রোগীর পরিচর্যা
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 902 বার পঠিত
আল-কুরআনুল কারীম :
1- فَأَمَّا مَنْ طَغَى- وَآثَرَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا- فَإِنَّ الْجَحِيمَ هِيَ الْمَأْوَى- وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى- فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَى-
(১) ‘তখন যে ব্যক্তি সীমালংঘন করেছে এবং পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়েছে জাহান্নাম তার ঠিকানা হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার প্রভুর সম্মুখে দন্ডায়মান হওয়ার ভয় করেছে এবং নিজেকে প্রবৃত্তির গোলামী হ’তে বিরত রেখেছে, জান্নাত তার ঠিকানা হবে’ (নাযে‘আত ৭৯/৩৭-৪১)।
2- إِنَّ الَّذِينَ لَا يَرْجُونَ لِقَاءَنَا وَرَضُوا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاطْمَأَنُّوا بِهَا وَالَّذِينَ هُمْ عَنْ آيَاتِنَا غَافِلُونَ- أُولَئِكَ مَأْوَاهُمُ النَّارُ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ-
(২) ‘যারা (মৃত্যুর পর) আমার সাথে সাক্ষাতের প্রত্যাশা করে না, যারা এ পার্থিব জীবন নিয়েই সন্তুষ্ট থাকে এবং এখানকার সবকিছু নিয়েই তৃপ্তিবোধ করে, (সর্বোপরি) যারা আমার নিদর্শনাবলী থেকে অমনোযোগী থাকে, তারাই হচ্ছে ঐসব লোক, যাদের নিশ্চিত ঠিকানা হবে জাহান্নামের আগুন; এ হচ্ছে তাদের সেই কর্মফল, যা তারা দুনিয়ার জীবনে অর্জন করেছিল’ (ইউনুস১০/৭-৮)।
3- وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيدُ زِينَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا-
(৩) ‘আর তুমি নিজেকে ধরে রাখো তাদের সাথে যারা সকালে ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে আহবান করে তাঁর চেহারার কামনায় এবং তুমি তাদের থেকে তোমার দু’চোখ ফিরিয়ে নিয়ো না পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনায়। আর তুমি ঐ ব্যক্তির আনুগত্য করো না যার অন্তরকে আমরা আমাদের স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি এবং সে তার খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে ও তার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে গেছে’ (কাহাফ ১৮/২৮)।
হাদীছে নববী :
4- عَنْ حُذَيْفَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ تُعْرَضُ الْفِتَنُ عَلَى الْقُلُوبِ كَالْحَصِيرِ عُودًا عُودًا، فَأَيُّ قَلْبٍ أُشْرِبَهَا نَكَتَتْ فِيهِ نُكْتَةً سَوْدَاءَ، وَأَيُّ قَلْبٍ أَنْكَرَهَا نُكِتَتْ لَهُ نُكْتَةٌ بَيْضَاءُ، حَتَّى يَصِيرَ عَلَى قَلْبَيْنِ: أَبْيَضُ مِثْلُ الصَّفَا، فَلَا تَضُرُّهُ فِتْنَةٌ مَا دَامَتِ السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ، وَالْآخَرُ أَسْوَدُ مِرْبَادًّا كَالْكُوزِ مُجْخِيًّا لَا يَعْرِفُ مَعْرُوفًا وَلَا يُنْكِرُ مُنْكَرًا إِلَّا مَا أُشْرِبَ مِنْ هَوَاهُ-
(৪) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘মানুষের মনে ফিৎনা বা গোমরাহী এমনভাবে ঢেলে দেওয়া হয় যেমন করে খেজুরের মাদুর বা পাটি বুনতে একটা একটা করে পাতা ব্যবহার করা হয়। যে মনে ঐ ফিৎনা অনুপ্রবেশ করে তাতে একটা কালো দাগ পড়ে যায়। আর যে মন তা প্রত্যাখ্যান করে তাতে একটা সাদা দাগ পড়ে। এভাবে মনগুলো দু’ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এক. মসৃণ পাথরের মত সাদা মন, যাতে কোন ফিৎনা বা পাপাচার আসমান-যমীন বিদ্যমান থাকা অবধি কোনই বিরূপ ক্রিয়া করতে পারবে না। দুই. কয়লার ন্যায় কালো মন, যা উপুড় করা পাত্রের মত, না সে কোন ন্যায়কে বোঝে, না অন্যায়কে স্বীকার করে। তার খেয়াল-খুশী বা কামনা-বাসনা তাকে যেভাবে পরিচালনা করে সেভাবেই কেবল সে পরিচালিত হয়’।[1]
5- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ ثَلَاثٌ مُنْجِيَاتٌ، وَثَلَاثٌ مُهْلِكَاتٌ؟ فَأَمَّا الْمُنْجِيَاتُ: فَتَقْوَى اللَّهِ فِي السِّرِّ وَالْعَلَانِيَةِ، وَالْقَوْلُ بِالْحَقِّ فِي الرِضَا وَالسُّخْطِ، وَالْقَصْدُ فِي الْغِنَى وَالْفَقْرِ. وَأَمَّا الْمُهْلِكَاتُ: فَهَوًى مُتَّبَعٌ، وَشُحٌّ مُطَاعٌ، وَإِعْجَابُ الْمَرْءِ بِنَفْسِهِ، وَهِيَ أَشَدُّهُنَّ-
(৫) আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তিনটি জিনিস পরিত্রাণকারী এবং তিনটি জিনিস ধ্বংসকারী। পরিত্রাণকারী জিনিসগুলো হ’ল- ১. প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহকে ভয় করা, ২. সন্তুষ্ট ও অসন্তুষ্ট উভয় অবস্থায় উচিত কথা বলা, ৩. ধনী ও দরিদ্র উভয় অবস্থায় মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা। আর ধ্বংসকারী জিনিসগুলো হল- ১. প্রবৃত্তির অনুসারী হওয়া, ২. লোভ-লালসা করা, ৩. কোন ব্যক্তি নিজেকে নিজে সম্মানিত মনে করা। আর এ স্বভাবটিই সবচেয়ে খারাপ স্বভাব’।[2]
6- وَعَنِ الْحَارِثِ بْنِ سُوَيْدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ حَدِيثَيْنِ: أَحَدُهُمَا عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالْآخِرُ عَنْ نَفْسِهِ. قَالَ: إِنَّ الْمُؤْمِنَ يَرَى ذُنُوبَهُ كَأَنَّهُ قَاعِدٌ تَحْتَ جَبَلٍ يَخَافُ أَنْ يَقَعَ عَلَيْهِ، وَإِنَّ الْفَاجِرَ يَرَى ذُنُوبَهُ كَذُبَابٍ مَرَّ عَلَى أَنْفِهِ فَقَالَ بِهِ هَكَذَا أَيْ بِيَدِهِ فَذَبَّهُ عَنْهُ-
(৬) হারেছ ইবনু সুওয়াইদ (রহঃ) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) আমাকে দু’টো কথা বলেছেন, একটি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পক্ষ থেকে, আর অপরটি তাঁর নিজের পক্ষ থেকে। তিনি বলেছেন, মু’মিন নিজের গুনাহকে মনে করে সে যেন কোন পাহাড়ের নীচে বসে আছে, যা তার উপর ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা করে। অপরদিকে গুনাহগার ব্যক্তি নিজের গুনাহকে দেখে একটি মাছির মতো, যা তার নাকের উপর বসল, আর তা সে হাত দিয়ে নাড়িয়ে তাড়িয়ে দিলো’।[3]
7- عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللَّهُ تَعَالَى فِى ظِلِّهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلُّهُ إِمَامٌ عَدْلٌ، وَشَابٌّ نَشَأَ فِى عِبَادَةِ اللَّهِ، وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ فِى الْمَسَاجِدِ، وَرَجُلاَنِ تَحَابَّا فِى اللَّهِ اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ، وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتُ مَنْصِبٍ وَجَمَالٍ فَقَالَ إِنِّى أَخَافُ اللَّهَ، وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لاَ تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ، وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللَّهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ.
(৭) আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেন, সাত ধরনের মানুষকে আল্লাহ তা‘আলা সেদিন (কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন) তাঁর ছায়ার নীচে আশ্রয় দিবেন যেদিন আল্লাহর ছায়া ছাড়া আর কারো ছায়া থাকবে না (১) ন্যায়পরায়ণ শাসক, (২) সেই যুবক যে যৌবন বয়সে আল্লাহর ইবাদতে কাটিয়েছে, (৩) যে ব্যক্তি মসজিদ থেকে বের হয়ে এসে আবার সেখানে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত মসজিদেই তার মন পড়ে থাকে, (৪) সেই দুই ব্যক্তি, যারা পরস্পরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে। যদি তারা একত্রিত হয় আল্লাহর জন্য হয়, আর যদি পৃথক হয় তাও আল্লাহর জন্যই হয়, (৫) সে ব্যক্তি, যে একাকী অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে আর আল্লাহর ভয়ে তার দু’ চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে, (৬) সে ব্যক্তি, যাকে কোন উচ্চ বংশীয় সুন্দরী যুবতী কু-কাজ করার জন্য আহবান জানায়। এর উত্তরে সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি, (৭) সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহর পথে গোপনে দান করে। যার বাম হাতও বলতে পারে না যে, তার ডান হতে কী খরচ করেছে’।[4]
8- عَنْ أَبِى بَرْزَةَ الأَسْلَمِىِّ قَالَ أَبُو الأَشْهَبِ لاَ أَعْلَمُهُ إِلاَّ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّ مِمَّا أَخْشَى عَلَيْكُمْ شَهَوَاتِ الْغَىِّ فِى بُطُونِكُمْ وَفُرُوجِكُمْ وَمُضِلاَّتِ الْفِتَنِ -
(৮) আবু বারযা, নবী করীম (ছাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, ‘আমি কেবলই তোমাদের ক্ষেত্রে তোমাদের পেট তথা অবাধ পানাহার ও জননেনিন্দ্রয়ের অবৈধ সম্ভোগ এবং শরী‘আত বিরুদ্ধ কামনা-বাসনা চরিতার্থ করার ভয় করি’।[5]
9- عَنْ قُطْبَةَ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الْأَخْلَاقِ وَالْأَعْمَالِ وَالْأَهْوَاءِ.
(৯) কুতবা বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) এই বলে দো‘আ করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি মন্দ স্বভাব, মন্দ কাজ ও কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে’।[6]
মনীষীদের বক্তব্য :
১. ওমর ইবনু আযীয (রহঃ) বলেন, ‘কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদ সর্বোত্তম জিহাদ’।[7]
২. সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) বলেন, ‘কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে যে যত বেশী বিরত থাকতে সক্ষম, সে তত বড় বীর পুরুষ। আর তুচ্ছ সব জিনিস থেকেই বড় বড় ধ্বংসাত্মক জিনিস জন্ম নেয়’।[8]
৩. সাহল বিন আব্দুল্লাহ (রহঃ) বলেন, ‘তোমার কুপ্রবৃত্তি তোমার রোগ। তুমি যদি তার বিরোধিতা কর তাহ’লে সেটাই তোমার ঔষধ’।[9]
৪. ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রহঃ) বলেছেন, ‘খোদ প্রবৃত্তি ও লালসার জন্য কোন শাস্তি পোহাতে হবে না। বরং তার অনুসরণ ও তার কথামত কাজ করার দরুণ শাস্তি পোহাতে হবে। সুতরাং মন প্রবৃত্তির পেছনে চলতে চাইবে আর ব্যক্তি নিজের মনকে তা থেকে বিরত রাখলে তখন তার এ বিরত রাখাই আল্লাহর ইবাদত ও নেক কাজ বলে গণ্য হবে’।[10]
সারবস্ত্ত :
১. কুপ্রবৃত্তি তথা মনের খেয়ালখুশীর বিরুদ্ধে লড়াই করা সবচেয়ে বড় জিহাদ।
২. বর্তমান বিশ্বশান্তির বিঘ্নিত হওয়ার মূলেই রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত প্রবৃত্তির অনুসরণ।
৩. শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করার চেয়ে নিজেদের কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার অধিকতর যরূরী।
৪. কুপ্রবৃত্তির অনুসারীগণ জাহান্নামী এবং পরহেযকারীগণ প্রকৃত মুমিন এবং জান্নাতী।
[1]. মুসলিম, মিশকাত হা/১১১৭।
[2]. শু‘আবুল ঈমান হা/৭২৫২, ছহীহাহ হা/১৮০২; মিশকাতহা/৫১২২।
[3]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৫৮।
[4]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৭০১।
[5]. আহমাদ হা/১৯৭৮৮; ছহীহ তারগীব হা/৫২, সনদ ছহীহ ।
[6]. তিরমিযী, মিশকাত হা/২৪৭১।
[7].ইবনুল জাওযী, আত-তাবছিরাহ ১/১৫৫ পৃ.।
[8]. ঐ ৩/২৫১ পৃ. ।
[9].তাফসীরে কুরতুবী ১৬/১৪৪ পৃ.।
[10].মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/৬৩৫ পৃ.।