মাহে রামাযান : মুছে যাক যাবতীয় গ্লানি

মুযাফফর বিন মুহসিন 649 বার পঠিত

নবী-রাসূলগণ ছাড়া কোন মানুষই নিষ্পাপ নয়। এ জন্য মানুষ দুনিয়াবী পরীক্ষার জীবনে শিরক-বিদ‘আত, মিথ্যাচার, প্রতারণা, ছলনা, চোগলখোরী, গীবত, তোহমত, দুর্নীতি, আত্মসাৎ, সূদ-ঘুষ, জুয়া-লটারী, হত্যা, খুন, গুম, গর্ব-অহংকার, যেনা-ব্যভিচার, যুলুম-অত্যাচার, লোভ-লালসা, স্বেচ্ছাচারিতা, দাম্ভিকতা, মুনাফেকী, চাটুকারিতা, পদলেহন, পরচর্চা, পরশ্রীকাতরতা, চৌর্যবৃত্তি, ভন্ডামি, অন্যের পিছনে লাগা, অন্যের ইযযত হরণ করা, হিংসা-বিদ্বেষ ইত্যাদি নোংরা কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ে। তাই যারা নিজেদেরকে পাপমুক্ত ফেরেশতাতুল্য মনে করে বা অন্য কোন ব্যক্তি বিশেষকে নিষ্পাপ ভাবে এবং ব্যক্তিগত দম্ভে আল্লাহর নিকট বিনীত হয় না, তারা ইবলীস শয়তানের বিশেষ প্রতিনিধি। কারণ এগুলো ইবলীসী স্বভাব।

মানুষ যেন পাপমুক্ত হয়, পাপ করে যেন ক্ষমা ভিক্ষা করতে পারে সে জন্য আল্লাহ অনেকগুলো মাধ্যম উপহার দিয়েছেন। তার মধ্যে অন্যতম মাধ্যম ছিয়াম। মূলতঃ ছিয়াম ও নফল ছাদাক্বা পাপ মোচনের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। বড় বড় অপরাধ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহ তা‘আলা প্রায় স্থানে ছিয়াম ও ছাদাক্বার কথা বলেছেন (বাক্বারাহ ১৯৬; নিসা ৯২; মায়েদাহ ৮৯; মুজাদালাহ ৪)। বিশেষ করে রামাযান মাস ক্ষমা পাওয়ারই মাস। বান্দা যেন তাক্বওয়া অর্জন করে পাপমুক্ত হতে পারে এবং আল্লাহর ইবাদতের প্রতি সর্বোচ্চ আনুগত্য প্রকাশ করতে পারে সে জন্যই এই রামাযান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর ছিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করা হয়েছিল; যেন তোমরা তাক্বওয়াশীল হতে পার’ (বাক্বারাহ ১৮৩)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, নেকীর উদ্দেশ্যে ছিয়াম পালন করবে, তার পূর্বের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি রামাযান মাসে তারাবীহর ছালাত আদায় করবে তার পূর্বের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং যে ব্যক্তি ক্বদরের রাত্রিতে ইবাদত করবে তার পূর্বের পাপ সমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে (বুখারী হা/২০০৯ ও ২০১৪)। ছিয়ামের মূল লক্ষ্য মানুষকে পাপমুক্ত করা এবং জাহান্নাম থেকে নাজাত দেয়া। রাসূল (ছাঃ) অন্য হাদীছে বলেন, আল্লাহ আহক্ষান করে বলেন, হে কল্যাণের অভিসারী! এগিয়ে যাও। হে অকল্যাণের অভিযাত্রী! তোমার গতি রোধ কর। রামাযানের প্রত্যেক রাত্রিতে আল্লাহ তা‘আলা অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক দিন ইফতারের সময় অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন (ইবনু মাজাহ হা/১৬৪২-৪৩)

নফল ছিয়াম সম্পর্কেও একই ধরনের ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে। আশুরার ছিয়াম সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমি আল্লাহর নিকট আশা করছি যে, আশুরার ছিয়ামের বিনিময়ে আল্লাহ পূর্বের এক বছরের পাপ ক্ষমা করে দিবেন। অনুরূপ আরাফার ছিয়াম সম্পর্কে বলেন, আমি আল্লাহর কাছে আশা করছি যে, এই একটি ছিয়ামের বিনিময়ে বিগত এক বছরের এবং আগামী এক বছরের যাবতীয় পাপ ক্ষমা করে দিবেন (মুসলিম হা/২৮০৩)। অন্য হাদীছে এসেছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিন ছিয়াম পালন করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার মাঝে আর জাহান্নামের মাঝে এত বড় একটি গর্ত তৈরি করবেন, যা আসমান ও যমীনের মাঝের দূরত্বের সমান (তিরমিযী হা/১৬২৪, মিশকাত হা/২০৬৪)। ছিয়াম জাহান্নামের ঢাল (তিরমিযী/৭৬৪)। অন্যত্র বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একটি ছিয়াম পালন করবে, আল্লাহ তার থেকে জাহান্নামকে ৪০ বছর পথের দূরত্বে রাখবেন (বুখারী হা/২৮৪০; মিশকাত হা/২০৫৩)। অন্য হাদীছে এসেছে, যে ব্যক্তি রামাযান মাস পেল অথচ পাপ ক্ষমা করে নিতে পারল না সে অভিশপ্ত বা তার নাক ধূলায় ধূসরিত হোক (তিরমিযী হা/৩৫৪৫)। ছিয়াম ক্বিয়ামতের মাঠে আল্লাহর কাছে ছায়েমের জন্য সুপারিশ করবে এবং আল্লাহ তার সুপারিশ কবুল করবেন (বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/১৮৩৯)

অতএব আসুন! আমরা আল্লাহভীতি অর্জন করি। আত্মশুদ্ধির পথ অবলম্বন করি। যাবতীয় গস্নানি ঝেড়ে ফেলি। মাহে রামাযানের বরকতে পাপমুক্ত হই। আল্লাহর কাছে অবনত মস্তকে ক্ষমা প্রার্থনা করি। জগৎ সমূহের প্রতিপালক, রাজাধিরাজ, সকল বিচারকের বিচারক আহকামুল হাকেমীন একজন আছেন বলে দৃঢ় বিশ্বাস করি। তিনিই প্রকৃত বিচারক। সামান্য কোন পাপ, কোন ছলনা, কোন অপরাধ, আত্মগরিমা আল্লাহর সূক্ষ্ম দৃষ্টিকে ফাঁকি দিতে পারবে না। তিনি অন্তরের খবর রাখেন। কে কোন্ উদ্দেশ্যে কী করছে সবই তিনি জানেন। ক্বিয়ামতের মাঠে এর যথাযথ হিসাব নেয়া হবে। সেখানে পালানোর কোন সুযোগ থাকবে না।

হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে দুনিয়াবী ও পরকালীন জীবনে যাবতীয় বিপদ থেকে রক্ষা করুন! আমাদের ত্রম্নটিগুলো মার্জনা করুন! হক্ব বুঝার ও হক্ব পথে চলার তাওফীক্ব দান করুন! আমাদের আমলগুলো কবুল করুন এবং তার মাধ্যমে যাবতীয় কল্যাণ ও বরকতের পথ উন্মুক্ত করুন! আপনার দয়া ও রহমতের ছায়ায় আমাদের আচ্ছন্ন করুন-আমীন!!

رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ



বিষয়সমূহ: ছিয়াম-রামাযান
আরও