নতুন অভিযাত্রার প্রারম্ভে
আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক
আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশের আয়োজনে চারদিন ব্যাপী কেন্দ্রীয় শিক্ষা সফর অনুষ্ঠিত হয় গত ২১-২৫ মার্চ ২০২১। সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্ট, করমজল, নীল কমল ও দুবলার চরকে কেন্দ্র করে সফরসূচি সাজানো হয়। এতে মুহতারাম আমীরে জামাআ‘ত ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ সংগঠনের কর্মী ও সুধী প্রায় তিন শতাধিক ভ্রমণকারী অংশগ্রহণ করেন। আলহামদুলিল্লাহ আমারও সুযোগ হয়েছিল এ দাওয়াতী শিক্ষাসফরে অংশগ্রহণের। নিম্নে তারই সংক্ষিপ্ত বিবরণ উল্লেখ করছি।
২১শে মার্চ ২০২১ইং : নির্ধারিত তারিখে আমরা রাজশাহী থেকে গমনকারী প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মী ও সুধী রাজশাহী রেলষ্টেশনে উপস্থিত হলাম। আমি উপস্থিত হয়েছিলাম সবার আগেই। নিজ নিজ লাগেজ নিয়ে সাগরদাড়ি আন্তনগর ট্রেনে উঠে সবাই মিলে বসলাম। সকাল ৬.৫০ মিনিটে ট্রেন ছেড়ে দিল খুলনার উদ্দেশ্যে। বসন্তের দিনটা ছিল খুব সুন্দর রৌদ্রজ্জ্বল। কোন কোন গাছে পাতা গজিয়ে সবুজ রং ধারণ করেছে। আবার অনেক গাছের পাতা ঝরে পড়েছে। সকালে একটু একটু শীত। ট্রেনের সিটে বসে থেকে জানালা দিয়ে দেখছি যমীনের শস্য ভান্ডার। চারিদিকে সবুজ আর সবুজ। মাঠ ভরা শস্য দেখতে দেখতে ট্রেন এসে পেঁŠছলো ঈশ্বরদী স্টেশনে। আমাদের সাথীরা ট্রেনের মধ্যে যার যার মত দাওয়াতী কাজ করছেন। কেউবা বই-পত্রিকা মানুষের হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন। এসবের মাঝেই দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা পর বাদ যোহর ট্রেনটি গন্তব্যস্থল খুলনা মহানগরী স্টেশনে এসে দাড়াল। নির্ধারিত সময়ের কিছু পরে আমরা পৌঁছলাম। তারপর ট্রেন থেকে নেমে খুলনা শহরের দিকে রওনা হলাম। আমাদেরকে দিক-নির্দেশনা দেওয়ার জন্য খুলনা যেলার বিজ্ঞ সভাপতি মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম ভাই সাথে ছিলেন। তিনি একটা হোটেলে আমাদের দুপুরের খাবারের জন্য নিয়ে গেলেন। হোটেলটির নাম ‘বাংলা হোটেল’। হোটেলে পেঁŠছে দেখলাম মুহাতারাম আমীরে জামা‘আত আমাদের আগেই ঐ হোটেলে উপস্থিত হয়েছেন। যা হোক খাওয়া শেষে আমরা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বিকালে আহলেহাদীছ আন্দোলন-এর খুলনা যেলা সম্মেলনে যোগদানের জন্য রওয়ানা হলাম। সম্মেলনস্থল ‘পল্লী মঙ্গল হাইস্কুল মাঠ’। বক্তাগণ ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করলেন। রাত সাড়ে নয়টায় মুহতারাম আমীরে জামা’আত ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব স্যার শুরু করলেন তাঁর আলোচনা। তিনি তাঁর আলোচনায় হৃদয়গ্রাহী ভাষায় আন্দোলনের কর্মীদের আন্তরিক হওয়ার জন্য জোর তাকীদ দিলেন। স্যারের আলোচনা শেষ হলে আমরা খুলনা লঞ্চ ঘাটে উপস্থিত হলাম। উল্লেখ্য যে, পূর্ব থেকেই আমাদের প্রায় তিনশত পর্যটকের জন্য ৫টি লঞ্চ ভাড়া করা হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে বনবিলাসে ৬৬ জন, খেয়াপারে ৬৪ জন, ওয়াটার কিং-এ ৫৪ জন, মেঘনা রাণীতে ৫৬ জন এবং রাজধানীতে ৩৩ জন যাত্রী ছিলেন। ভ্রমণকারীদের প্রস্ত্ততি গ্রহণ করা শেষ হলে রাত ২টায় গন্তব্যের উদ্দেশ্যে লঞ্চ যাত্রা শুরু করে।
২২শে মার্চ ২০২১ ইং : পরদিন সকাল ১০টায় আমরা সুন্দরবন হাড়বারিয়া ইকো-টুরিজম কেন্দ্রে লঞ্চ থেকে নামি। একটু সামনে এগিয়ে দেখতে পেলাম বন্যপ্রাণীদের পানি পান করার জন্য একটি পুকুর আছে। সেই পুকুরের ঘাটে আমরা কিছুক্ষন অবস্থান করলাম। অনেকের দৃষ্টি গিয়ে পড়ল বাঘের পায়ের ছাপের উপর। বেলা দেড়টার দিকে পুনরায় কটকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হ’ল। লঞ্চে আমাদের সাথে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত বসা। বিশাল জলধি দেখছি আর মনে মনে ভাবছি মহান আল্লাহর সৃষ্টি কত অপরূপ! তিনি বলেন, তিনি দু’টি সমুদ্রকে প্রবাহিত করেছেন মিলিতভাবে। উভয়ের মাঝে করেছেন অন্তরাল, যা তারা অতিক্রম করে না (রহমান ৫৫/১৯-২০)। কটকা পয়েন্টে এসে আমরা অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করলাম। কারণ জোয়ার না থাকায় লঞ্চ তীরে ভিড়তে পারছে না। ফলে দুপুরের খাবার আসতে অনেক দেরী হ’ল। অবশেষে বেলা চারটার দিকে দুপুরের খাওয়া সেরে আমরা যাত্রা শুরু করলাম। চারিদিকে বিচিত্র ধরণের গাছপালা। আল্লাহর ভাষায়- ‘আর পৃথিবীকে আমরা প্রসারিত করেছি এবং তাতে পাহাড় সমূহ স্থাপন করেছি। আর তাতে উৎপন্ন করেছি সকল প্রকার নয়নাভিরাম উদ্ভিদরাজি (কাফ ৫০/৭) । সন্ধ্যায় মাগরিব ও এশার ছালাত কছর করার পর মুহতারাম আমীরে জামা’আতসহ আলোচনা বৈঠক শুরু হয়। আলোচনার শুরুতে কুরআন তেলাওয়াত হওয়ার পর জাগরণী গেয়ে শুনালাম আমি। অতঃপর স্যারের উপদেশমূলক আলোচনা শুরু হ’ল।
২৩শে মার্চ ২০২১ ইং : বাদ ফজর ‘খেয়াপার’ লঞ্চে দরসে কুরআন আলোচনা শুরু হয়। এতে প্রথমে কুরআন তেলাওয়াত করে হাফেয আহমাদ আব্দুল্লাহ শাকির। এরপর মুহতারাম আমীরে জামা‘আত সূরা আলে ইমরানের ১৪২ নং আয়াতের উপর দীর্ঘ আলোচনা করেন। এরপর আমরা সুন্দরবনের শরণখোলা ও কচিখালি পরিদর্শন কেন্দ্রে পৌঁছে যাই। লঞ্চ থেকে নেমে শরণখোলা রেঞ্চ কচিখালি পরিদর্শন কেন্দ্রে দেখলাম এখানে একটি জুম‘আ মসজিদ আছে। ২০১৬ সালের সফরে এসে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত এই মসজিদে খুৎবা প্রদান করেন। কচিখালি পরিদর্শন কেন্দ্র ভ্রমণ শেষে আমরা ডিমের চর ভ্রমণ করার জন্য সকাল সাড়ে ৯টায় ট্রলারে চড়লাম। কিন্তু ভাটার কারণে ডিমের চরের কিনারে ট্রলার লাগানো সম্ভব হ’ল না। সে কারণে ট্রলারে বসে কিনার থেকেই ডিমের চর দেখলাম। আর একটি বিষয় সেটা হ’ল ডিমের চর হচ্ছে সুন্দরবনের শেষপ্রান্তের বনভূমি, যা দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের সাথে লাগোয়া। ট্রলার থেকে যতদূর দৃষ্টি যায়, দেখলাম বঙ্গোপসাগরের ঢেউ যেন বনভূমিসহ যা কিছু আছে, সবকিছুকে গ্রাস করার জন্য ধেয়ে আসছে। উত্তাল ঢেউ। গা শিহরে উঠে। এমন ভয়ংকর ঢেউ আমি কোনোদিন দেখিনি। স্মরণীয় হয়ে থাকল মুহূর্তটা। ফিরে এসে লঞ্চে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। বেলা একটার দিকে কটকা অভয়ারণ্য কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে ট্রলার যোগে কটকা নদী দিয়ে যাত্রা শুরু হ’ল। কিছুক্ষণের মধ্যে কটকা নদীর নীল পানির উপর দিয়ে পৌঁছে গেলাম কটকা অভয়ারণ্য কেন্দ্রে। এখানে বিশাল একটি ফুল গাছের নিচে স্যার কেদারায় বসলেন। এক ডাক্তার উদ্ভিদ বিষয়ে কিছু আলোচনা করলেন। আমরা সফরকারীরা বিষয়গুলো শুনলাম। স্যার কিছু উপদেশমূলক বক্তব্য শুনালেন। পার্শ্বে দেখতে পেলাম বিশাল একটি শিকড় অনেক দূর পর্যন্ত লম্বা হয়ে বিভিন্ন গাছের উপর দিয়ে বিস্তার করেছে। শিকড়টি কোন গাছের বুঝতে পারলাম না। গাছের নামও কেউ বলতে পারল না। এখানে অনেক জাতের বন্য প্রাণী রয়েছে। তার মধ্যে বানর ও হরিণ দেখলাম। দূর দিয়ে হরিণ দেঁŠড়ে পালাল। এই নিঝুম অরণ্যভূমিতে বাঘ বসবাস করে। তাদের চলার পথে পায়ের ছাপ দেখলাম। ঘন সবুজ বন। ভিতরে অন্ধকার। কিছু দেখা যায় না। কটকা অভয়ারণ্য কেন্দ্রে একজন দায়িত্বশীল ভাইকে পেলাম তার নাম মেহেদী আল-হাসান। তার সাথে কথা বললাম। সে বার বার বলছে ঘন নিঝুম বনে কেউ যেন প্রবেশ না করে। যাহোক কটকা ভ্রমণ শেষে সবাই লঞ্চে ফিরে আসলাম।
সন্ধ্যায় লঞ্চে কুইজ ও প্রশ্নোত্তর পর্ব এবং একটি আলোচনা সভা শুরু হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে কুরআন তেলাওয়াত করেন আব্দুর রহীম বিন আহসানুল্লাহ। জাগরণী পেশ করেন আনাস বিন আমানুল্লাহ, কেরামত আলী, কামরুজ্জামান ও শফীউল্লাহ। উক্ত অনুষ্ঠানে স্যারের থিসিসের উপর মাসিক আত-তাহরীক সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন আলোচনা করেন। তিনি প্রশ্ন করেন- থিসিস প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছে এমন কে আছেন, হাত উঠান। আমি হাত উঠালাম। উনি আমাকে ডাক দিয়ে বললেন, সামনে আসেন। আমি সামনে আসলাম। আলোচনা করলেন মাওলানা আমানুল্লাহ মাদানী, সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক নূরুল ইসলাম। শেষে আলোচনা করেন আমীরে জামা‘আত ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। কুইজ ও প্রশ্নোত্তর পর্ব পরিচালনা করেন ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন। অতঃপর খাওয়া শেষে রাত ১টার দিকে কটকা অভয়ারণ্য থেকে লঞ্চ ছেড়ে দিল। নিঝুম রাতে সবাই ঘুমানোর জন্য চলে গেল। সুন্দরবনের গহীন অরণ্যে ভ্রমণ করে যা বুঝলাম, অসংখ্য নদী সুন্দরবনকে বিভিন্ন কায়দায় বিভক্ত করেছে। আমরা যে সকল নদীতে ভ্রমণ করেছি তা হ’ল- ভৈরব, রূপসা, শিলা, পাকাটা, ঝাল, শিখা, ছোট কটকা, যুবতী রূপসুখী, হরিণকাটা প্রভৃতি।
২৪শে মার্চ ২০২১ ইং : সকাল ৭টা। সূর্য পূর্বাকাশে উঠেছে। আমরা কয়েকজন ভ্রমণকারী লঞ্চের ৩য় তলায় বসে আমরা আলাপ করছি। দেখতে দেখতে চলে আসলাম করমজল পয়েন্ট। সকাল সাড়ে সাতটায় অনিবার্য কারণ বশতঃ করমজল ভ্রমণ থেকেও আমাদের বিরত রাখা হ’ল। আবহাওয়া জনিত কারণে ইতিমধ্যেই হিরণ পয়েন্ট, নীল কমল, দুবলারচর ভ্রমণ বাতিল করা হয়েছে। এবার করমজলও বাতিল হওয়ায় আমরা বেশ হতাশ হলাম। এবার ফেরার পালা। বেলা ১০টার দিকে আমরা ফিরতি পথে যাত্রা শুরু করলাম। লঞ্চের ৩য় তলায় বসে আমরা মুহাতারাম আমীরে জামাআ‘তের কিছু উপদেশমূলক কথা শুনছিলাম। অনেকক্ষণ ধরে মুহাতারাম আমীরে জামা‘আত উপদেশমূলক আলোচনা করছেন। এবার তিনি তার জীবনের স্মরণীয় ঘটনার মধ্যে কারাগারে থাকাকালীন কিছু বিষয়ে কথা বলছিলেন। তিনি বেশীরভাগ সময় প্রশাসনিক দায়িত্বশীলগণের সাথে কথা বলার সময় ধমকের সুরে কথা বলতেন, যা তার অদ্যকার আলোচনা থেকে অনুধাবন করলাম। লঞ্চ থেকেই রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র দেখলাম, যেটা নিয়ে পত্রিকায় এত লেখালেখি। অতঃপর দীর্ঘ তিন দিনের সফর শেষে দুপুর ২:৪০ মিনিটে লঞ্চ আমাদেরকে খুলনায় নামিয়ে দিল। দুপুরে হালকা খাওয়া সেরে খুলনা স্টেশনের প্লাটফর্মে প্রবেশ করলাম। সাগরদাঁড়ি আন্তঃনগর ট্রেনটি দাড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ছেড়ে দিল ট্রেন। শুরু হ’ল বাড়ী ফেরার যাত্রা। যাচাই করে নেওয়া হ’ল কেউ ছাড়া পড়েছে কিনা। খুলনা থেকে ছেড়ে ট্রেনটি যশোর হয়ে আলমডাঙ্গা স্টেশনে এসে দাঁড়াল। শুনতে পেলাম পোড়াদহ স্টেশনের একটু আগে টুঙ্গীপাড়ার ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে। ক্লিয়ার হতে প্রায় ৩ ঘন্টা সময় লাগবে। শুনে কেন যেন খুব খুশী হলাম। ৩ ঘন্টা আলমডাঙ্গা স্টেশনে সময় কাটল। খবর পেয়ে স্থানীয় সংগঠনের ভাইরা অনেকেই জমায়েত হলেন। আমীরে জামাআ‘ত তাদের উদ্দেশ্যে স্টেশনে বসেই নছীহতমূলক বক্তব্য রাখলেন। এরপর আলমডাঙ্গা স্টেশন ছেড়ে ট্রেনটি আবার রাজশাহীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করল। ট্রেনের যাত্রীরা তখন গভীর ঘুমে মগ্ন। আমাদের বগীতে আমি এবং কেশরহাটের চা বিক্রেতা হাবিবুর রহমান শুধু জেগে আছি। ঐ গভীর ঘুমের সময় যাত্রীদের লাগেজ চুরির জন্য চোরের দল ট্রেনে উঠে। সুযোগ পেলে লাগেজ চুরি করে ট্রেন থেকে নীচে থাকা চোরের দলকে দিয়ে দেয়। বিষয়টি আমি ও হাবিবুর ভাই বুঝতে পেরে সবাইকে সচেতন করার চেষ্টা করেও কারো ঘুম ভাঙ্গাতে পারলাম না। অগত্যা আমি পশ্চিম দরজায় আর হাবিবুর ভাই পূর্ব দরজায় দাঁড়িয়ে পাহারা দিয়ে অবশেষে রাজশাহী স্টেশনে পেঁŠছালাম। যাত্রা শেষ হল। বিষয়টি আর কাউকে বললাম না। আমাদের দু’জনের মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রইল। গভীর রাতে ট্রেন রাজশাহী পৌঁছালো। আমরা যার যার বাড়ীর পথে রওয়ানা হলাম। এভাবেই আহলেহাদীছ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় শিক্ষা সফর ২০২১ সমাপ্ত হ’ল। ফালিল্লাহিল হামদ।
--
ভ্রমণ মানুষকে অনেক কিছু শেখায়, অনেক কিছু চেনায়, অনেক কিছু ভাবায়। অবচেতন মনের এই শিক্ষা কেউ কাজে লাগায়, কেউ কাজে লাগায় না। এই সফরে এমন হাজারো শিক্ষার মাঝে দু’জন বিশেষ মানুষ থেকে ভিন্ন কিছু শেখার পেয়েছি। তারা হলেন দু’জন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। তারা সংগঠনের কেবলমাত্র প্রাথমিক সদস্য। এদের মধ্যে একজন হলেন বি-বাড়িয়া যেলার নবীনগর থানার ভোলাচং গ্রামের মুহাম্মাদ তাজুল ইসলাম। খুব শান্ত ও ভদ্র একজন মানুষ। তার কথাবার্তা শুনে আমি মুগ্ধ, খুশী ও গর্বিত। তার কর্মজীবনের কিছু কাহিনী শুনেছি। তাতে বুঝেছি আন্দোলনের প্রতি তার আন্তরিকতা কত সীমাহীন। তার জন্য অন্তরখোলা দো‘আ রইল। অপরজন হলেন রাজশাহী যেলার কেশরহাট পেŠরসভার চা বিক্রেতা হাবীবুর রহমান। সেও একজন খেটে খাওয়া মানুষ। শান্ত, ভদ্র ও কর্মঠ। ভ্রমণকালে মুহতারাম আমীরে জামা‘আতসহ অন্যান্যদের চা খাওয়ানোর জন্য চা তৈরীর সরঞ্জামসহই তিনি শিক্ষা সফরে অংশগ্রহণ করেন। ভ্রমণকালে স্যার সহ অনেককেই চা পরিবেশন করেছেন। চা পরিবেশন করা হয়ত বড় কিছু নয়, কিন্তু তার আন্তরিকতা এবং ভালোবাসার প্রকাশটা ছিল একেবারে নিরেট। আহলেহাদীছ আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে অনেক বীর সিপাহসালার অবদান রেখেছেন। তাদের মধ্যে গাইবান্ধার ৩ ভাই সমীরুদ্দীন, যমীরুদ্দীন ও জামা‘আতুল্লাহ তাদের নিজস্ব জমি ৮০ বিঘার মধ্যে জিহাদের ফান্ডে ৪২ বিঘা দান করেছেন (থিসিস, পৃ. ৪২৪)। এমন আরো অনেকে আছেন যাদের ত্যাগের কথা ইতিহাসে স্মরণীয় বটে; কিন্তু তাজুল ইসলাম, হাবীবুর রহমানদের ত্যাগ স্বীকারের ছোট ছোট দৃষ্টান্তগুলোও আমার কাছে ছোট মনে হয় না। দ্বীনের জন্য তাদের আন্তরিকতা ও কুরবানীর কথা আমাদের অতীত দিনের মহান মানুষদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এসব মানুষদের নিখাঁদ তৎপরতার মধ্য দিয়েই আহলেহাদীছ আন্দোলন টিকে থাকবে সমহিমায় বাতিলের সমস্ত বাধাকে চূর্ণ করে ইনশাআল্লাহ। মুহতারাম আমীরে জামা‘আত খুলনা পল্লী মঙ্গল হাই স্কুল মাঠে তার আলোচনায় আন্দোলনের কর্মীদের আন্তরিক হওয়ার প্রতি জোর দিয়েছিলেন। আমরা আন্দোলনের কর্মী হিসেবে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাব, এটাই প্রত্যেকের কাম্য হওয়া উচিৎ। আল্লাহ রাববুল আলামীন আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপকে তার দ্বীনের রাস্তায় কবুল করে নিন। আমীন!
[লেখক : সিনিয়র এ্যাডভোকেট ও উপদেষ্টা
আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ রাজশাহী সদর]