মৃত্যু যন্ত্রণার ভয়াবহতা
আব্দুর রহীম
মিনারুল ইসলাম 1190 বার পঠিত
নফল ইবাদতকারীগণ :
মহান আল্লাহর রেযামন্দী হাছিলের জন্য ফরয ইবাদতের পাশাপাশি নফলের ইবাদতের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা বিচার দিবসে ফরয ইবাদতের ঘাটতি পূরণে নফল ইবাদত সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। নফল ইবাদত সম্পর্কে হাদীছে এসেছে,
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কোন ওলীর সঙ্গে দুশমনি রাখবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব। আমি যা কিছু আমার বান্দার উপর ফরয করেছি, তা আদায়ের মাধ্যমে বান্দা যতটা নৈকট্য লাভ করতে পারবে, তা অন্য কোনভাবে পারবে না। আর আমার বান্দারা নফল ইবাদত করতে করতে আমার এতটা নৈকট্য লাভ করে যে অবশেষে আমি তাকে আমার প্রিয়পাত্র বানিয়ে নেই। আর আমি যখন তাকে প্রিয় করে নেই তখন আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে ধরে। আমিই তার পা হয়ে যাই, যা দিয়ে সে চলে। সে যদি আমার কাছে কোন কিছু চায়, তবে আমি নিশ্চয় তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দেই। আমি কোন কাজ করতে চাইলে তা করতে কোন দ্বিধা করি না, যতটা দ্বিধা করি মুমিন বান্দার প্রাণ নিতে। সে মৃত্যুকে অপসন্দ করে আর আমি তার বেঁচে থাকাকে অপসন্দ করি’।[1]
অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ নফল ইবাদতকারীগণকে খুবই ভালবাসেন, এমনকি তার প্রতিটি চাওয়া আল্লাহ পূরণ করেন। তাই আসুন! নফল ইবাদত আদায়ে আগ্রহী হই এবং জান্নাতের পথকে সুগম করি।
(ক) নফল ছালাত : যে সমস্ত নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায় তার অন্যতম হ’ল ছালাত। হাদীছে এসেছে, عَنْ رَبِيعَةَ بْنِ كَعْبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ كُنْتُ أَبِيتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَتَيْتُهُ بِوَضُوئِهِ وَحَاجَتِهِ فَقَالَ لِي سَلْ فَقُلْتُ أَسْأَلُكَ مُرَافَقَتَكَ فِي الْجَنَّةِ، قَالَ أَوَغَيْرَ ذَلِكَ؟ قُلْتُ: هُوَ ذَاكَ، قَالَ فَأَعِنِّي عَلَى نَفْسِكَ بِكَثْرَةِ السُّجُودِ- রাবী‘আ ইবনু কা‘ব (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে রাত্রি যাপন করতাম। একদা তার ওযু ও ইস্তেনজার পানি উপস্থিত করলাম। তিনি আমাকে বললেন, তোমার কিছু চাওয়ার থাকলে চাও। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আমি আপনার সাথে জান্নাতে থাকতে চাই। রাসূল (ছাঃ) বললেন, এছাড়া আর কিছু চাও। আমি বললাম, এটাই চাই। তিনি বললেন, তাহ’লে বেশী বেশী সিজদাহ করে আমাকে এ ব্যাপারে সাহায্য কর’।[2]
অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, বেশী বেশী সিজদার মাধ্যমে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে জান্নাতে থাকার সুযোগ রয়েছে। আর রাসূল (ছাঃ) নফল ছালাতের প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, রাত দিনে বার রাকা‘আত নফল ছালাত আদায় করলে জান্নাতে একটি ঘর নির্মিত হয়। হাদীছে এসেছে,عَنْ أُمِّ حَبِيبَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ صَلَّى فِي يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ اثْنَتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً بُنِيَ لَهُ بَيْتٌ فِي الْجَنَّةِ أَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعَشَاءِ، وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ صَلَاةِ الْفَجْرِ- ‘উম্মু হাবীবা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দিন-রাতে বার রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করবে, তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করা হবে। চার রাক‘আত যোহরের পূর্বে, দুই রাক‘আত যোহরের পরে, দুই রাক‘আত মাগরিবের পরে, দুই রাক‘আত এশার পরে এবং ফজরের পূর্বে দু’রাক‘আত মোট বার রাক‘আত সুন্নাতসমূহের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত হ’ল ফজরের পূর্বে দু’রাক‘আত ছালাত’।[3]
(খ) ফজরের সুন্নাত : রাসূল (ছাঃ) বলেন, رَكْعَتَا الْفَجْرِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا-‘ফজরের দু’রাক‘আত সুন্নাত ছালাত দুনিয়া ও দুনিয়ার সকল জিনিসের চেয়ে বেশী উত্তম’।[4]
(গ) ইশরাকের ছালাত : হাদীছে এসেছে, عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ صَلَّى الْغَدَاةَ فِيْ جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ كَانَتْ لَهُ كَأَجْرِ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ تَامَّةٍ تَامَّةٍ تَامَّةٍ- আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের ছালাত জামা‘আতে আদায় করল, অতঃপর সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত বসে আল্লাহর যিকির করল, অতঃপর দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করল, তাহ’লে তার হজ্জ ও ওমরা পালনের পূর্ণ নেকী হ’ল। রাসূল (ছাঃ) ‘পরিপূর্ণ’ কথাটি তিনবার উচ্চারণ করেছেন’।[5]
ওমরা ও হজ্জ পালন করা সকলের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। তাই যে ব্যক্তি ফজরের ছালাত আদায় করে যথাস্থানে বসে তাসবীহ-তাহলীল ও যিকির করে। অতঃপর সূর্য উদয় হওয়ার পর দু’রাকা‘আত ছালাত আদায় করলে পূর্ণ হজ্জ ও ওমরা পালনের নেকী লাভ হবে।
(ঘ) চাশতের ছালাত : হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِيْ مُوْسَى رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ صَلَّى الضُّحَى أَرْبَعًا وَقَبْلَ الأُوْلَى أَرْبَعًا بُنِيَ لَهُ بَيْتٌ فِي الْجَنَّةِ- আবু মুসা আল-আশ‘আরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি চাশতের চার রাক‘আত ছালাত আদায় করে এবং যোহরের পূর্বে চার রাক‘আত ছালাত আদায় করে, তার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করা হয়’।[6]
(ঙ) কুরআন তেলাওয়াত : কুরআন তেলাওয়াত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কুরআন তেলাওয়াত করলে ঈমান বৃদ্ধি পায়, হৃদয় নরম হয়, মনে আল্লাহভীতি সৃষ্টি হয়। আল্লাহ সম্মান বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহর রহমত ও বরকত নাযিল হয়। আবার তেলাওয়াত না করার কারণে লাঞ্ছিত করেন। তাই কম করে হলেও নিয়মিত তেলাওয়াত করতে হবে। কেননা তা হ’ল ঈমানী দায়িত্ব।
হাদীছে এসেছে, عَنِ الْبَرَاءِ قَالَ كَانَ رَجُلٌ يَقْرَأُ سُورَةَ الْكَهْفِ وَإِلَى جَانِبِهِ حِصَانٌ مَرْبُوطٌ بِشَطَنَيْنِ فَتَغَشَّتْهُ سَحَابَةٌ فَجَعَلَتْ تَدْنُو وَتَدْنُو وَجَعَلَ فَرَسُهُ يَنْفِرُ فَلَمَّا أَصْبَحَ أَتَى النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ- বারা ইবনু আযিব (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি সূরা কাহফ পড়ছিল এবং তার কাছে তার ঘোড়া রশি দ্বারা বাঁধা ছিল। এসময় এক খন্ড মেঘ তাকে ঢেকে নিল এবং তার অতি নিকটতর হ’তে লাগল। আর তার ঘোড়া লাফাতে লাগল। সে যখন সকালে নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট এসে ঘটনা বর্ণনা করল। فَقَالَ تِلْكَ السَّكِينَةُ تَنَزَّلَتْ بِالْقُرْآنِ ‘রাসূল (ছাঃ) বললেন, তা ছিল আল্লাহর রহমত ও শান্তি, যা কুরআন তেলাওয়াতের কারণে নেমে এসেছিল’।[7] অন্য বর্ণনায় এসেছে,تِلْكَ الْمَلاَئِكَةُ دَنَتْ لِصَوْتِكَ وَلَوْ قَرَأْتَ لَأَصْبَحَتْ يَنْظُرُ النَّاسُ إِلَيْهَا لَا تَتَوَارَى مِنْهُمْ ‘তারা ছিল ফিরিশতা। তোমার কুরআন তেলাওয়াতের শব্দ শুনে নিকটতর হয়েছিল। তুমি যদি পড়তে থাকতে তারা সকাল পর্যন্ত তথায় থেকে যেত এবং মানুষ তাদের দেখতে পেত, তারা মানুষের দৃষ্টি থেকে লুকাতে পারত না’।[8]
এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, কুরআন তেলাওয়াত করলে আল্লাহর রহমত ও শান্তি নাযিল হয়। ফিরিশতারা কুরআন শুনার জন্য দল বেঁধে নেমে আসেন।
হাদীছে এসেছে, وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: اقْرَأُوا الْقُرْآنَ، فَإِنَّهُ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لِأَصْحَابِهِ، اقْرَأُوا الزَّهْرَاوَيْنِ: الْبَقَرَةَ، وَسُورَةَ آلِ عِمْرَانَ، فَإِنَّهُمَا تَأْتِيَانِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كَأَنَّهُمَا غَمَامَتَانِ، أَوْ كَأَنَّهُمَا غَيَايَتَانِ، أَوْ كَأَنَّهُمَا فِرْقَانِ مِنْ طَيْرٍ صَوَافَّ، تُحَاجَّانِ عَنْ أَصْحَابِهِمَا، اقْرَأُوا سُورَةَ الْبَقَرَةِ، فَإِنَّ أَخْذَهَا بَرَكَةٌ، وَتَرْكَهَا حَسْرَةٌ، وَلَا تَسْتَطِيعُهَا الْبَطَلَةُ আবু উমামা (রাঃ) বলেন, আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘তোমরা কুরআন তেলাওয়াত কর। কেননা কুরআন কিবয়ামতের দিন তেলাওয়াতকারীর জন্য সুফারিশ করতে আসবে। তোমরা দুই উজ্জ্বল সূরা বাক্বারাহ ও আলে ইমরান তেলাওয়াত কর। কেননা ক্বিয়ামতের দিন সূরা দু’টি দু’টি মেঘখন্ড অথবা দু’টি সামিয়ানা অথবা দু’টি পাখা প্রসারিত পাখির ঝাঁকরূপে আসবে এবং পাঠকদের পক্ষে আল্লাহর সামনে জোরালো দাবী জানাবে। বিশেষভাবে তোমরা সূরা বাক্বারাহ পড়। কারণ সূরা বাক্বারাহ পড়ার বিনিময় হচ্ছে বরকত আর না পড়ার পরিণাম হচ্ছে আক্ষেপ। অলস ব্যক্তিরাই এ সূরা পড়তে অক্ষম’।[9]
অত্র হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কুরআন ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট তেলাওয়াতকারীর জন্য সুফারিশ করবে। সূরা বাক্বারাহ ও সূরা আলে ইমরান ক্বিয়ামতের দিন মেঘখন্ডের ন্যায় ছায়া হয়ে থাকবে। সূরা দু’টি পাঠককে জান্নাতে দেয়ার জন্য আল্লাহর নিকট জোরালো দাবী করবে। সূরা বাক্বারাহ তেলাওয়াত করলে অর্থ সম্পদে বরকত হবে। আর অলস ব্যক্তিরা এ সূরা পড়তে চায় না।
(চ) ছিয়াম :
ছিয়াম এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা করলে কেউ তা দেখতে ও বুঝতে পারে না। স্বয়ং আল্লাহ তা দেখতে পান। এই জন্য তার প্রতিদান আল্লাহ নিজ হাতে দিবেন। হাদীছে কুদসীতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,كُلُّ عَمَلِ بَنِىْ آَدَمَ لَهُ إِلاَّ الصِّيَامَ فَإِنَّهُ لِيْ وَأَنَا أَجْزِئ بِهِ- ‘মানুষের প্রতিটি ভাল কাজ নিজের জন্য হয়ে থাকে, কিন্তু ছিয়াম শুধুমাত্র আমার জন্য, অতএব আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব’।[10] আবু হুরাইয়রা রাসূল (ছাঃ)-এর একটি হাদীছে তিনি বলেছিলেন,يَا رَسُوْلَ اللهِ مُرْنِيْ بِعَمَلٍ، قَالَ عَلَيْكَ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لاَ عَدْلَ لَهُ ‘হে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)! আমাকে একটি অতি উত্তম নেক আমলের নির্দেশ দিন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তুমি ছিয়াম পালন কর। কেননা এর সমমর্যাদা সম্পন্ন কোন আমল নেই’।[11] كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ يُضَاعَفُ الْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلاَّ الصَّوْمَ فَإِنَّهُ لِيْ وَأَنَا أَجْزِي بِهِ ‘মানব সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান দশ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, কিন্তু ছিয়ামের বিষয়টি ভিন্ন। কেননা ছিয়াম শুধুমাত্র আমার জন্য, আমিই এর প্রতিদান দেব’।[12]
আবু উমামা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, اَلصِّيَامُ جُنَّةٌ يَسْتَجِنُّ بِهَا الْعَبْدُ مِنَ النَّارِ ‘ছিয়াম ঢাল স্বরূপ। এর দ্বারা বান্দা নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করতে পারে’।[13] যে সমস্ত আমলের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত লাভ করা যায় এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তার মধ্যে অন্যতম হ’ল ছিয়াম। রাসূল (ছাঃ) ফরয ছিয়াম ছাড়াও বিভিন্ন নফল ছিয়াম পালন করতেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন,تُعْرَضُ الْأَعْمَالُ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ وَالْخَمِيسِ، فَأُحِبُّ أَنْ يُعْرَضَ عَمَلِي وَأَنَا صَائِمٌ- ‘সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমল সমূহ (আল্লাহর দরবারে) পেশ করা হয়। অতএব আমি চাই যে, আমার আমল পেশ করা হোক আমার ছিয়াম অবস্থায়’।[14]
(ছ) দান-ছাদাকাহ :
দান এমন একটি নফল ইবাদত যার দ্বারা পরিবারে ও সম্পদে আল্লাহর রহমত ও বরকত নাযিল হয়। আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে যদি কেউ গোপনে দান করে, তাহ’লে সে ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়াতলে স্থান পাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, সাত শ্রেণীর ব্যক্তিকে আল্লাহ তার আরশের ছায়াতলে স্থান দিবেন। সেই দিন সেই ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না। হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللَّهُ فِي ظِلِّهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ فَذَكَرَ الْحَدِيثَ وَفِيهِ وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لَا تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ- ‘আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত নবী (ছাঃ) বলেছেন, সাত ধরণের লোককে আল্লাহ তা’আলা তাঁর ছায়ায় এমন দিনে আশ্রয় দিবেন, যেদিন তার ছায়া ব্যতীত কোন ছায়াই থাকবে না। অতঃপর রাবী পূর্ণ হাদীছটি বর্ণনা করেন। তার মধ্যে আছে (ঐ ব্যক্তি) : ‘সে ব্যক্তি যে এমন গোপনে দান করে যে, তার ডান হাত যা খরচ করে বাম হাত তা জানে না’।[15]
(জ) সালাম :
ইসলামে সালামের গুরুত্ব অপরিসীম। সালাম নামক এই শান্তির বাণীটি সামাজিক জীবনে এক বিশাল স্থান দখল করে আছে। রাসূূল (ছাঃ) বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে সালাম প্রদানকারীর মর্যাদা উল্লেখ করেছেন। যেমন হাদীছে এসেছে,
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনে আছ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল ইসলামে কোন কাজটি সর্বাধিক উত্তম? তিনি বললেন, অন্নহীনকে খাদ্য দেওয়া এবং পরিচিত-অপরিচিত সকলকে সালাম করা’।[16]
উক্ত হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে, ইসলাম ধর্মে ঐ ব্যক্তি সর্বোত্তম যে ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে খাদ্য খাওয়ায় এবং চেনা-অচেনা সবাইকে সালাম দেয়।
অন্যত্র এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لاَ تَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا وَلاَ تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا.أَوَلاَ أَدُلُّكُمْ عَلَى شَىْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوهُ تَحَابَبْتُمْ أَفْشُواالسَّلاَمَ بَيْنَكُمْ ‘তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না ঈমান আনায়ন করবে। আর তোমরা ঈমানদার হিসাবে গণ্য হবেনা, যতক্ষণ না তোমরা পরস্পরকে ভালবাসবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন উপায় নির্দেশ করব না যা অবলম্বন করলে তোমাদের পারস্পারিক ভালবাসা বৃদ্ধি পাবে। তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের প্রচলন করবে’।[17]
উপরোক্ত হাদীছ থেকে প্রমাণিত হয় যে, মানুষের জন্য সরাসরি জান্নাতে প্রবেশ করতে হলে পূর্ণ ঈমানদার হ’তে হবে। আর পূর্ণ ঈমানদার হওয়ার জন্য প্রয়োজন মুসলমানদের একে অপরকে ভালবাসা এবং পরস্পরের মাঝে ভালবাসার মাধ্যম হচ্ছে সালাম। পারস্পারিক সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে একে অপরের সাথে ভালবাসা সৃষ্টি হয়। আর এ ভালবাসার মাধ্যমে মু‘মিন জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে’।
(চলবে)
[লেখক : শিক্ষক, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী]
[1]. বুখারী হা/৬৫০২; মিশকাত হা/২২৬৬।
[2]. মুসলিম হা/১১২২।
[3]. তিরমিযী হা/৪১৫; ইবনু মাজাহ হা/১১৪১; মিশকাত হা/১১৫৯।
[4]. মুসলিম, মিশকাত হা/১১৬৪।
[5]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/৭৪৭।
[6]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/৭৪৫।
[7]. বুখারী হা/৫০১১; মিশকাত হা/২১১৭।
[8]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২১১৬।
[9]. মুসলিম, মিশকাত হা/২১২০।
[10]. বুখারী হা/১৯০৪।
[11]. নাসাঈ হা/২২২২।
[12]. মুসলিম হা/১১৫১।
[13]. আহমাদ হা/১৫২৯৯।
[14]. মিশকাত হা/২০৫৬।
[15]. বুখারী হা/১৪২৩; মুসলিম হা/১০৩১; তিরমিযী হা/২২৯১।
[16]. বুখারী হা/১১,২৭।
[17]. মুসলিম, মিশকাত হা/৪৬৩১।