বিশুদ্ধ আক্বীদাই মূল

জামীলুর রহমান 1155 বার পঠিত

ভূমিকা :

ইসলামের মূল ভিত্তি বিশুদ্ধ আক্বীদা। আক্বীদার সম্পর্ক বিশ্বাসের সাথে। আক্বীদা ছহীহ ও সঠিক হ’লে ইবাদত ও আমল সঠিক হবে। আক্বীদা নিখুঁত ও খাঁটি না হ’লে ইবাদত ও আমল সঠিক হবে না। তাই বিগত নবী-রাসূলগণের দাওয়াতের কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল বিশুদ্ধ আক্বীদা। প্রত্যেক নবী-রাসূলই নিজ নিজ জাতিকে সর্বপ্রথম খাঁটি ও নির্ভেজাল আক্বীদার দিকে দাওয়াত দিয়েছেন। আমাদের রাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ) তাঁর তেইশ বছর নবুঅতী জীবনের মক্কী অধ্যায়ের তেরো বছর শুধু আক্বীদার বিশুদ্ধতা ও পরিচ্ছন্নতার দিকেই দাওয়াত দিয়েছিলেন। যেহেতু ইবাদত ও আমল আক্বীদা-বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটে, তাই আক্বীদা বিশুদ্ধ হ’লে ইবাদত ও আমলে অবশ্যই তার প্রতিফলন ঘটবে। এর বাস্তবতা আমরা আমাদের চারপাশে লক্ষ্য করছি। যেহেতু ইবাদত-আমল-আখলাক ও মু‘আমালাতের মূল সম্পর্ক আক্বীদার সাথে, তাই আক্বীদা সম্পর্কে প্রত্যেক মুসলমানের সঠিক ধারণা থাকা প্রয়োজন। অন্য সকল ধরনের ইলম ও জ্ঞান অর্জনের আগে আক্বীদা সম্পর্কিত ইলম ও জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আল্লাহ পাক রাসূল (ছাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন,فَاعْلَمْ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ ‘আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন ইলাহ নেই’ (মুহাম্মাদ ৪৭/১৯)

এটি আক্বীদার মূল বিষয়। এ বিষয়টি জানার জন্য আল্লাহ তাঁর রাসূলকে নিদের্শ দিয়েছেন। যে রাসূলের মাধ্যমে ইসলাম পরিপূর্ণতা লাভ করেছে তাঁকেও আক্বীদার ইলম অর্জনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অতএব বিষয়টি খুবই গুরুত্বের দাবী রাখে।

আক্বীদার পরিচয় : আক্বীদা (عقيدة) শব্দটি আরবী। আরবী হ’লেও প্রায় সকল ভাষাভাষী মুসলমানের কাছে শব্দটি ব্যাপকভাবে পরিচিত। ‘আক্বীদা’ শব্দটির মূল হচ্ছে আক্দ (عقد)-এর আভিধানিক অর্থ হ’ল : দড়ি, চুল জাতীয় জিনিসে uঁগট দেয়া, ব্যবসা, চুক্তি, শপথ ইত্যাদিকে দৃঢ় করা, চুক্তি, প্রতিশ্রুতি’।[1]

তবে যে কোন বিশ্বাস ও চুক্তিকেই আক্বীদা বলা হয় না। নিদিষ্ট কোন ধর্ম, মতবাদ, আদর্শকে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করাকেই আক্বীদা বলে। এ আক্বীদার সম্পর্ক মানুষের মনের সাথে, আর প্রতিফলন ঘটে কর্মের মাধ্যমে।

বিশুদ্ধ আক্বীদা : ইসলামকে আল্লাহর একমাত্র মনোনীত দ্বীন হিসাবে মেনে নিয়ে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। যেমন আল্লাহকে এক ও একক রব হিসাবে বিশ্বাস করা, তাঁর ক্ষমতা ও সার্বভৌমত্বকে বিশ্বাস করা। আল্লাহ মানুষের হেদায়াতের জন্য নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন, কিতাব নাযিল করেছেন, ফেরেশতারা আল্লাহর আজ্ঞাবহ, পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে, আখেরাতে জবাবদিহিতা, পৃথিবীতে মানুষের ভাল ও মন্দ কার্মের বিনিময়ে জান্নাত অথবা জাহান্নামে পাঠানো হবে। ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস করা বিশুদ্ধ আক্বীদার দাবী।

এককথায় জাত বা সত্তা, গুণাবলী, আইনগত অধিকার ও ইবাদত পাওয়ার একমাত্র মালিক হিসাবে আল্লাহকে মনে- প্রাণে দৃঢ় বিশ্বাস ও প্রত্যয়ের ভিত্তিতে মানুষের যে চিন্তা- চেতনা পরিচালিত হয় এবং কর্মসমূহ সম্পাদনের পথ ও পদ্ধতি বৈধতা লাভ করে, তাকে বিশুদ্ধ আক্বীদা বলে।

আকৃতির দিক দিয়ে বিশ্বের সকল মানুষ সমান। তাদের মধ্যে পারস্পরিক পার্থক্য হয় কেবল আক্বীদা-বিশ্বাসের কারণে। এই কারণে একই বনু আদমের কেউ মুমিন, কেউ কাফির। কেউ হিন্দু, কেউ মুসলমান। মূলতঃ আল্লাহকে একক সৃষ্টিকর্তা ও বিধানদাতা হিসাবে মেনে নেওয়া বা না নেওয়ার মধ্যেই এই পার্থক্যের কারণ নিহিত’।[2]

আক্বীদার প্রকারভেদ : আক্বীদা ২ প্রকার। যেমন:-

এক : তাওহীদী আক্বীদা : যেমন আল্লাহ বলেন,الَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُمْ بِظُلْمٍ أُولَئِكَ لَهُمُ الْأَمْنُ وَهُمْ مُهْتَدُونَ- ‘যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানের সাথে শিরককে মিশ্রিত করেনি, তাদের জন্যই রয়েছে (জাহান্নাম থেকে) নিরাপত্তা এবং তারাই হেদায়াত প্রাপ্ত’ (আন‘আম ৬/৮২)।

দুই : শিরকী আক্বীদা : যেমন কাফেররা আল্লাহকে বিশ্বাস করার সাথে সাথে তাদের দেব-দেবীদেরও উপাস্য মনে করত। কুরআনের ভাষায় তাদের বক্তব্য ছিল- وَقَالُوا لاَ تَذَرُنَّ آلِهَتَكُمْ وَلاَ تَذَرُنَّ وَدًّا وَلَا سُوَاعًا وَلاَ يَغُوثَ وَيَعُوقَ وَنَسْرًا- ‘তারা (লোকদের) বলছে, তোমরা তোমাদের উপাস্যদের ত্যাগ করো না এবং ত্যাগ করোনা ওয়াদ, সুওয়া‘, ইয়াগূছ, ইয়া‘ঊক্ব ও নাসরকে’ (নূহ ৭১/২৩)

বিশুদ্ধ আক্বীদার উৎস :

বিশুদ্ধ আক্বীদার মূল উৎস হচ্ছে কুরআন ও ছহীহ হাদীছ। আক্বীদার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় সমূহ শুধুমাত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। আক্বীদা ও ইবাদতের সকল বিষয়ই ‘তাওক্বীফী’ বা কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ নির্ভর। দুর্বল হাদীছ, ইজতেহাদ বা কারু মতের ভিত্তিতে কোন বিষয়কে আক্বীদার বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না।

বিশুদ্ধ আক্বীদার মূলভিত্তি : বিশুদ্ধ আক্বীদার মূলভিত্তি ২টি।

এক. الايمان بالله বা ‘আল্লাহর প্রতি ঈমান’।

‘আল্লাহর প্রতি ঈমান’ অর্থ আল্লাহ্কে একমাত্র রব ও ইলাহ হিসাবে বিশ্বাস করা ও মানা। জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মানা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ أَمَرَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ ‘যেগুলো তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদারা সাব্যস্ত করে নিয়েছ। এদের পক্ষে আল্লাহ কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি। আল্লাহ ব্যতীত কারু শাসন নেই। তিনি আদেশ দিয়েছেন যে, তাঁকে ব্যতীত তোমরা অন্য কারু ইবাদত করো না। এটাই সরল পথ। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না’ (ইউসুফ ১২/৪০)

দুই . الكفر بالطاغوت বা ত্বাগুতকে অস্বীকার করা।

‘ত্বাগুতকে অস্বীকার করা’ মানে আল্লাহকে বাদ দিয়ে বা আল্লাহর প্রদত্ত বিধান বহিভূর্ত নিয়মে বস্ত্ত, ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র ও সমাজে প্রচালিত রসম-রেওয়াজ যা কিছুই মানা হয়, তা অস্বীকার করা।

আল্লাহ বলেন, فَهَزَمُوهُمْ بِإِذْنِ اللَّهِ وَقَتَلَ دَاوُودُ جَالُوتَ وَآتَاهُ اللَّهُ الْمُلْكَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَهُ مِمَّا يَشَاءُ وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَفَسَدَتِ الْأَرْضُ وَلَكِنَّ اللَّهَ ذُو فَضْلٍ عَلَى الْعَالَمِينَ- ‘অতঃপর তারা আল্লাহর হুকুমে জালূতের সৈন্যদলকে পরাজিত করল। আর দাঊদ জালূতকে হত্যা করল এবং আল্লাহ তাকে রাজ্যক্ষমতা ও প্রজ্ঞা দান করলেন এবং তাকে শিক্ষা দান করলেন যা তিনি চাইলেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ যদি একদলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহ’লে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহ বিশ্ববাসীর প্রতি একান্ত দয়ালু’ (বাক্বারাহ ২/২৫১)।

বিশুদ্ধ আক্বীদার গুরুত্ব :

দেহ যেমন প্রাণ ছাড়া অকার্যকর, তেমনি বিশুদ্ধ আক্বীদা ছাড়া আমলও মূল্যহীন। তাই ইসলামী শরী‘আতে আক্বীদা বিষয়ে ছহীহ ইলম অর্জন করাকে ফরয করা হয়েছে। এক আল্লাহকে মানার মাঝে যে সকল শান্তি নিহিত, তা দলীল ও প্রমাণের ভিত্তিতে উপলদ্ধি করা ও মন মানসিকতায় স্থির করাই ইসলামী আক্বীদার মূল চেতনা। মুমিন জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হ’ল সুদৃঢ় ঈমান ও বিশুদ্ধ আক্বীদা। আক্বীদা কলুষিত হ’লে আমল যত ভালই হোক না কেন তা নিষ্ফল। কুরআন মাজীদে সমৃদ্ধ জীবন অর্জনের প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,

مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ-

‘পুরুষ হৌক নারী হৌক মুমিন অবস্থায় যে সৎকর্ম সম্পাদন করে, আমরা তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং অবশ্যই তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম অপেক্ষা উত্তম পুরস্কারে ভূষিত করব’ (নাহল ১৬/৯৭)

একজন পথভোলা মানুষের আক্বীদা ও আমলের পরিবর্তন রাষ্টশক্তি পরিবর্তনের চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, فَوَاللَّهِ لأَنْ يَهْدِىَ اللَّهُ بِكَ رَجُلاً خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُونَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ- আল্লাহ কসম! যদি তোমার দ্বারা আল্লাহ একজন লোককে ও হেদায়াত দান করেন, তবে সেটা তোমার জন্য সর্বোত্তম উট কুরবানী করার চেয়েও উত্তম হবে (বুখারী, মুসলিম হা/২৪০৬)

মানুষের জীবনে আক্বীদাগত দিকটাই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বাস অনুয়ায়ী কর্ম হয় এবং বিশুদ্ধ আক্বীদা মতে মানুষের সার্বিক জীবন পরিচালিত হয়। একজন পূর্ণ মুমিন তার আধ্যাত্মিক জীবনে ছালাত-ছিয়াম, যবেহ-মানত, হজ্জ-তাওয়াফ, প্রার্থনা, তাওয়াক্কুল ইত্যাদি ইবাদতের সকল পদ্ধতিতে যেমন ইলাহী বিধান মেনে চলবেন, বৈষয়িক জীবনেও তেমনি আল্লাহর কিতাব, রাসূলের সুন্নাত এবং যুগের শরী‘আত অভিজ্ঞ মুসলিম বিদ্বানগণের ইজতিহাদ অনুযায়ী স্বীয় কর্ম পরিচালনা করবেন।

ইসলাম ধর্ম হ’ল বিশ্বাস ও শরী‘আতের সমষ্টি। ইসলামী আক্বীদা হ’ল অতি প্রয়োজনীয় ও ওয়াজিব বিষয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوا أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ- ‘আমাকে মানুষের বিরুদ্ধে লড়াই করার আদেশ দেওয়া হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা এ সাক্ষ্য প্রদান না করবে যে, আল্লাহ্ তা‘আলা ব্যতীত কোন সত্য মাবূদ নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (ছাঃ) আল্লাহর রাসূল।[3]

ভ্রান্ত আক্বীদার বিপরীতে বিশুদ্ধ আক্বীদা :

একসময় একচেটিয়াভাবে ভ্রান্ত আক্বীদায় পরিপূর্ণ ছিল মুসলিম সমাজ। যেমন : আল্লাহ নিরাকার, তিনি সর্বত্র বিরাজমান, যত কল্লা তত আল্লাহ্, রাসূল নূরের তৈরী, রাসূল গায়েব জানেন, তিনি হায়াতুন্নবী-ইত্যাকার অসংখ্য সামাজিক কুসংষ্কার ও ভ্রান্ত বিশ্বাস ইত্যাদি। কিন্তু আল্লাহ প্রদত্ত এই বিশুদ্ধ আক্বীদার আলোকচ্ছটা মানুষের ঘুমন্ত চেতনাকে অভ্রান্ত সত্যের চূড়ান্ত উৎস অহীর বিধানের কাছে আত্মসমর্পণের আহবানে জাগ্রত করেছে এবং সমাজের ভ্রান্ত আক্বীদা ও সামাজিক কুসংস্কারের মূলে কুঠারাঘাত হেনে আললাহ প্রদত্ত পথ উন্মোচিত করতে সক্ষম হয়েছে।

বিশুদ্ধ আক্বীদাই কেবল শান্তি, নিরাপত্তা, সৌভাগ্য ও সফলতার নিশ্চয়তা প্রদান করেছে। আল্লাহ বলেন, بَلَى مَنْ أَسْلَمَ وَجْهَهُ لِلَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَلَهُ أَجْرُهُ عِنْدَ رَبِّهِ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ- ‘হ্যাঁ, যে ব্যক্তি তার চেহারাকে আল্লাহর প্রতি সমর্পণ করেছে এবং সৎকর্মশীল হয়েছে, তার জন্য তার পালনকর্তার নিকটে প্রতিদান রয়েছে। তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তান্বিত হবে না। ইসলামী আক্বীদা বাস্তবায়নই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অর্জন ও ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উপায়’ (বাক্বারাহ ২/১১২)

আল্লাহ বলেন,وَلَقَدْ كَتَبْنَا فِي الزَّبُورِ مِنْ بَعْدِ الذِّكْرِ أَنَّ الْأَرْضَ يَرِثُهَا عِبَادِيَ الصَّالِحُونَ- ‘লওহে মাহফূযে লেখার পর নাযিলকৃত কিতাবসমূহে আমরা লিখে দিয়েছি যে, আমার সৎকর্মশীল ঈমানদার বান্দারাই কেবল জান্নাতের আবাসভূমির অধিকারী হবে’ (আম্বিয়া ২১/২০৫)

বিশুদ্ধ আক্বীদাই এককভাবে জনগণের সুস্থতা শান্তি নিরাপত্তা বাস্তবায়ন করতে পারে। আল্লাহ বলেন,وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَلَكِنْ كَذَّبُوا فَأَخَذْنَاهُمْ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ ‘জনপদের অধিবাসীরা যদি বিশ্বাস স্থাপন করত ও আল্লাহভীরু হ’ত, তাহ’লে আমরা তাদের উপর আকাশ ও পৃথিবীর বরকতের দুয়ারসমূহ খুলে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যারোপ করল। ফলে তাদের কৃতকর্মের দরুণ আমরা তাদেরকে পাকড়াও করলাম’ (আ‘রাফ ৭/৯৬)

উপসংহার :

মুমিন জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হ’ল বিশুদ্ধ আক্বীদা। আক্বীদা নষ্ট হলে আমল ভাল হ'লেও তা নিষ্ফল। আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তিনি অনাদি ও অনন্ত। তিনি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই, তাঁর আগেও কেউ নেই, তাঁর পরেও কেউ নেই। তিনি বিশ্বজগতের স্রষ্টা, নিয়ন্ত্রক, প্রতিপালক একমাত্র তিনিই। তিনি লা-শারীক, তিনি অক্ষয়, তাঁর ক্ষয় নেই, লয় নেই, পতন নেই- ইত্যাদি বিষয়গুলোকে মনে-প্রাণে বিশ্বাস ও কর্মে বাস্তবায়নই পারে মানুষকে ইহ ও পরলৌকিক জীবনে শান্তি ও মুক্তি উপহার দিতে।

জামীলুর রহমান

লেখক : সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ


[1]. আর-রায়েদ, ২/১০৩৮ পৃ.।

[2]. আক্বীদা ইসলামিয়াহ ভূমিকা দ্রষ্টব্য.।

[3]. বুখারী হা/২৫; মুসলিম হা/২২।



বিষয়সমূহ: আক্বীদা
আরও