আব্দুল্লাহিল কাফী আল-কুরায়শী (রহঃ) প্রদত্ত ভাষণ (২য় কিস্তি)

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 467 বার পঠিত

রাজশাহীর অভিভাষণ

[বাংলা ১৩৫৫ সাল ২৮শে ফাল্গুন মুতাবেক ১৯৪৯ ইং ১২ মার্চ তারীখে রাজশাহীর উপকণ্ঠ নওদাপাড়ায় অনুষ্ঠিত আহলেহাদীছ কন্ফারেন্সে তৎকালীন ‘নিখিল বঙ্গ ও আসাম জমঈয়তে আহলেহাদীস’-এর সভাপতি মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুলস্নাহিল কাফী আল-কুরায়শী (রহঃ) প্রদত্ত অভিভাষণ]

 

হিন্দে আহলেহাদীছ আন্দোলনের ইলমী সনদ :

হাদীছ শাস্ত্রের বিশ্বস্ত ও সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ মাশারেকুল আনওয়ারের সঙ্কলয়িতা লাহোরের বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ইমাম হাসান বিন মুহাম্মাদ বিন হাসান বিন হায়দার ছাগানী (৫৭৭-৬৫০ হিঃ) তাবাকাতের গ্রন্থসমূহে উল্লিখিত বিশ্ব-বিশ্রুত পুরুষ। তিনি বাগদাদের খলীফাগণের দৌতকার্যে বহুবার দিল্লী গমনাগমন করেন। বাগদাদেই তাঁহার মৃত্যু ঘটিয়াছিল। তাঁহার হাদীছের প্রতি প্রগাঢ় অনুরাগ এবং নির্দিষ্ট দলীয় মাযহাব অনুসরণের প্রতি অশ্রদ্ধার কথা তিনি তাঁহার গ্রন্থেই উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন। হিন্দের সহিত তাঁহার ইলমী যোগাযোগের বিবরণ আমি বিশদরূপে অবগত হইতে পারি নাই। তাঁহার পরে পরেই অর্থাৎ শায়খুল ইসলাম তাক্বীউদ্দীন ইবনে তায়মিয়াহর (৬৬১-৭২৮ হিঃ) সমসাময়িক আর একজন অনন্য সাধারণ প্রতিভাসম্পন্ন হিন্দে আহলেহাদীছ মুহাদ্দিছের নাম ইতিহাসের পৃষ্টাকে উজ্জ্বল করিয়া রাখিয়াছে। আল্লামা হাফিয আবুল খায়ের নাজমুদ্দীন সাঈদ বিন আবদুল্লাহ জালালী দেহলভী (৭১২-৭৪১ হিঃ), ইমাম ইবনে তায়মিয়াহর ছাত্র ইমাম শামসুদ্দীন আয-যাহাবী (৬৭৩-৭৪৮ হিঃ), হাফিয শামসুদ্দীন মুহাম্মাদ বিন আহমদ বিন আব্দুল হাদী আল-মাক্বদেসী (৭০৬-৭৪৪ হিঃ) প্রভৃতির উসতায ছিলেন। রিজাল শাস্ত্রের ইমামরূপে যাহাবীর খ্যাতির কথা কাহারো অবিদিত নাই, কিন্তু ইবনে আব্দুল হাদীও ক্ষণজন্মা পুরুষ ছিলেন। স্বীয় গুরু ইবনে তায়মিয়াহকে সমর্থন করিয়া তিনি হাফিয তাক্বীউদ্দীন সুবকীর (৬৮৩-৭৫৬ হিঃ) বিরুদ্ধে লেখনী ধারণ করিয়াছিলেন। হাকিম আবুল ফযল যায়নুদ্দীন আব্দুর রহীম ইরাক্বী (৭২০-৮০৬ হিঃ) ইবনে আব্দুল হাদীর ছাত্র ছিলেন। আর ইরাক্বীর ছাত্র ছিলেন শায়খুল ইসলাম হাফিয শিহাবুদ্দীন আবুল ফযল আহমদ বিন আলী বিন হাজার আসক্বালানী (৭৭৩-৮৫২ হিঃ)। ইবনে হাজারের দুই জন ছাত্র সমধিক প্রসিদ্ধ লাভ করেন। একজন হইতেছেন হাফিয শামসুদ্দীন মুহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান আম-সাখাবী (৮৩১-৯০২ হিঃ), দ্বিতীয় ব্যক্তির নাম শায়খুল ইসলাম আবু ইয়াহইয়া যাকারিয়া বিন মুহাম্মাদ আনছারী (৮২৬-৯২৬ হিঃ)। কনযুল উম্মাল নামক হাদীছকোষ (Encyclopaedia) সঙ্কলয়িতা যুগ প্রবর্তক আল্লামা শায়খ ওয়ালিউল্লাহ আলী বিন হুসামুদ্দীন আল-মুত্তাক্বী (৮৮৫-৯৭৫ হিঃ) সাখাবীর ছাত্র এবং জৌনপুরের অধিবাসী ছিলেন। নির্দিষ্ট মাযহাবের (School) অনুসরণের প্রতি অশ্রদ্ধা এবং রাসূলুল্লাহর (ছাঃ) হাদীছকে সকল অবস্থায় অগ্রগণ্য করার রীতি জৌনপুরীর অনেক পূর্বে অর্থাৎ ইমাম ইবনে তায়ামিয়াহর সমসাময়িক আর একজন পুরুষসিংহ হিন্দ ভূমিতে প্রচলিত করিয়াছিলেন। তাঁহার নাম সুলতানুল মাশায়েখ আল্লামা শায়খ নিযামুদ্দীন মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন আলী আল-বুখারী দেহলভী। ইনি সাধারণের নিকট নিযামুদ্দীন আউলিয়া নামে প্রসিদ্ধ। বাদায়ূন শহরে ৬৩৪ হিজরীর সফর মাসে জন্ম গ্রহণ করিয়া ৭২৫ হিজরীর ১৮ রবিউল আউওয়াল তারীখে তিনি দিল্লীতে পরলোকগমন করেন। তাঁহার শিষ্যমন্ডলীর মধ্যে গৌড়ের শায়খ সিরাজুদ্দীন ওছমান অন্যতম। শায়খ আলাউদ্দীন লাহোরী তাঁহার ছাত্র ছিলেন। তদীয় পুত্র স্বনামধন্য শায়খ নূর কুতুবে ‘আলম ৮১৩ হিজরীতে পান্ডুয়ায় পরলোকবাসী হন। জৌনপুরীর হিন্দী ছাত্রমন্ডলীর মধ্যে শায়খ আব্দুল হক্ব দেহলভীর (৯৫৮-১০৫২ হিঃ) উস্তায শায়খ আব্দুল ওয়াহ্হাব মুস্তাকী বুরহানপুরী (মৃত ৯৩৬ হিঃ), হাদীছের শব্দকোষ মাজমাঊল বিহার ও তাযকিরাতুল মাওযু‘আত প্রভৃতি গ্রন্থ প্রণেতা শায়খ মুহাম্মাদ তাহের পাট্টানী নহরওয়ালী (৯১৪-৯৮০ হিঃ) ও শায়খ কুতুবুদ্দীন মুহাম্মাদ বিন আলাউদ্দীন আহমাদ নহরওয়ালী (মৃত ৯৮৮ হিঃ) বিশষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। পাট্টানী বিদ‘আতের প্রতিরোধ করিতে গিয়া ঘাতকের হস্তে শহীদ হন। নহরওয়ালীর দুইজন ছাত্র বিশেষভাবে কৃতিত্ব অর্জন করেন। যথা : আল্লামা শায়খ আবুল মা‘আবী সিন্ধী (মৃত ১০৮৮ হিঃ) ও সুবর্ণ (আহমার) আব্দুল্লাহ বিন মোল্লা সা‘আদুল্লাহ লাহোরী। ১০৮৩ হিজরীতে হেজায ভূমিতে পরলোকগমন করেন। তাঁহার ৪৯ বৎসর পূর্বে মুজাদ্দিদে আলফুছ্ছানির বিয়োগ ঘটে। তাঁহার সহিত মুজাদ্দিদের সাক্ষাৎকারের কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ আমি সংগ্রহ করিতে পারি নাই। আল্লামা মুজাদ্দিদের উস্তাযগণের মধ্যে আব্দুর রহমান বিন ফাহাদ, মোল্লা কামালুদ্দীন কাশ্মিরী প্রভৃতির সহিত জৌনপুরী সিলসিলার কোনরূপ যোগাযোগ ছিল কিনা তাহাও আমার জানা নাই। মুজাদ্দিদের বাঙালী শিষ্যমন্ডলীর মধ্যে বর্ধমানের শায়খ হামীদ মঙ্গলকোটী সর্বাধিক প্রসিদ্ধ।

এ কথা বারংবার বলা হইয়াছে যে, দলবন্দীর (মাযহাব) বেড়াজালকে ছিন্ন করিয়া বিক্ষিপ্ত ও বিভক্ত মুসলিম জাতিকে কুরআন ও হাদীছের কেন্দ্রে এক মহাজাতিরূপে সমবেত করা আহলেহাদীছ আন্দোলন-এর অন্যতম লক্ষ্য। প্রথম সহস্রক হইতে রাষ্ট্রীয় পতনের সাথে সাথে গতানুগতিকতা ও দলীয় গন্ডীর প্রভাব মুসলমানগণের সমাজ ও ধর্মজীবনে এরূপ দৃঢ়ভাবে চাপিয়া বসিয়াছিল যে, শ্রেণীভেদ ও অন্ধ অনুসরণের বন্ধনকে অস্বীকার করার কথা উচ্চারণ করাও মহাপাপ বিবেচিত হইত। ইহা স্বতঃসিদ্ধরূপে মান্য করিয়া লওয়া হইয়াছিল যে প্রচলিত চারি মাযহাব : হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী ও হাম্বলীর মধ্যে শুধু একটিকেই অবধারিতরূপে বরণ করিয়া লওয়া ওয়াজিব। যুগ প্রবর্তক আলী মুত্তাক্বী মক্কায় যে দারুলহাদীছ প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন এবং মুজাদ্দিদে আলফুছ্ছানি সুন্নাতের পুনঃপ্রতিষ্ঠাকল্পে সংস্কারের যে তুর্যধ্বনি করিয়াছিলেন, এতদুভয়ের কল্যাণে গতানুগতিকতা ও মাযহাবের জগদ্দল প্রস্তর দ্রবীভূত হইতে আরম্ভ করে। ইলমে হাদীছের পবিত্র পরশ লাভ করার ফলে তাক্বলীদ-উযর হিন্দ ভূমিতেও মাঝে মাঝে মুক্তি ও বিদ্রোহের ঝঙ্কার শুনা যাইতে থাকে।

শায়খুল ইসলাম ইবনে হাজারের অপর ছাত্র যাকারিয়া আনছারী হাফিয নাজমুদ্দীন মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আলগিতী সেকান্দারীর (৯১০-৯৮৪ হিঃ) উস্তায ছিলেন। নাজমুদ্দীনের দুইজন ছাত্র শয়খ শিহাবুদ্দীন আহমাদ বিন খলীল সুব্কী ও আবুন্নাজা‘ সালিম বিন আহমাদ বিন সালামাহ বিন ইসমাঈল মাযাহী আযহারী সুব্কীর এবং শায়খ শামসুদ্দীন মুহাম্মাদ বিন আলাউদ্দীন মিছরী বাবলী (মৃত ১০৭৭ হিঃ) সিনহোরীর ছাত্র ছিলেন। জগত-প্রসিদ্ধ আলেম, মাদীনার স্বনামধন্য মুহাদ্দিছ শায়খ জামালুদ্দীন আব্দুল্লাহ বিন সালেম বছরী (১০৪৯-১১৩৪ হিঃ) ও শায়খ আহমাদ বিন মুহাম্মাদ নাখলী বাবলীর বিশিষ্ট ছাত্র এবং বাবলী, মাযাহী ও সুবর্ণ লাহোরী বিদ্যার ত্রিস্রোতা সঙ্গম লাভ করিয়াছিল আললামা শায়খ বুরহানুদ্দীন ইবরাহীম বিন হাসান বিন শিহাবুদ্দীন কুদ্দীর (১০২৫-১১০২ হিঃ) ভিতর। ইবরাহীম কুদ্দীরপুত্র আল্লামা শায়খ আবু তাহের মুহাম্মাদ মাদানী (মৃত ১১৪৫ হিঃ) স্বীয় পিতা ও আব্দুল্লাহ বিন সালামা বছরী ও শায়খ আহমাদ নাখলীর জ্ঞান ও বিদ্যাবত্তার প্রকৃত উত্তরাধিকারী ছিলেন। উত্তরকালে আব্দুল্লাহ বিন সালেম বছরী ও আবু তাহের মাদানীর ছাত্রবৃন্দই হেজায, নজদ, ইয়ামান ও হিন্দভূমিতে নবযুগের রচয়িতা ও আহলেহাদীছ আন্দোলন-এর অগ্রনায়কে পরিণত হইয়াছিলেন। আব্দুল্লাহ বিন সালেম বরীর ছাত্রমন্ডলীর মধ্যে আল্লামা শায়খ মুহাম্মাদ হায়াৎ সিন্ধী (মৃত ১১৬৩ হিঃ) বুখারীর টীকা লেখক আল্লামা শায়খ আবুল নূরুদ্দীন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল হাদী সিন্ধী (মৃত ১১৩৯ হিঃ) ও আলহাজ শায়খ মুহাম্মাদ আফযাল সিয়ালকোটী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ইয়ামনের সুপ্রসিদ্ধ সংস্কারক ও আহলেহাদীছ ইমাম সৈয়দ মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল সালাহ ছান‘আনী (১০১১-১১৮২ হিঃ) ও হিন্দের আহলেহাদীছ ইমাম হুজ্জাতুল ইসলাম শায়খ আহমাদ ওয়ালিউল্লাহ কুতুবুদ্দীন বিন আব্দুর রহিম দেহলভী (১১১৪-১১৭৬ হিঃ) আব্দুল্লাহ বিন সালেম ও আবু তাহের মাদানী উভয়ের ছাত্র ছিলেন। মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আবুল হাসান সিন্ধীর নিকট হইতেও বিদ্যালাভ করিয়াছিলেন।

মুহাম্মাদ হায়াৎ সিন্ধীর ছাত্রমন্ডলীর মধ্যে সুকবি ও মুহাদ্দিছ আল্লামা শায়খ মুহাম্মাদ ফাখের ইলাহাবাদী (১১২০-১১৬৪ হিঃ) নাজদের বহু বিশ্রুত ওয়াহ্হাবী আনেদালনের প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা শায়খ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব নাজদী তমীমী (১১১৫-১১৭১ হিঃ) ও ইয়ামানের আল্লামা সৈয়দ আব্দুল কাদের বিন আহমাদ বিন আব্দুল কাদের বিন আন-নাছের বিন আব্দুল রব সান‘আনী (১১৩৫-১২০৭ হিঃ) ইসলাম জগতে নবযুগের দীপালী সদৃশ।

আলহাজ শায়খ মুহাম্মাদ আফযাল সিয়ালকোটীর ছাত্র ছিলেন আল্লামা কাযী ছানাউল্লাহ পানিপথীর দীক্ষাগুরু হিন্দ-গৌরব মীরযা মাযহার জানে জাঁবিনে মীরযা জান দেহলভী। আল্লামা সৈয়দ আব্দুল কাদের ছান‘আনী ইয়ামানের আহলেহাদীছগণের ইমাম বিখ্যাত উছূলী ও মুহাদ্দিছ সুপ্রসিদ্ধ ফিক্বহুল হাদীছ নায়লুল আওতার ও আস্সায়লুল জাববার এবং অন্যান্য বহু গ্রন্থ প্রণেতা আল্লামা মুহাম্মাদ বিন আলী শাওক্বানীর (১১৭৩-১২৫০ হিঃ) উস্তাযগণের অন্যতম। হিন্দের আহলেহাদীছ শিক্ষকগণের নিকট হইতে তাঁহার উস্তায যে প্রেরণা লাভ করিয়াছিলেন, তিনি তাঁহার উপযুক্ত অধিকারী ও ধারক ছিলেন। পরবর্তীকালে হিন্দের আহলেহাদীছ আন্দোলন তাঁহার প্রদত্ত প্রেরণার কিভাবে বলিষ্ঠ হইয়া উঠিয়াছিল কিছুক্ষণ পরেই তাহা জানা যাইবে।

হুজ্জাতুল ইসলাম আহমাদ অলিউল্লাহ দেহলভীর বিরাট শিষ্য বাহিনীর মধ্যে নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণ উল্লেখযোগ্য : তদীয় পুত্রগণ যথা শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছ (১১০১-১২৩৯ হিঃ), শাহ রফীউদ্দীন (মৃত ১২৪৯ হিঃ), শাহ আব্দুল কাদের (মৃত ২৪২ হিঃ), শাহ আব্দুল গণী (মৃত ২২৭ হিঃ), কাযী সানাউল্লাহ মাযহারী পানিপথী (মৃত ১২২৭ হিঃ), আরবী শব্দকোষ তাজুল উরূসের সঙ্কলিয়তা সৈয়দ মর্তুযা বেলগ্রামী যাবিদী (ইনি শায়খ মুহাম্মাদ ফাখের ইলাহাবাদী এবং সৈয়দ আব্দুল কাদের ছান‘আনীরও ছাত্র ছিলেন), এই সুত্রে ইমাম শাওকানীর সহাধ্যায়ী ভ্রাতা হইতেন। তিনি একশত হিজরীর পর মিছরে পরলোক গমন করেন। দেরাসাতুল লাবীব গ্রন্থ প্রণেতা মুহাম্মাদ মুঈন সিন্ধী, শায়খ মুহাম্মাদ আমিন ফুলতী (ইনি শাহ ছাহেবের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও বিশেষ ভক্ত ছিলেন, তাঁহার অনুরোধক্রমেই শাহ ছাহেব তাঁহার অমর গ্রন্থ হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগা রচনা করিয়াছিলেন, শায়খ রফিউদ্দীন মুরাদাবাদী মাওলানা খায়রুদ্দীন সুরতী, শায়খ জারুল্লাহ বিন আব্দুল রহীম লাহোরী মাদানী, সৈয়দ মুহাম্মাদ আবু সঈদ ব্রেলভী (আমীর সৈয়দ আহমাদ ব্রেলভীর পিতামহ)। মুসনাদুল হিন্দু, ইমামুল মুফাস্সিরীন শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছ দেহলভীর ছাত্রমন্ডলীর মধ্যে তদীয় কনিষ্ঠ ভ্রাতা, তারজামাতুল কুরআন শাহ রফিউদ্দীন ভ্রাতুষ্পুত্র মুজাদ্দিদে ইসলাম আল্লামা মুহাম্মাদ ইসমাঈল শহীদ (১১৯৩-১২৪৬ হিঃ), আমীরুল মুমেনীন সৈয়দ আহমাদ ব্রেলভী (১১০১-১২৪৬ হিঃ), ভাগিনে আল্লামাতুল হিন্দ শাহ মুহাম্মাদ ইসহাক (১১৯২-১২৬২ হিঃ), শাহ মুহাম্মাদ ইয়াকুব (মৃত ১২৮৩ হিঃ), শাহ আব্দুল হাই বুরহানপুরী (মৃত ১২৪৩ হিঃ), মুফতী সাদরুদ্দীন খান দেহলভী (মৃত ১২৮৫ হিঃ), মীর মাহবূব আলী দেহলভী, সৈয়দ আব্দুল খালেক, শাহ ফযলুর রহমান গঞ্জ মুয়াদাবাদী, মাওলানা খুর্রম আলী সৈয়দ, হায়দর আলী রামপুরী, মুজাহিদ, মাওলানা মুহাম্মাদ আলী রামপুরী, মুজাহিদ, আল-ফুস্সানীর প্রপৌত্র শাহ আবু সাঈদ মাওলানা সালামাতুল্লাহ বাদায়ূনী, মাওলানা সৈয়দ আওলাদ হাসান কেন্নোজী (১২১০-১২৫৩ হিঃ), শায়খ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ বানারাসী (১২০৬-১২৮৬ হিঃ), আল্লামা আসাদ আলী চট্টগ্রাম ও মাওলানা ইমামুদ্দীন নোয়াখালী হাজীপুর, সা‘আদুল্লাপুর নিবাসী বিশেষভাবে প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছেন।

মুজাদ্দিদে ইসলাম আল্লামা ইসমাঈলের সমস্ত জীবন সক্রিয় রাজনীতি চর্চা এবং জিহাদের কার্যে অতিবাহিত হইয়াছিল বলিয়া ছাত্রবৃন্দের সংখ্যা বৃদ্ধি হইতে পারে নাই। তাঁহার বাঙ্গালী ছাত্রবৃন্দের মধ্যে শহীদের বেশ্যাপল্লীর তাবলীগের সহচর মাওলানা আব্দুছ ছামাদ বাঙ্গালী ও নওশহ্রা যুদ্ধের শহীদ বরকতুল্লাহ বাঙ্গালী কোন্ স্থানের অধিবাসী ছিলেন তাহা আমি জানিতে পারি নাই। তাঁহারা ছাড়া আল্লামা শহীদের ছাত্রমন্ডলীর মধ্যে বর্ধমানের আল্লামা যিল্লুর রহীম মঙ্গলকোটী ও পাটনার ছাদিকপুরের অধিবাসী কুতুবুল মিল্লাত ওয়াদ্দীন মাওলানা বিলায়েত আলী (১২০৫-১২৬৯ হিঃ) বিন ফাতহে আলী বিন ওয়ারিছ আলী বিন মোল্লা মুহাম্মাদ সাঈদ বিন কাযী আব্দুল্লাহ সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য। মাওলানা বেলায়েত আলী বিহারের বিখ্যাত সাধক মাখদুম ইয়াইয়ার মুনায়রীর বংশধর। 

আমীর সৈয়দ আহমাদ ব্রেলভীর রাজনৈতিক নেতৃত্ব যাঁহারা স্বীকার করিয়াছিলেন এবং যাঁহারা তাঁহার মন্ত্রশিষ্য ছিলেন অথবা তাঁহার মিশনের সহিত যাঁহাদের সাক্ষাৎভাবে যোগাযোগ ছিল, তাঁহাদের সংখ্যা নির্ণয় করা দুঃসাধ্য। তাঁহার জীবনী লেখকগণ তদীয় বাঙ্গালী সহকর্মী ও শিষ্যবৃন্দের আলোচনা এবং তাঁহাদের আত্মদান কাহিনী একেবারেই উপেক্ষা করিয়াছেন বলিয়া আমি তাঁহার পশ্চিম দেশীয় সহযোগী ও অনুচরগণ অপেক্ষা বাংলার মন্ত্রশিষ্য ও অনুসারীগণের বেশী করিয়া উল্লেখ করিব। মুজাদ্দিদ আল্লামা ইসমাঈল শহীদ, আল্লামা শাহ মুহাম্মাদ ইসহাক দেহলভী, মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াকুব, মাওলানা আব্দুল হাই, মাওলানা বেলায়েত আলী, মাওলানা ইনায়েত আলী, মাওলানা মুহাম্মাদ আলী, শায়খ হাবীবুল্লাহ কান্দাহারী (মাওলানা মুহাম্মাদ দাউদ গযনভী ছাহেবের পিতামহ মাওলানা আব্দুল্লাহ গাযনভীর উস্তায) ও মাওলানা হাজী ইমদাদুল্লাহ (মাওলানা রশীদ আহমাদ গাংগোহী ও মাওলানা মাহমুদুল হাসান দেওবন্দীর মন্ত্রগুরু)। 

বাঙ্গালী শিষ্য

মাওলানা আব্দুছ ছামাদ বাঙ্গালী, বরকতুল্লাহ বাঙ্গালী (পাঞ্জাবের প্রথম জিহাদ নওশহ্রার শহীদ, ২০ শে জামাদিল আউওয়াল, ১২৪২ হিঃ), আল্লামা যিল্লুর রহীম-বর্ধমান, মাওলানা ইমামুদ্দীন-নোয়াখালী, শাহ নূর মুহাম্মাদ নিযামপুর চট্টগ্রাম (ফুরফুরার পীর শাহ সুফী আবুবকর ছাহেবের মন্ত্রগুরু শাহ সুফী ফাতহে আলী ছাহেবের উস্তায), সৈয়দ নিসার আলী উরফে তিতুমীর-২৪ পরগণা, চাঁদপুর হায়দারপুর মাওলানা মানছুরুর রহমান বিন আব্দুল্লাহ বিন নাওয়াব জামালুদ্দীন আনছারী, ঢাকা (বংশালের মরহুম মাওলানা আব্দুল জববার আনছারীর পিতা), হাফিয জামালুদ্দীন-ঢাকা, রিরুয়া, কালিগঞ্জ গাযী রঈসুদ্দীন খান-২৪ পরগণা, হাকিমপুর, মুনশী মুহাম্মাদ যামান, বর্ধমান, চৌঘরিয়া, মুনশী আমীরুদ্দীন-কলিকাতা, বেলেঘাটা, হাজী মুহাম্মাদ হুসাইন-পাবনা, মাওলানা সিরাজুদ্দীন-পাবনা, সিরাজগঞ্জ, শাহবাযপুর, হাফিয আমানতুল্লাহ, হাজী আযহারুদ্দীন, ইনামুল হক্ব, ছূফী আযীযুদ্দীন, মাওলানা আলীমুদ্দীন (কলিকাতার লোয়ার সারকুলার রোডের সঙ্গে তাঁহার নামীয় পথ সংযুক্ত আছে), মাওলানা হাজী রহীমুদ্দীন, শাহ রাসূল মুহাম্মাদ ও হাফিয জামালুদ্দীন (ইহার নামে লোয়ার চিৎপুর রোড কলিকাতায় একটি বড় মসজিদ আছে)। শেষোক্ত ব্যক্তিগণের বিশদ পরিচয় আমি উদ্ধার করিতে পারি নাই। হিজায ভ্রমণের সময়ে হাফিযুল বুখারী আল্লামা শায়খ আহমাদ বিন ইদরীস আল-হুসাইনী আল-ইদরীসী (১২১৪-১২৫৩ হিঃ), সৈয়দ হামযা মাক্কী, সৈয়দ আক্বীল মাক্কী, মুফতী শায়খ মুহাম্মাদ বিন ওমর মাক্কী, শায়খ ওমর বিন আব্দুর রাসূল মুহাদ্দিছ মাক্কী সৈয়দ আহমাদ ব্রেলভীর হস্তে দীক্ষা গ্রহণ করেন। শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছ, মুজাদ্দিদ ইসমাঈল শহীদ ও আমীর সৈয়দ আহমাদ শহীদের ছাত্র ও শিষ্যমন্ডলীর মধ্যে বেনারসের আল্লামা শায়খ আব্দুল হক্ব বিন ফাযলুল্লাহ মুহাম্মাদ মুহাদ্দিছ, পাটনার কুতুবুল ইসলাম মাওলানা বেলায়েত আলী ও ঢাকার আল্লামা শায়খ মনছুরুর রহমান তাঁহাদের আরব পরিভ্রমণের সময় আনুমানিক ১২৫০ হিজরীতে ইয়ামানে যান ও তদানীন্তন শ্রেষ্ঠতম উছূলী ও মুহাদ্দিছ এবং ইয়ামানের আহলেহাদীছগণের ইমাম মুহাম্মাদ বিন আলী শাওকানীর নিকট হাদীছ শাস্ত্র অধ্যয়ন করিয়া উচ্চ সনদ লাভ করিতে সমর্থ হন। শায়খ আব্দুল হক্বকে ইমাম শাওকানী যে সনদ প্রদান করিয়াছিলেন তাহা ‘আতহা-ফুল আকা-বীর বি ইসনাদিদ দাফা-তীর’ নামে পুস্তকাকারে মুদ্রিত ও প্রসিদ্ধ। হিন্দের আহলেহাদীছ আন্দোলন-এর সহিত ইয়ামানী প্রেরণার মণিকাঞ্চন যোগ সঙ্কীর্ণচেতাগণের আদৌ মনঃপুত হয় নাই। কোন নামকরা ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুক্বাল্লিদ আলেম এই বলিষ্ঠ সংযোগের দরুণ আহলেহাদীছ আন্দোলন-এর পরবর্তী পর্যায়কে যায়দী, নাজ্দী শী‘আ আন্দোলন বলিয়া আখ্যায়িত করিতে দ্বিধাবোধ করেন নাই এবং শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছ, সৈয়দ আহমাদ আমীর ও মুজাদ্দিদ শহীদের প্রকৃত স্থলাভিষিক্ত ও তাঁহাদের আরব মিশনের ধারকদিগকে সম্পূর্ণভাবে উড়াইয়া দিয়া আর একটি ভুঁইফোর নিষ্ক্রিয় দলের গুণগানে ও তাহাদের প্রতিষ্ঠাকল্পে সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করিয়াছেন। কিন্তু বন্ধুগণ, রাসূলুল্লাহর (ছাঃ) হাদীছের প্রতি অনুরাগ এবং আমল বিল হাদীছের অপরাধের জন্য আমরা সকল প্রকার গালাগালি প্রফুলল মনে শুনিতে প্রস্ত্তত আছি এবং ইমামুল আয়েম্মাহ শাফেঈর সুরে সুর মিলাইয়া বলিতেছি :

ان كان رفقا حب النبي محمد

فليشهد الثقلان اني رافضي!

وما اصلح ما قيل في هذا المقام

به بد مستي سزد كرمهتمت مازد مرا مافي

هنوز از باد سارينه ام سيمانه بودارد!

বিদ‘আতীর দল শাহ অলিউল্লাহ এবং তদীয় বংশধরগণের উপর যে অমানবিক অত্যাচার করিয়াছিল, তাহার ফলে তাঁহার জ্যেষ্ঠ পুত্র শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছের দৃষ্টিশক্তি শৈশব কালেই দুর্বল হইয়া গিয়াছিল। মৃত্যুর পূর্বে চক্ষু একেবারেই নষ্ট হইয়া যাওয়ায় তিনি আপন কনিষ্ঠ সহোদর শাহ রফীউদ্দীনকে স্বীয় স্থলাভিষিক্ত করেন। তাঁহার ইন্তেকালের পর তদীয় ভাগিনেয় আল্লামাতুল হিন্দ শাহ মুহাম্মাদ ইসহাক বিন শায়খ মুহাম্মাদ আফযাল ফারুক্বী মাতুলের শূন্য আসনে অধিষ্ঠিত হন। তিনি একদিকে জিহাদের রিত্রুটমেণ্ট ও সাহায্যাদি সীমান্তে প্রেরণ করার ব্যবস্থা করিতেন এবং দিল্লীতে শাহ অলিউল্লাহ ও শাহ আব্দুল আযীযের আসনে বসিয়া হাদীছ, তাফসীর ও ফিক্বহ শাস্ত্র শিক্ষাদান করিয়া সমাগত বিদ্যার্থিগণের পিপাসা নিবৃত্তি করিতেন। বালাকোটের হৃদয়বিদারক ঘটনার ঠিক ২ বৎসর পর মাওলানা বেলায়েত আলী ছাহেবের পরলোক গমনের প্রাক্কালে অর্থাৎ ১২৫৮ হিজরীতে দিল্লী ছাড়িয়া হিজাযে হিজরত করেন এবং মক্কায় মৃত্যুমুখে পতিত হন।

তাঁহার ছাত্র বাহিনীর মধ্যে কনিষ্ঠ ভ্রাতা শাহ মুহাম্মাদ ইয়াকুব মুহাজির, মুজাদ্দিদ শহীদের পুত্র শাহ মুহাম্মাদ ওমর, মাওলানা কারামত আলী ইসরাঈলী, নওয়াব কুতুবুদ্দীন খান দেহলভী (মিশকাতের উর্দূ অনুবাদক), স্যার সৈয়দ আহমাদ (আলিগড় কলেজের প্রতিষ্ঠাতা), শাহ ফযলুর রহমান গঞ্জমুরদাবাদী (ইনি শাহ আব্দুল আযীযের নিকটও বিদ্যার্জন করিয়াছিলেন), মাওলানা ইবরাহীম নগর নাহসভী, নওয়াব সাদরুদ্দীন খান (ইনি শাহ আব্দুল আযীযের ছাত্র ছিলেন), মাওলানা আহমাদ সাহরাণপুর-(বুখারীর টীকাকার), মাওলানা বাশীরদ্দীন কেন্নোজী (সাওয়াইকে ইলাহিয়া পুস্তকের রচয়িতা), মাওলানা আব্দুল্লাহ ইলাহাবাদী, শায়খ আব্দুল্লাহ সিরাজ মাক্কী, শায়খ মুহাম্মাদ বিন নাছের আল-হাযেমী এবং শায়খুল ইসলাম আল্লামা হাফিয সৈয়দ মুহাম্মাদ নাযির হুসাইন মুহাদ্দিছ দেহলভী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছ ও শাহ মুহাম্মাদ ইসহাক দেহ্লভীর অন্যতম ছাত্র নওয়াব সাদরুদ্দীন খান দেহলভী ভূপালের স্বনামধন্য নওয়াব আল্লামা সৈয়দ সিদ্দীক হাসান বিন সৈয়দ আওলাদ হাসান কেন্নোজীর উস্তায ছিলেন। শাহ ইসহাক দেহলভীর হিজরতের প্রাক্কালে আহলেহাদীছ আন্দোলন দ্বিধাবিভক্ত হইয়া পড়ে। আল্লামা শহীদের সময় পর্যন্ত হিন্দ ভূমিতে দিল্লী এই আন্দোলনের প্রধান কর্মকেন্দ্র ছিল। সক্রিয় রাজনৈতিক বিষয় সমূহের, যেমন সীমান্তে অর্থ ও সৈন্য প্রেরণের কার্যাদি যেরূপ দিল্লী হইতে সমাধা করা হইত, তেমনি আন্দোলনের ইল্মী চর্চার কেন্দ্রস্থলও দিল্লী ছিল। পরবর্তী সময়ে দিল্লীতে ইল্মী চর্চার কেন্দ্র রহিয়া গেল কিন্তু সক্রিয় রাজনীতির কেন্দ্র পাটনায় স্থানান্তুরিত হইল। কেন এরূপ ঘটিল তাহার কারণ আমি পরিষ্কারভাবে বুঝিয়া উঠিতে পারি নাই। কিন্তু ভাঙ্গনের সুচনা যে শাহ ইসহাক ছহেবের সময়েই দেখা দিয়াছিল, মাওলানা বেলায়েত আলী ছাহেবের জীবদ্দশায় তাঁহার হিজরতের ব্যাপারে তাহা স্পষ্টই জানা যাইতেছে।

কুতুবুল ইসলাম মাওলানা বেলায়েত আলী আহলেহাদীছ আন্দোলন-এর সক্রিয় রাজনেতিক শাখার (Active politics) নেতা ছিলেন। আমীর সৈয়দ আহমাদের শাহাদতের সময় তিনি হিন্দের দক্ষিণাংশে প্রচার কার্যে ব্যাপৃত ছিলেন। বালাকোটের দুর্ঘটনায় সকলেই নিরাশ হইয়া পড়িয়া©র্ছল, একমাত্র তাঁহার তীক্ষ্ণ জ্ঞান, অক্লান্ত অধ্যাবসায় ও অসাধারণ ত্যাগের ফলে আবার আন্দোলন দানা বাঁধিয়া উঠে এবং বাঙ্গালা ও হিন্দের বিভিন্ন স্থল হইতে লোকজন ও সাহায্যাদি সীমান্তে প্রেরিত হইতে আরম্ভ করে। মাওলানা বেলায়েত আলী ছাহেবের সহকর্মী ও অনুগামীগণের সংখ্যা নির্ণয় করা দুঃসাধ্য। একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা নিম্নে প্রদান করিতেছি : শাহ মুহাম্মাদ ইসহাক দেহলভী, শাহ মুহাম্মাদ ইয়াকুব দেহলভী, কনিষ্ঠ ভ্রাতা মাওলানা গাযী ইনায়েত আলী (১২০৭-১২৭৪ হিঃ), মাওলানা মুহাম্মাদ আলী রামপুরী, মাওলানা যয়নুল আবেদীন, অন্যতম ভ্রাতা মাওলানা তালিব আলী, মাওলানা ফারহত হুসাইন-পাটনা (১২২৬-১২৭৪ হিঃ), জ্যেষ্ঠপুত্র মাওলানা গাযী আব্দুল্লাহ (১২৪৬-১৩২০ হিঃ), অন্যান্য পুত্রগণ যথা হেদায়তুল্লাহ, আব্দুর রহমান ও মাওলানা আব্দুল করীম (জন্ম ১২৫৫ হিঃ), ভ্রাতুষ্টুত্র মাওলানা আব্দুর রহীম, আন্দামানে (মৃত ১২২৩-১২৯৮ হিঃ), তদীয় ভ্রাতৃগণ যথা মাওলানা ফৈয়ায আলী-সীমান্তের স্থানায় মৃত্যু (জন্ম ১২৩৩ হিঃ), মাওলানা ইয়াহ্য়া আলী-আন্দামানে মৃত্যু (১২৪৩-১৮৬৮ খৃঃ), মাওলানা আকবর আলী, মাওলানা জা‘ফার আলী, থানেশ্বর আন্দামানের কয়েদী, মাওলানা যিল্লুর রহীম-বর্ধমান, মাওলানা বদীউয্যামান-বর্ধমান (কলিকাতা মিসরীগঞ্জ আহলেহাদীছ মসজিদের মুত্বাওয়াল্লী), মাওলানা আব্দুল জাববার, কুমাশী (মিসরীগঞ্জ মসজিদের ইমাম ও আন্দোলন সম্পর্কিত গ্রন্থ সমূহের মুদ্রাকর), জনাব মুফীযুদ্দীন খান-হাকিমপুর, ২৪ পরগণা, জনাব মদন খান-ঐ, জনাব জলীল বখ্শ, বিরুয়া-ঢাকা, মৌলভী নূর মুহাম্মাদ-ঐ, মাওলানা মানছুরুর রহমান আনছারী-ঢাকা, মাওলানা আযীমুদ্দীন-ঢাকা, মাওলানা আমিরুদ্দীন, নারায়ণপুর-মালদহ (আন্দামানের কয়েদী), মুনশী আব্দুল হাদী-পাবনা, মুনশী আব্দুর রহমান খান-পাবনা, খন্দকার নাজীবুল্লাহ-কেশর, রাজশাহী, মাওলানা কারামতুল্লাহ-জামিরা, রাজশাহী, হাজী মনরিুদ্দীন-সপুরা, রাজশাহী, খাওয়াজা আহমাদ খলীফা-নদীয়া, জনাব মীয়াজান কাযী-কুমারখালি, কুষ্টিয়া (আম্বালা জেলে মৃত্যু), বখন্ড মন্ডল শহীদ-মেটিয়াবুরুজ, কলিকাতা। মাওলানা বেলায়েত আলী ছাহেবের জ্যেষ্ঠ পুত্র মাওলানা আব্দুল্লাহ ছাহেবের মৃত্যু অর্থাৎ ১৩২০ হিজরী পর্যন্ত আন্দোলনের সক্রিয় অংশের সহিত বাঙ্গালার যে সকল কৃতী সন্তান যোগাযোগ রক্ষা করিয়া আসিতেছিলেন, তাঁহাদের মধ্যে কে কে মাওলানা বিলায়েত আলী ভ্রাতৃদ্বয়ের সহিত সাক্ষাৎভাবে যুক্ত ছিলেন, তাহা আমি নির্ণয় করিতে পারি নাই। তাঁহাদের মধ্য হইতে কতিপয় নাম উল্লেখ করিতেছি :

মাওলানা ইবরাহীম উরফে আফতাব খান শহীদ-হাকিমপুর, ২৪ পরগণা, মাওলানা আব্দুল বারী ঐ, জনাব ইবরাহীম মন্ডল-দুম্কা-মুর্শিদাবাদ, মৌলভী রহীম বখশ খান-দিলালপুর, বগুড়া, মাওলানা আব্দুল হালিম ধনারুহা, রংপুর, মাওলানা আতাউল্লাহ, রংপুর, জনাব মাসঊদ খান, বগুড়া (আন্দামানের কয়েদী), জনাব আলে মুহাম্মাদ তালুকদার সন্ধ্যাবাড়ী, বগুড়া, মাওলানা আমীরুদ্দীন দৌলতপুর সিরাজগঞ্জ, মাওলানা ইবরাহীম দেলদুয়ার, মুহাজিরে মাক্কী, জনাব শাকুরুল্লাহ মিঞা, দাউদপুর-রংপুর, মৌলভী আকরম আলী খান দুয়ারী, রাজশাহী, জনাব হাজী বদরুদ্দীন বংশাল, ঢাকা, জনাব আমীর খান, কলিকাতা (আন্দামানের কয়েদী), জনাব আব্দুল হাকিম খান, হাকিমপুর-২৪ পরগণা, জনাব মুআয্যাম সর্দার-ঘোনা, সাতক্ষীরা-খুলনা (আন্দামানের কয়েদী), জনাব তাক্বী মুহাম্মাদ খান শহীদ-বগুড়া, মাওলানা আমীনুদ্দীন বরিশাল-ঢাকা, মাওলানা আব্দুল কুদ্দূস জুঙ্গীপুর, মালদহ-দিনাজপুর, মাওলানা রহীমুল্লাহ নখৈর-দিনাজপুর, মাওলানা শাহ মুহাম্মাদ, চিরির বন্দর-দিনাজপুর, মাওলানা তরীকুল্লাহ কালীতলা-মুর্শিদাবাদ, আলহাজ্জ নযীরুদ্দীন খান উরফে জীবন খান-২৪ পরগণা (মুর্শিদাবাদ নিযামতের সদরে আলা), খাওয়াজা আহমাদ খলীফা, নদীয়া, খন্দকার যবান আলী পাবনা।

মাওলানা বেলায়েত আলী ছাহেবের সময় হইতে মাওলানা আব্দুল্লাহ ছাহেবের মৃত্যু পর্যন্ত আহলেহাদীছ আন্দোলন-এর সক্রিয় বিভাগের সহিত সংযুক্ত ব্যক্তিগণের যে তালিকা আমি সংগ্রহ করিয়াছি, যাঁহাদের নাম আমি সংগ্রহ করিতে পারি নাই, তাঁহাদের সংখ্যানুপাতে এই তালিকা একান্তই অসম্পূর্ণ। যেদিন এই তালিকা পূর্ণ হইবে এবং তালিকার অন্তর্গত প্রত্যেক ব্যক্তির জীবনকথা লিখিত হইবে, সেইদিন বাঙ্গালার আহলেহাদীছ আন্দোলন-এর ইতিহাসের এক অংশ সম্পূর্ণ হইবে। আমার জীবন কালে এই কার্য সম্পন্ন হইবে, তাহার আশা নাই। ‘আহলেহাদীস আন্দোলন’ নামক পুস্তকে কিছু চেষ্টা করিয়াছি মাত্র। দুর্ভাগ্য বশতঃ বাঙ্গালার কেহই এই বিরাট কার্যে উদ্যোগী হন নাই। শিক্ষিত যুবক সন্তানরা এই পথে গবেষণা করিলে বাঙ্গালায় ইসলামী ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় রচিত হইবে।

আমীর সৈয়দ আহমাদ শহীদের অন্যতম খলীফা ও আল্লামা শহীদের ছাত্র মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুছ ছামাদ মুর্শিদাবাদী ও মাওলানা যিল্লুর রহীম মঙ্গলকোটীর শিষ্যমন্ডলীর মধ্যে রাজশাহী জামিরার মাওলানা কারামাতুল্লাহ, উক্ত যেলার কেশরহাট গ্রামের অধিবাসী মৌলভী খন্দকার আব্দুর রহমান, নদীয়ার খাওয়াজা আহমাদ খলীফা, মৌলবী মুহাম্মাদ ইবরাহীম, পোল্লাডাঙ্গা, মুর্শিদাবাদ ও মুনশী ফসিহুদ্দীন, চাঁদঘর, নদীয়া সমধিক প্রসিদ্ধ। পশ্চিমবঙ্গে মুর্শিদাবাদ যেলার নারায়ণপুর, মধ্যবঙ্গে ২৪ পরগণার হাকিমপুর আর উত্তরবঙ্গে রাজশাহী আহলেহাদীছ আন্দোলন-এর পক্ষে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। মাওলানা গাযী ইনায়েত আলী হাকিমপুরকেই তাঁহার মধ্য-বাঙ্গালার প্রচার কেন্দ্রে পরিণত করিয়া ছিলেন আর মাওলানা বেলায়েত আলীর রাজশাহী যেলায় কর্মকেন্দ্র ছিল রাজশাহী টাউনের উপকণ্ঠ সপুরা গ্রাম। যে রাজশাহীতে আজ ‘নিখিল বঙ্গ ও আসাম আহলেহাদীছ কনফারেন্স’ অধিবেশন হইতেছে। ১৮৫০ খৃষ্টাব্দে এই স্থান হইতে মাওলানা বেলায়েত আলী ছাহেবকে দুইবার ১৪৪ ধারার সাহায্যে বহিষ্কৃত করা হইয়াছিল। আল্লামাতুল হিন্দ শাহ মুহাম্মাদ ইসহাক দেহলভীর অন্যতম ছাত্র মাওলানা মুহাম্মাদ আনছারী গাযী সাহরাণপুরী আনুমানিক ১১২০ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করিয়া ১৩১০ হিজরীতে মক্কায় মৃত্যুমুখে পতিত হন। ইনি শৈশবে আমীর সৈয়দ আহমাদ ব্রেলভীর হস্তে দীক্ষিত হইয়াছিলেন। সৈয়দ ছাহেবের শাহাদতের পর মাওলানা শাহ ইসহাক ছাহেবের প্রচেষ্টায় তদীয় জামাতা মাওলানা নাছিরুদ্দীন দেহলী ছাহেবের নেতৃত্বে মুজাহেদীনের এক বিরাট বাহিনী সংগঠিত হয় এবং তাঁহারা সৈয়দ ছহেবের পুরাতন কর্মক্ষেত্র ইয়াগিস্তানের ইলাকার পরিবর্তে সিন্ধুর সীমান্তকে জিহাদের কেন্দ্র স্বরূপ নির্বাচিত করেন। মাওলানা নাছিরুদ্দীন ছাহেব শিখদের সহিত কয়েকটি খন্ড যুদ্ধে জয়লাভ করিয়া অবশেষ শাহাদত প্রাপ্ত হন। মাওলানা নাছিরুদ্দীন শহীদের সক্রিয় জিহাদ আন্দোলনের সহিত মাওলানা বেলায়েত আলী ছাহেবের কর্মতৎপরতা ও আন্দোলনের যোগাযোগের কোন সূত্র আমি অবগত হইতে পারি নাই। কিন্তু মাওলানা নাছিরুদ্দীন এবং তাঁহার প্রচেষ্টার কথা মাওলানা বেলায়েত আলী ছাহেবের দলভুক্ত লেখকগণ যে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করিয়াছেন, তাহা তাঁহদের বহি পুস্তক দেখিলেই বুঝিতে পারা যায়। মাওলানা নাছিরুদ্দীন ছহেবের শাহাদতের পরে পরেই শাহ ইসহাক ছাহেব দিল্লী ছাড়িয়া মক্কায় হিজরত করিয়া চলিয়া যান। মাওলানা মুহাম্মাদ আনছারী সিন্ধুর সীমান্তে মাওলানা নাছিরুদ্দীন শহীদের সৈন্যবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ২৪ পরগণার হাকিমপুর যেরূপ মাওলানা বেলায়েত আলী ছাহেবের কনিষ্ঠ ভ্রাতা গাযী ইনায়েত আলী ছাহেবের কর্মকেন্দ্র ছিল, তদ্রূপ মাওলানা মুহাম্মাদ ও হাকিমপুরকে আহলেহাদীছ আন্দোলন-এর প্রচার কেন্দ্ররূপে নির্বাচিত করিয়াছিলেন এবং তথায় বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হইয়াছিলেন। বাঙ্গালা দেশে কলিকাতা, ২৪ পরগণা, যশোর, খুলনা, ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর ও দিনাজপুরের অনেক স্থানে তাহার প্রচারের ফলে আহলেহদাদীছ আন্দোলন দানা বাঁধিয়া উঠে এবং তাওহীদ ও সুন্নাতের আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়।

শাহ ইসহাক ছাহেবের আর একজন ছাত্র ছিলেন ইলাহাবাদের অন্তর্গত মউ আয়েমার অধিবাসী মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ছাহেব। তিনি ব্যবহারিক সুন্নাতের জাগ্রত প্রতীক ছিলেন। তিনিও বাংলায় আহলেহাদীছ আন্দোলন-এর প্রচারকরূপে আগমন করেন। কিন্তু আন্দোলনের সক্রিয় রাজনৈতিক অংশের সহিত তাঁহার কোনরূপ সম্পর্ক ছিল না বলিয়া মনে হয় না। রাজশাহী যেলার জামিরা গ্রাম তাহার প্রধান কর্মকেন্দ্র ছিল। মাওলানা যিল্লুর রহীম মঙ্গলকোটীর অন্যতম শিষ্য মাওলানা কারামাতুল্লাহ ছাহেব তাঁহার প্রধানতম অনুচর ছিলেন। রাজশাহী, নদীয়া ও মুর্শিদাবাদের অনেক স্থানে তিনি ব্যবহারিক সুন্নাতের আদর্শকে ভিত্তি করিয়া স্বতন্ত্র জামা‘আত গঠন করিয়াছিলেন। ন্যূনধিক ১৩শত হিজরীর পর তিনি মুর্শিদাবাদের বিলবাড়িয়া নামক গ্রামে পরলোক গমন করেন।

কিন্তু আহলেহাদীছ আন্দোলন-এর ইল্মী তাবলীগ ও ব্যাপক প্রচারকার্য একজন ভাগ্যবান পুরুষসিংহ কর্তৃক যেভাবে হিন্দ ও বাংলায় সাধিত হইয়াছিল, অন্য কাহারো দ্বারা তাহার শতাংশও সম্ভবপর হয় নাই। কুতুবুল ইসলাম মাওলানা বেলায়েত আলী যেরূপ আন্দোলনের সক্রিয় রাজনৈতিক অংশের নেতা ছিলেন, শায়খুল ইসলাম আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মাদ নযীর হুসাইন দেহলভীও সেইরূপ আহলেহাদীছ আন্দোলন-এর ইল্মী তাবলীগের ইমাম ছিলেন। আমীর সৈয়দ আহমাদের আরব জিহাদের আন্দোলনকে মাওলানা বেলায়েত আলী যেরূপ পুনরায় জাগ্রত ও নতুন বলে বলিয়ান করিয়া তুলিয়াছিলেন, সেইরূপ আল্লামা ইসমাঈল শহীদও তাঁহার পূর্বপুরুষগণ আহলেহাদীছ আন্দোলন-এর যে ইল্মী আমানত রাখিয়া গিয়াছিলেন, তাহা বহন করার ভার শায়খুল ইসলাম সৈয়দ নযীর হুসাইন স্বীয় কন্ধে তুলিয়া লইয়াছিলেন। দিল্লীতে শাহ ইসহাক দেহলভীর পরিত্যক্ত মসনদে-ইলমে উপবেশন করিয়া কুরআন ও হাদীছের যে অমৃতসুধা তিনি প্রায় শতাব্দীকাল ধরিয়া বিতরণ করিয়াছিলেন, তাহার জীবন স্রোত হিন্দ বাংলার প্রতি প্রান্তকে সঞ্জীবিত করিযা সুদূর তিববত হইতে নাজদ, হিজায ও ইয়ামানের কত তকলীদ-উষর মরু কান্তার ও নিরস পার্বত্যভূমিকে যে সরস ও শস্য-শ্যামলা করিয়া তুলিয়াছিল, কে তাহার ইয়াত্তা করিবে? সৈয়দ মুহাম্মাদ নযীর হুসাইন ছাহেবের শিক্ষাগার হইতে বাহির হইয়া সহস্র সহস্র উলামা আহলেহাদীছ আন্দোলন-এর বিজয় পতাকা হস্তে ধারণ করিয়া হিন্দ ও বাংলার দিকে দিকে কুরআন-হদীছের বর্তিকা প্রজ্জ্বলিত করিয়াছিলেন। তাঁহার অদম্য উৎসাহ, প্রগাঢ় বিদ্যাবত্তা ও সুন্নাতের একনিষ্ঠ অনুরাগের ফলে হিন্দ ও বাংলার পল্লী জীবনেও আহলেহাদীছ আক্বীদা এবং কুরআন ও হাদীছের ব্যবহারিক নির্দেশাবলীর প্রতিষ্ঠা ও প্রয়োগ সহজসাধ্য হইয়া উঠিয়াছিল। পক্ষান্তরে ঠিক এই সময়ে শাহ আবদুল আযীয ছাহেবের অন্যতম ছাত্র এবং আমীর সৈয়দ আহমাদ ছাহেবের খলীফা মওলানা সৈয়দ আওলাদ হুসাইন কেন্নোজীর যশস্বী পুত্র ভূপালের স্বনামধন্য নাওয়াব আল্লামা সিদ্দীক হুসাইন ছাহেব কুরআন ও সুন্নাতের সাহিত্যিক প্রচার এবং আহলেহাদীছ আন্দোলন-এর প্রসারকল্পে তাঁহার ধনভান্ডার মুক্ত করিয়া দেন, হাদীছ ও তাফসীরের দুর্মূল্য ও দুস্প্রাপ্য গ্রন্থসমূহ সুদূর হেজায ও ইয়ামান হইতে সংগৃহীত হইয়া মুদ্রিত ও অনূদিত হইতে থাকে এবং নাম মাত্র মূল্যে দেশের সর্বত্র বিতরিত হয়।

[দ্রষ্টব্য : আল্লামা আব্দুল্লাহেল কাফী আল-কুরায়শী প্রণীত ‘আহলেহাদীছ পরিচিতি’ গ্রন্থ, পৃঃ ৭১-৮৮]



আরও