বিচক্ষণ বিচারক
মুহাম্মাদ আব্দুর রঊফ
অনেক দিন আগের কথা। আববাসী
খলীফা হারূনুর রশীদ এক রাতে একটা স্বপ্ন দেখেছিলেন। সকালে স্বপ্নের
ব্যাখ্যাকারকদের উপস্থিত হয়ে খলীফার স্বপ্ন ব্যাখ্যা করার আদেশ দেওয়া
হয়েছিল।
প্রাচীনকালে মানুষ স্বপ্ন ও স্বপ্নের ব্যাখ্যায় বিশ্বাস করত। খারাপ স্বপ্ন দেখলে ভয় পেত এবং লক্ষ্য করত সকল স্বপ্নের একটা ব্যাখ্যা আছে ও তা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা দেয়। রাজা-বাদশাদের বিশেষ স্বপ্ন ব্যাখ্যাকারক থাকত। তাদের কাছে স্বপ্নের ভালো-মন্দ জিজ্ঞাসা করা হত। মাঝে মাঝে রাজাগণ নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী স্বপ্নের ব্যাখ্যা করিয়ে নিয়ে স্বার্থ হাসিল করতেন। কিছু কিছু ব্যাখ্যাকারক এই সুযোগে নিজের উদ্দেশ্য পূরণ করে নিত। হারূনুর রশীদ কয়েকবার এ সমস্ত স্বপ্ন ব্যাখ্যাকারকদের অসংলগ্ন কথা বলতে দেখেছিলেন। এই জন্য তাদের কিছু কথা বিশ্বাস করতেন। তিনি বলতেন যদি স্বপ্নের ব্যাখ্যায় জ্ঞানমূলক কিছু থাকে তাহলে সমস্ত ব্যাখ্যাকারক ভিন্ন ভিন্ন কথা না বলে একই রকম কথা বলবে। যদি স্বপ্নের কোন ব্যাখ্যা না থাকে তাহলে মানুষ এসব অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে কেন? খারাপ স্বপ্ন দেখে সবাই ভয় পেত বিধায় খলীফাদের নীতি ছিল যে, কয়েকজন ব্যাখ্যাকারককে পৃথক পৃথক ভাবে স্বপ্নে যা দেখেছে তা বর্ণনা করত। কয়েকজনের ব্যাখ্যা একই রকম হলে বিশ্বাস করত আর কারও সাথে না মিললে বিশ্বাস করত না। ঐ দিন দু’জন ব্যাখ্যাকারক উপস্থিত হ’ল।
খলীফা একজনকে ডেকে স্বপ্নের বর্ণনা দিয়ে বললেন, আমি স্বপ্নে দেখেছি এক এক করে আমার সব দাঁত পড়ে গিয়েছে। একটাও অবশিষ্ট ছিল না। এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?
ব্যাখ্যাকারক বলল, এটা ভাল স্বপ্ন নয়। এর ব্যাখ্যা হ’ল- খলীফার মৃত্যুর পূর্বেই তার সকল আত্মীয় ও কাছের মানুষ মারা যাবে।
খলীফা বললেন, আশ্চর্য তিক্ত স্বপ্ন! অতঃপর ব্যাখ্যাকারককে ১০০ বেত্রাঘাত করে রাজসভা থেকে বের করার আদেশ দিলেন। তারপর দ্বিতীয় ব্যাখ্যাকারককে উপস্থিত করে স্বপ্নের বর্ণনা দিয়ে বললেন ব্যাখ্যা কর।
সে বলল, এটা ভাল স্বপ্ন। এর ব্যাখ্যা হ’ল- খলীফার হায়াত তার সকল আত্নীয়-স্বজন থেকে বেশী হবে।
খলীফা খুশী হয়ে তাকে ১০০ স্বর্ণ মুদ্রা দেওয়ার আদেশ দিলেন। অতঃপর উযীরকে ডেকে বললেন, যাও! প্রথম ব্যাখ্যাকারকেও কিছু পুরস্কার দিয়ে দাও। সেও একই কথা বলেছে কিন্তু তার ভাষা ছিল তিক্ত।
শিক্ষা : প্রথমত : অনেক সময় ভালো কথাও ভুল বাক্যে উপস্থাপন করার কারণে শ্রুতিমধুর হয় না। এতে শ্রোতা রাগান্বিত হয়। সেজন্য কথা বলার সময় আমাদের বাক্য প্রয়োগের দিকে খেয়াল রাখা উচিত।
দ্বিতীয়ত : প্রত্যেক স্বপ্নের কিছু না কিছু ব্যাখ্যা থাকে। কিন্তু স্বপ্নের ব্যাখ্যার ভিত্তি স্রেফ ধারণা যা নিশ্চিত কোন খবর দেয় না। আল্লাহ শুধুমাত্র ইউসুফ (আঃ)-কে স্বপ্ন ব্যাখ্যা করার ইলমী মু‘জিযা দান করেছিলেন। হাদীছের ভাষ্যমতে, ভালো স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। যা সত্যও হতে পারে আবার নিছক কল্পনাও হতে পারে। সেজন্য বর্তমান সময়ে কেউ একটা স্বপ্ন দেখে ব্যাখ্যা দাবী করলেই সেটা সত্য বলে বিশ্বাস করা ভ্রম ছাড়া কিছুই নয়।
অনুবাদক : মুহাম্মাদ আব্দুর রঊফ
এম.এ (অধ্যায়নরত), ফারসী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।