আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 558 বার পঠিত
আল-কুরআনুল কারীম :
1- وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُمْ مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَى كَثِيرٍ مِمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيلًا-
(১) ‘আমরা আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি এবং তাদেরকে স্থলে ও সাগরে চলাচলের বাহন দিয়েছি। আর আমরা তাদেরকে পবিত্র রূযী দান করেছি এবং যাদেরকে আমরা সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের উপর আমরা তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি’ (বনু ইস্রাঈল ১৭/৭০)।
2- قُلْ تَعَالَوْا أَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَيْكُمْ أَلَّا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُمْ مِنْ إِمْلَاقٍ نَحْنُ نَرْزُقُكُمْ وَإِيَّاهُمْ وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ -
(২) ‘তুমি বল, এস আমি তোমাদেরকে ঐ বিষয়গুলো পাঠ করে শুনাই যা তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের উপর হারাম করেছেন। আর তা হ’ল এই যে, তোমরা তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না। পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে। দরিদ্রতার ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না। আমরাই তোমাদেরকে ও তাদেরকে জীবিকা প্রদান করে থাকি। প্রকাশ্য বা গোপন কোন অশ্লীলতার নিকটবর্তী হবে না। ন্যায্য কারণ ব্যতীত কাউকে হত্যা করবে না, যা আল্লাহ হারাম করেছেন। এসব বিষয় তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যাতে তোমরা অনুধাবন করো’ (আন‘আম ৬/১৫১)।
3- مِنْ أَجْلِ ذَلِكَ كَتَبْنَا عَلَى بَنِي إِسْرَائِيلَ أَنَّهُ مَنْ قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِي الْأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيعًا وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيعًا وَلَقَدْ جَاءَتْهُمْ رُسُلُنَا بِالْبَيِّنَاتِ ثُمَّ إِنَّ كَثِيرًا مِنْهُمْ بَعْدَ ذَلِكَ فِي الْأَرْضِ لَمُسْرِفُونَ-
(৩) ‘এ কারণেই আমরা বনু ইস্রাঈলের উপর বিধিবদ্ধ করে দিয়েছি যে, যে কেউ জীবনের বদলে জীবন অথবা জনপদে অনর্থ সৃষ্টি করা ব্যতীত কাউকে হত্যা করে, সে যেন সকল মানুষকে হত্যা করে। আর যে ব্যক্তি কারু জীবন রক্ষা করে, সে যেন সকল মানুষের জীবন রক্ষা করে। বস্ত্ততঃ তাদের নিকট আমাদের রাসূলগণ স্পষ্ট নিদর্শনাবলী নিয়ে আগমন করেছিল। এরপরেও তাদের অনেক লোক জনপদে সীমালংঘনকারী হিসাবে রয়ে গেছে’ (মায়েদাহ ৫/৩২)।
হাদীছে নববী :
4- عَنْ أَبِي مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَؤُمُّ الْقَوْمَ أَقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ اللَّهِ فَإِنْ كَانُوا فِي الْقِرَاءَةِ سَوَاءً، فَأَعْلَمُهُمْ بِالسُّنَّةِ فَإِنْ كَانُوا فِي السُّنَّةِ سَوَاءً، فَأَقْدَمُهُمْ هِجْرَةً فَإِنْ كَانُوا فِي الْهِجْرَةِ سَوَاءً، فَأَقْدَمُهُمْ سِنًّا، وَلَا يَؤُمَّنَّ الرَّجُلُ الرَّجُلَ فِي سُلْطَانِهِ. وَلَا يَقْعُدْ فِي بَيْتِهِ عَلَى تَكْرِمَتِهِ إِلَّا بِإِذْنِهِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ. وَفِي رِوَايَةٍ لَهُ وَلَا يَؤُمَّنَّ الرَّجُلُ الرَّجُلَ فِي أَهْلِهِ-
(৪) আবু মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, রাসূল (ছাঃ) ইরশাদ করেছেন, জাতির ইমামতি এমন লোক করবেন, যিনি আল্লাহর কিতাব সবচেয়ে উত্তমভাবে পড়তে পারেন। উপস্থিতদের মাঝে যদি সকলেই উত্তম ক্বারী হন তাহ’লে ইমামতি করবেন ঐ লোক যিনি সুন্নাতের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী জানেন। যদি সুন্নাতের ব্যাপারে সকলে সমপর্যায়ের জ্ঞানী হন তবে যে সবার আগে হিজরত করেছেন। হিজরত করাতেও যদি সবাই এক সমান হন, তাহ’লে ইমামতি করবেন যিনি বয়সে সকলের চেয়ে বড়। আর কোন লোক অন্য লোকের ক্ষমতাসীন এলাকায় গিয়ে ইমামতি করবে না এবং কেউ কোন বাড়ী গিয়ে যেন অনুমতি ছাড়া বাড়ীওয়ালার আসনে না বসে। এক বর্ণনায় রয়েছে, আর কোন লোক অন্য লোকের গৃহে গিয়ে (অনুমতি ব্যতীত) ইমামতি করবে না’।[1]
5- عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: أَرَانِي فِي الْمَنَامِ أَتَسَوَّكُ بِسِوَاكٍ، فَجَاءَنِي رَجُلَانِ أَحَدُهُمَا أَكْبَرُ مِنَ الْآخَرِ، فَنَاوَلْتُ السِّوَاكَ الْأَصْغَرَ مِنْهُمَا، فَقِيلَ لِي: كَبِّرْ، فَدَفَعْتُهُ إِلَى الْأَكْبَرِ مِنْهُمَا-
(৫) ইবনু উমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেন, একবার আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আমি একখন্ড মিসওয়াক দিয়ে মিসওয়াক করছি। এমন সময় দু’জন লোক আমার কাছে এলো, যাদের মধ্যে একজন অপরজন হ’তে (বয়সে) বড়। আমি আমার মিসওয়াকটি ছোটজনকে দিতে উদ্যত হলে আমাকে বলা হ’ল, বড়জনকেই দিন। অতঃপর আমি তা বড়জনকেই দিলাম’।[2]
6- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَلَا أُنْبِئُكُمْ بِخِيَارِكُمْ؟ قَالُوا: بَلَى قَالَخِيَارُكُمْ أَطْوَلُكُمْ أَعْمَارًا، وَأَحْسَنُكُمْ أَخْلَاقًا-
(৬) আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমি কি বলে দেব না যে, তোমাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি কে? ছাহাবায়ে কিরাম বললেন, জ্বী হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সর্বোত্তম, যার বয়স বেশী এবং যার চরিত্র ভাল’।[3]
7- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو يَرْوِيهِ قَالَ ابْنُ السَّرْحِ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ لَمْ يَرْحَمْ صَغِيرَنَا وَيَعْرِفْ حَقَّ كَبِيرِنَا فَلَيْسَ مِنَّا.
(৭) আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদেরকে স্নেহ করে না এবং আমাদের বড়দেরকে সম্মান করে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়’।[4]
8- عَنْ كَعْبِ بْنِ مُرَّةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ شَابَ شَيْبَةً فِي الْإِسْلَامِ كَانَتْ لَهُ نُورًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ-
(৮) কা‘ব ইবনু মুররাহ্ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে থেকে বৃদ্ধ হয়েছে, তার এ বার্ধক্য ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য নূর হবে’।[5]
9- عَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ مِنْ إِجْلَالِ اللَّهِ إِكْرَامُ ذِي الشَّيْبَةِ، وَحَامِلُ الْقُرْآنِ غَيْرَ الْغَالِي فِيهِ وَلَا الْجَافِي عَنْهُ وَإِكْرَامُ السُّلْطَانِ الْمُقْسِطِ-
(৯) আবু মূসা আল-আশ্‘আরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, বৃদ্ধ মুসলিমকে ইযযত-সম্মান করা, কুরআন পাঠককে সম্মান করা- যতক্ষণ সে কুরআনের বাক্যের বা অর্থে বাড়াবাড়ি ও বিকৃতিসাধন না করে এবং ন্যায়বিচারক শাসককে সম্মান করা, এ সবকিছুই আল্লাহকে সম্মান করার অংশবিশেষ’।[6]
10- عَنْ طَلْحَةَ بْنِ عُبَيْدِ اللَّهِ أَنَّ رَجُلَيْنِ مِنْ بَلِىٍّ قَدِمَا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَكَانَ إِسْلاَمُهُمَا جَمِيعًا فَكَانَ أَحَدُهُمَا أَشَدَّ اجْتِهَادًا مِنَ الآخَرِ فَغَزَا الْمُجْتَهِدُ مِنْهُمَا فَاسْتُشْهِدَ ثُمَّ مَكَثَ الآخَرُ بَعْدَهُ سَنَةً ثُمَّ تُوُفِّىَ.... فَبَلَغَ ذَلِكَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم. وَحَدَّثُوهُ الْحَدِيثَ فَقَالَ مِنْ أَىِّ ذَلِكَ تَعْجَبُونَ فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ هَذَا كَانَ أَشَدَّ الرَّجُلَيْنِ اجْتِهَادًا ثُمَّ اسْتُشْهِدَ وَدَخَلَ هَذَا الآخِرُ الْجَنَّةَ قَبْلَهُ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَلَيْسَ قَدْ مَكَثَ هَذَا بَعْدَهُ سَنَةً. قَالُوا بَلَى. قَالَ وَأَدْرَكَ رَمَضَانَ فَصَامَهُ وَصَلَّى كَذَا وَكَذَا مِنْ سَجْدَةٍ فِى السَّنَةِ. قَالُوا بَلَى قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَمَا بَيْنَهُمَا أَبْعَدُ مِمَّا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ.
(১০) তালহা ইবনে ওবায়দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, দু’ব্যক্তি দূর-দূরান্ত থেকে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে উপস্থিত হলো। তারা হ’ল খাঁটি মুসলিম। তাদের একজন ছিল অপরজন অপেক্ষা শক্তিধর মুজাহিদ। তাদের মধ্যকার মুজাহিদ ব্যক্তি যুদ্ধ করে শহীদ হলো এবং অপরজন এক বছর পর মারা গেলো। বিষয়টি রাসূল (ছাঃ)-এর কানে গেলো এবং তারাও তাঁর কাছে ঘটনা বর্ণনা করলো। তিনি বলেন, কী কারণে তোমরা বিস্মিত হলে? তারা বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই ব্যক্তি তাদের দু’জনের মধ্যে অধিকতর শক্তিধর মুজাহিদ। তাকে শহীদ করা হয়েছে। অথচ অপর লোকটি তার আগেই জান্নাতে প্রবেশ করলো। রাসূল (ছাঃ) বলেন, অপর লোকটি কি তার পরে এক বছর জীবিত থাকেনি? তারা বললো, হ্যাঁ। তিনি বলেন, সে একটি রামাযান মাস পেয়েছে, ছিয়াম রেখেছে এবং এক বছর যাবত এই এই ছালাত কি পড়েনি? তারা বললো, হ্যাঁ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আসমান-যমীনের মধ্য যে ব্যবধান রয়েছে, তাদের দু’জনের মধ্যে রয়েছে তার চেয়ে অধিক ব্যবধান’।[7]
মনীষীদের বক্তব্য :
১. ইবনে আববাস (রাঃ) সূরা বনী ঈস্রাইলের ৭০ নম্বর আয়াত প্রসঙ্গে বলেন, ‘মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব জ্ঞানে’।[8]
২. মুহাম্মাদ ইবনু কা‘ব আল-কুরযী বলেন, ‘মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর জন্মই মানবতার শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক’।[9]
৩. ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব হ’ল মানুষ দুই পায়ে চলাফেরা করে, হাত দিয়ে খায়। কিন্তু অন্য প্রাণী চার পায়ে চলাফেরা করে এবং মুখ দিয়ে খায়’।[10]
সারবস্ত্ত :
(১) মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টিজীবের শ্রেষ্ঠ করে সৃষ্টি করেছেন এবং ছোট-বড় সকলের সম্মানের মানদন্ড নির্ধারণ করেছেন। (২) জ্ঞানের স্তর ভেদে ব্যক্তির সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি বা হ্রাসপ্রাপ্ত হয়। (৩) মহান আল্লাহর নিকট সবচেয়ে সম্মানিত সেই যে তাকে সবচেয়ে বেশী ভয় করে। (৪) মুহাম্মাদ (ছাঃ) মানবতার শিক্ষক এবং সৃষ্টির শ্রেষ্ঠতম সম্মানিত ব্যক্তি।
[1]. মুসলিম, মিশকাত হা/১১১৭।
[2]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩৮৫।
[3]. আহমাদ, মিশকাত হা/৫১০০।
[4].আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৩৫৮; আবুদাউদ হা/৪৯৪৩।
[5]. তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/৪৪৫৯।
[6]. আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৯৭২।
[7]. আহমাদ, ইবনু মাজাহ হা/৩৯২৫।
[8]. আল-বাহরুল মুহীত্ব ৬/৫৮ পৃ.।
[9].ঐ।
[10].তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩/৫৫ পৃ.।