যাকাত ও ওশর আদায়ের ফযীলত
মুহাম্মাদ আবুল কালাম
যহীরুল ইসলাম 985 বার পঠিত
সর্বক্ষেত্রে ছালাতকে প্রাধান্যদান :
ছালাত ঈমানের পর সর্বোত্তম ইবাদত। মুমিনের চক্ষু শীতলকারী, আল্লাহকে স্মরণ করার শ্রেষ্ঠ উপায়। কিয়ামতের মাঠে বান্দা সর্বপ্রথম ছালাতের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে এবং এর ফলাফলের ভিত্তিতে বান্দার সফলতা অথবা ব্যর্থতা নির্ভর করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, أَوَّلُ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الصَلاَةُ ، فَإِنْ صَلَحَتْ صَلَحَ سَائِرُ عَمَلِهِ، وَإِنْ فَسَدَتْ فَسَدَ سَائِرُ عَمَلِهِ ‘ক্বিয়ামতের দিন বান্দার সর্বপ্রথম হিসাব নেওয়া হবে তার ছালাতের। ছালাতের হিসাব সঠিক হ’লে তার সমস্ত আমল সঠিক হবে। আর ছালাতের হিসাব বেঠিক হ’লে তার সমস্ত আমল বরবাদ হবে’।[1]
ক্বিয়ামতের দিন বান্দার কাছ থেকে প্রথম ছালাতের হিসাব নেওয়া হবে যদি তা পরিপূর্ণ হয় তাহ’লে সে সফলকাম হবে এবং মুক্তি পাবে। আর যদি ফরয ছালাতে কোনরূপ ত্রুটি থাকে তাহ’লে মহান রব বলবেন,انْظُرُوا هَلْ لِعَبْدِي مِنْ تَطَوُّعٍ؟ فَيُكَمَّلُ بِهَا مَا انْتَقَصَ مِنَ الْفَرِيضَةِ، ثُمَّ يَكُونُ سَائِرُ عَمَلِهِ عَلَى ذَلِكَ. وَفِي رِوَايَةٍ ثُمَّ الزَّكَاةُ مِثْلَ ذَلِكَ، ثُمَّ تُؤْخَذُ الْأَعْمَالُ عَلَى حَسَبِ ذَلِكَ. ‘দেখ! আমার বান্দার নিকট সুন্নাত ও নফল ছালাত আছে কি-না? তাহলে সেখান থেকে এনে বান্দার ফরয ছালাতের ত্রুটি পূরণ করে দেয়া হবে। এরপর এ রকম বান্দার অন্যান্য হিসাব নেয়া হবে। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, তারপর এভাবে যাকাতের হিসাব নেয়া হবে। অতঃপর অবশিষ্ট সব আমলের হিসাব একের পর এক নেয়া হবে’।[2]
নিম্নে ছালাত আদায়ের ব্যাপারে যরূরী জ্ঞাতব্য কিছু বিষয় উল্লেখ করা হ’ল-
যথা সময়ে মুমিনের ছালাত আদায় :
দিনে-রাতে নির্ধারিত সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করা অত্যাবশ্যকীয় একটি কাজ। ওয়াক্ত জেনে বুঝে সঠিক সময়ে আওয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় ব্যতীত পরপারে নাজাত পাওয়া কঠিন। মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَوْقُوتًا ‘নিশ্চয় ছালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত’ (নিসা ৪/১০৩)।
এ ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) বলেন, أَتَى جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلامُ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَقُولُ إِنِّي فَرَضْتُ عَلَى أُمَّتِكَ خمس صلوَات من وافا بِهِنَّ عَلَى وُضُوئِهِنَّ وَمَوَاقِيتِهِنَّ وَرُكُوعِهِنَّ وَسُجُودِهِنَّ فَإِنَّ لَهُ بِهِنَّ عِنْدِي عَهْدًا أَنْ أُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ وَمَنْ لَقِيَنِي قَدِ انْتَقَصَ مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا فَلَيْسَ لَهُ عَهْدٌ إِنْ شِئْتُ عَذَّبْتُهُ وَإِنْ شِئْت رَحمته) ‘জিব্রীল (আঃ) আমাকে বলল, হে মুহাম্মাদ! মহান আল্লাহ বলেন, আমি তোমার উম্মতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করেছি। যে ব্যক্তি যথাযথভাবে অযূ, রুকূ, সিজদা এবং সময়মত তা আদায় করবে, আমি তাকে জান্নাত প্রদানে অঙ্গীকারাবদ্ধ। কিন্তু যে ব্যক্তির ক্রুটিযুক্ত অবস্থায় আমার সাথে সাক্ষাৎ হবে, তার ব্যাপারে আমার কোন অঙ্গীকার নেই। আমার ইচ্ছা হলে তাকে দয়া করব এবং ইচ্ছা হলে তাকে শাস্তি দিব’।[3]
ছালাতের প্রতিটি ওয়াক্ত পরিস্কারভাবে বিধৃত হয়েছে। বিশেষকরে আছরের ছালাতের ব্যাপারে চূড়ান্ত হুশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে। হাদীছে এসেছে, عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ الَّذِى تَفُوتُهُ صَلاَةُ الْعَصْرِ كَأَنَّمَا وُتِرَ أَهْلَهُ وَمَالَهُ- আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যদি কোন ব্যক্তির আছরের ছালাত ছুটে যায়, তাহ’লে যেন তার পরিবার-পরিজন ও মাল সম্পদ সব কিছুই ধ্বংস হয়ে গেল’।[4]
যথা নিয়মে খুশূ-খুযূসহ ছালাত আদায় :
রাসূল (ছাঃ) খুশূ-খুযুর সহিত ছালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। এতদ্ব্যতীত বিনয়-নম্রচিত্তে যথাযথ রুকু-সিজদাহ এর মাধ্যমে ছালাতের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, وَصَلُّوا كَمَا رَأَيْتُمُونِى أُصَلِّى- ‘তোমরা ছালাত আদায় করো ঠিক ঐভাবে যেভাবে আমাকে আদায় করতে দেখ’।[5]
যারা রাসূল (ছাঃ)-এর হুবহু অনুসরণে ছালাত আদায়ে ব্যর্থ, তাদের ছালাত মহান আল্লাহর নিকট গ্রহণীয় নয়। হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَجُلًا دَخَلَ الْمَسْجِدَ وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ فِي نَاحِيَةِ الْمَسْجِدِ، فَصَلَّى، ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَلَيْكَ السَّلَامُ، ارْجِعْ فَصَلِّ، فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ فَرَجَعَ فَصَلَّى، ثُمَّ جَاءَ، فَسَلَّمَ، فَقَالَ: وَعَلَيْكَ السَّلَامُ، ارْجِعْ فَصَلِّ، فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ، فَقَالَ فِي الثَّالِثَةِ أَوْ فِي الَّتِي بَعْدَهَا عَلِّمْنِي يَا رَسُولَ اللَّهِ فَقَالَ: إِذَا قُمْتَ إِلَى الصَّلَاةِ فَأَسْبِغِ الْوُضُوءَ، ثُمَّ اسْتَقْبِلِ الْقِبْلَةَ فَكَبِّرْ، ثُمَّ اقْرَأْ بِمَا تَيَسَّرَ مَعَكَ مِنَ الْقُرْآنِ، ثُمَّ ارْكَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ رَاكِعًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَسْتَوِّيَ قَائِمًا، ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا، ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا وَفِي رِوَايَةٍ: ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَسْتَوِيَ قَائِمًا، ثُمَّ افْعَلْ ذَلِكَ فِي صَلَاتِكَ كُلِّهَا আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মসজিদের একপার্শ্বে উপবিষ্ট ছিলেন। সে ছালাত আদায় করে তাঁকে এসে সালাম করল। নবী (ছাঃ) বললেন, ওয়া আলাইকাস সালাম; তুমি ফিরে যাও এবং ছালাত আদায় কর। কেননা তুমি ছালাত আদায় করনি। সে ফিরে গিয়ে ছালাত আদায় করে এসে আবার সালাম করল। তিনি বললেন, ওয়া আলাইকাস সালাম’ তিনি বললেন, তুমি ফিরে যাও এবং ছালাত আদায় কর। কেননা তুমি ছালাত আদায় করনি। সে ফিরে গিয়ে ছালাত আদায় করে তাঁকে সালাম করল। তখন সে তৃতীয় বারের সময় অথবা তার পরের বারে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আপনি আমাকে ছালাত শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, যখন তুমি ছালাতে দাঁড়াবার ইচ্ছা করবে, তখন প্রথমে তুমি যথাবিধি অযূ করবে। তারপর কিবলামুখী দাঁড়িয়ে তাকবীর বলবে। তারপর কুরআন থেকে যে অংশ তোমার পক্ষে সহজ হবে, তা তিলাওয়াত করবে। তারপর তুমি রুকূ করবে প্রশান্তভাবে। তারপর মাথা তুলে ঠিক সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর তুমি সিজদাহ করবে প্রশান্তভাবে। তারপর মাথা তুলে বসবে প্রশান্তভাবে। তারপর সিজদা করবে প্রশান্তভাবে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তারপর আবার মাথা তুলে বসবে প্রশান্তভাবে। তারপর ঠিক এভাবেই তোমার ছালাতের সকল কাজ সম্পন্ন করবে’।[6]
ছালাত পরিত্যাগকারী কাফের ও মুশরিক :
রাসূল (ছাঃ) বলেন, بَيْنَ الْعَبْدِ وَبَيْنَ الْكُفْرِ تَرْكُ الصَّلاَةِ ‘বান্দার মাঝে ও কুফুরীর মাঝে পার্থক্য হল ছালাত পরিত্যাগ করা’।[7] শুধু তাই নয়, একজন মুসলিম ব্যক্তি মুমিন ও মুশরিক নির্ধারিত হয় ছালাত আদায়ের মানদন্ডে। হাদীছে এসেছে,عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَيْسَ بَيْنَ الْعَبْدِ وَالشِّرْكِ إِلاَّ تَرْكُ الصَّلاَةِ فَإِذَا تَرَكَهَا فَقَدْ أَشْرَكَ. আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেন, ‘বান্দা ও শিরকের মাঝে পার্থক্য হচ্ছে ছালাত পরিত্যাগ করা। অতএব যে ব্যক্তি ছালাত ত্যাগ করলো, সে অবশ্যই শিরক করল’।[8] জাবির (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, لَيْسَ بَيْنَ الْعَبْدِ وَالشِّرْكِ إِلَّا تَرْكُ الصَّلَاةِ ‘বান্দার মাঝে ও শিরকের মাঝে মাঝে পার্থক্য হল ছালাত পরিত্যাগ করা’।[9]
যথাযথভাবে অযূ করা :
অযূ ব্যতীত ছালাত সিদ্ধ হয় না। ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি,لَا تُقْبَلُ صَلَاةٌ بِغَيْرِ طُهُورٍ وَلَا صَدَقَةٌ مِنْ غُلُولٍ، ‘পবিত্রতা (অযূ) ব্যতীত ছালাত কবুল হয় না এবং খিয়ানতের সম্পদ থেকে ছাদাক্বাহ কবুল হয় না’।[10]
অযূ সুন্দর হওয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ)-এর বর্ণনা, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, لَتُنْتَهَكَنَّ الْأَصَابِعُ بِالطَّهُورِ أَوْ لَتَنْتَهِكَنَّهَا النَّارُ ‘তোমরা অবশ্যই তোমাদের আঙ্গুলির ফাঁকে পানি (অযূর পানি) পৌঁছাবে, খেলাল করবে, অন্যথায় তোমাদের আঙ্গুলকে আগুন স্পর্শ করবে’।[11]
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, কোন মুসলিম বান্দা অযূর সময় যখন মুখমন্ডল ধুয়ে ফেলে তখন তার চোখ দিয়ে অর্জিত পাপ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায়। যখন সে দুই হাত ধৌত করে তখন তার দুই হাতের স্পর্শে মাধ্যমে অর্জিত পাপ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায়। অতঃপর যখন সে তার পা দু’খানা ধৌত করে তখন তার দুই পা দিয়ে হাটার মাধ্যমে অর্জিত পাপ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায়। এভাবে সে সকল পাপ থেকে মুক্ত হয়ে যায়’।[12] তিনি আরোও বলেন,حَتَّى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ أَظْفَارِهِ- ‘এমন কি তার নখের নীচের পাপও বের হয়ে যায়’।[13] অন্য বর্ণনায় আছে, وَذَلِكَ الدَّهْرَ كُلَّهُ ‘আর এরূপ সারা বছরই হ’তে থাকে’।[14]
অযূর দো‘আ পাঠে জান্নাত :
উকবা ইবনে আমির (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন,
مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ يَتَوَضَّأُ فَيُحْسِنُ الْوُضُوءَ، ثُمَّ يَقُومُ فَيَرْكَعُ رَكْعَتَيْنِ: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، إِلَّا فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةُ، يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ-
‘তোমাদের মধ্যকার কেউ যদি উত্তম রূপে অযূ করার পর বলে, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ) তার বানদা ও রাসূল। তাহলে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হয়। সে ইচ্ছা করলে এর যে কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে’।[15]
ছালাতের উদ্দেশ্যে প্রতি কদমের প্রতিদান :
সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব (রহঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, জনৈক আনছারী ছাহাবীর মৃত্যু আসন্ন হলে তিনি বলেন, আমি তোমাদের নিকট কেবল ছওয়াব লাভের আশায় একটি হাদীছ বর্ণনা করব। আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি তোমাদের কেউ যখন উত্তমরূপে অযূ করে ছালাতের উদ্দেশ্যে বের হয় তখন সে তার ডান পা উঠাতেই মহান আল্লাহ তার জন্য একটি ছওয়াব লিখে দেন। এরপর বাম পা ফেলার সাথে সাথেই মহা সম্মানিত আল্লাহ তার একটি গোনাহ ক্ষমা করে দেন। এখন তোমাদের ইচ্ছা হলে মসজিদের নিকটে থাকবে অথবা দূরে। অতঃপর সে যখন মসজিদে গিয়ে জামা‘আতে ছালাত আদায় করে তখন তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। যদি জামা‘আত শুরু হয়ে যাওয়ার পর মসজিদে উপস্থিত হয় এবং অবশিষ্ট ছালাতে শামিল হয়ে ছালাতের ছুটে যাওয়া অংশ পূর্ণ করে তা হলেও তাকে অনুরূপ দেওয়া হয়। আর যদি সে জামা‘আত সমাপ্ত দেখে একাকী আদায় করে নেয়, তবুও তাকে ঐরূপ দেওয়া হয়’।[16]
কারণ হ’ল ঐ ব্যক্তি আসলেই আন্তরিকভাবে কোন কারণ বশতঃ জামা‘আতে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। আসলে তার অন্তর মসজিদে জামা‘আতের সাথে বাঁধা ছিল।
এ সম্পর্কে অন্য একটি হাদীছে গুরুত্বপূর্ণ ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে দিন আল্লাহর ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না সেদিন সাত শ্রেণীর ব্যক্তিকে আল্লাহ সেই ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। এই সাত শ্রেণীর মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তি হ’লوَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ فِى الْمَسَاجِدِ ‘ঐ ব্যক্তি যার অন্তর সম্পর্ক সর্বদা মসজিদের সাথে থাকে’।[17]
ছালাতে গমনকারী মৃত ব্যক্তি জান্নাতী :
হযরত আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ৬টি কাজ এমন রয়েছে যে, যার কোন একটি করা অবস্থায় একজন ব্যক্তি মারা গেলে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর যামিনদার- (১) যে মুজাহিদ আল্লাহর রাস্তায় তারই সন্তুষ্টির জন্য বের হয় এবং শহীদ হয়। (২) যে জানাযার ছালাত আদায় করতে যায় এবং মারা যায়। (৩) যে কোন রোগীকে দেখতে যায় এবং মারা যায়। (৪) যে সুন্দরভাবে অযূ করে মসজিদে ছালাতের উদ্দেশ্য বের হয় এবং মারা যায়। (৫) যে ইমাম বা নেতার নিকটে আসে তাকে সম্মান জানানোর জন্য এবং মারা যায়। (৬) যে বাড়িতে অবস্থান করে, তার কোন ভাইয়ের গীবত করে না, গালি-গালাজের মাধ্যমে রাগান্বিত করে না, তারা গোপন বিষয়ের অনুসন্ধান করে না এবং এমতাবস্থায় মারা যায়’।[18]
উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে, ছালাত এমনই একটি এবাদত যা সম্পাদনের জন্য অযূ যেমন বহুমূখী কল্যাণ বয়ে আনে ঠিক তেমনি ছালাত সম্পাদনের উদ্দেশ্যে মসজিদে গমন নানামুখী কল্যাণে পরিপূর্ণ। এছাড়া বিশেষ কারণে (যেমন: অন্ধকারে, ভীতিকর পরিবেশে, কষ্টকর পরিবেশে, দূর দূরান্তের পথে ইত্যাদি) আরোও অধিক ছওয়াব রয়েছে।
আমীন বলায় গুনাহ মাফ :
স্বশব্দে ‘আমীন’ বলার ফযীলত সম্পর্কে নবী (ছাঃ) বলেছেন, إِذَا أَمَّنَ الإِمَامُ فَأَمِّنُوا فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ تَأْمِينُهُ تَأْمِينَ الْمَلاَئِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ‘ইমাম যখন আমীন বলবে তখন তোমরাও আমীন বলবে। কেননা যার আমীন বলা ফেরেশতাগণের আমীন বলার সাথে সাথে হবে, তার পূর্বেকার গোনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে’।[19]
রুকুর দো‘আ পাপ মোচনকারী :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, إِذَا قَالَ الإِمَامُ سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ فَقُولُوا اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ قَوْلُهُ قَوْلَ الْمَلاَئِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ‘যখন ‘ইমাম সামিআল্লাহ হুলিমান হামিদাহ’ বলবে তখন তোমরা ‘আল্লাহুম্মা রববানা লাকাল হামদ’ বলবে। কেননা যার এই উক্তি ফেরেশ্তার উক্তির সঙ্গে একই সাথে উচ্চারিত হয়, তার পূর্বেকার সকল গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়’।[20]
সাথে সাথে ‘রববানা ওয়া লাকাল হামদ হামদান কাছীরান ত্বায়্যিবান মুবারাকান ফীহি’ বলার ফযীলত অত্যধিক। এই দো‘আর নেকী লিপিবদ্ধ করতে ফেরেশতারা (৩০ জনের অধিক) প্রতিযোগিতা করে মর্মে ছহীহ হাদীছ রয়েছে’।[21]
রুকূর দো‘আয় পাপ মোচন :
আল্লাহ সুবাহানাহু তা‘আলার নির্দেশ, وَارْكَعُوا مَعَ الرَّاكِعِينَ ‘তোমরা রুকুকারীদের সাথে রুকু কর (বাক্বারাহ ২/৪৩)। মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন, يَا مَرْيَمُ اقْنُتِي لِرَبِّكِ وَاسْجُدِي وَارْكَعِي مَعَ الرَّاكِعِينَ হে মারিয়াম! তোমার প্রতিপালকের ইবাদতে রত হও এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ-সিজদা কর (আলে ইমরান৩/৪৩)। এর মাধ্যমে মর্যাদা বৃদ্ধি পায় ও পাপ ক্ষমা করা হয়। আবু যার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি ‘যে ব্যক্তি একবার রুকু করে অথবা একবার সিজদাহ করে, এর দ্বারা তার মর্যাদা একধাপ বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।[22]
সিজদার মাধ্যমে গুনাহ মাফ :
শয়তান যখন কোন বনু আদমকে সিজদা করতে দেখে, তখন সে কেঁদে ফেলে। কারণ আদম (আঃ)-কে সিজদা করার আদেশ অমান্য করেই সে শয়তানে পরিণত হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, كَلَّا لَا تُطِعْهُ وَاسْجُدْ وَاقْتَرِب ‘কখনোই না। তুমি তার কথা মানবে না। তুমি সিজদা কর এবং আল্লাহর নৈকট্য তালাশ কর’ (আলাক ৯৬/১৯)।
রবী‘আহ ইবনু কাব আল-আসলামী (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে জান্নাতে থাকার ইচ্ছা পোষণ করলে তিনি তাকে অধিক সিজদা করার ব্যাপারে নছীহত করেন। হাদীছে এসেছে, كُنْتُ أَبِيتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم آتِيهِ بِوَضُوئِهِ وَبِحَاجَتِهِ فَقَالَ :سَلْنِى. فَقُلْتُ : مُرَافَقَتَكَ فِى الْجَنَّةِ. قَالَ :أَوَغَيْرَ ذَلِكَ. قُلْتُ : هُوَ ذَاكَ. قَالَ : فَأَعِنِّى عَلَى نَفْسِكَ بِكَثْرَةِ السُّجُودِ. ‘আমি যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে রাত্রি যাপন করতাম তখন তার অযূর পানি ও অন্যান্য প্রয়োজন পূর্ণ করে দিতাম। তিনি বললেন, তুমি আমার কাছে কিছু চাও। আমি বললাম, জান্নাতে আপনার সান্নিধ্যে থাকতে চাই। তিনি বললেন, এছাড়া অন্য কিছু চাও। আমি বললাম, এটাই চাই। তিনি বললেন, তাহ’লে তুমি অধিক পরিমাণে সিজদা করে (নফল ছালাত) তোমার নিজের স্বার্থে আমাকে সাহায্য কর’।[23] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অন্যত্র বলেন, مَا مِنْ عَبْدٍ يَسْجُدُ لِلَّهِ سَجْدَةً إِلاَّ كَتَبَ اللَّهُ لَهُ بِهَا حَسَنَةً وَمَحَا عَنْهُ بِهَا سَيِّئَةً وَرَفَعَ لَهُ بِهَا دَرَجَةً فَاسْتَكْثِرُوا مِنَ السُّجُودِ ‘যে কোন বান্দা আল্লাহর জন্য একটি সিজদাহ করলেই আল্লাহ এর বিনিময়ে তার একধাপ মর্যাদা বাড়িয়ে দেন এবং তার একটি গুনাহ ক্ষমা করে দেন’।[24]
সুন্নাত ছালাত আদায়ে জান্নাত :
দিনে-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সর্বমোট ১৭ রাকাত ছালাত হ’ল ফরয। এর সাথে বিভিন্ন ওয়াক্তে নির্দিষ্ট সংখ্যক সুন্নাত ছালাত রয়েছে। হাদীছে এসেছে, عَنْ أُمِّ حَبِيبَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ صَلَّى ثِنْتَىْ عَشْرَةَ رَكْعَةً فِي يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ- উম্মু হাবিবা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যাক্তি দিবা রাত্রে বার রাক‘আত (সুন্নাতে মুওযাক্কাদার) ছালাত আদায় করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একাটি ঘর বানাবেন’।[25]
অপর হাদীছে আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ ثَابَرَ عَلَى اثْنَتَىْ عَشْرَةَ رَكْعَةً فِي الْيَوْمِ وَاللَّيْلَةِ دَخَلَ الْجَنَّةَ أَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعِشَاءِ وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الْفَجْرِ - ‘যে ব্যক্তি দিনে-রাতে ১২ রাকাত আদায়ে অভ্যস্ত সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যোহরের পূর্বে চার এবং উহার পরে দুই, মাগরিবের পরে দুই রাকাত ও এশার পরে দুই রাকাত আর ফজরের পূর্বে দুই রাকাত।[26]
নফল ছালাত কল্যাণের দরজা :
মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে মহান আল্লাহ রাতের জাহাজ্জুদ ছালাতে ছালাতের ব্যাপারে আদেশ করে বলেন, أَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوكِ الشَّمْسِ إِلَى غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْآنَ الْفَجْرِ إِنَّ قُرْآنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُودًا ‘সূর্য অপরাহ্নে ঢলে পড়ার পর থেকে রাত্রির অন্ধকার পর্যন্ত তুমি ছালাত কায়েম কর এবং ফজরের ছালাত আদায় কর। নিশ্চয়ই ফজরের ছালাত (রাত্রি ও দিবসের ফেরেশতাগণের মাধ্যমে) সাক্ষ্যপ্রাপ্ত হয়’ (বনু ইসরাইল ১৭/৭৮)।
এজন্য রাসূল (ছাঃ)-এর রাতের ছালাত আদায়ে তাঁর পদযুগল ফুলে যেত। মা আয়েশা (রাঃ) তাঁর কষ্ট সহ্য করতে না পেরে একদিন বলেই ফেললেন, আপনার তো আগের পরের সমস্ত গোনাহ মহান আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেন। তবুও আপনি এত কষ্ট করেন? তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন, আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হব না?
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَطَمَعًا وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ- فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ‘যারা (রাত্রির বেলায় শয্যাত্যাগ করে (তাহাজ্জুদের ছালাতে) তাদের প্রভুকে ডাকে ভয় ও আকাংখার সাথে এবং আমরা তাদের যে রিযিক দিয়েছি, তা থেকে (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে। কেউ জানেনা তাদের জন্য চক্ষু শীতলকারী কি কি বস্ত্ত লুক্কায়িত রয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরূপ (সাজদাহ ৩২/১৬-১৭)।
মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি কোন এক সফরে নবী (ছাঃ)-এর সাথে ছিলাম। একদিন যেতে যেতে আমি তার নিকটবর্তী হ’লাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) এমন একটি কাজ সম্পর্কে আমাকে জানিয়ে দিন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে এবং জাহান্নাম হ’তে দূরে রাখবে। তিনি বললেন, তুমি তো আমাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশ্ন করেছো। তবে সেই ব্যক্তির জন্য এ ব্যাপারটা অতি সহজ যে ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তা‘আলা তা সহজ করে দেন। তুমি আল্লাহ তা‘আলার ইবাদাত করবে, কোন কিছুকে তার সাথে শরীক করবে না, ছালাত প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত দিবে, রামাযানের ছিয়াম রাখবে এবং বায়তুল্লাহর হজ্জ করবে। তিনি আরো বললেন, আমি কি তোমাকে কল্যাণের দরজাসমূহ সম্পর্কে বলে দিব না? রোযা হ’ল ঢালস্বরূপ, দান-খায়রাত গুনাহসমূহ বিলীন করে দেয়, যেমনিভাবে পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয় এবং কোন ব্যক্তির মধ্যরাতের নামায আদায় করা। তারপর তিনি এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেন, ‘তাদের দেহপাশ বিছানা থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং তারা তাদের প্রভুকে ডাকে আশায় ও ভয়ে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দান করেছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। কেউই জানে না তাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর কি লুকিয়ে রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কারস্বরূপ’ (সাজদাহ ৩২/১৬, ১৭)।
তিনি আবার বলেন, আমি কি সমস্ত কাজের মূল স্তম্ভ ও সর্বোচ্চ শিখর সম্পর্কে তোমাকে অবহিত করবো না? আমি বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, সকল কাজের মূল হ’ল ইসলাম, স্তম্ভ হ’ল ছালাত এবং সর্বোচ্চ শিখর হ’ল জিহাদ। তিনি আরো বললেন? আমি কি এসব কিছুর সার সম্পর্কে তোমাকে বলব না? আমি বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি তার জিহবা ধরে বললেন, এটা সংযত রাখ’।[27]
শেষকথা :
ফরয, নফল সকল ছালাত যথাযথভাবে আদায় করা আম্বিয়ায়ে কেরাম, শুহাদা, ছলেহীন ও মুমিনদের অনন্য ভূষণ এবং চিরন্তন বৈশিষ্ট্য ছিল। ছালাত সকল মুমিনের জন্য মর্যাদার প্রতীক, মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের একমাত্র উপায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য ৪০ দিন তাকবীরে ঊলা সহ জামা‘আতে ছালাত আদায় করল, তার জন্য দু’টি মুক্তি লেখা হয়। একটি হ’ল জাহান্নাম হ’তে মুক্তি। অপরটি হ’ল নিফাক্ব হ’তে মুক্তি।[28] ইবনু হাজার বলেন, ‘তাকবীরে ঊলা’ (التكبيرة الأولى) পাওয়া সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ। সালাফে ছালেহীন ইমামের সাথে প্রথম তাকবীর না পেলে ৩ দিন দুঃখ প্রকাশ করতেন। আর জামা‘আত ছুটে গেলে ৭ দিন দুঃখ প্রকাশ করতেন’।[29]
মহান আল্লাহর নিকট একান্ত ফরিয়াদ, তিনি যেন আমাদের এই সর্বোত্তম ইবাদত যথাযথভাবে আদায়ের তাওফীক দান করেন এবং ছালাত কায়েমকারী হিসাবে মৃত্যু দিয়ে জান্নাত নছীব করুন- আমীন!
যহীরুল ইসলাম
লেখক : দাওরায়ে হাদীছ, ১ম বর্ষ, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী নওদাপাড়া, রাজশাহী।
[1].আবুদাঊদ হা/৮৬৪-৬৬; নাসাঈ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১৩৩০।
[2].তিরমিযী হা/৪১৩; আবুদাঊদ হা/৮৬৪; মিশকাত হা/১৩৩০।
[3].আবুদাঊদ হা/৪৩০; সিলসিলাহ ছহীহাহ হা/৮৪২।
[4].বুখারী হা/৫৫২; মুসলিম হা/৬২৬।
[5].বুখারী হা/৬৩১, ৬০০৮, ৭২৪৬; আধুনিক প্রকাশনী হা/৬৭৩৯; ই.ফা.বা. হা/৬৭৫২।
[6].বুখারী হা/৭৫৭; মুসলিম হা/৩৯৭; মিশকাত হা/৭৯০।
[7].আবুদাউদ হা/৪৬৭৮; মিশকাত হা/৫৬৯।
[8].ইবনু মাজাহ হা/১০৮০; ছহীহ আত-তারগীব হা/৫৬৫।
[9].ফাযায়িলে আমল পৃ:২১০ .ইবনু মাজাহ হা/ ১০৮০।
[10].বুখারী হা/১৩৫; মুসলিম (ই.ফা.বা.) হা/৪২৮।
[11].হাদীছ তাহক্বীকে আলবানী (রহঃ) মত পরিবর্তন: সর্বশেষ সিদ্ধান্ত ও কারণ বিশ্লেষণ। পৃ:৭৫, হাদীছ নং ১০; মু‘জামুল আওসাত্ব হা/২৬৭৪।
[12].মুসলিম হা/৬০০।
[13].মুসলিম হা/৬০১।
[14].মুসলিম হা/৫৬৫; মিশকাত হা/২৮৬।
[15].মুসলিম হা/৫৭৬; আবু দাঊদ হা/১৬৯; আহমাদ হা/১৭৩১৪।
[16].আবুদাঊদ হা/৫৬৩।
[17].বুখারী হা/ ১৪২৩; মুসলিম হা/১০৩১।
[18].মুস্তাদরাক হাকেম হা/২৪৫০; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৩৮৪; মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৩৮২২।
[19].বুখারী হা/৭৩৮; মুসলিম হা/৯৪২; আবু দাউদ হা/ ৯৩৬; তিরমিযী হা/২৫০।
[20].বুখারী হা/৭৯৬; মুসলিম হা/৪০৯; আবু দাউদ হা/ ৮৪৮; নাসাঈ হা/১০৬৩; মিশকাত হা/৮৭৪।
[21]. বুখারী হা/৭৯৯; মুসলিম হা/৬০০; মিশকাত হা/৮৭৭।
[22].আহমাদ হা/২১৩০৮; সহীহ আত-তারগীব হা/৩৮৫।
[23].মুসলিম হা/৪৮৯।
[24].ইবনু মাজাহ হা/১৪২৩।
[25].নাসাঈ হা/ ১৮১২ এবং ১৮১৩;-১৮১৭ পর্যন্ত।
[26].নাসাঈ হা/১৭৯৪-১৮০২।
[27].তিরমিযী হা/২৬১৬; ইবনু মাজাহা হা/৩৯৭৩; আহমাদ হা/২১৫১১।
[28]. তিরমিযী হা/২৪১; মিশকাত হা/১১৪৪।
[29]. মির‘আত ৪/১০২ (ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য পৃ.৪৩-৪৪)।