শায়খ রবী‘ আল-মাদখালী
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
ফরীদুল ইসলাম 909 বার পঠিত
ভূমিকা :
একজন আলেম আকাশের নক্ষত্রের মত জগতবাসীকে আলোর পথ দেখান। এমন একজন
প্রখ্যাত মৌরিতানীয় সালাফী বিদ্বান মুহাম্মাদ মুখতার আশ-শানক্বীতী
(১৯১৯-১৯৮৫ খ্রিঃ)। নিম্নে তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠকের খেদমতে পেশ করা
হ’ল।
জন্ম : মুহাম্মদ আল-মুখতার ইবনে মুহাম্মদ সাইয়্যিদ আল-আমীন ইবনে হাবিবিল্লাহ ইবনে মাযিদ আল-জিকনি আশ-শানক্বীতী ১৩৩৭ হিজরী মোতাবেক ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে উত্তর আফ্রিকার দেশ মৌরিতানিয়ার শানক্বীত প্রদেশের আল-রাশীদ শহরের কাছে শফীক নামক এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হলেন একজন খ্যাতনামা বিদ্বান, শিকড় সন্ধানী গবেষক, ভাষাবিদ এবং মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দুই পবিত্র মসজিদের একজন স্বনামধন্য শিক্ষক।
বেড়ে ওঠা : তিনি মৌরিতানিয়ার শানক্বীতে একটি ইলমী পরিবেশে বেড়ে ওঠেন। তাঁর পিতামহ একজন আলেম ছিলেন। তার পিতা ছিলেন আল মাযিদ আয-যিকনি-এর একজন শায়খ। তিনি ছোটবেলায় তার মায়ের কাছে কুরআন মুখস্থ করা শুরু করেন এবং তার মায়ের মৃত্যু অবধি পড়তে থাকেন। অবশেষে পিতার কাছে তিনি কুরআন হিফয সম্পন্ন করেন। অতঃপর তিনি বিভিন্ন পন্ডিতদের নিকট কুরআনের বিজ্ঞান ও কলা সম্পর্কে পান্ডিত্য অর্জন করেন। ১৩৫৬ হিজরীতে তিনি সঊদী আরবে হিজরত করেন এবং প্রথমে মক্কায় কিছু সময় অতিবাহিত করেন, অতঃপর মদীনায় যান। যেখানে তিনি মসজিদে নববীতে জ্ঞান অন্বেষণে মনোনিবেশ করেন। আবার তিনি মক্কায় ফিরে এসে হারামের বিদ্বানদের নিকট নিরলসভাবে চার বছর ধরে জ্ঞান সমুদ্রে ডুবে থাকেন। যার ফলে তিনি নিজেকে ইসলামী শারঈ জ্ঞানের উচ্চ মর্যাাদায় আসীন করাতে সমর্থ হন।
বর্ণাঢ্য কর্মজীবন : শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি মসজিদে নববীতে পাঠদান শুরু করেন। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের পর তিনি সেখানে পাঁচটি হালাকায় পাঠদান করতেন। যেখানে তিনি ফিকহসহ বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান করতেন। তিনি কুবা মসজিদে প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার পাঠদান করতেন। ১৩৬৬ হিজরী পর্যন্ত তিনি সেখানে অবস্থান করেন। অতঃপর তিনি জেদ্দার ‘আল-ফালাহ’ মাদরাসায় শিক্ষকতার জন্য স্থানান্তরিত হন। ১৩৭১ হিজরীতে তিনি অত্র প্রতিষ্ঠানের রিয়াদ শাখায় চলে যান এবং ১৩৭৭ হিজরী পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করেন। ১৩৭৮ হিজরীতে তাঁকে মদীনার ‘দারুল হাদীছে’ শিক্ষক হিসাবে নিয়োগদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং একই সময়ে মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাফসীর পাঠদান শুরু করেন। ১৪০৩ হিজরী পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন এবং অবসর গ্রহণ করেন। অতঃপর আমৃত্যু মসজিদে নববীতে পাঠদানে নিরত থাকেন।
দাওয়াতী খেদমত :
ইসলাম প্রচার ও প্রসারেও তিনি ছিলেন কিংবদন্তী সমতুল্য। তিনি আরবের বহু জায়গায় দ্বীন প্রচার করার জন্য গমন করেন। শুধু তাই নয় তিনি তাঁর নিজের দেশ মৌরিতানিয়াতেও দ্বীনের সুশীতল ছায়া ছড়িয়ে দেন, যাতে মানুষ তাঁর ইলমী জ্ঞানের সংস্পর্শে এসে ধন্য হয়।
ছাত্রবৃন্দ : তিনি জ্ঞানীগুণী বহু ছাত্রের উস্তায ছিলেন। তন্মধ্যে তাঁর পুত্র মুহাম্মদ আল-মুখতার ইবনে মুহাম্মদ আল-আমীন আল-শানক্বিতী অন্যতম। যিনি সঊদীআরবে সর্বোচ্চ উলামা পরিষদ হাইআতু কিবারিল উলামার সদস্য।
আক্বীদা: তিনি আক্বীদায় ছিলেন আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের অনুসারী। তিনি আমৃত্যু ভ্রান্ত আক্বীদা, বাতিল দল-মত সহ বিভিন্ন পথভ্রষ্টদের সঠিক আক্বীদায় ফিরে আসার জন্য দাওয়াত প্রদান করেছেন।
লেখনী : লেখনীর জগতে ছিল তাঁর পদাচারণা ছিল তুলনামূলক কম। কুতুবে সিত্তাহ-এর বহুল প্রসিদ্ধ গ্রন্থ সুনান নাসাঈর ব্যাখ্যাগ্রন্থটি তাঁর জীবনের বড় কীর্তি হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যা شروق أنوار المنن الكبرى الإلهية بكشف أسرار السنن الصغرى النسائية শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে।
মৃত্যু : ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে সঊদী আরবে ৬৫/৬৬ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
ফরীদুল ইসলাম
লেখক : ছানাবিয়া ২য় বর্ষ, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী নওদাপাড়া, সপুরা, রাজশাহী