পৃথিবী কাঁপানো ভয়াবহ ভূমিকম্প
আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মুহাম্মাদ আবু হুরায়রা ছিফাত 1065 বার পঠিত
ভূমিকা : সাম্প্রতিক সময়ে ই-কমার্সের জগতে সবচেয়ে বড় ধাক্কা হ’ল ইভ্যালি ট্রাজেডি। সারা দেশব্যাপী ইভ্যালি নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বয়ে গেল। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে অনলাইন ভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে ‘ইভ্যালি’র যাত্রা শুরু হয়। মোটরসাইকেল, গাড়ি, মোবাইল ফোন, ঘরের সরঞ্জাম ও আসবাবপত্র ইত্যাদির মতো জিনিসগুলো তারা বিক্রয় করে থাকে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত ইভ্যালির গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৪৪ লাখ ৮৫ হাজার। ব্যবসার শুরুতেই ‘সাইক্লোন’, ‘আর্থকুয়েক’ ইত্যাদি নামে ১০০ থেকে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাকের মতো লোভনীয় সব অফার দেওয়ার মাধ্যমে অল্প সময়ে তারা এই বিপুল পরিমাণ গ্রাহক সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে সেলিব্রেটি ও বিনোদন তারকাদের প্রচারণার মাধ্যমে ইভ্যালির পরিচিতি তুঙ্গে ওঠে। কিন্তু কিছুদিন যেতেই শুরু হয় অনিয়ম। ৪৫ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহের প্রতিশ্রুতি থাকলেও নানা অজুহাতে তারা মাসের পর মাস ক্রেতাদের পণ্য সরবরাহে বিরত থাকে। অনেকে আবার টাকা ফেরত চেয়েও টাকা ফেরত পাননি। গ্রাহকদের অনেকে অভিযোগ করে, ইভ্যালির সাথে যোগাযোগ করে কোন সাড়া তারা পাচ্ছেন না এবং প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ও তারা বন্ধ পাচ্ছেন। এভাবে শুরু হয় গ্রাহক অসন্তোষ। কিন্তু ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মাদ রাসেলকে প্রায়ই ফেসবুক লাইভে এসে গ্রাহকদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করতে দেখা যায়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে ইভ্যালির বিরুদ্ধে হাযারেরও বেশী অভিযোগ জমা পড়ে। পণ্যমূল্য বাবদ গ্রাহকদের কাছ থেকে তারা ২১৪ কোটি টাকা অগ্রীম গ্রহণ করে রেখেছে। অন্যদিকে যেসব কোম্পানির কাছ থেকে ইভ্যালি পণ্য কিনেছে, তাদের কাছেও ইভ্যালির আরো বকেয়া রয়েছে ১৯০ কোটি টাকা। এমতাবস্থায় এ বছরের জুন মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি তদন্ত দল ইভ্যালির কার্যক্রমের কিছু অনিয়ম চিহ্নিত করে প্রতিবেদন পেশ করে এবং গত ১৭ জুলাই ২০২১ আদালত ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও সিইও-র দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারী করে। অন্যদিকে অভিযান পরিচালনা করার পর তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, বর্তমানে পণ্য সরবরাহকারী এবং গ্রাহকদের কাছে ইভ্যালির মোট দেনার পরিমাণ হাযার কোটি টাকা, যেখানে ব্যাংক হিসাবে রয়েছে মাত্র ৩০ লক্ষ টাকা। বিদেশী বা দেশী বিনিয়োগ এবং কোম্পানীর ৩ বছর পূর্তিতে শেয়ারবাজারে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে এ বিপুল পরিমাণ দেনা পরিশোধ করার পরিকল্পনা ছিল ইভ্যালির। আর এক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে কোম্পানিকে দেউলিয়া ঘোষণার পরিকল্পনা ছিল কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা রাসেলের’।[1]
কিন্তু তার আগেই উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ঘটনার সূত্রপাত ঘটে যখন ১৫ই সেপ্টেম্বর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ইভ্যালির বিরুদ্ধে ঢাকার গুলশান থানায় প্রতারণার মামলা দায়ের করেন একজন গ্রাহক। এর আগে চলতি বছরে সিরাজগঞ্জেও ইভ্যালির বিরুদ্ধে একটি মাললা দায়ের করা হয়। পরদিন ১৬ই সেপ্টেম্বর কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মাদ রাসেলের মোহাম্মদপুরের বাড়িতে র¨vব অভিযান চালায় এবং ঐ দিন বিকেল ৫টা নাগাদ মোহাম্মদ রাসেল ও (কোম্পানির চেয়ারম্যান) তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে আটক করে’।[2]
তাদের গ্রেফতারের পর ইভ্যালির গ্রাহকদের একাংশ আবার তাদের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে এই আশায় যে, মুক্তি পেলে হয়তো তারা তাদের পণ্য ও পাওনা টাকা ফেরত পাবেন।
ইভ্যালির আধ্যাত্মিক গুরু ও রাসেল :
ইভ্যালি ও এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা পরিচালনার পদ্ধতি ও তার ভ্রান্তি নিয়ে বিশ্লেষকরা বিভিন্ন মন্তব্য পেশ করেছেন। আসলে ইভ্যালি যেভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছিল তাকে একাডেমিক ভাষায় বলা হয় ‘পঞ্জি মডেল’। চার্লস পঞ্জি ছিলেন এর আবিষ্কর্তা, যার পুরো নাম পিয়েত্রো জিওভানি গুজলিয়েলমো তেবালদো পঞ্জি। ফাঁকিবাজির সমস্ত দায় প্রথমত ‘ফিন্যান্সিয়াল জিনিয়াস’ এই চার্লস পঞ্জিকেই দিতে হয়। কেননা তিনিই মানুষকে লোভের জালে আটকিয়ে আর্থিক জালিয়াতির হোতা পঞ্জি বা পুঞ্জি স্কিমের প্রতিষ্ঠাতা।
চার্লস পঞ্জির জন্ম ১৮৮২ সালের ৩রা মার্চ, ইতালির লুগোতে। মাত্র আড়াই ডলার পকেটে নিয়ে চার্লস পঞ্জি ১৯০৩ সালের ১৫ই নভেম্বর বোস্টনে এসেছিলেন। কিন্তু ভাগ্য পরিবর্তন করতে না পেরে কানাডায় চলে গিয়ে আবার যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে এসেছিলেন ১৯১১ সালে। শুরুতে অবৈধ ইতালিয়ানদের সীমান্ত পার করার কাজ করতেন। এ জন্য দুই মাসের জেলও খাটেন। এরপরই আর্থিক খাতে নতুন ইতিহাসের জন্ম দেন চার্লস পঞ্জি। মূলত ইন্টারন্যাশনাল রিপ্লাই কুপন (আইআরসি) বা একধরনের ডাক মাশুল দিয়েই তার প্রলোভনের ব্যবসা শুরু হয়েছিল। ঘোষণা দেন যে কেউ তার ব্যবসায় বিনিয়োগ করলে ৯০ দিনের মধ্যে মূলধন দ্বিগুণ হারে ফেরত দেওয়া হবে। একপর্যায়ে তিনি ‘সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কোম্পানী’ নামে একটি কোম্পানীও খুলেছিলেন। এ জন্য তিনি অসংখ্য এজেন্ট নিয়োগ দেন। এজেন্টরা বিনিয়োগ আনতে পারলে প্রতি ডলারে আকর্ষণীয় কমিশন দেওয়া হত। এ সময় মানুষজন সর্বস্ব বিনিয়োগ করে, এমনকি মুনাফা না তুলে পুনর্বিনিয়োগও করে।
পঞ্জির এই ব্যবসা আসলে লাভজনক ছিল না। তবে যেহেতু অর্থ আসছিল, তাই কেউ কেউ অর্থ ফেরত পাচ্ছিলেন। ১০ জনের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে একজনকে ফেরত দেওয়ার এই পদ্ধতির মাধ্যমে রাজার হালেই দিন কাটাচ্ছিলেন চার্লস পঞ্জি। তবে কিছু মানুষের মধ্যে সন্দেহ ঢুকে পড়ে। বোস্টন পোস্ট পত্রিকা শুরুতে পক্ষে থাকলেও তারাই আবার পঞ্জির ব্যবসার ধরন নিয়ে প্রশ্ন তোলে। সরকারও তদন্ত চালায়। এরপরই শুরু হয় পঞ্জির ব্যবসায় ধস। চার্লস পঞ্জি নিজেই পুলিশের কাছে ধরা দেন। কিন্তু শেষ জীবনটি তাঁর ভালো যায়নি। অর্থকষ্ট তো ছিলই, একসময় অন্ধও হয়ে যান। পক্ষাঘাতগ্রস্ত অবস্থায় ১৯৪৯ সালের ১৮ই জানুয়ারী মারা যান তিনি।
পঞ্জির মত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির শুরু ২০১৮ সালের ১৬ই ডিসেম্বর। ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মুহাম্মাদ রাসেল ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ডায়াপার ব্যবসা শুরু করেছিলেন। তারপর শুরু করেন ইভ্যালি। আর দুই বছরের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটি দেশের সবচেয়ে ই-কমার্স প্লাটফর্মে পরিণত হয়। ইভ্যালির সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ছিল ই-কমার্সকে শহরের বাইরে গ্রামগঞ্জে নিয়ে যাওয়া।
অতি দ্রুত ইভ্যালির গ্রাহকসংখ্যা বৃদ্ধির রহস্য কী? মূলত ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক তৈরী করার কাজটিই করেছে ইভ্যালি। এতে মাঝপথের খরচটা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়, কম দামেও পণ্য দেওয়া যায়। গ্রাহক বাড়াতে অবশ্য অতিরিক্ত কম দামেই পণ্য বিক্রি করেছে ইভ্যালি। আর এই ‘ডিসকাউন্ট’-এর প্রলোভনই ছিল বিপুলসংখ্যক গ্রাহক তৈরীর মূল সূত্র।
আসলে ইভ্যালির ব্যবসা মডেলটি ছিল ‘মানুষের লোভ’। আর এখানেই ইভ্যালির মিল অন্যান্য পঞ্জি স্কিমের সঙ্গে। প্রলোভন দেখিয়ে বহু মানুষের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে অল্প কয়েকজনকে দেওয়ার ব্যবসা আদতে পঞ্জি স্কিমের বেশী কিছু নয়।
মুহাম্মাদ রাসেল শুরু থেকেই ব্যবসা মডেল হিসাবে বিশ্বের দুই প্রধান ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আমাজন ও আলিবাবার কথা বলে আসছিলেন। কিন্তু আদতে তিনি অনুসরণ করেছেন চীনের কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পিনডুয়োডুয়ো। পিনডুয়োডুয়ো মূলত সোশ্যাল কমার্স। সামাজিক মাধ্যমে গ্রুপ তৈরী করে পণ্য বিক্রির মডেলটা তাদেরই।
মুহাম্মাদ রাসেল পিনডুয়োডুয়োকে অনুসরণ করেছেন ঠিকই, তবে সেবার মান বৃদ্ধি বা গ্রাহক সন্তুষ্টির দিকে কোন নযর ছিল না। বরং পুরো আগ্রহ ছিল যেনতেনভাবে গ্রাহকসংখ্যা বাড়ানোর দিকে। এ জন্য ‘ডিসকাউন্ট’-এর নামে নানা প্রলোভন দেখান তিনি। এতে বিপুলসংখ্যক গ্রাহক পেলেও তাদের সামলানোর রীতি তিনি কখনোই চর্চা করেননি।
আর এসবের কোনোটির ক্ষেত্রেই গ্রাহক, ভোক্তা ও সদস্যরা তাদের টাকা ফেরত পান নি। কোনো কোনো ভুক্তভোগী আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছেন। তবে অর্থ আত্মসাতের তালিকায় ইভ্যালি নতুন নয়। এই তালিকা অনেক দীর্ঘ। যুবক (যুব কর্মসংস্থান সোসাইটি), ই-কমার্স, MLM কোম্পানী ও সমবায় সমিতি সব মিলিয়ে গত ১৫ বছরে ২৮০টি প্রতিষ্ঠান মানুষের প্রায় ২১ হাযার কোটি টাকা লোপাট করেছে বলে জানা যাচ্ছে।[3]
আর সব ক্ষেত্রেই গ্রাহককে বেশী মুনাফা ও ছাড়ের লোভ দেখানো ছিল টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রধান কৌশল। ২০০৬ সালে যুবকের ২ হাজার ৬০০ কোটি, ২০১১ সালে ইউনিপে টু ইউর ৬ হাজার কোটি, ২০১২ সালে ডেসটিনির ৫ হাজার কোটি এবং ২০০৮ থেকে ২০১৭ সাল সময়ে ২৬৬টি সমবায় সমিতির গ্রাহকদের ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা ঘটেছে।
এধরনের মডেল কোথাও-ই দীর্ঘ মেয়াদে সফল হয়নি। বিপুল ছাড়ে যখন কোনো পণ্য বিক্রির অফার করা হয় তখন প্রথমে অল্প কিছু গ্রাহক সেটার প্রতি আকৃষ্ট হন এবং দু’এক জন যখন সত্যিই সেই অভাবনীয় মূল্যে পণ্য হাতে পান তখন আরো বহু সংখ্যক গ্রাহক সেই পণ্য ক্রয় করার জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠে। কিন্তু যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি এই বিপুল ছাড়ে (যে মূল্যটা আসলে নিশ্চিত লস) সবাইকে পণ্য সরবরাহ করার সক্ষমতা রাখে না, সেহেতু তখন পণ্য সরবরাহের জন্য কোম্পানির নতুন বিনিয়োগ প্রয়োজন হয় (তবে নতুন বিনিয়োগ পেলেও শতভাগ সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়, বরং কিছু সংখ্যক গ্রাহকদের কাছে পণ্য সরবরাহ সম্ভব, আর বাকি গ্রাহকদের পণ্য সরবরাহের জন্য আবারও নতুন বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে কিন্তু এতেও আবার নতুন কিছু গ্রাহক সৃষ্টি হয় যাদেরকে পণ্য সরবরাহের জন্য আরো বিনিয়োগ প্রয়োজন এবং এতে আবার নতুন গ্রাহক সৃষ্টি হবে আর এইভাবেই চক্রাকারে চলতে থাকবে), আর যখন নতুন বিনিয়োগের সংকট দেখা দিবে, তখন ভোক্তা স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবে, এটাই স্বাভাবিক। কারণ প্রতিষ্ঠান নিজের তহবিল থেকে এই পণ্য সরবরাহ করছে না বরং নতুন বিনিয়োগ থেকে তারা খুব অল্প কিছু সংখ্যক গ্রাহককে সন্তুষ্ট করছে মাত্র।
আদতে মুহাম্মাদ রাসেলের ইভ্যালি ছিল পঞ্জি স্কিমে গড়ে উঠা এমএলএম পদ্ধতিরই আরেক রূপ, ঠিক যেন যুবক-ডেসটিনির ‘ই-কমার্স সংস্করণ’।
বাংলাদেশে পঞ্জি ব্যবসা :
সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট সংসদ (এসডিএস) ও ইসলামিক ট্রেড অ্যান্ড কমার্স লিমিটেড (আইটিসিএল) এর মাধ্যমে নববইয়ের দশকের পঞ্জি ব্যবসা শুরু হয়েছিল টাঙ্গাইল থেকে। মূলত উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রতিষ্ঠান দু’টি গ্রাহকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করেছিল। ১৯৯৬ সাল থেকে আইটিসিএল অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রম চালালেও বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের নিষিদ্ধ করে ২০০২ সালে এসে। তত দিনে সর্বস্বান্ত হাযার হাযার গ্রাহক। এর প্রতিষ্ঠাতা ইসমাইল হোসেন সিরাজী তখন থেকে পলাতক থাকলেও ধরা পড়েছিলেন ২০১৭ সালে।
আইটিসিএলের পরেই যুব কর্মসংস্থান সোসাইটির (যুবক) উত্থান। যুবকের নিবন্ধনও নেওয়া হয় ১৯৯৬ সালে। তারাও নানা প্রলোভন দেখিয়ে জনগণের কাছ থেকে সঞ্চয় সংগ্রহ করে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। ২০০৬ সালেই বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে বেরিয়ে আসে যুবকের বিরুদ্ধে অবৈধ ব্যাংকিংসহ নানা প্রতারণার চিত্র। এরপর যুবক বিষয়ে ২০১০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে একটি কমিশন (প্রথম কমিশন) গঠন করেও তেমন লাভ হয়নি। অর্থ ফেরত পাননি এর গ্রাহকেরা। সর্বশেষ হিসাবে যুবকের ৩ লাখ ৩ হাযার ৭৩৯ ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের পাওনা ছিল ২ হাযার ৫৮৮ কোটি ১১ লাখ টাকা।
যুবক যেতে না যেতেই আবির্ভাব ডেসটিনিটির। আরেক পঞ্জি স্কিম। তারা নানা প্রলোভন দেখিয়ে সংগ্রহ করে প্রায় চার হাযার কোটি টাকা। তাদের কার্যক্রম অবাধে চলে ২০১২ সাল পর্যন্ত। এর গ্রাহক ছিল প্রায় ৪০ লাখ। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হলেও অর্থ কেউ ফেরত পাননি। বড় বড় এ রকম কিছু প্রতিষ্ঠানের বাইরেও ইউনিপের মতো আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের নামও জড়িয়ে আছে পঞ্জি স্কিমের সঙ্গে। এরা সবাই মূলত বহু স্তরের বিপণন বা মাল্টি লেবেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি। পৃথিবীর বহু দেশেই এমএলএম কোম্পানি নিষিদ্ধ।
ডেসটিনির বিরুদ্ধে এক ধরনের আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার পর দেশে পঞ্জি স্কিম বন্ধ হয়ে গেছে, তা বলা যাবে না। এর মধ্যেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছোট-বড় নানা ধরনের কোম্পানি গড়ে উঠেছে এবং প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ নিয়ে ভেগেও গেছে। এর মধ্যে পরিবর্তনও ঘটে গেছে অনেক কিছুর। স্মার্টফোন, ইন্টারনেট ও ফেসবুকের প্রসার মানুষের অনেক পুরোনো অভ্যাস বদলে দিয়েছে। অনলাইন কেনাকাটায় অভ্যস্ত হতে শুরু করেছে মানুষ। আর এ সময়েই ইভ্যালির আবির্ভাব।
অন্যদিকে ইভ্যালি ছাড়াও আরো কয়েকটি অনলাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান (ধামাকা শপিং, সিরাজগঞ্জ শপ ডটকম ও গ্লিটার্সআরএসটি ওয়ার্ল্ড) এর সদস্য পদ স্থগিত করেছে ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠান ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইক্যাব)।[4]
ক্রেতা-ভোক্তাদের পাওনা সময়মত পরিশোধ না করায় এই ৪টি প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে আরো ডজন খানেক প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন অনিয়মের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে ইক্যাব। এছাড়া প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে বৃহৎ প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধেও।
এখন সময়ের সবচে বড় প্রশ্ন, এই বিপুল পরিমাণ অর্থ কি ফেরত দিতে পারবে ইভ্যালি? ইতিমধ্যেই প্রশাসন কর্তৃপক্ষদের বক্তব্যে এ ব্যাপারে নেতিবাচক সাড়া আসছে। জিজ্ঞাসাবাদের পর র¨vব জানিয়েছে, গ্রাহকের টাকা ফেরত দেবার কোন পরিকল্পনা ইভ্যালির নেই’।[5]
এদিকে বিশ্লেষকরাও বলছেন যে, যে পদ্ধতিতে এই সমস্ত প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করে তা খুবই দুর্বল কাঠামোর উপর দাঁড়িয়ে। এতে ১০০% টাকা ফেরত পাওয়া অসম্ভব। ব্যাপারটা একবার ঘটে গেলে আর কিছু করার নেই।
যে কারণে ধ্বংসের পথে ইভ্যালি
১. চীনের উদ্যোক্তা কলিন হুয়াং পিনডুয়োডুয়ো প্রতিষ্ঠার আগে তথ্য প্রযুক্তি, সামাজিক মাধ্যম ও ই-কমার্স বিষয়ে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা অর্জন করে তারপরই এ ব্যবসায় এসেছিলেন। পিনডুয়োডুয়ো প্রতিষ্ঠার তিন বছরের মধ্যে নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়। এর আগে চার সিরিজের বিনিয়োগ পায় প্রতিষ্ঠানটি। পরপর চার সিরিজ বিনিয়োগ পাওয়ার পর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও ছাড়ার কাজটি সহজ নয়। পিনডুয়োডুয়োর পক্ষে কাজটি সহজ হয়েছে। কারণ তাদের হিসাবপত্রে কোনো গোঁজামিল ছিল না, হিসাব পদ্ধতি ছিল সহজ ও স্বচ্ছ এবং ব্যবসায়িক মডেল আকর্ষণীয়।
প্রতিষ্ঠিত দেশী বা বিদেশী বিনিয়োগ পেতে হলে ব্যবসায়িক কাঠামো, হিসাবপত্রের স্বচ্ছতা এবং গুডউইল বা সুনাম খুব যরূরী। ঠিক এখানেই ঘাটতি ইভ্যালির। এ কারণেই ৫০ লাখ গ্রাহক, বিপুল অর্ডার, প্রতিষ্ঠিত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পণ্য বিক্রির চুক্তি থাকলেও কোনো বিনিয়োগকারী খুঁজে পায়নি ইভ্যালি। সুতরাং মুহাম্মাদ রাসেলের আক্রমণাত্মক ব্যবসায়িক পদ্ধতির পেছনে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করাকে প্রধান কারণ বলে যাঁরা মনে করেন, তাঁদের যুক্তি বেশ দুর্বল। এই পথে কখনোই কোনো ভালো বিনিয়োগকারী এগিয়ে আসবেন না। এমনকি সঠিক নিরীক্ষা না থাকায় বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত থেকে সরে গেছে যমুনার মতো গ্রুপও।
২. ২০১৮ সালের ১৬ই ডিসেম্বরে কাজ শুরুর পরের প্রায় দুই বছর নির্বিঘ্নে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে ইভ্যালি। তবে এর মধ্যেই গ্রাহক অসন্তোষও পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল। মুহাম্মাদ রাসেল নিয়মিত ফেসবুক লাইভে আসতেন। সে সময় পণ্য না পাওয়ার অসংখ্য মন্তব্য আসত। অবিশ্বাস্য কম দামে পণ্য বিক্রি নিয়েও সন্দেহ বাড়ছিল বিভিন্ন মহলে। আবার নাটক, সিনেমা, খেলাসহ এমন কোনো অনুষ্ঠান ছিল না, যেখানে ইভ্যালির আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা ছিল না। এ সময় ইভ্যালির ব্যবসায়িক পদ্ধতির দুর্বলতা নিয়ে গণমাধ্যমেও আলোচনা শুরু হয়। তবে নানা অনুষ্ঠান পৃষ্ঠপোষক হয়ে কিছু ব্যক্তিকে খুশী রাখার এই পদ্ধতিও আরেক পঞ্জি কোম্পানি ডেসটিনির কাছ থেকেই শেখা।
২০২০ সালের ২৪শে আগস্ট প্রথম আলোয় প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম ছিল ‘ডিজিটাল ব্যবসার নতুন ফাঁদ ইভ্যালি’। এরপরই যুগ্ম সচিব আব্দুছ ছামাদ আল আজাদকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের পরিদপ্তরে (আরজেএসসি) চিঠি পাঠায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরপর ২৭শে আগস্ট ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও এমডি মুহাম্মাদ রাসেলের ব্যাংক হিসাব এক মাসের জন্য স্থগিত করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
কিন্তু তখনও ইভ্যালি সতর্ক না হয়ে উল্টো রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের কাছে ধরণা দেয়। তাতে প্রাথমিকভাবে সফলও হয়। এর এক মাস পরে বিএফআইইউ ইভ্যালির জব্দ করা ব্যাংক হিসাব খুলে দেয়। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইক্যাব) ইভ্যালি নিয়ে জানতে বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করলেও তাদের দেওয়া প্রতিবেদনও আড়ালে চলে যায়। এ সময় মুহাম্মাদ রাসেল কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও ব্যক্তিকে ধন্যবাদ দিয়ে নিজের ফেসবুকে পোস্ট দেন। অথচ তখন রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা না নিয়ে ব্যবসা ঠিকঠাক চালানোর দিকে নযর দিলে বর্তমান পরিস্থিতি হয়তো এড়াতে পারত ইভ্যালি।
৩. ব্যবসা বাড়াতে সুনাম বাড়ানো বা ধরে রাখা একটি অপরিহার্য উপাদান। গ্রাহক অসন্তোষ সব সময়ই সুনাম নষ্ট করে দেয়। ইভ্যালি সুনাম উদ্ধারে এ সময় ভিন্ন পথ অবলম্বন করে। র¨vপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র¨vব) তৈরী সিনেমায় আর্থিক সহায়তা করে, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পৃষ্ঠপোষক হয়, সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও টাকা ঢালতে থাকে। ইক্যাবের নানা অনুষ্ঠানেরও পৃষ্ঠপোষক হয় তারা। মন্ত্রীদের নিয়েও বিভিনণ অনুষ্ঠান করে ইভ্যালি। সব মিলিয়ে গ্রাহক ছাড়া অন্য সব মহলকে খুশী রাখার এসব কর্মকান্ডে অনেক বেশী অর্থ খরচ করেছে তারা। এতে আরও গ্রাহক এসেছে ঠিকই, তাতে বিপদও বেড়েছে। কেননা আয় বা মুনাফা থেকে এই অর্থ ব্যয় করা হয়নি। গ্রাহকেরা পণ্য কিনতে অর্থ দিয়েছেন, আর সেই অর্থই ব্যয় হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন পথে।
৪. দায় আছে সংশ্লিষ্ট সব সরকারী সংস্থারও। ২০২০ সালের আগস্টে একাধিক কমিটি গঠন করেও ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আবার এক মাসের মধ্যে জব্দ করা ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়ার বার্তাটিও ছিল পরিষ্কার। ছাড় না দিয়ে তখন নিয়মতান্ত্রিক পথে ইভ্যালিকে নিয়ে যেতে পারলে সব মহলই উপকৃত হত। মাত্র এক কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানি যখন গ্রাহকদের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা নেয়, তখন এর বিপজ্জনক দিকটি আগেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নযরে আসা উচিত ছিল।
২০২০ সালের ২৪ আগস্ট প্রথম আলোতে ছাপা হওয়া সংবাদে কোম্পানি আইন নিয়ে কাজ করা আইনজীবী তানজীব-উল-আলম বলেছিলেন, ‘ইভ্যালির কার্যক্রমের ধরন অনেকটা এমএলএম কোম্পানির মতো। এমএলএম কোম্পানিগুলোর প্রতারণার চিত্র দেখার অভিজ্ঞতা থেকে মনে হচ্ছে, ইভ্যালিও তা-ই করছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এখানে মানি লন্ডারিং হচেছ। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করে দেখতে পারে। এই উপদেশটি শুনলে তখনই অনেক সমস্যার সমাধান করা যেত।
৫. যে কোনো ব্যবসা এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নগদ অর্থ প্রবাহের। ক্যাশ ফ্লো বা নগদ অর্থ প্রবাহে টান পড়লে সেই কোম্পানি আর এগিয়ে যেতে পারে না। ইভ্যালির সমস্যা এখানেই। গ্রাহকদের অর্থ ভিন্ন খাতে ব্যয় করার কারণেই মুহাম্মাদ রাসেলের হাতে তেমন অর্থ নেই। এতে গ্রাহকদের পণ্য সরবরাহ করতে পারছিল না ইভ্যালি। এ কারণেই হয়তো মুহাম্মাদ রাসেল শেষ দিকে বারবার নতুন বিনিয়োগ পাওয়ার কথা বলতেন। কিন্তু তখন অনেক কিছুই আয়ত্তের বাইরে চলে গিয়েছিল।
৬. ইভ্যালি অনেকের জন্য পথপ্রদর্শক। তাদের ব্যবসায়িক পদ্ধতি অনুসরণ করে তৈরী হয়েছে ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, সিরাজগঞ্জশপ-এর মতো নানা প্রতিষ্ঠান। প্রলোভনে পড়া গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাৎ করার মডেলটি শিখেছে তারা ইভ্যালির কাছ থেকেই। প্রলোভনের এই ব্যবসা ছড়িয়ে পড়েছিল দেশজুড়ে। এতে ইভ্যালির প্রতি নযর চলে যায় সব মহলের। ই-কমার্সের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কমিয়ে দেওয়ার দায় ইভ্যালিরই।
শেষ কথা
প্রশ্ন হচ্ছে ইভ্যালি কি ধ্বংস হয়ে গেছে? প্রতিষ্ঠানটিকে কি বাঁচানো সম্ভব? এ জন্য কি মুহাম্মাদ রাসেল অপরিহার্য? আইনি প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠানটি চালু রাখা কি সম্ভব? অর্থ কি ফেরত পাবে গ্রাহকেরা? সন্দেহ নেই যে অতীত অভিজ্ঞতা মোটেই ইভ্যালির গ্রাহকদের পক্ষে নয়। মূলতঃ অর্থনীতি ইসলামের নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালনা না করার এক দুঃখজনক পরিণাম হলো এই ইভ্যালি ট্রাজেডি। ইসলামী শরী‘আর মৌলিক মাকছাদ হ’ল মানুষের সম্পদের নিরাপত্তা বিধান করা। এ জন্য ইসলাম অর্থনীতিতে সুস্পষ্ট নীতিমালা নির্ধারণ করেছে, যেখানে অস্পষ্টতা ও ধোঁকার কোনো সুযোগ নেই। অস্পষ্টতা ও অনিশ্চয়তার সব রাস্তা ইসলামী অর্থনীতিতে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ- ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না’(নিসা ৪/২৯)। তিনি আরো বলেন, ‘যারা ওজনে কম দেয়, পরের জিনিস ওজন করে নিলে পূর্ণ গ্রহণ করে কিন্তু যখন অপরকে ওজন করে দেয় তখন কম দেয়, এরা নিশ্চিতভাবে ধ্বংস হবে’ (মুতাফ্ফীফিন ৮৩/১-৩)। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ غَشَّ فَلَيْسَ مِنِّي ‘যে ব্যাক্তি ধোঁকা দেয় সে আমাদের দলভুক্ত নয়’।[6]
বিশ্বব্যাপী ক্রমেই মানুষের ই-কমার্সে প্রতি ঝোঁক বাড়ছে, এতে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যাচ্ছে। আর এসব প্রতারণার দায় সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর পুরোপুরি এড়াতে পারে না। বরং তাদের দায়িত্ব হ’ল এসব প্রতিষ্ঠানের গতিবিধি লক্ষ্য করা, নির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা নির্ধারণ করে তার আলোকে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবসা পরিচালনা করতে বাধ্য করা, জবাবদিহিতা এবং গ্রাহক বা ভোক্তাদের অভিযোগ গ্রহণ করার ব্যবস্থা করা ও দ্রুত তার সমাধান করা। অন্যদিকে গ্রাহকদেরও উচিৎ বিপুল ছাড় ও লোভনীয় অফার দেখলেই তা লুফে নেওয়ার চেষ্টা না করে যাচাই করে তারপর সেবা গ্রহণ করা। মনে রাখতে হবে, ‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু’। অতি লোভ মানুষকে যে কোন সময় পথভ্রষ্ট করে দেয়। সুতরাং একজন দ্বীনদার, তাক্বওয়াশীল ব্যক্তির পক্ষে কখনই লোভের ফাঁদে পা দিয়ে নিজের ঈমান-আমল নষ্ট করার সুযোগ নেই। সর্বোপরি নিয়ন্ত্রক সংস্থা, সেবা দাতা ও গ্রাহক সকলেরই উচিৎ তাক্বওয়া অবলম্বন করা, ইসলামী নীতিমালা মেনে চলা, ধোঁকা-প্রতারণা ও লোভের মানসিকতা পরিত্যাগ করে আল্লাহর উপর ভরসা করে স্বচ্ছভাবে ব্যবসা পরিচালনা করা। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন-আমীন!
মুহাম্মাদ আবু হুরায়রা ছিফাত
ছাত্র, (অনার্স ১ম বর্ষ), রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী
[1]. প্রথম আলো, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১।
[2]. বিবিসি বাংলা, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১।
[3]. প্রথম আলো, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১।
[4]. প্রথম আলো, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১।
[5]. বিবিসি বাংলা, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১।
[6]. মুসলিম হা/১৮৬।