। তাই আল্লাহ বলেন, ‘আপনি আপনার রবের পথের দিকে মানুষকে দাওয়াত দিন হিকমতপূর্ণ কথা, উত্তম উপদেশের মাধ্যমে। আর তাদের সাথে বিতর্ক করুন সর্বাধিক উত্তম পদ্ধতিতে’ (নাহল ১২৫)। উক্ত আয়াতে অভিজ্ঞ দাঈর গুণাবলী ফুটে উঠেছে। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘বলুন! এটাই আমার পথ। আমি ও আমার অনুসারীগণ ডাকি আল্লাহর দিকে, জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। আল্লাহ পবিত্র এবং আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (ইউসুফ ১০৮)। এছাড়াও বিভিন্ন আয়াত ও হাদীছে দাঈদের দূরদর্শিতাকে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
অতএব নির্ভেজাল দাওয়াতের আহবায়ককে সর্বাগ্রে নিজের গুণাবলীর কথা নিরিবিলি ভাবতে হবে। এই আধুনিক চ্যালেঞ্জকে মুকাবেলার জন্য প্রয়োজন চরম অধ্যবসায় ও নিরন্তর সাধনা। ত্যাগের মহিমায় হতে হবে চিরন্তন পরাকাষ্ঠা। রাসূল (ছাঃ) জাহেলী সমাজ সম্পর্কে ভাবার জন্যই হেরা গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনি মানব জাতির মুক্তির জন্য অহি নাযিলের পূর্বেই ‘হিলফুল ফুযূল’ গঠন করেছিলেন। বিশ্বমানবতাকে মুক্ত করার জন্য যাবতীয় অত্যাচার, নিপীড়ন, দুঃখ-কষ্ট, ক্ষুধা-কান্না সবই বরণ করে নিয়েছিলেন। তাই যতদিন সংগঠনের কর্মীদের মাঝে সমাজ সংস্কারের চরম স্পৃহা তৈরি না হবে, ততদিন দাওয়াতী কাজে সফলতা আসবে না। তাই অহি নাযিলের শুরুতেই রাসূল (ছাঃ)-কে লক্ষ্য করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে চাদরাবৃত! উঠুন, অতঃপর ভীতি প্রদর্শন করুন এবং আপনার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন। আপনার পোশাক পবিত্র রাখুন; অপবিত্রতা হতে দূরে থাকুন’ (মুদ্দাছছির ১-৫)। উক্ত আয়াতগুলো প্রমাণ করে আল্লাহ তা‘আলা রাসূল (ছাঃ)-কে কিভাবে তৈরি করেছেন।
দূরদর্শী ও তাক্বওয়াশীল কর্মীদের প্রথম শ্রেণীর মানুষ হলেন ছাহাবায়ে কেরাম। তারা ইলম, তাক্বওয়া, ধৈর্য, সাহস, অভিজ্ঞতা, দূরদর্শিতা, ত্যাগ ও তিতিক্ষার প্রতিচ্ছবিতে ছিলেন তুলনাহীন। আলী বিন আবু ত্বালেব, মুছ‘আব বিন উমায়ের, খুবায়েব, খাববাব বিন আরাত, আব্দুল্লাহ বিন ওমর, আব্দুল্লাহ বিন আববাস (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবী ইসলামের বিভিন্ন দিক ও বিভাগে যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখেছেন তা বিশ্বব্যাপী প্রভাব বিস্তার করেছে। অতঃপর তাবেঈ ও তাবে তাবেঈদের অবদান অন্য রকম। তারপর মুহাদ্দিছ ওলামায়ে কেরামের বিরামহীন শ্রম পৃথিবীকে চমকে দিয়েছে। এই ধারাবাহিকতা ক্বিয়ামত পর্যন্ত সবৈশিষ্ট্যে চলমান থাকবে। প্রথমতঃ তারা কাফের মুশরিকদের বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে জিহাদের ময়দানে সংগ্রাম করেছেন জান্নাতের তীব্র আকাঙ্ক্ষায়। দ্বিতীয়তঃ খারেজী, শী‘আ, মুরজিয়া ও ক্বাদারিয়াদের সৃষ্ট ভ্রান্ত আক্বীদার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে গিয়ে তিন খলীফাসহ অনেক ছাহাবীকে জীবন দিতে হয়েছে। তবুও ঐ পথভ্রষ্টদের সাথে আপোস করেননি। তৃতীয়তঃ ছহীহ হাদীছ সমূহ পৃথক করতে গিয়ে মুহাদ্দিছগণ সংগ্রাম করেছেন যঈফ, জাল ও বানোয়াট হাদীছের বিরুদ্ধে। তাতে তারা সরকারের পোষা গোলাম পেটপূজারি বিদ‘আতী আলেমদের তোপের মুখে পড়েন। কিন্তু তারা তা পরওয়া করেননি। চতুর্থতঃ দেশদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তারা মুসলিম ভূখন্ড রক্ষায় চিরন্তন জিহাদ পরিচালনা করেছেন। একশ্রেণীর তাক্বওয়াশীল দূরদর্শী দাঈদের মাধ্যমেই যুগ যুগ ধরে এই ঐতিহাসিক আন্দোলন পরিচালিত হয়ে আসছে।
মূলতঃ নির্ভেজাল তাওহীদী আন্দোলন যেমন ভীত কাপুরুষদের জন্য নয়, তেমনি মেধাহীন, মাথামোটা, লক্ষ্যভ্রষ্ট, জরাগ্রস্ত, প্রাণহীন বাচালদের জন্যও নয়; বরং আহলেহাদীছ আন্দোলন হল নিবেদিতপ্রাণ আপোসহীন সংগ্রামী একশ্রেণীর সাহসী কর্মীদের জন্য এবং তাক্বওয়াশীল দূরদর্শী অভিজ্ঞতালব্ধ একশ্রেণীর প্রশিক্ষিত তাজাপ্রাণ তরুণদের জন্য। যারা হবেন পূর্বসুরীদের যোগ্য উত্তরসুরী।
আগামী ১১ এপ্রিল রোজ শুক্রবার রাজশাহী নওদাপাড়ায় ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর কর্মী সম্মেলন ২০১৪ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইনশাআল্লাহ। এ সম্মেলন উপলক্ষে কর্মীদের কাছে প্রত্যাশা এমনটিই। উক্ত গুণ সম্পন্ন কর্মী সমাজকে উপহার দিতে পারলে স্থায়ী সাফল্য সুনিশ্চিত। আমরা তরুণ ছাত্র সমাজকে এই তাওহীদী কাফেলায় স্বাগত জানাচ্ছি। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন! কর্মী সম্মেলন ২০১৪-কে সফলভাবে সম্পন্ন করার তাওফীক দান করুন-আমীন!!