ইসলামের প্রথম সমাচার (শেষ কিস্তি)

আসাদ বিন আব্দুল আযীয 715 বার পঠিত

রাসূল (ছাঃ) দ্বারা প্রথম আমীর নির্বাচন :

হযরত সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক যুদ্ধে রাসূল (ছাঃ) আব্দুল্লাহ বিন যাহশকে আমীর নিযুক্ত করেছিলেন। তিনিই ছিলেন রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক মনোনীত ইসলামের প্রথম আমীর’।[1]

ইসলামের প্রথম বিজিত রাষ্ট্র :

আব্দুল্লাহ ইবনু ইমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে ছিলাম তখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কোন শহরটি প্রথম বিজয় লাভ হবে কন্সটান্টিনোপোল না রোম? তখন রাসূল (ছাঃ) বলেছিলেন, বরং হিরাকিল শহর অর্থাৎ কন্সটান্টিনোপোল’।[2]

সিজদার আয়াত সম্বলিত প্রথম সূরা :

عَنْ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ أَوَّلُ سُوْرَةٍ أُنْزِلَتْ فِيْهَا سَجْدَةٌ وَالنَّجْمِ قَالَ فَسَجَدَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَسَجَدَ مَنْ خَلْفَهُ إِلَّا رَجُلًا رَأَيْتُهُ أَخَذَ كَفًّا مِنْ تُرَابٍ فَسَجَدَ عَلَيْهِ فَرَأَيْتُهُ بَعْدَ ذَلِكَ قُتِلَ كَافِرًا وَهُوَ أُمَيَّةُ بْنُ خَلَفٍ.

‘আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, সিজদার আয়াত সম্বলিত অবতীর্ণ হওয়া সর্বপ্রথম সূরা হ’ল আন-নাজম। এ সূরা পাঠকালে রাসূল (ছাঃ) সিজদা করলেন এবং সিজদা করলেন তাঁর পেছনের সকল লোক। তবে এক ব্যক্তিকে আমি দেখলাম, এক মুষ্টি মাটি হাতে তুলে তাতে সিজদা করছে। এরপর আমি তাকে কাফের অবস্থায় নিহত হ’তে দেখেছি। সে হল ‘উমাইয়াহ ইবনু খাল্ফ।[3]

মক্কায় প্রথম প্রকাশ্যে কুরআন তেলাওয়াতকারী ব্যক্তি :

উরওয়া বিন যুবাইর তার পিতা হ’তে বর্ণনা করেন, রাসূল (ছাঃ)-এর পর প্রথম মক্কায় প্রকাশ্যে কুরআন তেলাওয়াত করেছিলেন আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ)।[4]

অপর বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (ছাঃ)-এর মুখনিসৃত তেলাওয়াত থেকে প্রথম ব্যক্তি হিসাবে মক্কায় তেলাওয়াত করেছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ)। [5]

আল্লাহর রাস্তায় প্রথম তীর নিক্ষেপকারী :

হযরত কায়েস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আমি সা‘দ বিন আবী ওয়াক্কাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন, আমি প্রথম আরব ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় তীর নিক্ষেপের ক্ষেত্রে’।[6] অপর এক বর্ণনায় এসেছে, আবুল কাসেম বিন আব্দুর রহমান বলেন, আল্লাহর পথে প্রথম তীর নিক্ষেপকারী হলেন, সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাস’।[7]

ইসলামের প্রথম মুওয়ায্যিন :

হযরত বেলাল (রাঃ) ছিলেন ইসলামের প্রথম মুওয়ায্যিন। কাসেম বিন আব্দুর রহমান বলেন, ইসলামের প্রথম মুওয়ায্যিন হলেন, হযরত আবু বকরের আযাদকৃত গোলাম হযরত বেলাল (রাঃ)।[8]

আললাহর পথে ঘোড়া নিয়ে ছোটা প্রথম ব্যক্তি :

আবুল কাসেম বিন আব্দুর রহমান বলেন, أول من عدا به فرسه في سبيل الله من المسلمين المقداد بن الأسود رضي الله عنه ‘মুসলমানের মধ্যে আল্লাহর পথে ঘোড়া নিয়ে ছোটা প্রথম ব্যক্তি ছিলেন মিক্বদাদ বিন আমর’।[9] অপর এক বর্ণনায় আলী (রাঃ) বলেন, বদর যুদ্ধের দিন আমাদের মধ্যে একমাত্র ঘোড়সওয়ার ব্যক্তি ছিলেন মিক্বদাদ’।[10]

ইসলামের প্রথম লি‘আনকারী :

মুহাম্মাদ (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আমি একটি বিষয়ে আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম। আমার ধারণা ছিল যে, আমি যা জানতে চাই সে বিষয়ের জ্ঞান তার কাছে আছে। আনাস (রাঃ) বলেন, হিলাল ইবনু উমাইয়্যাহ (রাঃ) শারীক ইবনু সাহমার সাথে তার স্ত্রীর সম্পর্কে যিনার অভিযোগ আনলেন।

তিনি ছিলেন বারা ইবনু মালিকের বৈপিত্রেয় ভাই। ইসলামে ইনিই সর্বপ্রথম লি‘আন করেন। রাবী বলেন, তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে লি‘আনের মাধ্যমে সমাধা করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমার ঐ মহিলার প্রতি নযর রাখবে। যদি সে সোজা চুলধারী উজ্জ্বল বর্ণের লাল চোখ বিশিষ্ট সন্তান প্রসব করে তাহ’লে সে হিলাল ইবনু উমাইয়ার ঔরসজাত সন্তান। আর যদি সে (মহিলা) সুরমা চোখ বিশিষ্ট কোঁকড়ানো চুল, পায়ের চিকন নলা বিশিষ্ট সন্তান প্রসব করে তাহ’লে সে শারীক ইবনু সাহমার সন্তান। রাবী আনাস (রাঃ) বলেন, আমি জানতে পারলাম যে, ঐ মহিলাটি সুরমা চোখ বিশিষ্ট কুঞ্চিত কেশধারী সরু নলা বিশিষ্ট সন্তান প্রসব করেছে’।[11]

ইসলামের প্রথম যিহার :

খুওয়াইলাহ বিনতু মালিক ইবনু ছা‘লাবাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার সাথে আমার স্বামী আওস বিন ছামেত (রাঃ) যিহার করলেন। আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট এসে অভিযোগ করলাম। তিনি আমার স্বামীর পক্ষ থেকে আমার সাথে বিতর্ক করলেন এবং বললেন, আল্লাহকে ভয় করো, সে তো তোমার চাচার ছেলে। মহিলাটি বলেন, আমি সেখান থেকে চলে না আসতেই কুরআনের এ আয়াত অবতীর্ণ হ’ল, قَدْ سَمِعَ اللَّهُ قَوْلَ الَّتِي تُجَادِلُكَ فِي زَوْجِهَا ‘নিশ্চয় আল্লাহ ঐ মহিলার কথা শুনতে পেয়েছেন, যে তার স্বামীর ব্যাপারে তোমার সাথে বিতর্ক করছে’ (মুজাদালাহ ৫৮/১)। এখান থেকে কাফফারাহ পর্যন্ত অবতীর্ণ হ’ল। অতঃপর তিনি বললেন, সে একটি দাস মুক্ত করবে। মহিলাটি বলেন, তার সে সামর্থ্য নেই। তিনি বললেন, সে একাধারে দু’মাস ছিয়াম পালন করবে। মহিলাটি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! সে খুবই বৃদ্ধ, ছিয়াম পালন করতে অক্ষম। তিনি বললেন, তবে ষাটজন মিসকীনকে আহার করাবে। মহিলাটি বললেন, ছাদাক্বা করার মতো পয়সাও তার নেই।

মহিলাটি বলেন, এ সময় সেখানে এক ঝুড়ি খুরমা আসলো। তখন আমি (মহিলা) বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এ পরিমাণ আর এক ঝুড়ি খুরমা আমি তাকে সহযোগিতা করবো। তিনি বললেন, তুমি ভালই বলেছো। তুমি এর দ্বারা তার পক্ষ থেকে ষাটজন মিসকীনকে খাওয়াও এবং তোমার চাচাতো ভাইয়ের কাছে ফিরে যাও’।[12]

মক্কা বিজয়ের পর প্রথম জামা‘আতের ইমাম :

ইবনু জুরাইজ (রহঃ) বলেন, আমার নিকট বর্ণিত হয়েছে যে, মক্কা বিজয়ের পর মক্কায় প্রথম জামা‘আতের ছালাত আদায় করেন হুবাইরা বিন সাবল বিন আজলানী (রাঃ)। মক্কা বিজয়ের সময় আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তাকে মানুষদের নিয়ে ছালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর হুবাইরা (রাঃ) ছাকিফ গোত্রের লোক ছিলেন’।[13]

উম্মতে মুহাম্মাদীর উপর প্রথম গণীমত গ্রহণ করা বৈধকরণ :

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ‏ لَمْ تَحِلَّ الْغَنَائِمُ لأَحَدٍ سُودِ الرُّءُوسِ مِنْ قَبْلِكُمْ كَانَتْ تَنْزِلُ نَارٌ مِنَ السَّمَاءِ فَتَأْكُلُهَا‏ قَالَ سُلَيْمَانُ الأَعْمَشُ فَمَنْ يَقُولُ هَذَا إِلاَّ أَبُو هُرَيْرَةَ الآنَ فَلَمَّا كَانَ يَوْمُ بَدْرٍ وَقَعُوا فِي الْغَنَائِمِ قَبْلَ أَنْ تَحِلَّ لَهُمْ فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى ‏‏لَوْلاَ كِتَابٌ مِنَ اللَّهِ سَبَقَ لَمَسَّكُمْ فِيمَا أَخَذْتُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ‏‏-

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, আছে যে, নবী (ছাঃ) বলেছেন, তোমাদের পূর্ববর্তী কোন উম্মাতের লোকদের জন্য গণীমতের সম্পদ বৈধ ছিল না। আকাশ হ’তে আগুন অবতীর্ণ হত এবং তা পুড়িয়ে ফেলত। বর্ণনাকারী সুলাইমান আল-আমাশ বলেন, আজকের দিনে এ হাদীছ আবু হুরায়রা (রাঃ) ব্যতীত আর কে বলতে পারে? বদর যুদ্ধ সংঘটিত হলে লোকেরা গণীমতের মাল ব্যবহারে লিপ্ত হন, অথচ গণীমতের মাল তখন পর্যন্ত তাদের জন্য বৈধ ঘোষিত হয়নি। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ প্রসঙ্গে এ আয়াত অবতীর্ণ করেন, ‘যদি (গণীমত ও মুক্তিপণ গ্রহণ তোমাদের জন্য হালাল হওয়ার ব্যাপারে) পূর্বেই লিখিত না থাকত, তাহলে (ফিদইয়া স্বরূপ) তোমরা যা নিয়েছ, সেজন্য তোমাদের উপর ভয়ংকর শাস্তি আপতিত হত’(আনফাল ৮/৬৮)[14]

কবরে মানুষের যে অঙ্গটি প্রথম পঁচে দুর্গন্ধময় হবে :

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّ أَوَّلَ مَا يُنْتِنُ مِنَ الإِنْسَانِ بَطْنُهُ فَمَنِ اسْتَطَاعَ أَنْ لاَ يَأْكُلَ إِلاَّ طَيِّبًا فَلْيَفْعَلْ ‘মানুষের দেহের যে অংশ প্রথম দুর্গন্ধময় হবে, তা হ’ল তার পেট। সুতরাং যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে যে একমাত্র পবিত্র (হালাল) খাদ্য ছাড়া আর কিছু সে আহার করবেনা, সে যেন তাই করতে চেষ্টা করে’।[15]

কে প্রথম সিঙ্গায় ফুৎকার শুনবে?

উবাইদুল্লাহ ইবনু মু’আয আল আম্বারী (রহঃ) ইয়াকুব ইবনু আসিম ইবনু উরওয়াহ ইবনু মাসউদ আছ-ছাকাফী (রহঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-কে আমি এ কথা বলতে শুনেছি যে, একদা জনৈক লোক তার কাছে এসে বললেন, এ কেমন হাদীছ আপনি বর্ণনা করছেন যে, এত এত দিনের মধ্যে ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। এ কথা শুনে তিনি বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ অথবা ‘লা-ইলা-হা ইল্লালল-হ’ অথবা অনুরূপ কোন শব্দ। তারপর তিনি বললেন, আমি তো শুধু এ কথাই বলেছিলাম যে, অচিরেই তোমরা এমন ভয়াবহ ঘটনা প্রত্যক্ষ করবে যা ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দিবে। এ ঘটনা কায়েম হবেই হবে।

এরপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আমার উম্মতের মধ্যেই দাজ্জালের আবির্ভাব হবে এবং সে চল্লিশ পর্যন্ত অবস্থান করবে। আমি জানি না চল্লিশ দিন, না চল্লিশ মাস, না চল্লিশ বছর। এ সময় আল্লাহ রাববুল আলামীন মারইয়াম তনয় ঈসা (আঃ)-কে প্রেরণ করবেন। তাঁর আকৃতি উরওয়াহ ইবনু মাসঊদ-এর অবিকল প্রতিরূপ হবে। তিনি দাজ্জালকে সন্ধান করে তাকে ধ্বংস করে দিবেন। তারপর সাতটি বছর লোকেরা এমনভাবে অতিবাহিত করবে যে, দুই ব্যক্তির মধ্যে কোন শত্রুতা থাকবে না। তখন আল্লাহ তা’আলা সিরিয়ার দিক হ’তে শীতল বাতাস প্রবাহিত করবেন। ফলে যার হৃদয়ে কল্যাণ বা ঈমান থাকবে, এ ধরনের কোন লোকই এ দুনিয়াতে আর বেঁচে থাকবে না। বরং এ ধরনের প্রত্যেকের জান আল্লাহ তা‘আলা কবয করে নিবেন। এমনকি তোমাদের কোন লোক যদি পর্বতের গভীরে গিয়ে আত্মগোপন করে তবে সেখানেও বাতাস তার কাছে পৌঁছে তার জান কবয করে নিবে।

আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, তখন খারাপ লোকগুলো পৃথিবীতে অবশিষ্ট থাকবে। দ্রুতগামী পাখী এবং জ্ঞানশূন্য হিংস্র প্রাণীর ন্যায় তাদের স্বভাব হবে। তারা কল্যাণকে অকল্যাণ বলে জানবে না এবং অকল্যাণকে অকল্যাণ বলে মনে করবে না। এ সময় শয়তান এক আকৃতিতে তাদের কাছে এসে বলবে, তোমরা কি আহবানে সাড়া দিবে না? তারা বলবে, আপনি আমাদেরকে কোন বিষয়ের আদেশ করছেন? তখন সে তাদেরকে মূর্তিপূজার নির্দেশ দিবে। এমতাবস্থায়ও তাদের জীবনোপকরণে প্রশস্ততা থাকবে এবং তারা স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন-যাপন করবে। তখনই শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে। যে এ আওয়াজ শুনবে সে তার ঘাড় একদিকে অবনমিত করবে এবং অন্যদিকে উত্তোলন করবে। এ আওয়াজ সর্বপ্রথম ঐ লোকই শুনতে পাবে, যে তার উটের জন্য হাওদাজ সংস্করণের কাজে নিযুক্ত থাকবে।

আওয়াজ শুনামাত্রই সে অজ্ঞান হয়ে লুটে পড়বে। সাথে সাথে অন্যান্য লোকেরাও অজ্ঞান হয়ে যাবে। অতঃপর মহান আল্লাহ শুক্র ফোটা অথবা ছায়ার ন্যায় বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। বর্ণনাকারী নু’মান (রহঃ) সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এতে মানুষের শরীর পরিবর্ধিত হবে। আবার শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে। অকস্মাৎ তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে। অতঃপর আহবান করা হবে যে, হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট আস। অতঃপর (ফেরেশতাদের বলা হবে) তাদেরকে থামাও, কারণ তাদেরকে প্রশ্ন করা হবে। তারপর আবারো বলা হবে, জাহান্নামী দল বের কর। জিজ্ঞেস করা হবে, কত জন? উত্তরে বলা হবে, প্রত্যেক হাযার থেকে নয়শ’ নিরানববই জন। অতঃপর তিনি বললেন, এ-ই তো ঐদিন, যেদিন কিশোরকে পরিণত করবে বৃদ্ধে এবং এ-ই চরম সঙ্কটাপন্ন অবস্থার দিন’।[16]

ক্বিয়ামতের মাঠে কবর থেকে প্রথম যিনি উঠবেন :

ক্বিয়ামতের মাঠে রাসূল (ছাঃ) প্রথম ব্যক্তি হিসাবে কবর থেকে উঠবেন। হাদীছে তিনি বলেছেন,أَنَا سَيِّدُ وَلَدِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَأَوَّلُ مَنْ يَنْشَقُّ عَنْهُ الْقَبْرُ، وَأَوَّلُ شَافِعٍ، وَأَوَّلُ مُشَفَّعٍ ‘ক্বিয়ামতের দিন আমি আদম সন্তানদের নেতা হব এবং আমিই প্রথম ব্যক্তি যার কবর উন্মুক্ত করে দেয়া হবে এবং আমিই প্রথম সুফারিশকারী ও প্রথম সুফারিশ গৃহীত ব্যক্তি’।[17]

ক্বিয়ামতের দিন প্রথমে যে উম্মতের বিচার হবে :

ক্বিয়ামতের দিন উম্মতে মুহাম্মাদীর প্রথম বিচার হবে। হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,نَحْنُ آخِرُ الأُمَمِ وَأَوَّلُ مَنْ يُحَاسَبُ يُقَالُ أَيْنَ الأُمَّةُ الأُمِّيَّةُ وَنَبِيُّهَا ‘আমরা হলাম সর্বশেষ উম্মত এবং সর্বপ্রথম আমাদের হিসাব গ্রহণ করা হবে। বলা হবে, উম্মী (নিরক্ষর) নবীর উম্মত এবং তাদের নবী কোথায়?[18]

জান্নাতে প্রবেশকারী প্রথম জাতি :

হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَحْنُ الْآخِرُونَ الْأَوَّلُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَنَحْنُ أَوَّلُ مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ، আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আমাদের আগমন সবার শেষে। কিন্তু আমরা ক্বিয়ামতের দিবসে থাকব সবার প্রথমে। আমরা জান্নাতে প্রবেশকারীদের মধ্যে অগ্রগামী থাকব’।[19]

ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ ও মানুষের মাঝে প্রথম বিচার :

আল্লাহ ও মানুষের মাঝে প্রথম বিচার হবে ছালাতের। হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّ أَوَّلَ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ عَمَلِهِ صَلَاتُهُ فَإِنْ صَلُحَتْ فَقَدْ أَفْلَحَ وَأَنْجَحَ وَإِنْ فَسَدَتْ فَقَدْ خَابَ وَخَسِرَ ‘ক্বিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দা থেকে ছালাতের হিসাব নেওয়া হবে। ছালাত যথাযথভাবে আদায় হয়ে থাকলে সে সফল হবে ও মুক্তি পাবে। ছালাত যথাযথ আদায় না হয়ে থাকলে সে ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংস হবে’।[20]

ক্বিয়ামতের দিন মানুষের প্রথম বিচার :

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, أَوَّلُ مَا يُقْضَى بَيْنَ النَّاسِ فِى الدِّمَاءِ ‘ক্বিয়ামতের দিন মানুষের মাঝে সর্বপ্রথম বিচার করা হবে হত্যার বিচার’।[21]

ক্বিয়ামতের দিন বান্দা যে নে‘মতের ব্যাপারে প্রথম জিজ্ঞাসিত হবে :

মানুষের সুস্থতা ও পানি দ্বারা পরিতৃপ্ততা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,إِنَّ أَوَّلَ مَا يُسْأَلُ عَنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَعْنِى الْعَبْدَ مِنَ النَّعِيمِ أَنْ يُقَالَ لَهُ أَلَمْ نُصِحَّ لَكَ جِسْمَكَ وَنُرْوِيكَ مِنَ الْمَاءِ الْبَارِدِ ‘ক্বিয়ামতের দিন বান্দাকে সবার আগে যে নে‘মত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে তা হ’ল তাকে বলা হবে, আমি কি তোমাকে শরীর সুস্থ রাখিনি? আমি কি ঠান্ডা পানি দিয়ে তোমার তৃষ্ণা নিবারণ করিনি’।[22]

ক্বিয়ামতের দিন জান্নাতের দরজায় প্রথম কড়া নাড়ানো নবী :

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,أَنَا أَكْثَرُ الأَنْبِيَاءِ تَبَعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَأَنَا أَوَّلُ مَنْ يَقْرَعُ بَابَ الْجَنَّةِ ‘ক্বিয়ামতের দিন সমস্ত নবীদের অনুসারীর তুলনায় আমার অনুসারীর সংখ্যা হবে অধিক। আর আমিই সর্বপ্রথম জান্নাতের দরজায় কড়া নাড়াবো’।[23]

প্রথম মাখলুক হিসাবে জাহান্নামের আগুন প্রজ্জ্বলন :

শুফাইয়া আছবাহী (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি একবার মদীনায় উপস্থিত হয়ে দেখলেন এক ব্যক্তিকে ঘিরে লোকেরা সমবেত হয়ে আছে। তিনি বললেন, ইনি কে? লোকেরা বলল, ইনি আবু হুরায়রা (রাঃ) (শুফাইয়া বলেন,) আমি তাঁর কাছে গেলাম এবং তাঁর সামনে গিয়ে বসে পড়লাম। তিনি তখনো লোকদের হাদীছ শুনাচ্ছিলেন। তিনি যখন নিরব এবং একা হলেন আমি তাঁকে বললাম, আমি আপনার কাছে সত্যিকার ভাবেই আপনার নিকট এই আবেদন করছি যে আপনি আমাকে হাদীছ শুনাবেন যা আপনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছ থেকে শুনেছেন, ভালোভাবে বুঝেছেন এবং জেনেছেন।

আবু হুরায়রা (রাঃ) বললেন, আমি তা করব। আমি অবশ্যই তোমাকে হাদীছ বর্ণনা করব যা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে বর্ণনা করেছেন এবং আমি যা বুঝেছি ও জেনেছি। এরপর আবু হুরায়রা (রাঃ) কেমন জানি তন্ময়গ্রস্ত হয়ে পড়লেন। আমরা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। এরপর তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসলেন এবং বললেন, অবশ্যই আমি তোমাকে হাদীছ বর্ণনা করব যে হাদীছ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এই ঘরে বর্ণনা করেছিলেন। আমাদের সঙ্গে তখন তিনি এবং আমি ছাড়া আর কেউ সেখানে ছিলনা।

এরপর আবু হুরায়রা (রাঃ) আরো গভীরভাবে তন্ময়গ্রস্থ হয়ে পড়লেন। তারপর তিনি স্বাভাবিকতা ফিরে পেলেন এবং মুখ-মন্ডল মুছলেন। বললেন, আমি তা করব। অবশ্যই তোমাকে এমন হাদীছ বর্ণনা করব যে হাদীছ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে বর্ণনা করেছেন। তিনি এবং আমি এই ঘরে ছিলাম। তিনি এবং আমি ছাড়া সেখানে আমাদের সঙ্গে আর কেউ ছিলনা।

তারপর আবু হুরায়রা (রাঃ) গভীরভাবে তন্ময়গ্রস্ত হয়ে পড়লেন এবং বেহুশ হয়ে উপুড় হয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন। আমি তাঁকে দীর্ঘক্ষণ ঠেস দিয়ে রাখলাম। তারপর তাঁর হুশ হল। বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের মাঝে ফায়ছালার জন্য নাযিল হবেন। প্রত্যেক উম্মতই সেদিন থাকবে নতজানু। প্রথম যাদের তলব হবে তারা হ’ল কুরআনের হাফিয, আল্লাহর পথে শহীদ এবং প্রচুর ধন-সম্পদের অধিকারী এক ব্যক্তি।

এরপর আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের পাঠক সেই ব্যক্তিকে বলবেন, আমার উপর যে বিষয় নাযিল করেছিলাম তোমাকে আমি কি সেই বিষয়ের জ্ঞান দেই নাই? সে বলবে, হ্যাঁ, অবশ্যই দিয়েছিলেন, হে আমার রব! আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, যে জ্ঞান তুমি লাভ করেছিলে তদানুসারে কি আমল করেছিলে? লোকটি বলবে, আমি তো রাত-দিন এই কুরআন নিয়েই কায়েম থেকেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ, ফিরিশতাগণও বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। পরে আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলবেন, তোমার নিয়ত ছিল তোমাকে যেন বলা হয় ‘অমুক ক্বারী’। আর তোমাকে তা বলাও হয়েছে।

এরপর ধনাঢ্য ব্যক্তিটিকে আনা হবে। আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলবেন, তোমাকে কি আমি প্রচুর বিত্ত-বৈভব দেইনি? এমনকি কারো প্রতিই তোমাকে মুখাপেক্ষী হিসাবে রাখিনি? লোকটি বলবে, হ্যাঁ, অবশ্যই হে আমার রব! আল্লাহ বলবেন, তোমাকে আমি যা দিয়েছিলাম তা দিয়ে কি আমল করেছ তুমি? লোকটি বলবে, তা দিয়ে আমি আত্মীয়তার বন্ধন অক্ষুণ্ণ রেখেছি এবং ছাদাক্বা-খয়রাত করেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ, ফিরিশতাগণও বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। পরে আল্লাহ বলবেন, তোমার ইচ্ছা ছিল তোমাকে যেন বলা হয়, ‘অমুক ব্যক্তি খুব দানশীল’। আর তোমাকে তা বলা হয়েছে।

এরপর আল্লাহর পথে নিহত এক ব্যক্তিকে আনা হবে। আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলবেন, কিসে তুমি নিহত হয়েছিলে? লোকটি বলবে, আপনি আপনার পথে জিহাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাই আমি লড়াই করলাম। শেষে আপনার পথে নিহত হলাম। আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তোমার কামনা ছিল যে, তোমাকে যেন বলা হয়, ‘অমুক ব্যক্তি বাহাদুর’। আর তা তোমাকে বলা হয়েছে। তারপর নবী (ছাঃ) আমার হাটুতে হাত চাপড়ালেন এবং বললেন, হে আবু হুরায়রা, এই তিনজনই হ’ল আল্লাহর প্রথম মাখলুক যাদের দিয়ে ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নামের আগুন প্রজ্জ্বলিত করা হবে’[24]

হাওযে কাওছার থেকে বিতাড়িত প্রথম ব্যক্তি :

عَنْ أَبِي سَلاَّمٍ الْحَبَشِيِّ، قَالَ بَعَثَ إِلَىَّ عُمَرُ بْنُ عَبْدِ الْعَزِيزِ فَحُمِلْتُ عَلَى الْبَرِيدِ قَالَ فَلَمَّا دَخَلَ عَلَيْهِ قَالَ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ لَقَدْ شَقَّ عَلَى مَرْكَبِي الْبَرِيدُ‏ فَقَالَ يَا أَبَا سَلاَّمٍ مَا أَرَدْتُ أَنْ أَشُقَّ عَلَيْكَ وَلَكِنْ بَلَغَنِي عَنْكَ حَدِيثٌ تُحَدِّثُهُ عَنْ ثَوْبَانَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي الْحَوْضِ فَأَحْبَبْتُ أَنْ تُشَافِهَنِي بِهِ ‏.‏ قَالَ أَبُو سَلاَّمٍ حَدَّثَنِي ثَوْبَانُ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ حَوْضِي مِنْ عَدَنَ إِلَى عَمَّانَ الْبَلْقَاءِ مَاؤُهُ أَشَدُّ بَيَاضًا مِنَ اللَّبَنِ وَأَحْلَى مِنَ الْعَسَلِ وَأَكَاوِيبُهُ عَدَدُ نُجُومِ السَّمَاءِ مَنْ شَرِبَ مِنْهُ شَرْبَةً لَمْ يَظْمَأْ بَعْدَهَا أَبَدًا أَوَّلُ النَّاسِ وُرُودًا عَلَيْهِ فُقَرَاءُ الْمُهَاجِرِينَ الشُّعْثُ رُءُوسًا الدُّنْسُ ثِيَابًا الَّذِينَ لاَ يَنْكِحُونَ الْمُتَنَعِّمَاتِ وَلاَ تُفْتَحُ لَهُمُ السُّدَدُ قَالَ عُمَرُ لَكِنِّي نَكَحْتُ الْمُتَنَعِّمَاتِ وَفُتِحَ لِيَ السُّدَدُ وَنَكَحْتُ فَاطِمَةَ بِنْتَ عَبْدِ الْمَلِكِ لاَ جَرَمَ أَنِّي لاَ أَغْسِلُ رَأْسِي حَتَّى يَشْعَثَ وَلاَ أَغْسِلُ ثَوْبِي الَّذِي يَلِي جَسَدِي حَتَّى يَتَّسِخَ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ ‏.‏ وَقَدْ رُوِيَ هَذَا الْحَدِيثُ عَنْ مَعْدَانَ بْنِ أَبِي طَلْحَةَ عَنْ ثَوْبَانَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ‏.‏ وَأَبُو سَلاَّمٍ الْحَبَشِيُّ اسْمُهُ مَمْطُورٌ وَهُوَ شَامِيٌّ ثِقَةٌ ‏.‏

আবু সাল্লাম আল-হাবশী (রাহঃ) হ’তে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, উমার বিন আব্দুল আযীয (রহঃ) এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করেন আমাকে তার সাথে সাক্ষাতের জন্য নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। সে একটি খচ্চরের পিঠে আমাকে বহন করিয়ে নিয়ে চললো। তারপর তিনি (আবু সাল্লাম) খলীফার দরবারে হাযির হয়ে বললেন, আমীরুল মু'মিনীন! আমাকে এই খচ্চরের পিঠে সওয়ার হয়ে আসতে খুবই কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে।

তিনি বললেন, হে আবু সাল্লাম! আমি আপনাকে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যে এখানে আনিনি, বরং আমি শুনতে পেলাম, আপনি নাকি হাওযে কাওছার সম্পর্কে ছাওবান (রাঃ)-এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর একটি হাদীছ বর্ণনা করেছেন? অতএব, আমি পসন্দ করলাম যে, আপনি আমার সামনে তা বর্ণনা করবেন।

আবু সাল্লাম বলেন, ছাওবান (রাঃ) আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ইয়ামান দেশের আদান হতে সিরিয়ার হাওযের দৈর্ঘ্য-প্রস্থের পরিমাণ। এর পানির রং দুধের চেয়ে সাদা, মধুর চেয়ে মিষ্টি এবং পানপাত্রের সংখ্যা হবে আকাশের তারকার সমসংখ্যক। যে ব্যক্তি তা হ’তে এক ঢোক পানি পান করবে, সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না। সর্বপ্রথম এর পানি পানের সৌভাগ্য অর্জন করবে দরিদ্র মুহাজিরগণ, যাদের মাথার চুল এলোমেলো, পোশাক ধুলিমলিন, যারা ধনীর দুলালীদের বিয়ে করেননি এবং যাদের জন্য বন্ধ দরজা খোলা হ’ত না।

উমর (রাঃ) বলেন, কিন্তু আমি তো সুখ-স্বাচ্ছন্দে লালিতা-পালিতাকে বিয়ে করেছি, আমার জন্য বন্ধ দরজা খোলা হয়, আমি খলীফা আব্দুল মালিকের আদরের দুলালী ফাতিমাকে বিয়ে করেছি। আমার মাথার চুল ধূলিমলিন হওয়ার আগ পর্যন্ত তা ধুবো না এবং আমার পরনের জামা ময়লাযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত ধুবো না’।[25]

পুলছিরাত প্রথম যারা পার হবে এবং জান্নাতে তাদের প্রথম খাদ্য ও পানীয় :

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মুক্তিপ্রাপ্ত গোলাম ছাওবান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একবার রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে দাঁড়িয়েছিলাম। ইতোমধ্যেই ইয়াহুদীদের এক আলেম এসে বলল, আস-সালামু আলাইকা হে মুহাম্মাদ! এরপর আমি তাকে এমন এক ধাক্কা মারলাম যে, সে প্রায় পড়ে যাওয়ার উপক্রম হ’ল! সে বলল, তুমি আমাকে ধাক্কা মারলে কেন? আমি বললাম, তুমি ‘হে আল্লাহর রাসূল’! বলতে পার না? ইয়াহুদী বলল, আমরা তাকে তার পরিবার-পরিজন যে নাম রেখেছে সে নামেই ডাকি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আমার নাম ‘মুহাম্মাদ’। আমার পরিবারের লোকই আমার এ নাম রেখেছে। এরপর ইয়াহুদী বলল, আমি আপনাকে (কয়েকটি কথা) জিজ্ঞেস করতে এসেছি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বললেন, তোমার কী লাভ হবে, যদি আমি তোমাকে কিছু বলি? সে বলল, আমি আমার কান পেতে শুনব।

এরপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার কাছে যে খড়িটি ছিল তা দিয়ে মাটিতে আঁকাঝোকা দাগ কাটছিলেন। তারপর বললেন, জিজ্ঞেস কর। ইয়াহুদী বলল, যেদিন এ যমীন ও আকাশমন্ডলী পাল্টে গিয়ে অন্য যমীন ও আকাশমন্ডলীতে পরিণত হবে (অর্থাৎ ক্বিয়ামত হবে) সেদিন লোকজন কোথায় থাকবে? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তারা সেদিন পুলছিরাতের কাছে অন্ধকারে থাকবে। সে বলল, কে সর্বপ্রথম (তা পার হবার) অনুমতি লাভ করবে? তিনি বললেন, দরিদ্র মুহাজিরগণ!

ইয়াহুদী বলল, জান্নাতে যখন তারা প্রবেশ করবে তখন তাদের তোহফা কি হবে? তিনি বললেন, মাছের কলিজার টুকরা। সে বলল, এরপর তাদের দুপুরের খাদ্য কি হবে? তিনি বললেন, তাদের জন্য জান্নাতের ষাঁড় যবেহ করা হবে, যা জান্নাতের আশেপাশে চরে বেড়ায়। সে বলল, এরপরে তাদের পানীয় কি হবে? তিনি বললেন, সেখানকার একটি ঝর্ণার পানি যার নাম ‘সালসাবীল’। সে বলল, আপনি ঠিক বলেছেন’।[26]

উপসংহার :

মহান আল্লাহর সৃষ্টিকৌশল বড়ই বৈচিত্র্যময় ও চমকপ্রদ। মানব ইতিহাসে এ নশ্বর দুনিয়ায় সবকিছুরই প্রথম ও শেষ নামক দু’টি অস্তিত্ব বিদ্যমান। ভালমন্দের বাক্য বিধানে প্রথম চালুকৃত বিষয় যদি হয় কল্যাণকর তাহ’লে সেটা শেষ অবধি মানবতার কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসুক এবং তা অশেষ নেকী হাসিলের মাধ্যম হৌক। পক্ষান্তরে যদি সেটা অকল্যাণকর হয় তাহ’লে শেষ অবধি এর পাপের ভার থেকে মানবতা মুক্তি পাক। প্রকৃতার্থে অবিনশ্বর মহান আল্লাহই প্রথম এবং তিনিই শেষ। আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা আমাদের সকলকেই সর্বদা নেকীর কাজে অগ্রগামিতা লাভের তাওফীক দান করুন-আমীন!

[লেখক : পিয়ারপুর, ধুরইল, মোহনপুর, রাজশাহী]


[1]. ইবনু হিশাম ২/৪৯ পৃ.; আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩/২৫০ পৃ.; আল মা‘আরিফ ১৬৭০ পৃ.; উসদুল গাবা ৩/১৯৫ পৃ.।

[2]. আহমাদ ২/১৭৬ পৃ.; দারেমী ১/১২৬ পৃ.; ইবনু আবী শায়বা ৪৭/১৫৩ পৃ.; হাতেম ৩/৪২২ পৃ.; ছহীহাহ ১/৮ পৃ.।

[3]. বুখারী হা/৪৮৬৩।

[4]. ইবনু আসাকির ৩৩/৭৫ পৃ.; ইবনু হিশাম ২/৮০ পৃ.।

[5]. ইবনু সা‘দ ৩/১২০ পৃ.; তাবারানী হা/৮৯৬১; ইবনু আবী শায়বা ১৪/৭৯ পৃ., সনদ ছহীহ।

[6]. আহমাদ হা/১৩১৫; ইবনু আবী শায়বা ১২/৮৭,১৪/৮৭ পৃ.; আস-সুন্নাহ (ইবনু আবী আছেম) হা/১৪০৭; আবু নাঈম ফিল মা’রুফ হা/৫০৭-৫০৮) সনদ ছহীহ।

[7]. ইবনু সা‘দ ৩/১০৪ পৃ.; ইবনু আসাকির ৪৩/৩৭৯ পৃ.।

[8]. ইবনু সা‘দ ৭/২৭০ পৃ.; তাবারানী হা/৮৯৬১।

[9]. ইবনু সা’দ ৩/১২০ পৃ.; ইবনু আসাকির ৪৩/৩৭৯ পৃ.; ইবনু আবি শায়বা ১৪/৭৯ পৃ.; সনদ ছহীহ।

[10]. ইবনু সা‘দ ৩/১২০; আবু নাঈম ফি মা’রিফাতু লিছ ছাহাবা হা/৬১৬৮।

[11]. মুসলিম হা/১৪৯৬; নাসাঈ হা/৩৪৬৪।

[12]. আবু দাউদ হা/২২১৪।

[13]. আখবারু মক্কা ২০১৬ পৃ.; আল-ইছাবাহ ৬/২৮১ পৃ.।

[14]. তিরমিযী হা/৩০৮৫।

[15]. বুখারী হা/৭১৫২।

[16]. মুসলিম হা/২৯৪০; মিশকাত হা/৫৫২০।

[17]. মুসলিম হা/২২৭৮; মিশকাত হা/৫৭৪১।

[18]. ইবনু মাজাহ হা/৪২৯০।

[19]. মুসলিম হা/৮৫৫।

[20]. নাসাঈ হা/৩৯৯১; ইবনু মাজাহ হা/১৪২৬; মিশকাত হা/১৩৩০।

[21]. বুখারী হা/৬৮৬৪; মুসলিম হা/১৬৭৪।

[22]. তিরমিযী হা/৩৩৫৮; তাবারী ৩০/২৮৮; দাইমুল ক্বাদীর ২/৪৪৩ পৃ.।

[23]. মুসলিম হা/১৯৬; ইবনু হিববান হা/৬৪৮১; আবু ইয়ালা হা/৩৯৬৪।

[24]. তিরমিযী হা/২৩৮২।

[25]. তিরমিযী হা/২৪৪৪; ইবনু মাজাহ হা/৪৩০৩।

[26]. মুসলিম হা/৩১৫।



বিষয়সমূহ: বিধি-বিধান
আরও