রাগ নিয়ন্ত্রণের ফযীলত ও উপায়

যহীরুল ইসলাম 1616 বার পঠিত

ভূমিকা : মানব আত্মা সুরিপু ও কুরিপু দ্বারা পরিচালিত হয়। রাগ ষড় রিপুর অন্যতম একটি কুরিপু। রাগের সময় মানুষের পশুসুলভ কুরিপু সক্রিয় হয়ে উঠে। বাহ্যিকভাবে চেহারার রং বিবর্ণ হয়ে যায়। আর শিরা-উপশিরা ফুলে-ফেঁপে উঠে। আর এই অনিয়ন্ত্রিত রাগ নিজের আমল আখলাকের জন্য শুধু ক্ষতিকর নয় বরং শারীরিক ও মানসিকভাবে ভীষণভাবে ব্যক্তি ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত করে। রাগ হ’ল বারুদের গুদামের মত, যা মানুষের স্বাভাবিক অর্জনকে মূহুর্তের মধ্যে ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে স্বাভাবিক আচরণই কাম্য। যা সুখী ও সমৃদ্ধ জীবন গঠনে সহায়ক। নিম্নে রাগ নিয়ন্ত্রণের ফযীলত ও উপায় সম্পর্কে আলোচনার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ!

রাগ নিয়ন্ত্রণের ফযীলত :

শয়তান আগুনের তৈরী। রাগ মানুষের মধ্যে বিদ্যুতের মত আগুন সদৃশ। ওয়াসওয়াসার কাঠি ব্যবহার করে শয়তান মানুষের ভিতরের সেই আগুনটা জ্বালানোর চেষ্টা করে। যাতে করে মানুষ চরমভাবে ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইসলাম রাগ দমনের নির্দেশ দানের পাশাপাশি রাগ দমনকারীর জন্য বহু পুরস্কারের কথাও ঘোষণা করেছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللَّهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ-

‘আর আল্লাহর রহমতের কারণেই তুমি তাদের প্রতি (অর্থাৎ স্বীয় উম্মতের প্রতি) কোমল হৃদয় হয়েছ। যদি তুমি কর্কশভাষী কঠোর হৃদয়ের হ’তে তাহ’লে তারা তোমার পাশ থেকে সরে যেত। কাজেই তুমি তাদের ক্ষমা করে দাও ও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং যরূরী বিষয়ে তাদের সাথে পরামর্শ কর। অতঃপর যখন তুমি সংকল্পবদ্ধ হবে, তখন আল্লাহর উপর ভরসা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার উপর ভরসাকারীদের ভালবাসেন’ (আলে-ইমরান ৩/১৫৯)

১. রাগ দমনে ঈমান ও শান্তি ভরপুর দিল :

ক্রোধ দমনকারী ব্যক্তির হৃদয়কে মহান আল্লাহ ঈমান ও শান্তি দ্বারা পূর্ণ করবেন এবং জান্নাতী মেহমান হিসাবে অভ্যর্থনা জানাবেন। হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আমার নিকট হজম করার জিনিসের মধ্যে সর্বোত্তম হ’ল, কোনো ব্যক্তির তার রাগকে হজম করে নেওয়া। যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য তার রাগকে হজম করে নিল, আল্লাহ তাকে ঈমান দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিবেন’।[1]

২. রাগ নিয়ন্ত্রনকারীই প্রকৃত বীর :

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَيْسَ الشَّدِيدُ بِالصُّرَعَةِ إِنَّمَا الشَّدِيدُ الَّذِى يَمْلِكُ نَفْسَهُ عِنْدَ الْغَضَبِ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘প্রকৃত বীর সে নয়, যে কাউকে কুস্তীতে হারিয়ে দেয়। বরং সেই প্রকৃত বীর, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম’।[2]

৩. আল্লাহর ভালবাসা :

আল্লাহর তা‘আলা বিশেষ করে রাগ দমনকারী ও মানুষকে ক্ষমা করা ব্যক্তিকে ভালবাসেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,الَّذِينَ يُنْفِقُونَ فِي السَّرَّاءِ وَالضَّرَّاءِ وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ- ‘যারা সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতা সর্বাবস্থায় (আল্লাহর রাস্তায়) ব্যয় করে, যারা ক্রোধ দমন করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। বস্ত্ততঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন’ (আলে ইমরান ৩/১৩৪)

৪. আললাহর ক্রোধ থেকে মুক্তি :

মহান আল্লাহ বান্দাকে প্রতিটি নেক আমলেরই পুরুষ্কার দিবেন। কিন্তু রাগ দমনের ব্যাপারটা ভিন্ন ইবনে উমার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَا مِنْ جُرْعَةٍ أَعْظَمُ أَجْرًا عِنْدَ اللَّهِ مِنْ جُرْعَةِ غَيْظٍ كَظَمَهَا عَبْدٌ ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللَّهِ- আল্লাহর সন্তুুষ্টি অর্জনের জন্য বান্দার ক্রোধ সংবরণে যে মহান প্রতিদান রয়েছে তা অন্য কিছু সংবরণে নেই’।[3] অপর একটি হাদীছে এসেছে,

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কোন জিনিস আমাকে আল্লাহর ক্রোধ থেকে রক্ষা করতে পারে? তিনি বললেন, তুমি রাগ করো না’।[4] অর্থাৎ, রাগ করা থেকে বিরত থাকলে আল্লাহর ক্রোধ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।

৫. সৃষ্টিকুলের সামনে সম্মানের স্বীকৃতি :

রাগান্বিত ব্যক্তি ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও দুনিয়ায় যদি রাগ প্রয়োগ না করেন, ক্ষমা করে দেন। তবে মহান আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামতের মাঠে সৃষ্টিকুলের সামনে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করবেন। হাদীছে এসেছে,

عَنْ سَهْلِ بْنِ مُعَاذٍ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ كَظَمَ غَيْظًا وَهُوَ قَادِرٌ عَلَى أَنْ يُنْفِذَهُ، دَعَاهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى رُءُوسِ الْخَلَائِقِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُخَيِّرَهُ اللَّهُ مِنَ الْحُورِ الْعِينِ مَا شَاءَ-

সাহল ইবনু মু‘আয (রাঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার রাগ প্রয়োগে ক্ষমতা থাকার সত্ত্বেও সংযত থাকে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সকল সৃষ্টিকূলের মধ্যে থেকে ডেকে নিবেন এবং তাকে হুরদের মধ্য থেকে তার পসন্দমত যে কোনো একজনকে বেছে নেয়ার স্বাধীনতা দিবেন’।[5]

৬. বিশাল প্রতিদান প্রাপ্তি :

মহান আল্লাহ হুরী পাবার নিশ্চয়তা দিতে রাগ দমনের আদেশ করেছেন। বিষয়টি খুব চমকপ্রদ যা অন্য আমলের ক্ষেত্রে এমনটি দেখা যায় না। রাগ দমনকারী ব্যক্তি দুনিয়ায় রাগ দমন করবেন এবং ক্বিয়ামতের মাঠে বেহেশতের হুরী বুঝে নিবেন, মাশাআল্লাহ। হাদীছ এসেছে,

ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় বান্দার রাগ হজম করে নেওয়া আল্লাহর নিকট বিশাল প্রতিদান লাভের মাধ্যম হয়।[6] রাসূল (ছাঃ) বলেন,

مَنْ كَظَمَ غَيْظًا وَهُوَ قَادِرٌ عَلَى أَنْ يُنْفِذَهُ دَعَاهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى رُءُوسِ الْخَلاَئِقِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُخَيِّرَهُ اللَّهُ مِنَ الْحُورِ مَا شَاءَ-

সাহল ইবন মুআয (রাঃ) তার পিতা হ’তে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ক্রোধকে সংবরণ করে, অথচ সে কাজ করতে সে সক্ষম; (তার এ ছবরের কারণে) ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সকলের সামনে ডেকে বলবেন, তুমি যে হুরকে চাও, পসন্দ করে নিয়ে যাও’। [7]

৭. জান্নাতের সুসংবাদ :

ক্রোধ জান্নাত পাগল মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। কেননা ক্রোধান্বিত ব্যক্তি শয়তানের অনুগামী হয়। এ বিষয়ে হাদীছে এসেছে।

হযরত আবু দারদা (রাঃ)-একবার প্রিয়নবী (ছাঃ)-কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলে দিন যা আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তুমি রাগ করবে না, তাহ’লে তোমার জন্য জান্নাত’।[8]

আরেক বর্ণনায় এসেছে, জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এমন একটি আমলের কথা বলুন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তিনি বললেন, ‘তুমি রাগ প্রকাশ করবে না, তোমার জন্য জান্নাত রয়েছে’।[9]

৮. রাগ সচ্চরিত্রের উপর প্রভাব পড়ে :

রাগী মানুষকে কেউ পছন্দ করে না। কখনোই এই রাগই তার তার সচ্চরিত্রের অন্তরায় সৃষ্টি হয়। ইবনুল মুবারক (রহঃ) বলেন, কথায় সচ্চরিত্রের সন্নিবেশ ঘটাও এবং ক্রোধকে সর্বত্রভাবে বিদায় জানাও’।[10] হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه أَنَّ رَجُلاً قَالَ لِلنَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم أَوْصِنِى قَالَ لاَ تَغْضَبْ فَرَدَّدَ مِرَارًا قَالَ لاَ تَغْضَبْ

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক লোক নবী করীম (ছাঃ)-এর সমীপে আবেদন জানাল যে, আপনি আমাকে অছিয়ত করুন। তিনি বললেন, ‘তুমি রাগান্বিত হয়ো না’। লোকটি বার বার এই আবেদন জানাল। তিনি (প্রত্যেক বারেই) তাকে এই অসিয়ত করলেন যে,‘তুমি রাগান্বিত হয়ো না’।[11]

কিছু নিষেধাজ্ঞা

রাগ অবস্থায় কোন বিচার ফায়ছালা না করা :

كَتَبَ أَبُو بَكْرَةَ إِلَى ابْنِهِ وَكَانَ بِسِجِسْتَانَ بِأَنْ لاَ تَقْضِىَ بَيْنَ اثْنَيْنِ وَأَنْتَ غَضْبَانُ فَإِنِّى سَمِعْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ لاَ يَقْضِيَنَّ حَكَمٌ بَيْنَ اثْنَيْنِ وَهْوَ غَضْبَانُ-

হযরত আব্দুর রহমান ইবনু আবু বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আবু বকর (রাঃ) তাঁর ছেলেকে লিখে পাঠালেন- সে সময় তিনি সিজিস্থানে অবস্থানরত ছিলেন তুমি রাগের অবস্থায় বিবাদমান দু’ব্যক্তির মাঝে ফায়ছালা করো না। কেননা, আমি রাসূলূল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, কোন বিচারক রাগের অবস্থায় দু’জনের মধ্যে বিচার করবে না’।[12]

এ বিষয়ে ইবনু তায়মিয়্যাহ (রহঃ) বলেন, প্রকৃত শক্তিশালী ঐ ব্যক্তি যে ক্রোধের সময় হিতাহিত জ্ঞান না হারিয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আর ক্রোধ যদি তার উপর বিজয় লাভ করে, তাহ’লে বুঝতে হবে প্রকৃতপক্ষে সে শক্তিশালী বা বীর কোনটিই নয়’।[13]

রাগ নিয়ন্ত্রণে রাসূলের উপদেশ :

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه أَنَّ رَجُلاً قَالَ لِلنَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم أَوْصِنِى قَالَ لاَ تَغْضَبْ فَرَدَّدَ مِرَارًا قَالَ لاَ تَغْضَبْ-আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট বললো, আপনি আমাকে অছিয়ত করুন। তিনি বললেন, তুমি রাগ করো না। লোকটা কয়েকবার তা বললেন, নবী করীম (ছাঃ) প্রত্যেক বারই বললেন, রাগ করো না’।[14]

নিন্দনীয় রাগে যা ফিরেশতার অভিস্পাত :

عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امرَأتَهُ إِلَى فرَاشِهِ فَلَمْ تَأتِهِ، فَبَاتَ غَضْبَانَ عَلَيْهَا، لَعَنَتْهَا المَلائِكَةُ حَتَّى تُصْبحَ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীকে নিজ বিছানায় ডাকে এবং সে না আসে, অতঃপর সে (স্বামী) তার প্রতি রাগান্বিত অবস্থায় রাত কাটায়, তাহ’লে ফিরিশতাগণ তাকে সকাল অবধি অভিসম্পাত করতে থাকেন’।[15]

রাগ নিয়ন্ত্রণের উপায়সমূহ

১. আল্লাহ তা‘আলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা :

রাগ এমন একটি ব্যাধি যা মানুষ চাইলে নিয়ন্ত্রণ আনতে পারবে, বিষয়টি এমন নয়। তাই মহান আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা যরূরী। হাদীছে এসেছে,

عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ صُرَدٍ، قَالَ كُنْتُ جَالِسًا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَرَجُلاَنِ يَسْتَبَّانِ فَأَحَدُهُمَا احْمَرَّ وَجْهُهُ وَانْتَفَخَتْ أَوْدَاجُهُ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم‏ إِنِّي لأَعْلَمُ كَلِمَةً لَوْ قَالَهَا ذَهَبَ عَنْهُ مَا يَجِدُ، لَوْ قَالَ أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ‏.‏ ذَهَبَ عَنْهُ مَا يَجِدُ‏ فَقَالُوا لَهُ إِنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ‏ تَعَوَّذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ فَقَالَ وَهَلْ بِي جُنُونٌ-

সুলাইমান ইবনু সুরাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী (ছাঃ)-এর সঙ্গে বসা ছিলাম। তখন দু’জন লোক পরস্পর গাল মন্দ করছিল। তাদের এক জনের চেহারা লাল হয়ে গিয়েছিল এবং তার রগগুলো ফুলে গিয়েছিল। তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন, আমি এমন একটি দো‘আ জানি, যদি লোকটি পড়ে তবে সে যে রাগ অনুভব করছে তা দূর হয়ে যাবে। (তিনি বললেন) সে যদি পড়ে ‘আউযূবিল্লাহি মিনাশ শায়তান’ আমি শয়তান হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। তবে তার রাগ চলে যাবে। তখন তাকে বলল, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, তুমি যেন আল্লাহর কাছে শয়তান হ’তে আশ্রয় চাও। সে বলল, আমি কি পাগল হয়েছি?[16]

২. ক্রোধাম্বিত অবস্থায় শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন :

কখন রাগ এসে গেলে তা নিয়ন্ত্রনের জন্য ঐ স্থান বা অবস্থা পরিবর্তন করা যরূরী। হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِى ذَرٍّ قَالَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَنَا إِذَا غَضِبَ أَحَدُكُمْ وَهُوَ قَائِمٌ فَلْيَجْلِسْ فَإِنْ ذَهَبَ عَنْهُ الْغَضَبُ وَإِلاَّ فَلْيَضْطَجِعْ-

আবূ যার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদের বলেন, যদি তোমাদের কেউ দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় রাগান্বিত হয়, তবে সে যেন বসে পড়ে। যদি এতে রাগ চলে যায়, তবে ভাল; নয়তো সে শুয়ে পড়বে’।[17]

৩. চুপ থাকা :

ইবনু ‘আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, ‘উয়ায়নাহ ইবনু আববাসের ভাতিজা হুরকে ডেকে বললেন, এই আমীরের কাছে তো তোমার একটা মর্যাদা আছে, সুতরাং তুমি আমার জন্য তাঁর কাছে প্রবেশের অনুমতি নিয়ে দাও। তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি তাঁর কাছে আপনার প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করব। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, এরপর হুর অনুমতি প্রার্থনা করলেন উয়াইনাহর জন্য উমার (রাঃ) অনুমতি দিলেন। উয়াইনাহ ‘উমারের কাছে গিয়ে বললেন, হ্যাঁ আপনি তো আমাদেরকে অধিক অধিক দানও করেন না এবং আমাদের মাঝে সুবিচারও করেন না। উমার (রাঃ) রাগান্বিত হলেন এবং তাঁকে কিছু একটা করতে উদ্যত হলেন। তখন হুর বললেন, হে আমিরুল মু’মিনীন! আল্লাহ তা‘আলা তো তাঁর নবী করীম (ছাঃ)-কে বলেছেন, ‘ক্ষমা অবলম্বন কর, সৎকাজের আদেশ দাও এবং মূর্খদেরকে উপেক্ষা কর’ আর এই ব্যক্তি তো অবশ্যই মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহর কসম উমার (রাঃ) আয়াতের নির্দেশ অমান্য করেননি। ‘উমার আল্লাহর কিতাবের বিধানের সামনে চুপ হয়ে যেতেন’।[18]

উপসংহার :

রাগ মানুষের জীবনের অন্যতম একটি মন্দ দিক। কারোর রাগ যখন মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তখন সেটা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একজন রাগান্বিত ব্যক্তির নিকট গেলে অধিকাংশ সময় মন্দ আচরণই আসে। তাই রাগকে নিয়ন্ত্রণ করাই হবে আমাদের বীরত্বের কাজ। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হউন-আমীন!

[লেখক : অধ্যয়নরত, দাওরায়ে হাদীছ, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী]


[1]. মুসনাদে আহমদ ১/৩২৭।

[2]. বুখারী হা/৬১১৪; মিশকাত হা/৫১০৫।

[3]. ইবনু মাজাহ হা/৪১৮৯।

[4] ছহীহ ইবনে হিববান হা/২৯৬।

[5]. আবু দাউদ হা/৪৭৭৭।

[6]. মুসনাদে আহমদ ২/১২৮।

[7]. আবুদাউদ হা/৪৭৭৭।

[8]. তবারানী হা/২৩৫৩।

[9]. ত্বাবারাণী আওসাত্ব হা/২৩৫৩; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৭৪৯।

[10]. জামেঊল ঊলূম ওয়াল হাকাম লি ইবনে রাজাব ১/৩৬৩ পৃ.।

[11]. বুখারী হা/৬১১৬; তিরমিযী হা/২০২০।

[12]. বুখারী হা/৭১৫৮; মুসলিম হা/১৭১৭।

[13]. ইস্তেক্বামাহ ২/২৭১ পৃ.।

[14]. বুখারী হা/ ৬১১৬;মিশকাত হা/৫১০৪।

[15]. বুখারী হা/৩২৩৭।

[16]. বুখারী হা/৩২৮২।

[17]. আবুদাউদ হা/৪৭৮২।

[18]. বুখারী হা/৪৬৪২।



বিষয়সমূহ: বিবিধ
আরও