হায়াতুন্নবী : একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ
আহমাদুল্লাহ
(১০) যিনিই আল্লাহ তিনিই মুহাম্মাদ (নাঊযুবিল্লাহ)।
একশ্রেণীর ভন্ড ছূফীরা উক্ত কুফুরী আক্বীদা পোষণ করে থাকে। তারা কবিতার সুরে সুরে বলে, ‘আকার কি নিরাকার সেই রববানা; ‘আহমাদ’ ‘আহাদ’ হলে তবে যায় জানা। মীমের ঐ পর্দাটিরে উঠিয়ে দেখরে মন, দেখবি সেথায় বিরাজ করে ‘আহাদ’ নিরঞ্জন’ (নাঊযুবিল্লাহ)। এছাড়া তারা আরো বলে থাকে, ‘ওহ্ জো মুস্তাবী আরশ থা খোদা হো কর, উতার পাড়া হ্যায় মদীনা মেঁ মুছত্বফা হো কর’। অর্থাৎ ‘আরশের অধিপতি আল্লাহ ছিলেন যিনি, মুছত্বফা রূপে মদীনায় অবতীর্ণ হন তিনি’ (নাঊযুবিল্লাহ)।[1] তাফসীরে হাক্কীর মধ্যে বলা হয়েছে,
جَبَلٌ بِمَكَّةَ كَانَ عَلَيْهِ عَرْشُ الرَّحْمَنِ حِيْنَ لاَ لَيْلٌ وَلاَ نَهَارٌ إِشَارَةً بِالْجَبَلِ إِلَى جَسَدِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَبِعَرْشِ الرَّحْمَنِ إِلَى قَلْبِهِ كَمَا وَرَدَ فِى الْحَدِيْثِ قَلْبُ الْمُؤْمِنِ عَرْشُ اللهِ.
‘মক্কায় এমন একটি পাহাড় রয়েছে, যার উপর আল্লাহর আরশ রয়েছে। যেখানে রাত ও দিন কিছুই হয় না। উক্ত পাহাড় দ্বারা মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর শরীর বুঝানো হয়েছে। আর আরশ দ্বারা রাসূল (ছাঃ)-এর অন্তরকে বুঝানো হয়েছে। যেমন হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, মুমিনের অন্তর আল্লাহর আরশ’।[2] সুতরাং যিনি আল্লাহ তিনিই মুহাম্মাদ। উক্ত আক্বীদা থেকেই পাশাপাশি ‘আল্লাহু’ ‘মুহাম্মাদ’ লেখার প্রচলন হয়েছে।
পর্যালোচনা :
বিভিন্ন যুক্তি ও কৌশলে আল্লাহ এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে একাকার করা হয়েছে। তারা খুব স্বাভাবিকভাবেই সৃষ্টি আর স্রষ্টাকে এক করেছে। এ ধরনের কুফুরী কথা বলতে তাদের বুক একটুকুও কাঁপে না। উল্লেখ্য যে, পরে হাদীছের নামে দলীল হিসাবে যে কথাটি বর্ণনা করা হয়েছে তাও মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। লেখক উক্ত মিথ্যা দাবীর পরে ‘ফানাফিল্লাহর’ পক্ষে অনেক আলোচনা করেছেন। এভাবেই শিরকী আক্বীদা মানুষের মাঝে প্রচার করা হচ্ছে। তারা কালেমায়ে শাহাদাত মুখে উচ্চারণ করার পর কিভাবে আবদ এবং মা‘বূদকে, বান্দা এবং আল্লাহকে এক হিসাবে মনে করছে তা বুঝা বড় ভার!
যতগুলো নোংরা বিশ্বাস সমাজে প্রচলিত আছে তার মধ্যে এটি সবচেয়ে জঘন্য। ভ্রান্ত আক্বীদা জানা সত্ত্বেও যদি কেউ উক্ত বিশ্বাস করে তবে সে শিরকে আকবারে নিমজ্জিত হবে, যা তাকে ইসলাম থেকে বের করে দিবে এবং এ অবস্থায় মারা গেলে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে।
(১১) রাসূল (ছাঃ) যেকোন স্থানে হাযির হতে পারেন :
বিদ‘আতী মীলাদের অনুষ্ঠানকে জমজমাট রাখার জন্য উক্ত মিথ্যা আক্বীদা সৃষ্টি করা হয়েছে। অনেক স্থানে মঞ্চে একটি চেয়ারকে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়। যাতে এই খালি চেয়ারে রাসূল (ছাঃ) এসে বসতে পারেন। তারা সূরা তওবার শেষ আয়াত দুইটি পাঠ করে অনুষ্ঠান শুরু করে (তওবা ১২৮-১২৯)। আর তখনই রাসূল (ছাঃ)-কে স্বাগত জানানোর জন্য সকলে মিলে দাঁড়িয়ে যায়। মূলতঃ বিদ‘আতী কিয়াম প্রথার আবিষ্কার এভাবেই হয়েছে। তাদের
ধারণা শুধু নবীগণ নয়, মৃত অলীরাও যেখানে ইচ্ছা সেখানে হাযির হতে পারেন। যেমন তাবলীগ জামায়াতের লোকদের আক্বীদা :
(ক) দেওবন্দ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা নানোতুবী মৃত্যু বরণের বহু দিন পর এক সমস্যা সমাধানের জন্য মাদরাসায় আগমন করেন। যেমন- এক সময় মাওলানা আহমাদ হাসান আমরুহী এবং ফখরুল হাসান গাঙ্গোহীর মাঝে মনোমালিন্য হয়। কিন্তু মাওলানা মাহমূদুল হাসান (১২৩৮-১৩৩৮ হিঃ) নিরপেক্ষ হওয়া সত্ত্বেও এক পক্ষের দিকে ঝুঁকে যান। তখন মাওলানা রফীউদ্দীন মাওলানা মাহমূদুল হাসানকে ডেকে পাঠান। দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই তিনি বলছেন, আগে তুমি আমার কাপড় দেখ। শীতকাল হওয়া সত্ত্বেও তার সমস্ত কাপড় ভিজে গেছে। রফীউদ্দীন বললেন, মাওলানা নানোতুবী জাসাদে আনছারীতে এখনই আমার নিকট এসেছিলেন। তাই ঘামে আমার কাপড় ভিজে গেছে। তিনি আমাকে বলে গলেন, তুমি মাহমূদুল হাসানকে বলে দাও, সে যেন ঝগড়ায় লিপ্ত না হয়। আমি শুধু এটা বলার জন্যই এসেছি।[3]
(খ) তাবলীগ জামায়াতের আরেক প্রবক্তা রশীদ আহমাদ গাঙ্গোহী (মৃঃ ১৯০৮ খৃঃ) তার ‘আল-বারাহী আল-ক্বাতিয়া’ গ্রন্থে বলেন, আমার মনে হয়, আল্লাহর নিকট দেওবন্দ মাদরাসা প্রশংসিত আসন পেয়েছে। কারণ অসংখ্য আলেম এখান থেকে পাশ করেছেন এবং জনসাধারণের অনেক কল্যাণ সাধন করেছে। পরবর্তীকালে এক মহান ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর দর্শন লাভ করে আশীর্বাদপুষ্ট হয়েছিলেন। সে সময়ে তিনি দেখেছেন যে, রাসূল (ছাঃ) উর্দূ ভাষায় কথা বলছেন। তখন ঐ ব্যক্তি জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনি একজন আরবী লোক, কিভাবে এই ভাষা জানলেন? রাসূল (ছাঃ) উত্তরে বললেন, ‘যখন থেকে দেওবন্দের আলেমদের সাথে যোগাযোগ হয়েছে, তখন থেকেই আমি এই ভাষা জানি’। গাঙ্গোহী আরো বলেন, এ থেকে আমরা এই মাদরাসার শ্রেষ্ঠত্ব বুঝতে পারি।[4]
পর্যালোচনা :
এটা কুফুরী আক্বীদা। রাসূল (ছাঃ) মারা গেছেন। তিনি আর কখনো দুনিয়াতে আসতে পারবেন না। কেউ ইচ্ছা করলেও আসতে পারবে না। আল্লাহ বলেন,
حَتَّى إِذَا جَاءَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ رَبِّ ارْجِعُوْنِ- لَعَلِّي أَعْمَلُ صَالِحًا فِيمَا تَرَكْتُ كَلَّا إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَائِلُهَا وَمِنْ وَرَائِهِمْ بَرْزَخٌ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُوْنَ.
‘যখন তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন সে বলে, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আবার ফেরত পাঠান, যাতে আমি সৎ আমল করতে পারি, যা আমি পূর্বে করিনি; কখনোই না। এটা তার একটি কথা মাত্র; তাদের সামনে বারযাখ থাকবে ক্বিয়ামত দিবস পর্যন্ত’ (সূরা মুমিনূন ৯৯-১০০)। অন্য আল্লাহ বলেন,
ثُمَّ إِنَّكُمْ بَعْدَ ذَلِكَ لَمَيِّتُوْنَ. ثُمَّ إِنَّكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ تُبْعَثُوْن
‘অতঃপর তোমরা অবশ্যই মৃত্যু বরণ করবে। তারপর তোমরা ক্বিয়ামত দিবসে অবশ্যই পুনরুত্থিত হবে’ (মুমিনুন ১৫-১৬)।
দ্বিতীয়তঃ পৃথিবীতে একই সময়ে অসংখ্য স্থানে এই বিদ‘আতী মীলাদ হয়। কোন স্থানে কখন মীলাদ হচ্ছে তা রাসূল (ছাঃ)-এর পক্ষে জানার কথা নয়। কারণ এটা গায়েবের বিষয়। আর তিনি গায়েব জানেন না। রাসূল (ছাঃ) গায়েব জানেন এই দাবী করে তারা তাঁর উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। তৃতীয়তঃ হঠাৎ উঠে দাঁড়ানো যে সীমাহীন মূর্খতা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এটা হিন্দুদের পূজাকে ভোগ দেয়ার মত। সাধারণ মুসলিমদেরকে একটু চিন্তা করার অনুরোধ করছি।
(১২) নবী-রাসূলগণের চেয়ে ছূফীরাই শ্রেষ্ঠ :
যারা ছূফীবাদে বিশ্বাসী তারা রাসূল (ছাঃ)-এর চেয়ে কথিত ওলীদেরকে বড় মনে করে। স্বয়ং বায়েযীদ বুস্তামী বলেন, لِوَائِىْ أَرْفَعُ مِنْ لِوَاءِ مُحَمَّدٍ ‘আমার পতাকা (মর্যাদা) মুহাম্মাদের পতাকার চেয়ে অধিকতর উঁচু’।[5]
পর্যালোচনা :
তথাকথিত ছূফীরা যখন আল্লাহ বলে দাবী করতে ইতস্ততবোধ করেনি, তখন উক্ত দাবী করা তাদের পক্ষে খুবই স্বাভাবিক। এদেশের ছূফী ভক্ত লোকেরাও ছূফীদেরকে সেভাবেই মূল্যায়ন করে থাকে। তাই রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীদের আদর্শ ছেড়ে তারা ছূফীদের আদর্শকেই মূল্যায়ন করে। তাদের প্রণীত তরীকা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে। অথচ তারা জানে না যে, এ ধরনের বিশ্বাস করলে ঈমান থাকবে না। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘নিশ্চয় রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ নিহিত রয়েছে’ (আহযাব ২১)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যার হাতে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর প্রাণ রয়েছে, তাঁর কসম করে বলছি, যদি আজ মূসা (আঃ) তোমাদের নিকটে আবির্ভূত হন আর তোমরা তার অনুসরণ কর এবং আমাকে পরিত্যাগ কর, তবুও তোমরা সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যাবে। আজ মূসা (আঃ) যদি বেঁচে থাকতেন আর আমার নবুওঅত পেতেন, তবে তিনিও আমার অনুসরণ করতেন’।[6]
অতএব ঈমান বিধ্বংসী ছূফী আক্বীদা থেকে সাবধান! যারা রাসূল (ছাঃ)-কে বাদ দিয়ে অন্য কোন ব্যক্তিকে আদর্শের ধারক হিসাবে গ্রহণ করবে তার জন্য জাহান্নাম প্রস্ত্তত। আল্লাহ বলেন, وَمَنْ يُشَاقِقِ الرَّسُوْلَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيْلِ الْمُؤْمِنِيْنَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيْرًا. ‘হেদায়াত প্রকাশিত হওয়ার পরও যে ব্যক্তি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করবে এবং মুমিনদের রাস্তার বিপরীত পথে চলবে, তাকে আমি সেদিকেই পরিচালিত করব, সে যেদিকে ফিরে যেতে চায় এবং আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর এটা কতই না নিকৃষ্টতর প্রত্যাবর্তন স্থল’ (নিসা ১১৫)।
(১৩) রাসূল (ছাঃ) ও কথিত মৃত অলীদেরকে মাধ্যম করে দু‘আ করা।
পর্যালোচনা :
এটা পরিষ্কার শিরকী আক্বীদা। যদিও অসংখ্য মুসলিম রাসূল (ছাঃ)-কে অসীলা করে দু‘আ করে থাকে। রাসূল (ছাঃ)-এর কবরের পার্শ্বে গিয়ে দাঁড়ালে তা বুঝা যায়। এমনকি অনেকে সরাসরি রাসূল (ছাঃ)-এর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করে এবং বিভিন্ন বিষয় আবদার করে থাকে। এটা শিরকে আকবার। এদের হজ্জ-ওমরা কোনই কাজে আসবে না। বরং জীবনে যত নেকীর কাজ করেছে সবই নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন, ‘তারা যদি শিরক করে তবে তাদের যাবতীয় আমল বরবাদ হয়ে যাবে’ (আন‘আম ৮৮)।
শরী‘আতে কেবল তিন ধরনের অসীলা বৈধ। (ক) নিজের কৃত সৎ আমলকে অসীলা করে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা (মায়েদাহ ৩৫)।[7] (খ) আল্লাহর গুণবাচক নাম সমূহ দ্বারা (আ‘রাফ ১৮০)। (গ) জীবিত তাক্বওয়াশীল ব্যক্তিকে অসীলা করে চাওয়া।[8] এছাড়া অন্য যেকোন অসীলা হারাম। বিশেষ করে মৃত ব্যক্তিকে অসীলা করে দু‘আ করা জাহেলী যুগের মক্কার মুশরিকদের আদর্শ। যারা এ ধরনের বিশ্বাস করে তাদের জানা উচিত যে, রাসূল (ছাঃ) যদি তাঁর মৃত্যুর পর ছাহাবীদের কোন উপকার করতে না পারেন, তবে পৃথিবীর আর কোন ব্যক্তি আছে, সে মরার পর দুনিয়ার মানুষের উপকার করবে?
(১৪) রাসূল (ছাঃ) কবর থেকে সালামের উত্তর দেন। কখনো হাত বের করে দেন।
বহু মানুষের মাঝে উক্ত আক্বীদা লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে যারা ছূফী তরীকায় বিশ্বাসী তাদের মাঝে। তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা যেহেতু উক্ত তরীকায় বিশ্বাসী তাই ফাযায়েলে আমল বইয়ে এ ধরনের অসংখ্য ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। (ক) ইবরাহীম বিন শাইবান বলেন, আমি হজ্জের পর যিয়ারতের জন্য মদীনায় উপস্থিত হলাম এবং কবরের নিকট গিয়ে সালাম দিলে তিনি হুজরা শরীফের ভিতর থেকে ‘ওয়া আলাইকাস সালাম’ বলে জবাব দেন। আমি তার সালামের উত্তর শুনতে পেলাম।[9]
(খ) আহমাদ রেফাঈ নামক জনৈক ব্যক্তি ৫৫৫ হিজরী সালে হজ্জ শেষ করে নবী করীম (ছাঃ)-এর কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে মদীনায় যান। অতঃপর রওযার পার্শ্বে দাঁড়িয়ে নিম্নোক্ত দু’টি পঙক্তি পাঠ করেন। ‘দূর থেকে আমি আমার রূহকে রাসূল (ছাঃ)-এর খেদমতে পাঠিয়ে দিতাম। সে আমার স্থলাভিষিক্ত হয়ে রওয়ায় চুম্বন করত। আজ আমি সশরীরে উপস্থিত হয়েছি। সুতরাং হে রাসূল (ছাঃ)! আপনার হাত মুবারক বাড়িয়ে দিন, আমি যেন আমার ঠোঁট দ্বারা চুম্বন করে তৃপ্তি লাভ করতে পারি’। উক্ত কবিতা পড়ার সাথে সাথে কবর হতে রাসূল (ছাঃ)-এর হাত বের হয়ে আসে। আর রেফাঈ তাতে চুম্বন করে ধন্য হন। বলা হয় যে, সে সময় মসজিদে নববীতে ৯০ হাযার লোকের সমাগম ছিল। সকলেই বিদ্যুতের মত হাত মুবারকের চমক দেখতে পেল। তাদের মধ্যে মাহবূবে সুবহানী আব্দুল ক্বাদের জীলানী (রহঃ)ও ছিলেন।[10]
পর্যালোচনা :
এটাও কুফুরী আক্বীদা। কারণ মৃত ব্যক্তি দুনিয়ার মানুষের কোন কথা শুনতে পায় না। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আপনি মৃতকে শুনাতে পারবেন না; বধিরকেও আহবান শুনাতে পারবেন না, যখন তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়’ (নামল ৮০; রূম ৫২)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
وَمَا يَسْتَوِى الْأَحْيَاءُ وَلَا الْأَمْوَاتُ إِنَّ اللَّهَ يُسْمِعُ مَنْ يَشَاءُ وَمَا أَنْتَ بِمُسْمِعٍ مَنْ فِى الْقُبُوْرِ.
‘জীবিত আর মৃত এক সমান নয়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা শ্রবণ করান। যারা কবরে রয়েছে তাদেরকে আপনি শুনাতে পারবেন না’ (ফাত্বির ২২)। অন্যের উপকার বা ক্ষতি করতে পারে না। সে জন্য ছাহাবায়ে কেরাম কখনো নবী করীম (ছাঃ)-এর কবরের কাছে গিয়ে কোন কিছু আবদার করেননি।
(১৫) ভন্ড পীরের কারামত দাবী করা এবং ভবিষ্যতের কথা ব্যক্ত করা।
পর্যালোচনা :
কারামাতে আওলিয়ায় বিশ্বাস করা ছহীহ আক্বীদার অংশ, যা প্রকাশিত হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে। কিন্তু ঐ ব্যক্তি অগ্রীম কিছু জানাতে পারেন না। আর ভন্ড পীরেরা যে কারামতের দাবী করে থাকে তা ইবলীস শয়তান কর্তৃক সাজানো মিথ্যা নাটক। মূলতঃ তা শয়তানরূপী নগ্ন মেয়ে জিনের মাধ্যমে ঘটিয়ে থাকে। তাই এই ভন্ডরা ইবলীস শয়তানের নির্বাচন করা দুনিয়াবী এজেন্ট। যেমন নিম্নের হাদীছটি লক্ষণীয়-
عَنْ عَائِشَةَ رضى الله عنها قَالَتْ سَأَلَ أُنَاسٌ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم عَنِ الْكُهَّانِ فَقَالَ إِنَّهُمْ لَيْسُوا بِشَىْءٍ فَقَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللَّهِ فَإِنَّهُمْ يُحَدِّثُوْنَ بِالشَّىْءِ يَكُوْنُ حَقًّا قَالَ فَقَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم تِلْكَ الْكَلِمَةُ مِنَ الْحَقِّ يَخْطَفُهَا الْجِنِّىُّ فَيُقَرْقِرُهَا فِىْ أُذُنِ وَلِيِّهِ كَقَرْقَرَةِ الدَّجَاجَةِ فَيَخْلِطُوْنَ فِيْهِ أَكْثَرَ مِنْ مِائَةِ كَذْبَةٍ.
আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-কে একদা লোকেরা গণকদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। তিনি উত্তরে বললেন, নিশ্চয় তারা কিছু করতে পারে না। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! তারা যা বর্ণনা করে তা কখনো সত্যও হয়। তিনি বললেন, উক্ত সত্য কথা মেয়ে জিন ছূঁ মেরে নিয়ে আসে এবং তার ভন্ড অলীর কানে বলে দেয়, যেভাবে মুরগী করকর করে। অতঃপর তারা তার সাথে একশ’র বেশী মিথ্যা কথা মিশ্রিত করে।[11] অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ رضى الله عنها عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ الْمَلاَئِكَةُ تَتَحَدَّثُ فِى الْعَنَانِ وَالْعَنَانُ الْغَمَامُ بِالأَمْرِ يَكُوْنُ فِى الأَرْضِ فَتَسْمَعُ الشَّيَاطِيْنُ الْكَلِمَةَ فَتَقُرُّهَا فِىْ أُذُنِ الْكَاهِنِ كَمَا تُقَرُّ الْقَارُوْرَةُ فَيَزِيْدُوْنَ مَعَهَا مِائَةَ كَذِبَةٍ.
আয়েশা (রাঃ) রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, দুনিয়ায় ঘটবে এমন বিষয় নিয়ে ফেরেশতামন্ডলী মেঘের মাঝে আলোচনা করেন। তখন কোন কথা শয়তানরা শুনে ফেলে। অতঃপর তা গণকের কানে হুবহু বর্ণনা করে করে। যেভাবে কাঁচকে স্বচ্ছ করা হয়। অতঃপর তারা ঐ কথার সাথে আরো একশ’ মিথ্যা কথা যোগ দেয়।[12] অন্য হাদীছে এসেছে, শয়তানরা একজনের উপর আরেকজন উঠে। এভাবে আসমানের কাছাকাছি গিয়ে উক্ত কথা শ্রবণ করে এবং উপর থেকে নীচ পর্যন্ত পৌঁছে দেয়।[13]
অতএব ভন্ড ফকীরেরা যে ইবলীস শয়তানের স্পেশাল এজেন্ট, তা উক্ত হাদীছগুলো দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। তাই ঈমান বাঁচানোর স্বার্থেই তাদের থেকে দূরে থাকতে হবে।
(১৬) ওয়াহদাতুল ওজূদ বা সবকিছুতে আল্লাহর উপস্থিতিকে বিশ্বাস করা।
সবকিছুর মধ্যে আল্লাহর বিলীন হওয়াকে ‘ওয়াহদাতুল ওজূদ’ বলে। একশ্রেণীর লোকেরা পৃথিবীর সবকিছুকেই এক আল্লাহর অংশ মনে করে (নাঊযুবিল্লাহ)। সবকিছুতেই আল্লাহর উপস্থিতি রয়েছে। তাই সবই আল্লাহ। আল্লাহ আরশে নন, বরং সর্বত্র ও সবকিছুতে বিরাজমান। ছূফীরা স্রষ্টা ও সৃষ্টিতে কোন পার্থক্য করে না। বরং কোন ব্যক্তি যখন উক্ত মর্যাদা অর্জন করে তখন তাকে আর শরী‘আতের বিধি-বিধান পালন করা লাগে না। কারণ সে আল্লাহর মাঝে বিলীন হয়ে যায়। তাদের বক্তব্য হল, فَإِنَّ مِنَ الصُّوْفِيَّةِ مَنْ يَقُوْلُ إِنَّ مَنْ عَرَفَ اللهَ تَعَالَى سَقَطَتْ عَنْهُ الشَّرَائِعُ وَزَادَ بَعْضُهُمْ وَاتَّصَلَ بِاللهِ تَعَالَى ‘ছূফীরা বলে থাকেন, নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলাকে চিনতে পারবে, তার উপর থেকে শরী‘আতের হুকুম রহিত হয়ে যাবে। কেউ একটু বাড়িয়ে বলেছেন, সে আল্লাহ তা‘আলার সাথে মিলিত হবে’।[14]
(ক) দেওবন্দী মতবাদের আধ্যাত্মিক নেতা ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মাক্কী বলেন, ‘মা‘রেফতের অধিকারী ব্যক্তি সমগ্র পৃথিবীর উপর কর্তৃত্বশীল হয়। আল্লাহ তা‘আলার যে কোন রশ্মিকে নিজের জন্য ধরে নিতে পারে। আল্লাহর যে কোন গুণে ইচ্ছা নিজেকে বিভূষিত করে তার প্রকাশ ঘটাতে পারে। যেহেতু তার মধ্যে আল্লাহর গুণাবলী বিদ্যমান এবং আল্লাহর চরিত্রে বিলীন।[15] অন্য এক জায়গায় বলেন, ‘কোনরূপ আড়াল ছাড়াই সে আল্লাহকে দেখতে পাবে। আল্লাহকে সরাসরি প্রত্যক্ষ করার সে সুযোগ পাবে।[16] তিনি আরেক জায়গায় বলেন, ‘তাওহীদে জাতি হল এই যে, বিশ্বজগতের সবকিছুকে আল্লাহ বলে ধারণা করা।[17]
(খ) মাওলানা রশীদ আহমাদ গাঙ্গোহী বলেন, ‘মনোযোগ দিয়ে শোন! সত্য তা-ই যা রশীদ আহমাদের মুখ থেকে বের হয়। আমি শপথ করে বলছি, আমি কিছুই না, কিন্তু এ যুগে সৎপথ প্রাপ্তি এবং সফলতা নির্ভর করে আমার ইত্তেবার উপর’।[18]
পর্যালোচনা :
উক্ত ভ্রান্ত মতবাদের মাধ্যমে এদেশের কোটি কোটি মানুষকে মুশরিক বানানো হচ্ছে। এছাড়া মানবদেহের মাঝে আল্লাহর বিলীন হওয়াকে বড় মর্যাদাবান মনে করে। এরপর তার মাধ্যমে যা-ই সংঘটিত হোক সেটাকেই তারা বৈধ মনে করে। এ জন্য তারা নারী-পুরুষ একাকার হয়ে রাতের অন্ধকারে যিকির করাকে পাপের কাজ মনে করে না। তারা এভাবেই আল্লাহর মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। একশ্রেণীর আলেমও এই কুফুরী মতবাদের পিছনে ছুটে বেড়ায়। তারা বান্দা আর মা‘বূদের পার্থক্য বুঝে না। এটাই হিন্দুদের আক্বীদা। তারা সর্বেশ্বরবাদ বা সবকিছুকেই ইশ্বর মনে করে। তাই তারা ইশ্বর, মানুষ ও ব্যঙের মাঝে কোন তফাৎ খুঁজে পায় না। যেমন তারা বলে থাকে- ‘হরির উপর হরি, হরি শোভা পায়, হরিকে দেখিয়া হরি হরিতে লুকায়। মূলতঃ এটি ‘ফানাফিল্লাহ’ ভিত্তিক কুফুরী আক্বীদা।
সুধী পাঠক! রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম মৃত্যু পর্যন্ত ইবাদতে মাশগূল থেকেছেন। বরং বয়স যত বৃদ্ধি পেয়েছে তাঁরা ইবাদতে তত মনোযোগী হয়েছেন। কারণ আল্লাহর নির্দেশ হল, ‘আপনি মৃত্যু পর্যন্ত আপনার প্রতিপালকের ইবাদত করুন’ (নাহল )। অথচ কথিত ছূফীদের নাকি ইবাদত লাগে না। মূলতঃ এটা আল্লাহর ইবাদতে ফাঁকি দেয়ার ভন্ডামি তরীকা।
(১৭) প্রকৃত ছূফীই আল্লাহ :
ছূফীবাদ যে কত জঘন্য তা আরো বুঝা যায় উক্ত কুফুরী আক্বীদা থেকে। তাদের ধারণা মানবদেহে যখন আল্লাহ প্রবেশ করে তখন মানুষ আল্লাহতে পরিণত হয় هُوَ الْقَوْلُ بِأَنَّ اللهَ يَحِلُّ فِى الْإِنْسَانِ [19] ইরানের আবু ইয়াযীদ বিস্তামী (মৃঃ ২৬১ হিঃ) (বায়েযীদ বুস্তামী) বলেন, طَلَبْتُ اللهَ سِتِّيْنَ سَنَةً فَإِذَا أَنَا هُوَ ‘আমি ৬০ বছর যাবৎ আল্লাহকে খুঁজছি। এখন দেখছি আমি নিজেই আল্লাহ’।[20] কেউ তাকে ডাক দিলে বাড়ীর ভিতর থেকে বলতেন, لَيْسَ فِى الْبَيْتِ غَيْرُ اللهِ ‘বাড়ীতে আল্লাহ ছাড়া কেউ নেই’।[21] আরো কঠোরভাবে নিজেকে আল্লাহ দাবী করে বলেন, سُبْحَانِىْ سُبْحَانِىْ مَا أَعْظَمَ شَأْنِىْ ‘আমি মহা পবিত্র, ‘আমি মহা পবিত্র, আমার মর্যাদা কতই না বড়’।[22] আল্লাহ তার দেহের মধ্যে একাকার হয়ে গেছে ফলে তিনি নিজেই আল্লাহ হয়ে গেছেন। তারই অনুসারী হুসাইন বিন মানছূর হাল্লাজ (মৃতঃ ৩০৯ হিঃ) বলেন, نَحْنُ رُوْحَانِ حَلَّلْنَا بَدَنًا ‘আমরা দু’টি রূহ। এখন একটি দেহে একাকার হয়ে গেছি’। তাই জোর দিয়ে বলেন, أَنَا الْحَقُّ ‘আমিই আল্লাহ’।[23] উক্ত দাবী করায় মুরতাদ ঘোষণা করে তাকে শূলে বিদ্ধ করে হত্যা করা হয়।[24]
পর্যালোচনা :
উক্ত আক্বীদা যে কুফুরী তা হয়ত কাউকে বুঝানো লাগবে না। ছূফীবাদের গড়ার কথা মূলতঃ এটাই। ফেরাউন নিজেকে আল্লাহ বলে দাবী করলেও আল্লাহর মাঝে বিলীন হওয়ার মিথ্যা দাবী করেনি। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হল, ফেরাউনপন্থী এ সমস্ত লোকের ভক্ত উপমহাদেশে অনেক বেশী। তারা আল্লাহর নামে লোক দেখানো যিকির করলেও আল্লাহর মর্যাদা নষ্ট করেছে। এদের থেকে সাবধান!
(১৮) খানকা, মাযার, কবরস্থান, তীর্থস্থান, গাছতলা, পাথর, খাম্বা, শহীদ মিনার, প্রতিকৃতি ইত্যাদি স্থানে মানত করা এবং ওরসের আয়োজন করা।
পর্যালোচনা :
এদেশের কোটি কোটি মানুষ উক্ত স্থান সমূহে মানত করে মাকছূদ পূরণের চেষ্টা করে। তার থেকে বরকত নেয়ায় বিশ্বাস করে। এই বিশ্বাস শিরকে আকবার বা বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত। কারণ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনকিছু বা কারো নামে মানত করা ও যবহে করা হারাম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে উপমহাদেশে মৃত ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে লক্ষ লক্ষ মাযার তৈরি হয়েছে। আর সেগুলোতে একাধিক মসজিদও আছে, যা মৃত পীরকে বেষ্টন করে রেখেছে। সেখানে প্রত্যেক বছর ওরস করা হয়। লাখ লাখ মানুষের ভীড় জমে। আর এই তীর্থস্থানেই মানুষ কোটি কোটি টাকা, গরু, ছাগল, মহিষ ইত্যাদি নযর-নেওয়ায করছে। যার মূল উদ্দেশ্যই থাকে মৃত পীরকে খুশি করা। আরো দুঃখজনক হল, উক্ত স্থানগুলোতে মসজিদ তৈরি করে ছালাত আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অথচ উক্ত স্থান সমূহে ছালাত আদায় করা পরিষ্কার হারাম। শরী‘আতে এগুলোকে ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
عَنْ أَبِىْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ r الْأَرْضُ كُلُّهَا مَسْجِدٌ إِلَّا الْمَقْبَرَةَ وَالْحَمَّامَ.
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘পৃথিবীর পুরোটাই মসজিদ। তবে কবরস্থান ও গোসলখানা ব্যতীত।[25] তাছাড়া কবরের মাঝে ছালাত আদায় করা যাবে না মর্মে স্পষ্ট ছহীহ হাদীছ এসেছে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ نَهَى رَسُوْلُ اللهِ r عَنِ الصَّلاَةِ بَيْنَ القُبُوْرِ.
আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) কবরের মাঝে ছালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন।[26]
عَنْ جُنْدُبٍ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِىَّ r أَلاَ وَإِنَّ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ كَانُوْا يَتَّخِذُوْنَ قُبُوْرَ أَنْبِيَائِهِمْ وَصَالِحِيْهِمْ مَسَاجِدَ أَلاَ فَلاَ تَتَّخِذُوْا الْقُبُوْرَ مَسَاجِدَ إِنِّىْ أَنْهَاكُمْ عَنْ ذَلِكَ.
জুনদুব (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, সাবধান! তোমাদের পূর্ববর্তীরা তাদের নবী ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের কবরগুলোকে মসজিদে পরিণত করেছিল। সাবধান! তোমরা কবরকে মসজিদে পরিণত করো না। নিশ্চয় আমি তোমদেরকে এটা থেকে নিষেধ করছি।[27]
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ r لاَ تَجْعَلُوْا بُيُوْتَكُمْ قُبُوْرًا وَلاَ تَجْعَلُوْا قَبْرِىْ عِيْدًا وَصَلُّوْا عَلَىَّ فَإِنَّ صَلاَتَكُمْ تَبْلُغُنِىْ حَيْثُ كُنْتُمْ.
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা তোমাদের ঘরসমূহকে কবরে পরিণত করো না এবং আমার কবরকে আনন্দ অনুষ্ঠানে পরিণত করো না। তোমরা আমার উপর দরূদ পাঠ কর। তোমরা যেখানেই থাক তোমাদের দরূদ আমার কাছে পৌঁছানো হয়।[28]
অন্য হাদীছে এসেছে, لَا تَتَّخِذُوْا قَبْرِىْ عِيْدًا ‘তোমরা আমার কবরকে আনন্দ অনুষ্ঠানের স্থান হিসাবে গ্রহণ করো না’।[29]
عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ r قَالَ اللهُمَّ لَا تَجْعَلْ قَبْرِيْ وَثَنًا يُعْبَدُ اشْتَدَّ غَضَبُ اللهِ عَلَى قَوْمٍ اتَّخَذُوْا قُبُوْرَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ.
আত্বা ইবনু ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘হে আল্লাহ! আমার কবরকে মূর্তিতে পরিণত করবেন না, যেখানে ইবাদত করা হবে। ঐ জাতির উপর আল্লাহ কঠিন গযব বর্ষণ করুন, যারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে’।[30] অন্য বর্ণনায় এসেছে,
عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ r اللهُمَّ لَا تَجْعَلْ قَبْرِيْ وَثَنًا يُصَلًّى لًهُ اشْتَدَّ غَضَبُ اللهِ عَلَى قَوْمٍ اتَّخَذُوْا قُبُوْرَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ.
যায়েদ ইবনু আসলাম (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! আমার কবরকে মূর্তিতে পরিণত করবেন না, যেখানে ছালাত আদায় করা হবে। ঐ জাতির উপর আল্লাহ কঠিন শাস্তি বর্ষণ করুন, যারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে।[31]
عَنْ جَابِرٍ قَالَ نَهَى رَسُوْلُ اللهِ r أَنْ يُجَصَّصَ الْقَبْرُ وَأَنْ يُقْعَدَ عَلَيْهِ وَأَنْ يُبْنَى عَلَيْهِ.
জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) কবর পাকা করতে, তার উপর বসতে এবং এর উপর সমাধি সৌধ নির্মাণ করতে নিষেধ করেছেন।[32]
عَنْ أَبِىْ مَرْثَدِ الْغَنَوِىِّ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ r يَقُوْلُ لاَ تُصَلُّوْا إِلَى الْقُبُوْرِ وَلاَ تَجْلِسُوْا عَلَيْهَا.
আবু মারছাদ গানাবী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা কবরের দিকে ছালাত আদায় কর না এবং তার উপর বস না।[33]
সুধী পাঠক! বিশ্ব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ যিনি, তিনি তাঁর কবরস্থানকে ওরস বা আনন্দ অনুষ্ঠানে পরিণত করতে কঠোর ভাষায় নিষেধ করেছেন। নবী-রাসূল ও সৎকর্মশীল বান্দাদের কবরকে মসজিদে পরিণত করতে নিষেধ করেছেন এবং যারা এ ধরনের জঘন্য কাজ করবে তাদেরকে কঠোর শাস্তি দানের জন্য আল্লাহর নিকট বদ দু‘আ করেছেন। তাহলে সাধারণ লোকদের কবরকে কিভাবে মসজিদের স্থান হিসাবে নির্ধারণ করা যাবে? তাদের কবরস্থানে কিভাবে ওরস করা যাবে?
এ সমস্ত কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও মৃত ব্যক্তির কবরকে কেন্দ্র করে কেন লক্ষ লক্ষ মাযার-খানকা তৈরি হয়েছে? সেখানে মসজিদ তৈরি করে কেন কোটি কোটি মানুষের ঈমান হরণ করা হচ্ছে? কবরকে সিজদা করে, সেখানে মাথা ঠুকে আল্লাহর তাওহীদী চেতনাকে কেন নস্যাৎ করা হচ্ছে? তাদের কর্ণকুহরে এই সমস্ত বাণী কেন প্রবেশ করে না? কারণ হল, প্রতিনিয়ত তাদেরকে নগ্ন জিন শয়তান মূর্তিপূজা করতে উৎসাহিত করছে। উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) বলেন, مَعَ كُلِّ صَنَمٍ جِنِّيَّةٌ ‘প্রত্যেক মূর্তির সাথে একজন করে নারী জিন থাকে’।[34] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, إِنْ يَدْعُوْنَ مِنْ دُونِهِ إِلاَّ إِنَاثًا وَإِنْ يَدْعُوْنَ إِلاَّ شَيْطَانًا مَرِيْدًا ‘আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা কেবল নারীদের আহবান করে। বরং তারা বিদ্রোহী শয়তানকে আহবান করে’ (নিসা ১১৭)। নিম্নের হাদীছে আরো পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে-
عَنْ أَبِى الطُّفَيْلِ قَالَ لَمَّا فَتَحَ رَسُوْلُ اللهِ r مَكَّةَ بَعَثَ خَالِدَ بْنَ الْوَلِيْدِ إِلَى نَخْلَةٍ وَكَانَتْ بِهَا الْعُزَّى فَأَتَاهَا خَالِدٌ وَكاَنَتْ عَلَى ثَلاَثَ سَمَرَاتٍ فَقَطَعَ السَّمَرَاتِ وَهَدَمَ الْبَيْتَ الَّذِىْ كَانَ عَلَيْهَا ثُمَّ أَتَى النَّبِىَّ r فَأَخْبَرَهُ فَقَالَ ارْجِعْ فَإِنَّكَ لَمْ تَصْنَعْ شَيْئًا فَرَجَعَ خَالِدٌ فَلَمَّا أَبْصَرَتْ بِهِ السَّدْنَةُ وَهُمْ حَجَبَتْهَا أَمْعَنُوْا فِى الْجَبَلِ وَهُمْ يَقُوْلُوْنَ يَا عُزَّى فَأَتَاهَا خَالِدٌ فَإِذَا هِىَ اِمْرَأَةٌ عُرْيَانَةٌ نَاشِرَةٌ شَعْرَهَا تَحْتَفِنُ التُّرَابَ عَلَى رَأْسِهَا فَعَمَّمَهَا بِالسَّيْفِ حَتَّى قَتَلَهَا ثُمَّ رَجَعَ إِلَى النَّبِىِّ r فَأَخْبَرَهُ فَقَالَ تِلْكَ الْعُزَّى.
আবু তোফাইল (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন মক্কা বিজয় করলেন তখন খালিদ ইবনু ওয়ালিদ (রাঃ)-কে একটি খেজুর গাছের নিকট পাঠালেন। সেখানে উযযা নামক মূর্তি ছিল। খালিদ (রাঃ) সেখানে আসলেন। মূর্তিটি তিনটি বাবলা গাছের উপর ছিল। তিনি সেগুলো কেটে ফেললেন এবং তার উপরে তৈরি করা ঘর ভেঙ্গে দিলেন। অতঃপর তিনি রাসূল (ছাঃ)-কে এসে খবর দিলেন। তিনি বললেন, ফিরে যাও, তুমি কোন অপরাধ করোনি। অতঃপর খালিদ (রাঃ) ফিরে গেলেন। যখন খালিদ (রাঃ)-কে পাহারাদাররা দেখল তখন তারা ঐ মূর্তিকে পাহাড়ের মধ্যে রক্ষা করার জন্য বেষ্টন করে ঘিরে ফেলল এবং হে উযযা! বলে ডাকতে লাগল। খালিদ (রাঃ) কাছে এসে বিস্তৃত চুল বিশিষ্ট এক নগ্ন মহিলাকে দেখতে পেলেন, যার মাথা কাদায় ল্যাপ্টানো। তিনি তাকে তরবারি দিয়ে আঘাত করলেন এবং হত্যা করলেন। অতঃপর ফিরে এসে রাসূল (ছাঃ)-কে খবর দিলেন। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, এটাই সেই উযযা।[35] উল্লেখ্য যে, শয়তানের পরামর্শেই মূর্তিপূজার সূচনা হয়েছে।[36]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ دَخَلَ النَّبِىُّ r مَكَّةَ وَحَوْلَ الْكَعْبَةِ ثَلاَثُمِائَةٍ وَسِتُّوْنَ نُصُبًا فَجَعَلَ يَطْعَنُهَا بِعُوْدٍ فِىْ يَدِهِ وَجَعَلَ يَقُوْلُ (جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ). رَوَاهُ الْبُخَارِىُّ
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, (মক্কা বিজয়ের দিনে) রাসূল (ছাঃ) মক্কায় প্রবেশ করলেন। তখন কা‘বার চারপাশে ৩৬০টি মূর্তি স্থাপন করা ছিল। রাসূল (ছাঃ) তাঁর হাতের লাঠি দ্বারা মূর্তিগুলোকে আঘাত করতে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন, ‘হক্ব এসেছে বাতিল চুরমার হয়েছে’।[37]
عَنْ أَبِى الْهَيَّاجِ الأَسَدِىِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ لِىْ عَلِىُّ بْنُ أَبِىْ طَالِبٍ أَلاَّ أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِىْ عَلَيْهِ رَسُوْلُ اللهِ r أَنْ لاَّ تَدَعَ تِمْثَالاً إِلاَّ طَمَسْتَهُ وَلاَ قَبْرًا مُشْرِفًا إِلاَّ سَوَّيْتَهُ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবুল হাইয়াজ (রাঃ) বলেন, আলী (রাঃ) একদা আমাকে বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমাকে যে জন্য পাঠিয়েছিলেন, আমি কি তোমাকে সে জন্য পাঠাব না? তিনি বলেছিলেন, ‘তুমি কোন মূর্তি না ভাঙ্গা পর্যন্ত ছাড়বে না এবং কোন উঁচু কবর ছাড়বে না যতক্ষণ তা ভেঙ্গে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে না দিবে।[38]
عَنْ نَافِعٍ قَالَ بَلَغَ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ أُنَاسًا يَأْتُوْنَ الشَّجَرَةَ الَّتِىْ بُوْيِعَ تَحْتَهَا قَالَ فَأَمَرَ بِهَا فَقُطِعَتْ. رَوَاهُ ابْنُ أَبِىْ شَيْبَةَ
নাফে‘ (রাঃ) বলেন, ওমর (রাঃ) এ মর্মে জানতে পারলেন যে, যে গাছের নীচে রাসূল (ছাঃ) বায়‘আত নিয়েছিলেন, ঐ গাছের কাছে মানুষ ভীড় করছে। তখন তিনি নির্দেশ দান করলে তা কেটে ফেলা হয়।[39]
(চলবে)
[1]. আল্লামা ইহসান এলাহী যহীর, ব্রেলভী মাসলাক কে আক্বাঈদ (ইউপি, মৌনাতভঞ্জন : ইদারা দাওয়াতুল ইসলাম, জানুয়ারী ২০১৩), পৃঃ ৯৯।
[2]. তাফসীরে হাক্কী ৪/৯৮ পৃঃ, ইবনু আববাস (রাঃ)-এর নামে বর্ণিত।
[3]. মাওঃ আশরাফ আলী থানভী, আরোহায়ে ছালাছা, হিকায়েতে আওলিয়া (দেওবন্দ : কুতুবখানা নঈমীয়া), পৃঃ ২৬১; হিকায়েত নং-২৪৭।
[4]. আল-বারাহী আল-ক্বাতিয়া, পৃঃ ৩০; গৃহীত : সাজিদ আব্দুল কাইয়ূম, তাবলীগ জামা‘আত ও দেওবন্দীগণ, পৃঃ ২২১।
[5]. মাওসূ‘আতুর রাদ্দি আলাছ ছূফিয়াহ ৬৮/৭১ পৃঃ।
[6]. দারেমী হা/৪৪৩; সনদ হাসান, মিশকাত হা/১৯৪, পৃঃ ৩২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৮৪, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৩৫।
[7]. বুখারী হা/৫৯৭৪, ‘আদব’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫; মুসলিম হা/৭১২৫; মিশকাত হা/৪৯৩৮।
[8]. বুখারী হা/১০১০, ১/১৩৭ পৃঃ।
[9]. ফাজায়েলে দুরুদ, পৃঃ ৩৩; উর্দূ, পৃঃ ১৯।
[10]. ফাজায়েলে হজ্ব (বাংলা, তাবলীগী কুতুবখানা প্রকাশিত, এপ্রিল-২০০৯), পৃঃ ১৪০-১৪১; (উর্দূ) ফাযায়েলে আ‘মাল ২য় খন্ড, ফাযায়েল হজ্জ অংশ (দেওবন্দ : দারুল কিতাব প্রকাশিত), পৃঃ ১৬৬।
[11]. বুখারী হা/৭৫৬১; মিশকাত হা/৪৫৯৩।
[12]. বুখারী হা/৩২৮৮; মিশকাত হা/৪৫৯৪।
[13]. বুখারী হা/৪৮০০; মিশকাত হা/৪৫০০।
[14]. আল-ফাছল ফিল মিলাল ৪/১৪৩ পৃঃ।
[15]. যিয়াউল কুবুল (উর্দূ), পৃঃ ২৭-২৮; (বাংলা), পৃঃ ৫১।
[16]. যিয়াউল কুলূব (উর্দূ), পৃঃ ৭ ও ২৫; (বাংলা), পৃঃ ২০ ও ৪৪।
[17]. যিয়াউল কুলূব (উর্দূ), পৃঃ ৩৫; (বাংলা), পৃঃ ৬২।
[18]. তাযকিরাত আর-রশীদ ২য় খন্ড, পৃঃ ১৭; গৃহীত : তাবলীগ জামা‘আত ও দেওবন্দীগণ, পৃঃ ২২২।
[19]. ইবনু তায়মিয়াহ, আল-জাওয়াবুছ ছহীহ ৩/৩২৯ পৃঃ।
[20]. আব্দুর রহমান দেমাষ্কী, আন-নকশাবন্দইয়াহ (রিয়ায : দারু ত্বাইয়েবাহ, ১৯৮৮), পৃঃ ৬২।
[21]. মাওসূ‘আতুর রাদ্দি আলাছ ছূফিয়াহ ৬৮/৭১ পৃঃ।-جاء الى بيته رجل فدق بابه فقال أبو يزيد من تطلب؟ فقال الطارق أريد أبا يزيد. فقال له أبو يزيد ليس في البيت غير الله
[22]. ড. সাফার আব্দুর রহমান, উছূলুল ফিরাক ওয়াল আদইয়ান ওয়াল মাযাহিবুল ফিকরিয়া (মিশর : দারুর রুউওয়াদ, ২০১৩), পৃঃ ৮৫।
[23]. আব্দুর রহমান দেমাষ্কী, আন-নকশাবন্দইয়াহ (রিয়ায : দারু ত্বাইয়েবাহ, ১৯৮৮), পৃঃ ৬২; মাসিক আত-তাহরীক, জানুয়ারী ’৯৯, পৃঃ ৭।
[24]. হাক্বীক্বাতুছ ছূফিয়াহ, পৃঃ ১৯।
[25]. তিরমিযী হা/৩১৭, ১/৭৩ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/৭৪৫; মিশকাত হা/৭৩৭, পৃঃ ৭০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৮১, ২/২২৮ পৃঃ, ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘মসজিদ সমূহ’ অনুচ্ছেদ। উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিছগণ বলেন, কবর ক্বিবলার সামনে থাক কিংবা ডানে থাক, বামে থাক বা পিছনে থাক সে স্থানে ছালাত হবে না।- আলবানী, আহকামুল জানাইয, পৃঃ ২১৪; আছ-ছামারুল মুস্তাত্বাব, পৃঃ ৩৫৭- وسواء في ذلك أ كان القبر قبلته أو عن يمينه أو عن يساره و خلفه لكن استقباله بالصلاة أشد لقوله صلى الله عليه وسلم لعنة الله على اليهود والنصارى اتخذوا قبور أنبيائهم مساجد
[26]. ছহীহ ইবনু হিববান হা/২৩১৩, সনদ ছহীহ।
[27]. ছহীহ মুসলিম হা/১২১৬, ১/২০১ পৃঃ, (ইফাবা হা/১০৬৯), ‘মসজিদ সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪; মিশকাত হা/৭১৩, পৃঃ ৬৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৬০, ২/২২০ পৃঃ।
[28]. আবুদাঊদ হা/২০৪২, ১/২৭৯ পৃঃ, ‘হজ্জ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১০০; নাসাঈ, মিশকাত হা/৯২৬, পৃঃ ৮৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৮৬৫, ২/৩১১ পৃঃ।
[29]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৭৫৪২; আলবানী, তাহযীরুস সাজেদ, পৃঃ ১১৩।
[30]. মালেক মুওয়াত্ত্ব হা/৫৯৩, সনদ ছহীহ।
[31]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৭৫৪৪, সনদ ছহীহ।
[32]. ছহীহ মুসলিম হা/২২৮৯, ১/৩১২ পৃঃ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩২ (ইফাবা হা/২১১৪); মিশকাত হা/১৬৯৭, পৃঃ ১৪৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৬০৬, ৪/৭৩ পৃঃ।
[33]. ছহীহ মুসলিম হা/২২৯৫, ১/৩১২ পৃঃ, (ইফাবা হা/২১২০); মিশকাত হা/১৬৯৮, পৃঃ ১৪৮।
[34]. আহমাদ হা/২১২৬৯, সনদ হাসান; আল-আহাদীছুল মুখতারাহ হা/১১৫৭।
[35]. নাসাঈ কুবরা হা/১১৫৪৭; মুসনাদে আবী ইয়ালা হা/৯০২, সনদ ছহীহ।
[36]. সূরা নূহ ২৩; ছহীহ বুখারী হা/৪৯২০, ২/৭৩২ পৃঃ, ‘তাফসীর’ অধ্যায়, সূরা নূহ।
[37]. বুখারী হা/২৪৭৮, ১/৩৩৬ পৃঃ, ‘মাযালেম’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩২; মুসলিম হা/৪৭২৫- بَابُ إِزَالَةِ الأَصْنَامِ مِنْ حَوْلِ الْكَعْبَةِ। অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে মূর্তি ভেঙ্গে খান খান করার জন্য এবং আল্লাহর তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করার জন্য, যেন তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক না করা হয়- ছহীহ মুসলিম হা/১৯৬৭, ১/২৭৬ পৃঃ, ‘মুসাফিরের ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫২- أَرْسَلَنِىْ بِصِلَةِ الأَرْحَامِ وَكَسْرِ الأَوْثَانِ وَأَنْ يُوَحَّدَ اللهُ لاَ يُشْرَكُ بِهِ شَىْءٌ।
[38]. ছহীহ মুসলিম হা/২২৮৭, ১/৩১২ পৃঃ, (ইফাবা হা/২১১২); মিশকাত হা/১৬৯৬, পৃঃ ১৪৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৬০৫, ৪/৭২ পৃঃ, ‘মৃতকে দাফন করা’ অনুচ্ছেদ।
[39]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৭৫৪৫; তাহযীরুস সাজেদ, পৃঃ ৮৩।