হঠকারিতায় ধ্বংস
নাজমুন নাঈম
অনেক দিন আগের কথা। এক
বৃদ্ধা মহিলা এক পন্ডিতের খোঁজে বের হয়েছিলেন। লোকজনকে জিজ্ঞাসা করতে করতে
পন্ডিতের কাছে এসে অনেকের উপস্থিতিতে একটি সমস্যার সমাধান জানতে চাইলেন।
পন্ডিত ব্যক্তি কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর বললেন, জানি না। আমি এ সমস্যার সমাধান বের করে পরে জানাব। বৃদ্ধা মহিলা জানত এই পন্ডিত বড়ই বিজ্ঞ মানুষ, সব কিছুই জানে। কিন্তু তার উত্তর শুনে মন খারাপ হয়ে যায়।
সে বলে, খুবই আশ্চর্য ব্যাপার! আপনি একজন রাজার উযীর। আপনাকে সকলেই জ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী ও পন্ডিত বলে জানে। আপনি কত রাজা-বাদশার কাছ থেকে সম্মানস্বরুপ বিভিন্ন সময় উপহার ও বেতন পেয়েছেন। অথচ আমার মত এক বৃদ্ধা মহিলা যখন কিছু জিজ্ঞাসা করছে, তখন বলছেন কিছুই জানি না। তাহলে এত সম্মান কেন পান? কেন এত টাকা বেতন নেন?’
পন্ডিত সম্মানের সাথে উত্তর দিল। আমি সামান্য কিছু জিনিস জানি এবং অনেক কিছুই জানি না। আমি কখনো সব কিছু জানি এমন দাবী করি না। আর ঐ সমস্ত কম জানা বিষয়ের জন্যই সম্মান পাই। সেজন্য আমি আপনার সমস্যার সমাধান জানি না বলে, আপনি আমাকে সম্মানও করেননি। আমি ঐ সমস্ত কম জানা বিষয়ের জন্যই পুরস্কার পেয়েছি। যদি আমি যা জানি না, তার জন্য রাজা-বাদশারা আমাকে বেতন বা পুরস্কার দিতে চাইত, তাহলে শুধু রাজার ভান্ডার নয় বরং এই দুনিয়ায় যা কিছু আছে সব শেষ হয়ে যেত। কারণ আমি অনেক কিছুই জানি না। আপনি বিশ্বাস করুন, আমি যা জানি না রাজাও তার জন্য আমাকে পুরস্কার দেয় না। যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে রাজার কাছে গিয়ে প্রশ্ন করুন।
বৃদ্ধ মহিলাটি লজ্জিত হয়ে বলল, আমি যা বলেছি তার জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। আমি ৫০ বছর যাবৎ মক্তব পরিচালনা করি। মানুষ আমাকে জ্ঞানী মনে করে অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করে। আর আমার যতদূর মনে পড়ে আমি কখনো জানি না এ কথা বলিনি। সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে এসেছি। এতে মানুষকে আমার উপর খুশিই হতে দেখেছি।
জ্ঞানী লোকটি বললেন, যখন কেউ সবাইকে তার উপর খুশী হতে দেখতে চাই, তখন অবশ্যই পরস্পর বিরোধী কথা বলবে। যে কখনো বলে না আমি জানি না, সে অবশ্যই অনেক কথা ভুল বলবে। সবাই কিছু বিষয় জানে এবং কিছু বিষয় জানে না। সবকিছু জানা সবার পক্ষে হয়ত সম্ভব হতে পারে। কিন্তু তেমন কেউ এখনো এই পৃথিবীতে জন্মায় নি।
শিক্ষা : আল্লাহ মানুষকে সামান্যই জ্ঞান দিয়েছেন। যৎসামান্য জ্ঞান দিয়ে সব কিছু জানা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য জানি না বলা জ্ঞানী মানুষের প্রধান বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত। এতে ইলমের অহংকার থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা যাবে, ইনশাআল্লাহ।
অনুবাদক : মুহাম্মাদ আব্দুর রঊফ
এম.এ (অধ্যায়নরত), ফারসী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।