যবানের পাপ ও পুণ্য
ফায়ছাল মাহমূদ
আসাদ বিন আব্দুল আযীয 669 বার পঠিত
প্রথম শূলে চড়িয়ে হত্যা :
ফেরাউনের যাদুকররা যখন মুসা (আঃ)-এর উপর ঈমান এনেছিল তখনই প্রথম তাদের শুলে চড়িয়ে এবং হাত পায়ের বিপরীত অংশ কেটে হত্যা করা হয়েছিল’।[1]
মদীনায় রাসূল (ছাঃ)-এর আগমন দেখা প্রথম ব্যক্তি :
রাসূল (ছাঃ) একটানা ৮দিন চলার পর ১৪ নববী বর্ষের ৮ই রবীঊল আউয়াল মোতাবেক ৬২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে সেপ্টেম্বর সোমবার দুপুরে ক্বোবা উপশহরে শ্বেত-শুভ্র বসনে অবতরণ করেন। প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকলেও এদিন দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে না পাওয়ায় এবং সূর্য অধিক গরম হওয়ায় মুসলমানগণ স্ব স্ব বাড়ীতে ফিরে যান। এমন সময় জনৈক ইহূদী কোন কাজে একটি টিলার মাথায় উঠলে তাঁদের দেখতে পায় এবং সবাইকে খবর দেয়’।[2]
রাসূল (ছাঃ)-এর উপর প্রথম ফরযকৃত ছালাত :
হাদীছে এসেছে আবু আমর অর্থাৎ আওযাঈ (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি যুহরী (রহঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের পূর্বেকার ছালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তিনি বলেন, উরওয়াহ (রহঃ) আমাকে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন,أَوَّلَ مَا فَرَضَهَا رَكْعَتَيْنِ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ أُتِمَّتْ فِى الْحَضَرِ أَرْبَعًا وَأُقِرَّتْ صَلاَةُ السَّفَرِ عَلَى الْفَرِيضَةِ الأُولَى আল্লাহ তা‘আলা প্রথমত তাঁর রাসূলের উপর দুই-দুই রাকা‘আত ছালাত ফরয করেন। পরে সগৃহে ছালাত চার রাকাত পূর্ণ করা হয় এবং সফরে পূর্বের বিধান অনুযায়ী দুই রাক‘আতই বহাল রাখা হয়’।[3]
মদীনায় রাসূল (ছাঃ)-এর প্রথম কথা :
আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন মদীনায় এলেন তখন লোকেরা দ্রুত তাঁর দিকে ছুটে গেল। বলাবলি হ’তে লাগল যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এসেছেন। লোকদের মধ্যে আমিও তাঁকে দেখতে গেলাম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর চেহারা যখন আমার সামনে প্রতিভাত হ’ল আমি চিনে ফেললাম যে, এ চেহারা কোন মিথ্যাবাদীর চেহারা নয়। তিনি প্রথম যে কথা উচ্চারণ করলেন তা হ’ল,أَيُّهَا النَّاسُ أَفْشُوا السَّلاَمَ وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ وَصَلُّوا وَالنَّاسُ نِيَامٌ تَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ بِسَلاَمٍ ‘তোমরা সালামের প্রসার ঘটাও, ক্ষুধার্তকে খাওয়াও এবং মানুষ ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় (তাহাজ্জুদ) ছালাত আদায় কর। তাহ’লে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে’।[4]
মদীনায় মুহাজিরদের প্রথম দলের ইমাম :
রাসূল (ছাঃ) মদীনায় আগমনের পূর্বে মুহাজিরদের প্রথম দলের ইমামতি করতেন আবু বুরায়দা (রাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম সালিম (রাঃ)।[5]
প্রথম জুমু‘আর ছালাত :
হিজরতের পূর্বে মদীনার আনছারগণ আপোষে পরামর্শক্রমে ইহুদী ও নাছারাদের সাপ্তাহিক ইবাদতের দিনের বিপরীতে নিজেদের জন্য একটি ইবাদতের দিন ধার্য করেন ও সেমতে আস‘আদ বিন যুরারাহ (রাঃ)-এর নেতৃত্বে মদীনার বনু বায়াযাহ গোত্রের নাক্বী‘উল খাযেমাত(نَقِيعُ الْخَضِمَاتِ) নামক স্থানের ‘নাবীত’ (هَزْمُ النَّبِيْتِ) সমতল ভূমিতে সর্বপ্রথম জুম‘আর ছালাত চালু হয়। যেখানে চল্লিশ জন মুছল্লী যোগদান করেন’।[6]
বাক্বী‘ গোরস্থানে ১ম ছাহাবী হিসাবে কবরস্থ :
আস‘আদ বিন যুরারাহ (রাঃ), যিনি ১১ নববী বর্ষের হজ্জের মওসুমে (জুলাই ৬২০ খৃ:) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর হাতে সর্বপ্রথম বায়‘আতকারী ৬ জন যুবকের কনিষ্ঠতম নেতা, যার নেতৃত্বে মদীনায় সর্বপ্রথম ইসলাম প্রচারিত হয় এবং পরবর্তী দু’বছরে ৭৩ জন পুরুষ ও ২ জন নারী মক্কায় এসে বায়‘আত গ্রহণ করেন। অতঃপর ১৪শ নববী বর্ষের রবীউল আউয়াল মাসে (সেপ্টেম্বর ৬২২) হিজরত সংঘটিত হয় এবং ১ম হিজরী সনেই শাওয়াল মাসে অল্প বয়সে তাঁর মৃত্যু হয় ও বাক্বী‘ গোরস্থানে ১ম ছাহাবী হিসাবে কবরস্থ হন’।[7]
রাসূল (ছাঃ)-এর প্রথম জুম‘আর ছালাত :
১ম হিজরীতে জুম‘আ ফরয হয় এবং হিজরতকালে ক্বোবা ও মদীনার মধ্যবর্তী বনু সালেম বিন ‘আওফ গোত্রের ‘রানূনা’ (رانوناء) উপত্যকায় সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জুম‘আর ছালাত আদায় করেন’।[8] যাতে একশত মুছল্লী শরীক ছিলেন’।[9]
রাসূল (ছাঃ) বায়তুল্লাহর দিকে মুখ ঘুরে প্রথম ছালাত :
বারা‘আ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মদীনায় আগমন করেন, তখন ষোল অথবা সতের মাস বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে ছালাত আদায় করলেন। আর তিনি কা’বার দিকে মুখ করে দাঁড়াতে খুবই আগ্রহী ছিলেন। তারপর আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করলেন, ‘আকাশের দিকে তোমার বারবার তাকানোকে আমি অবশ্যই লক্ষ্য করছি। সুতরাং তোমাকে এমন কিবলার দিকে ফিরিয়ে দিচ্ছি যা তুমি পছন্দ কর’(বাক্বারাহ ২/১৪৪)। তখন তাঁকে কা’বার দিকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আর তাঁর সাথে এক ব্যক্তি আছরের ছালাত আদায় করেছিল। এরপর সে বেরিয়ে আনছারীদের এক সম্প্রদায়ের কাছ দিয়ে গমন করল এবং সে সাক্ষ্য দিয়ে বলল যে, সে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে ছালাত আদায় করে এসেছে আর কিবলা কা’বার দিকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তখন তাঁরা দিক পরিবর্তন করলেন। এ সময় তাঁরা আসরের ছালাতে রুকূ’ অবস্থায় ছিলেন’।[10]
রাসূল (ছাঃ)-এর চুল প্রথম সংগ্রহকারী:
হাদীছে এসেছে, আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার মাথা মুড়িয়ে ফেললে আবু তালহা (রাঃ)-ই প্রথম তাঁর চুল সংগ্রহ করেন’।[11]
হুদায়বিহায় রাসূল (ছাঃ)-এর হাতে প্রথম বায়‘আতকারী :
হোদায়বিয়ায় ওছমান (রাঃ)-এর হত্যার প্রতিশোধ না নেয়া পর্যন্ত ফিরে যাবে না মর্মে আল্লাহর নামে প্রতিজ্ঞা ইসলামের ইতিহাসে ‘বায়‘আতুর রিজওয়ান’ বলে পরিচিত। এ বায়‘আত করার জন্য প্রথমে এগিয়ে আসে আবু সিনান আব্দুল্লাহ বিন ওহাব আল আসাদী’।[12]
রাসূল (ছাঃ)-এর প্রথম যুদ্ধ :
আবু ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আব্দুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) লোকজনকে নিয়ে ইস্তিস্কার ছালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে বের হলেন। তিনি দু‘রাক‘আত ছালাত আদায় করলেন, এরপর বৃষ্টির জন্যে দো‘আ করলেন। রাবী বলেন, সেদিন আমি যায়িদ ইবনু আরকাম (রাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। তিনি বলেন, আমার এবং তাঁর মাঝখানে একজন ছাড়া কোন লোক ছিলনা। অথবা তিনি বলেছেন, আমার এবং তার মাঝখানে কেবল একজন লোক ছিলেন, আমি তখন তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কতগুলো যুদ্ধ করেছেন? তিনি বললেন, ঊনিশটি তখন আমি বললাম, আপনি তার সঙ্গে কত যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন। তিনি বললেন! সতেরটি যুদ্ধে। রাবী বলেন, তখন আমি প্রশ্ন করলাম, সর্ব প্রথম তিনি কোন যুদ্ধটি করেছেন? তিনি বললেন, যাতুল-উসায়র বা যাতুল উশায়র’।[13]
প্রথম মহিলা হিজরতকারিনী :
উম্মু সালামা (রাঃ) হ‘তে বর্ণিত তিনি বলেন, পুরুষরা জিহাদ করে অথচ মহিলারা জিহাদ করতে পারে না। আর আমাদের জন্য (পুরুষের তুলনায়) মীরাছের অর্ধেক হিস্যা মাত্র। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা নাযিল করেন,وَلاَ تَتَمَنَّوْا مَا فَضَّلَ اللَّهُ بِهِ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ ‘যা দিয়ে আল্লাহ তোমাদের কতককে কতকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন, তোমরা তার লোভ করবে না’ (নিসা ৪/৩২)। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, এই বিষয়ে নাযিল হয়েছিল إِنَّ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ ‘নিশ্চয় মুসলমান পুরুষ ও মুসলমান নারী’ (আহযাব ৩৩/৩৫)। উম্মু সালামা (রাঃ) ছিলেন মদীনায় হিজরতকারী প্রথম মহিলা’।[14]
মৃত্যুর পূর্বে প্রথম দু’রাক‘আত ছালাত আদায়কারী :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী (ছাঃ) (মুশরিকদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য) আসিম ইবনু উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-এর নানা আসিম ইবনু সাবিত আনসারী (রাঃ)-এর নেতৃত্বে একটি গোয়েন্দা দল কোথাও প্রেরণ করলেন। যেতে যেতে তারা আসফান ও মক্কার মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছালে হুযায়ল গোত্রের একটি শাখা বনী লিহ্ইয়ানের নিকট তাঁদের আগমনের কথা জানিয়ে দেওয়া হ’ল। এ সংবাদ পাওয়ার পর বনী লিহ্ইয়ানের প্রায় একশ তীরন্দাজ সমভিব্যাহারে তাদের প্রতি ধাওয়া করল। দলটি তাদের (মুসলিম গোয়েন্দা দলের) পদচিহ্ন অনুসরণ করে এমন এক স্থানে গিয়ে পৌঁছালো, যে স্থানে অবতরণ করে ছাহাবীগণ খেজুর খেয়েছিলেন। তারা সেখানে খেজুরের আঁটি দেখতে পেল, যা ছাহাবীগণ মদীনা থেকে পাথেয়রূপে এনেছিলেন। তখন তারা বলল, এগুলো তো ইয়াসরিবের খেজুর (এর আঁটি)। এরপর তারা পদচিহ্ন ধরে খুঁজতে খুঁজতে শেষ পর্যন্ত তাঁদেরকে ধরে ফেলল। আসিম ও তাঁর সাথীগণ বুঝতে পেরে ফাদফাদ নামক টিলায় উঠে আশ্রয় নিলেন। এবার শত্রুদল এসে তাঁদেরকে ঘিরে ফেলল এবং বলল, আমরা তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যদি তোমরা নেমে আস তাহ’লে আমরা তোমাদের একজনকেও হত্যা করব না। আসিম (রাঃ) বললেন, আমি কোনো কাফেরের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়ে এখান থেকে অবতরণ করব না। হে আল্লাহ! আমাদের এ সংবাদ আপনার রাসূলের নিকট পৌঁছিয়ে দিন। এরপর তারা মুসলিম গোয়েন্দা দলের প্রতি আক্রমণ করল এবং তীর বর্ষণ করতে শুরু করল। এভাবে তারা আসিম (রাঃ)-সহ সাতজনকে তীর নিক্ষেপ করে শহীদ করে দিল। এখন শুধু বাকী রইলেন খুবায়েব (রাঃ), যায়েদ (রাঃ) এবং অপর একজন (আবদুল্লাহ ইবনু তারিক) ছাহাবী (রাঃ)। পুনরায় তারা তাদেরকে ওয়াদা দিল। এই ওয়াদায় আশ্বস্ত হয়ে তাঁরা তাদের কাছে নেমে এলেন। এবার তারা তাঁদেরকে কাবু করে ফেলার পর নিজেদের ধনুকের তার খুলে এর দ্বারা তাঁদেরকে বেঁধে ফেলল। এ দেখে তাঁদের সাথী তৃতীয় সাহাবী (আবদুল্লাহ ইবনু তারিক) (রাঃ) বললেন, এটাই প্রথম বিশ্বাসঘাতকতা। তাই তিনি তাদের সাথে যেতে অস্বীকার করলেন। তারা তাঁকে তাদের সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য বহু টানা-হেঁচড়া করল এবং বহু চেষ্টা করল। কিন্তু তিনি তাতে রাজি হলেন না। অবশেষে কাফেররা তাঁকে শহীদ করে দিল এবং খুবায়েব ও যায়েদ (রাঃ)-কে মক্কার বাজারে নিয়ে বিক্রয় করে দিল। বনী হারিস ইবনু আমির ইবনু নাওফল গোত্রের লোকেরা খুবায়ব (রাঃ)-কে কিনে নিল। কেননা বদর যুদ্ধের দিন খুবায়েব (রাঃ) হারিসকে হত্যা করেছিলেন। তাই তিনি তাদের নিকট বেশ কিছু দিন বন্দী অবস্থায় কাটান। অবশেষে তারা তাঁকে হত্যা করার দৃঢ় পরিকল্পনা করলে তিনি নাভির নিচের পশম পরিষ্কার করার জন্য হারিসের কন্যার নিকট থেকে একখানা ক্ষুর চাইলেন। সে তাঁকে তা দিল। (পরবর্তীকালে মুসলমান হওয়ার পর) হারিসের উক্ত কন্যা বর্ণনা করেছেন যে, আমি আমার একটি শিশু বাচ্চা সম্পর্কে অসাবধান থাকায় সে পায়ে হেঁটে তাঁর কাছে চলে যায় এবং তিনি তাকে স্বীয় উরুর উপর বসিয়ে রাখেন। এ সময় তাঁর হাতে ছিল সেই ক্ষুর। এ দেখে আমি অত্যন্ত ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি। খুবায়েব (রাঃ) বুঝতে পেরে বললেন, তাকে মেরে ফেলব বলে তুমি কি ভয় পাচ্ছ? ইন্শাআল্লাহ আমি তা করার নই। সে (হারিসের কন্যা) বলত, আমি খুবায়েব (রাঃ) থেকে উত্তম বন্দী আর কখনো দেখিনি। আমি তাকে আঙগুরের থোকা থেকে আঙগুর খেতে দেখেছি। অথচ তখন মক্কায় কোনো ফলই ছিল না। অধিকন্তু তিনি তখন লোহার শিকলে আবদ্ধ ছিলেন। এ আঙ্গুর তার জন্য আল্লাহর তরফ থেকে প্রদত্ত রিযিক ব্যতীত আর কিছুই নয়। এরপর তারা তাঁকে হত্যা করার জন্য হারাম শরীফের বাইরে নিয়ে গেল। তিনি তাদেরকে বললেন, আমাকে দু’রাকা‘আত ছালাত আদায় করার সুযোগ দাও। (ছালাত আদায় করে) তিনি তাদের কাছে ফিরে এসে বললেন, আমি ভয়ে শংকিত হয়ে মৃত্যুর পড়ছি, তোমরা যদি এ কথা মনে না করতে তাহ’লে আমি (ছালাতকে) আরো দীর্ঘায়িত করতাম। হত্যার পূর্বে দু’রাকা‘আত ছালাত আদায়ের সুন্নাত প্রবর্তন করেছেন সর্বপ্রথম তিনিই। এরপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ, তাদেরকে এক এক করে গুণে রাখুন। এরপর তিনি দু’টি পঙক্তি আবৃত্তি করলেন, ‘যেহেতু আমি মুসলিম হিসেবে মৃত্যুবরণ করেছি তাই আমার কোনো শংকা নেই। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যেকোনো পার্শ্বে আমি ঢলে পড়ি’। ‘আমি যেহেতু আল্লাহর পথেই মৃত্যুবরণ করছি, তাই তিনি ইচ্ছা করলে আমার ছিন্নভিন্ন প্রতিটি অংগে বরকত দান করতে পারেন’। এরপর উকবা ইবনু হারিস তাঁর দিকে এগিয়ে গেল এবং তাঁকে শহীদ করে দিল। কুরাইশ গোত্রের লোকেরা খুবায়েব (রাঃ)-এর শাহাদাতের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাঁর মৃতদেহ থেকে কিছু অংশ নিয়ে আসার জন্য লোক পাঠিয়েছিল। কারণ খুবায়েব (রাঃ) বদর যুদ্ধের দিন তাদের একজন বড় নেতাকে হত্যা করেছিলেন। তখন আল্লাহ মেঘের মত এক ঝাঁক মৌমাছি পাঠিয়ে দিলেন, যা তাদের প্রেরিত লোকদের হাত থেকে খুবায়েব (রাঃ)-কে রক্ষা করল। ফলে তারা তাঁর দেহ থেকে কোনো অংশ নিতে সক্ষম হ’ল না’।[15]
প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী :
বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে আবু বকর (রাঃ) প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী। শিশুদের মধ্যে প্রথম আলী (রাঃ)। মহিলাদের মধ্যে খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ (রাঃ)। কৃতদাসের মধ্যে থেকে যায়েদ বিন হারেসা’।[16]
প্রথম প্রকাশ্যে ইসলাম আনায়নকারী :
হযরত ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, প্রথম ইসলামকে প্রকাশকারী ব্যক্তি হলেন হযরত ওমর (রাঃ)।[17]
প্রথম সাত ব্যক্তির ইসলাম গ্রহণ :
আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, সর্বপ্রথম সাত ব্যক্তি তাদের ইসলাম গ্রহণের কথা প্রকাশ করেন। তারা হলেন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ), আবু বকর (রাঃ), ‘আম্মার (রাঃ), তার মাতা সুমাইয়্যাহ (রাঃ), ছুহায়ব (রাঃ), বিলাল (রাঃ) ও মিক্বদাদ (রাঃ)। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা রাসূল (ছাঃ)-এর চাচা আবু তালিবের মাধ্যমে তাঁর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন। আল্লাহ তা‘আলা আবু বকর (রাঃ)-এর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন তার স্বগোত্রীয়দের দ্বারা। অবশিষ্ট সকলকে মুশরিকরা আটক করে। তারা তাদেরকে লৌহবর্ম পরিধান করিয়ে প্রখর রোদের মাঝে চিৎ করে শুইয়ে দিত। তাদের মাঝে এমন কেউ ছিল না, যাকে দিয়ে তারা তাদের ইচ্ছানুসারে স্বীকারোক্তি করায়নি। কেবল বিলাল (রাঃ) নিজেকে আল্লাহর রাস্তায় অপমানিত করেন এবং লোকেরাও তাকে অপমানিত করে। তারা তাকে আটক করে বালকদের হাতে তুলে দেয়। তারা তাকে নিয়ে মক্কার অলিতে-গলিতে ঘুরে বেড়াতো এবং তিনি শুধু আহাদ আহাদ (আল্লাহ এক, আল্লাহ এক) বলতেন’।[18]
রাসূলের পূর্বে প্রথম মদীনায় হিযরতকারী ছাহাবী :
বারা ইবনু আযিব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, সর্বপ্রথম আমাদের মধ্যে (মদীনায়) আগমন করলেন মুছ’আব ইবনু উমায়ের ও ইবনু উম্মে মাকতুম। তারা লোকদের কুরআন পড়াতেন। তারপর আসলেন বিলাল, সা‘দ ও আম্মার ইবনু ইয়াসির এরপর উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ)সহ নবী (ছাঃ)-এর বিশজন ছাহাবীসহ মদীনায় আসলেন। তারপর নবী (ছাঃ) আগমন করলেন। তাঁর আগমনে মদীনাবাসী যে পরিমাণ আনন্দিত হয়েছিল সে পরিমান আনন্দ হ’তে কখনো দেখিনি। এমনকি দাসীগণও বলছিল নবী (ছাঃ) শুভাগমন করেছেন। বারা (রাঃ) বলেন, তাঁর আগমনের আগেই মুফাস্সালের কয়েকটি সূরাসহ আমি (سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى) সূরা পর্যন্ত পড়ে ফেলেছিলাম’।[19]
প্রথম পরিবার হিসাবে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে হিজরত :
উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, কোন মুসলমান যখন কোন বিপদে পতিত হয়, তখন সে যদি আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন’ বলে এবং এ দু’আ পাঠ করে ‘হে আল্লাহ! আমাকে বিপদে ধৈর্য ধারণের ছাওয়াব দান কর এবং এর চেয়ে উত্তম প্রতিদান দিয়ে ধন্য কর’। তবে আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দিয়ে ধন্য করবেন। যখন আবু সালামার (তাঁর স্বামী) ইন্তিকাল হ’ল তখন আমি বললাম, আবু সালামা (রাঃ) থেকে কে উত্তম হ’তে পারে? তাঁর পরিবারই প্রথম পরিবার যারা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে হিজরত করেছিল। এরপর আমি ঐ দো‘আ পাঠ করলাম। ফলে আল্লাহ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে আমার জন্য দান করলেন। উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমার নিকট হাতিব ইবনু আবি বালতাকে দিয়ে বিবাহের পয়গাম পাঠালেন। আমি বললাম, আমার একটি মেয়ে রয়েছে আর আমি একটু অভিমানী। তিনি বললেন, তোমার মেয়ের জন্য আমি দো‘আ করছি যেন আল্লাহ তার সুব্যবস্থা করে দেন এবং এটাও দো‘আ করছি যে, তিনি তোমার অভিমানকে দূর করে দেন’।[20]
হিজরতের পরে প্রথম জন্মগ্রহণকারী ছাহাবী :
আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি আব্দুুল্লাহ ইবনু যুবায়রকে মক্কায় গর্ভে ধারণ করেন। তিনি বলেন, গর্ভকাল পূর্ণ হওয়া অবস্থায় আমি বেরিয়ে মদীনায় আসলাম এবং কুবায় অবতরণ করলাম। কুবাতেই আমি তাকে প্রসব করি। তারপর তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে এসে তাকে তাঁর কোলে রাখলাম। তিনি একটি খেজুর আনতে বললেন। তা চিবিয়ে তিনি তার মুখে দিলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর এই লালাই সর্বপ্রথম তার পেটে প্রবেশ করেছিল। তারপুর তিনি খেজুর চিবিয়ে তাহনীক করলেন এবং তার জন্য বরকতের দো‘আ করলেন। (হিজরতের পর) ইসলামে সেই ছিল প্রথম জন্মগ্রহণকারী। তাই তার জন্যে মুসলিমরা অত্যন্ত খুশী হয়েছিলেন। কারণ তাদের বলা হ’ত ইয়াহূদীরা তোমাদের যাদু করেছে, তাই তোমার সন্তান হয় না’।[21]
কুরআনের নাযিলকৃত প্রথম আয়াত (সূরা) :
ইয়াহইয়া ইবনে কাছীর (রঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান (রঃ)-কে কুর‘আনের নাযিলকৃত প্রথম আয়াত (সূরা) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিলি বললেন, ‘ইয়া আইয়ুহাল মুদ্দাছছির’ (সূরা মুদ্দাছছির)। আমি বললাম, লোকজন তো বলে- ‘ইকরা বিসমি রবিবকাল্লাযী খলাক’ (সূরা আলাক)। এতে আবু সালামা (রঃ) বলেন, আমি জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম এবং তুমি যা বললে আমিও তাকে তাই বলেছিলাম। এতে তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আমাদের যা বলেছেন তা বাদে আমি তোমাকে কিছুই বলব না। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আমি হেরা গুহায় ইতিকাফরত অবস্থায় ছিলাম। আমার ইতিকাফ শেষ হলে আমি সেখান থেকে নেমে এলাম। তখন আমি আমাকে ডাকার শব্দ শুনতে পেলাম। এরপর আমি ডানে তাকালাম, কিন্তু কিছু দেখলাম না। বামে তাকালাম, কিন্তু এদিকেও কিছু দেখলাম না। এরপর সামনে তাকালাম, এদিকেও কিছু দেখলাম না। এরপর পিছনে তাকালাম, কিন্তু এদিকেও আমি কিছু দেখলাম না। অবশেষে আমি উপরে তাকালাম এবং কিছু একটা দেখলাম। এরপর আমি খাদিজার (রাঃ)-এর কাছে গেলাম এবং তাঁকে বললাম, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর এবং আমার গায়ে ঠান্ডা পানি ঢাল। তাই তারা আমাকে বস্ত্রাবৃত করে এবং আমার গায়ে ঠান্ডা পানি ঢালে। এরপর নাযিল হ’ল, يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ- قُمْ فَأَنْذِرْ- وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ ‘হে বস্ত্রাবৃত! উঠুন, সতর্কবাণী প্রচার করুন এবং আপনার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন’ (সূরা মুদ্দাছছির)।[22]
পর্দা সম্পর্কে প্রথম নির্দেশনা :
হযরত আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন নবী (ছাঃ) মদীনায় আসেন তখন আমার বয়স দশ বছর ছিল। আমার মা, চাচী ও ফুফুরা আমাকে রাসূল (ছাঃ)-এর খাদেম হওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছিল। এরপর আমি দশ বছরকাল তাঁর খেদমত করি। যখন নবী (ছাঃ)-এর ইন্তিকাল হয় তখন আমার বয়স ছিল বিশ বছর। আমি পর্দা সম্পর্কে অন্যদের চেয়ে বেশি জানি। পর্দা সম্পর্কীয় প্রাথমিক আয়াতসমূহ যয়নব বিনতে জাহাশ (রাঃ)-এর সাথে নবী (ছাঃ)-এর বাসর রাত যাপনের সময় অবতীর্ণ হয়েছিল। সেদিন সকাল বেলা নবী (ছাঃ) দুলহা ছিলেন এবং লোকদেরকে ওয়ালীমার দাওয়াত করলেন। সুতরাং তাঁরা এসে খানা খেলেন। কিছুসংখ্যক ছাড়া সবাই চলে গেলেন। তাঁরা দীর্ঘক্ষণ নবী (ছাঃ)-এর সাথে কাটালেন। তারপর নবী (ছাঃ) উঠে বাইরে গেলেন। আমি তাঁর পিছু পিছু চলে এলাম, যাতে করে অন্যেরাও বের হয়ে আসে। নবী (ছাঃ) সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন, এমনকি তিনি আয়েশা (রাঃ)-এর কক্ষের দ্বারপ্রান্তে গেলেন, এরপরে বাকি লোকগুলো হয়ত চলে গেছে এ কথা ভেবে তিনি ফিরে এলেন, আমি তাঁর সাথে ফিরে এলাম। নবী (ছাঃ) যয়নব (রাঃ)-এর কক্ষে প্রবেশ করে দেখতে পেলেন যে, লোকগুলো বসে রয়েছে- চলে যায়নি। সুতরাং নবী (ছাঃ) পুনরায় বাইরে বের হলেন এবং আমি তাঁর সাথে এলাম। যখন আমরা আয়েশা (রাঃ)-এর কক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছলাম, তিনি ভাবলেন যে, এতক্ষণে হয়ত লোকগুলো চলে গিয়েছে। তিনি ফিরে এলেন। আমিও তাঁর সাথে ফিরে এসে দেখলাম যে, লোকগুলো চলে গেছে। এরপর নবী (ছাঃ) আমার ও তাঁর মাঝখানে একটি পর্দা টেনে দিলেন। এ সময়ে পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হ’ল।[23]
প্রথম ইদ্দত পালনকারিনী :
আসমা বিনতু ইয়াযীদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে তালাকপ্রাপ্তা হন, আর সেসময় তালাকপ্রাপ্তা রমনীর জন্য ইদ্দত পালনের কোন প্রয়োজন ছিল না। এরপর আল্লাহ তা‘আলা আসমার তালাকপ্রাপ্তির পর ইদ্দত সম্পর্কীয় আয়াত নাযিল করেন। আর তিনিই ছিলেন সর্বপ্রথম মহিলা, যার সম্পর্কে তালাকপ্রাপ্তা মহিলাদের জন্য ইদ্দত পালন প্রয়োজন মর্মে আয়াত নাযিল হয়’।[24]
রাসূল (ছাঃ)-এর পরিজনদের মধ্যে সর্বপ্রথম মৃত্যুবরণকারী :
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর মেয়ে ফাতিমাকে ডেকে চুপি চুপি কিছু বললেন। তখন তিনি কাঁদলেন। আবার চুপে চুপে তিনি কিছু বললেন। তখন তিনি হেসে ফেললেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি ফাতিমাকে বললাম, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তোমাকে চুপেচুপে কি বললেন যে, কেঁদে ফেললে এবং তারপর কি বললেন যে, তুমি হেসে ফেললে? ফাতিমা বললেন চুপে চুপে তিনি আমাকে তাঁর মৃত্যু সংবাদ দিলেন, তাই আমি কাঁদলাম। এরপর চুপি চুপি তিনি বললেন, তাঁর পরিজনদের মধ্যে সর্বপ্রথম তার পেছনে যাবো আমি, তাই হাসলাম’।[25]
দেবদেবীর নামে সর্বপ্রথম উট ছাড়া ব্যক্তি ও তার শাস্তি :
সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘বাহীরা’ বলা হয় এমন উষ্ট্রীকে, যা কোন দেবতার নামে মানত করে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেয়া হয়। উহাকে আর কেউ দোহন করে না। সাইবা বলা হয় এমন উটকে, যা কাফিররা তাদের দেবতার নামে ছেড়ে দিত। এভাবে ছেড়ে দেয়ার পর এর পিঠে কোন বোঝা বহন করা হতো না। ইবনুল মুসায়্যিব (রাঃ) বলেন, আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আমি জাহান্নামের মধ্যে আমর ইবনু আমির খুযাঈকে দেখেছি, সে তার নাড়ী-ভুড়ি টেনে নিয়ে হাটছে। দেবদেবীর নামে সে-ই সর্বপ্রথম উট ছেড়েছিল’।[26]
উম্মতে মুহাম্মাদীর প্রথম নৌবাহিনীর যুদ্ধ :
উমাইর ইবনু আছওয়াদ আনসী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত যে, তিনি উবাদা ইবন ছামিত (রাঃ)-এর কাছে আসলেন। তখন উবাদা (রাঃ) হিম্স উপকুলে তাঁর একটি ঘরে অবস্থান করছিলেন এবং তার সঙ্গে ছিলেন উম্মে হারাম। উমাইর (রহঃ) বলেন, উম্মে হারাম (রাঃ) আমাদের কাছে বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, আমার উম্মতের মধ্যে প্রথম যে দলটি নৌ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে তারা যেন জান্নাত অনিবার্য করে ফেলল। উম্মে হারাম (রাঃ) বলেন, আমি কি তাদের মধ্যে হবো? তিনি বললেন, তুমি তাদের মধ্যে হবে। উম্মে হারাম (রাঃ) বলেন, তারপর নবী (ছাঃ) বললেন, আমার উম্মাতের প্রথম যে দলটি কায়ছার (রোমক সম্রাট)-এর রাজধানী আক্রমন করবে, তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত। তারপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আমি কি তাদের মধ্যে হবো? নবী (ছাঃ) বললেন, ‘না’।[27]
ক্বিয়ামতের প্রথম নিদর্শন :
ক্বিয়ামতের প্রথম আলামত পশ্চিমাকাশে সূর্য উদিত হওয়া। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,إِنَّ أَوَّلَ الآيَاتِ خُرُوجًا طُلُوعُ الشَّمْسِ مِنْ مَغْرِبِهَا ‘ক্বিয়ামতের প্রথম নিদর্শন হ’ল, পূর্ব দিক হ‘তে সূর্য উদিত হওয়া’।[28]
(ক্রমশঃ)
আসাদ বিন আব্দুল আযীয
পিয়ারপুর, ধুরইল, মোহনপুর, রাজশাহী
[1]. তাফসীরে তাবারী ৯/২৩ পৃঃ।
[2]. সীরাতুর রাসূল (ছাঃ),২য় সংস্করণ ২৩৮ পৃঃ; ইবনু হিশাম ৩/২০ পৃঃ।
[3]. নাসাঈ হা/৪৫৪; আলবানী হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন।
[4]. তিরমিযী হা/২৪৮৫; ইবনু মাজাহ হা/১৩৩৪; দারেমী হা/১৫০১;। সিলসিলা ছহীহাহ হা/৫৬৯।
[5]. বুখারী হা/৬৯২।
[6]. ইবনু মাজাহ হা/১০৮২; আবুদাঊদ হা/১০৬৯; বায়হাকী হা/১৬৬৮ ইবনু হিববান হা/৮০১৩ সনদ ‘হাসান’।
[7]. সীরাতে ইবনে হিশাম ১/৪৩৫; যা-দুল মা‘আ-দ ১/৩৬১; নায়ল ৪/১৫৭-৫৮; মির‘আত ৪/৪২০; আল-ইছাবাহ, ক্র. ১১১।
[8]. মির‘আত ২/২৮৮; ঐ, ৪/৪৫১; ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ২/২১১।
[9]. ইবনু মাজাহ হা/১০৮২; সীরাতে ইবনে হিশাম ১/৪৯৪; যা-দুল মা‘আ-দ ১/৯৮।
[10]. বুখারী হা/৭২৫২।
[11]. বুখারী হা/১৭১; মুসলিম হা/১৩০৫; আহমাদ হা/১২০৯৩।
[12]. সীরাত ইবনু হিশাম ৩/৪৩৮; যাদুল মা‘আদ ৩/২৯১।
[13]. মুসলিম হা/১২৫৪।
[14].তিরমিযী হা/৩০২২; হাদীছটি মুরসাল সুত্রে বর্ণিত; আলবানী হাদীছটির সনদকে ছহীহ বলেছেন।
[15]. বুখারী হা/৪০৪৮।
[16]. ছহীহুস সীরাহ ৯৯পৃঃ।
[17]. তাবারানী ৯/৬৩ পৃঃ; ছহীহুস সীরাহ ১৯৩পৃঃ।
[18]. ইবনু মাজাহ হা/১৫০; আলবানী হাদীছটিকে হাসান বলেছেন।
[19]. বুখারী হা/৩৯২৫।
[20]. মুসলিম হা/৯১৮।
[21]. বুখারী হা/৫৪৫৯।
[22]. বুখারী হা/৪৯২২।
[23]. বুখারী হা/৫১৬৬।
[24]. আবু দাঊদ হা/২২৮১।
[25]. মুসলিম হা/২৪৫০।
[26]. মুসলিম হা/২৮৫৬।
[27]. বুখারী হা/২৯২৪।
[28]. মুসলিম হা/২৯৪১।