শিরক ও তার ভয়াবহ পরিণতি
ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
মফীযুল ইসলাম 583 বার পঠিত
৪. স্ত্রী উত্তমাচরণ পাওয়ার হকদার :
পরিবারে সুখময় পরিবেশ তৈরী জন্য উত্তম ভরণ-পোষণের পাশাপাশি প্রয়োজন পরস্পর পরস্পরের সাথে সর্বোত্তম ব্যবহার। আল্লাহ বলেন, وَقُولُوا لَهُمْ قَوْلًا مَعْرُوفًا ‘তাদের সাথে মিষ্ট কথা বল’ (নিসা ৪/৫)। উত্তম ব্যবহার না থাকলে পরিবার কখনো সুখের আলোয় আলোকিত হতে পারে না। সদ্ব্যবহার এমন এক গুণ যা দাম্পত্য জীবনকে মধুময় করে এবং পরিবারে সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি বয়ে আনতে সহায়তা করে। আর কদাচার বয়ে আনে দুঃখ-দুর্দশা, অশান্তি-অস্থিরতা, বেদনা ও ক্ষোভ।
একজন দায়িত্বশীল স্বামী হবেন পারিবারিক জীবনে রাসূল (ছাঃ)-এর মূর্ত প্রতীক। রাসূল (ছাঃ) আচার-আচরণ ছিল অমায়িক। তিনি স্ত্রী-পরিজনসহ সর্বসাধরণের সাথে নম্র, ভদ্র ও মার্জিত ভাষায় কথা বলতেন। আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) বলেন, ‘নবী (ছাঃ) চারিত্রিক ও মৌখিক আচরণে অশ্লীলতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ছিলেন’। আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, لَمْ يَكُنِ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم سَبَّابًا وَلاَ فَحَّاشًا وَلاَ لَعَّانًا، كَانَ يَقُولُ لأَحَدِنَا عِنْدَ الْمَعْتَبَةِ مَا لَهُ، تَرِبَ جَبِينُهُ ‘নবী করীম (ছাঃ) গালি দাতা, অশ্লীল ভাষী ও অভিশাপকারী ছিলেন না। তিনি আমাদের কারো উপর অসন্তুষ্ট হলে, শুধু এতটুকু বলতেন, তার কী হল। তার কপাল ধূলিমলিন হোক’।[1] আল্লাহ বলেন,وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيمٍ- ‘আর নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের অধিকার’ (ক্বলাম ৬৮/৪)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, بُعِثْتُ لِأُتَمِّمَ حُسْنَ الْأَخْلَاقِ ‘আমি উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা দানের জন্য এসেছি।[2] আয়েশা (রাঃ) বলেন, كَانَ خُلُقُهُ الْقُرْآنَ- ‘কুরআনই তাঁর চরিত্র’।[3] অর্থাৎ তিনি ছিলেন কুরআনের বাস্তব রূপকার। কুরআন ও হাদীছ তাই মুসলিম জীবনের চলার পথের একমাত্র আলোকবর্তিকা। আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) বলেন, ‘মুমিন ব্যক্তির চরিত্রের সর্বাপেক্ষা কষ্টদায়ক বিষয় হলো অশ্লীলতা’।[4] পরিবারে সদাচরণের গুরুত্ব তুলে ধরে রাসূল (ছাঃ) বলেন, خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِأَهْلِهِ وَأَنَا خَيْرُكُمْ لِأَهْلِي، ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে নিজের স্ত্রী-পরিজনের কাছে উত্তম। আর আমি তোমাদের চেয়ে আমার স্ত্রী-পরিজনের কাছে উত্তম’।[5] আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا وَخِيَارُكُمْ خِيَارُكُمْ لِنِسَائِهِمْ خُلُقًا. ‘মুমিনদের মধ্যে সবচেয়ে পূর্ণ মুমিন ঐ ব্যক্তি যে চরিত্রে সবার চেয়ে সেরা। আর তোমাদের মধ্যে উত্তম লোক তারাই যারা তাদের স্ত্রী-পরিজনের কাছে উত্তম’।[6] তিনি আরো বলেন,خَيْرُ الْأَصْحَابِ عِنْدَ اللَّهِ خَيْرُهُمْ لِصَاحِبِهِ وَخَيْرُ الْجِيرَانِ عِنْدَ اللَّهِ خَيْرُهُمْ لِجَارِهِ ‘আল্লাহ তা‘আলার নিকট সঙ্গীদের মাঝে উত্তম সঙ্গী হ’ল সেই ধরণের ব্যক্তি যে তার নিজ সঙ্গীর কাছে উত্তম এবং উত্তম প্রতিবেশী হল যে তার প্রতিবেশীর কাছে ভাল’।[7]
প্রিয় ভাই! আপনার হয়ত বুঝতে বেগ পেতে হয়নি যে, আপনাকে নম্র, ভদ্র, দয়াদ্র, উন্নত ও মার্জিত চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। যাতে আপনার মাধ্যমে দয়াময় আল্লাহর পক্ষ থেকে পরিবারে কল্যাণ নাযিল হয় এবং কিয়ামতের দিন রাসূল (ছাঃ)-এর সবচেয়ে প্রিয় ও কাছের মানুষ হতে পারেন।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ যখন কোন আহলে বায়েতের কল্যাণ চান তখন তার মধ্যে নম্রতার উদ্রেক ঘটান’।[8] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ مِنْ أَحَبِّكُمْ إِلَيَّ وَأَقْرَبِكُمْ مِنِّي مَجْلِسًا يَوْمَ القِيَامَةِ أَحَاسِنَكُمْ أَخْلَاقًا، وَإِنَّ أَبْغَضَكُمْ إِلَيَّ وَأَبْعَدَكُمْ- ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তির চরিত্র ও আচার-আচরণ সর্বোত্তম, তোমাদের মধ্যে সে-ই আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় এবং কিয়ামতের দিবসেও আমার খুবই নিকটে থাকবে। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আমার নিকট সবচেয়ে বেশী ঘৃণ্য সে ব্যক্তি কিয়ামতের দিবসে আমার নিকট হতে বহু দূরে থাকবে। তারা হ’ল- বাচাল, ধৃষ্ট-নির্লজ্জ এবং অহংকারী ব্যক্তিরা’।[9]
বৈধ বিবাহের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী হয় সবচেয়ে কাছের মানুষ। আর উত্তম চরিত্রের মানদন্ড হ’ল যে যত বেশী কাছের মানুষ তার সাথে তত বেশী সুন্দর আচরণ করা। কিন্তু রূঢ় বাস্তবতা হ’ল বহু স্বামী পরনারীর সাথে যতটা না হাসি মুখে, কোমল কণ্ঠে, নমনীয় ভাষায় কথা বলেন, আপন স্ত্রীর সাথে তত সুন্দর করে কথা বলেন না। অনেক স্বামী, স্ত্রীর সাথে নিষ্ঠুর, নির্দয়, নীরস, কর্কশ ও উচ্চবাচ্চ কথা বলে মধুর সংসারে অমিল ও দূরত্ব সৃষ্টি করে। অথচ পরিবারের সাথে দয়া-অনুকম্পা নিয়ে ভদ্র-মার্জিত আচরণ করলে পরস্পরের মাঝে সৌহার্দ্য, আন্তরিকতা ও হৃদ্যতা তৈরী হয়।
মহান আল্লাহ বলেন, لَكُمْ أَنْ تَرِثُوا النِّسَاءَ ‘তোমরা তাদের (নারীদের) সাথে সৎভাবে জীবন-যাপন কর’ (নিসা ৪/১৯)। ‘তাফসীরে আহসানুল বায়ানে’ বলা হয়েছে, অত্র আয়াতে স্ত্রীর সাথে সৎভাবে জীবন-যাবন, উত্তম কথোপকথন, সৌহাদ্যপূর্ণ চাল-চলনের জোরালো তাগিদ প্রদান করা হয়েছে।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,اسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ، فَإِنَّ الْمَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ ، وَإِنَّ أَعْوَجَ شَىْءٍ فِى الضِّلَعِ أَعْلاَهُ ، فَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهُ كَسَرْتَهُ ، وَإِنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أَعْوَجَ ، فَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ- ‘তোমরা স্ত্রীদের জন্য মঙ্গলকামী হও। কারণ নারীকে পাঁজরের (বাঁকা) হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়ের সবচেয়ে বেশী বাঁকা হ’ল তার উপরের অংশ। যদি তুমি এটা সোজা করতে চাও, তাহলে ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি তাকে ছেড়ে দাও তাহলে তা বাঁকাই থাকবে। তাই তোমরা নারীদের সাথে সদ্ব্যবহার কর’।[10]
আমার ইবনু আহওয়াস জুশামী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, ‘তিনি সর্বপ্রথম আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ-কীর্তন করলেন অতঃপর উপদেশ ও নছীহত করলেন। তিনি বলেন, اسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا، فَإِنَّهُنَّ عِنْدَكُمْ عَوَانٍ ‘শোন! তোমরা স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার করা। কেননা তারা তোমাদের নিকট আবদ্ধ রয়েছে।[11] অন্যত্র তিনি বলেন, ‘কোন ঈমানদার পুরুষ যেন কোন ঈমানদার নারীকে ঘৃণা না করে’।[12]
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলেন, ‘আমার স্ত্রীর সাথে চল্লিশ বছর থাকার পরও তার সাথে আমার মনোমালিন্য হয়নি’।
সচ্চরিত্রবান স্বামীর জন্য দুনিয়ায় শান্তি-সুখের নীড় তৈরী হয়, পরিবারের সদ্যস্যদের পক্ষ থেকে তার প্রতি সুগভীর ভালোবাসা, শ্রদ্ধা-সম্মানবোধ তাদের হৃদয়ে প্রক্ষিপ্ত করা হয় এবং পরকালেও তিনি হবেন ঝকঝকে, টকটকে, উন্নত ও নিরাপদ গৃহের বাসিন্দা। ‘আল্লাহ অনর্থক বাক্য বলা পসন্দ করেন না’।[13] তাই তিনি বলেন, وَقُولُوا لِلنَّاسِ حُسْنًا-‘মানুষের সাথে উত্তম আচরণ কর’ (বাক্বারা ২/৮৩)। প্রিয় ভাই! আপনার স্ত্রীর বকাবকি ও অন্যায় আচরণের মুদ্রা দোষ থাকলে তার প্রতিশোধ নিতে যাবেন না। বিশেষ করে স্মরণে রাখতে হবে, ঋতু চলাকালীন সময়ে স্ত্রীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা খারাপ থাকে। তাই স্ত্রীর কল্যাণকামী স্বামী এদিকটা খেয়াল রেখে মার্জিত-ভদ্র আচরণ করবে। ঠাট্টার ছলে হলেও এমন কথা বলবেন না, যাতে তার অন্তরাত্মায় আঘাত লাগে। নবী (ছাঃ) অশ্লীলতা পসন্দ করতেন না এবং তিনি অশ্লীল-খারাপ আচরণকারী ছিলেন না। তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে উৎকৃষ্টতম লোক তারাই যাদের চরিত্র সর্বোৎকৃষ্ট’।[14]
কখনো তার সাথে ধোঁকা, মিথ্যা ও ছল-চাতুরীর আশ্রয় নেবে না। সততা, ন্যায়পরায়ণতা, দয়াদ্রতা ও উত্তম আচরণের মাধ্যমে তার মন্দ আচরণ পরিবর্তন করবেন। আল্লাহ বলেন,وَلَا تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُ ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ- ‘আর ভালো ও মন্দ সমান নয়। উৎকৃষ্ট দ্বারা মন্দ প্রতিহত কর; তাহলে যাদের সাথে তোমার শক্রতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধু’ (হামীম সাজদাহ ৪১/৩৪)।
সুতরাং সর্বোৎকৃষ্ট স্বামী হ’ল সেই, যিনি স্ত্রীর মন্দ আচরণ সুকৌশলে, ধৈর্যের সাথে ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে অপসরণ করেন। যেমন- আয়েশা (রাঃ) বলেন, ইহুদিদের একটি দল রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে, তাঁর মৃত্যু কামনা করলে আমি রেগে গিয়ে বললাম, তোমাদের উপর অভিশাপ। তিনি রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আয়েশা থাম, কোমল ও মেহেরবান হও’।[15]
উৎকৃষ্ট, জান্নাতী মানুষের বৈশিষ্ট্য হ’ল কেউ কষ্ট দেওয়া সত্ত্বেও তার সাথে মিলেমিশে চলে এবং উত্তম আচরণ করে। যার ফলে তিনি অশেষ নেকী অধিকারী হবেন।
ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাঃ) বলেরছন, الْمُؤْمِنُ الَّذِي يُخَالِطُ النَّاسَ، وَيَصْبِرُ عَلَى أَذَاهُمْ، أَعْظَمُ أَجْرًا مِنَ الْمُؤْمِنِ الَّذِي لَا يُخَالِطُ النَّاسَ، وَلَا يَصْبِرُ عَلَى أَذَاهُمْ» ‘যে মু‘মিন মানুষের সাথে মিশে এবং তাদের দেওয়া কষ্ট সহ্য করে, সে ঐ মু‘মিন অপেক্ষায় উত্তম যে মানুষের সাথে মিশে না এবং তাদের দেয়া কষ্টে ধৈর্য ধরে না’।[16]
প্রিয় ভাই! সংসার জীবন কুসুমাস্তীর্ণ নয়। শয়তানের চক্রান্তে এক জন অপর জনের মন্দ আচরণে কষ্ট পেয়ে দূরে সরে না গিয়ে বরং কষ্ট সহ্য করে মিলেমিশে চলাই উত্তম মুমিনের পরিচায়ক। আর এরকম সহনশীল বুদ্ধিমানের আচরণে প্রভূত কল্যাণ আছে। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাঃ) বলেন,أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِمَنْ يَحْرُمُ عَلَى النَّارِ أَوْ بِمَنْ تَحْرُمُ عَلَيْهِ النَّارُ، عَلَى كُلِّ قَرِيبٍ هَيِّنٍ سَهْلٍ- ‘আমি কি তোমাদের কে জানাবো না, কোন ব্যক্তি জাহান্নামের আগুনের জন্য হারাম অথবা কার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম? (শোন) জাহান্নামের আগুন এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য হারাম যে মানুষের কাছাকাছি থাকে বা তাদের সাথে মিলেমিশে থাকে এবং যে কোমলমতি, নম্র মেজায ও বিনম্র স্বভাবের’।[17] রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘সুন্দর কথা একটি ছাদাক্বা’।[18] তিনি আরো বলেন, ‘নেকী হ’ল উত্তম চরিত্র আর পাপ হ’ল যা অন্তরে সন্দেহের উদ্রেক করে এবং অন্য কেউ জেনে ফেলুক, এটা তোমার কাছে খারাপ লাগে’।[19]
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, মু’মিন তার সুন্দর স্বভাব ও উত্তম চরিত্র দ্বারা দিনে ছিয়াম পালনকারী ও রাতে তাহাজ্জুদগুযারীর মর্যাদা লাভ করতে পারে’।[20]
আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী (ছাঃ) বলেন,«مَا مِنْ شَيْءٍ أَثْقَلُ فِي الْمِيزَانِ مِنْ حُسْنِ الْخُلُقِ» ‘কিয়ামতের দিন মু‘মিন বান্দার আমলনামায় সচ্চরিত্রের চেয়ে ভারী আর কোন আমলই হবে না’।[21]
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,عَنْ أَكْثَرِ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ الجَنَّةَ، فَقَالَ: «تَقْوَى اللَّهِ وَحُسْنُ الخُلُقِ»، وَسُئِلَ عَنْ أَكْثَرِ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ النَّارَ، فَقَالَ: «الفَمُ وَالفَرْجُ- রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেসা করা হলো, কোন জিনিস মানুষকে সর্বাধিক পরিমাণ জান্নাতে প্রবেশ করাবে? তিনি বলেন, ‘আল্লাহভীতি ও উত্তম চরিত্র। তাঁকে আবার জিজ্ঞেস করা হলো কোন জিনিস মানুষকে সর্বাধিক পরিমাণে জাহান্নামে নিয়ে যায়? তিনি বলেন, মুখ এবং লজ্জাস্থান’।[22]
সর্বোত্তম মানুষ হলেন, তিনি যিনি তার আচরণের মাধ্যমে কাউকে কষ্ট দেন না। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, ‘কোন ব্যক্তি সর্বোত্তম? তিনি বলেন, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে এবং লোকদেরকে নিজের মন্দ আচরণ থেকে নিরাপদ রাখে’।[23]
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই উত্তম চরিত্র, ভালো ব্যবহার ও পরিমিত ব্যয় বা মধ্যপন্থা অবলম্বন করা নবুঅতের পঁচিশ ভাগের এক ভাগ।[24] উত্তম আচরণে রয়েছে ছাদাক্বার নেকী ও প্রীতি’।[25] প্রিয় ভাই! এত ছওয়াব লুফে নিতে স্ত্রীর সাথে সদাচারণে যেন ভুল না হয়।
৫. চিকিৎসা লাভের অধিকার :
পৃথিবীর কোন মানুষই রোগ-শোক মুক্ত নন। রোগ-শোক, ব্যথা-বেদনা, জ্বালা-যন্ত্রণা সবই মহামহিম আল্লাহর পক্ষ থেকে। নিজের জীবনে ও স্ত্রী-পরিজনের উপর রোগ-বালা-মুছীবত যে কোন সময় মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নেমে আসতে পারে। কারণ আল্লাহ বিভিন্ন সময় বালা-মুছীবত দ্বারা বান্দাকে পরীক্ষা করেন। আল্লাহ বলেন,وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ- ‘তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা ও ধন-সম্পদ, জীবন এবং ফল-ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি (এসবের) কোন কিছুর দ্বারা নিশ্চয়ই পরীক্ষা করব, আর ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ প্রদান কর’ (বাক্বারাহ ২/১৫৫)।
রাসূল (ছাঃ) রোগ-শোকে, বিপদ-আপদে স্ত্রীদের পাশে ছায়ার মত অবস্থান করতেন এবং তাদের সেবা-যত্নে নিজেকে সর্বদা নিয়োজিত রাখতেন ও মহান আল্লাহর কাছে তাদের সুস্থ্যতার জন্য দো‘আ করতেন।
একদা ছাফিয়া (রাঃ)-কে কান্নারত দেখে তিনি উত্তম অভয় বাণীর মাধ্যমে তাকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন।[26] আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ছাঃ)-এর পরিবারে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি (চিকিৎসা স্বরূপ) সূরা ফালাক, নাস পড়ে তাকে ঝাঁড়-ফুঁক দিতেন।[27] তিনি আরো বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর নিয়ম ছিল, তিনি যখন কোন রোগীর কাছে আসতেন কিংবা তাঁর নিকট যখন কোন রোগীকে আনা হত, তখন তিনি এই বলে দো‘আ করতেন,أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ ، اشْفِ وَأَنْتَ الشَّافِى لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ ، شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا- ‘কষ্ট দূর করে দাও। হে মানুষের রব, আরোগ্য দান কর, তুমিই একমাত্র আরোগ্যদানকারী। তোমার আরোগ্য ছাড়া অন্য কোন আরোগ্য নেই। এমন আরোগ্য দান কর যা সামান্যতম রোগকেও অবশিষ্ট না রাখে’।[28]
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি এমন রোগীকে দেখতে গেল যার অন্তিম সময় আসেনি, সে যেন তার সামনে সাত বার বলে,أَسْأَلُ اللَّهَ الْعَظِيمَ رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ أَنْ يَشْفِيَكَ، إِلَّا عَافَاهُ اللَّهُ مِنْ ذَلِكَ الْمَرَضِ-‘ আমি মহান আরশের প্রভু মহামহিম আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি, তিনি যেন তোমাকে রোগ মুক্তি দেন; তাহলে তাকে নিশ্চত রোগমুক্তি দেওয়া হবে’।[29]
আবু সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, জিবরীল (আঃ) নবী (ছাঃ)-এর নিকট আগমন করে বললেন, ‘হে মুহাম্মাদ! আপনি কি অসুস্থতা বোধ করছেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, ‘আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়-ফুঁক করছি, সে সব জিনিস হতে যা আপনাকে কষ্ট দেয়, সকল আত্মার খারাপী অথবা হিংসুকের কুদৃষ্টি হতে আল্লাহ আপনাকে মুক্তি দিন, আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাঁড়-ফুঁক করছি।[30] নবী (ছাঃ)-এর চিরাচরিত অভ্যাস ছিল রোগী দেখে তিনি বলতেন, لاَ بَأْسَ طَهُورٌ إِنْ شَاءَ اللَّهُ- ‘কোন দুশ্চিন্তার কারণ নেই, ইনশাআল্লাহ সুস্থতা লাভ করবে বা গুনাহ হতে পবিত্রতা লাভ করবে।[31]
প্রিয় ভাই! আপনিও রাসূল (ছাঃ)-এর মত পরিবারে কারো ব্যাধিতে সমব্যথী হয়ে উক্ত দো‘আ-কালাম পড়ে ঝাঁড়-ফুঁক করতে পারেন এবং সাধ্যমত আধুনিক মানসম্মত চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন ও উত্তম ধৈর্য ধরার উপদেশ দিবেন। কারণ ‘মু’মিন বান্দা-বান্দীরা একে অপরের সহযোগী, উত্তম শুভাকাঙ্ক্ষী’ (তওবাহ ৯/৭১)।
এ জগৎ সংসারে স্বামী-স্ত্রীর মত কাছের মানুষ, আপনজন, প্রেম-প্রীতি ও সেবা-শুশ্রূষা পাওয়ার আর কেউ নেই। সুতরাং বিপদ-আপদে, রোগ-শোকে, ব্যথা-বেদনায় মুহববতের মানুষকে সেণহের পরশ দিয়ে, সেবা-শুশ্রূষা ও পরিচর্যা করে পারিবারিক বন্ধন মযবুত ও সুদৃঢ় করুন এবং অশেষ ছওয়াব হাছিল করুন। আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (ছাঃ) বলেন,الرَّاحِمُونَ يَرْحَمُهُمُ الرَّحْمَنُ ارْحَمُوا أَهْلَ الْأَرْضِ يَرْحَمْكُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ ‘দয়াশীলদের উপর করুণাময় আল্লাহ দয়া করেন। তোমরা দুনিয়াবাসীকে দয়া কর, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদেরকে দয়া করবেন।[32]
রাসূল (ছাঃ) বলেন,«مَنْ قُتِلَ دُونَ مَالِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ، وَمَنْ قُتِلَ دُونَ أَهْلِهِ، أَوْ دُونَ دَمِهِ، أَوْ دُونَ دِينِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ- ‘যে ব্যক্তি মাল রক্ষা করতে গিয়ে খুন হয়, সে শহীদ। যে ব্যক্তি নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে খুন হয়, সে শহীদ। যে ব্যক্তি তার পরিবার রক্ষা করতে গিয়ে খুন হয়, সেও শহীদ।[33] সুতরাং পরিবারে কেউ শক্র দ্বারা কিংবা মহামারী রোগে আক্রান্ত হ’লেও তার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করার মাঝে আছে সফলতা, পরম সুখ, অশেষ ছওয়াব এবং তাতে মৃত্যু হলে শহীদী মর্যাদা।[34]
প্রিয় ভাই! স্মরণ রাখবেন, মহান আল্লাহ এই ধরার বুকে কাউকে রোগী বানিয়ে, কাউকে সুস্থ রেখে পরীক্ষা করছেন। কে কাকে কতটুকু মূল্যায়ন করে, সেবা-যত্ন করে সেটা তিনি দেখছেন।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ কিয়ামতের দিন বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, তুমি আমার খোঁজ-খবর রাখেনি। সে বলবে, হে আল্লাহ! আমি কি করে তোমার খোঁজ-খবর করব, অথচ তুমি সারাজাহানের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, আর তুমি তার সেবা করনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি তার সেবা-শুশ্রূষা করলে তার কাছেই আমাকে পেতে’।[35]
নু‘মান বিন বাশীর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, মু’মিনদের দৃষ্টান্ত হ’ল তাদের পারস্পরিক সম্প্রীতি, সহমর্মিতা ও সহানুভূতির দিক দিয়ে একটি মানবদেহের ন্যয়। যখন তার একটি অঙ্গ অসুস্থ হয়, তখন তার সমগ্র দেহ আলোড়িত হয় জ্বর ও অনিদ্রায়।[36]
ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, ওলামাগণ বলেছেন, ‘রোগীর পরিচর্যা মহান আল্লাহর এমন এক মেহমানদারী, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির সেবার মাধ্যমে আল্লাহ নৈকট্য ও সম্মান দু’টি লাভ করে’।[37]
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘এক মুসলমানের উপর অপর মুসলমানের পাঁচটি হক রয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম হ’ল রোগীর সেবা-শুশ্রূষা করা’।[38]
আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও, রোগীর সেবা কর এবং কষ্টে পতিত ব্যক্তিকে উদ্ধার কর’।[39] ছাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যখন কোন মুসলিম তার মুসলিম ভাইয়ের রোগের সেবায় নিয়োজিত হয় তখন সে প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত জান্নাতের ফল-ফলাদি আহরণরত থাকে’।[40] আলী (রাঃ) বলেন, ‘আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘কোন মুসলমান যদি অন্য কোন মুসলিম রোগীকে সকাল বেলা দেখতে যায়, তাহলে সত্তর হাযার ফেরশতা তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত দো‘আ করতে থাকে। সে যদি সন্ধ্যায় তাকে দেখতে যায়, তবে সত্তর হাযার ফেরেশতা ভোর পর্যন্ত তার জন্য দো‘আ করতে থাকে এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ফলের বাগান তৈরী হয়।[41] সুতরাং একজন আদর্শ স্বামী পরিবারের কর্তা হিসাবে স্ত্রীর চিকিৎসা ও সেবামূলক মাহাত্মপূর্ণ কাজের আঞ্জাম দিয়ে যাবেন।
(ক্রমশঃ)
[লেখক : সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ, ঝিনাইদহ সাংগঠনিক যেলা]
[1]. বুখারী হা/৬০৩১; মিশকাত হা/৫৮১১।
[2]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/২৭৩; আহমাদ হা ২/৩৮১; মিশকাত হা/ ৫০৯৬।
[3]. মুসনাদে আহমাদ হা/২৫৩৪১; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৮১১।
[4]. আদাবুল মুফরাদ হা/৩১৪, হাদীছ ছহীহ।
[5]. তিরমিযী হা/৩৮৯৫; ইবনু মাজাহ হা/১৯৭৭; ছহীহাহ হা/২৮৫; ছহীহ আত-তারগীব হা/৭২, হাদীছ ছহীহ।
[6]. ইবনু মাজাহ হা/১৯৭৮; তিরমিযী হা/৮৮৬২; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৮৫, হাদীছ ছহীহ।
[7]. তিরমযী হা/১৯৪৪; মিশকাত হা/৪৯৮৭; হাদীছ ছহীহ।
[8]. সিলসিলাহ ছহীহা হা/১২১৯।
[9]. তিরমিযী হা/২০১৮; ছহীহাহ হা/৭৯২, হাদীছ ছহীহ।
[10]. বুখারী হা/৩৩৩১; মুসলিম হা/ ৪৭; তিরমিযী হা/১১৮৮।
[11]. ইবনু মাজাহ হা/১৮৫১; তিরমিযী হা/১১৬৩, হাসান হাদীছ।
[12]. মুসলিম হা/১৪৬৯।
[13]. বুখারী হা/২৪০৮।
[14]. বুখারী হা/ ৩২৯৫; মুসলিম হা/৬১৭৭।
[15]. বুখারী হা/৬৪১৫; মুসলিম হা/৫৭৮৬।
[16]. ইবনু মাজাহ হা/৪০৩২; তিরমিযী হা/২৫০৭, হাদীছ হাসান।
[17]. তিরমিযী হা/২৪৮৮; সিলসিলাহ ছহীহাহ হা/৯৩৮, হাদীছ ছহীহ।।
[18]. বুখারী হা/২৭৬৭।
[19]. মুসলিম হা/৬৬৮০।
[20]. আবুদাউদ হা/৪৭৯৮;মিশকাত হা/৫০৮২, হাদীছ ছহীহ।
[21]. আবুদাউদ হা/৪৭৯৯, হাদীছ ছহীহ ।
[22]. তিরমিযী হা/২০০৪; ইবনু মাজাহ হা/৪২৪৬, হাদীছ হাসান।
[23]. বুখারী হা/২৭৮৬; মুসলিম হা/১৮৮৮; তিরমিযী হা/১৬৬০।
[24]. আবুদাউদ হা/৪৭৭৬; মিশকাত হা/৫০৬০।
[25]. আদবুল মুফরাদ হা/৪২২।
[26]. তিরমিযী হা/৩৮৯৪; মিশকাত হা/৬১৮৩, হাদীছ ছহীহ।
[27]. মুসলিম হা/৫৬০৭; মিশকাত হা/১৫৩২।
[28]. বুখারী হা/৫৬৭৫, ৫৭৪৩, ৫৭৫০।
[29]. আবূদাউদ হা/৩১০৬; মিশকাত হা/১৫৫৩, হাদীছ ছহীহ।
[30]. মুসলিম হা/৫৫৯৩, ই.ফা. হা/৫৫১২।
[31]. বুখারী হা/৩৬১৬।
[32]. আবুদাউদ হা/৪৯৪১; তিরমিযী হা/১৯২৪, হাদীছ ছহীহ।
[33]. তিরমিযী হা/১৪১৮; আবুদাউদ হা/৪৭৭২; মিশকাত হা/৩৫২৯, হাদীছ ছহীহ।
[34]. বুখারী হা/৩৪৭৪, ৫৭৩৪, ৬৬১৯।
[35]. মুসলিম হা/৬৪৫০; ই.ফা. হা/৬৩২২।
[36]. মুসলিম হা. এ.হা/৬৪৮০।
[37]. মির‘আত ৫/২১৭।
[38]. বুখারী হা/৫৮৭৮।
[39]. বুখারী হা/৩০৪৬,৫৬৪৯।
[40]. মুসলিম হা. এ.হা/৬৪৪৭।
[41]. তিরমিযী হা/৯৬৯; ছহীহাহ হা/১৩৬৭, হাদীছ ছহীহ।